#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ২৮
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৬৯,
উপরতলা করিডরে বুকে হাত বেঁধে দাড়িয়ে আছে রায়াদ। দৃষ্টি ড্রইং রুমে সোফার সম্মুখে পাটি পেরে তাতে বসে থাকা সব মেয়েদের মাঝে রিয়ানার মাঝে আবদ্ধ। রিফা তার হাতে মেহেদী লাগিয়ে দিচ্ছে। তার বাম হাত বালিশের উপর রাখা। সে ডান হাত গালে দিয়ে ফোনে কিছু একটা দেখায় ব্যস্ত। অন্তি আর রোজা মিলে আয়াতের দু-হাত মেহেদীতে রাঙাতে ব্যস্ত। পাশের বাসার তিনজন মেয়ে তারা কখনও গান বলছে তো হাসাহাসির টপিক টেনে হাসছে। আসিফা বেগম এবং ফাতেহা খানম সোফায় বসে মেয়েদের আনন্দে শামিল হয়েছেন। রায়াদের ইচ্ছে করছেনা ঘুমাতে। একটুও ঘুম ধরছেনা তার। জুবায়েরের কথাগুলো মাথায় ঘুরে চলেছে রায়াদের। তবে কি সত্যি সত্যি সে কিছু ফিল করছে রিয়ানার জন্য? আবার মনে হচ্ছে কারোর প্রতি সহানুভূতি আসলেই কি তা ভালোবাসা বিষয়ক কোনো অনুভূতি হয়? সব মিলিয়ে রায়াদের অবস্থা পাগল প্রায়। এসব নিয়ে একটুও ভাবতে চায় না। কিন্তু ঘুরেফিরে ভাবনা এসে যায়।
“এখানে দাড়িয়ে কি ভাবছো ব্রো?”
আচমকা সাজ্জাদের উপস্থিতিতে ঘাবড়ে গেলো রায়াদ। সে ভেবেছিলো বাসার সবাই ঘুমিয়ে পরেছে। সাজ্জাদের সাথে রায়াদকে থাকতে দেওয়া হয়েছে। বাসায় মানুষ বেশি, রুম কম হওয়ায় অন্তি, রোজা, রিফা একরুমে আর রায়াদ সাজ্জাদের থাকবে বলে আসিফা বেগম বলে দিয়েছেন। সাজ্জাদকে ঘুমাতে দেখে রায়াদ এখানে এসে দাড়িয়েছে। বুঝতে পারেনি সাজ্জাদ উঠে পরবে। রায়াদ হাসার চেষ্টা করে সাজ্জাদের কথার জবাবে বললো,
“কিছু ভাবছি না। ঘুম ধরছিলো না। সবাই আড্ডা দিচ্ছে তাই দেখছি। মেয়েদের আড্ডা। সেখানে তো আর যাওয়া যায় না। তাই এখানে দাড়িয়ে।”
“দৃষ্টি একজনের দিকেই সীমাবদ্ধ ছিলো।”
রায়াদ ফের একদফা ঘাবড়ালো। ভ্রুকুটি করে তাকালো সাজ্জাদের দিকে। সাজ্জাদ সামনের রেলিঙে ভর দিয়ে দাড়িয়ে বললো,
“যার পানে দৃষ্টি আবদ্ধ! তোমার দৃষ্টি অনুসরণ করে আমিও তার পানে তাকিয়েছি। তবুও দূর হতে দৃষ্টি নিক্ষেপ। সিউর নই আমার ভাবনাকৃত মানুষ-টিই কিনা!”
“কার কথা বলছেন?”
“এতগুলো মেয়ের মাঝে যে একদম আলাদা। রিয়ানা।”
রায়াদ ধরা পরে দৃষ্টি লুকানোর চেষ্টা করলো। সে বেহায়ার মতো একটা মেয়েকে দেখছিলো সেটাই তার বড় ভাইয়ের মতো মানুষের কাছে ধরা পরলে ভেবে অসস্তি হতে শুরু করলো রায়াদের। সাজ্জাদ বুঝতে পারলো রায়াদের চোখ মুখের ভাবভঙ্গি দেখে। সে হেসে বললো,
“তাকে তাকিয়ে দেখো, মায়ায় পরো, ভালোবাসো। কিন্তু কখনও বলতে যেয়ো না। এমন আঘাত করবে! সইতে পারবেনা। শত হোক সবাই সাজ্জাদ নয়। সবাই অবহেলা, আঘাত নিতে পারেনা। তুমি ছেলে-টা নিজেকে যত-ই কঠিন ভাবে প্রকাশ করতে চাও? বাস্তবে তত-টা নও। আমার অবজারভেশন বলছে, তুমি ভেতর থেকে একদম সরল সহজ একটা মানুষ।”
সাজ্জাদের কথার আগামাথা কিছু বুঝলো না রায়াদ। সে জিগাস্যু দৃষ্টিতে তাকালো সাজ্জাদের দিকে। সাজ্জাদ সব ভণিতা ছেড়ে বললো,
“ঐ মেয়ে-কে একসময় ভালোবেসেছিলাম বোধ হয়। জেদি, একরোখা, ঘাড়ত্যাড়া, ড্রেসআপ কখনও পেট বের করা, কখনও হাটুর উপরে শর্ট স্কার্ট, কখনও বা স্লিভলেস। মেয়ে-টাকে পাল্টাতে পারিনি। আমার ভালোবাসায় হয়তো খামতি ছিলো। অথবা তাকে পাল্টানোর ক্ষমতা-টা কারোর হয়নি। সে নিজের ইচ্ছে-ই না পাল্টালে কেউ পাল্টাতে পারবেনা। এই কথা-টা বলতো। সত্যিও হয়েছে। তার চাল চলনের জন্য সে আমার জীবনে এক আফসোসের নাম। আজ দেখো শাড়ি পরেছে। অথচ চার বছর আগে চেয়েছিলাম সে এমন হোক।”
৭০,
রায়াদের দৃষ্টিতে বিস্ময় প্রকাশ পেলো সাজ্জাদের কথায়। সাজ্জাদ হাসলো রায়াদের কাঁধে হাত রেখে বললো,
“যত-ই অফিসে, বাসায় এসে ছুটোছুটি করি! অন্তি? সে সবদিকে নজর রাখে। না চাইতেও তার দৃষ্টি সতর্কের সহিত রিয়ানার উপর নির্বাসিত থাকে। আমি মানুষ-টা একসময় যাকে ভালোবাসি বলেছি! সে মেয়ে-টা আমার বাসায়। অবশ্য এই বাসা তারও। সর্বক্ষণ সব জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তার স্বামীর প্রথম আবেগ, মায়া, ভালোবাসা নামক অনুভূতি যে নারীকে ঘিরে সৃষ্টি হয়েছিলো? সেই নারীর প্রতি যেন তার স্বামীর আবার মন না ঘুরে সেই ভয়ে থাকে অন্তি। যার ফলে রিয়ানার উপর নজর রেখপ চলে। আমি বারণ করি, বোঝাই! সে বোঝে না। হয়তো তার ভালোবাসার ভীত শক্ত হচ্ছে আমার প্রতি! এজন্য হারানোর ভয় পায়। ওর মুখেই শুনেছি তোমার সাথে রিয়ানার ঝগড়া-ঝাটি, তার ডায়েরী পড়ার গল্প। ঐ ডায়েরী আমার জীবনের কাল ছিলো। জার্মানিতে গিয়ে ঐ ডায়েরী হাতে পরার ফলে মেয়ে-টার মুখে হাসি ফেরানোর চেষ্টায় নেমে আমি হাসি হারিয়েছিলাম। অন্তির সহচার্যে আমার হাসি, মনের শান্তি ফিরে আসছে একটু একটু। আমার বিশ্বাস একদিন আমার সব-টা জুড়ে অন্তি-ই থাকবে। তোমায় ভাই সাবধান করি, নিজের থেকে বেশি ভালোবাসতে যেয়ো না। নিজের প্রতি ভালোবাসা বাঁচিয়ে তাকে ভালোবেসো। আমি পারিনি তার বিষাদের চিঠির পাতায় রঙিন কিছু আনতে। তুমি না হয় তা করলে!”
সাজ্জাদের কথাবার্তা সব মাথার উপর দিয়ে গেলো রায়াদের। সে অবুঝ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সাজ্জাদের মুখপানে। সাজ্জাদ ফের বলে উঠলো,
“বুঝতে পারছো না তো? সহজ করে বলি। আমি জার্মানিতে টুরিস্ট ভুসায় গিয়েছিলাম। সেদিন ছাঁদে তুমি রিয়ানার ডায়েরী দিতে গিয়েছিলে। অন্তি কাপড় আনতে গিয়ে দেখে। পরে তোমরা কথা বলছিলে বলে সে চলে আসে। যার ফলে তোমরা ওকে দেখতে পাওনি। রাতে বাড়ি ফেরার পর অন্তি আমায় বলে, তোমার আর রিয়ানার মাঝে কিছু চলছে। বুঝতে না পেরে ওকে জিগাসা করতে-ই যা দেখেছে, শুনেছে এক্সপ্লেইন করে। তোমার আর রিয়ানার টুকটাক যা কথা হয় বা তোমরা একসাথে কোথাও মুখোমুখি হলে তা অন্তির নজরে পরলে আমায় বলে। দেখতে চায় জেলাস ফিল করি কিনা? আজও রিয়ানার প্রতি আমার অনুভূতি বেঁচে আছে কিনা? অথচ পাগলি-টা জানেনা আমিও চাই রিয়ানা ভালো থাকুক। আর বাকি ১০টা সাধারণ বাবা মেয়ের মতো ওর সাথে চাচ্চুর সম্পর্ক-টা নরমাল হোক। ও ১৫তম জন্মদিনে যে শক পেয়েছিলো চাচ্চুর থেকে তা ভুলে যাক। এর আগে আয়াতের থেকে শুনেছি, রিয়ানা হাসতো। সেই হাসি ফিরে আসুক। নরমাল মেয়েদের মতো সেও সুন্দর একটা লাইফ লীড করুক। ওর বেস্টফ্রেন্ড আছে একটা। ডায়েরীর প্রথম পেজের পর ৩-৪টা পেইজ লেখা সহ পেয়েছিলাম। তা জার্মানির ভাষায় ছিলো। ওর বেস্টফ্রেন্ডের থেকে ইংলিশে ট্রান্সলেট করে নিয়েছিলাম। ওর দুঃখগুলো মনের কোথাও একটা ছুঁয়েছিলো। চেয়েছিলাম নরমাল করতে, পারিনি। এখন তোমার দৃষ্টি দেখে আমার মনে হচ্ছে রিয়ানার জন্য তোমার ফিলিংস জন্ম নিয়ে ফেলেছে। সেটা বুঝতে দেরি করো না। ঐ পাথর মানবীর মন গলানোর চেষ্টায় নেমে পরো। নয়তো হারাবে একসময়। চিন্তা করো না। ও আমায় ভালোবাসেনি। ওর মনে আমার জায়গা হয়নি। তাই আমিও সব দাফন করে নিজের স্ত্রী-কে মনে প্রাণে ভালোবাসতে চাই। ভয় নেই, আমি তাকে কখনও ভালোবাসি বলা ব্যতিত হাত ধরেও দেখিনি ইচ্ছাকৃত। সে ফিরিয়ে দেওয়ার পর বিরক্তও করিনি। তুমি তাকে ভালোবাসতে পারো। একটা সুন্দর জীবন গুছিয়ে দিতে পারো। ও মেয়ে-টার মাঝে এক আকাশ সম বিষাদ জমা। তাতে রঙিন রংধনুর আবির্ভাব না হয় তুমি করলে! শুধু অনুরোধ ডায়েরীর পরের পাতাগুলো ওর মন জয় করে, ও ভালোবাসলে, তোমরা বিয়ে করলে পড়ে নিয়ো। এর আগে পড়বেনা। আমার অনুরোধ রইলো ভাই। বড় ভাই হিসেবে তোমায় আদেশ দিলাম। এটাও ভাবতে পারো।”
সাজ্জাদ কথাগুলো দম নিয়ে বলে রুমের দিকে পা বাড়ালে রায়াদ বলে উঠে,
“আমায় এতকিছু কেন জানালেন সাজ্জাদ ভাই?”
“সে আমায় একটা কথা বলেছিলো জানো। আমি ছাড়া তাকে কেউ ভালোবাসেনি। এই কথা-টা ভুল প্রমাণ করো তুমি। এটা চাই। তুমি তাকে ভালোবাসো। সে আবারও বলুক, আমি ছাড়াও তাকে কেউ ভালোবেসেছে।”
৭১,
সাজ্জাদ ঘাড় ঘুরিয়ে জবাব দিয়ে থামলো না। দ্রুতপদে রুমে এসে বিছানায় বসে পরলো। লম্বা শ্বাস নিয়ে কিয়ৎক্ষণ সময় নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করলো। নিজের মন শক্ত করে ভাবলো,
“ও আমায় ভালোবেসেছে রায়াদ। এটা তুমি বিয়ের পর-ই জানো। এখন জানলে হয়তো ওর ভালোবাসার উপর, ওর মনের উপর জোড় চালাতে চাইবেনা। তোমায় দেখে এতটুকুই বুঝেছি আমি। ওর মনের দরজায় খিল পরেছে। কিন্তু তাই বলে ওকে কেউ ভালোবাসবে না এটা হয়না। ও ভালো থাকুক। আমার মতো ভালো থাকার চেষ্টায় নামুক। মুখে না বলুক। আমি তো জেনে গেছি ওর মনের কোথাও একটা আমি আছি। আমার অস্তিত্ব তখনই ওর জীবনে বিস্তার লাভ করলো! যখন আমি অন্য কারোর। আমায় ভালোবাসলে রিয়ানা হোসাইন। যখন আমি অন্য কারোর, ঠিক তখনই বাসলে। অন্তির মুখে তোমার ডায়েরীর কথা শুনে লোভ সামলাতে পারিনি। আবারও তোমার ডায়েরী চুরি করেছিলাম। যেমন-টা জার্মানিতে গিয়ে করেছিলাম। আবারও মাদালিনার হেল্প নিয়ে ইংলিশে ট্রান্সলেট করে নিয়েছি। মাদালিনার সাথে আজও আমার যোগাযোগ আছে। চলে আসার পর তার থেকেই তো তোমার খোঁজ রাখতাম। রিফার সাহায্য নিয়ে আমি চলে আসার পরের ডেইট গুলোর ছবি তুলতে বলেছিলাম ওকে। ও তোমার আড়ালে সুযোগ বুঝে আমায় ছবি তুলে দিয়েছে। আমায় মাফ করো। কিন্তু কখনও তুমি না জানো, তোমার ডায়েরী তোমার সব সত্যতা আমার জানা। অন্তিও না জানুক। সব আমার মনের মাঝেই দাফন হয়ে যাক। সবকিছুর মাঝে অন্তির দোষ নেই। আমিও বিবাহিত। তোমার কথা ভাবা মানেই অন্তিকে ঠকানো। আমি ওকে ঠকাতে চাইনা। রায়াদ তোমায় ভালোবাসুক। এজন্য তাকে এতকিছু জানাতে বাধ্য হলাম। আমায় ক্ষমা করো।”
পরেরদিন বেলা গড়িয়ে দুপুর। বাড়ির ছাদের আয়াতকে হলুদ মাখানোর তোড়জোড় চলছে। বাড়িতে বেশ মানুষের আনাগোনা। কাছের আত্মীয় স্বজনকে জানানো হয়েছে শুধু। আয়াতের মামার-খালার পরিবারকে, সাজ্জাদের শ্বশুর বাড়ির মানুষ, তার খালার পরিবারকে দাওয়াত করা হয়েছে। বড়-রা সব আগামীকাল আসবে। আজ সব কাজিন’স-রা হাজির। শুধু অন্তির মা আজকেই এসেছেন। আর আশেপাশের প্রতিবেশীদের দাওয়াত করা হয়েছে। দুপুর পেরিয়ে বিকেল হওয়ার পথে। আসিফা বেগম আয়াতের রুমে এসে আয়াতকে তখনও সাজাতে দেখে তাড়া দিলেন। বললেন,
“তোরা কি মেয়ে-টাকে হলুদে ভুত বানিয়ে রাতে গোসল করাবি? তাড়াতাড়ি কর বলছি।”
উনি হাতে কাজ থাকায় তাড়া দিয়ে-ই প্রস্থান করলেন। রিফা আয়াতকে দাড় করিয়ে তার হাতে চুড়িগুলো পরিয়ে দিয়ে আয়াতকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে কাঁধে দুহাত রেখে পেছনে দাড়িয়ে বললো,
“এই তো হলুদ পরিকে সাজানো শেষ।”
“আমার হিরো বন্ধুকেও আনা শেষ। এবার দুজনকে নিয়ে পাশাপাশি বসানো যাক?”
দরজায় রায়াদের কণ্ঠস্বর শুনে রুমে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি ঘুরে তাকালো দরজায় দাড়িয়ে থাকা রায়াদ আর জুবায়েরের পানে। রোজা অবাক হয়ে দুজনের দিকে এগিয়ে এসে বললো,
“জুবায়ের ভাই এখানে কেন ভাইয়া?”
“ও বাড়িতে আগামীকাল বিয়ে। সেই আমেজ। হলুদের কিছু হচ্ছে না। ওর সাথে কথা বলে জানতে পেরে নিয়ে আসলাম। এবার জোড়া শুদ্ধ নিয়ে যা তো এদের। আমি ফ্রেশ হয়ে আসি।”
রায়াদ চলে যায় সাজ্জাদের রুমের দিকে। জুবায়েরের দৃষ্টি সবাইকে উপেক্ষা করে আয়াতে আবদ্ধ৷ বাসন্তী রঙের শাড়িতে তাজা গোলাপ, গাঁদা ফুলের গহনায়, হালকা মেকআপ এ আয়াতের সৌন্দর্যে জুবায়ের ঘায়েল হলো যেন। রিফা তা লক্ষ্য করে মজা করে বললো,
“পরেও দেখতে পারবেন আয়াতকে। এবার চলুন আপনাদের ছাঁদে স্টেজ সাজানো হয়েছে। সেখানে বসানো যাক।”
আয়াতের দৃষ্টি ফ্লোরে আবদ্ধ। জুবায়ের তার দিকে তাকিয়েছে দেখে লজ্জায় সে চোখ নামিয়ে নিয়েছে। সবাই মিলে ওদের দুজনকে নিয়ে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো। এদিকে রিয়ানা রিফার রুম থেকে নিজের লেহেঙ্গা সামলে সবে করিডোরে পা ফেলার সাথে রায়াদের মুখোমুখি হলো। সে পাঞ্জাবির হাতা গোঁটাতে গোঁটাতে বের হচ্ছিলো রুম থেকে। রিয়ানাকে দেখে থমকালো রায়াদ। এ মেয়ের নতুন নতুন রুপ দেখে হার্ট অ্যাটাক করে মরবে নাকি সে! আজ আবার এক ভিন্ন রিয়ানা। সিম্পল ডিজাইনের লেহেঙ্গা পরেছে সে বাকি মেয়েদের বাসন্তী রঙের শাড়ির সাথে মিল রেখে। সিম্পল আর্টিফিশিয়াল ফুলের গহনায় সাজিয়েছে নিজেকে। মুখে সাজের বালাই নেই। ঠোঁটে শুধু লিপস্টিকের ছোঁয়া হালকা রঙের। এতেই এ মেয়ে-কে অন্য রকম লাগছে। রায়াদকে নিজের দিকে এক নাগারে তাকিয়ে থাকতে দেখে রিয়ানা কয়েক কদম হেঁটে রায়াদের সামনে দাড়িয়ে গালে তর্জনী আঙুল দিয়ে টোকা দিয়ে বললো,
“প্রেমে পরে যাচ্ছেন নাকি মি: রায়াদ। চলেন প্রেমে করি।”
রায়াদ বিষম খায় রিয়ানার কথায়। মুহুর্তে নিজেকে সামলে রাগের সহিত বলে,
“আপনার মুখে এসব উল্টাপাল্টা কথা আসে কিভাবে?”
“যেভাবে আপনি তাকিয়ে ছিলেন। আর একবার আমার দিকে তাকিয়ে থাকলে এবার গালে হাত পরলো। এরপর সোজা চোখে আঙুল ঢুকে পরবে। খবিশ লোক একটা।”
রিয়ানা কথাগুলো বলে ছাঁদের দিকে পা বাড়ালো। রায়াদ ওখানেই দাড়িয়ে হতভম্বের ন্যায় তাকিয়ে রইলো রিয়ানার যাওয়ার পানে। তখনঔ সাজ্জাদ রুম থেকে বের হলো। রায়াদের কাঁধে হাত রেখে দাড়িয়ে বললো,
“এ মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকলে এ পটবে না ভাই। এ মেয়ে তার উপর গিয়ে মরবে, যে ওকে পাত্তা দিবে না। সো দূরত্ব রেখে মাইন্ড গেম খেলো। ও দুর্বল হলে সম্পর্ক বিয়ে অব্দি সে গড়াবে নিজ দায়িত্বে। তোমার কিছু করতে হবে না।”
সাজ্জাদ দরজায় দাড়িয়ে রিয়ানার কথাগুলো শোনায় রায়াদকে কথাগুলো বললো। রায়াদ সাজ্জাদের দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে বললো,
“এ নির্লজ্জ মেয়ে-কে জীবনেও ভালোবাসবো না আমি। আস্তো বেয়াদব। আপনি অন্য কাউকে ধরেন একে সোজা করতে।”
এরপর সেও পা বাড়ালো ছাঁদের দিকে। সাজ্জাদ অসহায় চোখে দুজনের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বিরবির করে বললো,
“আল্লাহ দুই টারে একটু হেদায়েত দান করো। পাগল হয়ে যাচ্ছি দুইটার চিন্তায়। একজন উইক হয়েছে এখন বুঝছেনা। আমি সরে আসার পর রিয়ানা যেমন নিজের অনুভূতি বুঝেছিলো। এই রায়াদ না আবার রিয়ানা জার্মানি চলে গেলে বুঝে তার অনুভূতি। কি যে হবে?”
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়, আসসালামু আলাইকুম।