#শুচিস্মিতা -১৪
Tahrim Muntahana
~ কেমন আছো তোমরা? আসতে কোন অসুবিধা হয় নি তো?
ফারাহ’র মেজ ভাসুরের কথায় আনতারা কেয়া মাথা নাড়িয়ে জানান দিলো কোনো অসুবিধা হয়নি। আনতারা বললো,
~ আমরা ভালো আছি ভাইয়া, আপনি ভালো আছেন?
কেয়ার হাতে থাকা ব্যাগ টা নিজের হাতে তুলে নিয়ে মুচকি হেসে নিরব বললো,
~ আমিও ভালো আছি। চলো, আর একটু যেতে হবে!
হাঁটতে থাকে তিনজন। সকাল সকাল বোনের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়েছে আনতারা। সময় নেই, কালই সম্ভবত ঢাকার উদ্দেশ্য রওনা হবে। ফারাহ কে ফোন করায় নিরব কে পাঠিয়ে দিয়েছে পাড়ার মোড় থেকে আনতারা দের নিয়ে আসতে। কিছুটা পথ হাঁটার পরই চোখে পড়লো আহমেদ বাড়ি। পায়ের গতি বাড়িয়ে দিল দুজন। দরজায় ফারাহ কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে দুজনই এক প্রকার ঝাঁপিয়ে পড়লো। বাহারি আলাপে কেটে গেল কয়েক মুহূর্ত। ফারাহ দুজন কে নিয়ে চললো শাশুড়ির ঘরে। না নিয়ে গেলে আবার কথা শোনাবে। মিসেস নাজমা আধ শোয়া হয়ে বসে আছেন। আনতারা কে দেখেই যেন তার মেজাজ চটকে গেল। এই মেয়ের জন্যই তো তাকে অপমানিত হতে হয়েছে। আনতারা নিম্ন স্বরে সালাম দিয়ে বললো,
~ কেমন আছেন খালা?
~ আছি ভালায়, শুনলাম ঢাকা যাইতেছো, তা মাইয়া ভালা কইরা থাইকো, আকাম টাকাম ঘটাইয়ো না আবার।
শাশুড়ির কথায় ফারাহ’র দৃষ্টি তীক্ষ্ম হয়ে এলো। আনতারা’র তেমন ভাবাবেগ হলো না, সে জানতোই এসব কথা তাকে শুনতে হবে। মুচকি হেসে বললো,
~ কি যে বলেন না খালা, আমার মতো অন্ধকার দের আকাম ঘটানোর সুযোগ আছে? ঘটানোর আগেই তো আপনাদের মুখ ভেসে উঠবে, এত বড় সাহস আমার নেই গো!
~ গুমোরের কথা আর গেল না, আমার পোলার বিয়া ঠিক করতাছি, চইলা আইসো, রূপসী মাইয়া দেখছি। কপাল ভালা হইতো রাজী হইলে! শুনলা না তো।
~ সমস্যা নেই খালা, আমার জন্যও হয়তো কেউ অপেক্ষা করছে। যাই হোক সবার আগে দাওয়াত টা আমাকেই দিয়েন, কবজি ডুবিয়ে খেয়ে যাবো। চিন্তা করবেন না রূপসীর জন্য সুন্দর দেখে গিফটও আনবো।
মিসেস নাজমা’র মুখ গোমড়া হয়ে এলো। চেয়েছিল অপমানের জ্বালা একটু হলে শোধ করবে, এই মেয়ের গোমরের কথায় আর পারলেন না। ফারাহ এবার হাসছে মুচকি মুচকি। আনতারা চুপ থাকলে সে নিজেই আজ রাতে উচিত কথা শুনিয়ে দিতো। মিসেস নাজমার থেকে বিদায় নিয়ে আনতারা”রা ড্রয়িং রুমে এসে বসলো। পারভীন আর রিনু রান্না করছে। আনতারা কে দেখেই রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলো রিনু, ফারাহ আর একা ছাড়লো না ওদের। রিনু বললো,
~ কবে যাইতেছো ঢাকা?
~ কাল কে রওনা হবো ভাবী!
কেয়ার কথায় রিনু মুখ বেঁকালো। কৃষ্ণবর্ণের মেয়েটাকে তার একদম পছন্দ নয়। তার মতে এই মেয়ের ঝামেলা থেকেই তাকে এত এত কাজ করতে হচ্ছে, আনতারা’ই দোষী! ফারাহ বললো,
~ এখানে বসবি নাকি ঘরে যাবি?
~ এখানেই বসি আপায়।
~ আচ্ছা তোরা বস আমি দেখি ওদিকটায় কতদূর হলো।
ফারাহ চলে গেল রান্নাঘরে। রিনু বুঝি এই সুযোগ পেল। রসিয়ে বললো,
~ নিবিড়ের জন্য সুন্দরী মেয়ে দেখছি, কয়েকদিন পরেই বিয়া, সুযোগ আছিল, হেলায় হারাইলা। এমন গাঁয়ের রং নিয়া এত ভালা পোলা পাইতা? এই জন্যেই বলে মাইয়া মানুষের এত গুমোর ভালো না। তাও যদি গাঁয়ের রং টা একটু ফকফকা থাকতো।
এবার রাগ হলো আনতারা’র। মনে হচ্ছে এখানে এসেই ভুল করলো। এসব সে শুনতে চেয়েছে? কেয়া কিছু বলতে নিলেই চোখ দিয়ে ইশারা করে নিষেধ করলো আনতারা। থেমে গিয়ে রাগে ফুসতে লাগলো সে। আনতারা মুচকি হেসে বললো,
~ জাতের মেয়ে কালো ভালো!
এই একটা কথাই হয়তো রিনুকে চুপ করিয়ে দিতে সক্ষম! চুপ হয়ে গেল সে, উঠে নিজের ঘরে চলে গেল। আপায়ের উত্তরে বেশ খুশি কেয়া। কিছু কিছু মানুষ কে অল্পতেই অনেককিছু বলা যায়। বোনের সাথে প্রায় ঘন্টা তিনেক থেকে বাড়ির পথে রওনা হলো আনতারা। আসার সময় কেমন শক্ত করে জড়িয়ে ধরেছিল ফারাহ। আবার কতদিন পর দেখবে মেয়েটাকে, আনতারা যাওয়ার দিকের দৃষ্টি ছলছল করে উঠে ফারাহ! এত বড় শহরে বোন কে ছাড়তে ইচ্ছে করে না, না আছে আপনজন, না আছে পরিচিত কেউ! ভয় হয় ফারাহ’র তবে সে তো নিজস্ব ভয়ের জন্য বোনের স্বপ্নে বাঁধা দিতে পারে না, এমনিই না বুঝে শুনে ইতিমধ্যে তার দ্বারা ভুল হয়ে গেছে। বোনের যাওয়ার দিক তাকিয়ে ফারাহ বিড়বিড় করে বলে উঠলো,
~ রানীর মতো ফিরবি তারা! সারা গ্রাম যেন বলে ওই দেখ তালুকদার বাড়ির গর্ব যাচ্ছে!
…
গোধূলি বিকেলের শুরু। গ্রামের বাজারের কাছাকাছি আসতেই আনতারা’র চোখে পড়ে ছোট চাচা কে। আমির তালুকদার মূলত দুজনের জন্যই অপেক্ষা করছিলো। দুজন কে দেখে এগিয়ে যায় সে। সরাসরি বলে উঠে,
~ শীত তো সামনে, লেপ নিতে হবে না? আমি তোশকের ফরমায়েশ দিয়ে গিয়েছিলাম আম্মা, কিন্তু লেপের টা মনে ছিল না। তবে এখন বললে রাতের মধ্যে করে দিবে!
~ লেপ লাগবে না ছোট চাচা। ঢাকায় গিয়ে ফাতিন ভাইয়ের সাথে গিয়ে দুটো বড় বড় কম্বল কিনবো।
আমির তালুকদার মাথা নেড়ে সায় জানায়। ধুনকারেরা দল বেঁধে লেপ, তোষক, জাজিম ইত্যাদি শীত নিবারণী সামগ্রী বানাতে ব্যস্ত। মৌসুম ভিত্তিক সকল পণ্যের দাম বেড়ে যায় বলেই চাষীরা প্রয়োজন মতো মাস খানিক আগেই বানাতে দিয়ে যায়। আমির তালুকদার তোশক নিতে চললেন আনতারা’দের নিয়ে, প্রয়োজন মতো আরো কিছু সামগ্রী কিনে দিলেন, শহরে হয়তো দাম একটু বেশীই পড়বে। গাড়ি যেহেতু যাচ্ছেই, এখান থেকে নিয়ে গেলেই সুবিধা। আনতারা ব্যাগ হাতড়ে একটা লিস্ট বের করলো, আমির তালুকদারের হাতে তুলে দিয়ে বললো,
~ শহরে দাম বেশি পড়বে ছোট চাচা, এগুলো গ্রাম থেকেই নিয়ে যাই? তুমি কিনে নিয়ে এসো, আমরা যাই, বড়চাচি নাকি আরো কি কি সাথে দিবে!
আমির তালুকদার আনতারা’র কথা মতোই বড় বাজারের দিকে রওনা হয়। আনতারা’রা আবার অটোতে উঠে বসে। জাঁকজমক একটা ভাব চলে এসেছে যেন। আসবেই বা না কেন, বাড়ির দু মেয়ে অচেনা শহরে যাচ্ছে, বড়রাই তো সুবিধা দেখবে!
…
পরদিন সকাল! ভোরে আলো ফুটতে না ফুটতেই গাড়ি এসে হাজির। আজ শেষ বারের মতো আর গ্রামীণ প্রকৃতিতে গা ভাসানো হলো না আনতারা’র। কাল গভীর রাত পর্যন্ত জিনিসপত্র গোছানোয় ব্যস্ত ছিল বলে সকালে উঠতে দেরী হয়েছে। গাড়ি আসতেই মিসেস কামরুন্নাহার দুজন কে তাড়া দিলেন রেডি হতে। তিনি আরও ঘন্টা দুয়েক আগে উঠেছেন। বেশ কিছু খাবার সাথে দিয়েছেন। কিছুসময় অতিবাহিত হতেই প্রতিবেশী রা একত্র হলো তালুকদার বাড়ির গেইটের সামনে, বিদায় দিতে এসেছে আরকি। আমির তালুকদার গাড়িওয়ালার সাথে মালামাল গুলো গাড়িতে তুলছেন, বলাবাহুল্য সেও যাচ্ছে আনতারা’দের সাথে। ফাতিনের কাছে দুজন কে তুলে দিয়ে তিনি ফিরে আসবেন। যেহেতু আনতারা বাড়ি থেকে বাইরে পা রাখছেই, ফাতিন একদম কোচিংয়ের মূল শাখায় ফার্মগেট ভর্তি করিয়ে দিয়েছে, কাছাকাছি দু রুমের এক ফ্ল্যাট ভাড়া করে দিয়েছে; তার সাথেই রাখতো তবে তার ঠিকানা ওদের থেকে বহু দূরে। কেয়ার কাছাকাছি এক কলেজে ট্রান্সফার হয়েছে তবে বেশ কিছু টাকা খরচ করতে হয়েছে। মেয়ে দুটো রেডি হয়ে বাইরে বের হতেই একপ্রকার ঘিরে ধরলো সবাই, যে যা পারে উপদেশ দিয়ে দিচ্ছে। হয়তো মন থেকে, নয়তো উপরে উপরে; যে যা পারছে কথা শুনিয়ে যাচ্ছে নিজেদের মতো। আনতারা সবার সাথে খানিক সময় কথা বলে একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা রাজিব তাজওয়ারের দিকে এগিয়ে গেল। নিম্ন স্বরে সালাম জানিয়ে বললো,
~ দোয়া করবেন চাচা, আপনাদের দোয়া খুব কাজে লাগবে আমাদের।
~ ভালো ভাবে থাইকো মা, শহরের মানুষ জন কি রকম তা জানি না তবে গ্রামের মতো হয়তো না; তাই সাবধানে চলাফেরা কইরো।
আনতারা মাথা নাড়লো, মুচকি হেসে মিসেস মমতার সামনে দাঁড়াতেই তিনি তাকিয়ে রইলেন আনতারা’র দিকে। মেয়ে টাকে সে আগে আদর করতো, খুব একটা না করলেও কখনো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে নি। তবে যেদিন বুঝতে পারলো তার ছেলের এই মেয়ে কে পছন্দ সেদিন থেকে কেন জানি দেখলেই রাগ হতো, কোনো মা ই চায় না তার ছেলের জন্য কালো মেয়েকে বউ করে আনতে! মিসেস মমতা কে উদ্দেশ্য করে আনতারা বললো,
~ বড় মাপের সাইকিয়াট্রিস্ট হলেও কি আপনি তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলবেন চাচি? না একটু সমিহ করবেন? যাই হোক আসছি চাচি, ভালো থাকবেন। দোয়া করবেন আমাদের জন্য!
মিসেস মমতাকে কিছুই বলার সুযোগ দিলো না আনতারা, গাড়িতে চেপে বসলো। গাড়ি ছুটতে শুরু করতেই মিসেস কামরুন্নাহার কেঁদে উঠলেন, এতক্ষণ অনেক কষ্টে কান্না টা লুকিয়ে রেখেছিলেন, বাড়ি টা ফাঁকা করে দুই মেয়েই শহরে চলে গেল, প্রাণ কি সহে? মিসেস সেলিনা জা কে সামলে ভেতরে নিয়ে গেলেন। ফরিদ তালুকদার যতদূর গাড়িটা দেখা যায় তাকিয়ে রইলেন, মনে মনে উপর ওয়ালার কাছে কতশত দোয়া জানালেন! অন্যদিকে নিজের ঘরের বেলকনিতে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে মেয়ের শহরে গমন দেখলেন আহনাফ তালুকদার , বুকটা কাঁপছে তার। যেখানে সাথে তার যাওয়ার কথা ছিলো, সেখানে ছোট ভাই গেল; মেয়ের সামনে যেতেও এখন লজ্জা করে তার। দৃষ্টি মেলাতে ভয় হয়; তাইতো দূরে দূরে থাকছে। মুখটা দেখলেই মনে পড়ে মেয়ের সাথে করা অন্যায় গুলো, মরে যেতে ইচ্ছে করে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের ঘরে এসে বসে আহনাফ তালুকদার। হাতে ছোট্ট একটা ফটোফ্রেম। যেখানে বাবা-মা ও সন্তানের সুন্দর একটি মুহূর্ত ক্যাপচার করা। বুকটা আবার হুহু করে উঠলো তার! ভুলের প্রায়শ্চিত্ত না জানি কতদিন দিতে হয়! হয়তো আমৃত্য!
….
বিকেল সবে শুরু হয়েছে। কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে নিয়োগ হয়েছে রাশিদ। কোম্পানি টা বেশ বড় না হলেও ভালোয় নাম ডাক রয়েছে। ডাটা এন্ট্রির কাজ গুলোতে নিজের উপরই বেতন নির্ভর করে, যে যত পরিশ্রম তার প্রাপ্তি তত! পরিচিত কয়েকজন কে ধরেই মূলত চাকরির ব্যবস্থা টা করেছে রাশিদ, পরিচিতি না থাকলে আবার ভালো চাকরি খুঁজে পাওয়া কঠিন! এখন যে যুগ এসেছে, টাকা হাতে রেখে চাকরির আবেদন করতে হয় সেখানে পরিচিতদের সহায়তায় সে টাকা ছাড়াই চাকরি টা একপ্রকার হাতিয়ে নিয়েছে। এরপর থেকেই শুরু হয়েছে তার যুদ্ধ! যুদ্ধই তো! অপরূপা কে ছাড়া কয়েক মুহূর্ত দূরে থাকা তার কাছে কতটা পীড়াদায়ক, সেখানে গোটা কয়েকদিন রয়েছে!
আজ রাশিদ ছুটি নিয়েছছ লাঞ্চের পর। ফাতিন ফোন দিয়ে জানালো সে আসছে! রান্নার ব্যবস্থা করতে হবে! এ কয়দিন তো সে কোনো রকম ডিম ভাজি, আলু ভর্তা, ভাত আর বাহিরের অর্ডার কৃত খাবার দিয়ে চালিয়ে দিয়েছে; শুচিস্মিতার সামনে তো আর এসব দেওয়া যাবে না! তাই বুদ্ধি করে ফ্ল্যাট মালিকের বুয়া কে দ্বিগুন টাকা বকশিস দিয়ে রান্না করিয়ে নিয়েছে। এখন চলছে সে ফাতিনের দেওয়া ঠিকানায়। মনের মধ্যে কিরকম অনুভূতি হচ্ছে বলে বুঝাতে পারবে না সে। কতদিন পর তার শুচিস্মিতা কে দেখবে, চক্ষু শিতল হবে, অন্তর আরো বেশী করে পুড়বে। এই পুড়াতেও যেন কত সুখ! রিকশা এসে থামলো বাস স্টেশনের সামনে! এখানেই তো আসতে বললো। ভিড়ভাট্টা ঠেলেঠুলে ফাঁকা এক বেঞ্চে বসে হাতে থাকা ঘড়ির দিকে চোখ বুলালো, ঠোঁটের কোণে সুক্ষ্ম এক হাসি ফুটে উঠলো। সময়ের আধা ঘন্টা আগেই সে চলে এসেছে! সময় যেন যেতে চায়ছে না, মিনারেল ওয়াটারের এক বোতল কিনে পুরো বোতল টা এক নিমিষেই খালি করলো রাশিদ, সাথে সাথে টের পেল পেটের ভেতর গুড়গুড় শব্দ, জানান দিলো পেটে কিছু পড়েনি, খিদে পেয়েছে। বুয়া কে রাজি করানোর চক্করে পড়ে খাওয়া হয়নি, পাশের চায়ের দোকান থেকে এক প্যাকেট এনার্জি প্লাস বিস্কুট নিয়ে খাওয়া শুরু করলো। এই ফাঁকে একটু এনার্জি হোক শরীরে। না জানি এতদিন পর অপরূপা কে দেখে কেমন রিয়েকশন দেয়! অজ্ঞান হয়ে গেলে আবার সমস্যা!
মালামাল ভর্তি গাড়িতে বসে আছে ফাতিন। নিজের ঠিকানায় দিয়েছিল ড্রাইভার কে। গাড়ি আসতেই চেপে বসেছে সে। আনতারা’রা বাসে করে ঢাকা যাচ্ছে। সে এখান থেকে বাস স্টেশনেই নামবে।
বহুদিন পর আবার সেই তিক্ত অনুভূতির সম্মুখীন হবে, না চাইতেও হতে হবে। বুকে কেমন জ্বালা করছে সকাল থেকেই। সে যদি পারতো এই অনুভূতি গুলো কে দূরে কোথাও রেখে আসতো, মনের বেইমানির জন্য হয়তো মনকেই নির্বাসন দিয়ে দিতো! তবে সে অপারগ, একটা ভুলে আজ কেন হয়তো বাকিটা জীবন তাকে মাশুল দিতে হবে! ভাবতে ভাবতেই স্টেশনের সামনে এসে গাড়ি থামলো। নেমে গেল ফাতিন, ফাতিন কে দেখেই অর্ধেক খাওয়া বিস্কুট এগিয়ে দিলো রাশিদ। কোনো রকম ভুমিকা ছাড়াই মুখে পুরে নিলো। বললো,
~ অনেকক্ষণ এসেছিস?
~ বিশ মিনিট হলো!
~ শরীর বসে গেছে, খাওয়া দাওয়া করছিস না নাকি?
~ খাই তবে তৃপ্তি পাই না!
~ কেন তৃপ্তি পালিয়ে গেছে নাকি?
~ নাহ, সে তো গ্রামে ফেলে এসেছিলাম। তবে আজ থেকে মন হচ্ছে তৃপ্তি পাবো!
রাশিদের কথায় আর দৃষ্টি মেলাতে পারলো না ফাতিন। হয়তো ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে। যদি রাশিদ বুঝে যায় শুচিস্মিতার কথা তার মুখে শুনে বুকে জ্বালা হচ্ছে! রাশিদ হয়তো অন্যসময় লক্ষ্য করতো, তবে তার দৃষ্টি যে এখন বাস থেকে নামা মেয়েটির দিকে। অপলক তাকিয়ে রয় রাশিদ। চোখ শিতল হয়ে আসে, বুকের ভেতরে জমিয়ে রাখা মেঘ গুলো যেন কেটে যেতে থাকে। ফাতিন নিজেও তাকায়, বেশীক্ষণ নয়। অল্পতেই তার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে, নিজেকে স্বাভাবিক করে এগিয়ে যায়। রাশিদ নড়ে না, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে। আমির তালুকদার ফাতিনের সাথে কথা বলে, সে দেরী করবে না, পরের বাসেই ফিরে যাবে। আনতারা কেয়াকে নিয়ে ভিড় ঠেলে খালি জায়গায় দাঁড়ায়। হুট করে কেয়ার দৃষ্টি রাশিদের উপর পড়তেই খানিক শব্দ করে চেঁচিয়ে উঠে সে,
~ আপায়, ওই দেখ রাশিদ ভাই!
থমকায় আনতারা, ধক করে উঠে বুক। জলদি করে ঘাড় ঘুরিয়ে রাশিদের দিকে তাকায়। কেমন করে দেখছে। কেয়া আনতারা কে ফেলেই রাশিদের কাছে আসে, ধাক্কা দেয়। ঘোর কাটে রাশিদের, মাথা চুলকে কেয়ার মাথায় গাট্টা বসিয়ে আমির তালুকদারের সাথে ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে নেয়। সময় চলে যায় কিছু সময়। রিকশা ডেকে আবার চারজন বসে পড়ে। ফ্ল্যাটের সামনে গাড়ি থামাতেই আনতারা নজর ঘুরিয়ে যতটুকু পারে দেখে নেয়। চারপাশ টা ভালো লেগেছে তার, গাছপালা, ফুলে ঘেরা বাগান, শান্ত পরিবেশ; যেন আনতারা’র মন মতো। রাশিদ আনতারা’দের নিজের ফ্ল্যাটে নিয়ে বসায়। ফ্রেশ হতে বলে ড্রাইভার সহ তিনজনে হাতে হাতে মালামাল গুলো নামিয়ে রাখে। আনতারা’দের কিছুই করতে হয় না। কম সময়েই আজকে রাতে থাকার জন্য পরিবেশ তৈরি করে আবার ফিরে আসে রাশিদের ফ্ল্যাটে। ততক্ষণে আনতারা কেয়া রেস্ট নিচ্ছিলো। ফাতিন ওয়াশ রুমে যেতেই আনতারা ছুটে যায় রাশিদের কাছে। ঝটপট বলে উঠে,
~ আপনি এখানে কেন রাশিদ ভাই?
~ এখানেই তো থাকার কথা!
~ মানে?
~ বুঝতে পারছো না? যার জন্য গ্রাম ছাড়লাম, যার জন্য শহুরে ভিড়ভাট্টায় ঘাঁটি গাড়লাম, তাকে রেখে অন্য কোথাও থাকি কি করে! খুঁজে খুঁজে ঠিক এখানেই চাকরি নিলাম, আমার পাশের ফ্ল্যাট টা আগেই ভাড়া নিয়ে রেখেছিলাম! নাহলে হয়তো অন্যকারো দখলে থাকতো!
চলবে….?
(অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তাই ছোট এবং দেরী হলো। দুঃখিত এর জন্য। রিয়েক্ট করার অনুরোধ রইলো। শুকরিয়া!)