লারিসা পর্ব ১

0
1149

বিয়ের আগে তিনবার সঙ্গমে মিলিত হবার শর্তে রাজি হয়ে গেল লারিসা।
এছাড়া আর কোনো পথ খোলা ছিল না। সাধুসঙ্গ পেতে হলে এমন অদ্ভুত সব পরীক্ষা দিতে হবে লারিসাকে। প্রথম শর্ত শুনেই আকঙ্কে কেঁপে উঠেছিল সে। কিন্তু পরে আবার নিজেকে সামলে নিয়েছে। যে করেই হোক, এই সাধুদের সঙ্গ নিতে হবে। কিন্তু সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্ম। লারিসা খ্রিস্টান। কিন্তু এই সাধুরা কোনো ধর্ম মানে না। এরা নিজেকে নিজের গড দাবি করে। এদের সাথে সামিল হতে হলে লারিসাকেও নিজের ধর্ম ত্যাগ করে নাস্তিক হতে হবে।
সূর্যটা এখনও ডুবে যায়নি। যখন পুরোপুরি ডুবে যাবে তখন এই সাধুদের মধ্যে সবচে’ বয়স্ক লোকটা লারিসার কাছে আসবে। বিশেষ কিছু লতাপাতা মেশানো্ পানি দিয়ে লারিসাকে গোসল করিয়ে নিজ হাতে সাজাবে। ঘরের বাইরে উঠানে আলো জ্বালিয়ে গান বাজনা হবে। উৎসব হবে। আজকের উৎসবের নাম “রোয়ানাই”। এটা ওদের নিজস্ব ভাষা। রোয়ানাই শব্দটাকে বাংলায় ট্রান্সলেট করলে দাঁড়ায় “যোগ” ইংরেজিতে যাকে বলে “প্লাস”। অর্থাৎ, আজ রাতে নতুন একজন তাদের দলভুক্ত হতে চলেছে।
.
নড়বড়ে জানালা খুলে দেয় লারিসা।
সূর্য ডুবে যেতে আর কিছুক্ষণ মাত্র। একটু পরে বৃদ্ধ লোকটা লারিসার কাছে আসবে। তারপর…
লারিসার ভয় লাগছে।
না, শরীর নিয়ে তার কোনো ভয় নেই। একটু পরে সে খুব বিশ্রিভাবে ধর্ষণ হতে চলেছে; এ নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। এসব নিয়ে সে একটুও বিচলিত নয়। তার চিন্তা অন্য একটা বিষয় নিয়ে। সেটা হচ্ছে, সে ওদেরকে অনেক বড়ো একটা মিথ্যে বলেছে। লারিসাকে তিনবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, আর ইউ ভার্জিন?
সে প্রতিবারই বলেছে, ইয়েস!
অথচ তার বিয়ে হয়েছিল। সে বিবাহিত একজন। কিন্তু ওদেরকে বলেছে… কারণ ওরা লারিসার আসল সত্য জানতে পারলে তাকে এখানে আসার অনুমতি দিত না।
.
পরনের ছোটো দু’টুকরো কাপড়ের দিকে তাকায় লারিসা। এক টুকরো কোমড়ে। অপরটি বুকে। কিছুক্ষণ পর এগুলোও খুলে নেওয়া হবে। পরনে থাকবে শুধু একটা পাতলা সুতোর মালা!
আলগোছে নিজের দেহে হাত বুলায় লারিসা। তার গায়ের রং সাদা, কালো কিংবা শ্যামলা বর্ণের নয়। অনেকটা গোলাপি চামড়ার মেয়ে সে। কোমড় পর্যন্ত বাদামি চুল। চোখদু’টো তামাটে। আর কপালে কাটা দাগ।
বুক ধুকপুক করছে তার।
ঘরের দরজা ঠেলে একটা অল্পবয়সি মেয়ে ভেতরে ঢুকেছে। তার হাতে একটা কালো সুতোর মালা। মেয়েটির পরনেও ছোটো দু’টো কাপড়। মেয়েটাকে দেখে জানালার কাছ থেকে এক পা দূরে চলে আসে লারিসা। চোখ তুলে মেয়েটার থমথমে মুখের দিকে তাকায়। তার চোখদু’টো নুইয়ে রাখা। চেহারায় অপরাধির ভঙ্গি। হাতদু’টো কাঁপছে তার। কালো মালাটা লারিসার দিকে এগিয়ে দিয়ে সে তার ভাষায় বলে, এটা রেখে গেলাম। রোবান এসে তোমাকে পরাবেন।
মালাটা টেবিলের উপর রেখে চলে যায় মেয়েটা। যাবার আগে পেছনে ফিরে তাকিয়ে বলে, রাতে খুব যন্ত্রণা হতে পারে। যত কষ্টই হোক, চিৎকার দিও না। বলে হনহন করে বেরিয়ে যায়। লারিসা হা করে তাকিয়ে থাকে। কী বলে গেল মেয়েটা! কেন বলল এমন কথা!
সময়ে সময়ে মৃদু আতঙ্কে ছেয়ে যায় লারিসার মস্তিষ্ক।
আচ্ছা, স্বাভাবিক জীবন ছেড়ে এসে কি ঠিক করেছে সে? এই ঘন বন, এই মিইয়ে যাওয়া পরিবেশ, এখানকার অদ্ভুত সব মানুষ আর অদ্ভুত তাদের নিয়ম। সবকিছু মিলিয়ে এখানে কতদিন টিকে থাকতে পারবে সে?
আজ মাত্র প্রথম পরীক্ষা। এতে পাস করলে এমন অসংখ্য পরীক্ষা দিতে হবে তাকে। সেই পরীক্ষাগুলো কত বিশ্রি আর ভয়ানক তা ভাবতেই ঘেন্নায় গা গুলিয়ে যাচ্ছে লারিসার। একটু পরে বৃদ্ধ লোকটা লারিসার দেহ ভোগ করবে। অথচ ওরা এর নাম দিয়েছে আত্মাশুদ্ধি। ধর্ষণ করে আত্মা পবিত্রকরণ! এটা কেমন নিয়ম!
.
সূর্য ডুবে গেছে।
বাইরে বাদ্যযন্ত্র বাজছে। কেউকেউ হৈ-হুল্লুড় করছে। যে বৃদ্ধকে লারিসার কাছে পাঠানো হবে তার কপালে একমুঠো চিনেমাটি মাখিয়ে দিলো একজন। মাথায় পাগড়ি পরিয়ে দিয়ে বলল, জয়ী হোন।
কালো কুচকুচে বেঁটেমতো একটা মানুষ। মাথায় চুল নেই। মুখে দাড়ি-গোফ কিছুই নেই। তবে ফুটবলের মতো একটা ভুঁড়ি আছে। লোকটার পরনে শুধু একটা হাফপ্যান্ট। মুখ ভার। যেন সিরিয়াস কোনো কাজ করতে যাচ্ছে।
একজন দৌড়ে এসে এক পেয়ালা দুধ জাতীয় কিছু মুখে তুলে দিলো। সেটুকু খেয়ে নিলে বলল, রোবান হই!
বাকি সবাই একসুরে বলে উঠে, রোবান হই, রোবান হই।
আবার শুরু হয়ে গেল বাদ্যযন্ত্র বাজানো। নাচ, গান, চেঁচামেচি। রোবান এগিয়ে যাচ্ছিল। একজন ছুটে এসে ফিসফিস করে বলে, আগেরবার একটা মেয়ে তোমার অত্যাচারে মারা গেছে। সাবধান, এই মেয়েটা যেন মরে না যায় আবার।
রোবান ভ্রুক্ষেপ না করে পা চালায়। লোকটা পাশাপাশি ছুটতে ছুটতে বলে, আবারও সাবধান করে দিচ্ছি। মেয়েটা যেন খুন না হয়।
চলবে
গল্প: লারিসা || পর্ব : এক
মো. ইয়াছিন
()

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here