রঙিন খামে বিষাদের চিঠি পর্ব ৩১

0
205

#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ৩১
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৭৯,
জার্মানির বার্লিন শহর জার্মানির রাজধানী। সেখানেরই সেন্টার থেকে ১০মিনিটের দূরত্বের এক বাসায় দুই রুমের ছোট্ট হাউজ কিনে নিয়েছে রিয়ানা। এই বাসায় সে একা থাকে। বাবার সাথে দূরত্ব দিনকে দিন বেড়েছে বৈ কমেনি। রিয়ানা ইচ্ছাকৃত ভাবে কমায়নি। যাকে জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোতে পাশে প্রয়োজন ছিলো! তখন যখন পায়নি! এখন আর একসাথে থাকার কি প্রয়োজন। এতদিন আয়াতের মুখের দিকে তাকিয়ে সে রয়ে গেছিলো উর্জবার্গ। এখন আয়াতও তো নেই। তাই থাকার মানেও হয়না। বার্লিনের হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজি বিভাগে ভর্তি হয়েছে সে। কলেজ শেষে একটা রেস্টুরেন্টে পার্ট টাইম জব করে। বাসায় এসে আবার পড়াশোনায় মনোযোগ দেয়। এই বেশ সুন্দর তার জীবন চলে যাচ্ছে। আগের থেকে অনেক বদঅভ্যাস কমিয়ে ফেলেছে সে। ড্রিংকস, পার্টি, ড্রেসআপ সবকিছুই শুধরে নিয়েছে। শুধু মাঝে মাঝে খুব বেশি খারাপ লাগলে! বোনকে মিস করলে সে যায় নাইট ক্লাবে। ইচ্ছে মতো মদ গিলে বাসায় ফিরে। সেই রাত-টা তার বিষাদময় কেটে যায়। আজও কাটছে তেমন-ই। আজ সই সই একবছর পূরণ হলো সে বাংলাদেশ ছেড়ে এসেছে। হ্যাঁ, মাঝখানে কেটে গেছে একটা বছর। রায়াদের তার প্রতি দুর্বল হয়ে আসা! একদম পছন্দ হয়নি রিয়ানার। সেদিন রায়াদের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সে চুপচাপ চলে এসেছিলো। এরপর রায়াদের সাথে টু শব্দও করেনি। রায়াদ অবশ্য তার সাথে বারংবার কথা বলার চেষ্টা করেছে। রিয়ানা এড়িয়ে চলেছে। আয়াতের বউভাতের পরদিন-ই বাবা আর বোনকে একপ্রকার না জানিয়েই নিজেই টিকেট কেটে চলে এসেছে জার্মানি। জার্মানি এসে আয়াতের কাছে জানিয়ে দিয়েছিলে সে চলে এসেছে। এরপর বাবার বাসাতেও উঠেনি। মাদালিনার বাসায় উঠে ভার্সিটি এডমিট হয়ে তার সাহায্যে বাসা কিনে সোজাসুজি এখানেই এসে উঠেছে। তার বাবা প্রায় একমাস পর ফিরেছিলো জার্মানি। তিনি এসে মেয়ে-কে নিজের কাছে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। উর্জবার্গ ইউনিভার্সিটিতে এডমিশন নেওয়ার কথা বলেছিলেন। রিয়ানা শোনেনি। নিজের মতো আছে এখন। এই তো পড়াশোনা, একাকিত্ব! সব মিলিয়ে দারুণ ভালো আছে সে। আসলেই ভালো আছে?

প্রশ্ন-টা নিজের মনে আসতেই রিয়ানার বুকের মধ্যে কেমন একটা জ্বালাপোড়া করতে শুরু করলো। উফফ কি যন্ত্রণা। এই যন্ত্রণা অসহনীয়। রুমের ছোট্ট সিঙ্গেল সোফায় বসে কুশন কোলে নিয়ে গা এলিয়ে কাঁচের জানালা ভেদ করে দূর আকাশে উদাস ভঙ্গিতে বসে ছিলো রিয়ানা। মনের মাঝে যন্ত্রণা চেপে ধরতেই তড়িঘড়ি করে উঠে দাড়ালো। পড়ার টেবিলের কাছে এসে টেবিলে নিচে একটা তাক আছে। সেখান থেকে বিয়ারের বোতল বের করে চুমুক বসালো। জানালার কাছে এসে গ্লাস টেনে জানালা খুলে হাত বাড়ালো বাইরে। সময়-টা এখন সামার সিজন। এই সিজনে যা একটু বৃষ্টির দেখা মিলে। টিপটিপিয়ে বৃষ্টি ঝড়ছে। রিয়ানার ইচ্ছে করলো জোড় বৃষ্টিতে ভিজতে। আশায় রইলো একটু জোড়ে বৃষ্টি নামুক। কিন্তু ঘন্টা কেটে গেলো। বৃষ্টির দেখা নেই। ঘড়ির কাটা নিজ গতিতে চলছে। রাত তখন প্রায় এগারোটা। এবার সত্যি সত্যি ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নামলো। রিয়ানা দৌড়ে রুম থেকে বের হলো। নিচতলায় নেমে লিভিং রুম পেরিয়ে এসে দরজা খুললো। রাস্তায় নেমে দুহাত প্রশস্ত করে মুখ উঁচু করে চোখ বন্ধ করে বৃষ্টির ফোঁটা অনুভব করতে লাগলো রিয়ানা। সময় পেরুলো বৃষ্টির প্রকোপ তখন কমে এসেছে। রিয়ানার নড়চড় নেই। কিন্তু আচমকা অবাক করা একটা কান্ড ঘটে বসলো। নিজের উপর আর বৃষ্টির ফোঁটা পড়ছেনা দেখে রিয়ানা চোখ মেলে তাকালো। রাস্তার দুপাশের নিয়ন বাতির আলোয় সামনে দাড়ানো পুরুষটির আপাদমস্তক অবলোকন করে রিয়ানা চোখ কচঁলালো। এটা কি করে সম্ভব? আজ কি বিয়ার খাওয়া বেশি হলো নাকি তার? নার্ভ কাজ করছেনা নাকি? কি সব ভুলভাল দেখছে সে! অস্ফুটস্বরে তার ঠোঁট দিয়ে বেরিয়ে আসলো,

“আপনি?”

“হ্যাঁ আমি। কি ভেবেছেন? পালিয়ে আসলেই পিছু নিবো না? পালিয়ে বেড়াতে দিবো?”

“মিঃ রায়াদ শাহনেওয়াজ। বাড়াবাড়ি করছেন আপনি।”

৮০,
এরপর আর সারাশব্দ পাওয়া গেলো না। রিয়ানার নিস্তেজ শরীর নেতিয়ে পরতে ধরলে রায়াদ অতিযত্নে তাকে নিজের সাথে আগলে নিলো। ছাতা ফেলে রিয়ানাকে কোলে তুলে নিয়ে পা বাড়ালো তার বাড়ির দিকে। লিভিংরুমের সোফায় রিয়ানার নিস্তেজ শরীর আলগোছে রেখে সে পা বাড়ালো বাড়ির লাইট জ্বালিয়ে দেওয়ার জন্য সুইচ হাতরাতে। ড্রিম লাইটের আলোয় সব আবছা। আবছা আলোয় দেওয়াল হাতরে সুইচে প্রেস করলো সে। পুরো বাড়ি মুহুর্তে আলো ঝলমলিয়ে উঠলো। রায়াদ এসে রিয়ানার সামনে হাঁটুমুড়ে বসলো। বৃষ্টিতে দীর্ঘসময় ভেজার ফলে রিয়ানার চোখ মুখ ফ্যাঁকাসে হয়ে গেছে। রক্তশূণ্য মানবী মনে হচ্ছে। পরণে তার শর্ট টপস আর শর্ট জিন্স। অল্প একটু পেট বেরিয়ে আছে তার। সাথে উড়ু থেকে পা পুরোটাই দেখা যাচ্ছে। রিয়ানার সেন্স নেই। ভেজা কাপড়! পাল্টাবে কে? চিন্তায় পরলো রায়াদ। গালে হাত দিয়ে মৃদু চাপড় দিয়ে আলতো স্বরে ডেকে বললো,

“রিয়ানা, এই রিয়ানা? উঠুন না!”

রিয়ানার হুঁশ নেই। ফেরার নামও নিলো না। রিয়ানার পুরো শরীর ঠান্ডায় যেন জমে আছে। এই মেয়ের যে ঠান্ডায় সমস্যা! এটা ভুলে কি সে বৃষ্টির সাথে জীবন দিতে গিয়েছিলো? মুহুর্তে রায়াদের মেজাজ বিগড়ে গেলো। সে আয়াতের সাথে কথা বলার জন্য পকেট হাতরে ফোন বের করলো। ফোনে পানি ঢুকে নষ্ট যদি হয়! এই রিস্ক এড়াতে ভালো করে পলিথিন দিয়ে মুড়িয়েই সে পকেট রেখেছিলো ফোন। বের করে দেখলো তেমন কিছু হয়নি! ঠিক-ই আছে। সে চট জলদী কল লিস্ট থেকে আয়াতের নাম্বার বের করে কল করলো। আয়াত রিসিভ করতেই সে আগে বলে উঠলো,

“এই বেয়াদবের ঠান্ডায় সমস্যা জেনেও বৃষ্টিতে ভিজেছে। সেন্স হারিয়েছে। ফেরাবো কি করে?”

আয়াত ঘাবড়ালো রায়াদের কথায়। ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো,

“এতক্ষণ চিন্তায় ছিলাম, আপনি পৌঁছাতে পারবেন কিনা! এখন ভয় ধরলো রিয়ানাকে নিয়ে। আমি কি আসবো জুবায়েরকে সাথে নিয়ে?”

“রাতে আসার দরকার নেই। সকালে আসতে পারলে আসবেন।”

“রাতের বেলা, একা মেয়ের বাসায় আপনি থাকবেন? বিষয়-টা ভীষণ উইয়ার্ড না?”

আয়াত তুতলিয়ে কথা-টা বললো। রায়াদ দমে গেলো এই কথায়। সে তো জাস্ট রিয়ানাকে দেখে-ই চলে যেতে চেয়েছিলো। এই মেয়ে সেন্স হারিয়ে কি এক সমস্যায় ফাঁসাল! সে পরিস্থিতি সামলাতে বললো,

“আমায় ভরসা করেন তো? টাচ করবো না। ফিরেও তাকাবোনা। শুধু সুস্থ করার উপায় জানলে বলুন। আর এটা বাংলাদেশ নয়। এখানে একটা মেয়ের সাথে ১০টা ছেলে এসে থাকলেও কেউ দেখতে আসেনা।”

আয়াতের মনে তবুও উশখুশ করছিলো। রায়াদকে সে ভরসা করে। তবুও বাঙালি মেয়ের মন! অসস্তি আর চিন্তা দু’টোই থাকবে। আয়াত নিজেকে সামলে লম্বা ভাবে কতগুলো নিঃশ্বাস নিলো। এরপর মলিন সুরে বললো,

“চোখেমুখে পানি দিয়েও কাজ না হলে বেডরুমে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে গরম কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দিন। সকাল হতে হতে ও একাই ঠিক হবে। ঠান্ডায় একটু নিস্তেজ হয়ে যায়। গরম পেলেই ঠিক হয়ে যাবে। এরপর না হয় বাসায় এসে পরুন।”

“ওর শরীরের কাপড় ভেজা। এটা নিয়ে বিপদে আছি।”

রায়াদ মনে খঁচখঁচানি নিয়ে কথা-টা বললো। আয়াত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। চিন্তিত ভঙ্গিতে বললো,

“পাশের বাসায় ওর ক্লাসমেইট আছে একজন। ওর বাসায় গিয়ে নক করুন। জার্মানির মানুষজন এত তাড়াতাড়ি ঘুমায় না। নক করে সমস্যা জানিয়ে সাহায্য চাইলে ওরা সাহায্য করে।”

“ওকে, এখন তবে রাখছি।”

রায়াদ কল কেটে দিলো। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে রিয়ানার দিকে তাকাতেই রাগে জেদে তার চোয়াল শক্ত হয়ে আসলো। হাত মুঠো করে নিলো রায়াদ। রিয়ানার দিকে দৃষ্টি ফেলে বিরবির করে বললো,

“জেদ আর জেদ। জেদের চোটে নিজের কি হাল করে ছেড়েছে এই মেয়ে। একবার সুযোগ পাই! জেদ সব ছুটিয়ে দম নেবো। শুরুতেই বলেছিলাম বেয়াদব একটা মেয়ে। ভুল বলিনি। পালিয়ে এসেছিলেন না? এখন কি করে পালান দেখবো! উঠতে-বসতে, খেতে-শুতে আমাকেই দেখবেন সবসময়। আর পাবেন আমার থেকে পালানোর শাস্তি।”

৮১,
হতাশ দৃষ্টিতে রুমের জানালার গ্লাসে হাত রেখে দাড়িয় আছে আয়াত। জুবায়ের কিচেন থেকে দু মগ কফি বানিয়ে এনে আয়াতের পাশে দাড়ালো। কফির মগ এগিয়ে দিতেই আয়াত মলিন হেসে তা নিলো। জুবায়ের পাশে দাড়িয়ে কফির মগে চুমুক দিয়ে শুধালো,

“রিয়ানাকে নিয়ে চিন্তিত?”

“একটু, সেন্স হারিয়েছে। রায়াদ ভাই কল করেছিলো।”

“এক বছর ৪টা মাস পেরুলো। মেয়ে-টাকে শুরুতে যেমন দেখেছিলাম! দিনকে দিন আরও জেদি হলো বৈকি নরম হতে দেখলাম না।”

“ওর কিছু ভ্রান্ত ধারণা আছে। ওর সাথে জড়াবে যে, সুখ হারাবে সে।”

“এজন্য রায়াদকে সুযোগ দিবে না? ও কি খুব খারাপ ছেলে?”

“খারাপ হলে বিয়ের আগে তাকে গিয়ে অনুরোধ করতাম না আমার বোনকে আগলে ধরতে।”

আয়াতের কথায় বিস্মিত হলো জুবায়ের। আয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো,

“বুঝলাম না তোমার কথা! ”

“আমার আপনার বিয়ের আগে মেহেন্দীর রাতে রায়াদ ভাইকে অনুরোধ করেছিলাম আমার বোনকে একটু আগলাতে। তার কষ্ট গুলো দূর করার চেষ্টা করতে। কারণ তার দৃষ্টিতে আমার বোনের জন্য কোথাও একটা দুর্বলতা আছে। বুঝতে পেরেছিলাম। এজন্য মেহেন্দী শেষে রুমে যেতে ধরে তাকে একা দুতলায় করিডরে দাড়িয়ে থাকতে দেখে কথা বলি সেদিন।”

“আচ্ছা বুঝলাম। এজন্য এতদিন ধরে রায়াদকে জার্মানি আসতে এত সাহায্য করলে?”

“আপনাকেও তো আনলাম! যেন ঘুরে যেতে পারেন। সেই উছিলায় বোন, বাবাকেও দেখে যেতে আসলাম।”

“সাথে আমাদের হানিমুন তাইনা?”

জুবায়েরের চোখে মুখে দুষ্টমির আভাস। আয়াত তা দেখে কফির মগে শেষ চুমুক দিয়ে জুবায়েরের হাত থেকে কফির মগ নিয়ে কিচেনে রেখে আসতে পা বাড়িয়ে বললো,

“হানিমুন তো নিউ কাপল করে তাই না? আমাদের বিয়ের এক বছর হয়ে গেছে। তো আমরা ওল্ড কাপল হয়ে গেছি। সো কিসের হানিমুন?”

“এবার একটা বেবি আনার জন্য হানিমুন হবে ম্যাম।”

জুবায়েরের জবাবে আয়াত থামলো না। লজ্জা মিশ্রিত মুখশ্রী নিয়ে শাড়ি সামলে ছুট লাগালো কিচেনের দিকে। জুবায়ের মাথা চুলকে হাসলো। দিন দিন মেয়েটার প্রেমে গভীর ভাবে আসক্ত হচ্ছে সে। বিয়ে করা বউ। আসক্ত হওয়াই যায়। হারানোর ভয় নেই। রায়াদ এবার তার শালীকা-কে সহজ জীবনে ফিরিয়ে নিতে পারলেই হলো। একটা সুখী পরিবার। জার্মানিতে এসেছে আজ ২দিন হলো। রায়াদ রিয়ানা যে ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে, সেখানেই ডাবল মাস্টার্সের জন্য এপ্লাই করেছিলো। আয়াতের সাহায্য নিয়ে সব সঠিক ভাবে করায় সামার সেমিস্টারে সে স্টুডেন্ট ভিসার এপ্রোভাল পেয়েছে। রায়াদের সাথে আয়াত আর জুবায়েরও এসেছে একটু ঘুরে যেতে। আয়াতের যেহেতু জার্মানির নাগরিকত্ব আছে। এজন্য বেশি সমস্যা হয়নি। রায়াদ এসে থেকে রিয়ানার সাথে দেখা করার জন্য পাগল হয়েছিলো। আয়াত সব খোজ খবর নিয়ে আজ যাওয়ার পারমিশন দেয়। ট্রেনের টিকেট কেটে রায়াদের যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়ে আসে। কথা ছিলো সবাই একসাথে গিয়ে রায়াদের থাকার ব্যবস্থা। ভার্সিটির বাকি কাজ সেরে আসবে। কিন্তু রায়াদের ধৈর্যে সইলো না। কবে যে এই ছেলে রিয়ানার শূণ্যতায় এতটা তার জতোর উন্মত্ত হয়ে উঠলো! আজও বুঝে উঠেনা জুবায়ের। অথচ রায়াদ কি বলতো! সে ভালোবাসবেনা কাউকে। ভালোবাসা তার জন্য নয়। যে বলে ভালোবাসা সম্ভব না! একসময়ে গিয়ে দেখা যায় সেই ভালোবার কাঙাল হয়ে উঠে। এসব ভেবে জুবায়ের মৃদু হাসে। এবার সব সুন্দর ভাবে মিটে গেলেই হলো।

নিচে এসে আয়াত তার বাবাকে সোফায় কপালে হাত রেখে চোখ বন্ধ করে বসে থাকতে দেখে কিচেনে মগ রেখে এসে উনার সামনে দাড়ালো। আলতো স্বরে ডেকে উঠলো,

“বাবা, ও বাবা! এখানে এভাবে বসে আছো কেন? রুমে গিয়ে শুয়ে পরো।”

বড় মেয়ের কণ্ঠে চোখ মেলে তাকান হানিফ হোসাইন। মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করে আয়াতের দিকে হাত বাড়িয়ে বলেন,

“আয়াত মা! আয় বাবার পাশে একটু বোস।”

আয়াত অস্থির চিত্তে বাবার পাশে বসে। বোধ হওয়ার পর বাবাকে এতটা চিন্তিত সে কখনও দেখেনি। আজ এত চিন্তিত দেখে সে ভয় পাচ্ছে। বাবার চোখে মুখে বয়সের ছাপ স্পষ্ট হচ্ছে। অতিরিক্ত চিন্তায় তার বাবা অসুস্থ না হয়ে যায়! এই ভয়ে আয়াত বলো উঠে,

“তুমি কি নিয়ে এতো চিন্তা করছো বাবা? তোমায় বলেছি না চিন্তা করবেনা। তোমার হার্টের সমস্যা গুরুতর হয়। জানোই তো।”

“আমার ছোটো রাজকন্যাকে একটু না অনেক বেশি-ই কষ্ট দিয়েছি না? কতগুলো দিন হলো ও আমায় বাবা ডাকেনা। ভেবেছিলাম তোকে রেখে এসে মেয়ের মান ভাঙাবো। দূরত্ব মেটাবো। মেয়ে আমায় সুযোগ দিলো না। কাজ ফেলে ওর কাছে গেলে আমায় সহ্য করতে পারতো না। হাইপার হতো। ও হাইপার হলে ওর প্যানিক এট্যাক আসে জানিসই তো। এজন্য দূর থেকে খেয়াল রাখি। এভাবে আর পারছি না রে মা। আর কত এভাবে দূরে সরিয়ে রাখা যায়?”

“দূরত্ব টা তুমি তৈরি করেছিলে বাবা। আমি কতবার বলেছি তোমায়! ওকে আগলে নাও। ও শুধরে যাবে। এখম তরী ডুবিয়ে তীর খুঁজলে অকূল পাথার ছাড়া কিছুই পাবেনা।”

“এই দূরত্ব কি ঘুচবেনা রে মা?”

হানিফ হোসাইনের চোখেমুখে অসহায়ত্বের ছাপ প্রগাড় হলো। আয়াত দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো শুধু। বাবার কথার জবাব তার জানা নেই।”

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেইক করিনি। আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here