রহস্যময় সারপ্রাইজ পর্ব ৭

0
318

#রহস্যময়_সারপ্রাইজ
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা
#পর্ব-৭

প্রভাত মির্জা,স্বরূপা,তুরাগ শিলা ধানমন্ডি থেকে নিখোঁজ হওয়ায় মিরপুর থানায় তাদের অপহরণ মামলা দায়ের করা সম্ভব হয়নি। যার ফলে অধরা এবং তার টিম আগ বাড়িয়ে কিছু করতে পারেনি। তাও নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে গেছে। কিন্তু আশানুরূপ সাফল্য লাভ করতে পারেনি। তিহানা জাহান প্রভাত মির্জাদের নিখোঁজ হওয়ার পর ধানমন্ডি থানায় কয়েকজন অজ্ঞাত নামে অপহরণ মামলা দায়ের করেন। ধানমন্ডি থানা পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় প্রভাত মির্জাদের খুঁজে কোন হদিস করতে পারেনি। ৪৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও বিখ্যাত শিল্পপতি প্রভাত মির্জার কোন খোঁজ না পাওয়া গেলে দেশজুড়ে বেশ হৈচৈ লেগে যায়। সবার এক দাবি প্রভাত মির্জাকে উদ্ধার করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। উপর মহল ও থেকে চাপ আসতে থাকে। প্রভাত মির্জা অপহরণ এবং প্রতিভা মির্জা খুনের ব্যাপারটা রীতিমতো ব্রেকিং নিউজ হয়ে গেছে।

সাধারণত ক্লুলেস চ্যালেঞ্জিং কেসগুলো সিআইডি সমাধান করে থাকে। আর যেহেতু ধানমন্ডি থানা পুলিশ প্রভাত মির্জার অপহরণ কেসের কোন সমাধান করতে পারছে না তাই আদালত সি আই ডির উপর প্রভাত মির্জা কেসের ভার তুলে দেয়। যেহেতু প্রভাত মির্জার কেসের সাথে প্রতিভা মির্জার কেসের সম্পৃক্ততা আছে এবং প্রতিভা মির্জা কেস অধরার হ্যান্ডেল করছিলো তাই সি আই ডি টিমকে এসিস্ট করবে অধরার টিম। আদালত থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর সি আই ডির প্রধান কার্যালয় মালিবাগে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সি আই ডি প্রধান ।
এতে সি আই ডি প্রধান সালেহ উদ্দিন জানান তিনি তার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ইন্সপেক্টর নিতিন সরকারকে এই কেস সমাধান করার দায়িত্ব দিয়েছেন। এই কেস নিতিন সমাধান করবে। পয়ত্রিশ বছর বয়সী অতিব বুদ্ধিমান আর বিচক্ষণ এই অফিসার চ্যালেঞ্জিং কেস লড়তে ভালোবাসে। সালেহ উদ্দিনের বিশ্বাস নিতিন সরকার এই কেস সমাধান করতে পারবে। অতীতে সে এমন চ্যালেঞ্জিং কেস সমাধান করেছে। নিতিন সরকারকে এসিস্ট করবে মিরপুর থানার সাব ইন্সপেক্টর অধরা আনান। প্রতিভা মির্জা খুন এবং প্রভাত মির্জা ও তার সাথে তিন জনের অপহরণের যোগসূত্র থাকায় দুই টিম একসাথ হয়ে কাজ করবে এবং অতি শীঘ্রই এই চ্যালেঞ্জিং কেসের সমাধান করবে। এমন আশ্বাস দিয়ে সালেহ উদ্দিন সংবাদ সম্মেলনে শেষ করেন।

সংবাদ সম্মেলন শেষে সি আই ডি প্রধান নিতিনকে ব্যক্তিগতভাবে ডেকে বেশ কিছু উপদেশ এবং উৎসাহ দিলেন। নিতিন ও সি আই ডি প্রধানকে আশ্বাস দিল যে সে ওই কেসের সমাধান করবে।

দায়িত্ব পেয়ে প্রায় সাথে সাথে কাজে নেমে পড়ে নিতিন। অধরার সাথে যোগাযোগ করে মিরপুর থানায় গিয়ে প্রতিভা কেসের সব কিছু একবার পরখ করে দেখে। অধরার সাথে মামলা বিষয়ক আলাপ আলোচনা করে। প্রতিভা মামলার ফাইল ঘাটার পর নিতিনের চেহারায় বিস্ময়ী ভাবের পরিবর্তে হাসির রেখা ফুটে উঠল। নিতিনের চোখ মুখ চকচক করে উঠে। যা অধরাকে অবাক করল। কৌতুহলবশত অধরা জিজ্ঞেস করল,
” মি.নিতিন আপনি ফাইল দেখে এত আনন্দিত হচ্ছেন কেনো!”

নিতিন চোখে মুখে খুশিতের আভা দিগুন করে হেসে বলল,
” অনেক দিন পর এমন রহস্য ঘেরা কেস হাতে পেয়েছি। এই কেসের আসামীরা দুরদান্ত চালাক। এরা রহস্য নিয়ে খেলতে ভালোবাসে। আর আমি রহস্য সমাধান করতে ভালোবাসি। তাই এই কেস সমাধান করতে আমার বেশ মজা লাগবে।”
নিতিনের কথা শুনে অধরা ঠোঁট উল্টিয়ে ভ্রু নাচালো। তারপর নিতিনের সাথে কেস সংক্রান্ত আলোচনা জুড়ে দিলো।

অধরা এবং নিতিন মিলে মামলা আলোচনা করছিল অধরার কেবিনে। এক পর্যায়ে অধরার ডেস্কে থাকা টেলিফোনটায় বেজে উঠল। নিতিনের অনুমতি পূর্বক অধরা তুলে রিসিভার কানে দিল এবং বলে উঠল,
“হ্যালো, মিরপুর থানা থেকে ইন্সপেক্টর অধরা আনান বলছি। আ….
অধরার কথা শেষ করতে না দিয়ে মাঝপথে থামিয়ে দিয়ে ফোনের ওপাশ থেকে কাঁপা কাঁপা গলায় একটা পুরুষকন্ঠ বলে উঠলো,
“ম্ম্যাড্ডামম ললাসশ…
অধরা চমকে গিয়ে বললো,
” লাশ! কোথায়? আর আপনি কে!”
“আমমি ববোররহহান, ববুউইয়য়া বভিললার দ্দাররোয়য়ান। ললাশ আয়াগগের যায়ায়ায়গগায়…
বোরহানের ভীত কন্ঠে বলা তোতলানো কথা শেষ করতে দিল না অধরা। বোরহানকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
” আপনি সেখানেই থাকেন। এক্ষুনি আসছি আমরা । এসেই বাকি কথা শুনব।”
বলে রিসিভার রেখে দিল অধরা। তার চোখ মুখ আবারো ফ্যাকাসে হয়ে গেলো। তা দেখে নিতিন ভ্রু কুঁচকে বলল,
“মিস অধরা, এভ্রিথিং ইজ অলরাইট?”
“আজ আবারও ভুঁইয়া ভিলার অদূরে ঝোপের আড়ালে লাশ পাওয়া গেছে। আমার মনে হয়, নিখোঁজদের কারো লাশ পাওয়া গেছে। আমাদের যেতে হবে এক্ষুনি। ”
এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল অধরা। নিতিন সাথে সাথে উঠে দাঁড়িয়ে গেল। তারপর বলল,
“চলুন যাই। আশা করি আজ কোন না কোন ক্লু পাবো।”
অধরা নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আপনার কথা সত্যি হোক।”

***

এই মুহুর্তে নিতিন আর অধরা দাঁড়িয়ে আছে ভুঁইয়া ভিলার অদূরে সেই ঝোপের সামনে। যেখানটায় অভিলাষের পোড়া লাশ পাওয়া গিয়েছিল। আজ ও একি জায়গায় লাশ পাওয়া গেছে। দারোয়ান থেকে খবর পেয়ে অধরা এবং নিতিন তাদের টিম নিয়ে হাজির হয়েছে এখানে। ঝোপের কাছাকাছি এসে অধরা ভীষন চমকাল। এখানে আসার আগে সে ভেবেছে এখানে হয়তো তুরাগের লাশ থাকবে। কিন্তু এখানে এসে দেখলো ঝোপের আড়ালে ঘাসের উপর তো একটা নয় তিন তিনটা লাশ পড়ে আছে ! লাশ তিনটির মাথা ব্যাতিত পুরো শরীর ঝলসানো। অধরা আন্দাজ করছে লাশের পুরো শরীরে এসিড ঢেলে ঝলসে দেয়া হয়েছে। তবে গলা থেকে মাথা অবধি পুরোটা অক্ষত আছে। চেহারাগুলো ও স্পষ্ট। মুখে কিংবা মাথায় কোন আঘাতের চিহ্ন নেই। তিন ঝলসানো শরীরের তিন চেহারাই অধরার বিস্ময়ের কারণ। তিনটা চেহারাই বলে দিচ্ছে লাশ গুলোর একটা তুরাগের, একটা স্বরূপার আর একটা শিলার। অধরা খেয়াল করে দেখল লাশের আশেপাশে কোথাও কোন পোঁড়া রক্ত বা ছাই নেই। এর মানে অন্য কোথাও থেকে লাশ মেরে পুড়িয়ে এখানে এনে ফেলে রাখা হয়েছে। লাশ দেখে অনুমান করা যায় খুনীর এই তিনটা মানুষের সাথে কোন শত্রুতা ছিলো। যা সে অতি কষ্টদায়ক মৃত্যুর মাধ্যমে শোধ নিয়েছে। কিন্তু কার এত শত্রুতা এদের সাথে! তুরাগ আর স্বরূপার সাথে না হয় শত্রুতা থাকতে পারে। কিন্তু শিলা নামের একটা কিশোরী যে কিনা তুরাগের বাসার কাজের মেয়ে তার সাথে খুনীর কি শত্রুতা থাকতে পারে! শিলা মেয়েটা তো সহজ সরল গ্রাম্য মেয়ে তার সাথে আর যাই হোক খুন করার মতো কোন শত্রুতা তো থাকতে পারে না। তবে সে খুন হলো কেনো! সেও কি অভিলাষের মতো মহোরা হয়েই খুন হলো!

প্রথমে প্রতিভা তারপর অভিলাষ তারপর স্বরূপা,তুরাগ, শিলা। সবার মৃত্যুই ভয়ংকর ভাবে হয়েছে। কী কারণ থাকতে পারে এদের মৃতুর পিছনে? প্রভাত মির্জার সম্পত্তির জন্য যদি প্রতিভাকে মারা হয় এবং প্রতিভার সাথে সম্পৃক্ততার কারণে তুরাগকেও মারা হয়। খুনী সম্পর্কে জানার কারণে স্বরূপা এবং অভিলাষকে ও মেরে দেয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে শিলাকে কেনো মারা হবে? তার তো কোন সম্পত্তি নেই। না সে কারো উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তি ও পাবে না। তবে নিষ্পাপ মেয়েটাকে কেনো খুন করা হবে! তাও এত জঘন্য ভাবে! কেনো! আর নিখোঁজ হয়েছে চারজন তবে খুন কেনো তিনজন হলো? প্রভাত মির্জা কেনো খুন হল না? কোথাও এই খুনের সাথে প্রভাত মির্জার হাত নেই তো! এমন না যে প্রভাত মির্জা ইচ্ছে করে হাসপাতালে নেয়ার বাহানায় এদের কিডন্যাপ করেছে এবং খুন করেছে? এমনটা অসম্ভব নয়।

তবে একটা কথা স্পষ্ট যে প্রতিভাসহ খুন হওয়া চারজনের খুনী একিজন। সে হিসেবে এদের খুন যদি প্রভাত মির্জা করে থাকে তবে প্রতিভাকে ও প্রভাত মির্জাই খুন করেছে। কিন্তু বাবা হয়ে মেয়েকে কেনো খুন করবে? তাও এত পরিকল্পনার সাথে! তাছাড়া প্রতিভা খুন হওয়ার আগের দিন সন্ধ্যায় প্রভাত মির্জা এক্সিডেন্টে করেছে। চোট পেয়ে চিকিৎসা শেষে বাসাতেই ছিল। পরদিন সকাল অবধি বেরোয়নি। প্রভাত মির্জা যদি প্রতিভাকে খুন করতো তবে অবশ্যই বাড়ি থেকে বের হতেন। কিন্তু বের হন নি। তারমানে কি খুন তিনি অন্য কাউকে দিয়ে করিয়েছেন? নাকি এই খুনের সাথে তিনি নয় অন্য কেউ জড়িত! কিন্তু সে কে? কেনো খুন করছে? স্থির দৃষ্টিতে লাশের দিকে তাকিয়ে এমন নানান কথা ভেবে যাচ্ছে অধরা। সে ভাবনায় এতটাই বুদ হয়ে গেছে যে কখন তার পাশে দাঁড়ানো নিতিন সরে গিয়ে লাশ এবং আশেপাশে সবটা খতিয়ে দেখে আবার অধরার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে অধরা টেরই পায় নি। অধরার ঘোর ভাঙলো নিতিনের কথায়,
“মিস অধরা, লাশ দেখে কী বুঝলেন?”

ভাবনার সুতো কেটে বাস্তবে ফিরে এসে অধরা বলল,
“প্রতিভা অভিলাষ আর এই তিনজনের খুনী একজন। সবার সাথে সাথেই খুনির ঘোরতর শত্রুতা আছে যার কারনে এদের এত কঠিন মৃত্যু দিয়ে খুনি তার বদলা নিয়েছে। কী কঠিন মৃত্যু ছিলো এদের!”

অধরার কথায় নিতিন মুচকি হাসল। হেসেই বলল,
” এই তিনজনের মৃত্যুটাকে আপনি যতটা কঠিন ভাবে দেয়া হয়েছে ভাবছেন ততটা কঠিনভাবে কিন্তু দেয়া হয়নি।”
অধরা লাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই ভ্রু কুঁচকে বলল,
“একজন মানুষকে এসিড দিয়ে পুরো শরীর ঝলসে দিয়ে হত্যা করা হলে সেই মৃত্যুটাকে কঠিন মৃত্যু বলে না? এর চেয়ে কঠিন মৃত্যু আর কী হতে পারে! এসিড ঢালার পর কী কষ্টটাই না পেয়েছে এরা! কষ্টের শেষ সীমায় গিয়ে মারা হয়েছে। এর পর ও এটাকে সহজ মৃত্যু বলবেন আপনি! ”

নিতিন আবারো হাসল অধরার কথায়। হাসি থামিয়ে বলল,
“এদের মৃত্যুটা প্রতিভার মতোই শ্বাসরোধ এর কারণে হয়েছে। জীবন্ত মানুষ গুলোর সাথে ভয়ংকর কিছু করা হয় নি। শুধু গলায় দঁড়ি পেচিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে। খানিকের মাঝে ঝুলে মরেছে এরা। মারা যাওয়ার পর তাদের লাশের সাথে ভয়ংকর কিছু করা হয়েছে। মেয়ে দুটোর সাথে সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট হয়েছে কিনা নিশ্চিত বলতে পারছি না। তবে আন্দাজ করতে পারি, হয় নি। মৃত্যুর পরই লাশের উপর এসিড ঢেলে লাশের শরীর ঝলসে দেয়া হয়েছে৷ চেনার সুবিধার্থে চেহারা বিকৃত করা হয় নি।”

অধরা লাশ থেকে চোখ সরিয়ে নিতিনের দিকে তাকিয়ে বলল,
“মৃত্যুর পর গায়ে এসিড ঢালা হয়েছে তার প্রমাণ কী? মৃত্যুর আগেও তো ঢালা যায় না কি? আপনি এতটা নিশ্চিত ভাবে কিভাবে বলছেন?”

নিতিন তুরাগের মাথার পাশে হাটু ভেঙে বসল। তুরাগ এবং তার পাশে শোয়ানো স্বরূপা ও শিলার লাশের মুখমণ্ডল গ্লাভস পরে থাকে বাঁ হাতের আঙুলের সাহায্যে নেড়ে দেখল। তারপর বলল,
” লাশ গুলোকে একটা মনোযোগ দিয়ে দেখুন, বিশেষ করে লাশের চেহারাগুলো। এসিড ঢেলার কারণে মৃত্যু হলে লাশের চোখে মুখে কষ্টের আভা থাকতো। যা লাশের নেই। এসিডে ঝলসে যারা মারা যায় তাদের চেহারায় এসিড না পড়লে ও ঝলসে যাওয়া শরীরের যন্ত্রনায় তাদের চেহারাও এর প্রভাব পড়ে। এরা যদি জীবত অবস্থা এসিড দগ্ধ হতো তবে যন্ত্রণা এদের চেহারাটাও ভয়ংকর হয়ে যেতো। তাছাড়া জীবত অবস্থা শরীরে এসিড ঢাললে নড়ে চড়ে মুখে ছিটেফোঁটা হলেও লাগতো। কিন্তু লাশের গলার উপর এসিডের চিহ্ন মাত্র এ নেই। আমি নিশ্চিত খুনী তিনজনকে প্রথমে ফাঁসি দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। এর পর গলায় দড়ি থাকা অবস্থায়ই গলার নিচ থেকে পুরো শরীরে এসিড ঢেলে দিয়েছে। আমার কথা বিশ্বাস না হলে ফরেনসিক রিপোর্ট দেখে মিলিয়ে নিবেন।”

অধরা খানিক ভেবে বলল,
“এমনটা হতে পারে। দেখা যাক ফরেনসিক রিপোর্ট কী বলে! তবে আমার আরেকটা প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে। নিখোঁজ হলো চারজন কিন্তু খুন তিনজন হলো কেনো! প্রভাত মির্জাকে খুনী খুন করল না কেনো?”

শুভ্র বর্ণের প্রশস্ত কপালের ঠিক মাঝখানে তর্জনী আঙুল দিয়ে চুলকাতে চুলকাতে নিতিন উত্তর দিল,
“সেটা খুনীই বলতে পারে। খুনীর পরিকল্পনা আমি আপাতত আন্দাজ করতে চাচ্ছিনা। আন্দাজ করলেই খেল খতম। এই লাশ তিনটির ফরেনসিক রিপোর্ট হাতে পাবার পর খুনীর পরিকল্পনা আন্দাজ করব।”
“এমন না তো যে প্রতিভা মির্জাই খুনী? তিনিই সবাইকে খুন করেছে।”
“এটাও অসম্ভব নয়। আজকাল এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। তবে এই খুনের পিছনে একটা ঘটনা জটিল আছে। এই খুনের পিছনে একজন দুজন নয় একটা গ্যাং জড়িত। খুনগুলো পূর্বপরিকল্পিত। খুনীরা ঠান্ডা মাথায় স্টেপ বাই স্টেপ এগুচ্ছে।”
“হ্যাঁ সেটা আমারো মনে হচ্ছে। আমাদের এখন সেই ঘটনা এবং খুনের সাথে জড়িত পুরো গ্যাং অব্দি পৌঁছাতে হবে। তবে এটাও ক্লিয়ার যে এরা কেউ খুনের সাথে জড়িত নয়।”
“আপাতত মূল রহস্য হচ্ছে প্রভাত মির্জা। খুনী তিনি নন তো!”

সূত্র খুঁজতে খুঁজতে চিন্তিত ভঙ্গিতে স্বরূপার মাথার কাছে বসলো অধরা । স্বরূপার মাথার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে। স্বরূপার কোমর অব্দি চুল এলোমেলোভাবে খোঁপা করে মাথার উপরিভাগে একটা বড় ক্লিপের সাহায্যে আটকানো। অধরা কী মনে করে স্বরূপার মাথার ক্লিপটা খুলে দিলো। ক্লিপ খুলে দেয়ার পর পরই খোঁপা খুলে চুল সব মাটিতে এলোমেলো হয়ে পড়ে গেলো। রেশমি কালো চুলগুলো রোদের আলোতে চিকচিক করছে যেন। এলোমেলো চুলগুলোয় চোখ বুলিয়ে হাতে থাকা ক্লিপটার দিকে চোখ রাখতেই অধরার চোখ আটকে গেলো ক্লিপটায় । কালো রঙা একটা মোটা ক্লিপের ভিতরটায় একটা কালো চিরকুট আটকানো। খুব সুক্ষ্মভাবে না দেখে চোখে না পড়ার মতো করে চিরকুটটা ক্লিপের ভিতরে সেট করেছে খুনী। অভিলাষের চিরকুটের মতো এই চিরকুটেও নিশ্চয়ই কোন বার্তা আছে এই ভেবে অধরা চিরকুটটার ভাজ খুলল। তারপর এক নজর চোখ বুলাল। তারপর ভ্রু কুঁচকাল। এই খুনী কি সংখ্যা পদ্ধতিতে ছাড়া কথা বলতে পারে না? আজ ও চিরকুটে একটা বিশাল সংখ্যা লিখেছে তারপাশেই চিরচেনা সেই লাফিং ইমুজি।

“১৮১৫৩১১১৯২৫ 😀”
চিরকুটে আরো একবার চোখ বুলিয়ে ভাবতে লেগে গেল অধরা। কী হতে পারে এই সংখ্যার মানে!

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here