-“ভালোবাসি না আমি আপনাকে কেন আমার পেছনে পরে আছেন?
আপনার পেছনে তো অনেক সুন্দরী সুন্দরী মেয়ে ঘুরে ওদের থেকে কাউ কে করে নিন না বিয়ে।
আমাকে ছেড়ে দিন দয়া করে প্লিজ।”
সামনের চেয়ারে বসা সুদর্শন ব্যক্তিটার কোনো ভাবান্তর হলো না উপরোক্ত কথা গুলো শুনে।
খুব স্বাভাবিক ভাবে নিজের বন্দুকটা টেবিল থেকে হাতে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে কোমরে গুঁজে উঠে এগিয়ে আসে সামনে দাঁড়ানো রমণী টার একদম নিকটে এসে দাঁড়িয়ে শান্ত চোখ তাকিয়ে খুব ধীরে কণ্ঠে বলে উঠলো
-“কিন্তু জান?
তোমার এই চোখ যে অন্য কথা বলছে।”
সাহাবের এমন কথায় আলো চোরা চোখে একবার আঁড়চোখে সাহাবের দিকে তাকিয়ে আবারও সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে
নিজের মুখের উপর এসে থাকা ছোট ছোট চুল গুলো বাম হাতের সাহায্যে কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠে
-“দেখুন সাহাব ভা,,,,
-“জান এখনে দেখা দেখির কথা বলছো?
বিয়ের আগে এটা মোটেও ঠিক নয়।
আর তো কিছুক্ষণ মাত্র কষ্ট করে অপেক্ষা করো।
তার পর না হয় সারা দিন রাত দে,,,
-“প্লিজ চুপ করুন আপনি।
অসভ্য কথা গুলো বলা।
লজ্জা করে না আপনার ছোট বোন কে এসব বলতে? ”
-“আপন বোন না।
তাছাড়া একটু পর আমাদের বিয়ে বেবি।
রেডি থাকো।”
-“শুনতে পান না আপনি?
করবো না আপনাকে বি,,,,
-“তুই কি চাস বিয়ের আগে বাসর করি আমি?”
আলো কে সব টা কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে বাকা হেসে বলে উঠে সাহাব।
আলো বিস্ময় চোখে তাকায় সাহাবের দিকে। এই লোক টা খারাপ আলো জানে। কিন্তু চরিত্রহীন এটা শুনে নি।
আলো সে সব চিন্তা বাদ দিয়ে সাহাব কে আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে
-“মানে?”
-“মানে তুমি চাইলে বিয়ে পরে হবে।
কিন্তু বাসর টা না হয় আজ ক,,
-“চুপ করুন আপনি দয়া করে। ”
-“তুমি তো জিজ্ঞেস করলে।”
-“ভুল হয়েছে।
এখন আপনি আসতে পারেন।”
-“সন্ধ্যায় পার্লার থেকে মেয়ে আসবে।
চুপচাপ রেডি হয়ে নিচে চলে এসো।”
সাহাব কথা শেষ রুম থেকে নিজের গম্ভীর মুখ করে বেরিয়ে যায়।
আর আলো ধপ করে বিছানায় বসে পড়ে।
মাথায় চুল খামচে ধরে বিরবির করে বলতে লাগলো
-“মাফিয়া আপনি।
করবো না আমি আপনাকে বিয়ে।
দরকার পড়লে এই বাড়ি ঘর ছেড়ে অনেক দূরে চলে যাব।
আমার বাবা এমন ছিল বলেই আমি আমার পরিবার হারিয়েছি।কিন্তু আর কিছু হারাতে চাই না।
এতে যদি আমি স্বার্থপর হয়ে যাই তবে তাই হবো।
ভালোবাসলেই যে পেতে হবে এমন টা নয়।
আমি আপনাকে দূর থেকে সব সময় ভালোবেসে যাব।
কিছু কিছু ভালোবাসা দূর থেকে সুন্দর। কাছে এলে তা ফিকে পড়ে।”
এসব ভাবতে ভাবতে আলো ঘুমিয়ে পড়ে।
—————
-“ভাইয়া তুমি কি সত্যি ঠিক করে নিয়েছো?
আজকেই বিয়ে করবে?”
সাফারাত আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করে সাহাব কে।
সাহাব সাফারাতের প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে তাকায় ছোট ভাইয়ের দিকে।
অতঃপর নিজেও ত্যারা ভাবে বলে উঠে
-“তো তোর কি মনে হয়?
মজা করছি?”
-“এমা ছিঃছিঃ।
তা কেন মনে হবে।
আসলে বাবা তো দেশে নেই আর দাদু’নের তো শরীর ভালো না তাই বলছিলাম,,,
-“তোকে এসব ভাবতে হবে না আমি বাবা আর দাদু’নের সাথে কথা বলে নিয়েছি।
আচ্ছা,মা কোথায়?”
সাফারাত দাঁত দ্বারা জিহ্বা কেটে বলে উঠে।
কিন্তু সাহাব সব টা শুনে না।
উল্টো নিজে গম্ভীর মুখে বলে উঠে।
-“মনে হয় রান্না ঘরে।
ওয়েট ডাকছি।”
সাফারাত কথা টা শেষ করে গলা ছেড়ে মা কে ডাকতে লাগলো।
সাহাব কানে হাত দিয়ে বিরবির করে বলতে লাগলো
-“ইস কেন যে ওকে মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলাম।
তার থেকে ভালো নিজে খুঁজে নিতাম।”
সাহাব বিরবির করার মাঝেই শারমিন তালুকদার রান্না ঘর থেকে এসে ছোট ছেলের কান টেনে ধরে বলে উঠে
-“তোমার দাদুন অসুস্থ।
সে টা ভুলে গিয়েছো?”
-“আহ, লাগছে মা।
ছাড়ো।”
কান ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বলে সাফারাত।
শারমিন তালুকদার ছোট ছেলের কান ছেড়ে দিলো।
বড় ছেলের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো
-“সব কাজ প্রায় শেষ।
তোমার এসিস্ট্যান্ট আরিফ বলেছে।
কাজি সে সন্ধ্যায় নিয়ে আসবে।”
-“হুম আমাকেও কল করিছিল বলেছে সব।”
অতঃপর তারা তিন জন টুকিটাকি কথা বলে।
সাহাবের একটা ফোন আসায় সে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়।
আর যাওয়ার সময় বলে যায় সন্ধ্যার আগে চলে আসবে।
শারমিন তালুকদার নিজের শ্বাশুড়ি’র রুমে চলে যায়।
আর সাফারাত উপর আলো’র রুমে আসে।
———-
তালুকদার বাড়ি কিছু টা রমরমা পরিবেশ। পাড়া প্রতিবেশি সাথে অফিসের কিছু স্টাফ।
যদিও বিয়ে টা এক মাস পরে হবার কথা ছিল। সাহাবের বাবা সেলিম তালুকদার বিদেশ থেকে আসার পর হওয়ার কথা। তবে কোনো এক অজানা কারণে সাহাব আজ সকালেই তার বাবার সাথে কথা বলে আজ সব ঠিক করেছে।
এখন বিকেল চার টা বাজে।
সাহাব এখনো আসে নি বাড়িতে। সাফারাত ফোন দিয়েছে। সাহাব বলেছে।
আধঘন্টার মধ্যে সে পৌঁছে যাবে।
সাফারাত আর শারমিন তালুকদার সব আত্মীয় স্বজনদের আপ্যায়ন করছে।
আর লিভিং রুমে সোফায় সামলা তালুকদার হাসি হাসি মুখ করে বসে সবার সাথে কথা বলছে। কে বলবে তাকে কাল হসপিটাল থেকে আনা হয়ছে?
এই তো তিনি এখন একদম সুস্থ আছে।
এ-সব ভাবতে ভাবতে শারমিন তালুকদার এগিয়ে এসে শ্বাশুড়ি কে জিজ্ঞেস করলো তার শরীর খারাপ লাগছে কি না।
তিনি শারমিন তালুকদার’র দিকে চোখ গরম করে তাকায়।
যার মানে “আমি অসুস্থ না।তোমরা আমাকে সুস্থ থাকলেও অসুস্থ বানিয়ে দেও। কেন?তোমাদের বুঝি আমি সুস্থ থাকলে ভালো লাগে না?”
শ্বাশুড়ির এমন চাহনি শারমিন তালুকদার হেঁসে দিলেন।
হালকা জড়িয়ে ধরে বলে উঠে
-“এতো রাগ করতে নেই মা।
আমরা তো আপনার ভালোই চাই।”
সামলা তালুকদার নিজেও ছেলের বউ কে এক হাত মাথায় রেখে মুচকি হাসে। এক ছেলে তার আর কোনো সন্তান হয় নি।তবে সামলার খুব শখ ছিল একটা মেয়ের কিন্তু তার স্বামী কখনো সন্তান না হওয়া নিয়ে মন খারাপ করতেন না।কিন্তু ওনার হতো। কিন্তু ওনার স্বামী ওনাকে শান্তনা দিতেন।এভাবে দেখতে দেখতে ছেলে বড় হতে লাগলো।তার পর ছেলে এতিম একটা মেয়ে কে বিয়ে করলেন।ওনি বা ওনার স্বামী হাসি মুখে মেনে নিয়ে ছিল ওনাদের না বলে বিয়ে করার সম্পর্ক। আর শারমিন কে নিজের মেয়ের মতো করে ভালোবাসতেন।আর এখনো বাসে।আর শারমিন তালুকদারও নিজের মায়ের অভাব টা সামলা তালুকদার কে দিয়ে মায়ের ভালোবাসার শূন্যস্থান টা পূরণ করে নিলেন। এ-সব ভাবতে ভাবতে সামলা তালুকদার মুচকি হাসে। কিন্তু হঠাৎ
মুখ গম্ভীর করে বলে উঠে
-“সব ঠিক ঠাক নিয়েছিস তো?
কোনো কিছু কমতি যেনো না থাকে। ”
-“মা ভরসা আছে?”
-“না থাকলে বুঝি এতো বড় দায়িত্ব দিয়ে আমি নিশ্চিন্তে বসে থাকতাম।”
-“আমি সব সকালেই ওকে দিয়ে এসছি।
এখন শুধু পার্লার এর মেয়ে আসা বাকি।”
শারমিন তালুকদার কথার মাঝেই দুই টা মেয়ে এলো।
সাফারাত নিয়ে এসছে মেয়ে গুলো কে।
-“মা তুমি ভাবির রুমে ওনাদের দিয়ে এসো।
ভাইয়া পাঠিয়েছে। ”
-“আচ্ছা।
আপনারা আমার সাথে আসুন।”
মেয়ে গুলো কে উদ্দেশ্য করে বলে।
শারমিন তালুকদার বুঝতে পারছে এরা পার্লার থেকে এসছে।
তাই তিনি তাদের নিয়ে উপর আলো’র রুমে দিকে পা বাড়াল।
ওনার পেছনে পেছন মেয়ে গুলো এলো।
কিন্তু আলো’র রুমে প্রবেশ করে শারমিন তালুকদার ভ্রু কুঁচকে আসে ওয়াশ রুমের দরজা খোলা। বারান্দায় দরজা টাও খোলা
রুমে কেউ নেই।
শারমিন তালুকদার কপালে চিন্তার রেখা ফুটে উঠে।
তিনি বারান্দায় এগিয়ে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।
এটা কি করে করতে পারলো আলো?
এটা করার আগে একবারও কি মেয়েটার বুক কাঁপলো না?
এতো টা স্বার্থপর কি করে হলো?
-“ম্যাম আমরা কি চলে যাব?”
দুই টা মেয়ের মধ্যে একটা মেয়ে জিজ্ঞেস করে।
মেয়ে টার প্রশ্নে শারমিন তালুকদার সম্মতি ফিরে পায়।
তিনি পেছন ফিরে হালকা হেসে বলে উঠে
-“হুম।
দরকার পড়লে আমরা আবার ডেকে নেবো।”
মেয়ে গুলো থমথমে মুখ করে চলে গেলো।
যাওয়ার সময় দু জনে কিছু কথা বলছিল যা শুনে বাড়ির প্রতি টা মানুষ অবাক হলো সাথে কিছু কিছু প্রতিবেশী মুখ টিপে হেসে টিটকারি করতেও পিছ পা হয় না।
এদিকে সামলা তালুকদার এসব শোনে কেমন করতে লাগলো।
সাফারাত ওনাকে কোলে নিয়ে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে এলো।
শারমিন তালুকদার ততক্ষণে ডাইভার কে গাড়ি বের করতে বলে।
আর ঠিক তক্ষুনি সাহাবের গাড়ি বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে।
সাহাবের এসিস্ট্যান্ট আরিফ ডাইভিং করছে।
আর সাহাব ফ্রন্ট সিটে বসে।
বাড়ির বাহিরে এতো মানুষ জন ভিড় দেখে সাহাব গাড়ি থেকে নেমে এগিয়ে আসতেই দেখা মিলে সাফারাত সামলা তালুকদার কে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আর ডাইভার গাড়ি বের করছে।
যা দেখে সাহাবের বুঝতে বাকি থাকে না দাদুন আবার অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
আর আশে পাশে থেকে আসা কিছু কথা শুনে বুঝতে বাকি থাকে না দাদুন এর অসুস্থ হওয়ার কারণ।
দাদুন কে গাড়িতে তুলে দিয়ে সাফারাত আর শারমিন তালুকদার কে সাথে পাঠিয়ে দেয়।
আর নিজেও নিজেদের পারিবারিক ডক্টর কে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেয়।
অতঃপর আবারও কাউকে ফোন করে।
কথা শেষ ফোন কাটে।
তার পর আরিফের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে
-“এই এলাকা ছেড়ে যেনো বেরোতে না পারে।”
আরিফ সাহাব কে চিন্তা না করতে বলে নিজেও বেরিয়ে পরে বাড়ি থেকে।
আর সাহাব নিজের মাথার চুল খামচে ধরে দু’হাতে তার পর বিরবির করে বলে উঠে
-“জান একদম ঠিক করো নি এটা।
তুমি হয়তো জানোই না তুমি নিজের অজান্তেই কত বড় একটা ভুল করলে।
আর কতো গুলো মানুষ কে কষ্ট দিলে।
কিন্তু তুমি কি ভেবেছো পালিয়ে গিয়ে বেঁচে যাবে আমার কাছ থেকে?তবে তুমি ভুল আমার থেকে মুক্তি পাবে না কিছুতেই। আমার বেঁচে থাকতে হলে যে আমার তোমাকে চাই চাই।”
#চলবে….
[ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন প্লিজ।]
#রেখেছি_তারে_বক্ষ_পিঞ্জিরায়
#সূচনা_পর্ব
#জান্নাত_সুলতানা