#রক্ষিতা
#আশুথিনী_হাওলাদার (ছদ্মনাম)
পর্ব-১১
সকাল সকাল উঠে ডাইনিং এ খাবার সাজাচ্ছিল অর্ঘমা। আজ নাকি বাড়িতে গেস্ট আসবে। তবে কারা আসবে জানা নেই অর্ঘমা নিফানের আদেশ রান্নাবান্না করে খাবার সাজিয়ে রাখে ডাইনিং এ। প্রায় মাস খানেক হলো তারা চট্টগ্রাম থেকে ফিরেছে। অর্ঘমা আর নিফানের সম্পর্কে উন্নতি না হলেও এরপর আর অবনতি হয়নি। নিফান রাতে এখিন তারাতাড়ি বাড়ি ফেরে। ড্রিংকও করেনা। অর্ঘমার সাথে তেমন খারাপ ব্যাবহারও করেনি। ঘরে মেয়েও আনেনি। উরভুশির সাথেও তেমন একটা দেখা যায়না তাকে। সেদিনের পর নিফান অর্ঘমার কাছেও এখন অব্দি যায়নি। এক ঘরে এক বিছানায় ঘুমলেও দু’জনের ভিতর দূরত্ব ছিল অনেক। এর মধ্যে অর্ঘমা তার দাদুম কে দেখে আসে কয়েক বার হাসপাতালে গিয়ে। সুস্থতা না হলেও মোটামুটি আছে। শরীরে প্রান তো আছে। এটাই অনেক অর্ঘমার কাছে। আপনজন বলতে তো এই একজন আছে।
দরজা খোলার শব্দে সেদিকে আগায় অর্ঘমা। অবাক হয় অর্ঘমা বহু বছর পর আরাফ কে দেখছে। মলিন হেসে বলে,
__“আরে আরাফ ভাই যে বহুবছর পর দেখা।
আরাফ হাসার চেষ্টা করে বলে,,
__‘হ্যা তোমাকেও দেখলাম অনেক বছর পর তা ভালো আছো?
গাল ভর্তি করে হাসে অর্ঘমা। পাশে নিফান কে আঁড়চোখে দেখে। বলে,
__‘হ্যা বেইমানরা একটু বেশি’ই ভাল থাকে। যেমন দেখেন আপনার বন্ধু বা আপনি।
আরাফের হাসি হাসি মুখ চুপসে যায়। নিফান পরিস্থিতি সামলাতে বলে,,
__‘আরাফ চল ভিতরে চল।
অর্ঘমা আর দাঁড়ায় না ভিতরে চলে যায়। তার ঘৃন্য লাগছে আরাফের সামনে দাঁড়াতে। দুই বন্ধুই প্রতারক নিফান ঠকালো তাকে। আরাফ ঠাকালো তার বান্ধুবিকে। দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্ঘমা। ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে বেশ কিছু দিন ধরে শরীর খারাপ লাগছে। জ্বর জ্বর লাগছে। শোয়া মাত্র ঘুমিয়ে পরে অর্ঘমা।
__‘একটু বেশি হয়ে যাচ্ছে না নিফান? অর্ঘমার সাথে এজটু বেশি করছিস না?
দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিফান। যখন অতীত মনে পরে তখন সে নিজের কন্ট্রোলে থাকে না। তাই সব রাগ অর্ঘমারকে দিয়ে ঝাড়ে।
__‘কি করবো বুঝতে পারছিনা। অতীত ভুলতে পারছিনা আমি। অর্ঘকে ছেড়ে থাকাও আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ওকে ছেড়ে থাকবো ভাবলেও আমার নিশ্বাস আটকে আসে।
__‘কিন্তু তুই তো মেয়েটাকে মেরে ফেলবি নিফান।
কথাটা বুকে গিয়ে লাগে নিফানের। ব্যথিত চোখে তাঁকায় আরাফের দিকে।
__‘দেখেছিস একবারও অর্ঘমাকে ভালো করে? কি হাল করেছিস ওর? চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে। মেয়েটা শুকিয়ে কাঠ হিয়ে গেছে। সব চেয়ে বড় কথা অর্ঘমা তোকে ভালবাসে। আর ভালবাসে বলেই এতো কিছুর পর ‘ও’ তোর বউ হয়ে আছে। তুই কিন্তু ঠিকি ডিভোর্স পেপার রেখে গিয়েছিলি অর্ঘমা তাতে সাইন করেনি। কারন সে তোকে ভালবাসত। তোর জন্য অপেক্ষা করেছে। সে চাইলেই তোকে ডিভোর্স দিয়ে অন্য কারো সাথে নিজের লাইফ সেটেল করতো পারতো। দোষ অর্ঘমার ভাইয়ের ছিল অর্ঘমার নয়। তবুও তাকে সে দোষের শাস্তি একবার দিয়েছিলি।
মাথার চুল খামছে ধরে নিফান। বুকের যন্ত্রনা কাউকে বুঝাতে পারছে না সে। অর্ঘমাকে কষ্ট দিয়ে সেও ভালো নেই। কিন্তু যখন বোনের ঝুলন্ত দেহ টা চোখের সামনে ভাসে নিজের রাগ সামলাতে পারেনা সে। অভ্রর বোন হিসেবে সব রাগ গিয়ে অর্ঘমার উপরে পরে। টনক নড়ে নিফানের। অভ্র কই? অর্ঘমা একা কেন? তার মা-বাবা কোথায়? অভ্রও বা কোথায়? তারা থাকতে অর্ঘমা কেন তার দাদির চিকিৎসার জন্য এত মরিয়া হয়ে পরছে। জিব্বা ঠোঁট ভিজায় নিফান। ভিয় হচ্ছে কোন ভুল করে ফেলল না তো।
নিফান কে ছটফট করতে দেখে আরাফ নিফানের ্্ত ধরে প্রশ্ন করে,,
__‘কি হলো এমন করছিস কেন?
নিফান নিজেকে শান্ত করে বলে,
__“কিছু না। খাবি চল। অর্ঘমা রান্না করেছে তোর জন্য।
আরাফ হেসে প্রশ্ন করে,
__“তাহলে তা খাওয়ার যোগ্য হবে?
মুচকি হাসে নিফান। বলে,,
__খেয়ে দেখ।
নিফান আরাফের কাঁধে হাত দিয়ে ডাইনিং এ যায়।
আরাফ বলে,,
__“অর্ঘমা কোথায়? সে আসবে না?
হাসে নিফান। হেসে বলে,,
__‘তোর মনে হয়? তোকে দেখে ‘ও’ এখন এখানে আসবে৷ দেখলি তো বলে গেল। দুই বন্ধুই বেইমান।
হাসে আরাফ। খেতে বসে কিছুটা অবাক হয়। এত এত রান্না অর্ঘমা করেছে সত্যি’ই অবাক করার বিষয়।
আরাফ কখনো ভাবেনি অর্ঘমার হাতের এতো ভাল রান্না সে খেতে পারেবে। বন্ধুর বউয়ের হাতের রান্না খাওয়ার সাঁদ তার নিফান অর্ঘমার বিয়ের পরের দিন মিটে গিয়েছিল।
দাদুকের লাশের পাশে চুপ করে বসে আছে অর্ঘমা। দাদুমও তাকে ছেড়ে চলে গেল। নিজের বলতে কেউ রইলো না আর। তাচ্ছিল্য হচ্ছে উপর। এত বড় পৃথিবীতে তার কেউ নেই। বুকের ভিতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে কিন্তু তা বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই। চুপচাপ বসে আছে। নিহিতা আগলে নেয় তাকে। নিহিতার বুকে মাথা রেখে দাদির লাশটাকে দেখছে৷ কি হবে এর পর তার? কেউ তো নেই? কার কাছে যাবে সে? আল্লাহ তার সাথে কেন এমন করছে। সব কেড়ে নিলো? সব? তাকে কেন নিলো না? এক বারও মনে হলো না এই মেয়েটার তো আর কেউ নেই। কি না করেছে সে। দাদুম কে বাঁচানোর জন্য “রক্ষিতা” অব্ধি হয়েছে। নিজের শরীর কে প্রতিরাতে-দিনে নিফানের কাছে বিলিয়ে দিয়েছে। নিজেকে বাজারি মেয়েদের মতো ট্রিট করছে। নিজেকে নতুন ভাবে সাজিয়ে তুলেছে। নিফানের মন মতো হওয়ার জন্য। প্রতিরাতে নিজের শরীরকে বিলিয়ে দিয়েছে স্বামীর কাছে না স্বামী রুপি ক্লাইন্ডের কাছে। নিজেকে পতিতাদের জায়গায় অব্দি টেনে নিয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন এটা শুনতে হয়েছে যে সে ঘরের বউ নয় টাকায় কেনা “রক্ষিতা”। শুধু কিছু টাকার জন্য৷ সেসব কিছুর কারন তো এই একজন ছিলো। তাকেই বাঁচাতে পারলো না সে।
দাদুমের কবর বাবা মা-ভাইয়ের কবরের সাথে দেয় অর্ঘমা। চার জনের কবরের সামনে হাটু গেরে বসে থাকে সে। এখানে চারটা কবরের জায়গায় পাঁচঅটি কবর হলে কি খুব ক্ষতি হতো? সবাইকে যখন নিলো। তখন আল্লাহ তাকে কেন বাদ রাখলো।
নিহিতা টেনে তুলে অর্ঘমাকে। ঘরে নিয়ে যায়। এক বছরের বেশি সময় পর নিজের বাড়িতে পা রাখলো অর্ঘমা। সব আগের মতো আছে। তার মাম্মামের সাজানো সংসার সব ঠিক এক’ই রকম সাজানো শুধু মাম্মাম নেই। পাপা ভাইয়াও নেই দিদুমও গেল। চারপাশে একবার তাঁকইয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকে দেয় অর্ঘমা। নিহিতা বাধা দেয়না। এখন একটু একা থাকা দরকার। নিহিতা কাজের লোক ডেকে ঘর পরিষ্কার করায় বহুদিন মানুষের আনাগোনা না থাকায় ধুলোবালি জমে গেছে ফ্লাটে । ভুতুরে বাড়ি মনে হচ্ছে। কিন্তু একসময় এই ফ্লাটে ছয়-সাত জন মানুষ বাস করতো। নানা মানুষের আনাগোনা হতো। বুকে চিরচির করে ওঠে নিহিতার। অর্ঘমার কষ্ট একটু হলেও উপলব্ধি করতে পারছে সে। ড্রইংরুমের এক পাশের দেয়ালে দিকে তাঁকায় নিহিতা। পরিবারের সবার ফটো গুলোতে হাত বুলায় নিহিতা। সব আছে শুধু মানুষ গুলো নেই। একটা পরিবার এভাবে শেষ হতে পারে? এভাবে?
চলবে