ধীরে ধীরে শরীরের সমস্ত কাপড় খুলে নগ্ন দেহে সুলতানকে শয্যায় ডাকলো মেরী। বুকে সদ্য বাবা হারানোর শোক আর প্রতিশোধের আগুন মেরীকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে আরও মজবুত করে গড়ে তুলছে প্রতিক্ষণ।
জানালার পাশে দাড়ানো সুলতান তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললো,– কোথায় বাবার হত্যার প্রতিশোধ নেবে তা না করে বাবার হত্যাকারীর সাথে সোহাগ রাত করতে প্রস্তুত হয়ে আছো, তোমার আর কি-ই বা করার আছে, কারণ তুমি নারীজাতি। ভোগ্যপণ্যের মতোই নিজেকে মেলে ধরেছো একজন পুরুষের সামনে, এটা ছাড়া আর কিইবা করার আছে তোমাদের!
মেরী বললো,– পুরুষের সামনে বলতে আপনি আমার স্বামী, আমার যা-কিছু আপনারই, আপনার সামনে নিজেকে মেলে ধরা পাপ অথবা অন্যায় কিছু নয় রাজপুত্র সুলতান।
সুলতান জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে বললো,– কোথায় গেল তোমার বাবার অহঙ্কার আর গৌরব রাজকুমারী মেরী? তোমার বাবার রাজ্যে আমাকে তোমার বাবা যে অপমান করেছিল তার প্রতিশোধ স্বরূপ নিজের হাতে তোমার বাবাকে হত্যা করলাম, তার মেয়েকে বিয়ে করলাম। তোমার বাবা আমাকে বলেছিল জালিম বর্বর, অথচ দ্যাখো এই জালিম বর্বর তার একমাত্র মেয়ের স্বামী। আশেপাশের শত রাজ্যে রাজকুমারী মেরীর রূপের প্রশংসা, বুদ্ধিমত্তার তারিফ, মির্জানগর রাজ্যের রাজকন্যা সুন্দরী মেরী আজ আমার বিছানায় নগ্ন দেহে, হা- হা হা, কোথায় তোমার বাবার গর্ব, কোথায় দম্ভ, কোথায় অহঙ্কার!
নরম গলায় মেরী বললো,– রাত অনেক হয়েছে এবার শুতে আসুন।
আবারও সুলতান হো হো করে হেসে বললো,– ভেবনা তোমায় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেছি মেরী, এটা সেই অপমানের বদলা যেটা তুমি করেছিলে আমায়। আজ সারারাত তোমার শরীর ভোগ করে সকালে নগ্ন শরীরে মির্জানগর রাজ্যে ছুড়ে ফেলে আসবো তাদের সুন্দরী রাজকন্যাকে, সবাই দেখবে আর ভাববে সুলতাননগর রাজ্যের রাজপুত্র কতটা ভয়ঙ্কর, তার সাথে পাঙ্গা নিলে পরিনাম কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।
মেরীর বাবার রাজ্য মির্জানগর এবং সুলতানের রাজ্য সুলতান নগর পাশাপাশি। সুলতান অত্যাচারী এবং জুলুমকারী হিসেবেই পরিচিত আশেপাশের রাজ্যে।
পাশাপাশি রাজ্য হওয়ায় সুলতান তার দলবল এবং পোষা চারটি হিংস্র বাঘ নিয়ে প্রায়ই হামলা চালাতো মেরীর বাবার রাজ্যে, এতে যেমন প্রাণনাশ হতো তেমনই ক্ষয়ক্ষতি।
মেরীর বাবা শান্তশিষ্ট রাজা হিসেবেই পরিচিত, যেমন দয়ালু তেমনই উদার মনের মানুষ বলে তার প্রসংশা লোকমুখে। আর এই কারনেই সুলতান ও সুলতানের বাবার খুব হিংসা হতো। তারা সবসময় চাইতো মেরীর বাবার এই সম্মান যেকোনো উপায়ে ধ্বংস করতে।
হঠাৎ করে সুলতান মেরীর বাবার রাজ্য থেকে কুমারী মেয়েদের তুলে এনে ধর্ষণ, এবং ধর্ষণ শেষে অর্ধমৃত অথবা মৃত অবস্থায় ফেলে আসতে শুরু করে। আর সুলতান এবং সুলতানের লোকজন আশেপাশের রাজ্যে বলতে থাকে যে রাজা নিজের প্রজাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ, সে রাজ সিংহাসনের অযোগ্য, তার রাজ্য ত্যাগ করে চলে যাওয়া উচিৎ।
হিংস্র চারটি বাঘ এবং ভয়ংকর দস্যু নিয়ে হানা দিয়ে মেরীর বাবার রাজ্যে মেয়েদের তুলে নিয়ে আসা, লুটপাট এবং নৃশংসতা যখন চরম পর্যায়ে তখন আর মেরীর বাবা শান্ত থাকলেন না। তিনি সাফসাফ জানিয়ে দিলেন পরেরবার যদি সুলতান তার রাজ্যে প্রবেশ করে তবে সেদিন হবে সুলতানের জীবনের শেষ দিন, সুলতানের দেহ থেকে মাথা আলাদা করে চার রাস্তার মোড়ে ঝুলিয়ে রেখে বুঝিয়ে দেয়া হবে অপরাধী সে রাজপুত্র হোক আর যে-ই হোক, মির্জানগর রাজ্যের রাজা কাউকে ছাড় দেবেনা।
এই কথা শোনার পরে সুলতান আরও শতগুণ ক্ষেপে গিয়ে পরিকল্পনা করলো মেরীর বাবার রাজ্যে সোজা রাজপ্রাসাদে হামলা করার।
যেমন ভাবা তেমন কাজ–
গভীর রাতে অসংখ্য দস্যু এবং চারটি হিংস্র বাঘ নিয়ে মির্জানগর রাজ্যে উপস্থিত সুলতান। মেরীর বাবার রাজপ্রাসাদের বিশাল বাউন্ডারির মেইন গেটের কাছে এসে রক্ষীদের দিকে বাঘ লেলিয়ে দিলো সুলতান। হঠাৎ আক্রমনে অনেক রক্ষীর প্রাণ গেল।
এবার সুলতান দলবল নিয়ে মেইন গেট দিয়ে ঢুকে রাজপ্রাসাদের সামনে এসে উপস্থিত। রাজ প্রাসাদে ঢোকার সিংহদুয়ার বন্ধ করে দিলো দ্বাররক্ষকরা। সুলতান তাদের দিকেও বাঘ লেলিয়ে দিলো।
নিজের কক্ষে ঘুমিয়ে ছিল মেরী, বাইরের চিৎকার চেচামেচি এবং গোলযোগের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল মেরীর। লাফিয়ে উঠে বসে আসন্ন বিপদ আঁচ করতে পেরে দৌড়ে ছাদে এসে সবকিছু দেখে মেরীর আর কিছু বুঝতে বাকী নেই।
মেরী তার বাবার একমাত্র সন্তান বলেই মেরীকে তার বাবা চিন দেশে পাঠিয়েছিল কুংফু রপ্ত করতে, পাশাপাশি মেরী ধনুক বিদ্যায়ও যোগ্যতা অর্জন করে। অন্তত যেন বিপদকালে নিজেকে রক্ষা করতে পারে মেরী, এটা ভেবেই মেরীর বাবা মেরীকে চিন দেশে পাঠিয়েছিল।
মেরী দৌড়ে নিচে এসে তীর ধনুক নিয়ে আবার ছাঁদে ফিরে এসে ধনুকে তীর রেখে গুন টেনে পরাপর চারটা তীর ছুড়লো চারটা বাঘকে লক্ষ্য করে, একটা তীরও লক্ষ্যচুত হলোনা, চারটা তীর চারটা বাঘের গায়ে আঘাত করামাত্রই বাঘগুলো ভয়ঙ্কর হুংকার দিয়ে শূন্যে লাফিয়ে উঠে আবার মাটিতে পড়ে ছটফট করে মারা গেল।
সুলতান ও তার লোকজন ভীষণ অবাক! মেরীর গায়ে ভীষণ জোর নাকি এই তীরের আলাদা কোনো বৈশিষ্ট্য আছে!
পাঁচ নাম্বার তীরটা ধনুকে রেখে গুন টেনে সুলতানের দিকে তাক করে মেরী বললো,– অত্যাচারী সুলতান, চাইলে এই পাঁচ নাম্বার তীরটা তোমার বক্ষ ভেদ করে প্রাণকে পরপারে পাঠাতে পারে এই মুহুর্তে, কিন্তু সেটা করলে আমাদের আর তোমার মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকবে না। তবে তুমি তোমার কৃতকর্মের জন্য শাস্তি অবশ্যই পাবে।
মেরীর বাবার লোকজন এসে সুলতান ও তার লোকজন বন্দী করে ফেললো। তার পরদিন সুলতান সহ তার লোকজনের মাথা ন্যাড়া করে খালি পায়ে মির্জানগর রাজ্য থেকে বিদায় করা হলো।
মেরীর বাবা হুমকি দিলেন,– এবারের মতো প্রাণ ভিক্ষা দেয়া হলো, পরেরবার আর সেই সুযোগও থাকবে না।
প্রতিশোধের নেশায় পাগলপ্রায় সুলতান, এই অপমানের বদলা নিতেই হবে, ধ্বংস করতে হবে মির্জানগর রাজ্যের রাজা ও রাজ্য, তবেই সুলতানের শান্তি হবে।
মেরীর যে তীরে বাঘগুলো মূহুর্তে ছটফট করে মারা গেছিলো সেগুলো স্বাভাবিক তীর হলেও তীরের ডগায় মাখা ছিল পৃথিবীর মারাত্মক প্রাণঘাতী বিষের একটি।
চিনে কুংফু এবং ধনুক বিদ্যা রপ্ত করার পরে মেরী গিয়েছিল আফ্রিকা সফরে। সেখানে একজন শতবর্ষী বয়স্ক আফ্রিকানের সাথে পরিচয় হয় মেরীর। মেরী রাজকন্যা জেনে সেই বয়স্ক লোক মেরীকে দিয়েছিল এই বিষ। বলেছিল ঘোর বিপদে এই বিষ নাকি মেরীর কাজে লাগবে, হলোও তাই। ডেথ স্করপিয়ন নামে একধরনের মারত্মক বিছা এবং মারাত্মক বিষধর সাপের বিষ মিশিয়ে তৈরি এই বিষ মূহুর্তের মধ্যে যে কারো প্রাণ নিয়ে নিতে পারে।
সেই বিষ তীরের ডগায় মেখে তীর ছুড়েছিল বলেই বাঘগুলোক মুহূর্তে মরেছিল।
যা-ই হোক–
সুলতান রাজ্যের নামকরা বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গোপন বৈঠকে বসলেন, ষড়যন্ত্রের জাল বিছানোর পরিকল্পনা শুরু হলো, কীভাবে মির্জানগর রাজ্যের রাজাকে উচিৎ জবাব দেয়া যায়, শুধু তাই নয়, রাজাকে হত্যা সহ রাজকন্যা মেরীকেও উচিৎ শিক্ষা দেবার পরিকল্পনা।
বেশ কিছুদিন সবকিছু শান্ত। সুলতান ধীরে ধীরে অগ্রসর হচ্ছে তার প্ল্যান মোতাবেক। যেহেতু সুলতানের রাজ্যের পাশের রাজ্য মেরীর বাবার, সেহেতু হামলা করা নিয়ে অতটা চিন্তিত নয় সুলতান। সুলতানের প্ল্যানের সর্বপ্রথম টোপটা গেলাতে হবে মেরীর বাবার মন্ত্রীকে। মারাত্মক ভয়ংকর এক চাল চালতে চলেছে সুলতান, সেটা থেকে বাঁচা মেরীর বাবার পক্ষে অসম্ভব প্রায় ভেবেই আনন্দে সুলতানের মুখে পৈশাচিক হাসি।
পরবর্তী পর্বে আমরা জানবো কীভাবে মেরীর বাবাকে হত্যা করা হলো, সুলতান মেরীর বাবার হত্যাকারী জেনেও মেরী কেন সুলতানকে বিয়ে করলো। সুলতানের মতো মেরীরও কি কোনো প্ল্যান আছে বাবার হত্যাকারীকে সায়েস্তা করার! যদি তাই হয় তবে মেরী কি পারবে উদ্দেশ্য হাসিল করতে? নাকি সুলতানের হাতে বাবার মতোই প্রাণ যাবে মেরীর?
চলবে…
গল্পঃ মেরীর প্রতিজ্ঞা ( ১ম পর্ব )
লেখকঃ হৃদয় চৌধুরী।