#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#পর্ব_৮
#জান্নাত_সুলতানা
-“আপনি সত্যি বলছেন? ”
সাহাব মাত্র ফ্রেশ হয়ে বেরিয়েছে। তোয়ালে টা ব্যালকেনিতে দিয়ে রুমে আসার সাথে সাথে আলো সাহাবের গলা জড়িয়ে ধরে কথা টা বলে উঠে
-“হুম।
যারা যারা আমার দলে কাজ করতো সবাই কে চাকরির ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”
সাহাব একটু চুপ থেকে আলো’র কপালে চুমু খেয়ে আবারও বলে উঠে
-“ভালোবাসি বউ ভীষণ ভালোবাসি।”
-“আমরাও ভালোবাসি ভীষণ ভালোবাসি আপনাকে।”
সাহাব জড়িয়ে ধরে আলো কে।
এভাবে থেকেই বউ কে নিয়ে বিছানায় গিয়ে সুয়ে পড়ে।
সাহাব দুজনের গায়ে কম্বল টেনে নেয় ভালো করে।
————-
-“ঠান্ডা দরকার ছিল না।
আমি মেইড দিয়ে আনিয়ে নিতাম।”
রায়শার হাত থেকে কফির মগ টা নিতে নিতে কথা গুলো বলে উঠে সাফারাত
-“কেন কফি ভালো হয় নি?
আবার করে আনবো?”
-“আমি বলেছি ভালো হয় নি?
এতো ঠান্ডা তারমধ্যে রাত বাজে এগারো টা।”
-“আমার ভালো লাগছে।
আপনার লাগছে না?”
-“না।
রুমে যাও।
এতো ঠান্ডার মাঝে এখানে থাকা লাগবে না। ”
-“আপনি যাবেন না?”
-“চলো।”
তার পর দুজন লিভিং রুম থেকে যার যার রুমে চলে গেলো।
————
-“তোমার ফাইনাল এক্সাম? ”
সেলিম তালুকদার খাবার টেবিলে বসতে বসতে সাফারাত কে জিজ্ঞেস করে।
-“সামনে মাসে তেরো তারিখ।”
-“আচ্ছা।”
কেউ আর কোনো কথা বলে না।
সাহাব এখনো নিচে আসে নি।সবাই নাস্তা করতে বসে গেছে।
আলো শারমিন তালুকদার পাশে বসে চুপচাপ খাবার খেয়ে যাচ্ছে।
না খেয়েও উপায় নেই।
খাবার নিয়ে সবাই বেশ সচেতন। অবশ্য এখন তো আর একজন নয়। যে খেলে খাবে না খেলে নেই।এখন তো আরও একটা প্রাণ তার মধ্যে বেড়ে উঠছে।
কষ্ট করে হলোও খেতে হবে।
কিন্তু সমস্যা হলো আলো খেতে চায় কিন্তু সে খেতে পারে না।
এই যে কেমন গা গুলিয়ে আসছে একটু পর পর।কিন্তু তাও সে দাঁতে দাঁত চেপে খাবার টা শেষ করার চেষ্টা করছে।
তবে শেষ রক্ষা আর হয় না।
চেয়ার ছেড়ে দৌড়ে রান্না ঘরে চলে যায় আলো।
আর ঠিক তক্ষুনি সাহাব নিচে আসে হাতে ব্লেজার ঝুলানো।
কিন্তু বউ কে হন্তদন্ত হয়ে রান্না ঘরে যেতে দেখে সেও হাতে থাকা ব্লেজার সোফায় ছুঁড়ে ফেলে বউয়ের পেছন পেছন রান্না ঘরে চলে যায়।
আলো এভাবে উঠে যাওয়াতে সবাই অস্থির হয়ে পরে।
শারমিন তালুকদার আর রায়শা যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে সাহাব কে দেখে কেউ আর যায় না।
যে যার জায়গায় বসে পড়ে সামলা তালুকদার মুচকি হাসে।
ছেলে আছে নয়তো কোনো কথা মুখ ফসকে বলেই ফেলতো হয়তো।
আলো মুখ চেপে ধরে রান্না ঘরে গিয়ে ঘরঘর শব্দ করে পেটের ভেতর থেকে সব ফেলে দিলো।
কাজের লোক গুলো রান্না ঘরে ছিল তারা তড়িঘড়ি করে আলোর দিকে আসতে নেয়।
কিন্তু সাহাব কে রান্না ঘরে প্রবেশ করতে দেখে সবাই চুপ চাপ স্থান ত্যাগ করে।
সাহাব দূত এসে আলোর চুল গুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে দেয়।
মুখে পানি দিতে সাহায্য করে।
আলো একদম নেতিয়ে পড়ে।
চোখ পিটপিট করে তাকায় সাহাবের দিকে।
মলিন হেসে বলে উঠে
-“আপনার দেড়ি হচ্ছে।
খাবার খেয়ে অফিস যান।”
সাহাবের বুকের ভিতর ধুক করে উঠে।
সে কি তবে তার অর্ধাঙ্গিনীর অভিমান এখনো ভেঙে দিতে পারে নি?
পারবে কি করে সে যে এই কয় দিন অনেক টা দূরে ছিল তার প্রেয়সীর থেকে।
আর এক দিন কি সেই অভিমান এক রাতে আর কিছু কথা কি এতো দিনের অভিমান ভেঙে দিতে পারে?আর ভেঙে যাওয়ার কথাও নয়।
সাহাব সেই প্রত্যাশা করেও না।
ভেতরে ভেতরে আলো’র কথায় খারাপ লাগলেও মুখ প্রকাশ করে না।
ঝট করে বউ কে কোলে তুলে নেয়।
আলো কিছু বলে না চুপ চাপ স্বামীর গলা জড়িয়ে ধরে কিন্তু এখন লজ্জা পেলে নিজেরই ক্ষতি।
হেঁটে রুমে যাওয়ার মতো শক্তি বা সাহসও করতে পারছে না।
সাহাব রান্না ঘর থেকে বেড়িয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে সোজা সিঁড়ি দিয়ে উপর উঠে রুমে চলে আসে।
ডাইনিং টেবিলে বসা কেউ তেমন প্রতিক্রিয়া করে না।
আর সেলিম তালুকদার অনেক আগেই অফিস চলে গিয়েছে।
তাই লজ্জা পাওয়ার মতো সেখানে কেউ নেই।
সাহাব আলো কে বিছানায় সুয়ে দিয়ে কম্বল দিয়ে ঢেকে দেয়।
নিজে অফিসের জন্য রেডি হয়েছিল সেই ড্রেস চেঞ্জ করে ট্রাউজার পড়ে শীতের ড্রেস পড়ে আসে ওয়াশ রুম থেকে।
আলো তখনো চোখ বন্ধ করে সুয়ে ছিল। কিন্তু ও ঠিক সব বুঝতে পারছিল সাহাব অফিস যাবে না।
আলো’র ভাবনার মাঝেই সাহাব ফোনে আরিফ কে জানিয়ে দে সে আজ অফিস যাচ্ছে না।
আজ নয় আগামী সাত মাস সে অফিস যাবে না।
যা শোনে আলো সোয়া থেকে উঠে বসে চোখ বড় বড় করে সাহাবের দিকে তাকায়া।কিন্তু সাহাব তখনো ফোনে কথা বলতে ব্যাস্ত।
সাহাব আরিফ কে বুঝিয়ে দিচ্ছে।
আর সাফারাতও অফিস যাবে আর সেলিম তালুকদারও আছে।
তাই বেশি সমস্যা হবে না আরিফও সাহাবের সব কথা মন দিয়ে শুনে।
সাহাব কথা বলে কল কেটে ফোন পেছনে ফিরে দেখে আলো ওর দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে।
সাহাব পাত্তা দেয় না।
রুম থেকে থেকে বেড়িয়ে যায়।
আলো তখনো সেভাবেই বসে থাকে।
সাহাব বেশ অনেকক্ষণ পর ফিরে আসে হাতে খাবার থালা।
সেগুলো নিয়ে বিছানায় আলোর পাশে বসে আলো’র মুখের সামনে খাবার তুলে দেয়।
কিন্তু আলো মুখ ফিরে নেয়।
বিরক্ত মুখ করে জিজ্ঞেস করে
-“আপনি অফিস কেন যাবেন না?”
-“আমার ইচ্ছে।”
খুব স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দেয়।
আলো এবার ভ্রু কুঁচকে তাকায় সাহাবের দিকে।
সাহাব নিজের বাম হাত দিয়ে আলো’র মুখ চেপে ধরে ওর মুখে খাবার পুরে দেয়।
আলো আর কিছু বলে না খাবার খেতে থাকে। কিন্তু দুই তিন বার নেওয়ার পর আবার গা গুলিয়ে আসে।
সাহাব তাড়াতাড়ি করে উঠে গিয়ে চট করে ড্রয়ার খোলে সেখান থেকে একটা তেঁতুল আচার আনে।
আর সে টা আলো কে খেতে দিয়ে।
নিজে খাবার খায়া। আবার ফাঁকে ফাঁকে আলো’র মুখেও দেয়।
আলো তৃপ্তি নিয়ে খায়।
কেমন সুখ সুখ অনুভব হয় আলো’র। আর ভাবে অভিমান তবে কাজে দিলো।
ভেবেই মুচকি হাসে।
————–
-“মা আমার মনে হয় ওদের বিয়ে টা দিয়ে দিলে ভালো হয়।
তাছাড়া একটা মেয়ে অবিবাহিত লোকজন পাড়াপ্রতিবেশি মানুষ না কথা বলে চলেছে কয় দিন ধরে।”
শারমিন তালুকদার কথা শোনে সামলা তালুকদার কিছু টা ভাবনায় পড়ে যায়।
-“আচ্ছা রাতে এটা নিয়ে কথা বলবো।”
শারমিন তালুকদার আর কিছু বলে না শাশুড়ীর ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যায়।
————-
রাতে সবাই খাবার খেয়ে লিভিং রুমে বসে কথা বলে সাফারাত আর রায়শার বিয়ের সব ঠিক ঠাক করে নেয়।
সাফারাতের ফাইনাল এক্সামও শেষ হয়ে যাবে আর একটা বিষয় বাকি।
তাই ঠিক হলো এক্সাম এর পরই বিয়ে টা হবে।
আর রায়শারও এডমিশন টেষ্ট শেষ হয়ে যাবে ততদিনে।
—–
আলোর এখন পেট টা একটু উঁচু হয়েছে। পাঁচ মাস চলে কি না।
বাড়ির সবাই অনেক যত্ন করে। সাহাব তো বউয়ের কাছে কাছে থাকে সব সময়।
কখন কি লাগে সব খেয়াল রাখে যদিও আলো’র এখন আর ততটা বমি-টমি হয় না কিন্তু খাবার খেতে পারে না।
সাহাব আলো কে কিছু করতে দেয় না সব নিজেই করে।
ওরা পনেরো দিন পর পর চেক-আপ করে আসে।
এই মাসেও গিয়েছে। ডক্টর টেস্ট করার পর কি বেবি হবে বলতে চেয়েছে কিন্তু সাহাব শোনে নি।
তার কথা একটাই আল্লাহ যা দেয় তাতেই খুশি।
আলো এসব ভাবতে ভাবতে পাশে বসে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকা সাহাবের দিকে তাকালো।
সাহাব এক মনে কাজ করছিল।
কিন্তু বউকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ইশারা করে জিজ্ঞেস করে “কি হয়েছে” আলো মাথা নেড়ে জানায় কিছু না।
তার পর একটা হাত পেটে রেখে সোয়া তার উঠার চেষ্টা করে সাহাব ততক্ষণে ল্যাপটপ পাশে রেখে বউ কে এসে উঠে বসতে সাহায্য করে
-“উঠতে পারতাম।
কাজ করেন আপনি।”
সাহাবের গালে এক হাত রেখে বলে উঠে আলো।
সাহাব আলো’র হাত টেনে এনে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয় হাতের তালুতে।
তার পর আলো’র মুখের উপর পড়ে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠে
-“আগে আমার অংশ, অস্তিত্ব।
তার পর বাকি সব।
ভালোবাসি বউ।
কিছু হলে যে মরে যাব।”
সাহাবের মুখে মরে যাবে কথা টা শোনে আলোর বুকের ভিতর ধক করে উঠে।
-“কিছু হবে না আমার না আপনার না আপনার অস্তিত্বের।
আল্লাহ আছে না ভরসা রাখুন।”
সাহাব শোনে কিন্তু কিছু বলে না।
সে তো এক দৃষ্টিতে বউয়ের ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে।
-“অনেক দিন হয় আদর করি না।
একটু করি।
বেশি না জাস্ট একটু জান?”
সাহাব আলো’র ঠোঁটে নিজের হাতের তর্জনী আংগুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে নেশালো কণ্ঠে কথা গুলো বলে উঠে।
আলো সাহাবের স্পর্শে সারা শরীর কেঁপে উঠল।
মুখ দিয়ে কোনো বাক্য বের করতে পারে না।
কাতর হয় সাহাবের হাতের এলোমেলো স্পর্শে।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিশ্বাস নিতে থাকে জোরে জোর।
সাহাবও আগলে নেয় বউ কে।
দুই টা ভালোবাসার মানুষ একে অপরের সাথে আরও একটা সুন্দর রাত কাটে।
#চলবে……
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]