গল্প: #মেহেরিন
৩য় পর্ব (শেষ পর্ব)
লেখা: #Jasmine_Diya
আমার হাসি থেমে গেছে। কিন্তু এখনো কানে হাসির আওয়াজ ভেসে আসছে। আমি চমকে গেলাম। আশ্চর্য! আমিতো হাসছিনা। তাহলে কে হাসছে? মুহুর্তেই ঘর অন্ধকার হয়ে গেল। ঘরের ঝাপসা আলোয় আয়নার দিকে তাকাতেই ভয়ে আমার মাথার ভিতর সহ পুরো শরীর কাঁপছে!
আয়নার ভিতর একটা মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চুলগুলো এলোমেলো, পুরো শরীরে অনেক ক্ষতের চিন্হ। একটা নীল রঙের শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি। কতটা ভয়ানক লাগছে দেখতে। আমার হার্টবিট ধুকধুক করছে। আমি উঠে দ্রুত দরজা খুলে বাহিরে যেতে চাইলাম। কিন্তু দরজা কিছুতেই খুলছেনা। একটা ভৌতিক পরিবেশে চলে এসেছি আমি। ভয়ে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অনেক জোরে চিৎকার করছি তাও কেউ আসছেনা। মনের ভয় আমাকে আরো বেশি দুর্বল করে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে এখনি সে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আমার হাত চেপে ধরবে। মুখ দেখেই চিনেছি। এটাই মেহেরিন। কিন্তু সে এতটা ভয়ানক হলো কীভাবে? আমি কোনো কথাই বলতে পারছিনা। শুধু হাঁপাচ্ছি আর চোখ বন্ধ করে বলছি, “প্লিজ আমার সামনে এসোনা, চলে যাও। আমাকে বাহিরে যেতে দাও প্লিজ।”
মেহেরিন হাসি থামিয়ে বললো, “চিৎকার করোনা, তোমার চিৎকার কেউ শুনতে পাবেনা।” এটা শুনে আমি যেন ভয়েই চুপ হয়ে গেলাম। মেহেরিন আবার বললো, “ভয় পেয়োনা, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করবোনা। আমি কিছু কথা বলতে এসেছি। এখনি আমাকে আবার চলে যেতে হবে।” তার কথা শুনে ভয় কিছুটা কমছে। কিন্তু শরীর এখনো কাঁপছে। অলৌকিক কিছু একটা ঘটছে তা বুঝতে পেরেছিলাম। কিন্তু এতোটা ভৌতিক পরিবেশের মুখোমুখি হতে হবে তা কল্পনাও করিনি। আমি কাঁপা গলায় বললাম, “তোমার এই অবস্থা হলো কীভাবে? তুমিই অলৌকিক শক্তি দিয়ে এই সবকিছু করাচ্ছো। তাই না? তুমি আলভী কে ঠকিয়েছো আবার এখন আমাকেউ বিপদে ফেলেছো। কেন?”
মেহেরিন বললো, “আমি কাউকে ঠকাইনি। আলভী আমাকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু ওরা আলভীর কাছে আমাকে খারাপ বানিয়েছে। আলভী সারাজীবন আমাকে ঘৃনা করবে তা আমি মানতে পারছিনা। ওরা আমাকে হত্যা করেছে। কিন্তু আলভী প্রতিদিন আমাকে ঘৃনা করে যেই কষ্ট পাচ্ছে সেই কষ্ট আমাকেউ এই জগত থেকে মুক্ত হতে দিচ্ছেনা।” তার কথাগুলো শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। মেহেরিন মারা গেছে?
এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে তা আমি কল্পনাও করিনি। আমি অবাক হয়ে বললাম, “কারা তোমাকে হত্যা করেছে? আর আমি দেখতে হঠাৎ তোমার মত হয়ে গেলাম কেন?” মেহেরিন বললো, “কেউ জানেনা আমি মারা গেছি। সবাই জানতো আমি দূরে কোথাও পালিয়ে যাচ্ছি। তাই ডিভোর্স করিয়ে রাখার জন্য আলভীর আত্মীয়রা আমাকে খুঁজতে বাসস্ট্যান্ড এ গিয়েছিল। সেখানে আমি তোমার রুপ পরিবর্তন করে দেই।” আমি বললাম, “এখানে তো সবাই আমার উপর বিরক্ত হয়ে আছে। তাহলে আমাকে এর মধ্যে নিয়ে এসেছো কেন? আমি এখন কী করবো?” মেহেরিন বললো, “তোমার কাজ হলো, আলভীর মনে আমার জন্য যেই ঘৃনা জন্মেছে সেটা তুমি মুছে দিবে। তোমার কাছে আজকের রাত টাই সময় আছে। কাল সকালে যখন ডিভোর্স এর জন্য পরিবারের সবাই একসাথে হবে তখন তুমি সেখানে সবার সামনে প্রমাণ করবে যে আমি নির্দোষ।”
আমি বললাম, “আমি কীভাবে এতকিছু করবো? কেউ তো আমার কথা শুনতেই চায়না। আর কারা তোমাকে খারাপ বানিয়েছে সেটা তো বললে না?” মেহেরিন বললো, “আলভীর বড় বোন আর শিপা। তারাই আমাকে হত্যা করেছে। তুমি যদি কালকে সব প্রমাণ করতে না পারো তাহলে শিপার সাথে আলভীর বিয়ে দিয়ে ওরা আলভীর অনেক ক্ষতি করবে।” কথাটা শুনেই আমি চমকে গেলাম। আলভীর বোন আর শিপা এই কাজ করেছে? এই জন্যই তারা আমার আসল পরিচয় নিশ্চিত হতে আমাকে আমার বাড়িতে যেতে দিতে রাজি হয়েছিলো। কারণ তারা দুইজন জানতো মেহেরিন মারা গেছে। কিন্তু মেহেরিনকে কীভাবে তারা ফাঁসিয়েছে আমিতো কিছুই জানিনা। তাদের মুখে সবকিছু স্বীকার করাবো কীভাবে! আমি বললাম, “আলভী তোমাকে কেন এত ঘৃনা করে? কী হয়েছিল আমাকে বলো তুমি।”
মেহেরিন বললো, “আমি বুঝতে পেরেছিলাম এই সম্পত্তির জন্য আমাদের সুন্দর সম্পর্কের উপর অনেক মানুষের নজর পরবে। তাই আমি আলভীকে বুঝিয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এই সব সম্পত্তি বিভিন্ন ফান্ড এ দান করে দিব। তারপর একটা ছোট বাড়িতে দুজনের ছোট একটা ভালোবাসার সংসার হবে। দুজন আনন্দে থাকবো। সম্পদ কীভাবে কোথায় দান করবো তা ঠিক করে আমি সব কাগজ রেডি করেছিলাম। কিন্তু আলভীর বড় বোন এটা জেনে যায় আর আমাকে সরিয়ে শিপার সাথে আলভীর বিয়ে দিয়ে সব সম্পদ নিজের করে নিতে চায়। তাই সে আমার তৈরী করা কাগজ গুলো বদলে সেখানে অন্য কাগজ রেখে দেয়। সেই কাগজে লেখা ছিলো সব সম্পত্তি আমি আমার নামে লিখে নিচ্ছি। এটা দেখে আলভী অনেক কষ্ট পায়। সেই সুযোগে আলভীর বোন আর শিপা আমাকে কিডনাপ করিয়ে একটা ঘরে আটকে রাখে আর একটা নাটক সাজিয়ে প্রমাণ করে আমি অন্য একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে আছি। আমার কথা বলে তারাই আলভীর কাছ থেকে কাবিনের টাকা নেয়। তারপর আমার উপর শারীরিক নির্যাতন করতে করতে আমাকে হত্যা করে। তাদেরকে সব সত্য বলতে বাধ্য করবে তুমি। তারাই আমাকে হত্যা করেছে। ওদেরকে শাস্তি পেতে হবে। কঠিন শাস্তি।” এটা বলেই মেহেরিন উধাও হয়ে গেল। ঘরে আলো জ্বলে উঠলো।
আমার মাথার ভিতরটা ভনভন করছে। সম্পত্তির জন্য মানুষ এতটা ভয়ানক ভাবে নিষ্ঠুর হতে পারে তা ভাবতেই পারছিনা। তারা নিজেরা এত বড় অন্যায় করে বসে আছে আর আমার সাথে এমন ব্যবহার করেছে যেন আমি কত খারাপ মেয়ে। কিন্তু এখন তাদেরকে সবকিছু স্বীকার করাবো কীভাবে? যেখানে তাদের ভয় পাওয়ার কথা সেখানে কিনা আমি তাদের কথা শুনে ভয় পেয়ে বসেছিলাম? কার ভয় কে পাচ্ছে।
ভয়ের কথা বলতেই মাথায় একটা বুদ্ধি আসলো। ভুতের ভয় আর মরার ভয় মানুষকে অনেক কিছুই করতে বাধ্য করে। এখন এই ভয়ের মাধ্যমেই তাদেরকে সবকিছু স্বীকার করাতে হবে। তারা দুজন জানে আমি মারা গেছি। কিন্তু ফিরে আসলাম কীভাবে সেটা নিয়েই তারা চিন্তায় আছে। এই চিন্তাকে কাজে লাগিয়েই তাদেরকে ভয় দেখাতে হবে। আমাকে এখন মৃত মানুষের আত্মা হতে হবে। কীভাবে কী করবো তা ভাবছি। হঠাৎ দরজায় কেউ নক করলো। এখন আবার কে আসলো?
দরজা খুলে দেখি বাড়ির কাজের লোকটা আমার জন্য খাবার নিয়ে আসছে। সে খাবার রাখতে রাখতে বললো, “আপনি যে আলভী স্যার এর কাছে গেছিলেন তা আমি দেখছি। তাই ইচ্ছা কইরাই দেরিতে খাবার নিয়া আসছি। তারে যেহেতু জোর কইরা খাওয়াইতে পারছেন, তাই চাইলে সম্পর্কটা আবার আগের মত সুন্দর কইরা নিতেও পারবেন। কালকে ডিভোর্সটা হইতে দিয়েন না ম্যাডাম।” এটা বলেই সে চলে যাচ্ছে। আমি দ্রুত তাকে ডেকে বললাম, “আপনার কী মনে হয় যে আমি এত খারাপ কাজ করতে পারি?”
লোকটা বললো, “মনে তো হয়না। এহনো বিশ্বাস করতে পারিনা। কিন্তু পৃথিবীতে বিশ্বাসের তো কোনো দাম নাই।” আমি বললাম, “আপনি যদি আমাকে একটু সাহায্য করেন তাহলে কালকে সকালে আমি প্রমাণ করে দিব যে আমি নির্দোষ।” কথাটা শুনে সে কিছুটা আনন্দিতো হয়ে বললো, “বলেন কী করতে হইবো? আমিতো চাই সবকিছু ঠিক হইয়া যাক।” আমি তাকে বললাম, “আপনি আপনার বড় আপাকে গিয়ে বলবেন যে আপনি আমাকে খাবার দিতে এসে দেখেছেন আমি সিলিং এ পা দিয়ে উল্টো হয়ে হাটছি।”
কথাটা শুনেই সে চমকে গিয়ে বললো, “মাথা খারাপ নাকি? সবার মনের যেই অবস্থা। এখন এমন মজা করলে আপা আমারেও বাসা থেকে বের কইরা দিব।” আমি বললাম, “প্লিজ এই কাজ টা করুন। আলভীর বোন আর শিপা জানে আমি নির্দোষ। শুধু তাদের মুখে স্বীকার করানোর জন্য আমাকে এইটুকু সাহায্য করুন প্লিজ।” লোকটা অবাক হয়ে বললো, “কী বলেন? শিপা মাইয়াডারে আমার এমনি সন্দেহ হয়। কিন্তু বড় আপা সব জেনে এমন কাজ করবো তা আমি বিশ্বাস করিনা।” আমি বললাম, “মাত্রই তো বললেন, এই পৃথিবীতে বিশ্বাসের কোনো দাম নেই। যেকোনো কিছু তো হতেই পারে।”
লোকটা একটু চুপ থেকে রাজি হয়ে গেল। এবার আমি নিজেকে একটু ভয়ঙ্কর বানানোর জন্য মাথার চুলগুলো খুলে এলোমেলো করে নিলাম। লোকটি গিয়ে আলভীর বোনকে আমার শিখিয়ে দেওয়া কথাগুলো বললো। তার মধ্যে ভয় কাজ করা শুরু করে দিয়েছে। কাজের লোকটি এবার আমার কথা মত শিপার ঘরে গিয়ে তার কিছু লাগবে কিনা জানতে চাইছে। সেই সুযোগে আমি লুকিয়ে শিপার ঘরে গিয়ে এক জায়গায় বসে রইলাম। একটু পর আলভীর বোন শিপার ঘরে আসলো। সে ভয়ে ভয়ে বললো, “আচ্ছা শিপা, যদি এমন হয় যে মেহেরিন মরে যাওয়ার পর ভুত হয়ে ফিরে এসেছে তাহলে আমাদের কী হবে?”
তার কথা শুনে শিপা হাসতে হাসতে বললো, “কী যে বলেন আপু। মরার পর কেউ ফিরে আসে নাকি? হয়তো পানিতে ভাসতে ভাসতে কোথাও গিয়ে জ্ঞান ফিরেছে আর মাথায় আঘাত পেয়ে আগের সবকিছু ভুলে গেছে।” আলভীর বোন যখন বললো যে কাজের লোক আমাকে উল্টো হয়ে হাটতে দেখেছে তখন শিপাও কিছুটা ভয় পেয়ে গেল। ঠিক সেই সময় আমি সেভাবে হাসতে শুরু করলাম যেভাবে মেহেরিন আয়নার ভিতর থেকে হাসছিলো। আমার হাসি শুনে দুজনেই চমকে গেল। আমাকে দেখে শিপা ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো, “তুমি এখানে কীভাবে আসলে? আমার ঘরের তো দরজা বন্ধ।”
আমি একটু ভয়ানকভাবে বললাম, “মৃত মানুষের কোথাও যেতে দরজা লাগেনা।” কথাটা শুনে দুজনেই ভয় পেয়ে গেল। আমি তাদেরকে আরো অনেক কিছু বলে ভয় দেখালাম আর বললাম, “কালকে সকালে যদি সবার সামনে সবকিছু না স্বীকার কর তাহলে তোমাদেরকেও সেইভাবে মারবো যেভাবে আমাকে তোমরা হত্যা করেছো।” কথাটা শুনেই দুজনে সব সত্য বলতে রাজি হয়ে গেল। আমি ধীরে ধীরে হেটে দরজা খুলে ঘর থেকে বেরিয়ে আমার রুমে চলে আসলাম। এখন ভাবছি সকালে যখন আলভী জানবে মেহেরিন মারা গেছে তখন সে এটা কীভাবে মেনে নিবে।
পরেরদিন সকালে আবার সবাই একসাথে হয়েছে। উকিল এসেছে। ডিভোর্সের কাগজ রেডি করে আমার সামনে দিল। আমি বড় চোখে আলভীর বোন আর শিপার দিকে তাকালাম। দুজনেই খুব ভয়ে আছে। আলভীর বোন হঠাৎ কাঁদতে কাঁদতে আলভীকে বললো, “ভাই আমাকে ক্ষমা করে দে। আমি অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি।” শিপাও এসে ক্ষমা চাচ্ছে। কেউ কিছু বুঝতে পারছেনা। এরপর তারা দুজন মেহেরিন এর সাথে করা সব অন্যায় স্বীকার করলো আর মেহেরিন এর তৈরী করা কাগজ গুলো আলভীর সামনে দিল।
সবকিছু দেখে সবাই যেন আকাশ থেকে পরলো। আলভী একদম স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ শিপা আমার দিকে তাকিয়ে বললো,”কে তুমি?” সবাই আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। তারমানে আমি এখন আমার আগের রুপে ফিরে এসেছি। আমি সবার উদ্দেশ্যে বললাম, “আমি মেহেরিন নই। আর মেহেরিন এর আত্মাও নই। মেহেরিন এর আত্মা আমাকে তার রুপ দিয়েছিল শুধু সত্যটা প্রকাশ করার জন্য। হয়তো মেহেরিন এর আত্মা এখন শান্তি পাবে।” এমন ঘটনা কেউই কল্পনা করেনি। সবাই মিলে আলভীর বোন আর শিপাকে পুলিশের কাছে তুলে দিল।
আলভী মেহেরিন এর তৈরী করা কাগজ গুলোতে সই করে দিয়ে সব সম্পত্তি দান করার কাজ সম্পন্ন করতে বললো। আলভী একদম পাথর হয়ে গেছে। তাকে স্বান্তনা দেওয়ার ভাষা কারো জানা নেই। আলভী তার রুমে একা চুপ করে বসে আছে। আমিও চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। কেন জানি যেতে ইচ্ছে করছেনা। কিন্তু যেতে তো হবেই। আমি আলভীকে কিছু বলতে চাচ্ছি। কিন্তু কি বলবো সেটাই জানিনা। তার সামনে যাওয়ার শক্তিটাও পাচ্ছিনা। এর আগে কখনো কারো জন্য আমার এমন অনুভূতি হয়নি। বাড়ির কাজের লোকটি আলভীর আপনজনের মতই। আমি তাকে বললাম, “আলভীর খেয়াল রাখবেন। আর কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন।” এটা বলেই আমি বাসা থেকে বের হয়ে চলে এলাম।
নিজের বাসায় আসার পর মা বললো, “কীরে, কেমন ঘুরলি? একবার ফোনও করলিনা।” আমার কিছু বলতে ইচ্ছা করছেনা। শুধু বললাম, “নেটওয়ার্ক ছিল না। আমি ক্লান্ত। এখন একটু রেস্ট নিবো।” এটা বলেই আমার রুমে চলে আসলাম। কেন জানি কিছুই ভালো লাগছেনা। বারবার শুধু মনে হচ্ছে যদি আলভীর পাশে থেকে তাকে একটু সাপোর্ট দিতে পারতাম! এভাবেই দিন রাত কেটে গেল।
পরেরদিন আনমনে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি। হঠাৎ কেউ ডাকলো। পেছনে ঘুরে দেখি আলভী দাঁড়িয়ে আছে। নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছিনা। অবাক হয়ে বললাম, “আপনি এখানে!” আলভী বললো, “কাল রাতে মেহেরিন আমার স্বপ্নে এসেছিলো। সে চায় আমি যেন আপনাকে বিয়ে করি। আমি বিবাহিত, মনের সবটা জায়গায় শুধু একজনই আছে। সবকিছু জেনে এমন একজনকে হয়তো কোনো মেয়ে বিয়ে করার কথা ভাববেনা। আমি শুধু মেহেরিনের জন্য মেহেরিন এর শেষ চাওয়াটা পুরণ করতে এসেছি। ভালোবাসতে পারবো কিনা জানিনা। তবে দায়িত্ব নিতে পারবো।”
কথাগুলো শুনে মনের মাঝে অন্যরকম এক আনন্দ অনুভব করছি। কেন এমন হচ্ছে তা জানিনা। আলভীর দিকে তাকিয়ে নিজের অজান্তেই মুখে হাসি চলে আসলো। আমরা সবাই জীবনে এমন একটা মানুষ চাই যার জীবনটা অনেক সুন্দর আর যে খুব আনন্দে থাকে। কিন্তু কোনো কারণে যার জীবন থেকে আনন্দ হারিয়ে গেছে তার এলোমেলো জীবনটা একটু সুন্দর করে দেওয়ার দায়িত্ব তো নিতেই পারি। কারো পাশে থেকে তাকে সাপোর্ট দিতে পারার মধ্যেও এক অন্যরকম অদ্ভুত ভালোলাগা আছে যেটা এখন আমি অনুভব করছি।
_____________সমাপ্ত____________
ধন্যবাদ সমস্যা সমাধানের পথে সাথে থাকার জন্য। গল্পটা কেমন লাগলো জানাবেন।