#লাল_নীল_ঝাড়বাতি
#পর্ব_৭
#নাফিসা_আনজুম
নিচে গিয়ে দেখি ট্রাক ভর্তি যতো ধরনের ফার্নিচার আছে সব। শাশুড়িমা হাঁসি মুখে দাঁড়িয়ে আছে, আমি নিচে যেতেই বললো,,
বউমা তোমাদের বাড়ি থেকে এতো জিনিস দেবে বলো নি তো।
এমন সময় একটা ছেলে একটা ব্যাগ নিয়ে এসে শাশুড়ি মায়ের সামনে রাখলো, ব্যাগ খুলতেই দেখি ভেতরে স্বর্নের গহনা আপুর সহ। এসব দেখে শাশুড়ি মার চোখ ছানাবড়া সাথে আমি আর আপুও অবাক হয়ে গেছি।
আমরা জানি যে আমাদের মিথ্যা কথা বলা নিষেধ কিন্তু যে মিথ্যা বললে কোনো দন্দ কমে যায় সেটুকু বলাই যায়। কাল আমি আমার বাবাকে বলেছিলাম খালি হাতে মেয়ে দিছো কেনো, মেয়েকে বিয়ে দিলে সাথে আরো কিছু দিতে হয় জানো না। আমার এই কথাটা আয়ানের কান পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। বাবা বাড়িতে গিয়ে লোন করে কিছু জিনিস কিনেছে সাথে আয়ান বাকি সবকিছু দিয়েছে কিন্তু শাশুড়িমা জানে সব আমার বাবা দিয়েছে। এছাড়া বাকি সবাই সত্যিটা জানে। আয়ান নিজেই সবকিছু দিতো কিন্তু বাবা মানতে চায় নি তাই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী যেটুকু সম্ভব দিয়েছে।
সারাটা দিন এগুলা গোছগাছ করতেই গেলো। পুরনো জিনিস সরিয়ে সব নতুন জিনিস রাখা হলো। সন্ধ্যার আগে আগে রুমে গেলাম। দেখি উনি বিছানায় বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছে। আমাকে রুমে ঢুকতে দেখে বললো, গোসল করে আসো বাহিরে যাবো।
প্রায় চল্লিশ মিনিট পর বেরোলাম। দেখি উনি ল্যাপটপ রেখে ফোন চাপতেছে। আমি বেরোতেই আমার দিকে তাকালো,
কালো শাড়ি , ভেজা চুল সদ্য গোসল করা নারী(বউ) দেখলেই যেনো নেশা ধরে যায়। ভেজা থাকার কারনে পুরো শরীর যেনো চকচক করছে। এইভাবে দেখলে যে কোনো স্বামি পা*গল হতে বাধ্য। আর কতো পা*গল করতে চাও ঝুমুর। এবার তো স্বীকার করো ভালোবাসো। (মনে মনে)
আমি কাছে যেতেই উনি উঠে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো,,
আর কতো সময় লাগবে তোমার,,
এই কথাটা শুনে কান পর্যন্ত গরম হয়ে গেলো। কিভাবে বলবো আমি, আপনার ভালোবাসা চাই আমার, সম্পুর্ন ভালোবাসা চাই। আপনি বুঝে নিতে পারেন না। আপনি কি আমার চোঁখের ভাষা পরতে পারেন না।
কি ভাবছো ঝুমুর,,
ক কি কিছুনা,,
আচ্ছা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও, বাহিরে ডিনার করব।
কালো শাড়ির সাথে সাদা ঝুমকা কানে দিলাম, চুলগুলো আচড়িয়ে মুখে ক্রিম দিয়ে হালকা গোলাপি কালার লিপস্টিক পরলাম। ব্যাস পাঁচ মিনিটে রেডি।
এদিকে,,,
ফাহিম আয়ান ভাইয়া এই জিনিস গুলো কেনো নিয়ে আসলো।(রজনি)
ফাহিম রজনিকে পেছন থেকে জড়িয়ে কাঁধে থুতনি রেখে বলল, যাতে মা তোমাদের কিছু বলতে না পারে,, দেখো রজনি আমরা মা কে এজন্যই মিথ্যা বলেছি যাতে মা খুশি থাকে। তোমাদের সাথে মিলেমিশে থাকে। যদি মাকে বলতাম যে ফাহিম ভাইয়া কিনেছে তাহলে হয়তো মা এসব নিয়ে তোমাদের কথা শোনাতো।
উনি আমাদের জন্মদাত্রী, ওনাকে তো কিছু বলতেও পারি না। ন্যায় অন্যায় দেখতে গেলে মায়ের মন খারাপ হবে তাই মায়ের কাছে লুকানো ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। তবুও যেনো সবাই হাঁসিখুশি থাকে।
সত্যি তোমাদের মতো স্বামি হয় না ফাহিম। তোমরা দুই ভাই যে এতো ভালো, পৃথিবীর সব স্বামি যদি এমন হতো তাহলে কোনো মেয়ে ডিভোর্সি হতো না।
শশুর বাড়িতে স্বামিরায় সব থেকে বেশি আপন। স্বামি ভালো না হলে সেই মেয়ের জ্বীবন এমনি তেজপাতা।
[ Follow plz 🙏 ~~ গল্প ক্যাফের ক্যানভাসツ ]
হুম্মম বউ, এবার চলো আয়ান ভাইয়া নিচে অপেক্ষা করতেছে।
হ্যা এইতো আমার হয়ে গেছে, শুধু হিজাবটা পারবো। পিনগুলা এগিয়ে দাও।
দুই বউ বের হয়ে শাশুড়ি মার রুমে গেলো বলতে।
রজনী: মা আমরা যাই
হ্যা মা,সাবধানে যাও।
ঝুমুর: মা আপনি কি খাবেন বলে দেন, আপনার জন্য নিয়ে আসবো।
তখনি রাজন চৌধুরী রুমে ঢোকে,, বউমারা ডিনারে যাচ্ছ।
হ্যা বাবা,,
আচ্ছা যাও, আরেকদিন আমরাও যাবো তোমাদের সাথে।
ওনার কথা শুনে ঝুমুরের মনে হলো উনিও যেতে চাচ্ছিলেন কিন্তু ছেলে আর ছেলের বউরা ঠিক করেছে তাই কথাটা বলতে পারলো না। তাই ঝুমুর চট করে বলে উঠলো, বাবা মা আপনারাও চলুন না আমাদের সাথে।
ঝুমুরের সাথে সাথে রজনী ও বললো। রাজন চৌধুরী প্রথমে ইতস্তত বোধ করলেও একটু পর রাজি হয়ে গেল। তারপর চারজনে রেডি হয়ে নিচে গেলো।
আয়ান আর ফাহিম ওদের সবাইকে দেখে অবাকের সাথে খুশিও হয়েছে। আসলে বউদের সাথে বাবা মায়ের হাঁসি খুশি দেখলে যে কোন স্বামি খুশি হয়।
পরেরদিন রাতে,,
ঝুমুর ওর সব জামা কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছে, কালকে সকালেই ওদের ফ্লাইট। আজকে বিকেলে শপিং করতে গেছিলো। এখন সবকিছু গোছগাছ করছে। আয়ান ল্যাপটপে কিছু একটা করছে।
সকালে উঠে নাস্তা করে সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো ইয়ারপোর্টে।। দশটায় উড়াল দিলো আমেরিকার উদ্দেশ্যে। ঝুমুর আজকে খুব খুশি, এই প্রথম বিমানে ওঠা আর বাংলাদেশ বাদে বাহিরে কোনো দেশে যাওয়া। এমনিতেই ঘোরাঘুরি খুব পছন্দ তার ওপর বাহিরের দেশ।
বিশ ঘন্টার জার্নি শেষে অবশেষে পৌঁছে গেলো আগে থেকে বুক করে রাখা হোটেল এ। ঝুমুর তো খুব ক্লান্ত ও এসে গোসল করেই ঘুম। আয়ান এর আগেও দুইবার এসেছিলো আর সেই দুইবার এই হোটেলেই ছিলো তাই এখানকার অনেককিছুই চেনা।
প্রথম সাতদিন আয়ান খুব ব্যাস্ততায় সময় কাটালো। বিকেলে শুধু একটু সময় আশেপাশে ঘুরলেও দুরে যেতে পারে নাই। অনেক সময় রাত ও জাগতে হয়েছে আয়ানকে। পরের সাতদিন অনেকটা ফ্রি, ঝুমুরের যেখানে যেখানে যেতে ইচ্ছা সেখানেই গেছে। সর্বপ্রথম গেছে নায়াগ্রা জলপ্রপাত দেখতে। যদিও হোটেল থেকে অনেকটাই দুরে কিন্তু তবুও আয়ান একবারের জন্যও আপত্তি করে নাই।
কালকে বাংলাদেশে আসবে।আজকে সবার জন্য শপিং করবে। এর মাঝে খবর পেলো রজনি মা হতে চলেছে। ঝুমুর তো মহাখুশি। শপিং এ গিয়ে সবার জন্য কেনাকাটা করলো। সাথে ছোট বাচ্চার অনেকগুলা জামা। ছেলের ও মেয়ের ও। জানে না তো কি বাচ্চা হবে তাই দুইজনারে কিনলো। এমনো ড্রেস আছে যেগুলা বাচ্চার বয়স পাঁচ হলেও পরা যাবে। পছন্দ হয়েছে কিনেছে।
অবশেষে দুইদিন পর বাংলাদেশে ফেরত আসলো। বাড়িতে এসে সবার প্রথম বোনকে জড়িয়ে ধরলো।
ওর ইচ্ছা যেনো একটা ছেলে হয়, কিন্তু এই বাড়ির সবার ইচ্ছা যেনো একটা মেয়ে হয় কারন এই বাড়িতে মেয়ে সন্তান নেই।
আয়ান ও ফাহিম কে জড়িয়ে ধরে কংগ্রেস জানালো।
ভাইয়া তুমি কিন্তু বড় আব্বু হচ্ছো,,
হুম, তোর পর এই বাড়িতে একটা পিচ্চি আসতে চলেছে। যে সারাক্ষণ আমাদের বাড়িটা মাতিয়ে রাখবে।
তারপর রজনী কে ডেকে বললো,
ছেলে হোক বা মেয়ে তাকে ডাক্তার বানাবো। এতে কি তোমার কোনো আপত্তি আছে।
না ভাইয়া, আমার কোনো আপত্তি নেই। আমারো এমনটাই ইচ্ছে ছিলো।
আচ্ছা ঠিক আছে, আমার তরফ থেকে তোমার এটা গিফ্ট পাওনা থাকলো। সময় মতো পেয়ে যাবা।
পাশ থেকে ফাহিম মাথা চুলকিয়ে মিনমিনিয়ে বললো,,
কষ্ট করলাম আমি আর গিফ্ট পাবে ও। এটা কেমন কথা।
ফাহিম ভাইয়ার কথা শুনে আমি জোড়ে হেঁসে দিলাম আর উনি চোখ রাঙিয়ে আমার দিকে একবার ফাহিম ভাইয়ার দিকে একবার তাকিয়ে উপরে চলে গেলো। আর ফাহিম ভাইয়াকে বললো তোর গিফ্ট ও পেয়ে যাবি।
সময় চলছে আপন গতিতে,,
আমেরিকা থেকে আসা একমাস হয়ে গেছে। যে প্রজেক্ট এর জন্য আমেরিকা গেছিলো সেটাও পেয়ে গেছে। অফিসে কাজের প্রুচুর চাপ। আমার শশুরের
বুকের ব্যাথাটা বেড়েছে তাই একদম বেড রেস্ট। শাশুড়ি এখন কোনো কিছুতে বাধা দেয় না। আর আমি বা অতোটা দুষ্টুমি করি কই। প্রায় সবসময় একা একা থাকি, একা থাকলে আর কি বা দুষ্টুমি করবো। আগে বাড়িতে আপুর সাথে করতাম,আম্মুর সাথে করতাম নয়তো স্কুল কলেজে বান্ধবী দের সাথে করতাম। এর মধ্যে একদিন ভার্সিটি গিয়ে বান্ধবীদের সাথে দেখা করে আসছি। আপুর সারাক্ষণ মাথা ঘোরে, খাইতে পারে না বমি হয় এজন্য আপুও সারাক্ষণ সুয়ে থাকে তাই আমিও একা একা ফোন চাপি, নয়তো বই পরি আর খুব খারাপ লাগলে বাহিরে থেকে ঘুরে আসি নয়তো ওনার সাথে ফোন এ কথা বলি। উনি যতোই ব্যাস্ত থাকুক না কেনো আমি ফোন দিলে কখনো আমাকে নিরাশ করে না, কথা বলবেই।
ফাহিম ভাইয়া কয়েকদিন হলো অফিসে যায়, বাবা অফিসে না যাওয়ায় ওনাকে একা একাই সব সামলাতে হচ্ছিলো তাই ফাহিম ভাইয়া অফিসে যাওয়া শুরু করেছে। আগে না হয় দায়িত্ব নিতে ভয় পেতো কিন্তু এখন উনি বাবা হচ্ছে তাই সন্তানের কথা ভেবে অফিস যাওয়া শুরু করছে।
ওনার সাথে আমার খুব কম দেখা হচ্ছে, সকালে বেরিয়ে যায় আসে রাতে তবে ফোন এ সারাক্ষণ খোঁজ নেয়। কখন খাবো ,গোসল করবো,কি করবো না করবো সব।
আজকে ওনাকে তারাতাড়ি আসতে বলেছি কারন আজকে বিশেষ একটা দিন। আর আজকে আমার ওনার ভালোবাসা চাই। আর আমি যে ওনাকে ভালোবাসি এটাও বলতে চাই।
#চলবে,,