রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৬,,,৭
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
মাথার উপর সূর্য তার নিজস্ব রৌদ্দুর খোলা মাঠের প্রান্তরে ছড়িয়ে দিয়েছে৷ রোদের উত্তা’প বেশি নাকি কম তা বুঝার উপায় নেই৷ সামনের নদী থেকে হালকা মৃদু মন্দ বাতাস এসে সমস্ত জায়গার গরম ভাবটা কমিয়ে দিয়েছে৷ নদীর শান্ত পানির দিকে তাকিয়ে আছি আমি৷ এই নদীটার যেমন স্রোত নেই আমার জীবনেরও কোনো স্রোত নেই৷ সব শান্ত!যাকে বলে,সব কিছু শেষ হওয়ার পথে৷ কাব্য ভাইয়া নামক মানুষটা আমার কাছে ধাঁধার মতো৷ যার ভেতরে উত্তর আছে তবে অজানা৷ বাসায় ফিরবো না আর৷ কিন্তু কোথায় যাবো?বাবার বাসায়?
নদীটা কাব্য ভাইয়াদের বাসা থেকে এিশ মিনিট দূরত্বে। এইখানে কেন দাঁড়িয়ে আছি সেটাও জানা নেই আমার৷ মন বলছে, কাব্য ভাইয়া আসবে আমায় নিতে৷ কিন্তু মস্তিষ্ক বলছে,’ছিঃ নীতু তুই এতো বে’হায়া কেন?এতো অ’পমানিত হওয়ার পরও তার আশায় বসে আছিস৷’ উহু!তার আশায় নয় যাওয়ার জায়গা নেই এই জন্য দাঁড়িয়ে আছি৷ বাবার বাসায় যেতে সাহস হচ্ছে না৷ কেন হচ্ছে না তাও জানি না!হয়তো তার সামনে দাঁড়াতে পারবো না কারণ কাব্য ভাইয়া আমার সম্মান নিয়ে অদ্ভুত এক খেলায় মেতে উঠেছে৷
–‘তোর মাথায় কি আদেও মস্তিষ্ক নামক জিনিস টা আছে?’
কাব্য ভাইয়া র’ক্ত লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে প্রশ্নটি ছুড়ে দিলেন৷ উনায় দেখে কি রিয়াকশন দিবো ভেবে পেলাম না৷ উনায় সম্পূর্ণ ইগ্নর করে সামনের দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ উনি আমার হাত ধরে নিজের সামনে ঘুরিয়ে বললেন,
–‘কথা কানে যায় না তোর?বাসা থেকে একা একা বের হয়েছিস কেন৷ উত্তর না দিলে ঠাটিয়ে এক চ’ড় মারবো৷’
আমি নিরুত্তাপ ভাবে বললাম,
–‘হাত ছাড়ুন কাব্য ভাই!আমার লাগছে৷’
উনি আরো শক্ত করে ধরলেন চেঁচিয়ে বললেন,
–‘লাগার জন্যই ধরেছি৷ তোর সাহস কি করে হলো একা একা বের হওয়ার?তোর জন্য আম্মু অসুস্থ হয়ে গেছে৷ ঘুমের ই’ঞ্জেকশন দিয়ে এসেছি আমি৷ বাই এনি চান্স আম্মু সুস্থ না হলে তোকে মে’রে এই নদীর পানিতে ভাসিয়ে দিবো৷’
–‘আমার জন্য আপনাদের চিন্তা করতে বলেছি আমি?’
–‘মুখে মুখে তর্ক করলে তোর খবর আছে নীতু৷ বেশি বুঝিস তুই?’
আমি উনার হাত সরানোর চেষ্টা করে বললাম,
–‘আমার ইচ্ছা হয়েছিলো তাই বের হয়েছি৷ এইবার ছাড়ুন৷’
–‘ছাড়বো না কি করবি তুই?’
আমি কিছু না বলে চিল্লাতে শুরু করলাম৷ দূরে বসে থাকা কিছু ছেলে আমার চিৎকার শুনে এগিয়ে আসতেই কাব্য ভাই আমাকে তার সাথে একদম মিশিয়ে নেয়৷ ছেলেগুলোর একজন কি হয়েছে জিজ্ঞেস করতেই কাব্য ভাইয়া বললেন,
–‘তোদের ভাবীর চোখে কি যেন পড়েছে তাই এমন চিৎকার করছে৷’
আমি উনার বুক থেকে মাথা উঠানোর চেষ্টা করতে উনি আরো জোরে চেপে ধরেন৷ ছেলেগুলো আর কিছু বলার আগে উনি আবারও বললেন,
–‘এখানে দাঁড়িয়ে থেকে কি আমাদের রোমাঞ্চ দেখবি তোরা? স্যারের রোমাঞ্চ দেখতে লজ্জা করে না তোদের৷ এখুনি যা এখান থেকে না হলে আজ প্রাইভেট পড়ানোর সময় সব কয়টাকে রাস্তায় এনে কান ধরে উঠবস করাবো৷’
ছেলেগুলোর মধ্যে একজন যাওয়ার আগে জিজ্ঞেস করলো,’ভাই আপনি বিয়ে করেছেন?কই আমরা তো কিছু জানলাম না৷’
উনি রাগী স্বরে বললেন,
–‘সব কৈ’ফিয়ত কি তোদের দিবো আমি?গলির চিপায় সি’গারেট খাস আমি কি সেই কৈফিয়ত তোদের কাছে চেয়েছি!তবে আজ চাইবো না তবে সবগুলোর বাসায় খবর পৌছে যাবে৷’
উনার কথা শুনে সব গুলো চুপ হয়ে না বলার অনুরোধ করে চলে যায়৷ ওরা চলে যাওয়ার পরও উনি আমার মাথা তার বুকে থেকে উঠাতে দেয় নি৷ দম বন্ধ বন্ধ লাগছে আমার সেই সাথে অস্থিরতা৷ এতোটা কাছে কোনোদিন আসি নি উনার৷ তবে উনার বুকে আজ কেমন ভালোলাগার ছোয়া আছে৷
–‘তোর হৃদ’পি’ন্ড ঢাক ঢোল পেটাচ্ছে কেন?লাফিয়ে মনে হচ্ছে বের হয়ে আসবে আমার হৃ’দপি’ন্ডের কাছে এখুনি৷’
আমি উনাকে দূরে সরানোর জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছি এর মাঝে হঠাৎ উনার এমন কথায় লজ্জা পেয়ে যাই৷
আমি উনাকে আবারো দূরে সরাতে গেলে উনি বললেন,
–‘আমি না ছাড়লে ছাড়া পাবি তুই আমার বাঁধন থেকে!’
এই কথা বলেই উনি আমায় ছেড়ে দূরে গিয়ে দাঁড়ায়৷ আমি জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকি৷ আর একটু হলে দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম৷ আমি জোরে শ্বাস টেনে বললাম,
–‘আপনি প্রচুর অস’ভ্য কাব্য ভাই যাকে মা’রাত্মক অস’ভ্য বললেও ভুল হবে৷ উনাদের আপনি বউ বলে কেন পরিচয় দিলেন!আর কতো মি’থ্যা বলবেন আপনি? আমাদের সত্যবাদী “দ্যা গ্রেট কাব্য” ভাই বিশিষ্ট মি’থ্যাবাদী হলো কবে থেকে৷ আপনি মি’থ্যার বেড়াজালে কেন জড়াচ্ছেন আমায়৷ কবে মুক্তি পাবো আমি?আর কবেই বা পাবো এই সবকিছুর উত্তর৷’
–‘যতদিন শর্ত না শেষ হয় ওই দিন পর্যন্ত৷’
আমি উনার কথা শুনে অবাক হয়ে বললাম,
–‘কিসের শর্ত!’
উনি পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে ঘুরে যেতে যেতে বললেন,
–‘সেইটাও একটা শর্ত!’
উনি কিছুদূর যাওয়ার পর পিছু ফিরে বললেন,
–‘কোলে করে নিয়ে আসবো না কি তোকে? এখনো দাঁড়িয়ে আছিস। ওয়েট আমি আসছি কোলে নিতে।’
উনি আসার জন্য পা বাড়াতেই আমি দৌড়ে উনার দিকে যাই। এমনি কিসের শর্ত তা নিয়ে আরেক মাথাব্য’থা শুরু হয়ে গেছে।এখন রাস্তার মাঝে কোলে তুললে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাবে। এই ছেলের ভরসা নেই যা ইচ্ছা তাই করতে পারে। আল্লাহ কি দিয়ে বানিয়েছে উনায়?
________________________________
টানা চব্বিশ ঘন্টা পার হয়ে গেছে এখনো কাব্য ভাইয়ার দেখা নেই৷ দেখা নেই বললে ভুল হচ্ছে সে ইচ্ছা করেই আমাকে দেখা দিচ্ছেন না৷ আমার জীবনে সবচেয়ে ভালো মূহুর্ত এই চব্বিশ ঘন্টা ছিলো৷ উনাকে দেখলেই আমার প্রশ্নের উত্তর জানতে ইচ্ছা হয়৷ আর উনাকে না দেখলে আমি নিজেকে সামলাতে পারি৷ অন্য কিছুতে ব্যাস্ত রাখতে পারি৷ কাল সকালে আঙ্কেল আসবে৷ আর এই খবর টা শোনার পর থেকে আমার ভয় আরো বেড়ে যাচ্ছে৷ অন্যসব সময় হলে আনন্দের সীমা থাকতো না বাট কাল যদি কাব্য ভাই উল্টাপাল্টা কথা বলেন তাহলে আঙ্কেলর চোখে কতোটা নিচু হয়ে যাবো তা ভাবার বাইরে৷ আমার বাবার পর “রেদুয়ান আঙ্কেল”আমার আরেকটা বাবা৷ আমি চোখ বন্ধ করে এই মানুষটাকে বিশ্বাস করতে পারি,ভরসা করতে পারি৷ উনার চোখে আমি খারাপ হতে চাই না৷ কিন্তু কাব্য ভাইয়া?উনি কি করবেন! পাশের রুম থেকে আজও গিটারের আওয়াজ সাথে কাব্য ভাইয়ের সুন্দর কন্ঠের গান ভেসে আসছে৷ উনার গানের গলা অনেক ভালো৷ মায়ায় পড়ে যাওয়া কন্ঠ তার৷ যেকোনো গান তার গলায় মানায়৷ তবে আজ গানের মাঝে কেমন বি’ষাদের ছায়া৷ অনেক কিছু বলার আকুতি৷ কিন্তু কাকে বলার? উনায় গিয়ে জিজ্ঞেস করবো!লেখিকা,রুবাইদা হৃদি সকালের কথা মনে হতেই রাগ হলো৷ নীতু তোর এতো ভাবতে হবে কেন?তুই কে উনার৷ যা ইচ্ছা তাই করুক তোর কি তাতে৷
–‘নীতু আম্মু তুই কি পড়তে বসেছিস?’
ফুপি ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বলল কথাটা৷ আমি চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে মিষ্টি হেসে বললাম,
–‘কিছু বলবে ফুপি!’
ফুপি বেডে বসে আমাকে পাশে বসতে দিয়ে বলল,
–‘গল্প করতে আসলাম তোর সাথে৷’
–‘অনেক দিন একসাথে বসে গল্প করা হয় না তাই না ফুপি৷’
–‘হ্যাঁ অনেক দিন৷’
ঘরের মাঝে হঠাৎ নিস্তব্ধতা নেমে এলো৷ কাব্য ভাইয়ের গলায় ভেসে এলো,
‘ছায়া মেলে জড়ো হয় আকাশে যায় না কিছুতে সরানো!’
‘প্রিয় রঙ হয়ে যায় ফ্যাকাসে হয় না দুহাত জড়ানো৷’
ভুলে বেঁচে থাকা,নোনা জ্বল চোখে মাখা
সুখ নেই… সুখ নেই, পৃথীবির কারখানায়৷
(তাহসান)
ফুপি দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আমার দিকে ঘুরে বসলো৷ আমার হাতে হাত রেখে বলল,
–‘ছেলেটার গানের গলা অনেক ভালো তাই নারে নীতু?’
–‘হু!কাব্য ভাইয়া স্টেজে গান গাইলে ভাই’রাল হয়ে যাবে৷’
–‘আমার ছেলেটার সুখ নেই জানিস৷’
আমি অবাক হয়ে ফুপির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম৷ দিব্যি হাসি-খুশি আর আমাকে জ্বালানো কাব্য ভাইয়া নাকি সুখে নেই৷ কথাটা হাস্যকর লাগগো আমার৷ আমি অবাক হয়ে বললাম,
–‘কেন ফুপি?উনাকে দেখলে তো সব ঠিকঠাক লাগে৷’
–‘উপরে ভালো থাকলেই কি সবাই ভেতরে ভালো থাকে?তুই কি ভালো আছিস!সবার ভেতরে একটা চা’পা কষ্ট থাকে আর সেই কষ্টের ভাগীদার সেই মানুষটার মন হয়৷ মন খুলে কারো সামনে দেখানো যায় না কিন্তু উপরের হাসি মুখটা সবাইকে দেখানো যায়৷ আর সেই ঢেকে থাকা মনের একটা কষ্টের গল্প থাকে৷ সেই গল্পটা হয় কষ্টে মো’ড়ানো৷ যেটা কাওকে দেখানো যায় না বলেই মানুষ ভাবে তুমি ভালো আছো!তোমার সুখের সীমা নেই৷’
আমি বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ফুপির দিকে৷ প্রত্যেকটা কথা নিদারুণ সত্য৷ ফুপি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
–‘তোকে আজ কিছু সত্যি বলবো৷ যেই সত্যিটা কাব্যের ভেতরকার৷ সাথে এতোসব কিছুর৷ কিন্তু সেই সত্যিটা শুনে কাওকে বলবি না৷ আর সত্যিটার বি’চার বিবেচনা তুই করবি৷ আমি জানি তুই পারবি সত্যিটা মেনে নিতে৷ কি পারবি না?’
চলবে….
রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৭
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy rahman)
‘বৃষ্টিস্নাত এই ভোরের আলোয়,মিশিয়ে নেওয়ার এই খেলায়,
তুমি আমি থাকবো দুজনের মনের কিনারায়৷
ভালোবাসি,ভালোবাসি প্রেমের ঠিকানায়৷
কাব্য ভাইয়া তার মনের মাধুরি মিশিয়ে গেয়ে চলেছেন৷ গানের কথা গুলো তার লেখা৷ হয়তো সুর তুলছেন৷ তার একটা ডায়েরি আছে!আর সেটার নাম হচ্ছে,”রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি”৷ আজ পর্যন্ত কারো সাহস হয় নি তার এই সি’ক্রেট ডায়েরি খুলে দেখার৷ সেই পাঁচ বছর আগে একবার চু’রি করে দেখতে গিয়ে কাব্য ভাইয়ের হাতে তার ক্লাসমেট তমা আপুর চ’ড় খেয়ে গাল বাঁকা হয়ে গিয়েছিলো৷ সেই থেকে এই ডায়েরিকে সবাই ভুতের মতো ভয় পায়৷ এশারের নামাজ পড়ে ফুঁপি আবার আসে৷ কথা শেষ হওয়ার আগেই আজান শুরু হয়৷ তাই ফুপি নামাজে চলে যায়৷ আমি উৎসুকভাবে শোনার অপেক্ষায় আছি৷ হয়তো আজ আমার অপেক্ষার অবসান হবে আর তারপর মুক্তি৷ মুক্তি নামক শব্দটা বড্ড ভারী ঠেকলো আমার কাছে৷ কিসের মুক্তি?ভেবেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে এলো৷ ফুঁপি পানির বোতল পাশে রেখে আমাকে বলল,
–‘সত্যি গুলো বড্ড তি’ক্ত হয় জানিস নীতু?অনেক সময় এই সত্যির জোড়ে সম্পর্ক ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়৷’
ফুঁপির বলা শব্দ গুলো বড্ড কঠিন লাগছে সেই সাথে ভয়৷ কি এমন সত্যি যেটা সম্পর্ক ভাঙতে পারে?
–‘কি এমন সত্যি ফুঁপি? আমার যে বড্ড ভয় লাগছে তোমার কথা শুনে৷’
–‘কাব্যে একজন কে অনেক ভালোবাসতো আর তাদের বিয়েও ঠিক ছিলো৷’
আশেপাশে বা’জ পড়লে যেমন শব্দ হয় তেমন শব্দের ন্যায় এইটুকু কথা লাগলো আমার৷ আমি বিষ্ময়ে নিয়ে তাকিয়ে আছি৷ ফুঁপি নি’র্ঘাত আমার সাথে মজা করছে৷
–‘আমার সাথে মজা করছো!’
–‘মজা করার মতো পরিস্থিতি এইটা নয় তুই ভালো মতো জানিস নীতু৷’
–‘কিন্তু…..
ফুঁপি আমার দিকে দৃষ্টি মেলে বলল,
–‘সমস্ত কথা শোন আগে৷ মেয়েটার নাম ছিলো রাই৷কাব্য হুট করে একদিন এসে বলল মেয়েটাকে নাকি ও ভালোবাসে৷ আর অনেক অনুরোধ করলো তাকে বিয়ে করবে৷ সব শুনে আমি মানতে না’রাজ ছিলাম৷ কিন্তু কাব্য না’ছোড়বান্দা সে বিয়ে করবেই৷ আমি তোর রেদুয়ান আঙ্কেল কে জানিয়ে কাব্যকে বোঝানোর চেষ্টা করি৷ কবিতার তখন বিয়ে ঠিক হওয়ার পথে। এতশত ঝামেলায় ওকে কথা দিই আমরা বিয়ে ঠিক করে রাখবো আর কাব্য গ্রেজুয়েট হয়ে বের হওয়ার পর বিয়ে দিয়ে ঘরে তুলবো৷ কিন্তু কিছুদিন পর মেয়েটার বাবা করে অন্য একজনের সাথে বিয়ে দেয় তাও ওই মেয়ের মত নিয়ে। কাব্য শুনে চুপ মেরে বসেছিলো৷ এই ঘটনা তোদের অজানা কারণ আমরা চেয়েছিলাম ওকে কেও প্রশ্ন না করে৷ ইন্টারের সময় মেয়েটার সাথে সম্পর্ক ছিলো৷ তবে মেয়েটা ওকে ভালোবাসতো না৷ বিয়ের আগের দিন হাসিমুখে নিজে এসে বিয়ের কার্ড দিয়ে বলেছিলো,যোগ্যতা ছাড়া দুনিয়ায় কাওকে পাওয়া যায় না৷ কাব্যও হাসি মুখে কার্ড নিয়েছিলো৷নিজের ভুল বুঝে নিজেকে সা’মলিয়েছে৷’
আমি ফুঁপির কথা শুনে চুপ মেরে বসে আছি৷ কি বলা উচিৎ ভেবে পাচ্ছি না একদম৷ আমি কিছুক্ষণ চুপ থেকে ফুঁপি কে বললাম,
–‘ফুঁপি এইগুলো কবে হয়েছে?’
–‘আমরা যখন মিরপুর থাকতাম৷ কাব্য তখন সদ্য ইন্টারে উঠেছে৷ তখন তুই অনেক ছোট৷’
আমি আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলাম,
–‘কাব্য ভাইয়া কি ওই মেয়েটাকে অনেক ভালোবাসতো?’
–‘ওর মন বুঝতে পারা অনেক কষ্ট রে নীতু৷ চব্বিশ বছর ধরে ওকে আগলে রেখেছি কিন্তু এখনো ওকে বুঝতে পারি না৷ এইটা “মা” হিসেবে আমার ব্যা’র্থতা৷ ওর মনের সমস্ত কিছু নিজের মধ্যে আগলে রাখতে ভালোবাসে৷ হয়তো মেয়েটাকে ভালোবাসতো খুব বেশি আবার হয়তো ওর মনের আবেগ ছিলো৷ কিন্তু আমার ছেলেটা ভালো নেই৷’
–‘তবে আমায় উনি এইভাবে নিয়ে এলো কেন ফুঁপি?’
ফুঁপি আমার দিকে নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে মাথায় হাত রেখে বললেন,
–‘ও যে শর্তে বাধা নীতু!আর সেই শর্তে আমাকেও বেঁধে রেখেছে৷ তবে এইটুকু বলতে পারি,ও তোকে আগলে রাখার জন্য সবকিছু করতে পারে৷ আর বিয়েটা বড় ভাই ইচ্ছা করে দিতে চায় নি৷ আমিরের সাথে ব্যাবসায়ী শ’এুতা আছে তা জানিস তুই?’
আমি মাথা দোলালাম৷ সত্যি আমিরের সাথে বাবার টাকা নিয়ে ঝা’মেলা চলছিলো৷ বিয়ের দু দিন আগে “আমির” আমাদের বাসায় আসে তারপর বাবা তাড়াহুড়ো করে আমার বিয়ের সমস্ত আয়োজন করে৷ বাবা একপ্রকার জোর করেই বিয়েতে হ্যাঁ বলিয়েছে আমায়৷ ফুঁপি দ#ম নিয়ে আবার বলল,
–‘আমি অসুস্থ ছিলাম তাই তোর বিয়েতে যেতে পারি নি৷ কাব্য আসার আগে ফোন করে বলেছিলো তোকে নিয়ে আসছে৷’
–‘কিসের শর্ত ফুঁপি?আমি ভেবে ভেবে পা’গল প্রায় হয়ে যাচ্ছি৷ আর বাবাও আমাকে তার বাসায় যেতে বারণ করে দিয়েছে৷ আমি কতোদিন থাকবো এইখানে?আমার পড়ালেখার কি হবে৷’
ফুঁপি মুচকি হেসে আমাকে তার কোলে মাথা দিয়ে শুতে বলেন৷ আমি শুতেই মাথায় বিলি কাটে৷আমি শান্তিতে চোখ বন্ধ করে ফেলি৷ এখন মনে হচ্ছে সব শর্ত গোল্লায় যাক ফুঁপির আদরে শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়ি৷
–‘তোর পড়াশোনা এখানেই হবে আমাদের বাসায় থেকে৷ আর বড় ভাই সব কিছু সামলিয়ে তোর সাথে দেখা করতে আসবে৷ আর শর্ত সেটা উপযুক্ত সময় হলে সেটা তোকে কাব্য নিজে বলবে৷ এখনো সেই সময় আসে নি৷’
আমি চোখ খুলে বললাম,
–‘সেই সময়টা কবে আসবে ফুঁপি!আর কতো দোটানায় থাকবো আমি৷’
–‘সেইটা পাঁচ বছর পর আসতে পারে আবার দুদিন পরও আসতে পারে৷ তোর এতো কিছু ভাবতে হবে না৷ নিজের পড়াশোনার দিকে ফো’কাস কর৷ নিজের পায়ে দাড়া৷ আমরা তোর পাশে আছি ইভেন তোর বাবাও তোর পাশে আছে সেইটা সময় হলেই বুঝতে পারবি৷’
পরম শান্তিতে আমার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে আসলো৷ ফুঁপি আমাকে ঘুমাতে দেখে নিজে চুপ হয়ে মাথায় হাত বুলাতে থাকলেন৷ বাইরে থেকে কাব্য ভাইয়ের কন্ঠ ভেসে আসছে৷ কি বলছেন উনি কিছুই কানে ঢুকছে না৷ আমার ঘুম দরকার শান্তির ঘুম!
_________________________________
ছাদের কার্ণিশ ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে কদম গাছটা৷ সকালের স্নিগ্ধ আলো কদমের ছোট ছোট নেড়া মাথায় পড়ছে৷ সূর্যের আলোয় ছোট কদম গুলো কুসুমের মতো লাগছে৷ কিছুদিন পরেই কদমের সুন্দর রুপের ছড়াছড়ি হবে এই নেড়া মাথা থেকে৷আমার এই কদম গুলো দেখতে দারুণ লাগে৷ কিছু কাঁক সেই কদম ঠোকাঠুকি করছে ছিড়ার জন্য৷ কাঁক গুলো বড্ড বোঁকা এই কদম ছিড়ে কি করবে ওরা? নিজের প্রেমিকা কে দিবে? কদম প্রিয় কাঁক প্রেমিকা৷ ভেবেই দম ফাটা হাসি পেলো৷ কাঁক গুলো কদম ছিড়ে নিয়ে ওদের প্রেয়সীকে দিয়ে বলবে,
‘প্রেয়সী কাঁক তোমার জন্য মানুষের প্রিয় কদম এনছি।
এইবার আমাকে গ্রহণ করো কাঁক সুন্দরি।’
সত্যি কি এমন টা করে ওরা?
–‘তোর মতো গাঁ’ধা আর কি কি ভাবতে রে!’
পিছন থেকে কাব্য ভাইয়ার অ’পমান সূচক বাক্য শুনে আমি চুপ করে গেলাম৷ উনি আমার পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে কদমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
–‘শুভ সকাল কাঁকের প্রেম বিশেষজ্ঞ৷’
আমি উনার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললাম,
–‘আপনি এখানে কখন এসেছেন?’
–‘তুই যখন কাকের প্রেমের বাণী শোনাচ্ছি….ওয়েট তোকে আমি জবাব কেন দিবো৷’
উনার এমন কথা শুনলে বিরক্ত লাগলেও আজ লাগছে না৷ উনায় একটু জ্বালাতে ইচ্ছা হচ্ছে প্রচুর৷ আমি নি’রুত্তাপ ভাবে জবাব দিলাম,
–‘আপনার বউ আমি জবাব তো দিতেই হবে আপনাকে৷’
উনি ফাটাফাটা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন৷ নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বললেন,
–‘আমি মানা করেছি নাকি? তা বউ বাসর ঘরের ব্যাবস্থা করি৷’
আমি উনার থেকে একহাত দূরে গিয়ে বললাম,
–‘দূরে যান আপনি!সকাল সকাল আমাকে না জ্বালালে শান্তি হয় না আপনার৷’
উনি আমার কাছে এসে বললেন,
–‘না হয় না কাঁকের প্রেম বিশেষজ্ঞ৷’
–‘উফফ!বিরক্তিকর৷’
–‘উফফ!কাঁকের প্রেমকর৷’
উনার সাথে কথা বলাই বৃথা৷ আচ্ছা উনি কি জানেন ফুঁপি আমায় অনেক কিছু বলে দিয়েছে?এইজন্যই কি আজ মেজাজ মজা করার মুডে তার!উনি হঠাৎ আমার কানের কাছে ফিসফিস করে বললেন,
–‘তোকে আজ খেয়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে জানিস?তাও বাটার দিয়ে৷ একদম স্নিগ্ধ লাগছে৷’
উনার ফিসফিস শব্দে আমার কেমন অদ্ভুত লাগছে সেই সাথে লজ্জা৷ আমি মেকি রাগ দেখিয়ে বললাম,
–‘আমাকে কি আপনার খাওয়ার জিনিস লাগে? আপনি পা’গল হয়ে যাচ্ছেন দিন দিন কাব্য ভাইয়া সেইটা কি আপনি জানেন?’
উনি কদমের ডালের দিকে লাফিয়ে দুটো কদম ছিড়ে বললেন,
–‘সারাদিন এতো ভাই ভাই করিস কেন রে! তোকে না বলেছি ব্রো বলবি আমায়৷’
উনার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম৷ এই ছেলে নিশ্চয় ছ্যাঁ’কা খেয়ে ব্যাঁ’কা হয়ে গেছে পুরনো প্রেমিকার কথা মনে করে তাই উল্টো পাল্টা বকছে৷ আমি হাসবো নাকি কাঁদবো? উনি কদম গুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখছেন৷
–‘ব্রো মানেও তো ভাই কাব্য ভাইয়া৷’
উনি আমার দিকে তাকিয়ে রাগী ভাব মুখে ঝুলিয়ে বললেন,
–‘এতো বুঝা লাগবে কেন তোর৷ বলতে বলেছি বলবি৷ আর না হলে শুদ্ধ বাংলা ভাষায় আমার নামটা আছে সেইটা ধরে বলবি৷ সারাদিন ভাই ভাই বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলে৷ তোর কোন জন্মের ভাই লাগি আমি?’
–‘কেন এই জন্মের সাথে আরো সাত জন্ম থাকলে সেই জন্মেরও ভাই লাগেন৷’
–‘টেনে এক চ’ড় মারবো তোর গালে৷ বেশি কথা বলিস৷ যা করতে বলবো তাই করবি আর এইটা তোর প্রতি আমার অধিকার৷’
–‘কিসের অধিকার!মি’থ্যা অধিকার নিয়ে আমার উপর জোর দেখাবেন না একদম৷লেখিকা,রুবাইদা হৃদি৷ একজন ভাই হিসেবে জোর দেখাতে পারেন তাও লি’মিট রেখে৷’
উনি কদম গুলো ছুড়ে ফেলে দিয়ে আমার হাত ধরে ঘুরিয়ে নিজের সাথে শক্ত করে ধরে বললেন,
–‘অধিকার দেখানো তো মাএ শুরু৷ তোকে এই অজানা অধিকারের পুড়াবো৷ না তুই যেতে পারবি না সহ্য করতে পারবি৷ আর অধিকারে সমস্ত আয়োজন করবো আজ সেটা তোর সামনেই৷’
উনি আমার হাত ধরে টেনে ছাদ থেকে নামায়৷ উনাকে এইভাবে টানতে দেখে ফুঁপি বারবার মানা করেন কিন্তু উনি ফুঁপিকে উ’পেক্ষা করে আমায় গাড়ির দিকে নিয়ে যাচ্ছেন৷ বারবার ছুটতে চাইলে আরো জোরে আঁকড়ে ধরছেন হাত৷ উনার এই রাগ আবার কোন মোড় এনে দিবে আমার জীবনে?
চলবে…….
( আজ অনেক কিছু খোলাসা করেছি৷ সাসপেন্স আছে আরো বাট ওইগুলা জানতে পারবেন অবশ্যই৷ ওদের জুটি কেমন লাগে আপনাদের?
ভুল গুলো ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন৷)