লবঙ্গ লতিকা পর্ব ১৭

0
661

#লবঙ্গ_লতিকা
#নুজহাত_আদিবা
পর্ব ১৭

তমার এখন স্কুলে ক্লাস নেই। রমজানের ছুটি দিয়ে চলছে।ইদের পর আবার যথারীতি ক্লাস শুরু হবে।

আঙুর বালা তমাকে বলেছেন ২০ রোজার পরে আবার সাদ আসবে। কিছুদিন থাকবে এখানে। তমা অতি আগ্রহে দিন গুনছে। ইশ! কেন যে সাদ এখনও আসছে না।

তমা দুপুরে গোসল করে শাড়ি পরে বের হলো। সাধারণত বাড়িতে সেলোয়ার-কামিজ পরে তমা। কিন্তু, আজকের দিনটা একটু বেশিই স্পেশাল! সাদ আসবে!

তমা উঠোনে বসে বেশ অনেকটা সময় অপেক্ষা করলো। সাদ এখনও আসছে না কেন? একটু পরে তো আজান দিয়ে দেবে। সবাই ইফতারি করতে বসে পরবে। সাদ কখন আসবে তাহলে?

আঙুর বালা অনেকক্ষন ধরে তমাকে ডাকাডাকি করছে। তমা বাধ্য হয়ে উঠে দাঁড়ালো। এখন তাঁকে আবার কাজে হাত লাগাতে হবে। তমা লেবুর সরবত বানিয়ে টেবিলে রাখলো। তমা নিজেও রোজা রেখেছে। এখন সরবতের চিনি টেস্ট করবে কে? তমা উঁচু স্বরে রান্নদঘর থেকে নাদিয়াকে ডাক দিলো। নাদিয়া ছোট্ট একটা হিজাব পরে দৌড়ে এলো। সামনের বছর থেকে নাদিয়াও রোজা রাখবে। এখন তো নাদিয়া রোজ তিনটা রোজা রাখে। তিনবেলা খেয়ে তিনটা রোজা। হিহি! তমা একটা গ্লাসে নাদিয়াকে একটু সরবত ঢেলে দিয়ে বললো,” একটু খেয়ে দেখো তো। চিনি হয়েছে কি না।”

নাদিয়া পা উঁচু করে টেবিল থেকে গ্লাসটা নিয়ে ছোট্ট চুমুক দিলো। ঢোক গিলে বললো,” মজা!” তমা মুচকি হেসে জিজ্ঞেস করলো,” মিষ্টি হয়েছে? ” নাদিয়া মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো।

তমা টেবিলে ইফতার রাখতে রাখতে বারবার দরজার দিকে তাকাচ্ছে। সাদ যে কখন আসবে! কতদিন দেখেনি সাদকে!

আজান দিলে সবাই বিসমিল্লাহ পরে সরবত মুখে দিলো। বাইরে থেকে কারো আওয়াজ পাওয়া গেল। আঙুর বালা মেইন গেট খুলে বাপজান বাপজান বলে ছুটে গেলেন। তমা প্রথমে কিছুটা ভরকে গেলেও। পরক্ষনে নিজেকে সামলে নিয়ে ছুটে গেল। নিশ্চয়ই সাদ এসেছে।

তমা এদিক ওদিক তাকিয়ে সাদকে খুঁজলো। মহসীন খান একাই এসেছে আর কেউ আসেনি। মহসীন খান ঘরে এসে বসতেই, তমা তাঁকে ইফতারি দিয়ে বললো,” বাকিরা আসেনি? ওনারা কোথায়?”
মহসীন খান কিছু বলার আগেই আঙুর বালা পাশ থেকে বললেন,” বউ তোর শাশুড়ী আর জামাই আরো পরে আইবো। ওর জামাইয়ের পড়ালেখা আছে না? ওয় এত তাড়াতাড়ি আইবো কেমনে? ওরা আইবো সাতাইশ আটাইশ রোজায়।”

তমা অশ্রুসিক্ত নয়নে উঠোনের দিকে তাকালো। এরপর এক ছুটে ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো। বিছানায় চুপটি করে শুয়ে নিরবে নিভৃতে অশ্রু বির্সজন দিলো। আর কথা নেই সাদের সঙ্গে। আসুক যেদিন ইচ্ছে সেদিন। তমা আর কথা বলবে না সাদের সঙ্গে!

সাতাশ রোজা খুব ভালো মতোই কেটে গেল। সাদের তবুও কোনো ইয়াত্তা নেই। তমার ছোট্ট হৃদয় ভেবে নিলো। সাদ এবার আর আসবে না।

একদিন কী দুদিন পরে ইদ। আটাইশ রোজা চলছে আজ। সবার অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হচ্ছে না। কবে যে ইদ আসবে। সকালে উঠে তমা কোরআন শরিফ পাঠ করেছে। রোজার মাস সুতরাং নাস্তা করার ঝামেলা নেই।

তমা শুকনো মুখে বাড়ির পেছনের পুকুর ধারে বসে আছে। সাদ আর আসবেই না এবার। আসলে আগেই আসতো৷ তমা পানিতে দু’পা ভেঙ্গে বসলো। ভালো লাগছে না কিছু।

উঠোন থেকে মানুষের আনাগোনা চিৎকার শুনলো তমা। তমা তবুও বসে রইলো। এই দুপুর বেলা অনেকেই আসেন। কেউ খয়রাত নিতে আসে। কেউ ইফতারে খাবার জন্য খাবার চাইতে আসে। এটা রোজকার ব্যাপার। তমা সেখানেই মূর্তির ন্যায় স্থির ভাবে বসে রইলো। বেশ রোদ পরেছে আজ। তমা ঘেমে একাকার। তমা এবার আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালো। ঘরে গিয়ে এখন একটু বিশ্রাম নেবে।

তমা উঠে দাঁড়াতেই অনিতার গলার স্বর শুনতে পেল। বাড়ির ভেতর থেকে অনিতার গলা আওয়াজ আসছে। তমা হেসে ছুটে গেল। বেশ জোরে কারো শরীরের সাথে ধাক্কা খেয়ে আঘাত পেল তমা। কাঁধে ব্যাথা পেয়ে তমা ফিরে তাকালো। তমার চক্ষুযুগল বের হয়ে আসার উপক্রম। এটা তো সাদ! তমা মুখ গোমড়া করে ফিরিয়ে নিলো। এত দেরি করে আসলো কেন সাদ? আরেকটু আগে এলে কী হতো?

সাদ এক পা এক পা করে এগিয়ে আসছে। তমা স্থির হয়ে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলো। সাদ হঠাৎ সামনে এসে পরায় চমকে গিয়ে সাদের দিকে তাকালো। সাদ তমাকে আকূল হৃদয়ে জড়িয়ে নিলো বাহুডোরে। তমা কিছু বললো না। চুপটি করে চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে রইলো।

তমা অনিতার সঙ্গে দেখা করে কুশল বিনিময় করলো। আঙুর বালা তমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বললেন,” তোর জামাই আইসে। ওরে দেখসিলি? কথাবার্তা কিছু কইসোস?”

তমা মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বোঝালো। আঙুর বালা তমা আরেকটু কাছে গিয়ে বললো,” ওরে দেইখা চুম্মা/চাটি করোস নাই তো আবার? তোর রোজা কিন্তু হালকা হইয়া যাইবো ”

তমা বিরক্তিমাখা মুখ করে আঙুর বালার দিকে তাকালো। ছি ছি! বেহা/য়া বুড়ির লাজলজ্জা কিচ্ছু নেই!

অনিতা সবার জন্য কেনাকাটা করে এনেছেন। সব রেডিমেড, বানানোর কোনো ঝামেলা নেই। আঙুর বালা আগে থেকেই জামাকাপড় কিনে বানাতে দিয়ে এসেছেন। দর্জি একটু আগে সেগুলো দিয়ে গেছে। তমার জামা নরমাল থাকলেও তমার জামার হাতা একটু টাইট। তাই তমা জামাকাপড় সব এভাবেই বানানো। তমা জামাকাপড়ের হাতা সবসময় একটু টাইটই পরে বলা চলে। আঙুর বালা তমার জামাটা একটু খুঁটিয়ে দেখলেন। নিজেই কিনে দিয়েছেন। তবুও তমার জামার হাতাটা দেখে মুগ্ধ হলেন। একেবারে হাতের সঙ্গে লেগে থাকবে কাপড়। আর জামাটা একটু ঢোলা।

আঙুর বালা দর্জিকে বাসায় ডেকে পাঠালেন। নিজের জামাটা ফেরত দিয়ে বললেন,” ওই, আমারেও এমন চিপা হাতার জামা বানাইয়া দে। হাতাডারে কাই/টা চিপা বানা। আমি এহনও জোয়ানী। আমি এমন ঢিলাঢালা হাতা দিয়া জামা পরুম না। আমারেও ওর মতো চিপা হাতার জামা কইরা দে।”

দর্জি জামা ফেরত নিয়ে গেলেন। বললেন ইদের আগের দিন দিয়ে যাবেন। বাড়িতে ইতিমধ্যে হাসাহাসি পরে গেছে আঙুর বালার করা কাজ নিয়ে। তমার দেখাদেখি এখন তিনিও চিপা হাতার জামা পরবেন। কী একটা অবস্থা!

পুতুল ঘরময় হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্ছে। নাদিয়া মেঝেতে বসে বসে খেলনাপাতি ছড়িয়ে ছিটিয়ে খেলছে।

তমা বেশ কিছুক্ষন যাবত নিজের ফোনটা খুঁজে পাচ্ছে না। অবশেষে খাটের তলায় ফোনটা খুঁজে পেল। কিন্তু, খাটের তলায় ফোনটা ফেলেছে কে?

তমা নাদিয়াকে জিজ্ঞেস করলো। নাদিয়া মাথা নাড়িয়ে না বললো। যাঁর অর্থ সে জানে না কে ফেলেছে। তমা সকালে পুতুলকে খাটের ওপরে রেখে কাজ করছিল। তাই পুতুল ছাড়া এই কাজ আর
কেউ করেনি। তমা ঠোঁট টিপে হেসে পুতুলের দিকে এগিয়ে গেল। আদর করে কোলে তুলে নিলো। গাল টিপে দিয়ে বললো,” আমার ময়না পাখি কে?”

পুতুল গাল ফুলিয়ে বললো,” আমি!” তমা আবার বললো,” আমার টিয়াপাখি কে?” পুতুল হাত পা নাড়াতে নাড়াতে অস্পষ্ট গলায় বললো,” আমি!” তমা পুতুলের গালে চুমু খেয়ে বললো,” আমার হীরামন পাখি কে?” পুতুল হাত নাড়াতে নাড়াতে বললো,” আমি!”

তমা দুষ্টুমির হাসি হেসে বললো,” আমার মোবাইল খাটের নিচে ফেলেছে কে?” পুতুল স্বাভাবিক ভাবে বললো,” আমি!”

তমা এবার গাল ফুলিয়ে বললো, ” তুমি ভাবীর ফোন ফেলে দিয়েছো?” পুতুল এবার ঠোঁট ফোলালো। সে তো ইচ্ছে করে ভাবীমনির ফোন খাটের নিচে ফেলেনি। ওটা নিয়ে খেলতে খেলতে পরে গেছে।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here