লাভ_গেম পর্ব 22

0
1425

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন

২২.

রুশা আবারও জোরে শ্বাস নিল। শানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
“সরি, ভাইয়া।”

তারপর রিভলবার নিজের মাথায় ঠেকায়। এমন কিছুর জন্য কেউ প্রস্তুত ছিল না। রকি
আর শান দু’জনেই হকচকিয়ে যায়। ওরা দুজন ওর দিকে এগিয়ে যেতে চাইলে রুশা বলল,
“কেউ আমার কাছে আসবে না।”

রকি আর শান থমকে দাঁড়িয়ে গেল। রুশা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,
“আই কান্ট। এর চেয়ে সহজ নিজেকে খুন করা। আমি ওকে মারতে পারব না। সে শক্তি আমার নেই।”

শান বলল,
“পিউ, রিভলবারটা নামা বোন। গুলি বেড়িয়ে যাবে। ওটা মাথা থেকে নামিয়ে ফেল। তুই নিজে এ-সব প্লান করেছিস। আমরা শুধু হেল্প করেছি। তাহলে আজ কেন এমন পাগলামি করছিস?”

“হ্যাঁ, সব প্লান আমার ছিল। কিন্তু এই কাজটা আমি করতে পারব না। আমাকে মাফ করে দিও ভাইয়া।”

রকি আদ্রিশের প্রতি রুশার দূর্বলতা দেখে রেগে গেল।
“পিউ, ওকে গুলি করো। মেরে ফেলো। তুমি না পারলে আমাকে বলো।”

রুশা বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে ওর দিকে চেয়ে বলল,
“খবরদার! আদ্রিশের গায়ে একটা আঁচড়ও দেবে না।”

রকি বিস্ময় নিয়ে প্রশ্ন করল,
“পিউ তুমি কি ওকে…?”

রুশা চিৎকার করে বলল,
“আমি ওকে ঘৃণা করি। খুব ঘৃণা করি। ও আমাকে আজ কোথায় এনে দাঁড় করিয়েছে দেখো। যে মেয়ে বিদেশে থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে দেশের সেবা করতে চেয়েছে সে আজ রিভলবার হাতে তুলে নিয়েছে মানুষ খুন করার জন্য। ও আমার সহজ সরল জীবনে বিষ ঢেলে দিয়েছে। ওকে আমি ঘৃণা করি।”
রুশার চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আদ্রিশ ওদের কাহিনি দেখছে। কিছুই বুঝতে পারছে না। রুশার এমন করার কারণও খুঁজে পাচ্ছে না।

রকিও চিৎকার করে বলল,
“যাকে ঘৃণা করা যায় তাকে মারাও যায়। ঘৃনার যোগ্য ব্যক্তির জন্য নিজের মাথায় রিভলবার ঠেকানো যায় না। নিজেকে মারা যায় না।”

“কিছু কিছু মানুষকে ঘৃণা করা গেলেও মারার কথা ঘূর্ণাক্ষরেও ভাবা যায় না। কিছু ঘৃণা মৃত্যুদন্ড দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।”

শান এতক্ষণ চুপ থাকলেও ওর কথা শুনে বলল,
“ভুলে গেলি সব? তোর প্রতিজ্ঞা, তার কি হবে?”

রুশা চুপ করে আছে। রকি এগিয়ে এসে বলল,
“সেটা আমি পূরণ করে দিচ্ছি।”

“নাহ, রকি তুমি বাড়াবাড়ি করছো?”

“তাহলে তুমি বলো কেন ওকে মারতে চাইছো না। কি কারণে হঠাৎ ওর উপর তোমার এত দয়া চলে এলো?”

রুশা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“শুনতে চাও? তাহলে শোন! আমি আমার বাচ্চাকে পিতৃহীন করতে পারব না। আমি আমার সন্তানের সাথে এত বড় অন্যায় করতে পারব না।”

বাচ্চার কথা শুনে রকি, শান অবাক হলো। সাথে আদ্রিশও। আদ্রিশ বুঝতে পারছে না রুশা সত্যি বলছে না আবার কোনো বড় খেলা খেলছে। ও নিজে রুশাকে ওয়াশরুমে খুব খারাপ অবস্থায় দেখেছে। ডাক্তার বলেছে ওর মিস ক্যারেজ হয়ে গেছে। রুশার এত কান্নাকাটি, কষ্ট পাওয়া এসব কি ছিল? নাটক! না এখন যা করছে তা নাটক। এক দিনে কত সত্যের মুখোমুখি হবে ও।

রকি অস্ফুটস্বরে বলল,
“বাচ্চা!”

রুশা পেটে হাত দিয়ে বলল,
“হ্যাঁ বাচ্চা। আমার বাচ্চা।”

শান বাকরুদ্ধ। কি রিয়েকশন দিবে বুঝতে পারছে না।
“তুই আমাকে মিথ্যা বলেছিস? এই খুনির বাচ্চা লালন-পালন করছিস?”

“হ্যা, আমি মিথ্যা বলেছি। সব আমার নাটক ছিল। এই বাচ্চা আদ্রিশের এটা যেমন সত্যি তেমনি এটাও সত্যি যে এই সন্তানের মা আমি। কোনো মা তার সন্তানকে মারতে পারে না। মারা তো দূর ভাবতেও পারে না। যারা পারে তারা অন্তত মা নয় পিশাচিনী। আমার পুরো পৃথিবী এক দিকে আর আমার বাচ্চা আরেকদিকে। আমি বাধ্য হয়েছি ভাইয়া তোমাকে মিথ্যা বলতে। তুমি আমাকে বাধ্য করেছো। তুমি আমার ভাই হয়ে কি করে আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলার কথা বলতে পারো? এর চেয়ে ভালো তো আমাকে মেরে ফেলো। মা আর সন্তান এক সাথে পৃথিবী থেকে বিদায় নেব। যেভাবে আমাদের ভাবি তার সন্তান নিয়ে বিদায় নিয়েছিল।”

শান মাথা নিচু করে নিল। আদ্রিশের দিকে আড়চোখে তাকাল। ও ভাবলেশহীন। রকি বাচ্চার জীবিত থাকার কথা শুনে আরো রেগে যায়। ওর মাথায় খুন চেপেছে।
শান কি বলবে বুঝতে পারছে না। এই মুহুর্তে কি উচিত আর কি অনুচিত বুঝতে পারছে না।
“কিন্তু আমি মনে করি, এই রকম বাবা থাকার চেয়ে পিতৃহীন হয়ে জন্ম নেওয়া ভালো। তুই বাচ্চা চাস তো? ঠিক আছে আমি এ নিয়ে আর একটা কথাও বলব না কিন্তু আদ্রিশ…

রুশা চোখ মুখ শক্ত করে মাথায় শক্ত করে রিভলবার ধরে বলল,
“তাহলে ওর সাথে আমি আর আমার সন্তানও বিদায় নেব। তুমি আমাকে খুব ভালো করে জানো। নিজেকে মেরে দেব। আই মিন ইট।”

রকি আদ্রিশকে সহ্য করতে পারছে না। শানকে ফিসফিস করে বলল,
“তুমি কি করবে জানি না আমি আদ্রিশকে আজ বেঁচে ফিরতে দেব না।”

শান ফিসফিস করে বলল,
“পাগল হয়েছো? পিউ কি বলছে শুনো নি? ও নিজের ক্ষতি করে দেবে। ওর চোখ মুখ দেখো। ভুলেও এ কাজ করবে না।”

“আমি ওকে সহ্য করতে পারছি না।”

“পিউয়ের কিছু হলে আমিও সহ্য করতে পারব না। তোমার একটা ভুলের জন্য আমার বোনের যদি কিছু হয় তাহলে ভালো হবে না।”

“তাহলে আদ্রিশকে ছেড়ে দেব?”

“পিউ যদি চায় তবে তাই হবে।”

রকি আদ্রিশের দিকে কটমট করে তাকাল। তারপর রুশাকে মিনতি করে বলল,
“পিউ, তোমার বাচ্চার দায়িত্ব আমার। কিন্তু আদ্রিশকে ছাড়তে পারব না।”

রুশা মৃদু হেসে বলল,
“তাহলে আমার হাতে মরার জন্য প্রস্তুত হও। নিজেকে মারার আগে স্বামী হত্যার প্রতিশোধ নিয়েই যাব।”

রকি সামনে থাকা চেয়ারে লাথি মারল। আদ্রিশ রুশাকে দেখছে। শুধুমাত্র বাচ্চার জন্য ওকে বাঁচানোর এত আকুলতা,এত চেষ্টা? না অন্য কারণ আছে? যে কারণই থাকুক আদ্রিশ আর বাঁচতে চায় না। রকি ওকে মেরে দিক তাতেই ওর শান্তি।
আদ্রিশ ঠোঁট নাড়াতে পারছে না। অনেক কষ্টে ঠোঁট নাড়িয়ে কম্পিত কণ্ঠে বলল,
“কিল মি।”

সবাই ওর কথা শুনে ওর দিকে তাকাল। রুশা অশ্রুসিক্ত নয়নে ওর দিকে তাকাল। আদ্রিশ কেন এটা বলছে তা অজানা নয়। রুশা দ্রুত মোবাইল বের করে সেজানকে কল করল। সেজান আগে থেকেই রুশার বলা জায়গায় প্রস্তুত ছিল। রুশা ওকে একটা ঠিকানা দিয়ে বলেছিল দলের লোক নিয়ে সেখানে প্রস্তুত থাকতে। সেজান এটা শুনে অনেক প্রশ্ন করেছিল রুশা শুধু বলেছে সময় হলে জানতে পারবে। সেজানের অগত্যা অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না।

রকি আর শান রুশাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে যদি শেষ পর্যন্ত রুশা মেনে নেয়। কিন্তু না রুশা নিজের সিদ্ধান্তে অটল ছিল। সেজান ভেতরে এসে রুশাকে মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অবাক হয়। কোনো প্রশ্ন করার আগেই রুশা বলে,
“সেজান ভাই, সময় কম। তাড়াতাড়ি আদ্রিশকে বের করুন।”
সেজান তাই কোনো প্রশ্ন না করে আদ্রিশের বাঁধন খুলতে শুরু করে। দু’জন লোক ওকে ধরে বাইরে বের করে নেয়। রুশা একবার শান আর রকির দিকে তাকায়। ওরা দু’জনেই অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। তারপর সেজানের সাথে বের হয়ে যায়। আদ্রিশকে গাড়িতে না তোলা পর্যন্ত দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকে। ওকে গাড়িতে তুলে সেজান রুশাকে বলল,
“ভাবি তাড়াতাড়ি আসুন।”

রুশা শান্ত কন্ঠে বলল,
“আমি যাব না সেজান ভাই। এ পর্যন্তই আমার দায়িত্ব ছিল। ওকে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়ে যান। আর হ্যা কড়া সিকিউরিটিতে রাখবেন। সুস্থ হওয়ার পর একা ছাড়বেন না। ও স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ওর সঙ্গ দিবেন। আর সব সময় এভাবেই পাশে থাকবেন।”

সেজান ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে চেয়ে আছে। রুশার কথা, আচরণ কিছুই স্বাভাবিক লাগছে না।
“ভাবি আপনি এসব কি বলছেন? এখানে কি হচ্ছে, আপনি কি বলছেন আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। আমাকে একটু খুলে বলবেন?”

“আদ্রিশ সুস্থ হলে সব জানতে পারবেন।”

“আপনি যাবেন না? আমি আপনাকে এখানে ফেলে যেতে পারব না। ওরা আপনার জন্য ডেঞ্জারাস।”

রুশা মৃদু হেসে বলল,
“ওরা আদ্রিশের শত্রু আমার নয়। ওরা আমার কোনো ক্ষতি করবে না। এখন প্লিজ ব্রেনে প্রেসার না দিয়ে আদ্রিশকে হাসপাতালে নিয়ে যান। ও খুব কষ্ট পাচ্ছে।”

“কিন্তু ভাবি…!”

“আমার নাম রুশা নয়, আমার নাম পিউ। পিউ চৌধুরী। আর ওরা আমার আপনজন। আই থিংক বুঝতে পেরেছেন। শত্রু আমি আপনাদের।”
রুশা শূন্যে দৃষ্টি দিল। এসব না বললে সেজান যাবে না। তাই বলে দিল। ওর চোখ ছলছল করছে। সেজান ওর কথা শুনে বাকরুদ্ধ। কেন জানি রুশার কথা ঠিক মনে হচ্ছে। নয়ত ওরা এভাবে ওদের ছেড়ে দিতো না। রুশাকে আজ অনেক অচেনাও লাগছে।
সেজান রুশার দিক থেকে নজর ফিরিয়ে নিয়ে গাড়িতে ওঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দিলে রুশা গাড়ির দিকে তাকায়। যতদূর গাড়ি দেখা গেছে চেয়ে ছিল। ওর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে। ধপ করে মাটিতে বসে পড়ল।

শান আর রকি এক সাথে বের হয়ে এল। শান রুশাকে বলল,
“তোকে কি বলব, কি বলা উচিত বুঝতে পারছি না। নিজেই দাবার কোটে সৈন্য সাজিয়ে, দীর্ঘ সময় লড়াই করে টিকে থেকে জেতার আগ মুহুর্তে পুরো কোট এলোমেলো করে দিলি। কিছু বলার নেই তোকে। তুই কি চাইছিস আমি বুঝতে পারছি না। কিন্তু এটুকুই বলব তোর এই আচরণে প্রচন্ড কষ্ট পেয়েছি। এমন ছেলেমানুষী না করলেও পারতি।”
শান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে গাড়িতে ওঠে বসে। রুশাকে রেখেই চলে যায়। কারণ ও ভালো করে জানে রুশা যাবে না ওর সাথে।

রকি রুশাকে বলল,
“আমার সাথে চলো।”

“তোমার সাথে কেন যাব?”

“তাহলে কোথায় যাবে? আদ্রিশের কাছে যেতে পারবে না আর শানও তোমাকে নিয়ে গেল না।”

“আমার যাওয়ার অনেক জায়গা আছে। লিভ মি এলোন।”

রকি যাচ্ছে না তাই রুশা উঠে হাঁটা দিল। ও গন্তব্যহীন ভাবে হাঁটছে। ওর এখন একটাই চিন্তা একটা নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সত্যি জানার পর আদ্রিশ ওকে পেলে ছাড়বে না। তাই ভাবছে আবার লন্ডন চলে যাবে। বাচ্চাটাকে এসব থেকে দূরে রাখবে। সেখানেই মানুষ করবে। রুশা বর্তমান গন্তব্য ঠিক করে নিল। এখন কবরস্থানে যাবে।

চলবে……

(অনেক অসুস্থ। গল্প দিতে চাইনি। কিন্তু গতকাল এমন জায়গায় শেষ করেছি তাতে পাঠকের কথা ভেবে আজ একটা পর্ব দেওয়া
আবশ্যক। তাই ছোট করে একটা পর্ব দিলাম। কিন্তু কথা রাখতে পারিনি। আজ সব জট খোলার কথা ছিল। কিন্তু আর টাইপ করতে পারছি না৷ আমি আন্তরিক ভাবে দুঃখীত। সুস্থ হলে আগামী পর্বে বাকিটুকু ক্লিয়ার হবে ইনশাআল্লাহ।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here