রঙিন খামে বিষাদের চিঠি পর্ব ২৭

0
226

#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ২৭
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি

৬৫,
বুধবার দিন সকালবেলায়। বাড়িতে হইচইয়ের আভাস পেয়ে চোখ ডলতে ডলতে রুমের বাইরে আসলো রিয়ানা। রুমের সামনেই রিফা, রোজা, অন্তি, আয়াতকে গোল হয়ে দাড়িয়ে কিছু একটা নিয়ে তর্কাতর্কি করতে দেখে সে আয়াতের পাশে এসে দাড়ালো। ওদের কথা শুনে জোড়ে আওয়াজ করে বললো,

“তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছো? কি হবে না না করছো? আবার একজন বলছো হবে? হয়েছে কি ক্লিয়ার করবে কেউ?”

আয়াত বোনকে খেয়াল করে বললো,

“আরে দেখ না রিয়ু, এরা আগামীকাল হলুদ মাখাবে বলে জিদ করছে। আমি না বলছি। শুনছে না।”

রিয়ানা আয়াতের কথার জবাবে বললো,

“সেসব নিয়ে আলোচনা করার অনেক জায়গা আছে। আমার রুমের সামনে কেন! ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো সবাই।”

রিয়ানার কথায় সবার মুখ থমথমে হয়ে গেলো। রিফা হতচকিত হয়ে তোতলানো স্বরে বললো,

“আরে তুমি আয়াতের ছোটো বোন। তুমি বললে, আয়াত ঠিকি মেনে নিবে। এজন্য টেনে আনলাম। আর তুমি এত কাঠখোট্টা টাইপ কেন বলো তো? বোনের বিয়ে। একটুও আনন্দ নেই তোমার মাঝে।”

“আমার মাঝে আনন্দ আসবেও না। আমার বোনের বিয়ে হবে। মাথার উপর মায়ের ছায়ার মতো বোনের ছায়া হারাবে। অগোছালো আমি-টাকে কেউ গোঁছানোর চেষ্টা করবে না। আমি কি করে আনন্দ করবো?”

রিয়ানা কথা-টা বলে-ই রুমে চলে যায়। উদ্দেশ্য ফ্রেশ হওয়া। ঘুম হওয়ার আগে-ই ঘুম ভাঙায় মাথা-টা ব্যথায় ফেঁটে যাবার যোগার হলো তার। রিয়ানার প্রস্থানে অন্তি তেতেপুড়ে বলে উঠলো,

“এমনি কি এই মেয়ে-কে আমার সহ্য হয়না। সবকিছুতে শুধু নিরামিষ টাইপ। সহজ সুন্দর জীবন-টাকে একদম গাম্ভীর্যের চাদরে মুড়িয়ে রেখেছে।”

অন্তি কথা-টা বলেই হনহনিয়ে নিচে চলে যায়। বাকি রিফা আর রোজা অসহায় চোখে আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াতের দৃষ্টি রুমের দিকে স্থির। তার বোনের মাঝে ঝড়ের পূর্বাভাস টের পেয়ে ভেতর থেকে দমে গেছে সে। রোজা কাতর স্বরে বলে,

“অনেকদিন পর একটা বিয়ে বাঁধলো আয়াত আপু। আমরা কি একটু আনন্দ করবোনা?”

“হুম, তোমাদের যা করতে ইচ্ছে করে! আয়োজন শুরু করো। আমার আপত্তি নেই। আমার বোন যেন একটু আনন্দ করতে পারে। এমন কিছু করো।”

আয়াত কথা-টা বলে নিচে নেমে আসে। তার চোখ দু’টো অস্থির দৃষ্টিতে একজনকে খুঁজে চলেছে। মানুষ-টা রায়াদ। আর কেউ নয়। ড্রইং রুমে সবাই উপস্থিত। হানিফ, আরিফ হোসাইন দু-ভাইয়ের সাথে ইয়াসিন সাহেব বসে আয়াতের বিয়ের কিভাবে কি করা হবে আলোচনা করছেন সোফায় বসে। আসিফা বেগম, ফাতেহা খানম ডাইনিং টেবিলে সকালের নাস্তা সাজাচ্ছেন। অন্তি এক এক করে সব কিচেন থেকে এনে দিচ্ছে। সবার মাঝে রায়াদ অনুপস্থিত। এখনও কি ঘুম থেকে উঠেনি নাকি? সে ফাতেহা খানমের কাছে গিয়ে দাড়ালো। আসিফা বেগম আয়াতকে লক্ষ্য করে বললেন,

“কিছু লাগবে আয়াত মা?”

“না বড়-আম্মু। আসলে আন্টির সাথে একটু কথা ছিলো।”

আয়াতের কথা শুনে ফাতেহা খানম বললেন,

“হুম বলো আম্মু।”

“রায়াদ ভাই কোথায়? ঘুম থেকে উঠেনি?”

“হঠাৎ রায়াদের খোঁজ করছো?”

“কিছু জিনিস আনিয়ে নিতাম। বাড়িতে তো আর কাউকে দেখছিনা মার্কেটে পাঠানোর মতো।”

“সাজ্জাদকে বলতে পারো। ও এনে দিবে তো।”

আসিফা বেগম বললেম আয়াতের কথা শুনে। আয়াত বললো,

“আসলে বড়-আম্মু সাজ্জাদ ভাই এমনি অনেক ছুটোছুটির উপর আছে। তাই রায়াদ ভাইকে বলার জন্য খুঁজছিলাম।”

ফাতেহা খানমও জবাবে বললেন,

“ও একটু জুবায়েরের কাছে গেছে আম্মু। তুমি বরং কল দিয়ে বলো। আসার সময় নিয়ে আসতো!”

“রায়াদ ভাইয়ের নাম্বার নেই আমার কাছে।”

আয়াত চোখ বন্ধ করে বলে দিলো কথা-টা। ফাতেহা খানম নরমালই নিলেন কথা-টা। কোনো দরকার তো নেই যে রায়াদের নাম্বার থাকবে আয়াতের কাছে। তিনি বললেন,

“যে রুমে আমরা থাকছি, গিয়ে দেখো বেডের উপর আমার ফোন আছে। লকবিহীন ফোন। কন্টাক্ট লিস্টে পেয়ে যাবে ওর নাম্বার। নতুবা রোজা-কে বলো। দিয়ে দিবে।”

“আচ্ছা আন্টি।”

আয়াত প্রস্থান করলো ডাইনিং স্পেস থেকে। দরকার তো রায়াদের সাথে সরাসরি কথা বলার। নাম্বার দিয়ে সে কি করবে! এজন্য মাথা ঘামালো না আর।

৬৬,
ঘুম থেকে উঠে-ই রায়াদকে নিজের রুমে থাকা সোফায় বসে থাকতে দেখে চমকে যায় জুবায়ের। চোখ কচলাতে কচলাতে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নেমে পায়ে স্যান্ডেল ঢুকিয়ে রায়াদের পাশে গিয়ে বসে পরলো। রায়াদ শান্ত, তার নড়চড় নেই। সে একধ্যানে ফোন দেখতে ব্যস্ত। জুবায়ের নিজের কপালে পরা চুলগুলো হাত দিয়ে পেছনে ঠেলে বলে উঠলো,

“সকাল সকাল আমার বাড়িতে, আমার রুমে। অবাক হয়ে গেলাম বন্ধু।”

“বিয়ে করতেছো! বন্ধুকে দাওয়াত দেওয়ার খবর নেই। তাই দাওয়াত নিজেই নিতে আসলাম।”

রায়াদের কথায় জুবায়েরের রীতিমতো বিষম উঠে গেলো। রায়াদের গলার স্বর বলে দিচ্ছে সে ভেতরে ভেতরে কতটা রেগে আছে। জুবায়ের রায়াদের রাগ কমাতে ওর এক হাত নিজের দুহাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,

“রেগে আছিস বুঝতেই পারছ। কিন্তু কি করবো বল? এক আয়াতকে নিয়ে একদিন গেলো। পরদিন এই বিয়ের শপিং। নিজেরও এই গরমে ছুটাছুটি করে ঠান্ডায় অবস্থা কাহিল। আ’ম স্যরি রায়াদ”

জুবায়েরের অবস্থা দেখে রায়াদ আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। হো হো করে হেসে উঠলো। জুবায়ের পুরো-ই হতভম্ব। কি করবে সে নিজেও বুঝতে পারলো না। বোকার মতো তাকিয়ে রইলো। রায়াদ জুবায়েরের পিঠে কয়েক-টা কিল বসিয়ে বললো,

“আমি জানি তোর পরিস্থিতি। আমি এতটা অবুঝ বাচ্চা নই যে রেগে থাকবো। আমিও ব্যস্ত ছিলাম। আংকেলের ছেলে নেই। সাজ্জাদ ভাইয়ের সাথে আমি ছুটছি সবকিছুতে। আংকেল পুরো সুস্থ নয়। আবার আরিফ আংকেল আর বাবা-ও সবদিক সামলে উঠতে পারছেনা।”

জুবায়ের হাফ ছেড়ে বাঁচল যেন। সোফায় গা এলিয়ে বললো,

“আমার তো এক হিল্লে হলো রায়াদ। তুই কি করবি? সারাজীবন কি সিঙ্গেল থেকে মরবি?”

“ভাই রে বিয়ে কর। তোর বিবাহিত জীবনের সমাচার দেখে ভাববো কি করবো। মানুষ তো বলে বিয়ে করলেই জীবন ত্যানা ত্যানা। দেখি তোমার জীবন কি হয়! সুখের তাঁতের শাড়ি নাকি ঘর মোছার জন্য ত্যানা।”

জুবায়ের রায়াদের মজা করা দেখে হতাশ হলো। একটু বাচ্চামি মুখা ভঙ্গি করে বললো,

“ভয় দেখাচ্ছিস বিয়ের আগেই? আয়াত কিন্তু অনেক ভালো মেয়ে। ও আমায় ভালোবাসবে হুহ।”

“হ্যাঁ, সে তো ভালো মেয়ে। খালি রিয়ানার মতো মেয়ে না জুটলেই হলো। যার কপালে জুটবে! তার জীবন ইন্না-লিল্লাহ।”

“কেন? এমন কেন হবে? আমার হবু শালীকার সমন্ধে এমন কথা মানা গেলো না রায়াদ।”

“বাদ দে ভাই। আমি তার সম্পর্কে কিছু বলতেও চাইনা। একদম পাগল, তাড়ছিড়া। কিছু বলাও ভুল। যা বলবো! মিথ্যা প্রমাণ করে দিয়ে অন্য-টা প্রকাশ করে।”

“কেন? কি হয়েছে খুলে বল।”

রায়াদ জুবায়েরের কথায় ছাঁদের ঘটনা আর সোমবার দুপুরের ঘটনা খুলে বলে। সব শুনে জুবায়ের একটু গম্ভীর থেকে জোড়ে শব্দ করে হেঁসে উঠে। রায়াদ হতবাক হয়ে শুধালো,

“হাসছিস কেন? তোর হাসি পাচ্ছে?”

“হাসবো না তো কি করবো? যার এক ধমকের সামনে আমি টিকতে পারিনা। সে কিনা বাচ্চা একটা মেয়ের সামনে লজ্জায় সরে যায়?”

” সে তো তোর ধমকের সামনেও কেউ টিকতে পারেনা। আর বাচ্চা কি? ২১বছরে পা দেওয়া মেয়ে বাচ্চা হয়?”

“আচ্ছা মানলাম ও বড়। কিন্তু আমার তো কাহীনি অন্য কিছু লাগে রে?”

“কি কাহিনী?”

“সামথিং সামথিং?”

“কিসের সামথিং সামথিং?”

“রিয়ানার প্রতি ফিলিংস জন্মাতে শুরু করেছে তোর।”

“হোয়াটট?”

৬৭,
রায়াদ একটু চিল্লিয়েই বললো। জুবায়ের রায়াদের মুখপানে তাকিয়ে বললো,

“দেখ, আমরা যা বুঝতে চাইনা। ঠিক সেটাই হয়ে থাকে। আমি ১ম ১ম রিয়ানাকে দেখার পর আমার ওর ভিন্নধারার ব্যক্তিত্ব দেখে ওর প্রতি একটু আগ্রহ, একটু মোহ সৃষ্টি হয়েছিলো। পরে যখন আবার জানলাম আয়াতের সাথে আমার বিয়ের কথা হয়েছিলো! আমি রিয়ানার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলি। মাথায় ঘুরে আমার, আয়াতের মাঝে কি এমন দেখলো আমার পরিবার! যে বিয়ে অব্দি কথা গড়ালো। দ্যান আমি আয়াতের বিষয় নিয়ে ভাবনা শুরু করলাম। এবং দেখলাম আমার আর ওর মিল একটু বেশি। রিয়ানার প্রতি আমার আগ্রহ দমে যায়। মূলত দমিয়ে দিই। কারণ এই আগ্রহ বেশি হলে ঠিকই কোনো না কোনো ভাবে একটা অনুভূতি সৃষ্টি হতো। এটার এক্সাম্পল হিসেবে তোর কথা-ই বলি। শুরুর দিক থেকে খেয়াল কর! তোর কিন্তু আয়াতের পার্সোনালিটি ভালো লাগতো। তাইনা? এরপর আমার কথা ভেবেই তো তুই আয়াতের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলছিস। তারপর হুট করেই রিয়ানার ডায়েরী দেখে তোর মনে হলো, এই মেয়ে-টার মাঝেও কিছু একটা আছে। যেটা তোকে এট্রাক্ট করছে। আর তুই বর্তমানে সেই এট্রাকশনের পেছনেই ছুটছিস। মেয়ে-টার পারসোনালিটি আর তোর পারসোনালিটির মাঝে মিল বেশি। অমিল-টা কম। আর কিছু মানুষের ক্ষেত্রে, যে যেমন, ঠিক তেমন একজনকেই পায়। কারণ সবাই যেমন, তেমন কাউকে পেলে বিচ্ছেদ বলে কোনো ওয়ার্ড এক্সজিস্ট করতো না। তাইনা?

জুবায়েরের কথাগুলোয় রায়াদ ভাবুক হয়ে বসে রইলো। জুবায়ের তার উরুতে চাপর দিতেই সে উদাস ভঙ্গিতে বলে উঠলো,

“কিছু-টা ঠিক তুই। আয়াতকে আমার ভালো লাগতো! এটা বললে চলে না। একটা মানুষের পার্সোনালিটি পছন্দ হতেই পারে। তার মানে তো এটা নয় যে তাকে আমি ভালোবাসার ভালো লাগা নামক অনুভূতিতে ভাববো। এমন-টা কখনও ভাবিনি। এটা ঠিক, রিয়ানার এই ত্যাড়ামি আমার পছন্দ না। কিন্তু পরে কোথাও একটা গিয়ে মনে হলো! এরকম তো সচরাচর কোনো মানুষ হয়না। কারণ একটা অবশ্যই থাকে। সেই কারণ-টা কি! এটাই জানার আছে আমার। একটু তো জেনেছি। বাকি-টাও আশা করি জেনে যাবো।”

রায়াদের জবাবে জুবায়ের বললো,

“কিভাবে জানবি? ভাষা অনুসন্ধান অভিযান সফল হয়েছে?”

“আমি চেষ্টা করেছি। আর রিয়ানা! তিনিও বলেছেন বাংলায় লিখে দেবেন। আমার চেষ্টায় দেখা যাবে কোনো অনুভূতি থাকবেনা। কারণ যে লিখে ডায়েরী! সে তার অনুভূতি ঢেলে লিখে।”

“হুম বুঝলাম। এবার চল ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করা যাক। ব্রেকফাস্ট করে এসেছিস বলে মনে হয়না।”

“রাস্তার মোড় থেকে চা খেয়েছি। ব্রেকফাস্ট পরে। আগে এই যে এতকিছু হলো! সবকিছু এখনও ক্লিয়ার করিসনি আমায়।”

জুবায়ের ফোঁস করে দম ফেললো রায়াদের কথায়। ধীরেসুস্থে লম্বা শ্বাস নিয়ে আয়াতকে বলা প্রতি-টা কথা জানালো। সব শুনে রায়াদ মৃদু হাসলো। জুবায়েরের কাঁধে হাত রেখে বললো,

“জীবনে যা হয় হয়তো ভালোর জন্য হয়। কিন্তু যা হয়, তা যে ভালো এমন টা বলবো না। সবকিছু ভালো হলে আমরা ভালোর মূল্য কখনও বুঝবো না। কারণ মনে হবে! এই তো! ভালো-ই হচ্ছে। আমাদের আর কি করার আছে? যত যাই হয়ে যাক! আমি তোর পাশে আছি।”

জুবায়ের মৃদু হাসলো রায়াদের কথায়। রায়াদকে জড়িয়ে ধরে ছেড়ে উঠে দাড়ালো। ফ্রেশ হওয়ার জন্য চলে গেলো ওয়াশরুমে। ফ্রেশ হয়ে এসে দুজনে ব্রেকফাস্ট করে বেশ কিছুদিন দুবন্ধু এক জায়গায় হওয়ায় জমিয়ে আড্ডায় মেতে উঠলো।

৬৮,
রাতের বেলায়। বাড়ির পুরুষ মানুষ সব সবাই খেয়েদেয়ে একপ্রকার শুয়েই পরেছে। শুধু আসিফা বেগম এবং ফাতেহা খানম জেগে আছেন। দুজনই রান্নাঘরে সমুচা, নুডলস, পাস্তা, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আরও কিছু খাবার বানাতে ব্যস্ত। কারণ ড্রইং রুমে মেয়েদের আসর বসেছে যেন। আয়াত, রিফা, অন্তি, রোজার সাথে আরও কিছু মেয়ে আছে। তারা রিফার ফ্রেন্ড+পাশের বাড়িতেই থাকে। মূলত সবাই হাতে মেহেন্দী লাগাতে বসেছে এই রাতে সব কাজ সেরে। সবাই উপস্থিত কিন্তু রিয়ানার দেখা না পেয়ে অন্তি বলে উঠলো,

“রিয়ানা, সে কোথায়? সবাই মেহেদী লাগাবে। সে লাগাবেনা?”

রিফা বিষয়-টা খেয়াল করে বললো,

“আমি ডাকছি ওকে।”

কিন্তু রিফার ডাকতে হলো না। এর আগেই সিড়ি দিয়ে রিয়ানাকে নামতে দেখা গেলো। তাকে দেখে সবাই অবাক যেমন, তেমনই মুগ্ধ। রিয়ানা সবার দিকে তাকিয়ে অসস্তিতে পরে গেলো। নিজের দিকে তাকালো সিড়ি বেয়ে নেমে। সাদা রঙের ব্লাউজের উপর হালকা টিয়া রঙের শাড়ি। শাড়ির মাঝে সাদার উপস্থিতি। সাদা আর সবুজের কম্বিনেশনে উজ্জল শ্যামা মেয়ে-টাকে আরও সুন্দর করে তুলেছে। একহাতে গোলাপ ও রজনীগন্ধার মিশ্রণে তৈরি গাজরা পেঁচানো। গলায় মালা এবং কপালে গোলাপের একটা কলি পরে রয়েছে। যেটা রজনীগন্ধার সাহায্যে টিকলির মতো বানানো হয়েচে। ফুলের গহনা সব তাজা গোলাপফুল এবং রজনীগন্ধার কলি দিয়ে বানানো।বাড়ির সব মেয়ের-ই এক সাজ। শপিং করতে গিয়ে কিনে এনেছে রিফা মেহেন্দীর আয়োজন করবে বলে। আয়াত ভেবেছিলো তার বোন এসব পরবেনা। এজন্য এতক্ষণ দ্বিধা নিয়ে বসেছিলো। অপেক্ষা করছিলো রিয়ানা আসার। সে আসতেই আয়াত মুগ্ধ দৃষ্টিতে নিজের বোনকে দেখছে। এই প্রথম বার রিয়ানাকে শাড়িতে দেখলো সবাই। ২১বছরের জীবনে রিয়ানা প্রথম শাড়ি পরলো। সেটা বোনের অনুরোধে। শাড়ি তো একদমই পড়তে পারেনা। আয়াত পরিয়ে দিয়েছে। রিয়ানার জিদ সে পরবেনা। পরে বোনের কথা ভেবে পরে তো নিয়েছে। আয়াত আসার আগে বলে দিয়েছিলো শাড়ি পরে হাঁটতে না পারলে খুলে রেখে আসবে। আয়াত রিয়ানার লেইট করা দেখে ভেবেছিলো তার বোন হয়তো শাড়ি পরে থাকবেনা। কিন্তু তাকে এত সুন্দর করে শাড়ি সামলে তার রেখে আসা ফুলের গহনা পরে নামতে দেখে আয়াত খুশিতে আত্মহারা। সে ছুটে এসে বোনকে জড়িয়ে ধরলো। রিয়ানা বিরক্তিমাখা কণ্ঠে বললো,

“এগুলো পরে মানুষ? কেমনে হ্যান্ডেল করিস আপু। আমি রীতিমতো বিরক্ত।”

আয়াত কিছু বলবে তার আগে বাসার কলিং বেল বাজে। সবার দৃষ্টি দরজার দিকে যায়। আয়াত এগোতে ধরলে রিয়ানা ফের বলে,

“তুই গিয়ে বোস। আমি দেখছি কে?”

রিয়ানা গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে রায়াদ। এদিকে রায়াদ দরজা খুলতেই সামনের দিকে তাকায়। তাকিয়ে রিয়ানাকে শাড়ি পরিহিত, ফুলে সজ্জিত, কোমড় ছুঁই ছুঁই এলোকেশী কন্যাকে দেখে পুরো-ই স্তব্ধ। এ তো পুরো অন্য ধাচের একটা মানুষ। দেশে আসার পর প্রথম রিয়ানাকে এই সাজে দেখে রায়াদ কথা বলার ভাষা হারিয়েছে। সে বিস্ময়পর সহিত প্রশ্ন করে বসে,

“টিয়াপাখির অবতারে সেজেছেন দেখছি। এত সুমতি কি করে হলো?”

“মিঃ রায়াদ শাহনেওয়াজ! সবসময় সবাইকে উপর থেকে যেমন-টা দেখা যায়! আদৎ এ সে তেমন হয়না সবসময়। আপনি ঠিক ততটুকু-ই জানবেন, দেখবেন, যতটুকু সে বলবে, দেখাবে। কোনো মানুষ নিজের আসল সত্তাকে লুকাতেও অন্য রকম ভাবে নিজেকে প্রকাশ করে। তার মানে এই নয় যে! সে সুমতি হীন।”

রিয়ানা দাঁত কিড়মিড়িয়ে কথাগুলো বলে দরজা ছেড়ে আয়াতদের দিকে আসলো। রায়াদ বাসায় ঢুকে দরজা লাগিয়ে আনমনে হেসে ভাবলো,

“নিজের এই সত্তাকে লুকিয়ে একটা মিথ্যা সত্তায় মুড়িয়ে রেখেছেন তবে! বেশ ইন্টারেস্টিং মিস রিয়ানা হোসাইন। আপনার সব সত্তাকেই জেনে ছাড়বো। প্রমিজ।”

চলবে?

ভুলত্রুটি মার্জনীয়, আসসালামু আলাইকুম।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here