“লুকোচুরি”
পর্ব- ৮
(নূর নাফিসা)
.
.
রাতে ফেসবুক গ্রুপের এক পোস্টে ছেলে বাবুর ছবি দেখলো রিজোয়ানা। বাবুটির মাথায় সাহেবি টুপি, চোখে সানগ্লাস, পরনে জিন্স ও টিশার্ট, মুখে ঝুলে আছে মিষ্টি হাসি। তার ভালো লাগায় সে পোস্টে কমেন্ট করলো, “মাশাআল্লাহ, সো কিউট বেবি!?”
তার ঠিক কিছুক্ষণ পরেই কমেন্টের রিপ্লাই এলো, “রিয়েলি?? আমাদের বেবিরা আরও বেশি কিউট হবে।?”
ইভান করেছে কমেন্টের রিপ্লাই! রিজোয়ানা এংরি রিয়েক্ট দিয়ে রিপ্লাই করলো, “তুমি এখানে কি করছো!?”
“তুমি যেখানে, আমি সেখানে। সে কি জানো না…??”
“প্রয়োজন নেই তো জানার। আরেকবার দেখলে ঠ্যাং কেটে রেখে দিবো।?”
ইভান হাহা রিয়েক্ট দিলো। এর পরপরই কমেন্ট ডিলিট করে দিলো রিজোয়ানা। ইভানের জন্য যত্রতত্র কমেন্ট করাও দুষ্কর হয়ে উঠেছে তার। লোকটা যেখানে সেখানে লজ্জায় ফেলতে প্রস্তুত! কমেন্ট ডিলিট করে সারতে পারেনি, এদিকে ইভান কল করে বসলো। রিজোয়ানা রিসিভ করে বললো,
“কি হয়েছে আবার?”
“কমেন্ট ডিলিট করলে কেন?”
“আপনি রিপ্লাই করলেন কেন?”
“তোমাকে জানাতে, আমাদের বেবিরাও সো মাচ কিউট কিউট হবে যে।”
“শাট আপ!”
“আচ্ছা, বেবিদের নাম কি রাখবে?”
“আযব তো! সমস্যা কি আপনার?”
“আচ্ছা, এমন নাম রাখবে যেটা দুজনেই ডাকতে পছন্দ করবো।”
“ফোন রাখলাম আমি। জরুরি কোনো কথা আছে?”
“এতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলছি, সেটা কি তোমার কাছে জরুরি মনে হচ্ছে না?”
“না হচ্ছে না। আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাবো।”
“রিজু, ডু ইউ নো? তোমাকে ইদানিং বাচ্চার মা, বাচ্চার মা লাগে।”
রিজোয়ানা খিলখিলিয়ে হেসে বললো,
“লাগুক। আমি বুড়ি, আপনি বুড়ো। হয়েছে?”
বিপরীতে ইভান হেসে বললো,
“ওকে, ঘুমাও। সেহেরিতে ডেকে তুলো।”
“পারবো না।”
“কথায় কথায় না বলার অভ্যাস বর্জন করো। আল্লাহ পাপ দিবে।”
“আল্লাহ, আমার সব পাপ তোমার উপর ঢেলে দেক।”
“কি বউরে বাবা! তুমি তো দেখছি যত্রতত্র আমাকে ফাসিয়ে দিয়ে চলে আসবে!”
“প্রয়োজন হলে দিবো না আবার! হিহিহি…”
.
প্রথম রমজানে মায়ের সাথে ইফতার তৈরি করে বেশ আনন্দিত রিজোয়ানা। তারপর বাবামা ও ভাইয়ার সাথে একত্রে ইফতার করে উপভোগ করলো তার সার্থকতা। নিজের জন্য আলাদা করে চপ তুলে রাখা, ভাইয়ার জন্য আলাদা করে চপ বাটিতে তুলে রাখা বরাবরই চলে। এবারও ব্যতিক্রম কিছু না। ইফতারের পর অবসরে তারা সেই চপ খায়। মাঝেমধ্যে কাড়াকাড়িও চলে৷
দ্বিতীয় রমজানে, সকালবেলা অয়ন নিয়নের রুমে থেকেই এদিকে রিজোয়ানার মুখ নড়তে চড়তে দেখে ইভান বড় বড় চোখ করে তাকালো। রিজোয়ানা তখন বারান্দার দরজার পাশে হাটছিলো। ইভানকে দেখে সে-ও চুপসে গেছে। ইভান ঘন ঘন পলক ফেলে বারান্দায় এসে বললো,
“এসব কি হচ্ছে? হ্যাঁ?”
“কি হচ্ছে?”
“রমজান মাস, আর তুমি কি না! মা যদি দেখে তার বউ মা এসব করে বেড়ায় তো কি ভাববে বলো তো! এতো বড় মেয়ে রোজা রাখে না, সেই জবাবদিহিতা কি আমাকে দিতে বলবে না?”
“আপনার মা যদি মুর্খ হয়ে থাকে, তবে বলবে।”
“শ্বাশুড়ি মায়ের অপমান করো মেয়ে?”
“আমি কোথায় অপমান করলাম? বরং আপনি নিজের বউকে অপমান করছেন।”
ইভান একগাল হেসে বললো,
“খাবে ভালো কথা। অন্যদিকে থেকেও তো খেতে পারো। মা নাহয় দেখেও কিছু বলবে না। তোমার গুড্ডু সুড্ডুও তো রোজা রাখে। তাদের নজরে যদি পড়ে যাও সারাদিন গান গাইবে তোমায় নিয়ে।”
“আমি ওদিকেও খেতে পারবো না, বাবা ভাইয়ের সামনে পড়ে যাওয়ার লজ্জায়, নিজের রুমে এসেও খেতে পারবো না তোমাদের লজ্জায়। তো আমার খাওয়াদাওয়াই বন্ধ করে দেওয়া উচিত। খাবোই না আর।”
“আহা! তোমাকে খেতে নিষেধ করছে কে! খাও, নিজের রুমেই খাও। পর্দা টেনে দিয়ে খাও।”
“না, খাবোই না। পর্দাও টানার দরকার নেই। তখন আবার দেখা যাবে কেউ পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে বলবে এভাবেও খেয়ো না।”
“হা হা হা! ভালোর জন্য বললাম, ভালো লাগে না। যেভাবে ইচ্ছে খাও। তুমি লজ্জায় পড়লে তো আর আমার কিছু না।”
“হু, তোমার কিছুই না।”
“দেখো, ঘটনা ঘটে গেলে আমি কিন্তু কোনো সামাল দিতে পারবো না।”
“চুপ থাকো। এতো সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছো এখন?”
“অফিসে।”
“হাফ টাইম করেছে?”
“হাফ না। দুই ঘন্টা সময় কমিয়েছে। আসি। বেশি বেশি খাওয়াদাওয়া করো। একটু পরপরই খেয়ো। যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে খেয়ো। ভুলে আবার কাউকে খাওয়ার জন্য ডেকে বসো না যেন। ঠিক আছে?”
“হুহ্!”
ইভান মুচকি হেসে চলে গেলো বিপরীতে রিজোয়ানা ভেঙচি কাটলো। দুপুরের দিকে মেহমান এলো বাড়িতে। লুবনার এক স্কুল ফ্রেন্ড এসেছে তার স্কুল পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে। রিজোয়ানা প্রথমে মিটিমিটি হাসছিলো তার মায়ের বান্ধুবীর এইটুকু বাচ্চা দেখে। মায়েরা মায়েরা তো সমবয়সী অথচ তারা ভাই বোন এদিকে কত বড়! আর উনার ছেলের বয়স মাত্র নয় বছর! তবে পিচ্চিটাকে দেখে রিজোয়ানার ভালো লেগেছে। খুবই মিষ্টি চেহারা। আর তাদের দেখে কি লজ্জা! রিজোয়ানা তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে সে তার মায়ের পেছনে লুকানোর চেষ্টা করে। রিজোয়ানা তার হাত ধরে টেনে সামনে এনে বললো,
“ভয় পাও আপুকে? নাম কি তোমার?”
পিচ্চিটা এক আঙুল মুখের ভেতর দিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
“ইয়াশ।”
“বাহ! সুন্দর নাম। মুখে হাত দেয় না। কিসে পড় তুমি?”
“থ্রিতে।”
সাথে সাথেই রিজোয়ানা বিস্মিত হয়ে উঠলো মিষ্টি চেহারার ভেতরের ইষ্টি দেখে! সে চমকে উঠে বললো,
“ওমা! তোমার দাত দেখি সব পোকায় খাওয়া!”
“আমি পোকা খাই না তো। আমি শুধু চকলেট খাই।”
“ও…! এজন্যই তো পোকা তোমাকে খায়। আর চকলেট খেয়ো না। ঠিক আছে?”
বাচ্চাটা মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক জবাব দিলো। রিজোয়ানা তার হাত ধরে লিসানের রুমের দিকে গেলো লিসান ঘুম থেকে উঠেছে কি না দেখার জন্য। আজ তার অফিসের ছুটি তাই বাসায়ই আছে সে। রুমে এসে দেখলো লিসান মাত্র উঠেছে ঘুম থেকে। গোসল করবে তাই কাপড়চোপড় নিচ্ছে। তাদের দেখে বললো,
“এইটা আবার কে?”
“মায়ের বান্ধুবীর ছেলে। কিউট না ভাইয়া?”
“দাত কই?”
রিজোয়ানা খিলখিলিয়ে হেসে বললো,
“ছিনতাই হয়ে গেছে।”
“আহারে! বাবু, তোমার বাবাকে বলবে তারাতাড়ি পুলিশকে জানাতে। হুম?”
“আচ্ছা।”
রিজোয়ানা বললো,
“ভাইয়া, এ নাকি মায়ের স্কুল ফ্রেন্ডের বাচ্চা। আর দেখো, আমরা মায়ের কত বড় বাচ্চা! ভাবছিলাম আইন নির্ধারিত বয়সের শুরুতে যদি তুমি বিয়ে করে নিতে আজ তোমারও এই বয়সী একটা বাচ্চা থাকতো।”
“এটাকেই রেখে দে।”
বলতে বলতে লিসান বাথরুমে চলে গেলো। রিজোয়ানা হাসতে হাসতে পিচ্চিকে নিয়ে তার রুমের দিকে চলে গেলো।