রৌদ্দুরে প্রেমের বৃষ্টি পর্ব ২৭+২৮

0
634

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ২৭,,২৮
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)

বন্ধ ঘরের গু’মোট ভাবটা আমায় অনুভূতি শূন্য করে দিচ্ছে৷ একটা নাম আমার জীবনটা থেকে মুছে ফেলতে পারলে বোধহয় শান্তি লাগতো৷ এতোটা তীব্র ব্যা’থা কেন হচ্ছে বুঝতে পারছি না৷ বার্লিনে রাই কেন এসেছে সেটার থেকে বড় কথা সে কাব্য ভাইয়ার সাথে কেন৷ যদিও আমি রাই কে আগে কখনো দেখি নি তবুও নামটা তো আর অজানা নয়৷ আমার বুকের ভেতরের কষ্ট গুলো দলা পাকিয়ে গলার মাঝে আটকে আসছে৷ তার কেন আসতে হবে? আর কেনই বা আমাকে বেঁধে রাখতে হবে৷ সব কিছু তে কি আমাকে ব্যবহার করেছেন উনি? আমার কি দো’ষ? আমি তো আর নিজে থেকে বলি নি, আমায় বিয়ে করুন৷ আমিরের সাথে বিয়ে হলেই বা কি হতো৷ নিজে থেকে সব কিছু ঠিক করে আবার পুরোনো অতীত টেনে নিয়ে আসছেন৷ আমি রুমের মাঝে বসে আছি৷ রাতের আঁধার শেষ হতেই রাই নামটা আরো তীব্র ভাবে আমার ক’ষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷ আমাদের পাশের রুম তাকে দেখিয়ে দিতে গিয়েছেন উনি৷ আমি প্রশ্ন করি নি৷ করতে ইচ্ছা হচ্ছে না৷ সে রাই..! তার অতীত..! তবে আমি কি ছিলাম? কিছু না। আমাকে এখানে নিয়ে আসার কারণ কি তার? সে একা আসলেই তো পারতো৷ এতো পা”গলামি,উ”ন্মাদনা এইগুলা কি ছিলো তবে? দরজায় টোকা পড়তেই আমি চুপ মেরে থাকি৷ হুট করে মনে হলো রাই’য়ের সাথে সে আছে..! মনে হতেই দরজা খুলে দিতেই তার হাসি মুখ নজরে পড়ে৷ আজ সেই হাসিতে আমার মাঝে মুগ্ধতা বিরাজ করছে না৷ শুধু মনে হচ্ছে হাসির পেছনে রাই আছে৷ আমার থমথমে মুখ দেখে উনি আমার দিকে ভ্রু কুচকে বললেন,

–‘ মেঘ জমেছে কেন? ‘

উনার কথা শুনে আমি জ্ব’লে উঠলাম৷ উত্তর না দিয়ে উনাকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে গেলাম৷ উনি অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন..! আচ্ছা উনি কি জানেন না আমি রাইয়ের কথা জানি? নাকি ভুলে গেছেন৷ তাহলে এমন স্বাভাবিক ব্যবহার কেন করছেন..! কাঁন্না গুলো উঁ’পচে পড়েও ফিরে যাচ্ছে৷ নিস্তব্ধ জায়গায় কান্না করার মাঝেও শান্তি আছে৷ তবে কান্না করার জন্য নিদিষ্ট কারণ গুলো শক্ত’পো’ক্ত হলে গলার মাঝে আটকে থাকা কান্নারা বেরিয়ে আসে৷ আমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু কান্না আসছে না৷ কান্না না আসার ফলে রা’গ হচ্ছে৷ সেই রাগ টা অভিমানে জড়িয়ে যাচ্ছে সাথে হ’তাশায়৷ আমি নির্লি’প্ত ভাবে কিচেনে এগিয়ে গেলাম৷ উনার সামনে যেতে কেন যেন বাঁধছে আমার৷ আমি তো প্রশ্নের উত্তর তার কাছেই পাবো৷ তাহলে পালিয়ে বেড়াচ্ছি কেন? হয়তো বা তার মুখ থেকে কথাটা শুনতে পারবো না৷ ফ্রিজ খুলে ঠান্ডা পানি বের করলাম৷ ইচ্ছা হচ্ছে পানি গুলো নিজের মাথায় ঢেলে দেই৷ হয়তো এতে জট গুলো খুলবে৷ বোতল খুলে হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ভাবছি, ” রাই কেন এলো?” তার সাথে তো উনার সম্পর্ক বি’চ্ছিন্ন সেই অনেক আগেই হয়ে গিয়েছে৷ ফুঁপি কি জানে তার ছেলে প্রাক্তন কে নিয়ে এসেছে? হয়তো কেও কিছুই জানে না..! আবার হয়তো জানে৷ তার সাথে হয়তো রাইয়ের সম্পর্ক ছিলো৷ কিন্তু রাইয়ের তো বিয়ে হয়ে গিয়েছে আর সে ধোঁ”কা দিয়েছিলো৷ তাহলে? সব কথা তাহলে হয়ে ঘুরেফিরে যাচ্ছে৷ মাথায় ব্যা’থা হচ্ছে৷ বোতলে থেকে সম্পূর্ণ ঠান্ডা পানি খেতেই উনি ঝ’ড়ের গতিতে এসে হাত থেকে বোতল কেড়ে নিয়ে বললেন,

–‘ ঠান্ডা পানি কেন খাচ্ছিস? পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারছিস নি তার উপর ঠান্ডা পানি৷ পা”গল হয়ে গিয়েছিস?’

আমি আবারো উনাকে উ’পেক্ষা করলাম৷ পাশে থাকা নরমাল পানি নিয়ে বসে খেলাম৷ উনি দাঁড়িয়ে আছেন৷ আমি পানির গ্লাস রেখে আবার ফ্রিজ খুলে ডিম বের করলাম৷ উনি আবার আমার হাত থেকে ডিম নিয়ে বললেন,
–‘ খিদে পেয়েছে..? এর জন্য বুঝি আষাঢ়ে মেঘ জমেছে মহারাণীর মুখে? আমি ভাবলাম হয়তো মহা”ভা’রত অ’শুদ্ধ হয়ে গিয়েছে..! ‘

উনার কথার কোনো কিছু কানে নিলাম না৷ আমি উনাকে এভো”য়েড করছি সেকি বোজার চেষ্টা করছে না? আর এতো বড় একটা কাহিনি করে স্বাভাবিক আছেন কি করে সেটা ভেবেই আমার ভ্রু কুচকে এলো৷ অন্যম”নস্ক থাকার জন্য ডিম ভেঙে দেওয়ার সময় তেলে হাত ডু”বিয়ে দিয়েছে৷ জোরে চি”ৎকার করে হাত সরাতেই উনি দ্রুত আমার কাছে আসেন হাত নিয়ে বোতল থেকে ঠান্ডা পানি ঢালতে ঢালতে আ’তং”ক নিয়ে বললেন,

–‘ এতো কেয়ারলেস কেন তুই? ইশ..! হাত তো পুড়লে তোর পু”ড়েছে৷ কারো কিছু হয়েছে? ‘

–‘ হাত পু”ড়েছে কিন্তু হৃদয়? সেইটা পুড়ছে আপনি কি দেখছেন?’

উনি পানি ঢালা বন্ধ করে দিয়ে আমার দিকে অবাক চোখে তাকালেন৷ তার দৃষ্টিতে স্পষ্ট সে আমার বলা কথার মানে কিছু বুঝতে পারে নি৷ বোঝা না বোঝা তার ব্যাপার..! সে ক’ষ্ট দিয়েছে আমায়৷ এই অজানা অচেনা শহর বার্লিনে এনে তীব্র ক’ষ্ট দিয়েছে রাই নামক মেয়েটাকে এনে৷ অতীত নামক শব্দটা অতীত বলতেই মানায়৷ বর্তমানে সেই অতীত নামক শব্দটা বড্ডা বে”মানান৷
____________________
কখনো মনের সাথে যু”দ্ধ করেছেন? টিকে থাকার যু”দ্ধ৷ সেই যু”দ্ধ অনেক কঠিন..! পাহা”ড়ে উঠার উঁচু চূ”ড়ার থেকে কঠিন৷ সেখানে কোনো সমতল ভূমি নেই। আর মনের যু”দ্ধে কোনো ভূমি নেই৷ আছে শুধু একরাশ হাহা”কার৷ না বলা, না জানা হাজার খানিক কষ্টের সমুদ্র৷ আমি দ”গ্ধ হাত নিয়ে ডি’ভানে বসে আছি৷ রাতের আঁধার কুচকুচে কালো.. সেই সাথে আমার মনের উজ্জ্বল আলো গুলো এই আঁধারে মিশিয়ে যাচ্ছে৷ দৃষ্টি আকাশের দিকে..! আমার অন্যদিকে মন নেই৷ শুধু রাই নামটা মনে হচ্ছে৷ সে কি আমার থেকে সুন্দরি? এতো বছর পরও তাকে নিয়ে কাব্য ভাইয়ের আগমণ৷ আমার হাতে টান অনুভব হতেই ভয় পেয়ে পাশে তাকিয়ে তার র”ক্ত’লাল চোখদুটো দেখতে পাই৷ আমি হাত টেনে সরিয়ে নিতে গেলেই উনি ধ’মকে উঠে বললেন,

–‘ কি সম’স্যা? কি সম’স্যা তোর? এমন করছিস কেন..! হাত পু’ড়িয়ে ভাব দেখাচ্ছিস? কাকে দেখাচ্ছিস? তোর ভাবের ধা’র কে ধারণা করে..! ‘

–‘ আমার হাত পু’ড়ে যাক,, সব পু’ড়ে যাক তাতে কাওকে ধা’র
ধারণ করতে আমি বলি নি৷ ‘ আমি নির্লি”প্ত গলায় বললাম৷

উনি আবার চিল্লিয়ে বললেন,

–‘ টেল মি হোয়ের ইউর প্রব্লেম ইজ..ড্যা”ম ইট…! ‘

আমি কেঁপে উঠলাম এইবার৷ রেগে গিয়েছেন উনি৷ ভয়টা উনার সামনে আনলাম না৷ আমিও সমান তালে চি’ৎকার করে বললাম,
–‘ আমার কোনো প্র’ব্লেম নেই..নেই কোনো প্র’ব্লেম৷ শুনেছেন কোনো প্র’ব্লেম নেই৷ আপনি হচ্ছেন আমার প্র’ব্লেম৷ ‘

উনি গম্ভীর গলায় বললেন,
–‘ বেশি বারাবাড়ি করছিস তুই..! ভুলে যাস না আমি তোর স্বামী..! ‘

উনার এতোটুকু কথা শুনে রা’গ হুর হুর করে বেড়ে গেলো৷ পু’ড়ে যাওয়া হাতটা নিজেই শক্ত করে ধরলাম৷ ধরার ফলে জ্ব’লে উঠছে৷ ব্যা’থা স’হ্য করে নিয়ে বললাম,

–‘ এই পু’ড়ে যাওয়া ব্যা’থা আমি স’হ্য করতে পারছি কিন্তু আপনি নামক মানুষটার কাজ গুলো আমি স’হ্য করতে পারছি না৷ কি চান আপনি? দোটানায় কেন রাখেন৷ আমাকে কি জন্য এনেছেন এখানে? আপনার আর তার প্রেম কাহিনি দেখাতে?’

উনি তাড়াতাড়ি আমার হাত উনার হাতে আবদ্ধ করে নিলেন৷ ফুঁ দিচ্ছেন৷ উঠে গেলেন যাওয়ার আগে শুধু বললেন,

–‘ হাত যদি আবার ওইভাবে ধরিস আমি তোকে কিছু বলবো না..! তোর সব কিছু আমার অংশের সাথে মিলে গেছে৷ ব্যা’থা তুই নিজেকে দিচ্ছিস না আমাকে দিচ্ছিস..! ‘

আমি উনার দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে আছি৷ আমার জন্য উনার কেন ক’ষ্ট হচ্ছে? তার তো রাই আছে৷ তবে মেয়েটা কোথায়? ওর কি ফ্যামিলি নেই? কাব্যকে কোথায় খুজে পেলো৷ আমি হাতের দিকে তাকিয়ে আছি ছিলে গেছে অনেকটা জায়গা৷ উনি হাতে করে সব কিছু নিয়ে আসলেন৷ আমি কিছুই বললাম না৷ হাতে মে’ডিসিন লাগিয়ে দিচ্ছেন৷ আমার আজ ব্যা’থার অনুভব হচ্ছে না৷ উনি এতোটা যত্ন করে মে’ডিসিন দিচ্ছেন মনে হচ্ছে,কোনো বাচ্চাকে ধরছেন৷ হুট করে সব ভুলে তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম৷ আমাকে কোনো কথার সুযোগ না দিয়ে উনি বক্স হাতে উঠে আমাকেও কোলে উঠিয়ে নিলেন৷ এখন উনার মাঝে গম্ভীরতার ছাঁ’প৷ আমি নিজের মনের কথায় অবিচল থাকলেও তার মুখ দেখে টলতে বাধ্য হলাম৷ উনি আমাকে বেডে শুয়িয়ে দিয়ে বাইরে বের হয়ে গেলেন৷ কিছুক্ষণ পর হাতে খাবারের প্লেট এনে মুখের সামনে বসলেন৷ খাবার মুখের সামনে ধরে বললেন,

–‘ হা কর..! ‘

আমি নিজের গম্ভীরতা প্রকাশ করে বললাম,

–‘ খিদে নেই..! আমি খাবো না৷ ‘

উনি খাবার মুখের সামনে নিয়েই বসে আছেন৷ হাতের খাবারটুকু নিজের মুখে দিলেন৷ আমি একটু অবাক হলাম৷ কোথায় আমাকে খাওয়াবেন না সেই খাচ্ছে৷ ওহহ..!এখন আর আমাকে জো’র করবেন কেন৷ তার এই কাজে অ’ভিমান আর অ”ভিযোগ আরো একধাপ বেরে গেলো৷ এখন চোখের কোণ বেয়ে পানি নেমে পড়লো৷ উনি চিবুতে চিবুতে আমার মুখের সামনে আসতেই আমি ভ্রুকুটি করে ফেলি৷ কি করছেন উনি? একদম আমার মুখের সামনে এসে আমার গালে আলতো চাঁপ দিয়ে আরেকটু এগিয়ে আসতেই তার করা কাজ বুঝতে পেরে আমি তাড়াহুড়ো করে বললাম,

–‘ আমি খাবো..! প্লিজ ছাড়ুন৷ ‘

উনি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে৷ আমার বলা কথা শুনে উঠে গিয়ে নিজেও বাঁকা হেসে বললেন,
–‘ If the ghee does not rise straight on the finger, the finger has to be be’nt..!’

আমি হা করতেই উনি যত্ন নিয়ে খাওয়াতে শুরু করলেন৷ আমিও চুপচাপ খেয়ে নিতেই উনি আমাকে শুতে বলেন৷ আমি শুয়ে পড়তেই উনি আমার পাশে চেয়ার টেনে বসে পড়েন৷ আমি কিছু না বলে পাশ ফিরে শুতে গেলেই উনি হাত দিয়ে আমাকে টেনে তার দিকে ঘুরিয়ে বললেন,
–‘ আমার কাজের বারোটা বাজিয়ে এখন পাশ ফিরে শোয়া হচ্ছে? আমার দিকে ঘুরে শুয়ে থাকবি,, একফোঁটা ঘুরলে কাঁ’চা ঘুম থেকে বারবার উঠাবো৷ আমি যতক্ষণ কাজ করবো আমার দিকে ফিরেই ঘুমাতে হবে তোকে৷ ‘

আমি উনার কথা শুনে আবার ঘুরতে গেলে উনি একহাতে আমাকে ধরে ফাইল ঘাটছেন৷ আমি বির’ক্ত হয়ে উনার দিকে ফিরেই শুয়ে রইলাম৷ অস’হ্য! আমি ঘুমাবো কি করে এইভাবে থাকলে? তবে বারেবারে ঘুরেফিরে মনে হচ্ছে আচ্ছা, ওই মেয়েটা কি তার অতীত? না আমি ভুল করছি..! মেয়েটার চেহারায় ফরেনার দের ছাঁ’প,,যদি তাই হয়ে থাকে রাই কেন তার নাম?
চলবে….
(নেক্সট না পড়ে বিবেচনা করবেন না কেও,,আর ভুল গুলো ক্ষ’মা সুন্দর চোখে দেখবেন..!)

রৌদ্দুরে_প্রেমের_বৃষ্টি
#পার্টঃ২৮
রুবাইদা_হৃদি(sheikh ridy)

কাঁচের দেয়াল ভেঁ’দ করে এক ফালি রোদ এসে কার্পেটে মোড়া মেঝেতে লুকোচুরি খেলছে৷ কোথায় যেন ক্ষীণ স্বরে নাম না জানা একটা পাখি কিচকিচ করে ডেকে চলেছে৷ রোদের হালকা ঝলমলে আলো আমার চোখের উপর পড়তেই চোখমুখ কুঁচকে ফেলি৷ কালকের কথা একদম ভুলে গেছি সাথে রাই নামক মেয়েটার কথা৷ আমি হাত দিয়ে চোখের উপর ঘ’ষতেই ব্যা’থা অনুভব হয়৷ সাথে সাথেই ভ্রু কুচকে উঠে পড়তেই রাতের সব কথা মনে পড়ে৷ আমার পাশেই চেয়ার রাখা এখনো৷ কিন্তু সে নেই৷ সারা রুমে চোখ বুলিয়েও তাকে পেলাম না৷ দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম দরজা খোলা৷ সে যদি রাইয়ের কাছে গিয়ে থাকে?এতোটুকু কথা মনে হতেই আমি দ্রুত পায়ে নেমে দাঁড়িয়ে বাইরে যাওয়ার জন্য পাঁ বাড়াই৷ ড্রাইনিং রুমেও উনাকে না পেয়ে আমার বুকের মাঝে ধ’ক করে উঠে৷ আমি রাইয়ের বেডরুমে গিয়েও দরজা খোলা দেখলাম৷ সারা রুম নিস্ত’ব্ধ..! বারান্দায় কেও নেই৷ আমাকে না বলে কোথাগ গেলেন উনি৷ আমি এতোটা পর হয়ে গেছি? আজ প্রাক্তন কে পেয়ে আমাকে না বলেই বেরিয়ে যাচ্ছেন৷ কিন্তু গিয়েছেন কোথায়৷ নিজেকে পা”গল পা”গল লাগছে৷ কি হচ্ছে আমার সাথে এইসব৷ রুমে গিয়ে মোবাইল বের করে ফুঁপিকে কল দিলাম৷ তার মোবাইল অফ..! জিনিয়াকে ফোন দিয়েও পেলাম না৷ হাঁত-পাঁ কাঁ’পছে৷ ধ’প করে মেঝেতে বসে পড়লাম৷ তাহলে কি আমাকে রেখেই সে চলে গেছে রাইয়ের সাথে? যদি রাইয়ের সাথে চলেই যাবেন আমাকে কেন নিয়ে এসেছে এখানে? আজ কান্না করছি..!চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে৷ চিৎকার করে কান্না করছি..! শব্দ গুলো ঘুরেফিরে আমার কানেই এসে বারি খাচ্ছে৷ কোথায় গিয়েছেন উনি? আমি কান্নারত অবস্থায় আবার উঠে দাঁড়ালাম৷ যদি বাইরে গিয়ে থাকেন এই আশায়৷ দৌড়ে বাসার মেইন গেইট খুলতে গিয়ে বুঝতে পারি গেইট বাইরে থেকে লাগানো৷ বুকের ভেতর চি’নচিনে ব্যা’থার সাথে মনের কোণে ভয় জমা হয়৷ আমি দরজা ধরেই বসে পড়ি৷ আমি বাংলাদেশে যাবো৷ দরজা ধরেই জোরে জোরে কাঁদছি৷ এমনটা করতে পারলেন উনি? শেষে আমাকে তা’লা’ব’দ্ধ করেই চলে গিয়েছেন রাইয়ের সাথে..!
__________________________
কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত হয়ে হাঁটু মুড়ে বসে আছি গেইটের সামনেই৷ মাথার ভেতর ফাঁকা লাগছে৷ উনার সব কিঁছু আমার কাঁছে অ”ভিনয় লাগছে৷ এইভাবে আমার জীবনকে বি”ষিয়ে কেন তুললেন উনি৷ কোথায় পাবো উনাকে৷ আমার কাছে মৃ”ত্যু কষ্টের মতো লাগছে সব৷ আমি পা”গল হয়ে যাচ্ছি৷ আমাকে কাব্য ভাইয়া ঠ”কালেন৷ কিন্তু কেন? আমি কি করেছি..!
দরজার সাইডের দেয়ালে হেলান দিয়ে ডু’করে কেঁদে উঠছি৷ দরজা খোলার আওয়াজে মুখ তুলেও তাঁকালাম না৷ সব কিছু আমার কাছে সপ্নের মতো লাগছে৷ দরজা খোলার শব্দটা হলেও আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না৷ শুধু মনে হচ্ছে,আমি ঠ”কে গিয়েছি..! আর সুন্দর নিপুণ ভাবে আমাকে ঠ”কিয়েছেন সে..!
কাব্য ভাইয়া ঘরে ঢুকেই অ”স্থির ভাবে আমার সামনে বসে পড়লেন৷ আমাকে জড়িয়ে ধরলেন৷ আমি অনুভূতি শূন্য হয়ে বসে আছি৷ আমি শ”ক টা নিতে পারছি না৷ আমার কাছে উনাকে কল্পনা মনে হচ্ছে৷ ভয় পাওয়া কন্ঠে বললেন,
–‘ নীতু..এই নীতু কি হয়েছে.. ভয় পেয়েছিস৷ এই দেখ আমি এসেছি৷ ‘
আমি উনার দিকে মুখ তুলে তাঁকালাম৷ পাশেই সেই মেয়েটাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উনার কাছে থেকে পিছিয়ে গিয়ে বললাম,
–‘ ছুঁবেন না আমায়..দূরে সরুন৷ আপনি ধোঁ”কা দিয়েছেন আমায়৷ ‘
উনি অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন৷ আমার কথার মানে হয়তো বুঝতে পারেন নি৷ উনি আবার আমার কাছে এসে শান্ত ভাবেই বললেন,
–‘ ভ’য় পেয়েছে পিচ্চিটা? ‘
উনার এতোটুকু কথা শুনে হাত দিয়ে তার বুকের মাঝে ধা’ক্কা দিয়ে কান্না করতে করতে বললাম,
–‘ আপনি মি”থ্যুক.. কেন নিয়ে এসেছেন আমাকে বার্লিনে? কেন এনেছেন? কষ্ট দেওয়ার জন্য? রাই আর আপনার ভালোবাসা দেখার জন্য৷ কেন বেঁধেছেন আমায় আপনার মাঝে? আমি তো আপনাকে চাই নি আগে৷ ‘
আমার কথা শুনে উনি রাইয়ের মুখের দিকে তাকালেন৷ তারপর আমার মুখের দিকে৷ গালের মাঝে হাত রেখে বললেন,
–‘ রাই’জু’ম,. উনার সাথে আমার সম্পর্ক মানে? ‘
আমি আরেকবার থমকালাম৷ রাই থেকে জুম আবার আসলো কোথা থেকে? আমি তাও থামলাম না৷ নিজের মনের কথার উপর ভিত্তি করে বললাম,
–‘ রাই৷ উনি রাই..! আপনার সেই রাই৷ যার সাথে আপনার সম্পর্ক ছিলো৷ আপনার প্রাক্তন সে..!’
উনি আমার দিকে কিছুক্ষণ বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলেন৷ রাই মানে রাইজুম বললেন,
–‘ কি বলছো? ও এইভাবে কাঁদছে কেন? সে তো তোমার ওয়াইফ তাই না? ‘
কাব্য ভাইয়া আমার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে উনার সামনে গিয়ে বললেন,
–‘ ও ভেবেছে আপনি আমার প্রাক্তন..! উ’ল্টা পা’ল্টা ভেবে বসে আছে৷ লাস্ট চব্বিশ ঘন্টা সে এই বিষয় নিয়ে অহে’তুক আমাকে স’ন্দেহ করে গেছে৷
আমি উনাদের কথা শুনে কি বলবো বুঝতে পারলাম না৷ রাইজুম আপু আমার সামনে এসে হাসি মুখে বললেন,
–‘ কেন ভুল বুঝেছো? আমি কাব্যর অফিসের হেড অফিসার৷ আমি এখানে কাজের জন্য আর তাকে কাজ বুঝিয়ে দিতে এসেছিলাম৷
আমি উনার কথা শুনে কাব্য ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছি৷ উনি দাঁতে দাঁত চে’পে বললেন,
–‘ অতিরিক্ত বেশি বুঝা মেয়েদের স্বভাব…আমাকে কিছু না জিজ্ঞেস করেই টানা একটা দিন স”ন্দেহ করেছিস৷ তোর কি আমাকে বিবে”কহীন লাগে? টেল মি ড্যা’ম ইট…! ‘
আমি উনার কথা শুনে আবারও কেঁদে দিলাম৷ রাইজুম আপু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে কাব্য ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
–‘ রিলাক্স ডিয়ার… কাম ডাউন….. ও ছোট বুঝতে পারে নি, আর তোমাকে বেশিই ভালোবেসে ফেলেছে তাই হয়তো হা”ইপার হয়ে গিয়েছে৷ ‘
উনি তার কথা না শুনেই শুধু বললেন,
–‘ আপনি রুমে যান…! ‘
উনি আবারো মুচকি হেসে চলে গেলেন৷ আমি উঠে দাঁড়ালাম তার সামনে৷ জিজ্ঞাসু চোখে বললাম,
–‘ সকালে আমাকে না বলে কেন বেরিয়ে গেছেন? একা একটা বাসায় রেখে? ‘
উনি পকেটে হাত গুজে নির্লি”প্ত ভাবে দাঁড়িয়ে বললেন,
–‘ ড্রাইনিং টেবিলে খাবার রাখা ছিলো দেখেছিস..?’
আমি তো দেখেই নি৷ উত্তর দিবো কি৷ আমাকে চুপ থাকতে দেখে আবার ধ’মকে উঠে বললেন,
–‘ দেখেছিস? ‘
–‘ ন..না..! ‘ আমি চমকে উঠে বললাম৷ উনি আবার বললো,
–‘ কাবার্ডের উপর তোর জন্য কাপড় রাখা সেটা দেখেছিস? ‘
আমি আবারো কাঁপা কন্ঠে না বলতেই উনি হাত ধরে টেনে ড্রাইনিং এ নিয়ে গেলেন৷ খাবারের প্লেটের সাইডে একটা চিরকুট রাখা৷ উনি আমার হাত ধরেই সেই চিরকুট উঠিয়ে আমার হাতে দেয়৷ আমি খুলে দেখি লেখা আছে,
–‘ ফ্রেশ হয়ে এসে চুপচাপ খাবার খেয়ে নে,,আর না বলে যাওয়ার জন্য এসে ভালোবাসা দিবো৷ রাইজুম ম্যাম সকালেই বললেন, অফিসে আজ ইম্পর্ট্যান্ট মিটিং আছে,,সে এই মিটিং এর জন্যই ইন্ডিয়া থেকে বার্লিন ছুটে এসেছে, তাও আমাকে সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য৷ বাকিটা আমি এসে বলবো মহারাণী..! আর কাল রাতের বিহে”ভিয়ার এর জন্য এসে এক থা”প্পড় মারবো৷ হাত পু”ড়িয়েছিস তার উপর আমার সাথে অকারণে রা’গ করে কেন আছিস? শক্ত’পো’ক্ত কারণ না হলে উঠিয়ে আ’ছা’ড় মা’রবো৷ ‘
আমি চিরকুট পড়ে উনার দিকে তাকাতেই আবার আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় কাবার্ডের কাছে৷ কাপড়ের নিচে আরেকটা চিরকুট ওইটা আমার হাতে দিলেন৷ আমি খুলেছি না দেখে নিজেই খুলে দিলেন৷ আমি পঁড়লাম,
–‘ ঘুম কুমারীর ঘুম ভেঙেছে কি? এতো ঘুম কোথায় পাস? আমার ঘুম কেঁড়ে নিয়ে আরামে ঘুমিয়েছিস সারা রাত৷ ভয় পাবি না একদম..!আমি একটু পর এসে যেন দেখি এই ড্রেস টা পড়ে আছিস৷ জলদি ফ্রেশ হয়ে নে…!’
উনি আবার চিরকুট আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ছুড়ে মা”রলেন৷ রাগী গলায় বললেন,
–‘ এখন জিজ্ঞেস কর তোকে ডাকি নি কেন..! ‘
আমি সত্যিই জিজ্ঞেস করতে উনি রা’গে আরো জ্ব’লে উঠলেন৷ বললেন,
–‘ কতবার ডাকি নি তাই বল,,তোর হুশ থাকে ঘুমালে? এতো কেয়ারলেস কেন তুই? আর তোর এতো চি”প মে”ন্টালিটি তো ছিলো না৷ কোথাকার কোন রাই তাকে নিয়ে এখনো পরে আছিস৷ ‘
আমি আমতা আমতা করে বললাম,
–‘ আপনি সেদিন রাই বলেছিলেন..! ‘
উনি দুই আঙুল দিয়ে কঁপাল ঘ”ষছেন৷ মনে হচ্ছে রা’গে ফেঁ’টে যাবেন এইবার৷ রা’গে চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে৷ আমার দিকে এগিয়ে আসলেন৷ আমি সরলাম না..আরো এগিয়ে এসে বললেন,
–‘ গাঁ”ধি, আস্ত একটা গাঁ”ধি, এতোবড় নাম ডাকার চেয়ে রাই ডেকেছিলাম৷ আর রাই কি দুনিয়ার একটা? আর হলেও ওই ছ্যাঁ”চড়া কে কেন আনবো৷ আল্লাহ আমায় উঠিয়ে নেও..! ‘
আমি উনার কথা শুনে হাফ ছাড়লাম৷ ইশ..! একটাবার জিজ্ঞেস করলে এতো ঝা”মেলা হতোই না৷ আমি পিটপিট করে উনার মুখের দিকে তাকাতেই উনি রেগে ঘরে থেকে বেরিয়ে যায়৷ রা’গ ভাঙাবো কিভাবে এইবার?

বিকেলের মেঘে ঢাকা রোদের সাথে পানির খেলা চলছে৷ নীল রঙের পানিতে রোদের মিষ্টি ছটা পড়তেই পানি গুলো চিকচিক করে উঠছে৷ আমি মাথা নীচু করে বসে আছি তার সামনে বাগানের পুলের সাইডে৷ সে তী’ক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে৷ নিজের কাছে নিজেকে অ’প’রা”ধী লাগছে৷ তার সম্পর্কে কতকিছু ভেবেছি আমি৷ এতোটাই দূ”র্বল ভিত্তি আমার মনে তার সম্পর্কের জায়গা ভাবতেই শিউরে উঠছি৷ উনি কিছু না বলেই একের পর এক সি”গারেট ধরাচ্ছেন আর নিমিষেই শেষ করে ফেলছেন৷ রাইজুম আপু চলে গিয়েছে দুপুরেই৷ লজ্জায় আমার মাথা কা’টা যাচ্ছে৷ আমি সি”গারেটের ধোঁ”য়া স’হ্য করতে পারছি না একদম৷ থেকে থেকে কেঁ’শে উঠছি৷ উনি আমার কাঁ’শি দেখেও স্মো”কিং থামালেন না৷ আমি চো’রা চোখে উনার দিকে তাকিয়ে দেখি তার কাঁপা ঠোঁটে সি”গারেটের ধোঁ’য়া৷ আমি ক”ম্পিত কন্ঠে সাহস যুগিয়ে বললাম,
–‘ অ..আমা..র দ’ম আঁটকে আসছে কাব্য ভাইয়া..!’
উনি ছয় নাম্বার সি”গারেট এ’স্ট্রে তে পি”ষে আরেকটা ধরিয়ে নিয়ে বললেন,
–‘ আমার হৃ”দ’পি”ন্ডে র”ক্ত’ক্ষ’রণ হচ্ছে..! ‘
তার কথা শুনে কাঁন্না পাচ্ছে৷ নিজের অজান্তেই তাকে কত কষ্ট দিয়েছে৷ মি’থ্যুক বলেছি৷ ভাবতেই আরো কান্না পাচ্ছে৷ উনার লাল চোখ দেখে আরো ভয় লাগছে৷ আমার মা’নষিকতা এতোটা নিম্ন কেন? ভাবতেই আরেকদফা নিজেকে ফা’লতু নামক ট্যা’গ লাগাতে ইচ্ছা হচ্ছে৷ আমি কান্না করে দিয়ে বললাম,
–‘ আমার মাথায় রাই নামটা গেঁথে গিয়েছে৷ আমি শুধু নামটা শুনেই থমকে গিয়েছিলাম৷ আর কিছু ভাবি নি৷ ‘
আমার কাঁন্নার ফলেও তার মাঝে কোনো ভ্রু’ক্ষে’প হলো না৷ সে আমার থেকে কিছুটা দূরেই বসে আছে৷ কাওকে কষ্ট দিতে চান? ” তার সামনে নীরবতা বজায় রাখুন..!”এর চেয়ে বড় ক’ষ্টের ব্যাপার আর কিছুই মনে হচ্ছে না আমার৷ নীরবতা সবচেয়ে বড় হা’তিয়ার সামনে বসে থাকা মানুষটাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য৷ আমি উঠে গিয়ে উনার পাশে বসলেও উনার মাঝে কোনো পরিবর্তন হলো না৷ সে সামনে তাকিয়ে ধোঁ”য়া উড়াতে ব্যাস্ত৷ আমার ঊনিশ বছরের জীবনে বোঝার ক্ষ’মতা হওয়ার পর আমি উনাকে স্মো”কিং করতে দেখি নি৷ সে আবার তার ঠোঁটে সি”গারেটের স্পর্শ দিতেই আমি টেনে নিয়ে ফেলে দেই৷ উনি আমার দিকে তাকালেন না৷ আবার প্যাকেট থেকে আরেকটা বের করে আ”গুন জ্বালাতে নিলে আমি আবারও টেনে ফেলে দেই৷ এইভাবে একেরপর এক সিগারেট আমি ফেলছি আর উনিও ধরাচ্ছেন৷ আমি বির’ক্ত হয়ে গেলেও উনি নামক মানুষটা বির’ক্ত হচ্ছেন না৷ আমিও দ’মে গেলাম না,, এইবার উনার হাত আঁকড়ে ধরে রাখলাম৷ উনি আমার দিকে শীতল চোখে তাকালেন৷ উনার চোখের ভাষা অনুযায়ী, ” এইটা তোর শা”স্তি নীতু,তোর অন্যা”য়ের শা”স্তি৷ তুই আমাকে পু”ড়িয়েছিস তোর দ”হনে তাও মি”থ্যার উপর ভিত্তি করে এতো সহজে তোকে আমি ক্ষ’মা করবো না৷ ”

চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here