#যেদিন_তুমি_এসেছিলে
#পর্ব_২৫
#মুন্নি_আক্তার_প্রিয়া
_______________
অর্ষার জ্বরের রেশ কাটে পরেরদিন সকালে। এখন সে পুরোপুরি নিজেকে সুস্থ অনুভব করছে। বিপত্তি বাঁধে পূর্বে করা তার আচরণের জন্য। না জানি কত কী সে বলেছে, করেছে। বুকভরে শ্বাস নেয় সে। বাংলাদেশে এখনো কারও সাথে যোগাযোগ করা হয়নি। গতকাল রাতে লজ্জায় দৌঁড়ে সেই যে রুমে চলে এসেছে; আর বের হয়নি। আহনাফ অবশ্য দরজার ওপাশ থেকে বলেছিল,’খাবার টেবিলে আছে। খেয়ে মেডিসিন নিও।’
আলসেমিতে অর্ষার ওঠা হয়নি। আর খাওয়া-ও হয়নি। সে চটজলদি ফ্রেশ হয়ে নেয়। সকাল সকাল গোসল করায় শরীর ও মন দুটোই আরো বেশি ফ্রেশ লাগছে এখন। জানালার পর্দা সরিয়ে জানালাটা মেলে দেয়। এক ফালি রোদ্দুরের সঙ্গে তিরতির করে ঘরে প্রবেশ করে মৃদুমন্দ বাতাস। চুল থেকে তোয়ালে খুলে ভালো করে মুছে নেয়। এরপর তোয়ালে কোলে নিয়েই বিছানায় বসে।
হোয়াটসএপে গিয়ে দেখে বন্ধুদের অনেকগুলো ম্যাসেজ এসেছে। আমেনা বেগমও ম্যাসেজ করেছিলেন। শুধু আহিলের কোনো ম্যাসেজ নেই। সে সর্বপ্রথম কলটি ভয়ে ভয়ে আহিলকেই করে। ফোন রিসিভ করার সম্ভাবনা শূন্যের কোঠায় জেনেও সে কল করে। নিশ্চয়ই অনেক রেগে আছে আহিল। হয়তো আর কথাও বলবে না।
তার চিন্তা-ভাবনাকে মিথ্যে প্রমাণিত করে আহিল ফোন রিসিভ করল। অর্ষা কিছু বলার পূর্বে আহিলই বলল,’কী অবস্থা? কেমন আছিস?’
আহিলের স্বাভাবিক ব্যবহারে ঘাবড়ে যায় অর্ষা। রাগ ঝাড়লে, বকলেই হয়তো একটু স্বস্তি লাগত।
‘শুনছিস?’ বলল আহিল।
অর্ষা আমতা আমতা করে বলল,’হ্যাঁ। আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তুই?’
‘আলহামদুলিল্লাহ্। জ্বর কমেছে?’
অর্ষা অবাক হয়। বিস্ময় নিয়ে জানতে চায়,’তুই জানতি?’
‘রেণু আপার কাছে শুনেছি।’
‘তুই কি আমার ওপর রাগ করে আছিস আহিল?’
‘না।’
‘তুই এভাবে কেন কথা বলছিস? আমার ভয় হচ্ছে। তুই আমায় বকা দে, রাগ দেখা। তাও এখন এমন স্বাভাবিক আচরণ করিস না। খুব অভিমান হয়েছে না?’
আহিল একটু হাসল বোধ হয়। বলল,’রাগ-অভিমান সবার ওপর করা যায় না। অধিকার থাকা লাগে। আগে আমরা শুধু বন্ধু ছিলাম। এখন আমাদের অন্য একটা সম্পর্ক হয়েছে। আমার আপন ভাইয়ের ওয়াইফ তুই। বন্ধুত্বের অধিকার মিইয়ে গেছে এখন। তোর সংসার, স্বামী এখন প্রায়োরিটির শীর্ষে। একটা বিবাহিত মেয়ের জীবনে এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। এটা নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। শুধু আফসোস একটা জায়গাতেই! আমার রাগকে দেখতে গিয়ে, আমার ভালো চাওয়াটা কেউ দেখলি না। আমি নিশ্চয়ই কখনো তোর খারাপ চাইনি। এখনো চাই না। ভাইয়ার সাথে তোর বিয়েটা যেভাবেই হোক না কেন, আমিও চাই তুই ভাইয়ার সাথে সুখী হ। আমার ভাইয়া মানুষটা অনেক ভালো। হয়তো পরিস্থিতি ও’কে, তোকে অনেকটা বদলে দিয়েছে। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।’
অর্ষা নিরুত্তর। কিছুক্ষণ দু’পাশেই নিরবতা বজায় থাকে। এরপর আহিলই বলল,’অফিসে আছি। রাখছি এখন। ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করিস। ভালো থাকিস। আল্লাহ্ হাফেজ।’
ফোন কাটার পরও অর্ষা কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে। অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছে সে। সত্যিই তো, কী হতো একটাবার যদি সাহস করে আহিলকে সব জানাতো সে? সারাটা জীবন সে বোকাই রয়ে গেল।
বুকভরে শ্বাস নিয়েও মনে শান্তি মিলছে না। কোথায় যেন একটা শূন্যতা। পরাণ টিকছে না তার এই দেশে। নিঃসন্দেহে সুইজারল্যান্ড অপরূপ একটি দেশ। কিন্তু তবুও; নিজের জন্মভূতি, নিজের মাতৃভূমির প্রতি যেই টান, ভালোবাসা প্রতিটি মানুষের মনে রয়েছে তার কাছে তো অপার সৌন্দর্যও নস্যি। তবে হ্যাঁ,দেশের প্রতি এত টান থাকারও হেতু রয়েছে। বিশেষ হেতুটিই হচ্ছে প্রিয়জন, প্রিয় মানুষ। অর্ষার প্রিয় মানুষ বলতে শুধু গ্যাঞ্জাম পার্টির সদস্য, কেয়া আর তিয়াস-ই ছিল। কেয়া যে কোথায় আছে, কেমন আছে সেটাও সে জানে না। অন্যদিকে ভাই-ভাবিকে সে বিশেষ প্রিয় ভাবলেও ওরা তো প্রতিটা মুহূর্তে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিত; আপন হয়েও তারা ঠিক কতটা পর! আর এভাবেই এই দুটি আপন মানুষের মনের আঙিনা থেকে ধীরে ধীরে বিলুপ্তি ঘটেছে। সম্প্রতি সে সুইজারল্যান্ড আসার পর আরো কিছু প্রিয় মানুষের শূন্যতা উপলব্ধি করতে পারছে। এর মাঝে রয়েছে জহির চৌধুরী, আমেনা বেগম, রেণু আপা আর স্কুলের বাচ্চারা। বাচ্চাগুলো যখন শুনল, অর্ষা চাকরীটা ছেড়ে দিয়েছে তখন কত অনুনয়বিনয়-ই না করেছিল ওরা! বারবার অনুরোধ করে বলেছিল, অর্ষা যেন স্কুল থেকে চলে না যায়। মন চাইলেও কি আর সব অনুরোধ রাখা যায়? যায় না। আসলে সম্ভব হয়ে ওঠে না। পারতপক্ষে অর্ষার পক্ষেও বাচ্চাগুলোর অনুরোধ রাখা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
বিছানা ছেড়ে উঠে ভেজা তোয়ালেটা বারান্দায় মেলে দেয় সে। এরপর ফোন করে আমেনা বেগমকে। তিনি দু’বার রিং হতেই ফোন রিসিভ করেন। হয়তো ফোন তখন হাতেই ছিল।
উৎকণ্ঠিত হয়ে তিনি জিজ্ঞেস করলেন,’অর্ষা মা! তুমি ভালো আছো?’
‘মা’ ডাকটা সে যতবার জহির চৌধুরী এবং আমেনা বেগমের মুখে শোনে, ততবার তার অন্তর প্রশান্তিতে ছেঁয়ে যায়। মনে হয় এরচেয়ে শ্রুতিমধুর ডাক আর কিছু কখনো হতেই পারে না।
অর্ষা ক্ষীণস্বরে বলল,’আলহামদুলিল্লাহ্ আমি ভালো আছি। আপনারা ভালো আছেন?’
ওপাশ থেকে দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা গেল। তিনি বললেন,’আমাদের আর ভালো থাকা। দুশ্চিন্তায় নাওয়া-খাওয়া’ও ঠিকমতো হয়নি। তুমি সত্যিই ভালো আছো বলো?’
‘হ্যাঁ, আন্টি।’
‘আমি ভিডিয়ো কল দিচ্ছি।’
তিনি কল কেটে ভিডিয়ো কল দিলেন। স্নিগ্ধ অর্ষাকে দেখে এতক্ষণ বাদে মনে হলো তার বুকের ওপর থেকে ভারী পাথরটা নেমে গেছে। তিনি নিরব থেকে কিছুক্ষণ শুধু তাকিয়েই রইলেন। অস্বস্তি ফিল হলেও অর্ষাও চুপ করে রইল।
মুগ্ধ কণ্ঠে আমেনা বেগম বললেন,’মাশ-আল্লাহ্! আমার মেয়েটা কী ভীষণ সুন্দর!’
অর্ষা বেশ লজ্জা পেল। সরাসরি প্রসংশা যেকোনো মানুষকেই লজ্জায় ফেলতে সক্ষম। সেই সময়ে দরজায় টোকা পড়ে। অর্ষা ফোন হাতে নিয়েই দরজা খুলে দেয়। আহনাফ এসেছে।
ফোনের ওপাশ থেকে আমেনা বেগম জিজ্ঞেস করলেন,’কে এসেছে?’
অর্ষা আবারও আগের জায়গায় এসে বসে বলল,’আপনার ছেলে। দেবো?’
‘না। ওর সাথে পরে কথা বলতে পারব। আগে তোমার সাথে বলি। সকালে খেয়েছ তুমি?’
‘না। একটু আগেই ঘুম থেকে উঠলাম।’
‘কত বাজে খেয়াল করেছ? এখনো খাওনি কেন? খাওয়া-দাওয়ায় কিন্তু ফাঁকিবাজি চলবে না একদম।’
অর্ষা মৃদু হেসে বলল,’আচ্ছা।’
‘তোমার জ্বর কমেছে?’
‘হ্যাঁ। আঙ্কেল কোথায়?’
‘সে আজ অফিসে গেল। জরুরী একটা মিটিং আছে। তোমার সাথে কথা বলবে বলে কাল অনেক রাত অব্দি জেগে ছিল।’
এ কথা শুনে অনুশোচনায় দগ্ধ হয় অর্ষা। বিমর্ষস্বরে বলে,’স্যরি আন্টি। শরীরটা খুব খারাপ লাগছিল, তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
‘ধুর পাগলী! সে অফিস থেকে এলে আমি ফোন দেবো তোমায়।’
‘আচ্ছা। আপনি খেয়েছেন সকালে?’
‘হ্যাঁ, মা।’
‘রেণু আপা কেমন আছে?’
‘ভালো আছে। কথা বলবে?’
‘হ্যাঁ।’
আমেনা বেগম রেণুকে ডেকে দিলেন। রেণু ভীষণ-ই খুশি হয়েছে, অর্ষা তার সাথে কথা বলতে চেয়েছে বলে।
সে হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল,’আপা ভালা আছেন?’
অর্ষাও মৃদু হেসে বলল,’হ্যাঁ। আপনি ভালো আছেন?’
‘হ। তয় আপনের কথা অনেক পড়ে। বাড়িডা আবার খালি হইয়া গেল।’
অর্ষা গোপনে দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলল,’আমিও আপনাদের সবাইকে অনেক মিস করি রেণু আপা।’
অর্ষা কথা বলতে বলতেই খেয়াল করেছে আহনাফ তৈরি হচ্ছে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে যখন পারফিউম স্প্রে করছিল শরীরে তখন অর্ষার মাথা ঘুরে যাওয়ার জোগার। না, আহনাফের সৌন্দর্যে নয় বরং সে পারফিউমের ঘ্রাণে মুগ্ধ। মাতাল করা ঘ্রাণ! বারবার কথার তাল কেটে যাচ্ছিল তার। সে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দেয়।
হঠাৎ করেই তার পূর্বের বেশকিছু কথা মনে পড়ে যায়। যেখানে আহনাফ তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল। অর্ষা মানে, আহনাফ পরিস্থিতির শিকার বলেই এমন ব্যবহার করে ফেলেছিল। কিন্তু তবুও মন তো সেসব মানে না। সে তো এক রাশ বিষণ্ণতা নিয়ে চুপটি করে বসে থাকে। এখানে আসার পর অবশ্য আহনাফ তার অনেক টেক-কেয়ার করেছে। এতেই আহনাফের ওপর থেকে অর্ধেক অভিমান তার উবে গেছে।
আহনাফ শার্টের হাতা ফোল্ড ফোল্ড করতে করতে অর্ষাকে জিজ্ঞেস করল,’কাল রাতে খাওনি কেন?’
অর্ষা গম্ভীর হয়ে বলল,’ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।’
অর্ষাকে হঠাৎ গম্ভীর ও চুপচাপ দেখে আহনাফ পূণরায় প্রশ্ন করে,’কী হয়েছে?’
অর্ষা প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়। আহনাফ পাশের চেয়ারে বসে। ফোন চাপতে চাপতে বলে,’কাল তো বেশ চঞ্চল ছিলে দেখলাম। আজ কী হলো?’
‘কিছু না।’
‘মন খারাপ?’
‘তেমন কিছু নয়।’
‘তোমরা মেয়েরা একেক সময় একেক রকম বর্ণ ধারণ করো। বোঝাই মুশকিল হয়ে পড়ে।’
‘বুঝলাম না।’
‘কিছু না। আমি অফিসে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর একজন মেইড আসবে। সে আমার পুরাতন মেইড ছিল। এখন থেকে এখানেই থাকবে। কিছু প্রয়োজন হলে তাকে বলবে।’
‘তাকে ছাড়িয়েছিলেন কেন?’
‘অফিসের কাজে একেক সময় একেক জায়গায় থাকতে হতো তাই প্রয়োজন হয়নি। এখন তোমার দেখাশোনা করার জন্য হলেও কাউকে দরকার। আমি তো অফিস বাদ দিয়ে সবসময় বাসায় থাকতে পারব না। তোমার যা-ই দরকার হোক না কেন, তাকে বলবে। আমি আজ তাড়াতাড়িই ফিরে আসব।’
‘আচ্ছা।’
আহনাফ চলে যাওয়ার সময় অর্ষা পিছু ডেকে বলে,’আপনার বিড়ালটাকে বলবেন হুটহাট যেন আমার কাছে না আসে।’
আহনাফ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায়। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে বলে,’কিছুক্ষণ পর হানি এসে নিয়ে যাবে। আমি অফিস থেকে ফেরার পর আবার নিয়ে আসব।’
এই হানিটা আবার কে জিজ্ঞেস করার পূর্বেই আহনাফ চলে যায়।
সে উঠে গিয়ে দরজা লক করে আবার ফিরে আসে। খিদে পেয়েছে ভীষণ। কিছু খাওয়াটা জরুরী। সে ডাইনিং টেবিলে দেখে, আহনাফ নাস্তা বানিয়ে ঢেকে রেখে গেছে। বাটার লাগানো ব্রেড, ডিম পোচ, জুস আর দুধ। এছাড়া এমনিতে ফলমূল তো আরো আছেই। সে একটা ব্রেড আর জুস খেয়ে উঠে যাচ্ছিল তখন কলিংবেল বাজে। সে ডোর গ্লাসে দেখতে পায় অতিরিক্ত ফরসা করে মাঝ বয়সী এক মহিলা। তার সাথে রয়েছে ৬/৭ বছর বয়সী একটা ছেলে।
অর্ষা দরজা খুলে দিতেই মহিলাটি তার পরিচয় দিলো। অর্থাৎ ইনিই আহনাফের বলে রাখা সে মেইড। দরজা থেকে সরে দাঁড়ায় অর্ষা। মহিলাটি ব্যাগ নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। ভদ্রতাসূচক অর্ষা ওদের জন্য দুটো গ্লাসে জুস নিয়ে আসে।
মহিলাটি ভীষণ খুশি হয়। অর্ষার বেশ প্রসংশাও করে। অর্ষা বিনয়ের সাথে ওদের বলল,’আপনারা নাস্তা করেছেন?’
ছেলেটি তুর্কিশ ভাষায় বলল,’না। আমি ভীষণ ক্ষুধার্ত।’
এই ভাষা অর্ষার বোধগম্য হলো না। মহিলাটি তখন ইংলিশে ট্রান্সলেট করে বললেন,’আমরা তুর্কিশ তো তাই এই ভাষায় কথা বলি। তোমার সাথে ইংরেজিতেই বলব সমস্যা নেই। ওর খিদে পেয়েছে, এটাই বলেছে।’
অর্ষা হেসে ওদেরকে খেতে নিয়ে গেল। কথা বলে জানতে পারল মহিলাটির নাম লিলিয়া আর ছেলেটির নাম স্মিথ। হাজবেন্ডের সাথে থাকে না সে। ছেলে নিয়ে আলাদাই থাকে। ওদের সাথে গল্পের মধ্যিখানে আরো একবার দরজায় টোকা পড়ে।
অর্ষা দরজা খুলে দেখতে পায় ফুটফুটে পুতুলের মতো একটা বাচ্চা মেয়ে। কালো একটা ফ্রক পরেছে। মনে হচ্ছিল যেন স্বর্গের পরী। বাচ্চাটি পরিচয় দিয়ে বলল,’হাই! আমি হানি।’
অর্ষাও হেসে প্রত্যুত্তর করল,’আমি অর্ষা।’
‘আমি তোমার কথা জানি।’
অর্ষা ভারী অবাক হয়ে বলল,’তাই নাকি? কে বলেছে আমার কথা?’
‘আহনাফ ভাইয়া।’
‘ওহ আচ্ছা।’
‘ক্যাথিওন কোথায়? আমি ও’কে নিতে এসেছি।’
অর্ষাও ভাবছে, সত্যিই তো? বিড়ালটাকে তো সে সকাল থেকে কোথাও দেখল না। গেল কোথায়?
সে শুকনো মুখে বলল,’আমি তো জানি না।’
লিলিয়া তখন বলল,’তুমি ভয় পাও বলে ক্যাথিকে পাশের রুমে আটকে রেখেছে।’
অর্ষা অবাক হয়। আবার একটু ভালোও লাগছে ওর কথা আহনাফ ভাবছে বলে। অন্যদিকে বেচারা ক্যাথির জন্য একটু মায়াও লাগছে।
হানি দরজা খুলে ক্যাথিকে নিয়ে আসে। অর্ষার থেকে বিদায় নিয়ে নিজের বাড়িতে চলে যায়। আহনাফ যেই রুমে গত দু’রাত থেকেছিল সেই রুমেই এখন থেকে লিলিয়া আর স্মিথ থাকবে। অর্ষার মনটা বিষন্ন হয়ে যায়। আহনাফের রুমে তো কোনো সোফাও নেই। তাহলে সে কোথায় ঘুমাবে? ফ্লোরে?
লিলিয়া অর্ষাকে বলল,’তোমার শরীর এখনো দুর্বল আছে। তুমি গিয়ে রেস্ট নাও।’
অর্ষা ঘরে ফিরে এলো। এবার বন্ধুদের সাথে কথা বলা প্রয়োজন। সে প্রথমে হোয়াটসএপে একটা গ্রুপ খুলে সবাইকে এড করে। তারপর ম্যাসেজ লিখে,’কেমন আছিস তোরা?’
রেশমি লিখে,’বেয়া’দব! এতদিন পর কথা হচ্ছে কল না দিয়ে টেক্সট করছিস কেন?’
আশিক লিখল,’হ্যাঁ, হ্যাঁ। ভিডিয়ো কল দে। দেখি তোরে।’
‘ইয়েস আমিও দেখতে চাই। খেয়ে খেয়ে কি মোটা হয়ে গেছিস তুই?’ লিখল দিদার।
দিদারের রিপ্লাইতে জুঁই লিখল,’তোর খাওয়া-দাওয়া ছাড়া আর কোনো কথা নাই মুখে?’
লামিয়া বিরক্ত হলো। কথা বাড়াতে না দিয়ে ভিডিয়ো কল দেয়। একে একে সবাই জয়েন হয়। অর্ষা ভেবেছিল, আহিল হয়তো আসবে না। এখানেও সে অর্ষাকে ভুল প্রমাণিত করে। সেও জয়েন হয়।
সবার উদ্দেশ্যে বলল,’আমি অফিসে আছি। ফাইল দেখছি। তোরা কথা বল, আমি লাইনেই থাকব।’
আহিল কথা বলুক বা না বলুক, ওদের সাথেই যে থাকবে এতেই সকলে খুশি। মিউট করে ফোনটা ডেস্কের ওপর রাখে আহিল। আর নিজের কাজে মনোনিবেশ করে।
লামিয়া অর্ষাকে বলে,’চোখমুখ এমন শুকিয়ে গেছে কেন বোকারানী?’
অর্ষা বলল,’জ্বর এসেছিল।’
‘এখন কেমন আছিস?’
‘ভালো। তোদের কী অবস্থা?’
সবাই বলল,’আমরাও ভালো আছি।’
অর্ষা জুঁইয়ের উদ্দেশ্যে বলল,’তুই কি রান্না করছিস নাকি?’
‘হ্যাঁ, রে।’
আশিক পিঞ্চ মেরে বলল,’ঠিকই আছে। আর কত বসে বসে খেতে চাস? কাজ করে খা।’
জুঁই ধমক দিয়ে বলল,’বেদ্দপ তুই চুপ কর! এই বাড়িতে কাজের লোক আছে বুঝেছিস। কিন্তু আমার রান্না করতে ভালো লাগে তাই আমিই রান্না করি।’
দিদার বলল,’ওরে বাপরে! কোনো জন্মে তো আমগোরে রান্না করে খাওয়াইলি না।’
রেশমিও সাপোর্ট দিলো দিদারকে। বলল,’হ্যাঁ, তাই তো!’
জুঁই আমতা আমতা করে বলল,’সমস্যা কী, খাওয়াবোনে একদিন। এখন তোরা চুপ কর তো। অর্ষার সাথে কথা বলতে দে।’
আশিক বাঁধ সেজে বলল,’তুই চুপ কর। অর্ষার সাথে আমার গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা আছে।’
‘এই বা’লগুলা ভিডিয়ো কলে আইসাও পারলে মারামারি করে। অ’সভ্যগুলা! আমারে সুযোগই দিতাছে না।’ বিরক্ত হয়ে বলল লামিয়া।
ওর কথা অবশ্য কেউই আমলে নিলো না। আশিক বলল,’অর্ষা শোন।’
‘শুনছি,বল।’ বলল অর্ষা।
‘তুই যখন সুইজারল্যান্ড থেকে দেশে আসবি তখন আমার জন্য একটা কম্বল আনিস।’
সবাই ওর কথা শুনে হাসতে শুরু করে। আশিক ধমক দিয়ে বলে,’আশ্চর্য! তোরা হাসছিস কেন?’
জুঁই কেবিনেটের ওপর পা ঝুলিয়ে বসে হাসতে হাসতে বলে,’এতকিছু থাকতে শেষমেশ কম্বল আনতে বললি?’
‘জুঁই, চুপচাপ রান্না কর তুই
নয়তো জোর করে দিবো খাওয়াই,
কাঁচা মাছ রুই।’
জুঁই বমি করার ভান ধরে বলল,’ইয়াক! আঙ্কেলের বাচ্চা খাচ্চো’র, পিশাচ!’
আশিক যেন শুনেও শুনল না এমনভাবে সকলের উদ্দেশ্যে বলল,’দাঁত-কপাটি বের করে না হেসে আমার কথা শোন সবাই। সামনে তো শীত আসতেছে। আমার তো আর বউ নাই। সো, শীতে কম্বল-ই আমার মতো মিসকিনদের সম্বল। ক্লিয়ার?’
সকলে সমস্বরে হেসে বলল,’ক্লিয়ার।’
.
সবার সাথে কথা বলেও অর্ষার হাতে ছিল অফুরন্ত সময়। কী করে সময় কাটাবে সেটা সে কিছুতেই বুঝতে পারছিল না। তাই ঘর থেকে বের হয়। লিলিয়া রান্নাঘরে ছিল। অর্ষাকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘কিছু খাবে?’
অর্ষা দু’দিকে মাথা নেড়ে বলল,’না।’
সে ড্রয়িংরুমের দিকে পা বাড়াল। সোফায় পায়ের ওপর পা রেখে স্মিথ আধশোয়া অবস্থায় বসে ছিল। ওর হাতে একটা গল্পের বই। খুবই মনোযোগ দিয়ে সে বইটি পড়ছিল বলে মনে হচ্ছে অর্ষার। সে স্মিথের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে গলা পরিষ্কার করে কাশি দিলো।
স্মিথ চোখ তুলে তাকায়। অর্ষাকে দেখে সোজা হয়ে বসে। অর্ষা হেসে ওর সাথে ভাব জমানোর চেষ্টা করে।
ওর পাশে বসে জিজ্ঞেস করে,’তুমি কি পড়াশোনা করো?’
স্মিথ মাথা নেড়ে বলল,’হুম। ক্লাস ওয়ান।’
‘ওহ। বাইরে যাবে? আমি তো এখানকার কিছু চিনি না।’
‘দূরে যাওয়া যাবে না। স্যারের নিষেধ আছে।’
‘স্যার কে?’
‘আহনাফ স্যার।’
স্মিথ আহনাফ বলল ঠিকই, তবে নামটা শোনা গেল ‘আনাফ’। অর্থাৎ উচ্চারণের সময় ‘হ’ উহ্য ছিল।
অর্ষা ঠোঁট উলটে বলল,’ওকে। ছাদে তো যাওয়া যাবে?’
স্মিথ বলল,’হ্যাঁ।’
স্মিথ অর্ষাকে সাথে করে বাইরে নিয়ে গেল। বাড়ির পেছনের দিকটায় ছাদে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি রয়েছে। লোহার তৈরি পাকানো সিঁড়ি। সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠার সময় আনন্দ অনুভব করছিল অর্ষা। তার তো বেশ ভালোই লাগছিল। ছাদে উঠতেই দমকা বাতাসে জামা-কাপড়, চুল ওড়া শুরু করে। বাতাসের তোড়ে তো নিজেই স্থিরভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না।
ঝলমলে রোদের আলোয় সুইজারল্যান্ডের প্রকৃতির সৌন্দর্য যেন দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। দূর-দূরান্তের যেদিকে দৃষ্টি যায়, সেদিকেই বিশালাকৃতির সবুজ মহিরুহে ঘেরা। অকস্মাৎ বাতাসে তার ওড়নাটি উড়ে নিচে পড়ে যায়। তড়িঘড়ি করে সে এবং স্মিথ রেলিঙের কাছে যায়। ঝুঁকে নিচে তাকিয়ে দেখে আহনাফ মাথা উঁচু করে ছাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। আর ওড়নাটি পড়ে আছে তার পায়ের সামনে।
আহনার কটমট করে তাকিয়ে বলে,’দুপুরবেলা ছাদে কী? তাও আবার রোদের মধ্যে। নিচে নামো জলদি।’
অর্ষা স্মিথকে নিয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসে। আহনাফ ততক্ষণে ওড়নাটি তুলে হাতে নিয়েছে। অর্ষা আসতেই ওর হাতে দিয়ে বলল,’ভেতরে যাও।’
অর্ষাও বিনাবাক্যে স্মিথকে নিয়ে ভেতরে চলে যায়। মিনিট পাঁচেক পরে আহনাফ ক্যাথিওনকে সাথে নিয়ে ফিরে এলো। ও’কে দেখেই অর্ষার জানকারি, পানকারি শুরু হয়ে যায়। সে খেয়াল করেছে, ক্যাথিওনকে এড়িয়ে চলতে চাইলেও পারে না। বিচ্ছু বিড়ালটা ঠিক ওর পেছন পেছন-ই ঘোরে। অসহ্যকর!
এই যেমন এখন সে ঠিক অর্ষার মুখোমুখি বসে আছে সেন্টার টেবিলের ওপর। অর্ষা বসে আছে সোফায়। উঠে যে রুমে যাবে সেটাও পারছে না। এর দুটো কারণ রয়েছে। প্রথমত, রুমে এখন আহনাফ রয়েছে। সেও যদি এখন রুমে যায়, তাহলে আহনাফ ভাবতেই পারে অর্ষা তার পিছু পিছু ঘুরছে। কিন্তু এই ভাবনাটা তো আর সত্য হবে না। সে যদি যায়, তবে এই পাজি বিড়ালটার জন্যই যাবে। দ্বিতীয় কারণটা হচ্ছে, ক্যাথিওন নিজেই। ওর ভাবভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে অর্ষা বসা থেকে ওঠা মাত্রই ক্যাথিও ওর পিছু নেবে। এতে অর্ষার ভয় আরো বাড়বে। তাই সে একদম উপায়ান্তরহীন হয়ে অসহায়ের মতো ড্রয়িংরুমের সোফাতেই বসে রইল।
অর্ষা প্রায় বিরক্ত হয়ে ফিসফিস করে ক্যাথিওনকে বলল,’ওভাবে তাকিয়ে আছো কেন অ’সভ্য, বেয়া’দব বিল্লি! নেহাৎ ভয় পাই বলে তোমার অত্যাচার সহ্য করছি। নয়তো কান দুটো টেনে বুঝিয়ে দিতাম আমি কী! না, তাও পারতাম না। মারতে গেলেও মায়া লাগত।’
ক্যাথি ম্যাউ ম্যাউ করে উঠে।
অর্ষা বলে,’কিছু বললেই ম্যাউ ম্যাউ করে উঠবে না তো! এই দুইটা শব্দ দ্বারা তুমি সবসময় কী বোঝাতে চাও? শোনো, তোমার মালিক যেমন তুমিও তেমন। কথা নেই, বার্তা নেই শুধু গম্ভীর হয়ে তাকিয়ে থাকো। খবরদার বলছি, আমার পিছু নেবে না।’
কথাগুলো বলে সে সাহস সঞ্চয় করে উঠে দাঁড়ায় রান্নাঘরে যাবে বলে। ক্যাথিই বা কম কী? সেও অর্ষার পিছু নেয়। রান্নাঘরের কেবিনেটের ওপর উঠে আগে গিয়েই বসে থাকে। অর্ষা খেয়াল না করে সেখানে হাত রাখতে গিয়ে ক্যাথির মাথায় চাপ পড়ে। ক্যাথি সাথে সাথে অর্ষার হাতে নখের আঁচড় বসায়। ব্যথায়, ভয়ে চেঁচিয়ে ওঠে অর্ষা। লিলিয়া রান্নাঘরেই ছিল। সে এগিয়ে আসে অর্ষার কাছে। চিৎকার শুনে আহনাফ আর স্মিথও রান্নাঘরে ছুটে আসে।
নখের আঁচড়ে রক্ত বেরিয়ে গেছে। আহনাফ বিস্মিত হয়ে বলল,’হাতে কী হয়েছে?’
উত্তর দিলো লিলিয়া। সে বলল,’বিড়াল খাঁমচি দিয়েছে।’
আহনাফ তড়িঘড়ি করে অর্ষাকে বেসিনে নিয়ে এলো। ট্যাপ ছেড়ে পানির নিচে ক্ষতস্থান রাখল। আঁচড় দেওয়া স্থানটি জ্বলছিল ভীষণ। অনেকক্ষণ এভাবে রেখে পানি শোষণকারী ব্যান্ডেজ দিয়ে ক্ষতস্থানে হালকা চাপ দিয়ে অল্প যেই রক্তটুকু ছিল সেগুলো মুছে ফেলে।
ক্যাথিও সেখানেই ছিল। অর্ষার ভীষণ রাগ হচ্ছিল বিড়ালটির ওপর। আহনাফ জিজ্ঞেস করল,’এখনো কি জ্বলছে?’
অর্ষা মিইয়ে যাওয়া গলায় বলল,’তেমন না।’
‘কমে যাবে। না কমলে বলবে, ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাব।’
‘হুম।’
আহনাফ এবার অবাক করা একটা কাণ্ড করল। ক্যাথিওনকে কোলে নিয়ে সে বাড়ির বাইরে রেখে এলো। অর্থাৎ বাড়ির দরজার সামনে রেখে দরজাটি লাগিয়ে দিলো।
অর্ষা অবাক হয়ে জানতে চাইল,’ও’কে বাইরে রাখলেন কেন?’
‘এটা ওর শাস্তি।’
‘শাস্তি! প্রাণীদেরও কেউ শাস্তি দেয় নাকি? তাছাড়া ও’কে যে শাস্তি দিচ্ছেন, ও বুঝবে?’
‘বুঝবে। ও’কে নিয়ে তোমার এত টেনশন করা লাগবে না। তুমি নিজের খেয়াল রাখো।’
আহনাফ রুমে চলে যাওয়ার পর অর্ষা অসহায়ভাবে লিলিয়ার দিকে তাকায়। লিলিয়ার এখানে কিছু করার নেই। তাই সেও একবার অসহায়ভাবে অর্ষার দিকে তাকিয়ে আবার কিচেনে চলে যায়। ড্রয়িংরুমে এখন শুধু স্মিথ আর অর্ষা।
স্মিথ বলল,’ক্যাথিওন খুব ভালো। ও কখনো কাউকে কামড় বা খামচি দেয় না। তোমাকেও হয়তো ইচ্ছে করে দেয়নি।’
অর্ষা হতাশসুরে বলল,’কী জানি!’
একটু থেমে ফের চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,’কিন্তু এই বিড়ালটা কেন সবসময় আমার পিছু পিছু ঘোরে?’
স্মিথ হাসে। অর্ষা খেয়াল করল, হাসলে বাচ্চাটিকে অসম্ভব সুন্দর লাগে। স্মিথ হাসতে হাসতে বলল,’তোমাকে মনে হয় ক্যাথির ভালো লাগে।’
‘কী জানি!’ ঠোঁট উল্টাল অর্ষা।
অনেকক্ষণ সে স্মিথের সাথে ড্রয়িংরুমেই বসে থাকে। বিড়ালটি কী করছে দেখার জন্য দরজার পাশে থাকা জানালা দিয়ে বাইরে তাকায়। দেখতে পায় ক্যাথি দরজার সামনে চুপচাপ বসে আছে। এবার মায়া হলো অর্ষার।
সে চুপিচুপি দরজা খুলে বাইরে যায়। ক্যাথির সামনে বসে বলে,’আমায় খামচি দিয়ে কাজটা কি ঠিক করেছ বলো? দেখলে এখন শাস্তি হিসেবে বাইরে থাকতে হচ্ছে।’
ক্যাথি তাকিয়ে আছে অর্ষার দিকে।
‘ওভাবে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। আবার খামচি দেওয়ার কথা ভাবলে বাড়ি ছাড়া হতে হবে বুঝেছ?’
একটুখানি চুপ থেকে বলল,’এমনিতে তুমি অনেক কিউট আছো। দেখলে আদর করতে মনে চায়। আবার ভয়ও লাগে। যাই হোক, এই মুহূর্ত তোমার জন্য আমার মায়া হচ্ছে। তাই তোমাকে বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছি। যাও ভেতরে যাও।’
ক্যাথি তখনো শুধু তাকিয়েই রইল। অর্ষা বলল,’কী হয়েছে? যাও।’
ক্যাথি তাও নড়ল না। অর্ষা এবার হাত দিয়ে ইশারা করে বলল,’হুশ, হুশ যাও। ভেতরে যাও হুশ।’
ক্যাথির তবুও কোনো হেলদোল না দেখে বিরক্ত হলো অর্ষা। ধরে যে ভেতরে নিয়ে যাবে তাও তো ভয়ে পারবে না। তারচেয়েও বড়ো কথা যদি আবারও খামচি দেয়?
ওর চিন্তা-ভাবনায় পানি ঢেলে আহনাফ সেখানে উপস্থিত হয়। কর্কশকণ্ঠে বলে,’তুমি এখানে কী করছ?’
ভয়ে দাঁড়িয়ে যায় অর্ষা। তুতলিয়ে বলে,’আসলে…ও তো বিড়াল। এতকিছু বোঝে না। এভাবে বাইরে রাখাটা ঠিক হচ্ছে?’
‘ও বিড়াল কিন্তু তুমি তো নও। ও বোঝে না, কিন্তু তুমি বোঝো। সূতরাং তুমিও এখন ওর সাথে বাইরে থাকো।’
‘মানে কেন? আমি কী করলাম?’
‘ও অন্যায় করেছে ও’কে শাস্তি দিয়েছি। অপরাধীর প্রতি দরদ দেখানোর জন্য এখন তুমিও শাস্তি পাবে।’ এই বলে আহনাফ দরজাটা ভেতর থেকে লাগিয়ে দিলো। অর্ষা আটকাতে গিয়েও পারল না। অগত্যা সেও পা ভাঁজ করে ক্যাথির সামনে বসে পড়ে।
মুখটা বিকৃতি করে ক্যাথিকে বলল,’এজন্যই কখনো কারও ভালো করতে নেই।’
ক্যাথি এতক্ষণে লেজ নাড়িয়ে বলল,’ম্যাউ, ম্যাউ।’
‘ওরে বাপরে! তুই তো কম ফা’জিল নোস! এখন ঠিকই ম্যাউ ম্যাউ করছিস।’
‘হোয়াট আর ইউ ডুয়িং হেয়ার?’
দ্রুত ইংলিশ বলা ব্যক্তিটির দিকে ঘাড় বাঁকা করে তাকাল অর্ষা। কালো জিন্স প্যান্টের সাথে আকাশী রঙের ঢিলেঢালা একটা টি-শার্ট পরনে একটি ছেলে। তাকে চেনা চেনা লাগছে। পরক্ষণে মনে পড়ে, এই ছেলেকে তো সে এয়ারপোর্ট দেখেছিল। এখানে কী করছে?
অর্ষাকে বিস্মায়ভূত হয়ে তাকিয়ে থাকতে দেখে হেলেনও অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। সেও অবাক হয়ে বলল,’তুমি!’
চলবে…
[কার্টেসী ছাড়া কপি করা নিষেধ।]