লাভ গেম পর্ব-১৬

0
973

#লাভ_গেম
#ফাবিহা_নওশীন

১৬.

সন্ধ্যা বেলা। চারদিকে অন্ধকারে ছেয়ে যাচ্ছে। গাড়ি ছুটে চলছে দ্রুতগতিতে। আদ্রিশের মাথা রুশার কোলের উপরে। সারা মুখে রক্ত। সামনের সিটে সেজান। সেজান বারবার রুশাকে শান্তনা দিচ্ছে।

“সেজান ভাই, আর কতক্ষণ? গাড়িটা একটু তাড়াতাড়ি চালাতে বলেন। আদ্রিশের কষ্ট হচ্ছে।”

সেজান আদ্রিশের মুখের দিকে তাকাল। ওর চোখ বন্ধ। চোখের পাপড়ি আর ঠোঁট ক্ষনে ক্ষনে কেঁপে উঠছে। সেজান জিজ্ঞেস করল,
“ভাই, আপনি ঠিক আছেন?”

আদ্রিশ বন্ধ চোখে কাতর কন্ঠে বলল,
“আমি ঠিক আছি।”

রুশা আদ্রিশের গালে হাত রেখে বলল,
“আর একটু। আমরা চলে এসেছি।”
রুশা কাঁদছে। সেজান ওকে বলল,
“আহ ভাবি, কাঁদছেন কেন? নিজেকে শক্ত করুন। ভাই ঠিক হয়ে যাবে।”
সেজান নিজেও আদ্রিশের অবস্থা দেখে আহত। কিন্তু রুশার মতো ভেঙে পড়লে তো চলবে না।

রুশার তখন মনে পড়ল ওই স্পটের কথা। সেখানে ও একজনকে গুলি করেছে। এর জন্য ওকে সবার কাছে বিশেষ করে আদ্রিশের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। এ নিয়ে নিশ্চয়ই ওদের মনে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে। রুশা তাই আগেই নিজের দিকটা ক্লিয়ার করতে চায়। যাতে পরবর্তীতে ফেঁসে না যায়।

রুশা মাথা নিচু করে বলল,
“সেজান ভাই লোকটা কি মারা গেছে?”

সেজান অবাক হয়ে প্রশ্ন করল,
“কোন লোকটা ভাবি?”

রুশা মাথা নিচু করে আছে। সেজানের দিকে একবার চেয়ে আবারও মাথা নিচু করে নিল। কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে অপরাধী ভঙ্গিতে নিচু কণ্ঠে বলল,
“যাকে গুলি করেছি।”
তারপর কিছুটা জোরে দ্রুত বলল,
“বিশ্বাস করেন সেজান ভাই, আমি বুঝতে পারিনি। ভাবিনি সত্যি সত্যি গুলি বের হয়ে যাবে। আমি শুধু ভয় দেখানোর জন্য রিভলবার তাক করেছি। ওরা যাতে বিশ্বাস করে তাই এত কনফিডেন্ট দেখিয়েছি। বুঝতে পারিনি সত্যি সত্যি গুলি উনার পায়ে লেগে যাবে। এখন কি হবে? যদি মরে যায়? আমার খুব ভয় লাগছে।”
সেজান রুশার কাঁদোকাঁদো মুখের দিকে চেয়ে বলল,
“একদম ঠিক করেছেন। মরে গেলে যাবে।আপনি একদম গিলটি ফিল করবেন না।”

“আমার জন্য বিষয়টা এত সহজ না। সত্যিই যদি মরে যায়! ঘটনাটা আমি ভুলতে পারছি না।”

রুশা অস্থির অস্থির করছে তাই সেজান বলল,
“কিছু হবে না। পায়ে গুলি লাগলে মানুষ মরে না। ও ঠিক হয়ে যাবে।”

রুশা আদ্রিশের দিকে তাকাল। আদ্রিশ নড়ছে। ওর কানে সব পৌঁছেছে। কিন্তু কিছুতেই ওর কথা বিশ্বাস করতে পারছে না। ওরা হসপিটালের সামনে এসে পৌছালো।

রুশা জারিফের মাথায় রিভলবার ঠেকিয়ে রাখার কিছুক্ষণ পরে সেজান দলবল নিয়ে পৌঁছে যায়। রুশা যেন প্রাণ ফিরে পায়। ওরা দ্রুত আদ্রিশকে উদ্ধার করে। তারপর সেজান ওর অবস্থা দেখে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসে।

রুশা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আর চোখের পানি মুছছে। মনের অস্থিরতা কাটানোর জন্য দু’কদম আগাচ্ছে আবার আগের জায়গায় গিয়ে স্থির থাকছে। ওর মনের ভেতরে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। কিছুই ভালো লাগছে না। অপেক্ষা করছে ডাক্তারের জন্য। কখন বের হবে আর একটা ভালো খবর দেবে।

সেজান দু-হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে আছে। জারিফকে গিয়ে এখুনি পুঁতে দিতে ইচ্ছে করছে। আদ্রিশের এমন অবস্থা করবে ভাবতেও পারেনি।
ডাক্তার বের হতেই সেজান হাতের ভাজ খুলে ডাক্তারের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।
বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করল,
“ভাইয়ের কি খবর? কেমন আছেন তিনি?”
রুশাও ডাক্তারের মুখের দিকে চেয়ে আছে।

ডাক্তার যথাসম্ভব মুখ গম্ভীর করে বলল,
“আঘাতগুলো গুরুতর। শুকাতে সময় লাগবে। কিছুদিন আমাদের তত্বাবধানে থাকতে হবে। চিন্তার তেমন কারণ নেই।”

রুশা জিজ্ঞেস করল,
“আমরা ভেতরে যেতে পারি?”

“কিছুক্ষণ পরে দেখা করবেন। এছাড়া ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছি এক ঘন্টার আগে ঘুম ভাঙবে না।”

ডাক্তার চলে গেলেন। কিছুক্ষণ পরে দু’জন নার্স বের হলো। রুশা সেজানের দিকে তাকাল। রুশা ভেতরে যাওয়ার জন্য অস্থির অস্থির করছে।
“ভাবি আরেকটু অপেক্ষা করুন।”
রুশা মাথা নাড়ায়। পাশের বেঞ্চিতে গিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়ল।

.

আদ্রিশের পুরো বডিতে ব্যান্ডেজ। রুশা ধীরে ধীরে ওর পাশে গিয়ে বসল। আদ্রিশ ঘুমিয়ে আছে। রুশা ওর পাশে গিয়ে বসল। ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। আলতো করে গালটা ছুয়ে দিতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু গালে কাটাছেঁড়া। ব্যান্ডেজ করা বিভিন্ন জায়গায়।
তবুও রুশা আলতো করে আদ্রিশের গালটা ছুয়ে দিল খুব সাবধানে। ওর হাত কাঁপছে।
কেমন অদ্ভুত ফিলিং হচ্ছে। বুকের ভেতরটা কেমন করছে।

.

আদ্রিশের জ্ঞান ফিরতেই রুশাকে ওর পাশে দেখে। রুশা সোজা হয়ে বসে। মিষ্টি কন্ঠে বলল,
“কেমন আছেন আপনি?”

“ভালো।”
আদ্রিশ চারদিকে তাকাল। তারপর জিজ্ঞেস করল,
“কয়টা বাজে এখন?”

রুশা চারদিকে চেয়ে ঘড়ি খোঁজল। না পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আমি সেজান ভাইকে জিজ্ঞেস করছি।”
“ওকে ভেতরে আসতে বলো।”

রুশা সেজানকে ডেকে আনল। সেজান ভেতরে এসে প্রথমে আদ্রিশের খোঁজ খবর নিন। তারপর জানাল এখন রাত ১০টা ১৭ মিনিট।
আদ্রিশ সেজানকে বলল,
“রুশা একা বাড়িতে থাকতে পারবে না। আমি বাড়িতে যেতে চাই।”

রুশা আর সেজান চমকে একে অপরের দিকে তাকাল। তারপর আদ্রিশকে সেজান বলল,
“আপনাকে এই অবস্থায় ছাড়বে না।”
রুশা বলল,
“আপনি যাবেন কি করে? উঠেই তো বসতে পারবেন না।”

আদ্রিশ চেষ্টা করে দেখল ও আসলেই উঠে বসতে পারছে না। তারপর কিছুক্ষণ ভেবে বলল,
“রুশাকে আমি একা ছাড়ব না। ওর এখানে থাকার ব্যবস্থা করে দেও। ওর প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এখানে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করো। আর হ্যা আমি অসুস্থ। রুশার সিকিউরিটির ব্যবস্থা করো।”

“জি ভাই, আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমিও আজ এখানে থাকব।”
সেজান সব ব্যবস্থা করতে চলে গেল। আদ্রিশ রুশাকে জিজ্ঞেস করল,
“তুমি ঠিক আছো?”
“হ্যাঁ ঠিক আছি।”

আদ্রিশ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“তুমি রিভলবার চালানো কোথায় শিখলে?”

রুশার বুক ধুক করে উঠল। তখন আদ্রিশকে শুনিয়ে শুনিয়ে এতকিছু বলল তবুও কেন জিজ্ঞেস করছে? আদ্রিশ সব শুনেছে এটা শিউর। তারপরেও যেহেতু জিজ্ঞেস করছে
নিশ্চয়ই কোনো কারণ আছে।
“আমি রিভলবার চালাতে পারিনা। আমি তো মুভির মতো ভয় দেখানোর জন্য অভিনয় করেছিলাম কিন্তু গুলি বেড়িয়ে গেল। বিশ্বাস করুন আমার কাউকে মারার ইচ্ছে ছিল না। আমার মাথা কাজ করছিলো না। কি করব বুঝতে পারছিলাম না। তাই হুট করে যা মাথায় এলো তাই করেছি। রিভলবার হাতে নিয়ে ওসব বলে ফেলেছি। আর গুলি বের হয়ে গেছে।”
রুশা বলেই কাঁদতে লাগল।
“এর আগে তো আমি রিভলবার কখনো হাতেই নেইনি। কলেজে থাকতে মাঠে খেলা হতো, সেখানে আমরা ফ্রেন্ডরা যেতাম। বাজি ধরে বিভিন্ন খেলা খেলতাম। ওখানে ছোট ছোট বেলুন টানিয়ে রাখত। বন্দুক দিয়ে নিশানা করে ফোটাতে হতো। আমরা সেসব খেলতাম। তবে বন্দুকের বুলেট আসল ছিল না। আমি কখনো দশটার মধ্যে ছ’টার বেশি ফাটাতে পারতাম না। ওই বন্দুক ছাড়া কিছু চালাতে পারতাম না।”

আদ্রিশ চোখ বন্ধ করে বলল,
“ঠিক আছে।”

রুশা ঠিক বুঝতে পারছে না আদ্রিশ বিশ্বাস করল কি না। রুশা আজকের ঘটনাটা ভুলতে পারবে না। আর সিদ্ধান্ত নিল এই ঘটনা কিছুতেই ভাইয়ের কানে দেওয়া যাবে না। তাহলে আবারও রাগ করবে।

কিছুক্ষণ পরে সেজান চলে এল। আদ্রিশের কাছে এসে বলল,
“সব ডান ভাই।”
তারপর রুশার হাতে শপিং ব্যাগ দিয়ে বলল,
“ভাবি আপনার জামাকাপড়। ফ্রেশ হয়ে নিন।”

রুশা ওয়াশরুমে যেতেই আদ্রিশ জিজ্ঞেস করল,
“সব ঠিক আছে?”
“জি ভাই, অল সেট। অপেক্ষা আপনার সুস্থ হওয়ার। তারপর আসল খেলা। আমি বাইরে আছি। প্রয়োজনে ডাকবেন।”
সেজান ওর পাশে একটা মোবাইল রেখে বাইরে চলে গেল।

রুশা ফ্রেশ হয়ে আদ্রিশকে খাইয়ে দিল। তারপর নিজেও খেয়ে নিল। ওর মাথাটা কেমন করছে। খুব টায়ার্ড লাগছে। একটু ঘুমানো দরকার। ওকে ঝিমাতে দেখে আদ্রিশ বলল,
“শুয়ে পড়ো। আমার আর সেবা করতে হবে না।”

রুশা কিছুক্ষণ আদ্রিশকে দেখল। তারপর উঠে গিয়ে শুয়ে পড়ল। আদ্রিশ এভাবে কেন কথা বলছে জানে না। বুঝতে পারছে না কিন্তু অভিমান হচ্ছে। কান্না পাচ্ছে খুব৷ চোখে পানি ছলছল করছে। আদ্রিশের এই সামান্য কথায় কষ্ট হচ্ছে কেন বুঝতে পারছে না। কষ্ট পাওয়ার তো কথা না। তবুও পাচ্ছে।

চলবে…..

(বাসার বাইরে আছি। তাই বেশি বড় করতে পারলাম না।)

গ্রুপ লিংক-
https://www.facebook.com/groups/287245112718016/?ref=শেয়ার
অবশ্যই পাঠপ্রতিক্রিয়া জানাবেন সেটা নেগেটিভ অথবা পজিটিভ হোক। ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here