#শুচিস্মিতা -১৫
Tahrim Muntahana
~ রাশিদ ভাই যে এখানেও আমার প্রতিবেশী হয়ে গেল ছোট চাচি!
আনতারা’র কথায় ভ্রু কুঁচকালো মিসেস কামরুন্নাহার। ধরণীতে সবে মাত্র সন্ধ্যা নেমেছে। বাঁকা চাঁদ খানিক লজ্জিত ভঙ্গিমায় হাসছে, অন্ধকার আকাশে জ্বলজ্বল করছে। বাহারি ফুলের গন্ধে মো মো করছে পরিবেশ। নিজেদের ফ্ল্যাটে অবস্থান করছে আনতারা’রা। ফাতিন আজ রাশিদের সাথে থাকবে। ফাঁক পেয়েই ছোট চাচি কে ফোন দিয়েছে আনতারা। কথার মাঝেই কথাটা বলে উঠলো সে। মিসেস কামরুন্নাহার কিছুটা বুঝলেও প্রশ্ন করলো,
~ রাশিদ তোদের বিল্ডিংয়ে থাকছে? ও না মিরপুরে কাজ করে!
আনতারা হেসে উঠলো। মিরপুরে কাজ করে? ছেলেটা কিভাবে বোকা বানিয়ে রেখেছে সবাই কে। হেসেই বললো,
~ না ছোটচাচি, আমি তো এখানে এসে দেখি রাশিদ ভাই এখানে। বাড়িতে মিথ্যে বলেছে। শুধু কি বিল্ডিং? পাশের ফ্ল্যাট টাই তার। আর মজার কথা শুনবে? আমাদের ফ্ল্যাট টা ১৫ দিন আগে থেকেই তার ভাড়া করা!
মিসেস কামরুন্নাহার স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। রাশিদ থাকা মানে তার আর কোনো টেনশন নেই। তার মেয়ের উপর ভরসা আছে, কোনো ভুল সে করবে না। আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন রেখে দেয় আনতারা। আজ আর পড়া হবে না, বেলকনিতে চলে যায় বাইরের পরিবেশ দেখতে। ঠিক তখনি পাশ থেকে ভেসে আসে,
“আমার বন্ধুর বাঁকা নয়নে গো,
বন্ধুর বাঁকা নয়নে
কি মোহিনী আছে গো সই, কে জানে ?
সখী গো, প্রাণসখী গো,
ওই রূপ যখন মনে পড়ে,
খাঁচার পাখি রয় না ঘরে
ঘুরে বেড়ায় বন্ধুয়ার সন্ধানে!”
ফ্যাচ ফ্যাচ কন্ঠের গান টাও যেন প্রাণ পেয়েছে, কি আবেগ মেশানো ছিলো! আনতারা এগিয়ে যায় রাশিদের বেলকনির দিকে। নাহ বেলকনিতে নেই, ঘরে বসেই গান টা গাইছে রাশিদ। আনতারা’র খুব ইচ্ছে করে রাশিদের মুখটা দেখার, দৃষ্টিতে দৃষ্টিতে মেলাতে। আবেগে ভরা গানটার মাঝে নিশ্চয়ই চোখের দৃষ্টিতেও আবেগ মেশানো থাকবে? সেই আবেগে সে ভাসতে চায়, বেশী নয় অল্পক্ষণ ভাসতে চায়। তাই গলা উঁচিয়ে বললো,
~ ফাতিন ভাই চা খাবো আমি, হবে?
গানের শব্দ গুলো যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। কাছাকাছি কারো পায়ের শব্দ শুনে রেলিং ঘেঁষে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো সে, ধরা পড়লে চলবে না। কিছুক্ষণ পর টের পেল দূরে থাকা গানের লিরিক্স গুলো খুব কাছ থেকে শুনতে পাচ্ছে আনতারা। ঘুরে তাকায়, রাশিদের সুশ্রী মুখশ্রী ভেসে উঠে। যার গাঢ় দৃষ্টি তার উপরেই। আনতারা এগিয়ে এসে রাশিদের মুখোমুখি দাঁড়ায়, নিশ্চুপ হয়ে যায় রাশিদ। কিছুক্ষণ দেখে নিয়ে বলে উঠে,
~ মনে হচ্ছে বহুজনম পর চোখ তার প্রাণ পেল, ঠোঁট তার নির্জীবতা হারালো, হৃদয় নতুন ছন্দ খুঁজে পেল!
আনতারা ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি ধরে রাখে। কথা বলতে ইচ্ছে করে না। কেটে যায় কিছুটা সময়, একে অপর কে দেখে নেয় তৃপ্তি নিয়ে। হঠাৎ করেই আবার ফাতিনের আগমন, নড়েচড়ে উঠে আনতারা। দৃষ্টি ঘুরাতে থাকে। ফাতিনের হাতে চারটে চায়ের কাপ। রাশিদের দিকে তাকায় না সে, কষ্ট হয় ছেলেটার অনুভূতি মাখা দৃষ্টি দেখলে! ফাতিনের কন্ঠস্বর শুনে কেয়া’ও এসে উপস্থিত হয়। রাত নয়টা পর্যন্ত হাসি মজার মধ্যে কেটে যায়, কিছু সময়ের জন্য ভুলে যায় মনের গোপন অনুভূতি গুলো। এ সময় যদি আর না আসে?
…
মিসেস নাজমা চটে আছেন মেজ বউয়ের উপর। এখন পর্যন্ত নাতি নাতনির মুখ দেখাতে পারলো না, রাগার ই কথা। এতদিন এই কথা তার মাথায় আসে নি, ছোট ছেলের জন্য বিকেলে মেয়ে দেখতে গিয়ে যখন শুনলো ‘আপনার মেজ বউ কি বন্ধা নাকি’! তখন থেকেই তার মাথা গরম হয়ে আছে। খোলাসা করে কিছু বলছেও না, কাউকে কাছে ঘেঁষতেও দিচ্ছে না। নিজের ঘরে বসে একা একাই বিলাপ করে যাচ্ছে। পারভিন তাড়াহুড়ো করে নাহিদ কে খবর পাঠিয়েছে, সে জানে বাড়ির বড় ছেলে ছাড়া এই বিলাপ কেউ বন্ধ করতে পারবে না, দেখা যাবে না ঘুমিয়ে সারারাত আজেবাজে বকছে। সময়ের আগেই নাহিদ চলে এসেছে, রাত এখন প্রায় দশটা বাজতে চললো। আগেই আর মায়ের ঘরে গেল না সে, বরং হাত মুখ ধুয়ে খাবার নিয়ে মায়ের ঘরের দরজায় টোকা দিলো। যদিও দরজা একেবারে বন্ধ করে নি। দরজায় টোকা শুনেই যেন মিসেস নাজমা’র রাগ বাড়লো,
~ কেডা? আমার কাছে ঘেঁষবা না কেউ। এই বাড়িতে আমার কোনো দাম আছে? এহন আমি বুড়ি হইয়া গেছি, পথে ফালায় রাখলেও কেউ কওনের নাই।
নাহিদ আস্তে আস্তে পা ফেলে ঘরের ভেতর ঢুকলো। মুখ বেঁকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলেন তিনি। মায়ের পাশে বসে বললো,
~ তুমি তো আমাদের সব আম্মা। তুমি না থাকলে এই সংসার চলবে? দেখা যাবে তিন বউ ঝগড়া লাগিয়ে আলাদা হওয়ার পাইতারা করছে। তুমি আছো বলেই তো ওদের এমন সাহস হয়ে উঠে নি। কি হয়েছে আমাকে বলো। কে কি বলেছে তোমার?
~ কুলা*ঙ্গার জন্ম দিছি একটা, আমার মুখের উপর কথা কয়। বলে কি না তার বউ রে জানি কথা না হুনাই। আমি তোরে ডরাই নাহি? বন্ধা মাইয়া নিয়ে সংসার করবা আমি তা মানমু না, আমার কি নাতিনের মুখ দেখার শখ জাগে না?
নাহিদের এবার বোধগম্য হলো মায়ের রাগের কারণ। মা কে বোঝানোর স্বরে কিছু বলবে তার আগেই মেজ বউ রিনু গর্জে বলে উঠলো,
~ আপনে না মানার কে আম্মা? আপনের পোলা সংসার করবে আপনে তো না। বিকেল থেকে আমারে কথা শোনায় যাইতেছেন, এতক্ষণ চুপ ছিলাম। সমস্যা টা যদি আপনার পোলার হয়?তখন কি বলবেন আম্মা, তখন কিন্তু এই রিনুও আপনের সংসার পায়ে ঠেইলা চইলা যাইবো।
পরিস্থিতি যেন গমগম করে উঠলো। নাহিদ কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে রইলো। ঠিক তখনি নিজের ঘর থেকে তেড়ে এসে রিনুর গালে থাপ্পড় বসালো নিরব। গালে হাত দিয়ে আশ্চর্য চোখে তাকালো রিনু। সবটাই তার কাছে স্বপ্ন মনে হচ্ছে। নিরব যে তাকে মারতে পারে বিশ্বাস করতে পারছে না। যে ছেলে তার কথায় উঠে বসে, সে ছেলে তাকে মারলো? রিনুকে অবাক করে দিয়ে নিরব আবার বললো,
~ আমার আম্মার সাথে ভালো করে কথা বলো রিনু। তোমাকে কিছু বলি না দেখে মাথায় উঠে বসছো। আমি আগেই আম্মা কে বলছি তোমাকে এ ব্যাপারে কথা না বলতে। তুমি জানার পরেও এই ঘরে আসার সাহস কি করে হলো? এর পর বড় গলায় কথা বলবি গলা চিপে মেরে ফেলবো!
মিসেস নাজমা খুশিতে যেন নেচে উঠলো। পরিস্থিতি পুরো বিগড়ে গেলো। পারভিন এগিয়ে এসে রিনুকে সরিয়ে নিলো নিরবের কাছ থেকে। নিরবের কাজে সেও অবাক হয়েছে, বউ মারা তার পছন্দের নয়। আগে শাসন না করে, এখন পুরুষত্ব দেখাতে এসেছে। মিসেস নাজমা বললো,
~ আরেক টা মার, আমার মুখের উপরে কথা কয়, সাহস কত বড় ওই মাইয়ার।
~ আম্মা! আপনি গুরুজন, কই বউ কে মারার জন্য ছেলেকে দুটো মারবেন তার বদলে আরো মারতে বলছেন?
ফারাহ’র কথায় মুখ বেঁকালেন মিসেস নাজমা। নিরব আবার গর্জে বলে উঠলো,
~ ওর গালে আরো আগেই থাপ্পড় বসানো উচিত ছিলো, নাহলে মুখে লাগাম থাকতো, ছোটলোকের বাচ্চার সাহস অতিরিক্ত বেড়ে গেছে।
এবার মনে হয় নাহিদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেল। একে তো তারই সামনে বউয়ের গাঁয়ে হাত তুলেছে, তার উপর গালি দিচ্ছে সবার সামনে! সেও যে ভালো তেমন না, রাগ উঠলে সেও গালি দিতো, পরে যখন বুঝতে পারতো ক্ষমা চেয়ে নিতো। কিন্তু এসব কি পরিবারের মানুষ জানে? ঘরের ঝগড়া ঘরেই সীমাবদ্ধ রেখেছে, অথচ আজ তারই সামনে তার ভাই বউ কে মারলো! সর্বশক্তি দিয়ে চড় বসিয়ে দিলো নিরবের গালে, মিসেস নাজমা’র মুখটা চুপসে গেলেন। আর কিছু বলার সাহস তার হলো না, বড় ছেলেকে তিনি খুব মানেন। বড় ভাইয়ের চড় খেয়ে নিরবের হুশ এলো সে রাগের মাথায় কি করে ফেলেছে, লজ্জায় মাথা নত করে নিলো নিরব। একে তে মায়ের বলা কথাগুলো, তারউপর বিকেল থেকে বিলাপ, বউয়ের আহাজারি; রাগ সামাল দিতে পারেনি! আশেপাশের চাচি ভাবিদের কাছেও শুনতে হয় তার বউ বন্ধা, যদিও এতে তার সমস্যা নেই তবে কয়দিন শুনতে ভালো লাগে? আজ যেন মিসেস নাজমা আগুনে ঘি ঢেলে পরিস্থিতি বিগড়ে দিলো! নাহিদ আর দাঁড়ালো না, মায়ের দিকে একপলক তাকিয়ে হনহন করে বের হয়ে গেল ঘর থেকে। স্বামীর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস গোপন করলো পারভিন। আজ আর বাড়ি ফিরবে না সে জানে। নিজেও নিজের ঘরে চলে গেল, এসব নাটক আর ভালো লাগে না! পারভিনের ঘরে খাবার দিয়ে ফারাহ নিজেও খেয়ে নিলো, না খেয়ে থাকার মানেই হয়না। নিরব কে খাবার খেতে ডাকলেও সে আসেনি, তাই নিজের মতো সব গুছিয়ে রিনুর জন্য খাবার নিয়ে নিজের ঘরে ঢুকলো। মেয়েটা কখন থেকে কেঁদে যাচ্ছে,
~ আর কাঁদবেন না মেজ ভাবী। খাবার টা খেয়ে নিন।
ফারাহ বুঝিয়ে শুনিয়ে রিনুকে খাবার টা খাওয়ালো, অনেক রাত হয়ে গেছে, বর কে তো সব জানাতে হবে! নিজেও বারান্দায় চলে গেল ফোন নিয়ে। এখন হয়তো ডিউটি থেকে ফিরেছে নিয়ন। ফোন দেওয়ার সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হলো, ফারাহ হাসলো। এতক্ষণের গুমোট ভাব কেটে গেছে। প্রিয় মানুষটার সাথে কথা বললে কষ্ট গুলো কোথায় পালিয়ে যায় বোঝা বড় কঠিন!
…
রাত পোহালেই দোকানপাট খোলার সাথে সাথে আনতারা’রা বেরিয়ে পড়েছে। রাশিদ ও আজ অফিস যায় নি। চারজন মিলে দুটো রিকশা করে এদিক ওদিক ঘুরে ঘুরে টুকিটাকি জিনিসপত্র কিনছে, ঘরের সরঞ্জাম ফেরার পথে কিনবে। এই ফাঁকে এলাকাটাও ভালো ভাবে চিনিয়ে দিচ্ছে দুজন কে। প্রাথমিক ভাবে কিছু জায়গা চিনলে আস্তে আস্তে সব চিনে যাবে, নতুন বন্ধু হবে, চালাক চতুরও হয়ে যাবে। শপিং মলে এসে রিকশা থামতেই নেমে পড়লো তিনজন। আনতারা খানিক অবাক হয়েছে শপিং মলে আসতে দেখে, তবে হুট করেই ফাতিনের হাতের মুঠোয় নিজের হাত দেখে থেমে যায়, কেয়ার হাত ধরে আছে রাশিদ। যে ভিড়, আবার না হারিয়ে যায়!
বড়সড় এক দোকানের সামনে দাঁড়াতেই কেয়া বলে উঠলো,
~ আমরা এখানে কেন ফাতিন ভাই? আমাদের তো সব আছেই!
~ কলেজ ড্রেস ছাড়া কলেজে ঢুকতে পারবি? মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রোগ্রাম হয়, সেগুলোর জন্য আগে থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে, হুটহাট ঘুরতে যাবি, শহরে এসেছিস এদের কালচারের সাথে মানিয়ে নিতে না পারলে ভালো লাগবে না, গ্রামে ফিরে যেতে ইচ্ছে করবে।
ফাতিন রাশিদ নিজেদের অভিজ্ঞতা মতোই অনেক গুলো শপিং করে দিলো, কিন্তু যখন টাকা ফাতিন দিতে নিবে, থামিয়ে দিলো আনতারা, তাড়াহুড়ো করে বলে উঠলো,
~ একি ফাতিন ভাই, আপনি দিচ্ছেন কেন টাকা?
ভ্রু কুঁচকালো ফাতিন, বিরক্তি কন্ঠে বললো,
~ পরিবারও ভাগ করে ফেলছিস নাকি?
~ আমি সে কথা বলিনি ফাতিন ভাই। ছোটচাচির হুকুম এটা।
~ তোরা আমার কাজিন, ছোট থেকে বড় হওয়া দেখেছি, ভাই হিসেবে আমার একটা দায়িত্ব আছে আনতারা। আমার বাবা-মায়ের ভুলের শাস্তি আমাকে দিচ্ছিস কেন? এটা আমার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। মোট কথা আমাদের টাকার ভাগ আছে নাকি, এক পরিবার, আমি ছোট চাচিকে মানিয়ে নিবো তোর ভাবতে হবে না।
আনতারা’র আর কিছু বলার থাকলো না, ফাতিন যেমন তার দিক থেকে ঠিক, ছোট চাচিও তার দিক থেকে ঠিক। শপিংমল থেকে বের হয়ে আবার রিকশায় চেপে বসলো চারজন। কেয়া তো খুব খুশি এত এত শপিং করে, আনতারা যে খুশি নয় তা না। শুধু কেয়ার মতো সে প্রকাশ করছে না। প্রিয় মানুষটাকে নিয়ে প্রথম ঢাকা শহর ঘুরছে, আনন্দ দ্বিগুন নয় কি? কেয়ার কলেজের পাশে সুন্দর একটি ক্যাফে আছে, সেখানেই ছুটলো চারজন। রিকশা থেকে নেমে হঠাৎ ফাতিনের কিছু মনে হতেই কেয়া কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,
~ তোর রিকশা ভাড়া প্রতিদিন চল্লিশ টাকা লাগবে কেয়া, রিকশা ডেকে সরাসরি জায়গার কথা বলে বসে পড়বি, ভাড়া কত জিজ্ঞেস করলেই বেশী চাইবে, আর যদি বুঝতে পারে এলাকায় তুই নতুন তাহলে তো কথায় নেই, শহরে চলতে গেলে স্মার্টনেস একটু বেশীই প্রয়োজন। আর এলাকা টা খুব বেশি ভালো নয়, ছিনতাইয়ের অহরহ ঘটনা ঘটে, নিজের সেইফটি নিজেকেই দেখতে হবে। বুঝতে পেরেছিস দুজন?
দুজনই বাধ্যগত ছাত্রীর মতো মাথা নাড়ালো। ফাতিন যেন বড় ভাইয়ের সকল দায়িত্ব কর্তব্যের লিস্ট আগেই করে রেখেছিল। তোতা পাখির মতো বুঝিয়ে যাচ্ছে। রাশিদ ভাই-বোন দের মধ্যে একটা কথাও বলে নি। সেও বলবে পরে, হয়তো সময় টা যখন তার থাকবে!
…
ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাবার বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রিনু। যে সংসারে তার সম্মান নেই সে সংসারে সে থাকবে না। পারভিন নিজেও কিছু করতে পারছে না। রিনু কে যেতে দেওয়া মানে এই ঝামেলা টা আরো বাড়ানো। আর এই ঝামেলা যতদিন থাকবে তার বরটাও স্বাভাবিক আচরণ করবে না। ফারাহ যদিও সেসবে ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে না, তার মতে বাবার বাড়ি চলে যাওয়ায় ভালো। যার ভরসায় পরিচিত বাড়ি ছেড়ে অপরিচিতদের আপন করেছে সেই যদি এমন করে, থাকার প্রশ্নই আসে না। রিনু সিদ্ধান্তে একপ্রকার নিরব সমর্থন জারি করেছে সে। পারভিন রিনুর রেড়ি হওয়াতে বাঁধা দিয়ে বললো,
~ মুখপু্রি চলে যাচ্ছিস, কয়দিন পর আরেকটা বউ ঘরে তুলবে তখন কপাল তোর পুড়বে। জেনে শুনে নিজের অবস্থান হারাচ্ছিস।
থেমে গেল রিনু। পাশ থেকে ফারাহ বললো,
~ বড়ভাবী এভাবে বলছো কেন? মেজ ভাবী ঠিকই করছে, মেজ ভাই কি করে পারলো সবার সামনে মারতে? এই টুকু রাগ মেজ ভাবীর সাজে। আমি থাকলে তো টপাটপ কয়েকটা চড় দিয়ে নিতাম।
ফারাহ’র কথায় যেন রিনু আরো উৎসাহ পেল। বললো,
~ বড়ভাবী তুমি বাঁধা দিও না, ওর সাহস কি করে হইলো আমার গাঁয়ে হাত তুলার, বাবা মা কে বলবো তারাই একটা বিহিত করবে।
পারভিন হতাশার শ্বাস ফেললো। এই দুটোকে কি করে বোঝায় সংসারে ঝামেলা হয়, সব ঝামেলা তেই যদি বাবার বাড়ি মানুষদের যোগ করা হয় সংসার আর নিজের থাকে না। জোর করে রিনুকে পাশে বসিয়ে বললো,
~ আমাকে বলো তোমাকে নিরব ভাই এতদিন কিছু বলেছে? সব কথা শুনে নাই? পুরুষ মানুষের বংশের বাতির দরকার হয়, তারপরেও বাচ্চা নিয়ে তোমাকে কিছু বলছছে? তুমিও জানো আশেপাশের ভাবী চাচি রা নিরব ভাইকে কতকিছু বলে, তারপরেও ভাই যে তোমাকে কিছু বলে না, তোমার ভাগ্য ভালো না? পুরুষ মানুষের রাগ নাকের ডগায় থাকে, রাগ উঠলে মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। নিরব ভাই তো আম্মাকে বলেই দিছিলো যাতে তোমাকে কিছু না বলে, তারপরেও তুমি কথা বললে কেন? আম্মা নিজের মতো বিলাপ করে চুপ হয়ে যেত, আর তুমি নাহিদ কেও অসম্মান করেছো, ও তো সমাধান করতই। আম্মা কে ভালো ভাবে বুঝালে বুঝতো, তুমিই রাগ করে ব্যাপারটা ঘেঁটে দিলে! এখন আবার বাবার বাড়ি লোকেদের টেনে স্বামীর ভালোবাসায় প্রশ্ন তুলছো। বাবার বাড়ি মুখ দেখাতে পারবে? সবাই বলবে না তোমার বর খারাপ, তখন তোমারই কষ্ট হবে।
থামলো পারভিন, রিনু বুঝেছে। রাগ নিভে গেছে তার। এবার পারভিন ফারাহ’র দিকে তাকিয়ে বললো,
~ সংসার এত সহজ নয় ফারাহ। ঝগড়া হলেই যদি দুজন দুজনের আত্মসম্মান ইগো নিয়ে পড়ে থাকো, সম্পর্কে দূরত্ব বাড়বে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একজনে রাগ করলে আরেকজনের চুপ থাকতে হয়, পরে ঠিকই নিজের ভুল বুঝে ক্ষমা চাইবে। আর নাহিদ তোমার বদল নিরব কে মেরেছে, বড়ভাই হিসেবে শাসন করছে, এখন তুমি চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত না নিয়ে বাড়িতে থেকে বর কে শায়েস্তা করো। এতেই মঙ্গল!
বড় বউয়ের দায়িত্ব পালন করে পারভিন চললো নিজের ঘরে। নাহিদ কে বলতে হবে। ফারাহ রিনুও বুঝলো বিষয়টা। তাই দুজনেই চুপ করে কিছুক্ষণ বসে, নিজের কাজ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। সংসার ঝামেলাও হুটহাট চলে আসে আবার হুটহাট করেই সমাধান হয়। আত্মসম্মানের দোহায় সব জায়গায় দিলে নিজের আসল ব্যক্তিত্বটাই হারিয়ে ফেলার যোগাড় হয়। বিয়ের পর মেয়েদের স্বামীর সংসারই সব, আপন করতে না পারলে নিজের জন্যই নেতিবাচক!
চলবে…?
(রিয়েক্ট করার অনুরোধ রইলো। রিয়েক্ট কমে যাচ্ছে, এমতাবস্থায় লিখার উৎসাহ কমে যায়)