#মেঘ_বসন্তের_মায়া?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
— পর্বঃ১০
কিছুটা অস্থিরতা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ। তার কাছেই তিথি তাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে চলেছে। তিথির কথাগুলো শুনে আকাশেরও খারাপ লাগছে,এই প্রথম বার তিথি আকাশকে জড়িয়ে ধরেছে এক অস্থিরতা এসে গ্রাস করলো আকাশকে কেমন যেন ফ্রিজড হয়ে গেছে আকাশ। আকাশ আস্তে তার হাতটা নিয়ে আসলো তিথির মাথার কাছে তারপর তিথির মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল সে,
‘ কুুল ডাউন তিথি কিছু হবে না তোমার মায়ের একদম ঠিক হয়ে যাবে দেখো।’
কিন্তু কে শুনে কার কথা তিথির আকাশকে আরেকটু শক্তকরে জড়িয়ে ধরে কান্না ভেজা কন্ঠ নিয়েই বললো,
‘ আপনি সত্যি বলছেন তো?’
‘ হুম দেখবে আর কিছুক্ষনের মধ্যেই সুসংবাদ পেয়ে যাবো।’
আকাশের কথা শুনে তিথি তার মাথাটা উঁচু করে কান্না ভেজা চোখ নিয়েই তাকালো আকাশের দিকে। তিথিকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে আকাশ নিজেও তিথির দিকে তাকিয়ে চোখের ইশারায় বললো,
‘ সব ঠিক হয়ে যাবে।’
আকাশের চোখের চাহনী বুঝতে পেরে তিথি কিছু বললো না আস্তে আস্তে নিজেকে শান্ত করতে লাগলো সে। হঠাৎই তিথির হুস আসলো ইমোশনাল হয়ে কি করে বসেছে সে। তিথি এপাশ ওপাশ তাকিয়ে চটজলদি নিজেকে সরিয়ে নিয়ে আসলো আকাশের থেকে তারপর মাথা নিচু করে বললো,
‘ আই এক্সট্রিমলি…
তিথি আর কিছু বলার আগেই আকাশ বলে উঠল,
‘ ইট’স ওকে।’
এমন সময় সেখানে দৌড়ে আসলো সাথী। কিছুটা হতভম্ব কন্ঠ নিয়ে বললো সে,
‘ আপু অপারেশন শেষ হয়ে গেছে চলো তাড়াতাড়ি?’
সাথীর কথা শুনে আকাশ তিথি কেউ আর দু’মিনিট দেরি না করে চললো ভিতরে।
___
অপারেশন থিয়েটারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ, তিথি, সাথী সাথে ওদের মামা মামি। সবার মুখের চিন্তার ছাপ কারন অপারেশন শেষ হয়ে গেলেও কেউ অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হচ্ছে না। এতে যেন সবারই টেনশন হচ্ছে খুব। আকাশও বুঝতে পারছে না হৃদ এখনও বের হচ্ছে না কেন?’ এরই মাঝে ভাবতে না ভাবতেই সবার অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হলো হৃদ। আর ওর পিছনে আরো দু’জন ডাক্তার। আকাশ, তিথি দুজনেই এগিয়ে গেল ডাক্তাদের দিকে। ওদের এগোতে দেখেই একজন ডাক্তার বলে উঠল,
‘ ডোন্ট ওয়ারি পেসেন্ট ইস অলরাইট।’
ডাক্তারের কথা শুনে সবার মুখেই যেন হাসির জ্বলক ফুটে উঠলো। তিথি খুশি হয়ে বললো,
‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ ডক্টর।’
উওরে তেমন কিছু না বলে দুজন ডাক্তারই মুচকি হেঁসে চলে গেল। ওরা যেতেই তিথি এগিয়ে গেল হৃদের দিকে তারপর খুশি মনে বললো,
‘ থ্যাংক ইউ সো মাচ ভাইয়া।’
‘ ইট’স ওকে তবে হ্যাঁ ওনাকে কিন্তু এখনই বাড়ি নিয়ে যাওয়া যাবে না কয়েকদিন এই হসপিটালের রাখতে হবে।’
‘ ওকে ভাইয়া,আমরা কি একবার মায়ের সাথে দেখা করতে পারি ভাইয়া?’
‘ না তিথি, আজ রাতে উনি আইসিইউতেই থাকবে তাই আপাতত দেখা করা পসিবল নয় কিন্তু কাল সকালে বেডে শিফট করার পর দেখা করে নিও।’
‘ ওকে ভাইয়া।’
‘ হুম।’
এতটুকু বলে এগিয়ে গেল হৃদ। সামনেই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাল্কা হাসলো সে তারপর বললো,
‘ ডোন্ট ওয়ারি,এভরিথিং ইস অলরাইট।’
‘ থ্যাংক ইউ দোস্ত।’
উওরে কিছু না বলে হাল্কা হেঁসে এগিয়ে গেল হৃদ। চেঞ্জ করতে হবে তাঁকে। হঠাৎই সাথীর দিকে তাকিয়ে বললো হৃদ,
‘ আর কাঁদতে হবে না মিস,কাঁদতে কাঁদতে তো চোখ মুখ পুরো ফুলিয়ে ফেলেছো,তোমার মা একদম ঠিক আছে বুঝতে পেরেছো?’
ডাক্তারের কথা শুনে সাথী তার চোখ মুখ মুছে বললো,
‘ থ্যাংক ইউ।’
‘ ইট’স ওকে।’
বলেই চলে যায় হৃদ। হৃদ যেতেই তিথি তার মামা মামি আর সাথীকে উদ্দেশ্য করে বললো,
‘ তোমরা এবার বাড়ি যাও আজ রাতে আমি আছি মায়ের কাছে আর তোমাদের সাথে সাথীকেও নিয়ে যাও সেই সকাল থেকে মায়ের টেনশনে কিছু খায় নি পারলে কিছু খাইয়ে দিও।’
তিথির কথা শুনে সাথী বলে উঠল,
‘ না! আমি এখন কোথাও যাবো না আগে মায়ের সাথে কথা বলবো তারপর..
‘ বোকার মত কথা বলিস না ডাক্তার কি বললো শুনিস নি কালকে সকালের আগে মায়ের সাথে দেখা করা যাবে না।’
‘ আপু?’
‘ আমার কথাটা শোন বোন। এখন বাড়ি যা কিছু একটা খেয়ে ঘুমা কাল সকালে সেজেগুজে আসিস তোকে কিন্তু এই রকম পাগলের মতো একদম ভালো লাগছে না।’
‘ কিন্তু আপু?’
‘ আবার কিন্তু কিসের?’
উওরে কিছু বললো না সাথী মুখ গোমড়া করে দাঁড়িয়ে রইলো সে। সাথীকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তিথি হাল্কা শ্বাস ফেলে সাথীর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
‘ প্লিজ বোন আমার কথাটা শোন। আচ্ছা ঠিক আছে তুই না হয় কাল রাতে থাকিস মায়ের কাছে আজ রাতটা আমি থাকি। আর এমনিতেও কাল থেকে মায়ের দেখা শোনা তো তোকেই করতে হবে। তাই বলছি আজকে বাড়ি যা,,
‘ ঠিক আছে।’
সাথীর কথা শুনে খুশি হয়ে যায় তিথি। তারপর খুশি মনেই বলে সে,
‘ এই তো আমার মিষ্টি বোন।’
এতটুকু বলে এগিয়ে যায় তিথি তার মামা মামির দিকে তারপর বলে,
‘ যাও মামা মামি কাল সকালে এসো। সেই কখন গ্রাম থেকে এসেছো তোমরা এখন একটু বাড়ি গিয়ে রেস্ট নেও।’
তিথির কথা শুনে তিথির মামা বলে উঠল,
‘ কিন্তু তুই পারবি একা।’
‘ আমি একা কই উনি তো আছে আমার সাথে (আকাশকে দেখিয়ে)
তিথির কথা শুনে আকাশও বলে উঠল,
‘ হুম কোনো চিন্তা করবেন না আজ রাতটা আমি আর তিথিই ম্যানেজ করে নিবো আপনারা বাড়ি গিয়ে রেস্ট করুন।’
আকাশের কথা শুনে তিথির মামা মামি দু-জনেই খুশি হয়ে যায়। তারপর বলে,
‘ তুমি থাকলে আর আমাদের চিন্তা কিসের?’
উওরে মুচকি হাসে আকাশ।’
___
আইসিইউর দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে তিথি। সামনেই কাঁচের ভেতর থেকে হাল্কা হাল্কা দেখা যাচ্ছে তিথির মাকে। তিথি সেদিকেই তাকিয়ে আছে মাকে এভাবে দেখে কষ্ট লাগলো তিথির। ছোট্ট দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তিথি। এমন সময় ওর কাঁধে হাত রাখলো আকাশ। কারো হাতের স্পর্শ পেতেই পিছন ঘুরে তাকালো তিথি সামনেই আকাশকে দেখে বলে উঠল,
‘ ওহ স্যার আপনি?’
এতটুকু বলে নিজের চোখের পানি মুছে নিলো তিথি। তারপর বললো,
‘ আপনি এখনও বাড়ি যান নি স্যার? আপনি বাড়ি স্যার আসলে তখন আপনার কথা না বললে কিছুতেই মামা মামি যেতে চাইতো না তাই আর কি?’
‘ ইট’স ওকে আর ডোন্ট ওয়ারি আজ রাতে আমিও থাকবো তোমার সাথে তোমার কাছে।’
‘ কিন্তু স্যার? বাড়িতে গ্র্যান্ডমা একা আছে তো?’
‘ সেটায় সমস্যা হবে না জসিম ওরা তো আছে গ্র্যান্ডমার কাছে কিছুক্ষন আগেই গ্র্যান্ডমার সাথে কথা হয়েছে আমার আর গ্র্যান্ডমাই বললো আজ রাতে তোমার সাথে এখানে থাকতে আর তুমি তো জানো আমি গ্র্যান্ডমার কথা কতটা মানি তাই, বুঝতে পেরেছো আশা করি?’ এখন বলো কি খাবে নাকি সারারাত এভাবে না খাইয়েই কাটিয়ে দিবে।’
‘ না মানে?’
‘ চলো বাহিরে কিছু খেয়ে নিবে?’
‘ কিন্তু এখানে মা একা?’
‘ তার ব্যবস্থাও আমি করে দিবো চলো আমার সাথে।’
বলেই হাঁটতে শুরু করলো আকাশ। আকাশকে যেতে দেখে তিথিও বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে গেল আকাশের পিছন।’
আকাশ দুজন নার্সকে তিথির মায়ের দেখাশোনা করার জন্য বলে চললো তিথিকে নিয়ে বাহিরে।
_____
হসপিটালের কাছাকাছিই ছোটখাটো একটা রেস্টুরেন্টে টেবিলের সামনে বসে আছে আকাশ তিথি। আশেপাশে তেমন কেউ নেই বললেই চলে রাত প্রায় একটার কাছাকাছি এত রাতে রেস্টুরেন্ট খোলা পেয়েছে এটা তিথিদের ভাগ্য তবে খাওয়ার জন্য বেশি কিছু না মিললেও অল্প স্বল্প কিছু খাবার পেয়েছে তাঁরা আর সেটা দিয়েই আপাতত কাজ চালাচ্ছে আকাশ তিথি। হঠাৎই আকাশ নিজের খাওয়া বন্ধ করে দিয়ে চুপচাপ তাকিয়ে রইল তিথির মুখের দিকে। আকাশকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বললো তিথি,
‘ কি হলো স্যার চুপচাপ বসে আছেন যে,
তিথির কথা শুনে হাল্কা চমকে উঠলো আকাশ তারপর কিছুটা হতভম্ব হয়ে বললো,
‘ হ্যাঁ, না তেমন কিছু নয়।’
এতটুকু বলে আবারো খাওয়ায় মনোযোগ দিলো ওরা। কিছুক্ষন পর রেস্টুরেন্টের বিল মিটিয়ে সাথে সাথে রেস্টুরেন্টের কতৃপক্ষকে একটা ধন্যবাদ জানিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয় আকাশ তিথি।’
পাশাপাশি ফুটপাতের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলছে আকাশ তিথি। চারপাশ একদম নিরিবিলি আর নির্জন। চারপাশ দিয়ে হাল্কা ঠান্ডা বাতাস বইছে,নির্জন রাতের নির্জন রাস্তা পেরিয়ে এগিয়ে চলছে আকাশ তিথি কারোই মুখেই কোনো কথা নেই। উপরেই তাদের সাথে সাথে চলছে মস্ত বড় চাঁদমামা, বিষয়টা তিথির কাছে বেশ লাগছে এভাবে এতটা রাতে কখনো রাস্তায় হাঁটা হয় নি তাঁর, আজ যেন এক অদ্ভুত ভালো লাগা কাজ করছে তার ভিতর। এমনই এক ভালো লাগা নিয়েই এগিয়ে চলছে আকাশ তিথি হসপিটালের দিকে….
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে সবাই কমেন্ট করে জানাবে]
#TanjiL_Mim♥️