#রংধনুতে_প্রেমের_বাড়ি
#পর্ব_১৭
#ফারজানা_মুমু
অক্ষর আবারও বলতে শুরু করল, চয়ন তুমি কয়েকদিন আগে প্রশ্ন করেছিলে আমার সাথে আমার বাবার সম্পর্ক ভালো নয় কেন? আজ বলছি, আমার সাথে আমার বাবার সম্পর্ক ভীষন ভালো সুমধুর। মা-বাবা সব সময় আমায় নিয়ে গর্ববোধ করে। তোমাদের সকলের সামনে আমি গম্ভীর, শান্ত কিন্তু আমার বাবা-মায়ের সামনে আমি ঠিক ততটাই চঞ্চল। চৈতিকে দেখার অনুভুতি প্রথম আমি আমার মা-বাবাকে জানাই। ওনারা দারুণ খুশি হয়েছিলেন শুনে। এই যে কয়েকদিন আগে বাবার অসুস্থতার কথা শুনে তোমরা দেখতে গিয়েছিলে মূলত সেদিন বাবা অসুস্থ ছিলেন না। ওনি চৈতিকে দেখার জন্য মিথ্যা সংবাদ পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আফসোস চৈতির তখন পরীক্ষা থাকে।
ছোট্ট একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে আবারও বলে অক্ষর, আমি মানুষটাই এমন। নিজের অনুভুতি সকলের সামনে প্রকাশ করতে পারি না।
অক্ষরের কথা শেষ হলে চয়ন হতবুদ্ধি হয়ে যায় সবকিছু শুনে। যে লোকটার প্রতি ছিল তার বিষাদ রাগ আজ সেই লোকটার বাস্তবতা শুনে অবাক হলো। অজান্তেই মনেমনে স্যালুট জানালো।
চয়নের হঠাৎ একটি কথা মাথায় চলে আসলো, চট করে বলে উঠল, শাহীনকে কেন মে’রে’ছে’ন আপনি?
অক্ষর জবাব দিল, শাহীন চৈতিকে বি’রক্ত করতো। প্রথমে তাকে ভালো মত বুঝিয়ে বলা হলো কিন্তু সে মানেনি। এ’সি’ড মা’রা’র পরিকল্পনা ছিল। পথের কাঁ’টা রাখতে নেই তাই মে’রে দিয়েছি তাছাড়া শাহীনের নামে ধ’র্ষ’নের পাঁচটি মা’মলা ছিল। কিন্তু আইন তাঁর চুল পর্যন্ত ছিঁড়তে পারছিল না কারণ তাঁর চাচা এমপি। ভাবলাম আরেকটা অপ’রাধ করার আগেই তাকে সুন্দর পৃথিবী থেকে বি’দায় করি।
খু’ন করার পর মানুষ এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে জানা ছিল না চৈতির। বিস্ময় চক্ষে শুধু দেখছে এবং গিলছে। চয়নের হঠাৎ মনে হলো আলিফের কথা। আলিফ যার সাথে চৈতির বিয়ের কথা চলছিল। আলিফ সুস্থ হবার পর একবার দেখতে গিয়েছিল চয়ন। চয়নের যাওয়ার উদ্দেশ্য হলো কে তাকে মে’রে’ছে জানার জন্য। আলিফ যখন হা’ম’লা’কা’রী’র বর্ণনা দিল চট করে চয়নের চোখের সামনে অক্ষরের মুখশ্রী ভেসে উঠল। সাথে সাথে মোবাইল বের করে অক্ষরের ছবি দেখাতেই আলিফ সায় দিল এই সেই লোক। তখনই সন্দেহ হয় অক্ষর-চৈতির ব্যাপারে। কিছুদিন নজর রাখার পর যখন প্রমাণ পাচ্ছিল না তখনই প্ল্যান করে ঝুমুরকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। প্ল্যান অনুযায়ী কাজ হলো। জানতে পারলো সত্যিটা। গোপন একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে আবারও প্রশ্ন করল চয়ন,
-” আলিফকে কেন মে’রে’ছে’ন? ওর তো দোষ ছিল না।
সহজ উত্তর দিল অক্ষর, ওর সাথে প্রথমে ভালোই ব্যাবহার করেছি কিন্তু আলিফ আমার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। বারবার বলেছিলাম চৈতির সাথে বিয়েতে অমত পোষণ করতে কিন্তু বেচারার চৈতিকে এত ভালো পছন্দ হয়েছে যে সে নাকচ করল আমার প্রস্তাব। যাকে এতদিন ধরে ভালোবেসে এসেছি। এখনও তাকে ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতে পারিনি ওই দুইদিনের ছেলে কিনা সহজেই পেয়ে যাবে আমার প্রেয়সীকে? মানতে পারলাম না। আমার রাগ সম্পর্কে তুমি খুব ভালো মতোই জানো চয়ন। সহজে বলার পর রাজি না হলে আমি কত ভ’য়ংক’র হতে পারি নিজ চোখে দেখেছো তুমি। তবে আলিফকে আমি মে’রে’ছি বেশি নয় তবে ওর মনে ভ’য় প্রবেশ করাতে পেরে আমি আনন্দিত।
অক্ষরের মুখে ফুটল ভ’য়ংক’র হাসি। চৈতি কেঁপে উঠল সেই হাসিতে। আজকের অক্ষরকে সে চিনতে পারছে না। তার সামনে বসা অক্ষরকে দেখে ওর ভ’য় হচ্ছে কই আগের অক্ষরকে দেখে তো তার ভ’য় হতো না। তখন তার মনে বাসা বাঁধতো শুধু ভালোবাসা।
ঝুমুর-চৈতির হাত চেপে ধরলো। সে জানতো তার ভাই ব’দরা’গী কিন্তু আজ? আজ তো নিজের ভাই ও স্বামীর আসল রূপ দেখে ভ’য় পাচ্ছে।
সবকিছু খোলাসা হবার পর চয়ন বলল, ঝুমুরকে যে ছেলে ফলো করছিল সে এমপির লোক?
অক্ষর মাথা নাড়িয়ে বলল, হুম।
-” সে কীভাবে জানলো আপনি শাহীনকে খু’ন করেছেন?
ঠোঁট কামড় হাসলো অক্ষর। এলোমেলো চুলগুলো আরো এলোমেলো করে বলল, তুমি খুবই বোকা চয়ন। যেদিন শাহীনকে খু’ন করেছিলাম সেদিন তুমি আমার পাশেই ছিলে। কিন্তু তোমার নজর শুধু আমি আর শাহীন ছিলাম। তোমার পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল লামিম। সে ভেবেছিল আমরা কেউ তাকে দেখিনি। সেদিন পুরোটা সে ভিডিও করে নিয়ে যায়। আমাদের ব্ল্যাক’মেইল করার জন্য ঝুমুরের পিছু নেয়। সে ভেবেছিল আমরা তাকে অনেক টাকা দিবো কিন্তু আফসোস তাকে তোমার হাতে পাঠিয়ে দেই। সেদিন আমি নিজের থেকেও বড় কি’লার দেখেছিলাম। লামিমকে যে মা’র দিয়েছিলে বেচারা হয়তো বলতে চেয়েছিল, ভাই আমাকে জানে মে’রে ফেলুন তবুও প্লিজ আর কষ্ট দিয়েন না।
অট্টহাসিতে ফেঁটে পড়লো অক্ষর। চয়ন স্মরণ করল সেদিনের কথা……
অক্ষরের কাছ থেকে ভিডিও দেখার পর মাথা গরম হয়ে যায় তার। অনেক খোঁজা-খুঁজির পর যখন কোনো হদিস মিলে পায়না তখনি অক্ষর তাকে খবর এনে দেয়। তারপর হয় হামিমের মৃ’ত্যু। চয়নের প্রথম খু’ন।
অক্ষর এবার গলা ছেড়ে বলল, তোমার বোনকে খু’নীর হাতে তুলে দিতে পারবে না কিন্তু আমার বোনকে তো ঠিকই নিজের করে নিতে পারলে চয়ন? খু’ন একটা হোক কিংবা চারটা। খু’ন তো খু’নই হয়। তোমার বউকে বাঁচানোর জন্য যদি তুমি খু’নী হতে পার তাহলে আমার ভালোবাসার মানুষকে বাঁচানোর জন্য আমি খু’নী হতে পারি না?
কথা বলার ভান্ডার ফুরিয়ে গেল চয়নের। সত্যিই তো খু’ন তো তারা দুজনেই করেছে।
চৈতি এবার মুখ খুলল।বলল, তোমরা যা বলেছো সবই শুনলাম। আইনের লোক হয়ে আইনের বিরোধিতা করতে পারলে তোমরা? বুঝলাম তোমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে কাজ করেছ তাই বলে মানুষ হ’ত্যা করবে? আমি ভাবতে পারছি না আমার ভাই ও স্বামী খুনী।
অক্ষর-চয়ন শান্ত ভঙ্গিতে তাকিয়ে রইল। উত্তর দেওয়ার ভাষা নেই তাদের। শান্ত পরিবেশে। নীরবতার মাঝে শুধু চারজন মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে। মুখের বাক্য ভান্ডার ফুরিয়ে আজ শূন্য। কন্ঠস্বর শুকিয়ে কাঠ। শব্দরা হারিয়ে যাওয়ায় চুপচাপ থাকল কিছু মুহূর্ত কিছু সময়।
*******
পিচঢালা রাস্তার পাশে বসে আছে চয়ন-অক্ষর। দুজনের দৃষ্টি আকাশের নিঃসঙ্গ চাঁদের পানে। দরজায় খিল দিয়ে বসেছে ঝুমুর। আজ জায়গা হবে চয়নের। লজ্জায়, কষ্টে, চয়ন রাস্তায় বসেছে। অক্ষর এসেছে নিঃসঙ্গ চয়নের সঙ্গ দিতে। কারণ সে নিজেও আজ নিঃসঙ্গ প্রথিক।
দমকা হাওয়া বইছে। গরম হৃদয় শীতল করার আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে কিন্তু এ হৃদয় হৃদহরণী পুড়িয়েছে দমকা হাওয়া কী পারবে শীতল পরশ দিতে? না পারবে না। পুড়া হৃদয়ের ক্ষত মুছার জন্য দরকার প্রেয়সী।
নিরবতা ভঙ্গ করল অক্ষর। কাটকাট গলায় বলল, সব অজানা থাকা ভালো ছিল না? নিজেও রাস্তাবাসি হলে সাথে আমাকেও বানালে। এখন বসে-বসে আকাশের তাঁরা গুনা ছাড়া আর কাজ আছে? ফ্রী-তে কিন্তু মশার কামড় বোনাস হিসেবে পাওয়া যাবে।
তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ল চয়ন। মন খারাপ নিয়ে বলল, আপনার কথা বললেই হতো আমার কথা কে বলতে বলেছে? আপনার বোন এখন আমার উপর খুব ক্ষেপে আছে।
দু’চোখ ছোট করল অক্ষর। ভ্রু কুঁচকে বলল, তোমাকে সাধু বানিয়ে আমি অসাধু হয়ে তোমার বোনের সামনে ঘুরাঘুরি করব তাই না? মোটেও গ’র্দভ নই আমি।
হতাশ গলায় চয়ন বলল, এখন কী করব স্যার? প্লিজ বুদ্ধি দিন। আপনার বোন ছাড়া আমার জীবন অনর্থ। আপনার মাথায় তো দুষ্টু-বুদ্ধি কিলবিল করে। একটু ভেবে বের করুন প্লিজ।
বাঁকা চোখে তাকাল অক্ষর। গমগম কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করল, সুনাম করলে নাকি দুর্নাম?
-” আপনার দুর্নাম করার সাহস আমার আছে? জীবনের মা’য়া আছে আমার। আপনার বোনকে নিয়ে সুখে শান্তিতে সংসার করতে চাই। প্লিজ স্যার আইডিয়া ভাবুন।
চয়নকে থামিয়ে অক্ষর বলল, দাঁড়াও ভাবতে দাও। বললেই তো আর প্ল্যান চলে আসেনা। ওয়েট……..!
অনেকক্ষণ ভাবনা চিন্তা করে অক্ষর উল্লাস কণ্ঠে বলে উঠল, পেয়েছি!
##চলবে,
®ফারজানা মুমু
[বিঃদ্রঃ অন্তিম পর্ব আসবে আগামীকাল।]