#যখন_আমি_থাকবোনা
#পর্ব_৮(অন্তিম পর্ব)
#লেখক_দিগন্ত
মুক্তি বাকের চৌধুরীর মুখে সবকথা শুনে অবাক হয়ে যায়। তার মানে তার ধারণা ভুল ছিল। মুক্তি এতদিন ভাবত বাকের চৌধুরী, আব্দুল মান্নান, আব্দুল্লাহ হক ও মিরাজ হোসেন মিলে তার মা’কে খু*ন করেছে। আজ মুক্তি বুঝতে পারছে তার ধারণা কতটা ভুল ছিল।
মুক্তি বাকের চৌধুরীর সামনে এসে বলে,
-“আজ আমি অনেক অজানা সত্য জানতে পারলাম। আমার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমার মা’কে এভাবে মে*রে ফেলা হয়েছিল। শুধু তাই নয় আমার নানাকেও। প্রতিশোধ তো প্রায় সম্পূর্ণ। এখন শুধু আব্দুল মান্নানকে তার পাপের শাস্তি পেতে হবে।”
বাকের চৌধুরী মুক্তিকে বলে,
-“ভালো করে ভেবে দেখো। উনি কিন্তু তোমার বাবা। তুমি কি ওনার উপর প্রতিশোধ নিতে পারবে?”
-“আমার কাছে ওনার একটাই পরিচয় উনি আমার মায়ের খু*নি। আমি ওনাকে ওনার পাপের শাস্তি অবশ্যই দেব।”
বাকের চৌধুরী বলে,
-“তার আর কোন দরকার নেই। আমি অলরেডি সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। আব্দুল মান্নানের গাড়িতে টাইম বো*ম্ব সেট করেছি। এতক্ষণে ও বোধহয়…”
স্নেহা বাকের চৌধুরী কে ফোন করে বলে,
-“আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আঙ্কেল আমার মায়ের খু*নিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য। আমি যখন প্রথম সবটা জানতে পেরেছিলাম আমারো খারাপ লেগেছিল। এখন আর খারাপ লাগছে না।আমার মা এখন খুব খুশি হয়েছে। যেখানে আছেন সেখান থেকেই।”
-“তোমার জন্য অনেক বড় একটা উপহার পাঠিয়ে দিচ্ছি আমি।”
-“কি উপহার?”
-“তোমার বোন নেহাকে তোমার কাছে পাঠিয়ে দিচ্ছি। মুক্তিই হলো নেহা।”
স্নেহা খুব খুশি হয় কথাটা শুনে। এতদিন ধরে তার বোন তার চোখের সামনে ছিল অথচ সে চিনতেও পারে নি।
বাকের বলে,
-“আর একটু অপেক্ষা করো শুধু।”
বাকের ফোনটা কে*টে দিয়ে মুক্তিকে বলে,
-“যাও তুমি তোমার জীবনটা সুন্দর ভাবে উপভোগ করো। #যখন_আমি_থাকবোনা তখন কিন্তু আমার অবর্তমানে তোমাকে সবকিছু সামলাতে হবে। আমার পরিবার, আমার রাজনীতি সব।”
মুক্তি বলে,
-“আমাকে ক্ষমা করবেন প্লিজ। কিন্তু আর যাই হোক আমি রাজনীতি করব না। আমার একদমই ভালো লাগে না এসব। শুধুমাত্র এই রাজনীতির জন্য আমার পুরো জীবন বদলে গেছে। আমার মা, নানা সবার মৃত্যুর কারণ এই রাজনীতি। সেই রাজনীতিতে আমি জড়াবো না।”
-“যা ভালো মনে করো। তবে আমার পরিবারকে কিন্তু তোমাকেই সামলাতে হবে। আব্দুল মান্নানকে খু*নের দায় নিয়ে আমি জেলে যাব। তুমি আমার পরিবারকে সামলে নিও।”
-“জি আচ্ছা।”
অন্যদিকে বিপ্লব এতক্ষণে জেনে গেছে যে মুক্তিই আসলে নেহা। সবটা জেনে খুব খুশি হয়েছে সে। এখন শুধু মুক্তির ফিরে আসার অপেক্ষা।
বিপ্লব মুক্তিকে ফোন করে। মুক্তি ফোন রিসিভ করতেই বিপ্লব অভিমানী সুরে বলে,
-“আমার থেকে সবকিছু কেন লুকালে এভাবে?”
মুক্তি বলে,
-“আমি কিছু লুকাইনি। তুমিই আমাকে চিনতে পারলে না। এখানে আমারকি কোন দোষ আছে নাকি? সব দোষ তোমার।”
-“দোষ গুনের হিসাব বাদ। এখন তুমি চলে আসো শুধু একবার। তারপর সবকিছুর জবাব দেব।”
-“#যখন_আমি_থাকবোনা তখন কাকে জবাব দেবেন?”
বিপ্লব রেগে গিয়ে বলে,
-“একদম বাজে কথা বলবে না। তুমি সবসময় থাকবে। আমার হয়ে থাকবে তুমি।”
বিপরীত দিক থেকে মুক্তির আর কোন আওয়াজ আসে না। বিপ্লব হ্যালো হ্যালো করতে থাকে কিন্তু মুক্তি কোন জবাব দেয়না।
_____________
১ বছর পর,
বিপ্লব আজ বিয়ের সাজে প্রস্তুত হচ্ছেম আজ তার বিয়ে। জীবনে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিপ্লব। স্নেহা বিপ্লবের সামনে এসে দাঁড়ায়। বিপ্লব স্নেহাকে দেখে হালকা হেসে বলে,
-“তোমার বোন বলেছিল #যখন_আমি_থাকবোনা তখন আমার মূল্য বুঝবেন। আমাকে ফিরে পেতে চাইবেন। তখন চাইলেও আর ফিরে পাবেন না৷ ও কিন্তু ওর কথা রেখেছে। নির্দয়ের মতো আমায় একা রেখে চাপ গেছে। আমিও ওর অনুপস্থিতিতে বুঝতে শিখেছি ওর মূল্য কতোটা। এখন আমি চাইলেও ওকে ফিরে পাবো না। শুধুমাত্র তোমাদের কথায় নতুন ভাবে জীবনটা শুরু করতে হচ্ছে।”
স্নেহা হা হুতাশ করে বলে,
-“কি করবো বলো? আমার বোনের জীবনটা কেমন জানি ছিল। মেয়েটা কষ্ট করেই গেল সারাজীবন। এখন আমাদেরকে কষ্ট দিয়ে চলে গেলো।”
আশরাফ হঠাৎ রুমে এসে বলে,
-“স্নেহা তুমি এখানে কি করছ? নিজের খেয়াল রাখার কথা একটুও মনে থাকে না তোমার। ভুলে যেওনা তোমার গর্ভে কে বেড়ে উঠছে। নিজের জন্য না হলেও নিজের সন্তানের জন্য কিছু করার কথা ভাবো।”
স্নেহা আশরাফকে বলে,
-“তুমি এত চিন্তার করো না ডাক্তার বাবু। তোমার বাচ্চা আর বাচ্চার মা দুজনেই ভালো থাকবে।”
আশরাফ মুচকি হাসে। এখন স্নেহার সাথে তার সম্পর্ক একদম স্বাভাবিক। শুধু তাদের পরিবারের অবস্থাই অস্বাভাবিক। বাকের চৌধুরী আব্দুল মান্নানকে খু*নের দায়ে জেলে, মুক্তিও নিখোঁজ। সবমিলিয়ে তাদের পরিবারের পরিস্থিতি একদম ভালো নয়।
আশরাফ বিপ্লবের সামনে এসে বলে,
-“তুই চল এখন। বিয়েটা করে নিতে হবে।”
বিপ্লবের মত না থাকার পরেও সে চলে যায় আশরাফের সাথে। স্নেহা মুক্তিকে স্মরণ করে বলে,
-“কোথায় হারিয়ে গেলি তুই বোন। হারিয়েই যদি যাবি তাহলে ফিরে এলি কেন? সবকিছু এলোমেলো করে দিয়ে আবার চলে গেলি। এখন তোকে ছাড়া কি করব আমি। তোকে যে খুব মনে পড়ে।”
•
বিয়ের আসরে বসে আসে বিপ্লব। পাত্রীর আসার কোন খোঁজ খবর নেই। হঠাৎ করে কেউ একজন এসে বলে,
-“পাত্রী আসছে। কিন্তু শর্ত হলো সে মুখ ঢেকে আসবে৷ বিয়ের আগে কেউ পাত্রীর মুখ দেখতে পারবে না।”
সবাই অবাক হলেও এই অদ্ভুত শর্ত মেনে নেয়।
কাজি এসে বিয়ে পড়ানো শুরু করে। বিপ্লব খুব অমনোযোগী হয়ে বিয়েটা করে নেয়। কবুল বলার পর পাত্রীকে খুব তড়িঘড়ি করে বিদায় দিয়ে দেওয়া হয়।
নতুন বউয়ের সাথে বাসর ঘরে পাঠানো হয় বিপ্লবকে। বিপ্লবের এখন খুব বিরক্ত লাগছে। মেয়েটা সেই কখন থেকে মুখ ঢেকে আসে। কোন কথাও বলছে না।
বিপ্লব নিজের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর সামনে এসে বলে,
-“আপনি কি এখনো মুখ দেখাবেন নাম তাহলে বিয়েটা করলেন কেন?”
পাত্রী কোন উত্তর দেয়না। বিপ্লবের বিরক্তির পাল্লা শেষ হয়ে যায়। এরমধ্যে তার ফোনে একটি কল আসে। কল রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে কেউ বলে,
-“মুক্তি এখনো বেঁচে আছে। সেদিন কয়েকজন তাকে কিডন্যাপ করেছিল। কারা করেছিল সেটা বলা যাবে না। কারণ তারা কোন খারাপ উদ্দ্যেশ্যে এমনটা করে নি। তারা একটি গোপন মিশনে যুক্ত ছিল। সেই মিশনের কাজে মুক্তিও যুক্ত ছিল। যাইহোক সেই গোপন মিশন সম্পূর্ণ হয়েছে। আমি এনাল সেই মিশনের প্রধান। এই মিশনটা এত গুরুত্বপূর্ণ যে বাইরের কাউকে এই মিশনের ব্যাপারে জানান যাবে না।”
বিপ্লব প্রশ্ন করে,
-“মুক্তি কোথায়?”
কিন্তু কলটা কে*টে দেয়। বিপ্লব কোন উত্তর না পেয়ে কাঁদতে থাকে। এ কি করে ফেলল সে। মুক্তির ফিরে আসার অপেক্ষা না করেই বিয়ে করে নিল। বিপ্লবের নিজের উপর রাগ করতে থাকে। সে তার সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীর উদ্দ্যেশ্যে বলে,
-“চলে যান এখান থেকে। আপনার প্রয়োজন নেই আমার লাইফে।”
মেয়েটি গান গেয়ে ওঠে,
-“ভালোবাসার অপারসুখে
পাইনা তোকে এই বুকে
ম-রছি আমি ধুকে ধুকে
থাকবে কি পাশেই আমার দুখে
বুঝবি তুই খুঁজবি তুই
#যখন_আমি_থাকবোনা
হাত বাড়িয়ে ডাকবি তুই
আর তো ফিরে আসবোনা।”
বিপ্লব অস্ফুটস্বরে বলে ওঠে,
-“মুক্তি..তুমি ফিরে এসেছ!”
(সমাপ্ত)
[গল্পটার এখানেই ইতি টানলাম। কাহিনি এতটুকুই ভাবা ছিল। গল্পটা যারা শুরু থেকে পড়েছেন তাদের ধন্যবাদ। গল্পটাকে ১০ এ কত দেবেন আর প্রিয় চরিত্র কোনটি সেটা বলুন। আগামীকাল নতুন গল্প নিয়ে ফিরতে পারি। প্লিজ সবাই রেসপন্স করবেন নতুন গল্পে 🥺🥺]