#মেঘ_বসন্তের_মায়া?
#লেখিকা:#তানজিল_মীম?
পর্ব:০২
“অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তিথি আকাশের দিকে!’তার বিশ্বাসই হচ্ছে না এত বড় বিজনেস ম্যান কারো হাত ধরে উল্টোদিক ফিরে কাঁদছে!’ছেলেরা নাকি সহজে কাঁদে না,,কথাটা মাথায় আসতেই ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো তিথি আকাশের দিকে..
“এদিকে…
“আকাশকে উল্টোদিক ফিরে থাকতে দেখে বলে উঠল আকাশের গ্রেন্ডমাঃ
—“কি হলো নাতি ওদিক ফিরে আছো কেন?’
“আকাশ চটজলদি তার চোখের পানি মুছে হাসি মুখে তার গ্রেন্ডমার দিকে তাকিয়ে বললোঃ
—“না তেমন কিছু নয় গ্রেন্ডমা..
—“তুমি কি কাঁদছো?’
—“আরে না কি সব বলো তুমি গ্রেন্ডমা কাঁদবো কেন?’
—“তারপর তুমি যে বলে ছিলে তোমার গার্লফ্রেন্ডকে দেখাবে কই নিয়ে আসলে না তো?’
—“আসলে গ্রেন্ডমা ও একটু ঢাকার বাহিরে আছে তাই….
—“ওহ…
—“হুম তবে তুমি চিন্তা করো না আমি যখন তোমায় কথা দিয়েছি তখন খুব তাড়াতাড়ি ওকে তোমায় দেখিয়ে বিয়ে করে নিবো….
“উওরে হাল্কা হাসলেন রাশেদা বেগম!’এমন সময় ওদের কেভিনে ঢুকলো ডাক্তার!’আকাশের গ্রেন্ডমাকে দেখলেন উনি,রাশেদা বেগম ডাক্তারকে দেখে বলে উঠলঃ
—“ডক্টর আমি বাড়ি কবে যেতে পারবো,আমার নাতির বিয়ে খেতে…
—“সেটা তো তোমার নাতি জানে,যেদিন বিয়ে করবে সেদিনই ছেড়ে দিবো তবে হ্যাঁ তুমি চাইলে তার আগেও ছেড়ে দিবো!’
—“হসপিটালে যে আর ভালো লাগে না হৃদ!’…
—“এই তো গ্রেন্ডমা তুমি আর একটু সুস্থ হলেই ছেড়ে দিবো!’…
—“আমি তো সুস্থই তাই না আকাশ…
“গ্রেন্ডমার কথা শুনে আকাশ বিচলিত কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“হুম গ্রেন্ডমা, শুধু আর একটু সুস্থ হলেই হয়ে যাবে!’
….
“এদিকে তিথি তাকিয়ে আছে এখনও কেভিনের দিকে যদিও সে ভিতরে কি কথা হচ্ছে তার কিছুই শুনতে পারছে না!’এমন সময় তিথির ফোনটা বেজে উঠল উপরে ছোট বোন সাথীর নাম্বার দেখে তাড়াতাড়ি ফোনটা তুলে একবার আকাশদের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলে উঠলঃ
—“হ্যালো কই তুই?’
—“আমরা তো হসপিটালেই তুমি কই আপু…
—“আমিও তো হসপিটালের ভিতরই,,সাথী এদিক-সেদিক খুঁজে বলে উঠলঃ
—“তুমি কোথায় বলো তো আপু…
—“আমি তো এমারজেন্সি ওয়ার্ডের সামনে…
“বোনের কথা শুনে হঠাৎই চোখ যায় সাথীর তিথির দিকে!’সে হাত উঠিয়ে নাড়াতে নাড়াতে হাল্কা চেঁচিয়ে বলে উঠলঃ
—“এই যে আপি আমি এখানে…
“বোনের আওয়াজ কানে আসতেই তিথি আশেপাশে তাকিয়ে সামনেই তার বোনকে দেখে ফোনটা কেটে মোবাইলটা পকেটে রাখতে রাখতে এগিয়ে গেল সাথীর দিকে তারপর বললোঃ
—“এবার এখানে কেন এসেছিস আগের বার তো ডাক্তারের চেম্বার এখানে ছিলো না..
—“আসলে আপু এবার ডাক্তার কোনো কারনে এই হসপিটালে বসেছে তাই এখানে নিয়ে আসলাম…
—“ওহ ওকে চল মা কই…?
—“ওই তো ওখানে বসে আছে!’
“তারপর সাথী আর তিথি চললো তাদের মায়ের কাছে!’সাথী আর তিথি দুই বোন ওদের বাবা নেই,,আজ থেকে ঠিক দু’বছর আগে ওদের বাবা মারা যায়!’বাবা মারা যাওয়ায় আর পরিবারের বড় মেয়ে হওয়ায় তিথি সংসারের হাল ধরে!’প্রথমে তাদের চলতে একটু কষ্ট হলেও ধীরে ধীরে তিথি সবটা সামলে নেয়!’সবই ঠিক ছিল কিন্তু হঠাৎ একদিন ওদের মা খুব অসুস্থ হয়ে পড়ে,,পরে ডাক্তার দেখিয়ে পরিক্ষা নিরীক্ষা করে জানা যায় ওদের মায়ের মাথায় টিউমার হয়েছে!’বর্তমানে কিছুটা ছোট আছে কিন্তু ডাক্তার বলেছে খুব তাড়াতাড়ি অপারেশন না করলে এর পরিনতি ভয়ংকর হতে পারে!’তিথি আপ্রান চেষ্টা করছে তার মায়ের অপারেশনটা খুব তাড়াতাড়ি করিয়ে নিতে!’কিন্তু টাকার জন্য যেন কিছুই হচ্ছে না!’এই জিনিসটা তিথির মা জানে না!’…..
_____
“ডাক্তারের রুমে বসে আছে আকাশ!’মুখে কোনো কথা নেই তাঁর,আকাশকে চুপ থাকতে দেখে বলে উঠল ডাক্তার!’ডাক্তারের নাম হৃদ,,আকাশের ছোট বেলার বন্ধু সে!’
—“চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে…
—“কি করে ঠিক হবো তুই তো জানিস গ্রেন্ডমা ছাড়া আমার আর কেউ নেই আজ সেই গ্রেন্ডমাই যদি আমায় ছেড়ে চলে যায়…
—“আমি বুঝতে পারছি তোর মনের অবস্থা কিন্তু কি করার গ্রেন্ডমার রোগটাই যে অনেক বড়,,তাই বলবো ভেঙে পরিস না সব সময়ের উপরে ছেড়ে দে!’আর গ্রেন্ডমার শেষ ইচ্ছে পূরণ করার চেষ্টা কর!’তারপর তার কি ব্যবস্থা করলি?’
—“তোকে আর কি বলবো গ্রেন্ডমা এমন একটা ইচ্ছের কথা বললো যে কিছুতেই কিছু হচ্ছে না তুই তো জানিস বিয়ে আর মেয়ে কোনোটাকেই আমার ভালো লাগে না!’
—“কিন্তু কি করার গ্রেন্ডমার জন্য যে তোকে বিয়ে করতেই হবে আকাশ…
—“হুম,,তা ঠিক আছে…
—“যাই কর একটু তাড়াতাড়ি করিস আমার বলতে খারাপ লাগছে তারপরও বলবো তোর কাছে কিন্তু সময় খুব কম আছে…
“হৃদের কথা শুনে আকাশ মাথা নিচু করেই ছলছল চোখে বলে উঠলঃ
—“আমাদের হাতে আর কতদিন টাইম আছে হৃদ…
“আকাশের কথা শুনে হৃদ দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে উঠলঃ
—“বড় জোর এক থেকে দু’মাস বা তার থেকেও কম….
“উওরে আকাশ কিছু বলে না প্রচন্ড খারাপ লাগছে তাঁর!’আকাশের অবস্থা বুঝতে পেরে হৃদ আকাশের কাঁধে হাত রেখে বললোঃ
—“আমি জানি তোর ভিতর দিয়ে কি যাচ্ছে শুধু বলবো ভেঙে পরিস না,,
“এমন সময় একজন নার্স এসে বললো হৃদকেঃ
—“ডক্টর ২০৩ নাম্বার রুমের পেসেন্ট কেমন করছে..?
“নার্সের কথা শুনে হৃদ বলে উঠলঃ
—“ঠিক আছে চলুন…
“এতটুকু নার্সকে বলে আর আকাশকে “বসতে বলে” দ্রুত বেরিয়ে যায় সে!’আর আকাশ নীরবে বসে রয় কিছুক্ষন কিছুই ভালো লাগছে না তাঁর!’ব্লাড ক্যান্সারের মতো এক ভয়ানক রোগে আক্রান্ত আকাশের গ্রেন্ডমা!’এমন নয় আকাশ বড় বড় ডাক্তারদের দেখায় নি বিদেশেও গিয়ে ছিল সে তার গ্রেন্ডমাকে নিয়ে!’কিন্তু কিছুতেই কিছু হয় নি!’গ্রেন্ডমার শেষ ইচ্ছে হলো আকাশের বিয়েটা দেখা আর সেই জন্যই আকাশ তখন তিথিকে বিয়ের অফার দিয়েছিল!’আকাশ ছোট বেলা থেকেই এক গ্রেন্ডমা ছাড়া অন্য কোনো মেয়েদের বেশি পছন্দ করে না!’আর বিয়ে করার তো প্রশ্নই আসে না!’কিন্তু আজ এমন একটা পরিস্থিতিতে বসে আছে সে যে ভাবতেই খারাপ লাগছে আকাশের!’…
“এসব ভাবতে ভাবতে আস্তে আস্তে ডাক্তারের রুম থেকে বের হয় আকাশ!’তাকে যে অফিস যেতে হবে,,আর একবার গ্রেন্ডমার সাথে দেখা করেই যাবে আকাশ অফিসের দিকে….
____
“ডাক্তার দেখিয়ে মাকে নিয়ে ডাক্তারের রুম থেকে বের হয় সাথী!’কিন্তু তিথি বের হয় নি তখনও,,তিথি বের না হতে বলে উঠল সাথীর মাঃ
—“ও এখনো বের হচ্ছে না কেন?’
—“তুমি আমার সাথে চলো আপু এখনই চলে আসবে,,আর আপু তো এখন বাড়ি যাবে না…
—“ওহ..
—“হুম…
“বলেই মাকে নিয়ে হসপিটাল থেকে বের হয় সাথী!’অন্যদিকে সেই মুহূর্তেই বের হয় তিথি ডাক্তারের রুম থেকে মনটা তার ভিষন খারাপ!’কারন ডাক্তার বলেছে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওর মায়ের অপারেশনটা করিয়ে নিতে!’মনখারাপ করেই হেঁটে যাচ্ছে তিথি,,সময়টা যেন একটু বেশি বেমানান লাগছে তিথির কাছে!’সবই তো ঠিক বাবাকে হারিয়ে সবেমাত্র একটু ঠিকভাবে চলতে শুরু করেছিল তাঁরা এর মধ্যে আবার,,ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো তিথির!’…..
______
“হসপিটালের করিডোরে বসে আছে আকাশ!’প্রচন্ড খারাপ লাগছে তার,গ্রেন্ডমার মুখটা দেখলেই কষ্ট হয় আকাশের!’সে এখনো মানতে পারছে না কিছুদিন পর তার গ্রেন্ডমা তাকে ছেড়ে চলে যাবে!’এমন সময় আকাশের পাশে এসে বসলো তিথি,এখান থেকেই যাচ্ছিল তিথি সামনেই আকাশকে মন খারাপ করে বসে থাকতে দেখে বললো সেঃ
—“কি হয়েছে বস ওনার?’
“আচমকা কারো কন্ঠ কানে আসতেই চমকে উঠলো আকাশ সামনেই তিথিকে দেখে বলে উঠল সেঃ
—“তুমি….
—“হুম আমি, কি হয় উনি আপনার?’
—“কে…
—“ওই যে কেভিনের ভিতর আপনি যার হাত ধরে বসে ছিলেন…
—“ওহ উনি আমার গ্রেন্ডমা…
—“কি হয়েছে ওনার…?’
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে…..
[ভুল-ত্রুটি ক্ষমার সাপেক্ষ!’আর গল্প কেমন লাগছে সবাই কমেন্ট করে জানাবে কিন্তু]
#TanjiL_Mim♥️