#যখন_আমি_থাকবোনা
#পর্ব_৫
#লেখক_দিগন্ত
মুক্তি রহস্যজনক হাসছে। আজ সে নিজের একটা উদ্দ্যেশ্য পূরণের পথে। তার প্রতিশোধের তালিকায়
যারা ছিল তাদের একজনকে আজ শাস্তি দিতে চলেছে সে। তার আজকের শি*কার বাকের চৌধুরীর ডানহাত খ্যাত আব্দুল্লাহ হক। সে বাকের চৌধুরীর অত্যন্ত বিশ্বস্ত একজন সঙ্গী। মুক্তির আজও মনে পড়ে যায় এই লোকটা কি করেছিল তার সাথে। তাই মুক্তি আজ সেসব কিছুর প্রতিশোধ নেবে। আলেয়া চৌধুরীর সাথে মিলে খুব সুন্দর একটা পরিকল্পনাও করে নিয়েছে। এখন শুধু রাত ১২ টা বাজার অপেক্ষা। ব্যাস তাহলেই মুক্তি শে*ষ করে দেবে আব্দুল্লাহ হককে।
বিপ্লবের তখনকার ব্যবহারের জন্য মুক্তির মন বেশি ভালো নেই। তবে সে জানে বিপ্লব না জেনে এসব করেছে। যদি কখনো বিপ্লব জানতে পারে মুক্তি আসলে কে তাহলে কখনো এমন করতো না। তবে মুক্তি চায়না বিপ্লব এখনোই তার সম্পর্কে জানুক। যদি জানে তাহলে তার উদ্দ্যেশ্য পূরণের পথে বাধা সৃষ্টি হতে পারে। তাই মুক্তি আপাতত বিপ্লবকে কিছু জানতে দিতে চাইছে না।
•
আলেয়া বেগম বাগানের ফুলগুলোতে পানি দিচ্ছে। এমনিতে এসব কাজ মালি করে থেকে কিন্তু আজ তার খুব ইচ্ছে করছে কাজগুলো করার। একপর্যায়ে আব্দুল্লাহ হক চলে আসে সেখানে। আব্দুল্লাহ হককে দেখে আলেয়া বেগম বুকে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করেন। আজ রাতে এই লোকটাকে শা*স্তি দিতে হবে। এটা কখনো ভাবেন নি আলেয়া। একসময় যাকে নিজের থেকে বেশি ভালোবাসত আজ কিনা তারই মৃ*ত্যুর বন্দবস্ত করতে হচ্ছে। আব্দুল্লাহ আলেয়ার সামনে এসে মাথা নিচু করে নেয়। আলেয়া আব্দুল্লাহকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,
-“এতট ঠকবাজ না হলেও পারতে।”
আব্দুল্লাহ মাথা উঁচু করে বলে,
-“আর যাকেই ঠকাই না কেন আপনাকে ঠকানোর কথা কখনো ভাবি নি। আপনি তো জানেন সেটা।”
আলেয়া কোন উত্তর দেয়না। তার সামনে ভেসে আসে অতীতের কিছু স্মৃতি। যেই ভয়ংকর অতীত আজ এইরকম একটা নোংরা খেলার সৃষ্টি করেছে।
অতীত~~
রাজনীতির মঞ্চে মুশফিক রহিম এক চিরচেনা নাম। অনেক জনপ্রিয় এক জনদরদী নেতা তিনি। রাজনীতির মঞ্চে তাই তার একক আধিপত্য। মুশফিক হকের একমাত্র মেয়ে মতিয়া। দেখতে যেমন সুন্দরী তেমনই সুন্দর তার ব্যবহার। মনে কোনরকম অহংকারের লেশমাত্র নেই। গরীব ধনী সবাইকে এক করে নেয়।
বাবা ব্যস্ত রাজনীতিতে। তাই মতিয়াকে দেওয়ার মতো সময় তার নেই। এই নিয়ে মতিয়ার কোন অভিযোগও নেই। সে জানে তার বাবা একজন ভালো মানুষ। যা করে মানুষের ভালোর জন্যই করে।
মতিয়া অবশ্য একা নেই। তার সাথে রয়েছে তার ফুফাতো বোন আলেয়া। মতিয়ার ফুফা ফুফি অনেক বছর আগে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মা*রা যায়। তারপরেই মুশফিক রহিম আলেয়াকে নিজের বাড়িতে এনে নিজের মেয়ের মতোনই দেখেন। মতিয়ার শৈশব কৈশোর কে*টেছে আলেয়ার সাথেই।
এখন দুজনেই কলেজের ছাত্রী। এই বয়সেই আলেয়ার মনে বসন্ত লেগে গেছে। তাদের পাশের ভার্সিটির আব্দুল্লাহ নামের একটি ছেলেকে মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে সে। আব্দুল্লাহ প্রথম প্রথম তাকে পাত্তা না দিলেও এখন দুজনের মধ্যে প্রণয় চলছে।
অপরদিকে মতিয়ার এসব প্রেমে কোন আগ্রহ নেই। সে পড়াশোনা আর মানুষের সেবা নিয়েই থাকতে চায়। তবে আলেয়ার প্রেম নিয়েও তার কোন সমস্যা নেই। আলেয়ার প্রেমের গল্প শুনতে তার বেশ ভালোই লাগে।
এরকমই একদিন আলেয়া মতিয়াকে ভার্সিটিতে নিয়ে যায় জোরপূর্বক। উদ্দ্যেশ্য বর্ষবরণ অনুষ্ঠান দেখা। মতিয়া তার বাবার থেকে অনুমতি নিয়ে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান দেখতে যায়। সেই অনুষ্ঠানে ভার্সিটির প্রায় সকল ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন ছিল বাকের চৌধুরী। ভার্সিটির ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে যে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। একটি ছাত্র সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সে।
দাঁড়িয়ে অনুষ্ঠান দেখার সময় হঠাৎ করে বারেকের চোখ আটকে যায় সুন্দরী এক রমনীর দিকে। যার সরু দুই জোড়া চোখ, গালে টোল পড়া হাসি মুগ্ধ করে তাকে। বারেক মুগ্ধ হয়ে মেয়েটিকে দেখতে থাকে। আব্দুল্লাহ বারেকের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল। ছোটবেলা থেকেই তারা একে অপরের বন্ধু। তাই বারেক আব্দুল্লাহ কে ডেকে মেয়েটিকে দেখিয়ে দিয়ে বলে,
-“কে ঐ সুন্দরী রমণী?”
আব্দুল্লাহ বাকের চৌধুরীর ইশারামতো সেদিকে তাকিয়ে বলে,
-“ঐ মেয়েটার কথা বলছ ওস্তাদ! ওর নাম তো মতিয়া। মন্ত্রী মুশফিক রহিমের একমাত্র মেয়ে। তোমাকে আলেয়ার কথা বলেছিলাম না। আমার প্রেমিকা। আলেয়ার ফুফাতো বোন ঐ মেয়েটা।”
বাকের ব্যাকুল কন্ঠে বলে,
-“আমাকে যে করেই হোক মেয়েটার সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করে দে।”
-“আচ্ছা ওস্তাদ দেখছি।”
আব্দুল্লাহ বরাবরই বাকেরের বাধ্য। তাই তাকে কোন প্রশ্ন না করে সামনে এগিয়ে আসে। কিন্তু তার বুঝতে আর বাকি নেই যে তার ওস্তাদ প্রেমে পড়েছে। তাও আবার তারই প্রেমিকার বোনের! ভাবা যায়।
কিন্তু আব্দুল্লাহর পৌঁছানোর আগেই মতিয়া সেখান থেকে চলে যায়। আব্দুল্লাহ মতিয়াকে খুঁজে না পেয়ে আলেয়াকে জিজ্ঞাসা করে,
-“তোমার মামাতো বোন কই?”
-“এখানেই তো ছিল। জানি না কোথায় গেল।”
অন্যদিকে মতিয়া একজনের দিকে মুগ্ধদৃষ্টিতে অপলক তাকিয়ে ছিল। জীবনে প্রথম কারো জন্য এমন অদ্ভুত অনুভূতির জন্ম হলো তার মনে। সে যেন নেশাক্ত হয়ে গিয়েছিল সুদর্শন যুবকের মধ্যে। মতিয়া অবাক হয়ে অবলোকন করছিল যুবকটির সৌন্দর্য। একপর্যায়ে চোখ যায় ছেলেটির বুকে লাগানো ব্যাচের দিকে। যেখানে লেখা ছিল, “আব্দুল মান্নান”
বর্তমান~~
মুক্তি ও আলেয়া অধীর আগ্রহে বসে আছে ১২ টা বাজার জন্য। এরমাঝে আলেয়ার চোখ ইতিমধ্যেই ভিজে গেছে। মুক্তি বুঝতে পারছে তার অবস্থাটা। তাই তার বুকে মাথা রেখে বলে,
-“এখনো ভালোবাসেন তাকে?”
আলেয়া চোখের জল মুছে বলে,
-“ভালোবাসা কখনো হারিয়ে যায়না। ভালোবাসা মনের মাঝে খুব সুপ্তভাবে লুকিয়ে থাকে। জানি এটা বলা অন্যায় হবে কারণ আমার স্বামী, সন্তান সব আছে। তবুও সত্য তো সত্যই। আব্দুল্লাহকে একসময় খুব ভালোবাসতাম আমি। আর আজ সেই ভালোবাসার মানুষটাকেই কিনা..”
মুক্তি তৎক্ষনাৎ বলে,
-“আপনি সেই আব্দুল্লাহকে ভুলে যান যে আপনাকে পাগলের মতো ভালোবাসত। যে ছিল এক সহজ, সরল ব্যক্তি। বরং সেই ভয়ানক আব্দুল্লাহকে মনে করুন। তাহলেই দেখবেন আপনি সাহস পাবেন তাকে শে*ষ করার।”
আলেয়া মাথা নাড়ায়। হঠাৎ করে মুক্তির ফোন বেজে ওঠে। মুক্তি ফোনটা রিসিভ করতেই বিপরীত দিক থেকে এনাল বলে ওঠে,
-“এতবড় সত্যটা তুই কেন আমার থেকে লুকিয়েছিস?”
মুক্তি বুঝতে পারে না এনাল কি বলতে চাইছে। তাই সে জিজ্ঞাসা করে,
-“কি বলছ একটু বুঝিয়ে বলবে?”
-“তুই আমার মামাতো বোন না। মিরাজ হোসেনের মেয়ে না তুই। আজ মা-বাবার কথোপকথনের মাধ্যমে আমি এই সত্যটা জানতে পারলাম। তাহলে বল আমায় কে তুই?”
মুক্তি বাঁকা হেসে বলে,
-“তুমি একদম ঠিক জেনেছ। আমি তোমার মামাতো বোন নই। মিরাজ হোসেনের মেয়ে নই আমি। মিরাজ হোসেনের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। অবশ্য এটা বললে ভুল হবে যে কোন সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক ছিল তবে এটা প্রতিশোধরে। সেই প্রতিশোধ অন্য কেউ নিয়ে নিয়েছে৷ তবে আমি নিজের হাতে তাকে শাস্তি দিতে পারলে আরো বেশি খুশি হতাম।”
এনাল ব্যাকুল হয়ে বলে,
-“কিসের প্রতিশোধের কথা বলছিস তুই? আমাকে সত্য করে বল। কি তোর আসল পরিচয়।”
মুক্তি বলে,
-“সময় হলে তুমি সব জানতে পারবে। আপাতত এটা জেনে রেখ আমার উদ্দ্যেশ্য প্রতিশোধের। আর আজ আমি এমনই একজনের উপর প্রতিশোধ নিতে চলেছি।”
এমন সময় আলেয়া বলে ওঠে,
-“১২ টা বেজে গেছে মুক্তি।”
মুক্তি ফোনটা কে*টে দিয়ে বলে,
-“চলুন। আমাদের কাজ শুরু করে দেই।”
(চলবে)