লবঙ্গ লতিকা পর্ব ৫

0
1013

#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ৫

তীব্র ক্লান্তি আর মাথা ব্যাথা নিয়ে শোয়া থেকে উঠলো সাদ। মাথার একটা পাশ ফুলে আলু হয়ে গিয়েছে। সাদ উঠে বসতেই সাদের ঘরে অবস্থানকৃত কয়েকজনের হাসি আওয়াজ শুনতে পেল সাদ। সাদ মাথা চেপে ধরে বিরক্তি নিয়েই বিছানা থেকে উঠে বসলো।

সাদকে উঠে বসতে দেখে নাদিয়া ছুটে এসে ছাঁদে সামনে বসলো। নাদিয়া সাদের চাচাতো বোন।সাদের ছোট চাচার মেয়েই নাদিয়া।নাদিয়া সাদের থেকে চার বছরের ছোট।

সাদের পাশে বসে নাদিয়া জোরে জোরে হাসতে হাসতে সাদকে বললো,” তুমি না কি চুরি করতে গিয়ে ধরা খেয়েছো ভাইয়া? দেখো মেরে তোমার মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে।”

নাদিয়া এটুকু বলেই মুখে হাত চেপে ধরে জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো। সাদ এক প্রকার বিপাকে পরে গেল।কী একটা অবস্থা! বাড়িতে জানাজানি হলে আর রক্ষা নেই। কী করবে ভেবে পেল না সাদ। এদিকে নাদিয়ার হাসির মাত্রা বেড়েই চলেছে। সাদ জোরে শোরে নাদিয়াকে একটা ধমক দিলো। নাদিয়া সাদের ধমক খেয়ে ক্ষনিকের জন্য শান্ত হলো। কিন্তু আবারও বকবক শুরু করলো। সাদ বিরক্তি মাখা মুখ নিয়ে আশেপাশে ফিরে তাকালো। মাথা ব্যাথায় ফেটে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ মাথায় হাতুড়ি দিয়ে পেটাচ্ছে।

আঙুর বালা খুড়িয়ে খুড়িয়ে সাদের কাছে এসে বসলেন। সাদ পেছন ঘুরে একবার আঙুর বালার মুখের দিকে তাকালো। আঙুর বালা সাদকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে হেসে ফেললেন। সাদ ক্যাবলা কান্তের মতো আঙুর বালার দিকে তাকালো। আঙুর বালা নিজের মতো হেসেই চলেছেন। এমন সময় সাদের সঙ্গে কথা বলতে অনিতা সাদের ঘরে প্রবেশ করলো। অনিতা সাদের ঘরে ঢোকা মাত্রই আঙুর বালা অনিতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,”ছেলেরে তোমরা বিয়া করাইতে চাও না। বিয়ার কথা শুইনা তোমাগো এত আপত্তি। তোমার পোলা তো রাইতের আন্ধারেও বউয়ের লগে দেহা করবার যায়। তোমরা তাও কইবা তোমগো পোলা বিয়া করবার চায় না। আসলে কও তোমরা বিয়া দিবার চাও না। নয় এমন বিয়া পাগল পোলা কইবো? আমি বিয়া করমু না? বউয়ের লাইগা কত আদর কত সোহাগ! বউয়ের লগে দ্যাহা করতে গিয়া চোর অপবাদ হুইনা মাথা ফাডাইয়া আইসে। তাও কইবা তোমার পোলা বিয়া করবার চায় না?”

অনিতা আঙুর বালার কথা শুনে সাদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালেন। সাদ লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। আঙুর বালা মুখ টিপে মুচকি হাসতে অনিতাকে বললেন,” হুনো বউ, পোলাডারে আর কিছু কইয়ো না। বাইরের মাইনষের লগে তো আর দ্যাহা করতে যায় নাই। নিজের বউয়ের লগেই দ্যাহা করতে গেসে। আর পোলাডারে বইকো না। ”

আঙুর বালা এটুকু বলেই সেখান থেকে প্রস্থান করলেন। আঙুর বালা সেখান থেকে চলে যেতেই, অনিতা সাদের সামনে বরাবর গিয়ে বসলো। সাদকে গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,” তুমি এত রাতে বাইরে গিয়েছিলে কেন? তাও আবার ওদেরই বাড়িতে! এত সাহস পেলে কোথায়? তোমাকে নিয়ে কত হাসাহাসি হচ্ছে জানো তুমি? কী বলবে লোকে? বিয়ের আগেই এই অবস্থা! বিয়ের পরে আমাকে আর চিনবেই না বোঝা যাচ্ছে! এত কষ্ট করে খাইয়ে, পরিয়ে মানুষ করলাম। এখন এইদিন ও দেখতে হচ্ছে! ”

সাদ আমতা আমতা করে বললো,”আম্মু তুমি তো জানো, ওদের বাড়ি ওই রাস্তার মোড়ের ওদিকে। কালকে রাতে তো কারেন্ট ছিল না। আমি গরমে সিদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম৷ বাড়ি থেকে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। মোড়ের ওদিকে হাঁটাহাটির সময় কে যেন চোর বলে চিৎকার করলো। আর কে যেন আমাকে এসে মারলো। আমি জানতাম না এতকিছু। জানলে তো কখনোই যেতাম না।”

সাদ সত্য মিথ্যা মিলিয়ে যেটুকু পারলো বললো। সত্য কথা বললে কেউই কথা শোনাতে ছাড়তো না। অনিতা গাঢ় নিশ্বাস ফেলে সাদের ঘর থেকে প্রস্থান করলো। এদিকে সাদ জ্বলছে তীব্র প্রতিশোধের আগুনে। যেভাবেই হোক আজ তমাকে শায়েস্তা করতেই হবে! মেয়েটা অনেক ফাজি/ল! কাল শুধু শুধুই এতগুলো মার খাওয়ালো।

সাদ বহুক্ষন ভেবে ভেবে ফন্দি আঁটলো। বিকালে তমা আর তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা বাইরে টইটই করতে বের হয়। তখনই বেশ ভালো মতো তমাকে ধরবে। একেবারে ছাঁই দিয়ে ধরবে। যেন পালাতে না পারে।

প্ল্যান অনুসারে সাদ বিকেল বেলা বাড়ি থেকে বের হলো। শরীর খুব খারাপ সাদের। কিন্তু, তবুও সাদ আজকে বাড়ি থেকে বের হয়েছে। কারণ, তমার একটা শাস্তি প্রাপ্য। শুধু শুধু এতগুলো মার কেন খাওয়ালো সাদকে? ছোট্ট একটা বিষয় নিয়ে এত বাড়াবাড়ি করা কী ঠিক?

সাদ হাঁটাহাটি করছে আর বারবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। আসলে গোপনে গোপনে সাদ তমাকে খুঁজছে। তমা এই সময়টায় সাঙ্গ পাঙ্গ নিয়ে ঘুরতে বের হয়। সাদ অনেকটা সময় অপেক্ষা করলো। কিছুক্ষন পর দেখলো তমা সহ তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা এদিকেই হাঁটতে হাঁটতে আসছে। তমা হাতে জুতোজোড়া নিয়ে খালি পায়ে হাঁটছে।

তমা সাদকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যাচ্ছিলো। সাদ তমাকে দেখে পেছন থেকে ডেকে বললো,”এই মেয়ে দাঁড়াও। ”

তমা তবুও দাঁড়ালো না। নিজের মতো পথ চলতে শুরু করলো। সাদ তমার দিকে দৌড়ে গিয়ে তমাকে বললো,” এই মেয়ে তোমাকে বলেছি না দাঁড়াতে? এতবার ডাকলাম তবুও সাড়া দিলে না কেন?”

তমা ভ্রু কুঁচকে বললো, “কেন আমার সঙ্গে এত কীসের দরকার? এত দরদ উঁতলে উঠলো হঠাৎ আমার জন্য? ”

সাদ তমার কোনো প্রশ্নের উত্তর দিলো না। নিজেই তমাকে প্রশ্ন করলো,” কাল আমার সঙ্গে এমন কেন করলে?”

তমা হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে বললো,” কী করেছি আবার?”

সাদ নিজের কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,” কী করেছো মানে? কালকে আমাকে এতবড় অপবাদ কেন দিলে? আমি না কি চোর? এই! আমি তোমাদের বাড়িতে চুরি করতে গিয়েছিলাম না কি!”

তমা সাদের দিকে এক হাত এগিয়ে গিয়ে বললো,” চোর কী চোর বলবো না তো কী বলবো? ফাটা ফুচকা!”

সাদ অবাক হয়ে তমাকে বললো,” ফাটা ফুচকা কী জিনিস? ”

তমা হেসে বললো,” আয়নায় নিজেকে গিয়ে দেখুন। তারপর বলবেন ফাটা ফুচকা কী জিনিস। মাথা ফাটিয়ে পুরো ফাটা ফুচকা সেজে এখন বলছে ফাটা ফুচকা কী! হুহ! নাটকের শেষ নেই। ”

সাদ এত তীব্র অপমান মেনে নিতে পারলো না। তমার দিকে এগিয়ে গিয়ে বললো,” বেশি বাড় বেড়ো না! খারাপ হবে কিন্তু! ”

তমা সাদকে কিছু বলার আগেই;তমার সমবয়সী আরেকট মেয়েকে তমাকে উদ্দেশ্য করে বললো,” এই ছেলেটার নাম কীরে তমা?”

সাদ শার্টের কলার ঠিক করে বললো, “আমার নাম সাদ।”

মেয়েটি হঠাৎ জোরে হেসে ফেললো। অবাক হয়ে বললো,”পাদ? পাদ আবার কারো নাম হয় না কি?”

মেয়েটার কথা শুনে তমাও হেসে ফেললো। সাদ চিৎকার করে বললো,” আমার নাম সাদ।”

মেয়েটি সাদকে ব্যঙ্গ করে বললো,”সাদের নাম পাদ।”

সাদ এবার জিদ করে অন্য দিকে হাঁটা শুরু করলো। এই গ্রামের ছেলেমেয়ে গুলো বহুত বজ্জা/ত। এদের সাথে কথা বলা মানেই সময় নষ্ট। সাদ নিজের মতো এগিয়ে যেতে শুরু করলো। হঠাৎ পেছন থেকে স্লোগানের মতো কিছু একটা শুনতে পেয়ে ফিরে তাকালো। দেখলো তমা-সহ তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা সাদের দিকে আঙুল দিয়ে সমস্বরে জোরে জোরে বলছে” সাদ! দেয় খালি পাদ! সাদের নাম পাদ! সাদ দেয় খালি পাদ।”

সাদ সেখানেই মাথায় হাত দিয়ে বসে পরলো। কী একটা অবস্থা! রাস্তার মানুষ সব সাদের দিকো তাকিয়ে হাসাহাসি করছে। সাদ বিপদ বুঝতে পেরে জোরেশোরে দৌড় দিয়ে পালালো। পেছন থেকে হালকা-ভাবে আবারও শুনতে পেল “সাদ! দেয় খালি পাদ!”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here