লারিসা পর্ব ৭

0
534

গল্প : লারিসা | পর্ব : সাত

উনিশ বছরের জীবনে আজ অবধি এমন পুরুষ দেখেনি মেয়েটি।
সাধারণ পুরুষেরা ভালোমানুষের ভান করে থাকে। সুযোগ পেলেই লুফে নিতে চায়। ছুঁতে চায়, শুতে চায়। কিন্তু এই ছেলেটি কোন গ্রহ থেকে এসেছে? এমন সুযোগ পেয়ে যেখানে হামলে পড়ার কথা সেখানে সে উল্টো পালাতে চাইছে! আশ্চর্য! আশ্চর্য!
অবাক চোখে চেয়ে থাকে মেয়েটি। তার চঞ্চল দু’টো চোখে অপার বিস্ময়। এই একটু সময়ে তার মনের ভেতর কেমন এক শীতল হাওয়া দিতে শুরু করেছে। এমন কোমল, শীতল অনুভূতির কারণ কি এই ছেলেটি? এই ছেলের প্রেমে কি পড়ে যাচ্ছে সে!

পুরো ঘর তন্নতন্ন করে কী যেন খুঁজছে লি রি। বিছানায় হাঁটু ভাঁজ করে বসে থাকা মেয়েটি ভেজা গলায় জিজ্ঞেস করে, “কী খুঁজছেন?”

লি রি মাথা তুলে তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। কারণ মেয়েটির গা খালি। দৃশ্যটা বিশ্রি লাগছে। তাই দৃষ্টি নিচু রেখেই জবাব দেয় সে, “ছুরি-চাকু জাতীয় কিছু একটা খুুঁজছি।”

মেয়েটি নেমে যায় বিছানা থেকে। দু’হাতে বুক ঢেকে রেখে বলে, “এদিকে তাকিয়ে কথা বলুন। ছুরি দিয়ে কী করবেন আপনি?”

লি রি একবার মেয়েটির মুখের দিকে তাকায়। তারপর দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে এসেই মেয়েটির চুলের খোঁপা খুলে নেয়। খোলা চুলগুলো উদুম পিঠের উপর আছড়ে পড়লে মেয়েটি চোখ বন্ধ করে নেয়। তার ধারণা, এবার তাকে লি রি সামলে নেবে। তাই চোখ বুঁজে নিজেকে সপে দেয় সে। কিন্তু অনেক্ষণ স্পর্শ না পেয়ে সে চোখ খুলে দেখে তার চুলে যে স্টিল আর ছোটো ছোটো পাথর দিয়ে ডিজাইন করা একটা কাটা লাগানো ছিলো সেটা দাঁত দিয়ে কামড়াচ্ছে লি রি।

“এটা কী করছেন?”

লি রি থেমে যায়। বলে, “আমাকে পালাতে হবে। আজই। নাহলে ওরা প্রতিদিন একটা করে মেয়ে পাঠাবে।” বলে আবার স্টিলের ওটায় কামড় বসায়।

“কিন্তু এটা খাচ্ছেন কেন? এটা কি খাওয়ার জিনিস?”

“খাচ্ছি না। ধারালো করছি।” বিরক্ত হয় লি রি।

“ধারালো করে কী হবে?”

এবার আর জবাব দেয় না। কাটাটা বা হাতের উপর রেখে জোরে টান দিতেই তার হাত অনেকটা কেটে যায়। মুহূর্তেই তাজা রক্তে ভরে যায় তার হাত। মেয়েটি প্রায় চেঁচিয়ে বলে, “এটা কী করলেন! হাত কাটলেন কেন আপনার? এখন তো রক্ত বেরোচ্ছে!”

“রক্তের জন্যই কেটেছি।”

“কী! রক্ত দিয়ে কী হবে?”

“আমার রক্তের গন্ধ পেয়ে ওরা ছুটে আসবে।”

“ওরা? ওরা কারা?” আগ্রহে দু’বার প্রশ্ন করে মেয়েটি। লি রি জবাব দেয় না৷ তার চেহারায় সরু হাসির ছাপ ভেসে উঠে শুধু। মেয়েটি ফের জিজ্ঞেস করে, “কারা আসবে? কারা আপনার রক্তের…”

বাকিটুকু বলার আগেই একটা অদ্ভুত শব্দ হয়। এতক্ষণ বাইরে বাজনা বাজছিল, গান-নাচ হচ্ছিল। এখন হুট করে সব থেমে গেছে। একজনের গলার আওয়াজ শোনা গেল, “সাবধান! কেউ একটা বল্লম নিয়ে এসো..”

কথা ফুরাবার আগেই অন্য একজন বলে উঠল, “চার-পাঁচটা একসাথে এসেছে। ওরা রক্ত না খেয়ে যাবে না। সবাই একত্র হও। কেউ একা থাকবে না। একা পেলেই তুলে নেবে।”

সঙ্গে সঙ্গে দূর থেকে চিৎকার শোনা গেল। মনে হলো কোনো হিংস্র প্রাণীর থাবায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার আগে আর্তনাদ করেছে কেউ একজন। জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বলে পরিস্থিতি শান্ত। সবাই কান পেতে আছে। যেকোনো সময় যে কারোর বিপদ হতে পারে। ওদের একজন নিঃশব্দে পা টিপে টিপে ঘরের ভেতর থেকে একটা বল্লম নিয়ে এসেছে। অনেকে ইশারায় মানা করছিল। তবুও সে শুনল না। সতর্ক পায়ে অন্ধকারের ভেতর হারিয়ে গেল। বল্লমটা তার হাতে এমনভাবে রাখা, যেন সামনে কিছু একটা আসলেই গেঁথে ফেলবে।

ওরা জানত, যে মানুষটা বল্লম নিয়ে গেছে, সে আর জীবিত ফিরবে না। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, কয়েক মিনিটের মধ্যেই লোকটা ফিরে এল! তার গায়ে টকটকে রক্ত! বল্লমে গেঁথে আছে একটা বাচ্চা নেকড়ে!

লোকটার মুখে সফলতার হাসি। গর্বে চোখমুখ জ্বলজ্বল করছে তার। রক্তমাখা বল্লমটা কাঁধে করে এগিয়ে আসতে আসতে সে বলে, “সব শালারা ভীতু। সামান্য একটা বাচ্চা নেকড়ের ভয়ে চুপসে গেছিল! ভীতুর দল!” কিন্তু লোকটা তখনও জানে না, তার পেছন থেকে ঝড়ের বেগে ধেয়ে আসছে তীব্র বিপদ!

চলবে

মো. ইয়াছিন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here