#মেঘ_বসন্তের_মায়া?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
— পর্বঃ১১
সকালের ফুড়ফুড়ে আলোতে ভরে গেছে চারপাশ। আর সকালের এই ফুড়ফুড়ে আলোর মাঝখানে আইসিইউর বাহিরে থাকা চেয়ারে পাশাপাশি দুজনের কাঁধে দুজন মাথা দিয়ে বেঘোরে ঘুমিয়ে আছে আকাশ তিথি। কাল রাতেই পাশাপাশি চেয়ারে বসে কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারে নি। হঠাৎই মুখে হাল্কা রোদ্দুর এসে পড়াতে ঘুম ভাঙলো আকাশের। চোখ খুলে আশেপাশে তাকিয়ে নিজের হাতে থাকা ঘড়িটা দেখলো একবার সে। সবেমাত্র সকাল সাড়ে সাতটা বাজে। এরই মধ্যে হঠাৎই চোখ যায় আকাশের তিথির মুখের দিকে। তার কাঁধে মাথা দিয়ে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে তিথি। কিছুটা অগোছালো আর ফ্যাকাসে লাগছে তিথিকে,চোখের সামনে হাল্কা কিছু চুল পড়ে আছে তিথির। আকাশ কিছুক্ষন তিথির মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে মুচকি হেঁসে হাত দিয়ে ওর চোখের সামনে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দিলো। এক অদ্ভুত ভালো লাগা এসে গ্রাস করলো আকাশকে।
কারো হাতের স্পর্শ পেতেই হাল্কা নড়েচড়ে উঠলো তিথি। তিথিকে নড়তে দেখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় আকাশ। ঘাবড়ানো মুখ নিয়ে তাকিয়ে রয় সে তিথির দিকে। অন্যদিকে তিথি একটু নড়ে আকাশের হাত ঝাপটে জড়িয়ে ধরে আবার ঘুমিয়ে পড়লো। তিথিকে ঘুমিয়ে পড়তে দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো আকাশ। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো সে।
___
সকাল_৯ঃ০০টা…
আইসিইউর বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ, তিথি,সাথী সাথে তিথির মামা মামি। কিছুক্ষন আগেই এসেছে তাঁরা। এখানে দাঁড়ানোর একমাত্র কারন হলো আর কিছুক্ষনের মধ্যেই তিথির মাকে কেভিনে শিফট করা হবে। কতক্ষণ আগেই তিথির মায়ের জ্ঞান ফিরেছে। মায়ের জ্ঞান ফিরেছে কথাটা শুনে যেন তিথি সাথীর মনটা উতলা হয়ে আছে বেশি কখন মায়ের সাথে কথা বলবে এর জন্য। বলতে না বলতেই দুজন নার্স তিথির মাকে কেভিন থেকে বের করে করলো। ওদের সাথে সাথে হৃদও বের হয় আইসিইউ থেকে। মাকে যেতে দেখে সাথী তিথিও চললো নার্সদের পিছন পিছন। আর ওদের সাথে আকাশ,মামা মামি সাথে হৃদ।
কেভিনের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে সবাই। আর ভিতরে হৃদ দেখছে তিথির মাকে। তিথিকে মাকে ঠিক ভাবে শুয়ে দিয়ে সাথে হাতে স্যালাইন লাগিয়ে দিয়ে আস্তে বের হলো সে। তারপর আকাশ তিথি সহ সবাইকে উদ্দেশ্য করেই তিথির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এখন তোমরা ভিতরে যেতে পারো তবে একটা জিনিস মাথায় রাখবে বেশি চেচামেচি করা যাবে না কিন্তু আর পেসেন্টকে বেশি কথা বলতে দিবে না,বেশি কথা বললে মাথায় চাপ পড়বে এতে পেসেন্টের মাথা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। সবেমাত্র অপারেশন হলো তাই তবে কিছুদিন গেলেই সবটা ঠিক হয়ে যাবে।
হৃদের কথা শুনে তিথিও বলে উঠল,
‘ ঠিক আছে ভাইয়া।’
‘ ওকে আর শোনো আপাতত পেসেন্টকে কোনো খাবার দেওয়ার প্রয়োজন নেই দুপুরে খাবার দেওয়া যাবে আর একটা কথা আপাতত নরম খাবারই ওনার জন্য বরাদ্দ এই জিনিসটা মাথায় রাখবে। এখন তবে তোমরা যাও ভিতরে কোনো প্রবলেম হলে আমায় ডেকো।’
হৃদের কথা শুনে সাথী বললো,
‘ ওকে ডক্টর।’
সাথীর ভয়েস শুনে এক পলক তাকালো হৃদ সাথীর দিকে। তারপর আর বেশি কিছু না বলে চলে যায় সে।’
হৃদ যেতেই সবাই ঢুকলো কেভিনের ভিতর।’
____
হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করছে আকাশ। পাশেই চুপচাপ বসে আছে তিথি। কিছুক্ষন আগেই মায়ের সাথে অল্প স্বল্প কথা বলে হসপিটাল থেকে বেরিয়েছে তাঁরা। অবশ্য তিথি আসতে চায় নি কিন্তু মামা মামি আর সাথীর জোরাজোরিতে একপ্রকার বাধ্য হয়েই আসতে হয়েছে তাঁকে। চুপচাপ গাড়ির জানালার দিকে মুখ করে বসে আছে তিথি এখন একটু ভালো লাগছে তাঁর সময়টা তখন প্রায় দুপুর এগারোটার কাছাকাছি বাহিরে রোদ্দুরেরা ভিড় করেছে খুব। সাথে হাল্কা বাতাস তো আছেই। সচরাচর খুব একটা বড় প্রাইভেট গাড়িতে ওঠা হয়নি তিথির। কখনো উঠতে পারবে এটাও ভাবে নি সে। কিন্তু ভাবতেই কেমন লাগছে তিথির। নানান কল্পনা জল্পনা ভাবনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে তিথি। আর আকাশ সে দু’ একবার ইচ্ছে হলে তিথির দিকে তাকায় আর নয় সামনে তাকিয়েই ড্রাইভ করছে সে। এখান থেকে বাড়ি গিয়েই সোজা তাকে অফিসে যেতে হবে। এসব ভাবতে ভাবতে এগিয়ে চলছে সে।’
কিছুক্ষনের মধ্যেই তাঁরা পৌঁছে গেল তাদের বাড়িতে। আকাশ পৌঁছেই চলে যায় তার রুমের দিকে আর তিথি সে চলে যায় গ্র্যান্ডমার রুমের দিকে।’
বিছানায় শুয়ে আছে গ্র্যান্ডমা শরীরটা হাল্কা খারাপ লাগছে তাঁর। এমন সময় তার রুমে ঢুকলো তিথি ভিতরে ঢুকেই বললো সে,
‘ গ্র্যান্ডমা।’
আচমকা তিথির ভয়েস শুনেই শোয়া থেকে উঠে বসলো গ্র্যান্ডমা। গ্র্যান্ডমাকে বসতে দেখে তিথি খুশি মনে এসে বসলো গ্র্যান্ডমার পাশ দিয়ে তারপর বললো,
‘ কি করছো গ্র্যান্ডমা?’
‘ কিছুই না তোমার মা ঠিক আছে তো তিথি?’
‘ জ্বী গ্র্যান্ডমা! আল্লাহ রহমতে মা এখন পুরোপুরি না হলেও মোটামুটি সুস্থ তবে ডাক্তার বলেছে খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।’
‘ আলহামদুলিল্লাহ।’
উওরে মুচকি হাসলো তিথি। তারপর বললো,
‘ ব্রেকফাস্ট করেছিলে সকালে?’
‘ হুম।’
‘ খুব ভালো।’
এরপর কিছুক্ষন গ্র্যান্ডমার সাথে কাটিয়ে হঠাৎই বলে তিথি,
‘ আচ্ছা গ্র্যান্ডমা তুমি বসো আমি এক্ষুনি ফ্রেশ হয়ে আসি।’
‘ ঠিক আছে।’
উওরে তিথি আর কিছু না বলে চললো বাহিরে।’
এরই মাঝে কোট,প্যান্ট,কালো শার্ট আর টাই পড়ে গ্র্যান্ডমার রুমে ঢুকলো আকাশ হয়তো অফিস যাবে সে। তিথি অল্প কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে বেশি কিছু না ভেবে চলে যায় উপরে। আর আকাশ সেও তিথি যেতেই ঢুকে পড়ে ভিতরে তারপর গ্র্যান্ডমার সাথে কিছুক্ষন কথা বলে চললো অফিসের উদ্দেশ্যে।’
____
বিকেল_৪ঃ০০টা…
মায়ের বেডের পাশে বসে বসে ঘুমিয়ে আছে সাথী। পাশেই ওর মা চুপচাপ শুয়ে আছে। কতক্ষণ আগেই মায়ের সাথে কথা বলে ঘুমিয়ে পড়েছে সাথী। সাথীকে ঘুমাতে দেখে সাথীর মাও আস্তে আস্তে তার ডান হাত দিয়ে মেয়ের মাথায় হাত বুলাতে লাগলো। তিথির চেয়ে সাথী খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে বেশি কথা বলা এটা পছন্দ করে না সাথী। আর তিথি সেও শান্ত স্বভাবের কিন্তু একটু বেশি কথা বলে এমনিতে সাথী তিথি দুজনই খুব ভালো। হাল্কা হাসে সাথীর মা সে বেশ বুঝতে পেরেছে কাল মায়ের চিন্তায় হয়তো ঘুমই হয়নি দুই মেয়ের। এমন সময় কিছুটা শব্দ করে ভিতরে ঢুকলো তিথি। কিছু একটার শব্দ কানে আসতেই সাথীর মা আস্তে মাথাটা ঘোরালো সামনেই তিথিকে হাতে ইশারায় নিজের ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,
‘ হুস শব্দ করিস না সাথী ঘুমাচ্ছে?’
মায়ের ইশারা বুঝতে পেরে তিথি এগিয়ে আসে সামনে। বিছানায় বোনকে ঘুমাতে দেখে বললো সে,
‘ ওকে বলেছি তোমার দেখা শোনা করতে সাথে সেবাযত্ন করতে আর ও কিনা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে দেখাচ্ছি মজা?’
এই বলে এগিয়ে যায় তিথি সাথীর দিকে। তিথিকে এগোতে দেখে বলে তিথির মা,
‘ হইছে কিছু করতে হবে না এতক্ষণ সেবাই করছিল একটু আগেই ঘুমিয়েছে বাদ দে।’
মায়ের কথা শুনে তিথি আর কিছু করলো না চুপচাপ গিয়ে বসলো সাথীর পাশ দিয়ে।’
হঠাৎই তিথি আর মায়ের কথা বলার শব্দে সাথীর ঘুম ভেঙে যায়। সামনেই তিথিকে মায়ের সাথে কথা বলতে দেখে ঘুম ঘুম কন্ঠে বললো সে,
‘ আপু তুই এসেছিস?’
‘ হুম আর তুই কি করছিস এগুলো?’
‘ আমি আবার কি করলাম?’
‘ কি করলি মানে তোকে বলেছি মায়ের দেখা শোনা করতে আর তুই কিনা পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস?’
‘ না মানে…
‘ হইছে আর কিছু বলতে হবে না তাড়াতাড়ি চোখে মুখে পানি দিয়ে আয়?’
‘ ঠিক আছে এতটুকু বলে বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো সাথী। এখনো ঘুমের রেস কাটে নি তাঁর। সাথী তার চোখ ডলতে ডলতে বললো,
‘ তোমরা কথা বলো আমি এক্ষুনি আসছি?’
সাথীর কথা শুনে তিথিও বলে উঠল,
‘ হুম যা।’
উওরে সাথী আর কিছু না বলে কেভিন থেকে বেরিয়ে গেল।
___
কিছুটা অন্যমনস্ক হয়ে হাঁটছে সাথী সাথে চোখ ডলতে ডলতে এগিয়ে যাচ্ছে সে।’
অন্যদিকে ওর থেকে কিছুটা দূরে সামনেই একটা ছোট্ট বাচ্চা হাতে ক্রিকেট খেলার ছোট্ট বল নিয়ে খেলছে। হঠাৎই ছেলেটা বলটা ছুঁয়ে মারলো সাথীর পায়ের কাছে আর সাথী সে তো অন্যমনস্ক হয়ে চলতে গিয়ে সেই বলের ওপর পা দিয়ে হাঁটতে গিয়ে হোটচ খেয়ে পড়ে যেতে নেয়। সেই মুহূর্তেই একটা কেভিন থেকে বের হয় হৃদ সাথীকে পড়ে যেতে দেখে হৃদ গিয়ে ধরে বসে সাথীকে। ঘটনাটা হুট করে হয়ে যাওয়াতে সাথী হৃদ দুজনেই প্রায় চমকে উঠলো। আর সাথীর তো নিমিষেই ঘুম উড়ে গিয়ে চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কি থেকে কি হলো সব যেন মাথার উপর দিয়ে গেল তাঁর….
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে সবাই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️