রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ৩৩+৩৪

0
682

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৩৩,,,৩৪
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)

নতুন দিগন্তের প্রবাল হাওয়া৷ স্বচ্ছ কাঁচের মতো পরিষ্কার সব৷ গাড়ির খোলা জানালা দিয়ে শাঁ শাঁ করে শিহরণ জাগানো বাতাস ঢুকছে৷ কেঁপে উঠার মধ্যেও ভালোলাগার শিহরণ দিচ্ছে৷ গাড়ি হাই স্পিডে ছুটে চলেছে৷ কোথায় যাচ্ছি,যাবো সেটা জানি না৷ ছুটে চলা গাছের দিকে তাকিয়ে আছি৷ আমাদের কলোনীর দিকে যে যাচ্ছি না সেটা বুঝতে পারছি৷ লুকিং গ্লাসের লুকোচুরি খেলাটা জমে উঠেছে৷ তবে উনার স্থির শান্ত দৃষ্টি৷ আমি বুঝেও ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছি৷ বো’রিং টাইম বোধহয় এইটাকেই বলে৷
–‘ কাঁচ উঠিয়ে দে৷ ‘

–‘ এইভাবেই ভালো লাগছে৷ ‘ উনার কথা উ,পেক্ষা করার সাহস নেই৷ তবুও সাহস নিয়ে বললাম৷ উনি আমার দিকে ঝুঁকে কাঁচ উঠিয়ে দিলেন৷ আমি আঁড়চোখে তাকিয়ে আছি৷ রেগে বললাম,

–‘ আমার অ”ক্সিজেনের প্রয়োজন৷ আমি কাঁচ খোলাই রাখবো৷ রাখবো মানে রাখবোই৷ ‘

–‘ সাহস থাকলে খুলে দেখা৷ ‘ উনি কাঁচ লাগিয়ে আবার ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিয়ে বললেন৷ আমি খুলতে গেলে একহাত টেনে স্ট্রা’রিং এর উপর রেখে নিজের হাত আমার হাতের উপর রাখলেন৷ আমি অন্যহাত দিয়ে আবার চেষ্টা করতে গেলে গাড়ি ব্রে”ক করলেন উনি৷ আরেকটু হলে আমার হা”র্ট বেরিয়ে যেত৷ এতো জোরে কেও ব্রে”ক ধরে৷ আমি গরম চোখে তাকাতেই উনি চোখ মেরে বললেন,

–‘ কাজিন সিস্টার কি ভয় পেয়েছে?আজ আমার বউ থাকলে কোলের উপর উঠিয়ে ড্রাইভ করতাম৷ বাট আফসোস সে তো আমার সিস্টার৷ ‘

আমি ভ”ড়কে গেলাম৷ বলেন কি? আমার কথা আমাকে শুনাচ্ছেন৷ আমাকে জবাব না দিতে দেখে লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে নিজের চুল হাত দিয়ে ব্রাশ করছেন৷ নিজেই নিজেকে দেখে বললেন, ‘

‘ পারফেক্ট৷ ‘

–‘ ক্লিয়ার করে বলেন তো,যাচ্ছি কোথায় আমরা?’ আমি নিজের রা’গ সং”যত করে বললাম৷ আজ নির্ঘা”ত ঝ”গড়া হবেই হবে৷ উনি গাড়ি থেকে নেমে আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

–‘ গার্লফ্রেন্ড যোগাড় করতে৷ যাবি? ‘
আমি রে’গে বের হয়ে এলাম৷ তার সামনে কোমড়ে হাত রেখে দাঁড়িয়ে বললাম,

–‘ মানে৷ ‘

–‘ সিস্টার নিয়ে আর কয়দিন থাকবো?এইবার তো বিয়ে শাদী করা দরকার৷ চুল যে সাদা হয়ে যাচ্ছে৷ ‘
উনার নির্বিকার উত্তর শুনে আমি তার দিকে এক পা এগিয়ে গেলাম৷ মিইয়ে যাওয়া সুরে বললাম,

–‘ দেখুন..! ‘
–‘ হ্যাঁ,দেখেছি৷ ‘
আমি কথার মাঝেই থেমে গেলাম৷ বিরক্ত লাগছে৷ নিজের মনে কথা গুলো সাজিয়ে আবার বললাম,

–‘ আপনার ড্যা’ম কেয়ার ভাব আমার একদম ভালো লাগে না৷’

–‘ জে”লাস? ‘ উনি আমাকে ঘুরিয়ে গাড়ির মধ্যে ঠে’স দিয়ে আমার উপর ঝুঁকে দাঁড়িয়ে রইলেন৷ আমি পুরো লেগে গিয়েছি গাড়ির সাথে৷ আ”চমকা এমন হওয়ার একটু ভয় পেয়ে গিয়েছি৷ আমার গলা কাঁপছে৷ মনে হচ্ছে সে,সদ্য প্রেমে পড়া প্রেমিক৷ প্রতিনিয়ত তাকে নতুন ভাবে উপলব্ধি করি কেন৷ আমি কি বলবো খুজে পেলাম না৷ উনাকে ছাপিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কেও আছে কিনা৷ সম্পূর্ণ নি”র্জন জায়গা৷ আশেপাশে গাছের সারি৷ অনেকে দূরে একটা চার্চের উপরের অংশ দৃশ্যমান৷ পাহাড়ের ঢালুর উপর৷ হঠাৎ মনে হলো,সেখানে যাওয়া দরকার৷ আমি তার দিকে তাকিয়ে অনুনয়ের সুরে বললাম,

–‘ ব্রাদার সিস্টার গে’ম পড়ে খেলবো৷ চলুন ওই চার্চে যাই৷ ‘

–‘ তার আগে স্বামীর দায়িত্ব পালন না করলে ঘোর অন্যা”য় হবে যে৷ ‘
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম৷ এখানে আবার কিসের দায়িত্ব৷ উনি কাছে এসেই ঠোঁট আঁকড়ে ধরলেন৷ কিছু মূহুর্ত, কিছুটা পরিবেশের উ’ষ্ণতা, দূরে চার্জের ঘন্টার আওয়াজ একটা ছোট মূহুর্তকে ভিন্ন ভাবে উপভোগ করালো৷ আমার শরীরে র”ক্ত ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে৷ হঠাৎ প্রবাহ হাওয়ার মতো শীতল স্পর্শ৷ বার্লিনের এই নাম না জায়গা টা চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে৷
__________________
সব কিছুর জন্য নিজেকে পূর্ণতার খাতায় ফেলতে বা লিখতে ইচ্ছা হয়৷ কখনো না চাইতেও অনেক কিছুই হয়ে যায়৷ আর সেই হওয়াটা সুখের হয়৷ হাতে হাত ধরে হাটার মানুষটা যদি পার্ফেক্ট হয় তাহলে উঁচু চ”ড়াই কেও সমতল লাগে৷ হাতে হাত ধরেই উঁচু ঢা”ল উঠে চলেছি৷ উঠতে ক”ষ্ট হলেও মানিয়ে নিচ্ছি৷ উঠার আগে উনি একটা কথা বলেছিলেন,
” জীবনটাকে এই উঁচু রাস্তার মতো মনে কর,আমি তোর পাশে আছি! চাইলে কোলে করেই উঠিয়ে নিয়ে যেতে পারি৷ কিন্তু জীবনটা তো সহজ নয়৷ তাই পাশে থাকা সবকিছুকে অবলম্বন করে নয় কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সব কিছু মো”কাবেলার চেষ্টা করবি৷ ”

আমি উনার হাতটা শক্ত করে ধরে উঠার চেষ্টা করছি৷ তার কথা গুলোর মানে সহজ কিন্তু আমার কাছে বরাবর প্রচন্ড ক”ঠিন লাগে৷ মনে হয় কিছু একটা হবে৷ যা বি”শ্রী৷ আমার কল্পনার বাহিরে৷ কিন্তু সবটা উপভোগ করে নিতে চাচ্ছি৷ তার সাথে, তার পাশে থেকে,হাতে হাত ধরে৷

চার্চের বাইরে দাঁড়িয়ে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছি৷ হাঁপিয়ে গিয়েছি৷ আর তাকে দেখো,মনে হচ্ছে এক পা হেটেছেন৷ কোনো প্র”তিক্রিয়া নেই৷ আমি ধ’প করে ই’ট বিছানো রাস্তায় বসে পড়লাম৷ আর পারছি না৷ কি জন্য এসেছি? এখন নামতে হবে ভেবেই শরীরে জ্ব”র চলে আসার উ”পক্রম৷ আমার সামনে এসে সে নিজেও বসে পড়লো৷ আদুরে সুরে বললো,

–‘ ঠিক আছিস? ‘

আমি জোরে শ্বাস টেনে নিয়ে বললাম,

–‘ আপনার ক’ষ্ট হচ্ছে না? ঠিক আছেন কি করে? ‘

উনি আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দাঁড়ালেন৷ আমি দাঁড়াতেই কোলে উঠিয়ে নিলেন৷ চার্জের ভেতরে এগিয়ে যেতে যেতে বললেন,

–‘ তোর জন্য৷ ‘

তার একটা কথায় আবারো সব কিছুতে ভালোলাগার ছোঁয়া বয়ে গেলো৷ শক্ত করে তার গলা জড়িয়ে ধরলাম৷ উনি আলতো হাতে ধরে রেখেছেন৷ মনে হচ্ছে,আমি ব্যা’থা পাবো মনে হচ্ছে তার ধরায়৷ আমি মুচকি হেসে বললাম,

–‘ আপনার সব কিছুতে এতো মো’হ কেন? এতো কেন ভালো আপনি৷ ‘

উনি একটা উঁচু বারান্দায় মতো জায়গায় এসে আমায় নামিয়ে দিলেন৷ তারপর আমার কোমড় ধরে তার বুকে আমার পিঠে রেখে সামনে তাকাতে বললেন৷ আমি তাকিয়ে স্ত’ব্ধ হয়ে গেলাম৷ সামনে নীল স্বচ্ছ আকাশ৷ পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে গেছে হাজারো গাছ৷ আর দূরে ঝরণা আছড়ে পড়ছে নিচে৷ সুর তুলছে পানির৷ মনে হচ্ছে,নীল আকাশ ভেদ করে পানির সারি নিচে নেমে পড়ছে৷ রঙধনু সাদা গুচ্ছ মেঘের আড়াল থেকে উঁকি দিচ্ছে৷ আমি শান্ত চোখে তাকিয়ে আছি৷ দৃষ্টি কাঁপছে৷ উ”ত্তেজনায় গলা থেকে আওয়ার ফিরে যাচ্ছে৷ উনার হাত খা”মচে ধরে শুধু বললাম,

–‘ আপনার ভালোবাসার মতো সবটা সুন্দর৷ উপভোগ্য৷ সবকিছু স্নিগ্ধতার চাঁদরে মো’ড়া৷ ‘

উনি আমার ঘাড়ে চুমু খেলেন৷ মোহ তে আছি তবুও তার স্পর্শ হৃদয়ে লাগলো৷ আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলাম৷ মাথার উপর ছাদ নেই৷ দেয়ালে লাল রাঙা ফুলের লতাপাতা জড়ানো৷ সামনেই চার্চ। এখন টা অ”ন্ধকার তবে আলোকিত৷ হুট করে একটুকরো রোদের সাথে মেঘেরা নেমে পড়লো দল বেঁধে৷ উনি আর আমি ভিজে যাচ্ছি৷ উনি আরো শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছেন৷ আজও রৌদ্দুরে বৃষ্টি হচ্ছে..! আমার আর তার প্রেমের বৃষ্টি৷ ভালোবাসায় মোড়ানো স্নিগ্ধতার বৃষ্টি৷

মুখের ভাবটা পাং”শু”টে করে রেখেছি আমি৷ জ্ব”রে মুখ তেঁ’তো হয়ে উঠছে৷ গা গুলিয়ে ব”মি পাচ্ছে৷ মাথার র”ক্ত ট”গবগ করে ফুটছে মনে হচ্ছে৷ আর উনি আমাকে সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে৷ উনি কিচেনে আর আমি তার গলা জড়িয়ে পিঠের উপর ঝুলে আছি৷ হঠাৎ করে বৃষ্টিতে ভেজার জন্য জ্ব”র এসেছে৷ উনি কিছু একটা বানাচ্ছেন৷ আমার বিরক্ত লাগছে৷ মাথা ঘু’রাচ্ছে৷ আমি উনার সামনে গিয়ে হাতের নিচ দিয়ে বুকের উপর মাথা রেখে দাঁড়ালাম৷ উনি মনোযোগ দিয়ে কাজ করছেন৷ আমার করা বিরক্তিতেও তার ভ্রু’ক্ষে’প হচ্ছে না৷ আমি তার বুকেত উপর চুমু খেলাম৷ উনি তাকালেন আমার দিকে৷ বললেন,

–‘ রুমে যাও আমি আসছি৷ ‘ তার মুখে তুমি শুনে জ্ব’রের মাঝেও মাথা তুলে অবাক চোখে তাকালাম৷ ইশ! কি মিষ্টি লাগে শুনতে৷ আমি আবার তার বুকে ঠোঁট ছোয়ালাম৷ উনি একহাতে আমার মাথা চেপে ধরলেন৷ আমি চোখ বুজে বললাম,

–‘ এই তুমি,,আমাকে তুমি করে বলতে পারেন না? কতো মিষ্টি লাগে৷ জানিস? আমার খেয়ে ফে’লতে ইচ্ছা হয়৷ ‘

–‘ কি খেতে ইচ্ছা হয়? ‘

আমি উনার বুকে নাক ঘষে বললাম,

–‘ তোকে না তোমাকে না না আপনাকে৷ ‘

আমি কি বলছি সেটা নিজেও জানি না৷ শুধু বলার দরকার বলে চলেছি৷ উনি আমাকে ধরে ওভেন বন্ধ করে কিছু একটা নিয়ে আমাকে উঠিয়ে বসালেন৷ আমি উনার টি শার্ট আঁকড়ে ধরলাম৷

–‘ আমাকে ফেলে কোথায় যাচ্ছেন৷ যাবেন না৷ আমি ঘুমাবো৷ আপনার সাথে৷ ‘

–‘ হ্যাঁ,ঘুমাবা তো৷ আগে ছাড়ো আমাকে৷ আসছি আমি৷ ‘

–‘ উহু,ছাড়বো না৷ আপনার সাথে যাবো৷ ‘

উনি আমার থুতনিতে হাত দিয়ে উঁচু করে কপালে চুমু খেয়ে বললেব,

–‘ আসছি তো বাবা৷ ‘

আমি ঠোঁট উল্টে কান্না করে দিলাম৷ উনি আমাকে রেখে খাবার রুমে নিয়ে গেলেন৷ তারপর আমার কাছে এসে আমাকে নিয়ে এলেন কোলে করে৷ বেডে বসিয়ে দিয়ে খিচুড়ি ধরলেন আমার মুখের সামনে৷ আমি নাক-মুখ কুঁচকে ফেললাম৷ তারপর উনার হাত ধরে বললাম,

–‘ সেদিনের মতো খাবো আমি৷ ‘

–‘ কোনদিনের মতো? ‘

–‘ আপনি খাবেন আমি আপনার থেকে খাবো৷ ‘

উনি নিজের কপাল কুঁচকালেন৷ সেদিন রাতের কথা মনে হতেই আমাকে জোর করলেন হাত থেকে খাওয়ার জন্য৷ আমি মানতে না’রাজ৷ খাবো আমি তার ট্রি’কসে৷ উনি হাঁপিয়ে গেছেন আমাকে বুঝাতে বুঝাতে৷ আমি হাসছি৷ খিলখিল করে৷ হাসির ছন্দ গুলো জ্ব”রের ঘোরেও জানান দিচ্ছে,
” সুখের মূহুর্ত না ফুরিয়ে যাক৷ চিরকাল এইভাবেই থাকুক৷ ”
চলবে,,,

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ৩৪
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)

একা থাকলে কতশত ভয় মনের মাঝে জানান দেয়৷ গু’মোট অনুভূতি গুলো উঁপচে পড়া ভয় দেয়৷ শিহরণ জাগানো কিছু অনুভূতির সাথে ঠোঁটের কোণে কিছু মূহুর্তের ভালোলাগার হাসিরা মেতে উঠে৷ সারাদিন সে ফেরে নি আজ৷ আজ আমার ক্লাস নেই যার জন্য নিজেকে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে৷ হঠাৎ করেই কান্না পাচ্ছে৷ উনি ফোন রিসিভ করছেন না৷ শুধু যাওয়ার পর ফোন দিয়ে বলেছেন, ‘ খেয়ে নিবি! আমি জলদি ফিরে আসবো৷ ‘
সেই ফিরে আসাটা, ঘন্টা পেরিয়ে দুপুর পেরিয়ে যাবে ভাবতেই পারি নি৷ বই গুলো উল্টেপাল্টে দেখেও পড়ায় মনোযোগ দিতে পারলাম না৷ শুধু তাকে দেখার বাহানা খুজে চলেছি৷ জ্ব’রের জন্য মুখের তে’তো ভাবটা এখনো রয়েছে৷ গত দুইদিন সে আমাকে সামলাতে গিয়ে অফিস বা ক্লাস কিছুই করতে পারেন নি৷ তাই কাজের চাপ পড়েছে আজ৷ আমি এই রুমে থেকে ওই রুমে সব জায়গায় পায়চারি করছি৷ ফোন হাতে নিয়ে কবিতা আপুকে ফোন দিলাম৷ বহুদিন তার সাথে কথা হয় না৷ এতোবড় ঘটনা হলো তাতেও তার কোনো ভ্রু’ক্ষে’প নেই৷ একদিন কথা হয়েছিলো তাও অল্প৷ বাসার সবার সাথে ফোন আলাপ করলেও আপুকে ফোন দেওয়া হয় না৷ আপু প্রচুর ব্যস্ত৷ তার কাজ আর সংসার নিয়ে৷ তার সাথে সখ্যতা গড়ে উঠার আগেই বিয়ে আর দেশ ছেড়ে চলে গেছেন উনি৷ ফোন রিসিভ হতেই আমি হাসি মুখ নিয়ে ক্যামেরা মুখের সামনে ধরে বললাম,

–‘ তোমাকে দেখবো না,আমার বাবা টাকে দেখবো৷’
আপু হাসলেন৷ দু’ষ্টুমি করে পেটের কাছে ক্যামেরা ধরে বললো,

–‘ বাবার বউ আসবে কবে৷ সেই খেয়াল কি তার মামানির আছে? ‘
আমি কথা বুঝতে না পেরে লজ্জা পেলাম৷ আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবার আপু বললো,

–‘ লজ্জা পেলে তো তোকে দারুণ লাগে নীতু৷ এইজন্যই বুঝি আমার ভাই এতো পা”গল হয়েছে৷ ‘

–‘ ভালো আছো? ‘
–‘ কথা ঘুরানোর জন্য বলছিস বুঝি? ‘
–‘ তুমি না আমার বড় আপু৷ ‘
আপু জোরে হেসে উঠলেন৷ আমি লজ্জা পেলাম আবারো৷ সব গুলা এক ধাঁ’চের৷ লাজ লজ্জা কিছু নেই৷ হঠাৎ আপু সিরিয়াস ভাবে বলে উঠলো,
–‘ শোন নীতু, ‘
–‘ হু৷ ‘
–‘ সব কিছুর পাশাপাশি কাব্যকে সময় দে৷ ওকে বুঝতে চেষ্টা করবি৷ আর ছোট একটা অতিথি অতি জলদি আমাদের মাঝে দরকার৷ ‘
আমি তাকালাম আপুর দিকে৷ সত্যি তো, উনাকে পুরোপুরি বুঝার চেষ্টা এখনো আমি করি নি৷ আমার আবেগ গুলো নিয়েই তাকে বাধতে চাইছি৷ সে কি ফীল করে? কি চায়? সেটা তো আমি জানি না৷ চেনাজানার সম্পর্ক হয় নি আমাদের মাঝে৷ সে আমাকে যতটা বুঝে আমি কি তাকে বুঝি? না একদম না৷ সব সময় দূরে থাকার আর কাছে পাওয়ার মাঝের মনের মিল টা তো দরকার৷ সেটা তার মাঝে থাকলেও আমার মাঝে যে নেই৷
________________________
ছোট কিছু করার মাঝেও যে এতোটা আনন্দ থাকে তা বললে কম হয়ে যাবে৷ দুপুরের লাঞ্চ আমি করি নি উনাকে ফোন দিয়েও পেলাম না৷ তার প্রিয়, গ”রুর কা’লা ভু’ণা আর বিরিয়ানি৷ ফুঁপিকে ফোনে রেখে রেঁধে চলেছি৷ নিজের হাতের বানানো কিছু নিয়ে গিয়ে আজ চমকে দিবো৷ ভেবেই মনের ভেতরে খুশির প্রজাপতি ডানা মেলছে৷

–‘ দ’মে ফেল এখন৷ ‘
আমি ভ্রু কুচকে তাকালাম৷ এইটা আবার কি৷ ফুঁপি আমার মুখভঙ্গি বুঝতে পেরে বুঝিয়ে দিলেন৷ সাধারণ একটা বিষয় পারি না৷ ভেবেই কষ্টে ম’রে যেতে ইচ্ছে হলো৷ পেয়াজ কাটতে গিয়ে আবার বিপ’ত্তিতে পড়লাম৷ কেঁদে ভাসানোর জোগাড়৷ একটু আগে কেটেছি আবার কাটছি৷ এই পেয়াজ নামক জিনিস টা না দিলে হয় না? আল্লাহ জানেন,কে এই পেয়াজ দেওয়ার নিয়ম আ”বি”ষ্কার করেছিলো৷ বিরিয়ানি নামাতেই ফুঁপিকে আবার ফোন দিলাম৷ রীতিমতো ফুঁপি আর জিনিয়া হাসতে হাসতে শেষ৷ প্রায় চার ঘন্টা ধরে রান্না ঘরেই রান্নার কাজে ব্যস্ত৷ কিভাবে কি করবো ফুঁপি বলতেই আমি ফোন কেটে দেই৷ এরা আবার হাসিতে লু”টো’পু’টি খাবে৷
ডি’ম বে’গুনের ভাজি৷ বিরিয়ানির সাথে সে খায়৷ ডি’ম প্রথমে ভেঙে ল’বণ আর ম’রিচের গুড়ো দিয়ে ফেটিয়ে কেটে রাখা বেগুন তার মাঝে গুলিয়ে গরম তেলে ভেজে নিলাম৷ এই একটা জিনিস ভালো মতো পারি৷ ভেবেই যু”দ্ধ”ক্ষে”ত্র জয়ের হাসি হাসলাম৷ এইবার অপেক্ষা তার আসার৷
আমি ফ্রেশ হয়ে বসে আছি৷ ফোন হাতে নিয়ে৷ এইবার টে”নশন হচ্ছে৷ বারবার ফোন দেওয়ার পর কেন ফোন রিসিভ করছেন না৷ খাবার টেবিলের সাজিয়ে রাখা খাবারে কেমন শূন্যতা৷ আমি আ”লু’থা’লু পায়ে উঠে দাঁড়ালাম৷ হঠাৎ করেই ভীষণ জ্ব”র উঠলো মনে হচ্ছে৷ কিচেনে গিয়ে লাঞ্চবক্স এনে সব গোছালাম৷ রুমে গিয়ে অফিসের ঠিকানা খুজে চলেছি৷ সব কেমন লাগছে৷ টে”নশন করার মতো সময় নেই৷ তাকে অফিসেই পাবো৷
বার্লিনের জায়গা অচেনা ,বড্ড অচেনা আমার কাছে৷ জানি না কিভাবে যাবো কিন্তু যাবো এইটা নিশ্চিত৷ হাতে লাঞ্চবক্সের সাথে ঠিকানা দেখে চলেছি৷ উনি বলেছিলেন,বেশি দূরে না৷হাইওয়ের সামনে কতগুলো গাড়ি দেখতে পেলাম৷ ভাগ্যবশত ক্রু”জকে দেখলাম৷ গাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে৷ আমি উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ফোন রেখে কিছু একটা বললেন৷ আজও তার ভাষা বুঝতে পারলাম না৷ তবে তাকে চিনি এইটাই বড় কারণ লাগছে আমার৷ কার্ড তার দিকে বাড়িয়ে দিতেই উনি ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে দেখলেন৷ গাড়ির দরজা খুলে দিতেই আমি স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম৷ ফোন না ধরার অপ”রা”ধে আজ তাকে শা”স্তি পেতেই হবে৷ বারবার ফোন না ধরে আমাকে টেনশনে ফেলে দেন৷ মাথার র”গ ছি’ড়ে যাচ্ছে৷ জ্ব’র হঠাৎ করে বাড়ছে কেন৷ ফোন হাতে নিয়ে আবার ফোন দিলাম৷ অবশেষে টানা চল্লিশ বার ফোন দেওয়ার পর সে রিসিভ করলো৷ ক্লান্ত গলায় আমি বললাম,

–‘ আপনাকে খু”ন করবো আমি৷ অনেক কষ্ট দেন আপনি আমাকে৷ মে”রে ফেলবো৷ ‘

উনি উ”ত্তেজিত গলায় বললেন,
–‘ কি হয়েছে৷ তোর গলা এমন শোনাচ্ছে কেন? ‘

–‘ অফিসের বাইরে দাঁড়ান৷ আমার হেটে যাওয়ার শক্তি যে নেই৷’

অনেক কষ্টে চোখ খুলে রেখেছি৷ ফোনের লাইন কাটতে পারছি না৷ ক্রুজও উ”ত্তেজিত গলায় কিছু একটা বলছে৷ গাড়ি থামিয়ে আমার হাত থেকে ফোন নিয়ে উনার সাথে কিছু একটা বললেন৷ তারপর.. তারপর……

–‘ আমি আর কখনো তোকে ফেলে যাবো না৷ ‘

কাঁপা কন্ঠের আওয়াজে ভারী হচ্ছে চারপাশ৷ হাতে ই”ঞ্জে”কশন দেওয়ার ব্যা’থায় চোখ-মুখ কুঁচকে উনার হাত শক্ত করে ধরলাম৷ মাথা ঝি’মঝি’ম করছে৷ আমি সব ভুলে ঠোঁট ভিজিয়ে আলতো করে বললাম,
–‘ জানেন? আপ আপনার জন্য রান্না করেছি৷ ‘

উনি আমায় বসে থেকেই জড়িয়ে ধরলেন৷ আমি চোখ মেলে তাকিয়ে নিজেকে রুমে আ”বি”ষ্কার করলাম৷ তার শরীরের গন্ধে প্রা’ণ ফিরে পাচ্ছি৷ আমি তার শার্ট খাঁ’মচে ধরলাম৷ উনি আমাকে ছেড়ে ভা’রা”ক্রা”ন্ত গলায় বললেন,
–‘ জ্ব”র শরীরে কেন বেরিয়েছিস? ‘

–‘ আপনি কেন ফোন ধরেন নি?’

–‘ আরে বাবা,আমি ব্যাস্ত ছিলাম৷ আজ প্রেজেন্টেশন ছিলো মিটিংয়ে ফোন সাইলেন্ট ছিলো৷ তারপর ক্লাসের এসাইনমেন্টের প্রেজেন্টেশন৷ ‘
আমি উঠে বসলাম৷ উনার কলার ধরে আমার কাছে টেনে নিয়ে বললাম,
–‘ এই, আপনি আমাকে এ”ভো’ইড করছেন? পুরোনো হয়ে গিয়েছি তাই তো৷ ‘

উনি নিজে থেকে আরো কাছে এগিয়ে আসলেন৷ আমি নিজের কঁপাল তার কঁপালে ঠেকিয়ে দিলাম৷ আমার শরীরের উ’ষ্ণতায় সে বোধহয় কেঁপে উঠলো৷ স্নিগ্ধ গলায় বললো,

–‘ ভালোবাসা বুঝি পুরোনো হয়? ভালোবাসা বয়সের সাথে বৃদ্ধি পায়৷ সেই সাথে অনুভূতি গুলো আরো জোড়ালো হয়৷ যতটা জোড়ালো হলে,দূরে থেকেও অনুভব করা যায় ঠিক ততটা৷’

–‘ আমি কেন করি না অনুভব? তবে কি আমার ভালোবাসা জোড়ালো নয়..! ‘

উনি আমার ঠোঁটে আলতো করে ঠোঁট ছোয়ালেন৷ আমি ছাড়লাম না৷ নিজে থেকেই আজ রেসপন্স করলাম৷ কিছুক্ষণ,কিছু মূহুর্ত৷

–‘ তোর ভালোবাসা আমার ভালোবাসার থেকে গভীর৷ এর জন্যই তো শূন্যতা অনুভব করিস আমার না থাকার৷ আমার হিং”সে হয় নীতু৷ তুই কেন আমার থেকে বেশি ভালোবাসিস আমায়? ‘

উনার কথায় থমকে গেলাম৷ বলেন কি উনি৷ আমি শুয়ে পড়লাম৷ উনিও আমার পাশে শুয়ে পড়লেন৷ আমি তার বুকে মুখ গুজে দিলাম৷ বললাম,

–‘ আমি কিছু জানি না৷ আমি আপনাকে একমূহুর্ত না দেখে থাকতে পারি না৷ দরকার হলে চব্বিশ ঘন্টা আপনার সাথেই থাকবো, একদম বিরক্ত করবো না৷ তবুও আপনাকে চাই৷ সব সময় আশেপাশে চাই৷ ‘

–‘ হুট করে মা”রা গেলে কিভাবে থাকবি? ‘

তার কথায় হু হু করে উঠলো বুকের মাঝে৷ সেটা আমি ভাবতেও চাই না৷ কান্না করে উঠলাম ফুঁপিয়ে৷ ভালোবাসায় এতোটা আকৃষ্ট সত্যি কি মানায় না? যদি না মানায় তাহলে কেন ভালোবাসা নামক শব্দটা আছে? জানি না তবে আমি এতোটাই আকৃ”ষ্টতা নিয়ে থাকতে চাই,ভালোবাসতে চাই৷

পরিপূর্ণ একটা সকাল৷ আবেশের আদরে ঢাকা মোহনা৷ সে শাওয়ার নিচ্ছে আমি বাইরে দাঁড়িয়ে আছি৷ মোট কথা কিছুতেই উনার থেকে দূরে যাওয়া যাবে না৷ দরজা খুলে বের হয়ে আসতেই আমি হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ফেলি৷ ছিঃ! শুধু তোয়ালে পড়ে কেও আসে৷ ফর্সা শরীরে মুক্তোর মতো পানি গুলো লেগে আছে৷ আমার চোখ বড্ড বে”হায়া..! না চাইতেও আঙুলের ফাঁক দিয়ে চুপিচুপি দেখে চলেছে৷

–‘ দেখা শেষ?’
–‘ না তো৷ ‘
কথার পৃষ্ঠে জবাব দিতে গিয়ে সত্যিটা বলে দিয়েছি৷ আমি মুখ ঢেকেই ঘুরে গেলাম৷ উনি আমার পিঠের উপর আলতো ছোয়া দিতেই কেঁপে উঠলাম৷ দৌড়ে বাইরে চলে আসলাম৷ উনি জোরে জোরে বললেন,
–‘ চব্বিশ ঘন্টার একঘন্টাও হয় নি৷ এখনি দৌড়ে পালাচ্ছিস৷ সারাদিনের কি হবে ভেবে দেখেছিস? ‘

উনি কি আমাকে থ্রে”ট করছেন? আমি অন্য রুমে এসে পড়লাম৷ এখানে থেকে চিৎকার করে বললাম,

–‘ চব্বিশ ঘন্টার প্রথম প্রহর এখনো যায় নি মিস্টার. আর আপনাকে ভ’য় পায় কে শুনি? ‘

–‘ তাই তো৷ কে পায়৷ দেখা যাবে মিসেস. প্রথম প্রহরের ডো”জ নিতে পারো নি…! ‘

তুমি৷ শব্দটা ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে৷ আমি চোখ বন্ধ করে উপভোগ করলাম৷ মিষ্টি শব্দ,মি”ষ্টতার মতো লাগে….!

চলবে…
(ভুল-ক্রটি ক্ষমার চোখে দেখবেন৷)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here