#রঙিন_খামে_বিষাদের_চিঠি
#পর্বঃ২৬
#আর্শিয়া_ইসলাম_উর্মি
৬১,
দিন-টা সোমবার। রিয়ানা দুপুরবেলায় খাওয়া দাওয়া সেরে খাটের সাথে হেলান দিয়ে বসে কোলের উপর বালিশ নিয়ে তাতে ডায়েরী রেখে একেক-টা পাতায় চোখ বুলিয়ে চলেছে। বলা যায় এটা স্মৃতিচারণ। ৫বছরের কিছু বিশেষ দিনের স্মৃতি ব্যতিত কিছু-ই নেই এই ডায়েরীতে। তবুও রায়াদের এত জানার উৎকণ্ঠা কেন! রিয়ানা জানেনা৷ আছে আর কি এতে! বাবার করা অবহেলার কারণ। উড়নচণ্ডী জীবন কাটানোর জন্য শাসনের কিছু ঘটনা। যেগুলো হয় রাত করে বাসায় ফেরার জন্য! অথবা সিগারেট, বিয়ার, ওয়াইন খাওয়ার জন্য পাওয়া থাপ্পড়ের ঘটনা। এরপর! এরপর তো আছে আরও একটি কালো অধ্যায়। যার নাম কি বলা চলে? সাজ্জাদ! নাকি তার বদলাতে না পারার এক পরাজয়ের গল্প? এরপর আছে ধীরে ধীরে কি করে সে বুঝতে পারলো! সে সাজ্জাদকে ভালোবাসে। সেই ঘটনাগুলো। এর বেশি কিচ্ছু নেই। ডায়েরী-তে এতগুলো পাতা। অথচ কলমের কালী-তে ভরাট রয়েছে কিছু পাতা। রিয়ানা সেগুলোয় হাত বুলিয়ে ডায়েরী বন্ধ করলো। মাথা-টা খাটের বোর্ডের সাথে মাথা এলিয়ে দিয়ে হাতের দু আঙুলে কপাল চেপে ধরলো। মনের ভিতর-টায় বড্ড ধরফর করে চলেছে। নিজের অতীতের মুখোমুখি হতে চাওয়া যতটা সহজ! হওয়া-টা তত-টাই কঠিন। একেক-টা ডায়েরীর পাতা উল্টানোর পাশাপাশি চোখের সামনে দিনগুলো ভেসে উঠেছে যেন। রিয়ানা লম্বা করে কয়েক-টা শ্বাস নিলো। বিছানা থেকে নেমে ডায়েরী-টা বালিশের তলায় চাপা দিয়ে গায়ের উপর ওরনা ফেলে বের হলো রুম থেকে। এরআগে সাজ্জাদের বিয়ে-তে এসে বাবা আর বোনকে যে অপমান সহ্য করতে হয়েছিলো! সেই ঘটনা আবারও পুনরাবৃত্তি হোক! রিয়ানা একদম চায় না। এজন্য যত অসস্তি-ই লাগুক না কেনো? সে থ্রিপিস, নরমাল ভাবে লং ফ্রক, স্কার্ট, টপসের সাথে স্কার্ফ পরার চেষ্টা করে। আজও তার ব্যতিক্রম হয়নি। টকটকে লাল রঙের এক সুতির থ্রিপিস চাপিয়েছে শরীরে। কিন্তু রুম থেকে বের হওয়ার সাথে-ই রিয়ানার দেখা হয়ে যায় রোজার সাথে। রোজা চিল্লিয়ে রিয়ানাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,
“রিয়ুপি, তোমায় যে কত্ত মিস করেছি গো। বলে বোঝাতে পারবোনা।”
রিয়ানা রোজা-কে দেখে অবাক হলেও পরে মনে পরে শুক্রবারে আয়াতের বিয়ে। সেজন্য রোজার আগমন অযাচিত নয়। সে রোজাকে জড়িয়ে তার পিঠে হাত রেখে বলে,
“এত মিস করো না। চলে গেলে মায়া লাগবে। আর আমার মাঝে মায়ার টান বড্ড কম। তোমার মন ভালো করতে চলে আসতেও পারবো না। আবার ফোনে কনটাক্ট! সেটাও করতে পারবো না। আমি যেখান থেকে পদচারণ উঠাই! সেখানে ২য় বার ফিরি না সহজে। অতি দরকার না হলে তো একদমই পা ফেলতে রাজী না আমি।”
রিয়ানাকে ছেড়ে সরে দাড়ালো রোজা। গাল ফুলিয়ে বললো,
“আমি তোমার ছোট্ট বোন। এটা তুমি ভুললেও আমি ভুলতে দিবো না ”
“আমার এই বিষয়-টা একদম পছন্দ নয় রোজা। যে যাওয়ার, সে এমনিই যায়। তাকে যেতে দেওয়া উচিত। তার থাকার হলে! মনে রাখার হলে এমনিই রেখে দিবে। জোড় করে মনে করানোর দরকার নেই।”
“কিন্তু যাকে ভুলতে গিয়ে বারবার মনে পরে যায়? তার ক্ষেত্রে কি বলবেন আপনি?”
রোজা আর রিয়ানার কথার মাঝে আচমকা সাজ্জাদের উপস্থিতি আর তার কথা শুনে রিয়ানা ঘাবড়ালেও তা আড়াল করলো। মুচকি হেসে বললো,
“কিছু মানুষ থাকে-ই এমন। তাদের মনে রাখতে হয়না। থেকে যায়। তাদের ভুলতে হয় না। সময় এমনি-ই ভুলিয়ে দেয়। ভোলার চেষ্টা করলে বারবার মনে করিয়ে সাপের দংশনের মতো ব্যথা দেয়। তাই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা ছেড়ে দেওয়া উচিত। সময় ভুলিয়ে দিবে। সময় সবকিছুর উত্তর সুন্দর ভাবে দেয়।”
৬২,
রিয়ানা কথাগুলো বলে স্থান ত্যাগ করতে পা বাড়ায়। সাজ্জাদ অফিস থেকে ফিরেছে সবে। আয়াতের বিয়ের শপিং করতে যাবে সব। এজন্য আসিফা বেগম তাকে কল করে বাড়িতে এনেছে। সাজ্জাদ গলার টাই ঢিল করতে করতে রুমের দিকে পা বাড়ালো। রোজা দুজনের কথার আগামাথা কিছু না বুঝে-ই রিয়ানার পিছু দৌড় লাগালো। রিয়ানা ততক্ষণে রিফার রুমে এসেছে। রোজা অনুমতি ব্যতিত কারোর রুমে ঢুকতে চাইলো না। সে আয়াতের কথামতো উপরে এসেছিলো রিয়ানাকে দেখতে। যে পথে এসেছিলো, সে পথেই নিচে নেমে গেলো সে। এদিকে রিফা ফোনে কারোর সাথে কথা বলায় ব্যস্ত ছিলো। রিয়ানা ঢুকেছে লক্ষ্য করে সে কথার সমাপ্তি টেনে রিয়ানার পাশে বসে। রিয়ানা আলতো হেসে বলে,
“আমার জন্য কথা স্টপ করলেন? সমস্যা ছিলো করে দিলাম এসে?”
“না রিয়ু, ইট’স ওকে। ভার্সিটি ফ্রেন্ড। ক্লাসে যাই না। এজন্য কল করেছিলো। তোমার কিছু দরকার আছে?”
“হ্যাঁ, একটু দরকার ছিলো।”
“কি দরকার বলো?”
“আমার আসলে একটা কথা জানার ছিলো। আর একটা জিনিস নেওয়ার ছিলো।”
“কি কথা? আর কি জিনিস?”
“একচুয়ালি আই ওয়ান্ট টু নো দ্যাট, আপনি ঐদিন সাজ্জাদ ভাইয়ের সম্পর্কে এতকিছু আমায় জানালেন। আমায় নিয়ে তার ফিলিংস জানালেন! সাজ্জাদ ভাই শেয়ার না করলে তো আর আপনি সব-টা জানতেন না। ভাই শেয়ার করেছিলো? আর আমার একটা কলম লাগতো।”
“ভাইয়া আর আমার বন্ডিং এজ লাইক বেস্টফ্রেন্ড। আমার ভাইয়া আমার কাছে এসে বাচ্চাদের মতো হয়ে যায়। মায়ের কোলে মাথা রেখে যেমন কেঁদেছে। আমার কোলেও মাথা রেখে কেঁদেছে। এভরি সিঙ্গেল সেকেন্ড! আমার ভাইয়ার প্রতিটা কষ্টের সাক্ষী হয়েছি। সেই দিক থেকে বলতে গেলে তোমার উপর আমার রাগ করা উচিত। আমার ভাইয়াকে কি একটু ভালোবাসা যেত না রিয়ু?”
রিয়ানা দমে গেলো রিফার প্রশ্নে। পরপর কয়েক-টা ফাঁকা ঢোক গিললো। ভালোবাসা যেত না কি? ভালোবাসা যেত কি যেত না! তা তো পরের বিষয়। সে তো ভালোবেসে ফেলেছে। সেটা দেরীতে উপলব্ধি করেছে। যার পরিণাম এত যন্ত্রণা। কে পারে ভালোবাসার মানুষকে অন্যের সঙ্গে সংসার করতে দেখে। একপাক্ষিক ভালোবাসা! তা বাসতেও তো দম লাগে। ভালোবাসার মানুষকে অন্যের পাশে সহ্য করা! তার ছোয়ায় অন্য কাউকে সুখ পেতে দেখা! এসব দেখেও সবার সামনে নরমাল থাকা! এত সহ্য শক্তি আদৌও কারোর হয়? তার ভালোবাসার মানুষ-টাও একসময় তাকে ভালোবাসতো। জেনেশুনে ভালোবাসাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া! এরপর ভালো থাকার চেষ্টা করা? এত সহজ কি? রিয়ানা এসব ভাবতে চাইলো না। তার ভেতরটায় হাঁসফাঁস করে উঠলো। রিয়ানা নিজেকে শক্ত করে বললো,
“আপু কলম-টা? একটু দিবেন? আমি রুমে যাবো।”
রিফা বুঝলো রিয়ানা বিষয়-টা এড়িয়ে যেতে চাইছে। সে তার পড়ার টেবিল থেকে একটা কলম এনে রিয়ানার দিকে এগিয়ে দিলো। রিয়ানা কলম নিয়ে বেরিয়ে আসলো রুম থেকে। রিফা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। আলনা থেকে নিজের কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। যা গরম! পানির নিচে সারাদিন ডুব দিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে তার। রিয়ানা রুম থেকে বেরুতে-ই ধাক্কা লাগলো রায়াদের বাহুর সাথে। রিয়ানা কপালে হাত দিয়ে রায়াদকে দিকে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। রায়াদ হকচকিয়ে যায় হঠাৎ এমন হওয়ায়। সে ঘুরে রিয়ানার দিকে তাকালে রিয়ানা বলে উঠে,
“একটা জলজ্যান্ত মেয়ে একটা রুম থেকে বের হচ্ছে। এটা দেখেও কি একটু থামা যায়নি?”
“স্যরি, ভুল-টা আপনারও। আমি আসছি দেখেও কি একটু ধীরে রুম থেকে বের হওয়া যায়নি?”
“সিনেমা পেয়েছেন এটা? ঝগড়া কেন শুরু করেছেন?”
“এটা সিনেম্যাটিক কোনো সীন নয় যে এখন ঝগড়া করতে করতে প্রেমে পরে যাবো। সে স্যরি! ফল্ট আপনার। আমার নয়।”
“এখানে প্রেমের কথা আসলো কোথা থেকে? আর স্যরি বলবো আমি? পাগল নাকি?”
” আমি নই, আপনি পাগল। বদ্ধ উন্মাদ। যে সুস্থ মানুষের ভাণ ধরে অসুস্থ একজন মেয়ে হয়ে সবাইকে পাগল বানাতে নেমেছেন নিজের মেজাজ দেখিয়ে।”
৬২,
রিয়ানার সহ্য হলো না রায়াদের কথা। এই লোককে সে শুরু থেকে পছন্দ করেনা; তার অযাচিত শাসন আর ভাষণের জন্য। সে দেওয়ালের সাথে কলমের মাথা লাগিয়ে লীক করলো। এরপর কালী ছুড়লো রায়াদের পরনে থাকা সাদা শার্টের উপর। একে তো এতো গরম! তাতে পাগল হবার যোগার। এজন্য রায়াদ নিজের পছন্দের সাদা শার্ট পরেছিলো। সেই শার্টে রিয়ানা কালী দিয়ে মেখে দিয়ে পরার অযোগ্য করে তোলায় সে রাগে চোয়াল শক্ত করে ফেললো। রিয়ানার হাত ধরে মুহুর্তে দেওয়ালের সাথে চেপে দাড়ালো। দাঁতে দাঁত পিষে শুধালো,
“এটা কি করলেন আপনি? আমার এত পছন্দের শার্ট আপনি নষ্ট করে দিলেন?”
“দেখতেই তো পাচ্ছেন। তাতে এভাবে দেওয়ালে চেপে বলার মানে কি? ছাড়ুন আমার হাত। সরুন সামনে থেকে।”
রিয়ানার জবাবে রায়াদের রাগ কমলোনা। উল্টে তরতর করে বাড়লো। একে তো এ মেয়ে ভুল করেছে। আবার গলা উঁচিয়ে কথা বলছে! রায়াদ চোয়াল শক্ত করে বললো,
“মেয়ে মানুষ, নরম স্বভাব নিজের মাঝে বজায় রাখতে হয়। এত ঝাঁজ কেন? নরম দুই গালের মাঝে থাকা মুখটার নরম ঠোঁটে কি নরম কথা ফুঁটে না? সব-টা সময় তেজ? এত তেজ কেন হ্যাঁ?”
রায়াদের কথা ফুরোতেই রিয়ানা অদ্ভুদ এক কাজ করে বসলো। এক হাত রায়াদের হাতে বন্দী থাকলেও অন্য হাতে সে রায়াদের কলার টেনে ধরলো। রায়াদের পায়ের উপর পা দিয়ে দাড়ালো। রায়াদের ঠোঁটে দিকে ঠোঁট বাড়িয়ে চোখে চোখ রেখে বলল গলায় ব্যঙ্গাত্মক সুর ফুঁটিয়ে বললো,
“কেন? মেয়েদের তেজ থাকতে নেই বুঝি? নরম গালের মাঝে থাকা মুখের দুই ঠোঁটে কি শুধু লীপ করতে হয়? তাছাড়া কিছু বলা যাবেনা ঝাঁজের সহিত?”
রায়াদ রিয়ানার আকস্মিক এহেন কান্ডে পুরোই বরফ বনে গেছে। মুখের কথা, রাগের তেজ সব গলে পানি। সে রিয়ানাকে ছেড়ে ছিটকে সরে গেলো। আর একটা কথা-ও খরচ করলো না। হনহনিয়ে হেঁটে সোজা হানিফ হোসাইনের রুমে ঢুকলো। তার বাবা এসেছে বলে হানিফ হোসাইনকে ধরে নিচে নিয়ে যেতে উপর তলায় এসেছে সে। আসতেই এরুপ কান্ড ঘটলো। রায়াদের নিজের-ই এবার লজ্জা লাগছে। একটা মেয়ে এতটা নির্লজ্জ কি করে হতে পারে! আন্দাজও করতে পারছেনা রায়াদ। উপরতলায় উঠতেই প্রথমে রিফার রুম, এরপর আয়াত-রিয়ানার, তারপর সাজ্জাদ-অন্তির। এরপরের-টা হানিফ হোসাইনের। সেদিকে যেতে ধরেই এইরুপ এক কান্ড ঘটে বসলো। এদিকে রায়াদ যেতেই রিয়ানা হেসে উঠলো। বিরবির করে বললো,
“জানি তো মিঃ রায়াদ শাহনেওয়াজ। আপনার দৌড় এতদূর অব্দি। আমার যেটুকু না লজ্জা আছে। তার চারগুণ বেশি আপনার লজ্জা। জোড়াজুড়ি করে শক্তি খরচ করার কোনো মানে হয়? যেখানে আপনাকে ঘায়েল করার পদক্ষেপ-ই জানি। ছেলে-দের সাথে মেয়ে-রা তো শক্তিতে পেরে কখনও উঠে না। তাদের প্রতিঘাত করার একটা-ই উপায় দু্র্বল জায়গায় আঘাত করা। তা হোক কথার আঘাত বা ব্যথার আঘাত।”
রিয়ানা হাসিমুখে রুমের দিকে পা বাড়ালো। রুমে ঢুকতেই দেখলো অন্তি তার বিছানায় বসে আপেল কামড়াচ্ছে। সে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেই অন্তি বলে উঠলো,
“হাতে হাত বন্দী, পায়ে পা, চোখে চোখ আর ঠোঁটের পরশ খানিক-টা দূরে। চরিত্রে দোষ একার আমার নয়। তোমারও তবে আছে রিয়ানা।”
৬৪
বুদ্ধিমতী রিয়ানা বুঝে গেলো অন্তি রায়াদের সাথে তাকে দেখেছে। সে ঘাবড়ালো না। অন্তির পাশে বসে ঠোঁটের কোণে বিস্তর হাসি ফুঁটিয়ে বললো,
“আপনার মতো লো ক্লাস টাইপ চরিত্র আমার নয় ভাবী। আমি পালাইনা। যা করি সরাসরি। আর একটা মজার কথা জানেন? আমি এঔ ছোট্ট জীবনে সহস্র ছেলের সাথে ফ্লার্ট করেছি। এটা তার-ই ছোট্ট নমুনা। আই হোপ, বিষয়-টা ক্লিয়ার। নাউ লীভ ফ্রম মাই রুম।”
শেষের কথা-টা রিয়ানা শক্ত কন্ঠেই বললো। রিয়ানার জবাবে তার মুখ-টা চুপসে গেলো। আরও ২-৪কথা বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগে অন্তিকে ডাকার শব্দ ভেসে আসলো। দরজার বাইরে দাড়িয়ে সাজ্জাদ তাকে ডাকছে। রিয়ানা আবার একদফা হাসি প্রসস্থ করলো। বললো,
“আমার কাছে অপমানিত হওয়ার ঢের সুযোগ আছে ভাবী। এখন যান, স্বামীর সেবা করুন। মনে আছে তো! পার্ফেক্ট কাপল হতে হবে। দম থাকলে হয়ে দেখিয়ে আমায় কথা শোনাতে আসবেন? ওকে? নাউ বাই।”
রিয়ানা নিজেই হাত ধরে অন্তিকে দরজার বাইরে বার করে দিয়ে দরজা ঠাস করে লাগিয়ে দিলো। অন্তি সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে রাগী গলায় বললো,
“দেখলেন! আপনার সাধের ভালোবাসার চোখে আমার সম্মান কতটুকু? দেখলেন আপনি?”
“যেচে অপমানিত হতে আসো কেন অন্তি? ভাবী হও সম্পর্কে! তেমন বিহেভ করতে পারো না? তবে তো রিয়ানা তোমায় সম্মান দিবে? টিপিক্যাল ভাবী যারা ননদদের দেখতে পারে না! এমন বিহেভ কেন করতে যাও?”
“সম্পর্ক-টা ননদ অব্দি থাকলে ঠিক ছিলো। তার সীমা পেরিয়ে সে তো আমার হতে হতে না হওয়া সতীন।”
অন্তির কথায় সাজ্জাদ আর নিজেকে সামলাতে পারলো না। অন্তির হাত ধরে টেনে রুমে এনে দরজা লাগিয়ে দিলো। অন্তি ঘাবড়ে যায়। সাজ্জাদ অন্তিকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। বুকের সাথে অন্তির মাথা-টা চেপে ধরে বলে উঠে,
“ট্রাস্ট মি বউ, ঐ মেয়ে-টার জন্য আমার অনুভূতি ঐ যে ঢিপঢিপ শব্দ শোনা যায়!সেখানের কোথাও একটা দাফন হয়ে গেছে। সব-টা জুড়ে তোর বসবাস আনার চেষ্টায় নেমেছি। এত বার আঘাত কেন দিস বারবার মনে করিয়ে দিয়ে? থাক ও ওর মতো। আমি আমার মতো তোকে নিয়ে একটু ভালো থাকি? ৪টা বছর পেরিয়ে গেছে। ৪বছর আগে তাকে ভালোবাসি বলেছিলাম। ফিরিয়ে দিয়েছে। মেনে নিয়েছি। বিরক্ত করিনি। ২টা বছর তাকে নিয়ে ভাবতাম। তুই জীবনে জড়িয়ে যাওয়ার পর ভুলতে যাওয়ার পথে হাঁটছি। এবার একটু আমায় বোঝ। আমায় সাহায্য কর তাকে ভুলে যেতে। কথায় কথায় আর খোঁচা দিস না অন্তি। আমার সহ্য হয়না। আমিও তো মানুষ। রোবট না। একটু বোঝার চেষ্টা কর আমায়।”
অন্তির চোখে জল এসে পরে সাজ্জাদের হাহাকারে। এই মানুষ-টা বিয়ের আগে যেমন তাকে তুই বলতো! সেই সুর খুঁজে পেলো তার কথায়। মনে হলো তার পুরোনো সাজ্জাদ ভাই। তবে কাজিন নয় স্বামী। এটাই পার্থক্য।সে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে। কান্নামিশ্রিত গলায় বলে,
“কি করবো আমি! বারবার ঐ মেয়েকে দেখলে মনে হয় আবার আপনাকে আমার থেকে কেড়ে নিবে। ওর ব্যক্তিত্ব, চলাফেরা! নরমালই বেশিরভাগ ছেলেই আর্কষিত হবে। সেখানে তো আপনি ওকে একসময় ভালোবাসতেন। আমার অতীতে করা হীনকাজ! বারবার মনে হয় আমায় ছেড়ে আবার ওকে ভালোবাসতে শুরু করবেন আপনি।”
“পাগলিরে! তোরে ছেড়ে দেওয়ার হলে অনেক আগেই ছেড়ে দিতাম। একটা পশুর সাথে থাকতে থাকতে তার প্রতিও মায়া পরে। তুই তো সেখানে মানুষ। ২বছর হয়ে গেছে এক পবিত্র বাঁধনে বেঁধে পরেছি দুজন। তোকে ছুঁয়েছি। তোর শরীরের ভাঁজে আমার ছোঁয়া যেখানে লেগে আছে, সেখানে মায়া কি লাগেনি? জীবনে ১ম কাউকে ভালোবাসলে এক যুগ পরেও তার মুখোমুখি হলে একটু মনে পরেই। মনে জ্বলেও। তার মানে তো এটা না যে নিজের বর্তমান ভবিষ্যত ছেড়ে সেই অতীতকে কেউ আকড়ে ধরে! কবে বড় হবি আর? ২১তো হয়ে আসলো। এবার একটু মাথায় বুদ্ধি আন। আমায় একটু বোঝ। এই সম্পর্কের বোঝা একা বয়ে বেড়াচ্ছি। এবার আমায় একটু সামলা! আমি হাঁপিয়ে উঠেছি। রিয়ানা আমার চাচাতো বোন। সেই হিসেবে টুকটাক যা কথা আর দেখা হওয়া! সেটা তো আঁটকানো সম্ভব না। তার মতো সে আছে থাকুক। বললি না তার ব্যক্তিত্ব! ঐ ব্যক্তিত্ব-ই কখনও তোর থেকে তোর স্বামীকে কেড়ে নিতে দিবে না। একটু তো বোঝার চেষ্টা কর।”
অন্তি সাজ্জাদের কথায় ভরসা পেলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো তাকে। সাজ্জাদ অন্তিকে বোঝাতে পেরে নিজেও হাফ ছাড়লো। অন্তির কপালে চুমু খেয়ে বললো,
“রেডি হয়ে নেও বউজান। আয়াতের বিয়ের জন্য শপিং এ যেতে হবে।”
অন্তি মুচকি হাসলো। ঝট করে সাজ্জাদের পায়ে পা রেখে দাড়িয়ে তার কলার টেনে ধরে ঠোঁটে চুমু দিয়ে বসলো। সাজ্জাদ হাসলো অন্তির পাগলামিতে। অন্তি হেসে বললো,
“এটা আমার স্বামী। তার চিহ্ন বসিয়ে দিলাম। তার উপর শুধু আমার অধিকার থাকুক।”
এরপর সাজ্জাদকে ছেড়ে সে রেডি হতে চলে গেলো। সাজ্জাদ নিজেও হেসে বাইরে আসলো। ড্রইং রুমে নেমে সবাইকে বললো তৈরি হতে। শপিং করতে যাওয়া হবে।
চলবে?
ভুলত্রুটি মার্জনীয়, রিচেইক করিনি আজ। 😮💨আসসালামু আলাইকুম।