যখন এসেছিলে অন্ধকারে ৫।

0
406

যখন এসেছিলে অন্ধকারে
৫।
পরবর্তী দুটো দিন ইমরান কাজে অতিব্যস্ত হয়ে থাকল, সারাদিন ওকে ল্যাপটপে খুটুরমুটুর করতে দেখা গেল আর রাতটা দুজনে একসাথে একঘরে থাকলেও, অনিকে একেবারেই এড়িয়ে চলল ও।

অনিতে আটকে গেলে, ওর সারাজীবনের তপস্যা ভেঙে যাবে। উপরে, আরও উপরে, সবার উপরে ওঠার যে স্বপ্নটা ওর তা অধরাই হয়ে থাকবে।

টপ পজিশনে চাকরি করে, কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ইনকাম করাটাই ওর লক্ষ্য নয় শুধুমাত্র, নতুন নতুন বিজনেস স্ট্রাটেজি, নতুন ক্যাম্পেইন আইডিয়া, একেবারেই ভিন্ন মার্কেটিং মডেল আবিস্কার করে মার্কেটিংগুরুদের নামের পাশে নিজের নামটা লিখে দিতে চায় ও। চলার পথের অতি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক ও পার হয়ে এসেছে, এখন চূড়ায় ওঠার সময়। তালগাছের শেষ আড়াইহাত বেয়ে ওঠা যেমন কষ্টের তেমনি সাফল্যটা চোখে দেখা দূরত্বে থাকলেও এই রাস্তাটুকুই সবচেয়ে কঠিন আর শ্রমসাধ্য।

এই চলার পথে অনি এখন শুধুমাত্র একটা ব্যারিয়ার ইমরানের কাছে, যাতে পা বেধে হোঁচট খাওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। মুখ থুবড়ে পড়াটাও অসম্ভব না।
পুরো পৃথিবী যখন দৌঁড়োচ্ছে, অনির আঁচলে আটকে গেলে ওকে পেছনে ফেলে অন্য সবাই এগিয়ে যাবে, চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না ওর।

তাই তালাক বাতিলের কথা কিছুই জানালো না ও অনিকে। আগে দেশ ছাড়তে হবে। আর অনি তো থাকলই। কোথাও চলে তো যাচ্ছে না।
নিজের স্বপ্নগুলো পূরণ করেই না হয়, অনির সাথে সবকিছু মিটিয়ে নেওয়া যাবে। ততদিন যেমন চলছে সব, চলুক।

এই দুটোদিন ইমরান নিঃশ্বাস বন্ধ করে ছিলো এইভেবে যে, এই না অনি সবাইকে সবকিছু বলে দেয়। এই না ইমরানের মা এসে ওকে চেপে ধরে। অনির মা, চাচা বা ভাই না জানি কী গন্ডগোল করে। কিন্তু কিছুই যখন হলো না, তখন নিশ্চিন্ত হলো ও, অনি কাউকেই কিছু বলেনি আর বলবেও না।

বুকের আলোড়নটা একটি কমল। অনি থাকুক। আরেকটু বড় হোক। নিজেকে সাজিয়ে নিক আর ইমরান নিজেও নিজের স্বপ্নগুলো গুছিয়ে ফেলুক। তাড়াতাড়ির তো কিছুই নেই।
এই মূহুর্তে অনিতে আটকে যাওয়া যাবে না, অনির ফাঁদে গলা বাড়িয়ে দেওয়া যাবে না!

*****

অনির বাবা এনায়েত শিকদার বুদ্ধিমান আর পরিশ্রমি মানুষ ছিলেন। ছিলেন পরিবার অন্তপ্রাণ মানুষ। জমিজমা যা ছিলো তা চারভাইয়ের সপরিবার অন্নসংস্থানের জন্য যথেষ্ট হলেও, উন্নত জীবনযাত্রার জন্য পর্যাপ্ত ছিলো না। এনায়েত শিকদার ছিলেন উচ্চাভিলাষী মানুষ। কীভাবে কীভাবে মিশরের একটা তেলের পাম্পে চাকরি জুটিয়ে ফেলেন আর দূরদেশে পাড়ি জমান। পাঁচবছরের পরিশ্রমের টাকায়, পলাশডাঙায় দোতলা মার্কেটভবন করেছেন আর চারভাই মিলে গরুর ফার্ম করেছেন। শুরুতে ছোটো করে শুরু করলেও সেই ফার্ম এখন বিশাল, প্রায় তিনশো গরু আছে এখন। এনায়েত শিকদার শুরু করে গেলেও শেষটা দেখে যেতে পারেননি। অনির বয়স এগারো আর অলি মাত্র নয়, সবার বড় পরশকে সতেরো বছরের রেখে স্ট্রোক করেন। ভাইয়েরা সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেছিল, সুস্থ করতে কিন্তু আয়ু যার ফুরায় তাকে কি আর কোনো চেষ্টাতেই রাখা যায়?

বাবা মরে গেলে সবার আদর কদর কমে গেলেও অনি, পরশ আর অলির বেলায় তা হয়নি। চাচারা তাদের ভাইকে খুব ভালবাসত।
অনির বাবা মরে যাওয়াই সেই ভালোবাসা যেন বহুগুণে বেড়ে গেল। এতটাই যে মৃত ভাইয়ের বাচ্চাগুলোকে শাসন করার গুরুতর কারণ থাকলেও, চোখ পাকিয়ে কথা বলতেই মনে সায় দেয় না। সারাক্ষণ শুধু মনে হয়, ‘আহারে বাপমরা বাচ্চাগুলো!’
এই না শাসনে ক্ষতিটা হয়েছে অনির বেশি। পড়াশুনা, চালচলন, রাঁধাবাড়া, সেলাইফোঁড়াই কিছুই শেখেনি, সারাগ্রামে টইটই করে এর ওর ঘরের খবর নিয়ে, সারাগ্রামের মানুষের ঘরের লোক হয়ে উঠেছে যেমন তেমনি একেবারে অবাধ্য বুনোলতার মতো গেঁয়ো আর চঞ্চল হয়ে উঠেছে।

কোনোদিন তাকে দেখা যায় মালা কাকির বাড়ি, তার সাথে বসে, গোবর দিয়ে উঠোন লেপতে, জরিফুফুর মাচায় লাকড়ি উঠিয়ে দিতে, আলতাফের মায়ের হাঁসের বাচ্চা খুঁজে আনতে, বুড়োর মা দাদির সাথে রাস্তার পাশের খাদায় নেমে হেলেঞ্চা শাক তুলতে, অনাবৃষ্টির দিনে বাচ্চাদের সাথে কাদায় গড়াগড়ি দিতে!
পাড়ায় কার চালে কুমড়ো পেকেছে, কার পেয়ারা ডাসা, কার গাছের বরই চুকা, কার বাড়ির পেছনে ঢেঁকিশাকের আস্তানা, কার খোপের মুরগি তা দিতে বসেছে – এসব তথ্য ওর নখদর্পনে।

রমিজ কাকা নেশা করে এসে কোন রাতে কাকিকে পেটায়, সকালে কাকির মুখ দেখে বুঝে যায় ও। পিয়ালির শশুরবাড়ি থেকে যৌতুকের চাপে ওর স্বামি ওকে বের করে দিয়েছে, অনিই আগে খবর পায়।
হামিদ কাকার বউ তার বুড়ো মাকে খেতে দেয় না। জরিফুফুর ভাই দুটো খেতে দেওয়ার বিনিময়ে উদয়অস্ত পরিশ্রম করিয়ে নেয় তাকে দিয়ে।
মিশুর খুব ভালো বিয়ে হয়েছে- বর রাত্রে খুব আদর করে।
সোনামণির বর কত কত গয়না-শাড়ি কিনে দেয়- এ সমস্ত সালিশ বা নিষিদ্ধ গল্পের কমন শ্রোতা অনি।

জরিফুফুর এক চোখ নষ্ট, জন্ম থেকেই। বিয়ে দেওয়ার সময় তার বাবা খাট,তোষক, হাড়িপাতিল তো দিয়েছিলোই, নতুন একটা ঘর তুলে দিয়েছিল, আর মেয়েজামাইকে একটা সাইকেলও কিনে দিয়েছিল। কানা বউকে তাই কদরও করত সবাই শশুরবাড়িতে। বছর ঘুরতেই বাবা মরল, ভাইরা কিছু দেওয়া কমিয়ে দিলো আর জরিফুফুরও কপাল পুড়ল।
বাবা মরার ছয় মাস যেতে না যেতেই যে ঘর তার বাবার টাকায় উঠেছিল, সেই ঘর থেকে বিতাড়িত হলো সে। বাবার বাড়ি তখন ভাইবউদের বাড়ি। বড়ঘরে জায়গা হলো না তার। এককোণায় গোয়ালঘরের সাথে একটা একচালার কোণে পড়ে থাকে।
লাকড়ি বানানো, গরুর দেখাশোনা, ধানের কাজ, নদী পর্যন্ত হেঁটে বাচ্চাদের গু-মুতের ত্যানা ধুয়ে আনা, উঠোন-ঘর লেপা – সব কাজ তার কাঁধে। ভেতরবাড়ির কাজে যেমন তাকে কেউ ডাকে না, তেমনি গ্রামের কোনো শুভ অনুষ্ঠানেও তার উপস্থিতি নিষিদ্ধ। ভাইদের যে ছেলেমেয়েগুলোকে কোলেপিঠে করে মানুষ করেছেন তাদের বিয়ে-আনন্দতেও উঁকি মারার অধিকার নেই জরিফুফুর। বিয়েশাদিতে চোখের পানি ফেলা অমঙ্গল, তাই ওইদিন জরিফুফু কাঁদেন না। বিয়ের পরেরদিন ফুলে ফুলে কাঁদতে দেখা যায় তাকে। জরিফুফুর চোখের কোণা দিয়ে গড়িয়ে আসা সেই চোখের পানি আর গোঙানির শব্দ মিলেমিশে অনিকে ভয় দেখাতে লাগল।

পরশের বিয়েতে জি বাংলার নায়িকাদের মতো করে সাজতে পারবে না, অলির বিয়েতেও কেউ ওকে ডাকবে না। সীমা আপা আর রিমার বিয়েতে ও মেলানি যেতে পারবে না!
জরিফুফুর ভাগ্য আর অনির ভাগ্যও তো মিলে-মিশে গেল। তাও জরিফুফু যখন তখন কাঁদে শব্দ করে, অনি তো তাও পারছে না!

একই বিছানায় পাশাপাশি শুয়ে ইমরান যখন নিজের ফিউচার ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবছে, অনিও ঠিক তাই। নিজের ভবিষ্যৎ ভাবছে।
গ্রামের কোণায় পড়ে থাকা জরিফুফুর কষ্টের কথা মনে পড়ে ওর কান্নাও পাচ্ছে।

*****

ইমরান চলে যাচ্ছে আজ। বিকেলের ফ্লাইট। দু’ঘন্টা আগে চেকইন করতে হবে। দুপুরের খাবার বারোটার ভেতর দিতে বলেছেন ইমরানের বাবা। কিন্তু ইমরানের মা সাইদার কোনো হেলদোল নেই। থম মেরে আছেন। রাতভর কেঁদেছেন। এখনো একটু বাদেই নাক মুছছেন ওড়নায়।
ইমরানের বাবা এসে ডাকলেন তাকে ‘কী করছ, ইমরানের মা?’

সাইদা ওড়নার আঁচলে মুখ ঢেকে নিলেন। তার শরীর কেঁপে কেঁপে উঠছে, কান্নার দমকে।

আব্দুল মজিদ সাহেব এবারে স্ত্রীর মাথায় হাত দিয়ে ডাকলেন ‘ইমরানের মা, এমন করছ তুমি, মনে হচ্ছে ছেলেমেয়ে কারো কোনোদিন দূরে যায় না। কেউ মেয়ে বিয়ে দিয়ে শ্বশুরবাড়ি পাঠায় না। কারো ছেলে দূরে পড়তে যায় না। শুধু তোমার ছেলেই যেন বিদেশ যাচ্ছে।’

সাইদা উঠে বসলেন। মজিদ সাহেবের কাঁধে মাথা রাখলেন। তারপর নাক টানতে টানতে বললেন ‘ইমরানের বাবা, আমার ইমাকেও তো বিয়ে দিয়ে দূর করেছি, এমন তো লাগেনি। এমন বুকফাটা কষ্ট তো হয়নি।’

‘নিজেকে সামলাও, ছেলে বড় হওয়ার আশায় বিদেশ যাচ্ছে, অনেক উন্নতি করবে। কত গর্বের কথা বলো তো?’

‘ইমাকে শ্বশুরঘরে পাঠাতেও আমার কলিজা কেঁদেছে, কিন্তু এমন করে কাটেনি তো! এই ছেলেটাই যেন কেমন! কারো প্রতি টান নেই, কেউ নেই মহব্বতের। তাই খুব ভয় করছে, আর ফিরবে তো! কাউকেই তো ও ভালোবাসে না।’

‘ইমরান স্বার্থপর, সেটা বলতে চাচ্ছ?’

‘না, না। দূর থেকে কেউ ওরকম ভাবতেই পারে। আমার ছেলে মোটেও স্বার্থপর না। ও কারো জন্য কিছু করে না, কারো কাছ থেকে কিছু আশাও করে না। কিছু যেমন দেয় না কাউকে, কিছু নেয়ও তো না। ইমরান সাধু সন্ন্যাসীদের মতো, সবকিছুতেই বড় অরুচি, উদাসীনতা, চাহিদাহীনতা। তাই ভয় হচ্ছে, আতঙ্ক হচ্ছে। আর যদি ফিরে না আসে?’

‘আসবে। এই তো বিয়ে দিয়ে বউ এনে দিলে। তার টানে আসবে, তোমার মায়ায় আসবে।’

‘কথা দিচ্ছ, ইমরানের বাবা? ছেলে ফিরে আসলে তুমি যা চাইবে আমি তাই দেবো।’ কান্না বন্ধ হয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে সাইদার চোখমুখ!

‘যা চাইব তাই দিবা? কথা দিলে? ইমরানের মা?’

মাছ ধরার নেশা প্রবল আব্দুল মজিদ সাহেবের। গ্রামে গেলে তো বটেই, ঢাকাতেও প্রায়ই দলবল জুটিয়ে বিভিন্ন পুকুরে টিকিট কেটে মাছ ধরতে যেতে দেখা যেত তাকে। নানারকম টোপের ব্যবহার তার মতো ভালো করে কেউ পারে না। পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করে, ভাজা মেথি গুঁড়ো করে অদ্ভুত রকম টোপ বানান তিনি, অব্যর্থ! একেক মাছের জন্য একেক রকমের টোপ। পুকুরের পানি দেখেই তিনি বলে দিতে পারেন কোন টোপ খাটবে, কোন প্রজাতির মাছ খাবি খাচ্ছে। তিনবছর আগে এরকম মাছ ধরতে গিয়ে তীব্র গরমে সানস্ট্রোক হতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তার মাছ ধরতে যাওয়া নিষিদ্ধ হয়েছে। দুষ্প্রাপ্য সব টোপ ফেলে দেওয়া হয়েছে, ফিশিং হুইল স্টোরে, নানারকম হুক সেরদরে ভাঙ্গারিকে বেচে দেওয়া সারা!
মজিদ সাহেব শুধু সুযোগ খোঁজের কীভাবে স্ত্রীকে রাজি করানো যায়, কিন্তু সাইদা সেই টোপ গিললেন না। মজিদ সাহেবকে পাশ কাটিয়ে ছেলের খবর নিতে বেরোলেন।

ইমরানের ঘরে এসে দরজায় নক করলেন। ওই আলতো চাপেই দরজা খুলে গেল। ইমরান একটা চেয়ার পেতে ব্যালকনির দিকে মুখ দিয়ে বসে আছে। অনি এইপাশে খাটের উপর বসে মোবাইলে মুখ গোঁজা। সাইদা প্রথমে বিরক্ত হলেন দরজা খুলে রাখায়। নতুন বর-বউ দরজা খুলে রাখবে কেন? আর তারপরে রেগে গেলেন অনির উপরে। কী এমন মহাকাজ করছে মোবাইলে। ওইতো দুইঅক্ষর পেটে। সিনেমা নাটক দেখা ছাড়া মোবাইলে ওর কী? তা সেই সিনেমা নাটক করার জন্যই তো ওকে এনেছেন সাইদা। ইমরানের সাথে করুক না রঙ ঢঙ! আরেকটুখানি সময়ই তো আছে ছেলেটা। ছেলেটা যাক না, এই মেয়েকে কীভাবে সোজা করতে হয় দেখে নেবেন উনি!

ইমরানের মাথায় হাত রাখলেন নিঃশব্দে। ছেলেটা তাকালো। মিষ্টি করে হাসল মায়ের দিকে তাকিয়ে। সাইদার বুকের মাঝে কেমন করে উঠল! এতো সুন্দর কেন তার ছেলেটা? এমন বুক ছিঁড়ে নেওয়া হাসি কীভাবে হাসে?

সাইদা ফুলে ফুলে কেঁদে দিলেন আবার। ইমরান বিরক্ত হলো। উঠে দাঁড়িয়ে মাকে জড়িয়ে ধরল ‘আম্মু কান্না কোরো না তো!’

সাইদা অনেক কষ্টে কান্না চাপলেন।
তারপর বললেন ‘আব্বা, ওইদেশে নাকি অনেক ভালো ফ্যান পাওয়া যায়। আমার জন্য একটা আইনো, বুঝছ? গরমে রান্নাঘরে কাজ করতে আমার কষ্ট হয়।’

‘আব্বুকে বলব একজস্ট ফ্যান লাগিয়ে দিতে।’

‘না তুমি আনবা, ওইদেশ থেকে।’

‘এইদেশেই এখন জাপানের সব পাওয়া যায়, আম্মু।’

‘আসলগুলা পাওয়া যায় না। চায়নারটা দিয়ে দেয়। তুমি সাথে করে আনলে আর সন্দেহ থাকবে না।’

‘আচ্ছা।’

‘আর সাকুরা না কী যেন একটা গাছ আছে ওই গাছের একটা চারা আনবা। আর একটা চেরি ফুলের গাছের চারা। আনবা না?’

‘আমি আসার আগে তুমি ফোন করে বলে দিও কী কী লাগবে।’

‘তাড়াতাড়িই তো আসবা তাই না আব্বা?’

‘আম্মু তিনবছরের আগে কীভাবে আসব?’

‘একবার আসলা, আটদিন দশদিনের ছুটি নিয়ে আসে না মানুষ? কতজন তো আসে! বছর বছর আসে। বৌমা আছে, ওর বাড়ির লোক কী ভাববে? আসলা একবার?’

ইমরান আড়চোখে তাকালো অনির দিকে। সাইদার আগমনে মোবাইল সরিয়ে পাশে রেখে দিয়েছে। এদিকেই তাকিয়ে আছে, কপালভরা বড় বড় চোখ নিয়ে।

‘আচ্ছা আম্মু, চেষ্টা করব। পড়ার চাপ না থাকলে আসব। তুমি কান্নাকাটি কোরো না।’

ইমরানের মুখ যা বলছে চোখ তাতে সায় দিচ্ছে না। এই ছেলে খুবই ডিটারমাইন্ড। নিজের রাস্তা থেকে একটুও নড়বে না। মাকে স্বান্তনা দিলো শুধু। সাইদা বুঝলেন। কিন্তু কথা বাড়ালেন না। আরেকটু সময় আছে ছেলেটা। বউয়ের সাথে অন্তরঙ্গ সময় কাটাক।
কিন্তু এই বৌ তা বুঝলে তো!
ঘরে ঢুকেই তো দেখলেন দুজন দুদিকে!

‘আচ্ছা আব্বা, আমি তোমার খাবার দেই, তুমি আসো আস্তে আস্তে।’ বলতে বলতে চোখ মুছলেন সাইদা আর বেরোতে বেরোতে অনির দিকে তাকিয়ে চোখ টিপলেন আর ইশারা করলেন ইমরানের কাছে যেতে। বলার সুযোগ হলে হয়তো আরও অনেক অন্যায় ইচ্ছের কথাই প্রকাশ করে ফেলতেন তিনি…

চলবে…

Afsana Asha

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here