শর্ত অন্তিম পর্ব(শেষ খন্ড)

0
925

#শর্ত
#লেখনীতে:অনুসা রাত(ছদ্মনাম)
#অন্তিম পর্ব(শেষ খন্ড)

৪ বছর পর….
______________________________
বিছানার সামনে দাঁড়িয়ে কাপড় ভাজ করছে রাত।আচমকা পেটে কারো হাতে স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠে সে।কিন্তু স্পর্শ টা পরিচিত লাগায় আর কোনো রিয়াকশন দেয় না।মুচকি হেসে বলে,

-“কলেজে কখন যাবে?”

শিশির রাতকে নিজের সাথে মিশিয়ে বলতে লাগে,

-“ধূর দেরী আছে।”

-“দেরী নাই।”

বলেই সে নিজেকে শিশিরের থেকে ছাড়িয়ে নিলো।শিশির ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,

-“ইয়ার,এই মহিলাটা মুড নষ্ট করতে এক্সপার্ট।”

রাত কাপড় গুলো আলামরিতে রাখতে রাখতে চোখ বড় বড় করে বলে উঠে,

-“এই মহিলা কাকে বললে?নিজে কি? বুইড়া ধামড়া একটা।”

শিশির রাতের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,

-“হ্যা তুমি তো পরী। আমি নাহয় বুইড়া।”

রাত আড়চোখে তাকালো একবার।শিশিরের মনোভাব ভালো ঠেকছে না। শিশির রাতকে খপ করে ধরে ফেলার আগেই রাত সরে গেলো।তারপর চোখ রাঙিয়ে বললো,

-“একটু পরেই সায়ান আর শিরাত আসবে।একদম এসব চলবে না।”

-“ওরা আসতে দেরী আছে রাত।”

শিশিরের অসহায় মুখটাকে পাত্তা দিলো না রাত।মুখ ভেংচি কেটে বললো,

-“তুমি কি কলেজে যাবেনা?”

শিশির রাতের হাত ধরে নিজের দিকে টেনে নিলো।হাত দিয়ে ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,

-“এত সুন্দর পরী রেখে তো কোথাও যেতে মন চায়না গো।”

রাত শিশিরকে চিমটি কেটে বললো,

-“সারাদিন তো কত কচি কচি পরীদের ভিরে থাকেন।জানি না আমি?”

-“ওরা তো ছাত্রী।”

-“আমিও ছাত্রীই ছিলাম।”

বলেই রাত শিশিরের হাতে একটা বাড়ি দিলো।শিশির আবারো রাতকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-“আজ যেতে হবে না কলেজে।”

-“জানতাম!না যাওয়ার বাহানা।যেন তিনজন মিলে আমায় জ্বালাতে পারেন।”

-“নাহ,ভালোবাসা দিতে পারি।”

বলেই শিশির রাতের গালে শক্ত এক চুমু খেয়ে বসলো।রাত কেঁপে উঠলো।শিশিরের শক্ত হাতের উপর হাত রেখে বললো,

-“লিভ মি।”

শিশির শুনলো না।রাতকে জড়িয়ে ধরে রইলো।ঠিক তখনই কাঁদতে কাঁদতে ঘরে ঢুকলো চার বছরের ছোট্ট শিরাত।রাত আর শিশিরের একমাত্র মেয়ে।হ্যা,চার বছর আগে আল্লাহ তায়ালার অশেষ রহমতে রাত আর শিরাত দুজনই বেঁচে যায়।মিতালি এখনো জেলে রয়েছে। নুশান পুলিশি ঝামেলা করতে চেয়েছিল কিন্তু লাভ হয়নি।রাত শুধু নুশানকে উদ্দ্যেশ্য করে একটা কথাই বলেছিল,

-“কার জন্যে এত করছেন নুশান?যে শিশিরকে ছেড়ে আপনার কাছে যেতে পারে সে কি আপনাকে ছেড়ে আরেকজনের কাছে যেতে পারে না?”

নুশান সেদিন চুপচাপ বাসায় চলে যায়। হয়ত কিছুটা তার মাথায় ঢুকেছে।হয়ত সে মিতালির পিছু ছেড়ে নিজের কাজে ফোকাস করবে।নুশান এখন বিদেশে রয়েছে। তার আর মিতালির ডিভোর্সও হয়েছে।মিতালি অনেকবার রাতের সাথে দেখা করতে চেয়েছে আর মাফও চেয়েছে কিন্তু রাত না দেখা করেছে আর না মাফ করেছে। এই পাপের কি আদৌ ক্ষমা হয়?সেদিন যদি আল্লাহ না বাঁচাতেন তাহলে আজ রাতই বা কই থাকত আর শিরাতই বা কই থাকত।তাছাড়া সায়ান মিতালিকে ভালোই জব্দ করেছিল। নয়ত রাতের আরো ক্ষতি হত।তাইত আজও সে জেলের ভাত খাচ্ছে।ভেবেই রাত দীর্ঘশ্বাস ফেললো।মেয়ের কান্না দেখে শিশির রাতকে ছেড়ে দিলো।দ্রুত মেয়ের কাছে গিয়ে কোলে নিয়ে বললো,

-“কি হয়েছে প্রিন্সেস,তুমি কাঁদছো কেন?”

বোনের কান্না শুনে সায়ানও দৌড়ে এসেছে। রাগী গলায় বলছে,

-“কে কি করেছে বনু?কাঁদছিস কেন?”

রাত মুখ টিপে হেসে বললো,

-“এইযে এলেন বোনের রক্ষা কবজ।”

৮ বছরের ছোট্ট সায়ান তো বেশ গম্ভীর আর রাগী।সে শিরাতকে উদ্দ্যেশ্য করে আবারো বললো,

-“বল বনু!”

শিরাত কাঁদো কাঁদো গলায় বললো,

-“নতুন আন্টির ছেলে আবির ভাইয়া আমায় মেরেছে।”

-“কিহ!আবিরের এত্ত সাহস!”

বলেই সায়ান বের হয়ে গেল। রাত তো সায়ানের রাগ সম্পর্কে অবগত। সে ব্যস্ত গলায় বলতে লাগে,

-“নিশ্চয়ই দুষ্টুমি করেছে তোমার মেয়ে শিশির। হয়ত আবিরকেও মেরেছে আর তাই আবিরও মেরেছে।এখন সায়ান যে কি করবে আবিরকে!আমি ওকে আটকাতে গেলাম।”

বলেই রাত ছুট লাগায়। শিশির শিরাতকে কোলে নিয়ে আস্তে আস্তে রুম থেকে বের হচ্ছে আর বলছে,

-“মাম্মা তুমি কি আবিরকে মেরেছো?”

শিরাত কিছুক্ষণ চুপ করে বাবার গলা জড়িয়ে থাকে। তারপর আস্তে করে বলে,

-“তুমি কাউকে বলবে না তো?”

-“একদম না!”

-“আমি না ওকে কামড় দিয়েছি হাতে।”

শিশির বুঝে গেলো।মায়ের পুরো কার্বন কপি হওয়া শিরাতই আবিরকে কে ক্ষেপিয়েছে।তবুও মেয়ের মুখ থেকে কথা বের করতে সে বলে,

-“কেন মেরেছো মাম্মা?কি করেছে ও?”

-“আমায় চকলেট দেয়নি।”

-“আমি না তোমায় কত দিই? তবুও ওর থেকে নিতে হয়?”

-“ওটা ইয়াম্মি ছিল।”

শিশির দীর্ঘশ্বাস ফেললো।মেয়েকে নিয়ে আবিরদের বাসার সামনে হাজির হলো।রাত সায়ান আর আবিরকে থামাচ্ছে।আবিরের মা নাতাশা বলছে,

-“ভাবী থাক,আবিরকে আমি বকে দিবো।বাচ্চাদের এভাবে মারে কেউ!”

আবির মাকে রাগী গলায় বলে,

-“ও আমায় কামড়েছে মাম্মি।”

নাতাশা চোখ রাঙায়। সায়ান আবিরকে ঘুষি দিয়ে বলে,

-“একদম আমার বোনকে কিচ্ছু বলবি না।আমার বনু সবচেয়ে ভালো।ও কখনো ভুল করতেই পারে না।আমার রাজকুমারী ও। আরেকবার ওকে মারলে হাতটাই ভেঙে দিবো।”

বলেই সে শিরাতের হাত ধরে ঘরের দিকে চলে যায়।শিরাত পিছনে ফিরে আবিরের দিকে তাকায়। আবির রাগে ফুঁসছে। শিরাত ভেঙালো তাকে।চোখ এড়ায় না শিশিরের।বিরবির করে বলে উঠে,

-“এ তো পুরোই মায়ের সব।”

রাত নাতাশার সাথে সব মিটমাট করছে।বুঝাচ্ছে যে ছেলে ছোট আর করবে না।শিশির মাথা চুলকে বলে,

-“মা -মেয়ে আর ছেলে একই রকম।গুন্ডা টাইপ।আমিই ভালো মানুষ।”

রাত শুনে ফেললো।চোখ ছোট ছোট করে তাকালো শিশিরের দিকে।শিশির জোরপূর্বক হাসলো।

____________________

সায়ান আর শিরাতের ছোট্ট রুমের বিছানায় বসে আছে রাত।সায়ান আর শিরাত দুজনই দুদিক থেকে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।শিশিরও রাতের কোমড় জড়িয়ে রাতের কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে বসে আছে।রাত সায়ান আর শিরাতকে বিভিন্ন গল্প শোনাচ্ছে।একসময় সায়ান তার মাকে প্রশ্ন করে,

-” মাম,রাজকুমারীর বিয়ে হয়ে গেল?”

-“হ্যা। তারপর তারা সুখে-শান্তিতে রইল।”

-“কিন্তু রাজকুমারী তো বিয়ের পর চলে গেলো তার বরের সাথে।”

শিশির হেসে সায়ানের গাল টেনে বললো,

-“যেতেই হয়। যেমন তোমার মাম এসেছে।তোমার দাদু এসেছেন।”

-“তাহলে কি বনুও চলে যাবে মাম?”

সায়ানের এমন প্রশ্নে শিশির আর রাত মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে।সায়ান তার মায়ের আচল ধরে বললো,

-“ও মাম বলো না!”

-“হ্যা।যাবেই তো।বনুর জন্যে রাজকুমার আসবে।”(মুচকি হেসে)

সায়ান ভ্রু কুঁচকে বললো

-“একদম না। আমি আমার বনুকে কোথাও যেতে দিব না।এহ,কোথাকার কে এসে কিনা আমার বনুকে নিয়ে যাবে।”

বলেই সে ঘুমন্ত শিরাতকে জড়িয়ে ধরলো।শিশির মুখ টিপে হাসতে লাগলো।রাত শিশিরকে চোখ রাঙায়।সায়ানের মাথায় হাত দিয়ে বলে,

-“এমন বলে না আব্বু। সব মেয়েকেই একদিন যেতে হয় পরের বাড়ি।”(দীর্ঘশ্বাস ফেলে)

শিশির ঘুমন্ত শিরাতের কপালে চুমু দিয়ে বললো,

-“হ্যা,শিরাতের জন্যেও রাজকুমার আসবে।”

সায়ান শিরাতকে আগলে বললো,

-“আমি আমার বনুর জন্যে বেস্ট রাজকুমার আনবো। ওয়ার্ল্ডের বেস্ট থাকবে একদম।যে আমার বোনকে আমার মত খেয়াল রাখবে।চকলেট দিবে।কিন্তু ওকে কেউ বাজে কিছু বললে একদম মেরে তক্তা বানিয়ে দিবো।”

বলেই সায়ান ফোঁস ফোঁস করতে লাগে।রাত আর শিশির শুধু একে-অপরের দিকে তাকায়।সায়ান যে তার বনুকে ভালোবাসে এটা তারা জানতো কিন্তু এতটা যে ভালেবাসে আজ সেটা তারা উপলব্ধি করছে।ভাইয়ের এমন ভালোবাসা যে পায় সে তো খুব ভাগ্যবতী!তেমনি শিরাতও!

🖤

শিশিরের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে রাত। রাত্রি বাজে হয়ত তিনটা।দীর্ঘ ভালোবাসাময় মুহূর্তের পর শিশিরের উম্মুক্ত বুকেই রাতের শান্তি লাগে।শিশির রাতের খোলা চুলে হাত বুলাচ্ছে আর বলছে,

-“রাত,তোমার আম্মু -আব্বুর সাথে কথা বলো না কেন?”

-“…”

-“আমার সাথে বিয়ে দিয়েছে বলে?এত বাজে আমি রাত?”(মুচকি হেসে)

রাত শিশিরের মুখ চেপে ধরে বললো,

-“একদম না।আমার তাদের কর্মকান্ডের উপর রাগ।তাদের স্বার্থপরতার উপর রাগ।”

-“তোমাকে ওই বাজে ছেলেটার হাত থেকে বাঁচানোর জন্যেই বিয়েটা দেয় রাত।নয়ত দিতো না।কোন বাবা-মা নিজের মেয়েকে এক বাচ্চার বাপের হাতে তুলে দেয়?”

রাত শিশিরের বুকে গরম নিঃশ্বাস ছেড়ে বললো,

-“বাদ দিন তো।ভালো লাগছে না।”

বলেই সে উঠে বসলো।শিশির রাতকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-“এবার অন্তত সবাইকে ক্ষমা করে দেয়া উচিত।”

-“হুম।”

রাত চুপ করে রইলো।এ বিষয়ে সে আর কথাই বলতে চায় না। শিশির আবার বললো,

-“আমাদের সায়ানকে দেখলে? আমরা মরে যাওয়ার পরেও বোনকে আগলে রাখবে।”

-“হুম। ওর ভরসায় আমরা শিরাতকে রেখে যেতে পারব।”

-“একদম”(হেসে)

-“রাত?”

-“কি?”

-“তোমার হাসিটার প্রেমে পড়ে গেছি।ভালোবাসি। আমাকে কখনো ছেড়ে যেয়ো না প্লিজ!”

বলেই সে রাতকে ঝাপটে ধরলো।রাত হাসলো।আর ভাবলো,

-“শেষ #শর্ত টা আবারো জিতলাম।

ভেবেই সে শিশিরকে নিয়ে ঠাস করে বিছানায় পড়ে গেলো।জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আর রাতের এই শেষ #শর্ত জেতা দিয়েই গল্পের সমাপ্তি।সবশেষে সে তার ভালোবাসাকে নিজের করেই নিলো।শিশিরও নিজের সাদা-কালো জীবনে প্রাণের অস্তিত্বের সন্ধান পেলো।
.
এদিকে সায়ানের মাঝরাতে ঘুম ভেঙে যায় ভয়ংকর এক সপ্ন দেখে। তার বনুকে আবির তার থেকে নিয়ে নিচ্ছে।সায়ান ভয় পেয়ে যায়।শিরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে সে ঘুম। সায়ান শিরাতের মাথায় হাত দিয়ে বলে,

-“আমার বোনকে নেয়া এতই সহজ? ৩টা বড় বড় #শর্ত দিয়ে তবেই না আমি আমার বোনকে দিবো।”

ভেবেই সে হাসলো। বোনের শরীরে চাদর দিয়ে দিলো। এখানেই কি গল্পের ইতি নাকি নতুন কোনো গল্পের সূচনা?

______________________________ সমাপ্ত
____________________

(ভুলক্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। একটা সুন্দর মন্তব্য উপহার দিয়েন☺️💌)

(আজকে অন্তত নেক্সট লিখবেন না। গল্পটা পড়ে কেমন লেগেছে সেটা জানাবেন।শিশির আর রাত আপনাদের থেকে অনেক ভালোবাসা পেয়েছে আবার ঘৃণাও🙃।আবার নতুন কোনো গল্প নিয়ে হাজির হবো।আশা রাখছি এভাবেই পাশে পাব।ততদিন ভালো থাকবেন,সুস্থ থাকবেন।ভালোবাসা অবিরাম😊🤍)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here