#মেঘের_বন্ধু_বৃষ্টি (৯)
হাউ মাউ করে গলা ফাটিয়ে কাঁদছে উমর। আজ বহুদিন পর সানিনের কাছাকাছি হয়েছে। এতো দিন নিজে কে সংযত রাখার চেষ্টা চালালে ও আজ পারছে না বিন্দু মাত্র। এই শেষ দিনের দেখা টা এতো টা আবেগ প্রবণ হবে তা ভাবে নি কখনোই। সানিন বিরক্ত হচ্ছে এবার। চোখের সামনে দামড়া এক ছেলে কেঁদে নদী বানিয়ে যাচ্ছে। এটা কি মানা যায়!
” আর একবার কাঁদলে মার খাবা। ”
” আমি আপনাকে ভালোবাসি সানিন। “।
” তুমি ছোট আমার। ”
” এটাই তো আমার ভাগ্য। আর এটা কে আমি মানতে পারছি না। কি করবো বলুন না। মে’রে ফেলুন আমায়। ”
” দেখো উমর আমি যতো দূর জানি তোমার বাবা একজন প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক। জীবনে বহু কষ্ট করেছেন তোমাদের মানুষ করতে। তাই আর কষ্ট বাড়িও না। ”
” কিন্তু। ”
” কোনো কিন্তু নয়। পড়াশোনা করে বড় হও। তখন ও যদি মনে হয় আমি তোমার অন্তর কে জ্বালাতন করি তবে ভাববো। ”
” আমি পারবো না আপনাকে ছাড়া থাকতে। ”
” এতো দিন থেকেছো তো? ”
” ম’রার মতো করে। আর পারছি না আমি। এখন শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। ”
” উমর এমন টা করো না প্লিজ। বোঝার চেষ্টা করো। ”
মহা ভেজালে পরা গেল। এমন অনাকাঙিক্ষত প্রেম যদি কাউকে এলোমেলো করে দেয় তখন কি ই বা করার থাকে। শেষে কি এই ছেলে কেই বিয়ে করতে হবে। এসব চিন্তা চেতনা বিচরণ করছে ওর মন প্রাণ জুড়ে। তখনি পায়ের কাছে লুটিয়ে পরলো উমর। ওর কান্ডে না হেসে পারলো না সানিন। ছেলে টার চুল ধরে বলল
” তোকে শাসন করার জন্য ও পাশে রাখা দরকার। বাজে ছেলে! বন্ধু হয়ে থাকতে পারবি শেষ দিন অব্দি? ”
” পারবো। ”
বিগলিত হাসলো সানিন। উমরের চোখে মুখে লেপ্টে আছে প্রবল ভালোবাসা। এই ছেলেটা কে শাসন করার জন্য ও হলে ও শেষ দিন অব্দি পাশে থাকতে চায় সে। তবে এই সমাজের কথা ভাবলেই কেমন মন খারাপ হয়। তাঁতে কি কতো মানুষ ই তো এ সমাজের বিরোধিতা করে ভালো থেকেছে আর ভালো আছে।সানিন ও না হয় রিক্স নিয়ে চেষ্টা করবে ভালো থাকার। উমরের ভালোবাসা যদি শেষ দিন অব্দি থাকে তো সানিন চোখ বুঁজে পার করে দিবে শত বছর।
পরীক্ষার আগের দিন জব খুঁজতে বের হয়েছে আওয়ান। বিষয় টা চোখে পড়তেই গাড়ি থেকে নেমে গেল তিয়াশা। এক্সামের কিছু জিনিস কিনতে বের হয়েছিলো। অন্য মনস্ক আওয়ানের কানে তিয়ার ডাক পৌছোলো না। কেবল হেঁটে যাচ্ছে মাথা নিচু করে। ছেলেটার বাহু তে টান দিলো তিয়া। সামান্য চেঁচিয়ে বলল
” কি রে এতো বার ডাকার পর শুনছিস না কেন? ”
” ডাকছিলি আমায়। ”
” থাকিস কোথায় তুই! আর এগুলো কিসের ডকুমেন্ট। ”
ফাইল চেইক করতে লাগলো তিয়াশা। চোখ মুখ ইষৎ লাল হয়ে উঠেছে। জবের কাগজ টা ছিঁড়ে ফেলে পর পর বলল
” আর ইউ সিলি? এই সামান্য বেতনে আট ঘন্টা ডিউটির জব করবি তুই। কাল থেকে তোর ফাইনাল পরীক্ষা। তুই কি পাগল হয়ে গেলি?”
” আমি সত্যিই পাগল হয়ে গেছি তিয়া। ”
” আসলেই পাগল হয়ে গেছিস তুই। ভারসিটির লাস্ট ডে তে ও দেখলাম মন মড়া। বল না কি হয়েছে তোর। ”
” কিছু না রে। ”
” আমাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা চালাচ্ছিস ভালো তবে আমি কিন্তু খবর নিয়েই ছাড়বো। ”
” কফি খাবি তিয়া, না না কফি না চা খাবি? ঐ যে দেখ ঐ মামার হাতের চা খুব ভালো। ”
ফুটপাতের একটি দোকান দেখাচ্ছে আওয়ান। অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো তিয়া। এতো টা উদ্ভট চিন্তা ভাবনা কখনো আসে নি। ছেলেটা বোধহয় চাঁপা কষ্টে আছে। সঙ্গ দেওয়ার জন্য হলে ও চায়ের দোকানে গেল তিয়া। দু কাপ চা নিয়ে হাঁটতে লাগলো পাশাপাশি। নীরবতায় থমকে গেছে মেঘ ও। বৃষ্টি কে ডাকার কথাই ভুলে গেছে।শুধু মাত্র আকাশ কে কালো এক আস্তরণে আবদ্ধ করে দিয়ে গুমোট করে রেখেছে। মুখ খুললো তিয়া–
” কি হয়েছে তোর। পড়াশোনা নিয়ে এতো সিরিয়াস একজন আজ এমন ছন্নছাড়া কেন। কুল কিনারা নেই যেন। ”
” আমি এমন টা কেন হলাম রে তিয়া? ”
” কেমন। ”
” দায়িত্বজ্ঞানহীন। ”
” হঠাৎ এসব কি বলছিস তুই। দেখ আমি জানি না কেন বলছিস এগুলো। তবে এর পেছনের কারণ টা নিশ্চয়ই তোকে অগোছালো করে দিয়েছে। ”
” হুম। ”
আওয়ানের কাঁধে হাত রাখলো তিয়া। চোখে মুখে লেপ্টে আছে আশ্বস্তি। তাই যেন ভরসা পেল আওয়ান বলা শুরু করলো অতীতের এক কাহিনী।
” দশ বছর আগের ঘটনা। আমি তখন খুব বেশি বড় নই। সবে চৌদ্দ বছরে পা দিয়েছি। আমার বাবার সাথে মায়ের বিচ্ছেদ হয়। কাগজে কলমে নয় মনের ভেতরের বিচ্ছেদ টা হয়। তাঁর আগের ঘটনা গুলো খুব খারাপ। জানিস আমি হয়তো এখনো আমার বাবা কে প্রচন্ড ভাবে ভালোবাসি তবে আমি অস্বীকার করতে পারি না সেই নিকৃষ্ট অপরাধ। প্রায় পাঁচ কোটি টাকা লুটপাট করেছিলেন আমার বাবা। বিষয় টা আম্মি যখন জানতে পারেন তখন খুব রেগে যান। ভাগ্য ক্রমে সেই কেইস টা পরে আম্মির কাছে। তবে আম্মি পারলেন না শাস্তির রায় দিতে। অতঃপর বাবা মুক্তি পেলেন। তবু ও থেমে থাকেন নি তিনি। টাকার নেশায় উন্মাদ হয়ে যান। সর্বশেষ গরিবের জন্য আসা টাকা লুটপাট করেন। আম্মি তখনো পারলেন না বাবা কে শাস্তি দিতে। এক সময় বাবা আরো অপরাধের দিকে ধাবিত হলেন। হাজার বার বারণ করার পর ও সেদিন শুনেন নি বাবা। অতঃপর আম্মি আমাদের নিয়ে বেরিয়ে আসেন। আর ছেড়ে দেন বিচারকের দায়িত্ব। ওনার কথা হলো যেখানে তিনি নিজে ও অন্যায় কে প্রশ্রয় দিয়েছেন সেখানে কি করে পারবেন অন্যের জন্য ন্যায় বিচার করতে! ”
*
খুব দ্রুত আওয়ানের জীবনে ঝড় আসতে চলেছে সেই আভাস ইতোমধ্যেই পেয়েছে তিয়াশা। এই দীঘল রজনী জুড়ে আওয়ানের কথাই ভেবে চলেছে বিচলিত অন্তর। অশান্ত হয়ে উঠেছে মন প্রাণ সব। সুষমা শারীরিক ভাবে অসুস্থ। তবে সেটা কাউ কে জানতে দেন নি এতোদিনে। এদিকে ব্যাংক এ লোন করেছেন। সেই চিন্তা তে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছেন। এসব জানার পর আওয়ানের অনুভূতি যে কেমন তা শুধু মাত্র সেই জানে। প্রিয় মানুষ আর কোটি টাকার সম্পদ ফেলে এই সাধারণ জীবন যাপন করছেন সুষমা। শুধু মাত্র ন্যায় কে অন্তরে পুষেই বেঁচে আছেন সাধারণ একজন মা হিসেবে। তিয়াশার কান্না পাচ্ছে এবার। খুব খারাপ লাগছে ওর। এই নির্মম ঘটনা গুলো জানা ছিলো না এর আগে। তবে এখন যখন জানলো তখন কিছুই করার নেই।
পরীক্ষার হলের সামনে তুমুল ভীর জমায়েত হয়েছে। ভীরের মাঝে তিয়াশা কে খুঁজছে সবাই। মেয়েটা এতো লেট করে আসছে কেন কে জানে। হলে প্রবেশের পাঁচ মিনিট আগে ছুটে এলো তিয়াশা। হাঁপিয়ে গেছে একদম।
” স্যরি গাইস। কাল খুব রাত করে ঘুমিয়ে ছিলাম সেই কারনেই সকালে উঠতে পারি নি। ”
” আচ্ছা, চল তো এখন। ”
” ওয়েট আগে বিরিয়ানি টেস্ট কর। ”
বক্স থেকে বিরিয়ানি বের করলো তিয়া। সকলে হুমড়ি খেয়ে পরলো বক্সে। শেষ মেষ দেখা গেল এক চামচ ছিলো ওর জন্য। ফিচেল হাসি তে মত্ত হয়ে চলে গেল সুমিতা। দু একটা কথা বলে শাম্মি আর প্রজ্জোল ও চলে গেল নিজের হলের দিকে।
জিমাম আওয়ান আর তিয়াশা যাচ্ছিলো তখনি পেছন থেকে মধুপ্রিয়ার ডাক। মেয়েটি অদ্ভুত ফ্যাশনের ড্রেস পরে। তিয়া সামান্য হাসার চেষ্টা করে বলল
” তোমরা কথা বলো আমরা যাই। ”
” হু। ”
আওয়ানের চোখ ছিলো সামনের দিকে। মধুপ্রিয়ার সাথে মনের দ্বন্দ্ব চলছে তাঁর।
” ফোন পিক করো নি কেন? ”
” তুমি ও তো করো নি। ”
” ও সেই কারনেই এমন করবে। বাহ প্রতিশোধ নিচ্ছো? ”
” মধু! আজকাল তোমার ভাষা তে এমন তিক্ততা কেন? ”
” এখন তো তেতো লাগবেই। মজা নেওয়া শেষ না। ”
” তোমার কথা কিন্তু অন্য দিকে তাক করছে। প্লিজ নিজেকে সংযত করো। ”
” হু আর তুমি কি করছো। পৃথিবীর সমস্ত বয়ফ্রেন্ড জানে তাঁর গার্লফ্রেন্ড কে কি করে সুখে রাখতে হয়। সেই দিক থেকে তুমি তো লুজার। ”
” পরে কথা বলবো। তোমার মাথা ঠিক নেই। ”
পেছন থেকে ডাকলো মধু। নানান কথাই বলে চলেছে সে। আওয়ান সেসব কানে নিয়ে ও নিলো না। ইদানিং মেয়েটার মুখের ভাষা খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
পুরো পরীক্ষার হলে একটা কথা ও বলে নি আওয়ান। তিয়াশা ও ঘাটায় নি তেমন। পরীক্ষা শেষ করে সবাই আড্ডা দেওয়ার কথা বললে সরাসরি বারন করে দিলো আওয়ান। তিয়াশা বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে। তাই বলল ‘পরে আড্ডা দেওয়া যাবে।’
বাসায় ফিরে এসে লম্বা ঘুম দিলো তিয়াশা। রাতে ঘুম না হওয়ায় মাথা ব্যথা করছে। ঘুম থেকে যখন উঠলো তখন বাজে বিকেল সাড়ে চার টে। ফোন টা সাইলেন্ট হয়ে পরে আছে বালিশের কাছে। সেখানে ভাসছে বারো টা মিস কল। আওয়ানের নাম্বার দেখে কয়েক সেকেন্ড চুপ করে রইলো। ভাবনার মাঝেই তাহমিদা এলেন। মুখ টা গম্ভীর ছায়া মাখা।
” সুমিতা কল করেছিলো। আওয়ানের মায়ের অবস্থা নাকি ভালো না। ”
গ্রুপ :Fatema’s story dis
আইডি : https://www.facebook
#ফাতেমা_তুজ
#চলবে