#মেঘের_পালক_চাঁদের_নোলক
#পর্ব_০৫
#অধির_রায়
শাওন চৌধুরীকে কিছু বলার সাহস হচ্ছে না৷ নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে৷ আর কি কোন গাড়ি ছিল? শেষে কিনা শাওন চৌধুরীর বাড়ির গাড়িতে জায়গা হলো৷ শুধু গাড়িতে নয়৷ বাড়িতে জায়গা হয়ে গেছে৷ নিধি উদাস মন নিয়ে আকাশ পাতাল এক করে ভেবে যাচ্ছে৷ তার প্রশ্নের উত্তর মাথায় আসছে না৷ শাওন চৌধুরী তাকে কোথায় নিয়ে যাবে? নিধির মাথায় দু’ষ্টু বুদ্ধি উঁকি দিল। শাওনকে ভাইয়া বলে ডাকতে পারে৷ শাওনের রিয়েক্ট দেখার জন্য নিধি মলিন কন্ঠে বলল,
“ভাইয়া আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
ভাইয়া শব্দটা শাওনের কর্ণধারে পৌঁছাতেই গাড়ির ব্রেক ক’ষে৷ নিধি সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে৷ গাড়িতে মাথা ঠেকার আগেই শাওনের হাতে মাথা ঠেকে। নিধি ভয়ে ভয়ে বলল,
“এভাবে মাঝ রাস্তায় কেউ ব্রেক করে৷ পা/গ’ল হয়েছেন।”
নিধির কন্ঠে ভয়ের ছাপ দেখাচ্ছে। কিন্তু এমন ভাব দেখাচ্ছে সে বিরল পরিমাণ ভয় পাইনি৷ শাওন কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে নিল৷ রাগ মিশ্রিত কন্ঠে বলল,
“তুমি আমার বাবার কত নাম্বার সন্তান৷ তুমি আমার বাবার বংশধর কবে হলে? আমাকে তোমার ভাইয়া মনে হয়!”
শাওনের শান্ত রাগ দেখে নিধি ঘাবড়ে যায়৷ ভাইয়া শব্দে শাওন চৌধুরীর এলার্জি নেই তো৷ এলার্জি থাকলে মুগ্ধ ভাইয়া যখন শাওন চৌধুরীকে ভাইয়া বলে ডাকছিল তখন তো এমন রিয়েক্ট করেনি৷ নিধি আমতা আমতা করে বলল,
“মুসলমান পরস্পরের পরের ভাই৷ সে সূত্র ধরে আমি আপনাকে ভাইয়া বলে সম্বোধন করেছি৷”
শাওন মুচকি হেঁসে বলল,
“আমি তো ভুলেই গেছি৷ মেয়ে মানুষ ছেলেদের পোশাক পড়লে ছেলে হয়ে যায়৷ তুমি এখন ছেলে তাহলে তুমি আমার সাথে ঘুমাতে পারো৷ আজ রাতে এক সাথে বিছানা শেয়ার করব৷ কারণ আমরা ভাই ভাই৷”
শাওনের ঠোঁটের কোণে দু’ষ্টু হাসির রেখা৷ লোকটা জীবনেও ভালো হবে না৷ মেয়ে মানুষ দেখলেই মাথায় বাজে চিন্তা আসে৷ নিধি রাগে লজ্জায় আর কথা বাড়াল না৷ সিটে হেলান দিয়ে আঁখি বুঝে রয়েছে নিধি৷ শাওন বারবার আড় চোখে নিধিকে দেখে যাচ্ছে৷ গাড়ি থামে শপিংমলের সামনে৷ নিধি চকিত হয়ে বলল,
“আমরা এখানে কেন এসেছি?” সামনে তাকিয়ে, “এত বড় শপিংমল!”
শাওন চৌধুরী নিধির হাত ধরে হেঁসে বলল,
“এখানে আমরা ড্যান্স করতে এসেছি৷ আমরা নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করতে এসেছি। শপিংমলে মানুষ কিসের জন্য আসে?”
নিধি ক্ষোভ নিয়ে বলল,
“আপনি কি ভালোভাবে কথা বলতে পারেন না? একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়, জানেন না?”
“মিস অপরিচিতা! আমি আপনাকে যুগান্তর থেকে চিনি৷ এখন কথা না বাড়িয়ে ভিতরে যাওয়া যাক৷”
শাওনের কথা নিধি বুঝতে পারল না৷ ছোট কিশোরীর মন বুঝতে পারল না যুগান্তর কি? মানে শাওন চৌধুরী অপরিচিতাকে অনেক আগে থেকে চিনে৷ আমি তো অপরিচিতা নয়৷ আমার নাম তাসফিয়া নিধি। প্রশ্ন করতে গিয়েও থেমে যায়৷ বিপদ ঘটে সিঁড়ি লিফ্টে৷ জীবনে প্রথম সিঁড়ি লিফ্ট দেখছে৷ কিভাবে উঠতে হবে বুঝতে পারছে না? মানুষ খুব সহজেই উঠে পড়ছে৷ নিধি পারছে না কেন? খুব ভয় লাগছে৷ নিধি সকল জল্পনা কল্পনা এক দিকে রেখে বলল,
“চলেন আমরা অন্য সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠব। এমন উড়ন্ত সিঁড়ি উঠব না৷”
শাওন বিষয়টা বুঝতে পারল৷ নিধি ভয় পাচ্ছে৷ কোন কিছু না ভেবে শাওন নিধিকে পাঁজা কোলা করে সিঁড়িতে উঠে পড়ে৷ নিধির চোখ কলকাতার রসে গোল্লার মতো রুপ নেয়৷ অসভ্য শাওন চৌধুরী ছলে বলে নিধিকে স্পর্শ করতে চাচ্ছে৷ এত মানুষের মধ্যে লজ্জা টুকুও নেই৷ একটা লোক তো বলেই ফেলল,
“ভাবীকে ভিষণ ভালোবাসেন৷ আপনার ভালোবাসা অমর হোক।”
শাওন চৌধুরী মুচকি হাঁসলেন। কোন জবাব দিলেন না৷ নিধি কিছু বলতে নিলে চোখ পাকিয়ে থামিয়ে দেন৷ নিধিকে একদম শপিংমলের ভিতরে নামিয়ে দেন৷ লোকটার গায়ে শক্তি আছে বলতে হবে৷ শাওন নিজে পছন্দ মতো নিধিকে ড্রেস কিনে দিলেন৷ নিধি লজ্জায় শাওনের দিকে তাকাতে পারছে না৷ শপিং শেষে খাবারের জন্য নিধিকে বললে জবাবে না বলে দেয়৷ শাওন আর জোড় করেনি৷ গাড়িতে উঠেই নিধি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠল,
“আপনার মতো অসভ্য লোক দু’টো নেই৷ আমার কাছ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন৷ পরবর্তীতে আমাকে স্পর্শ করার চেষ্টা করলে হাত কেটে দিব৷”
শাওন কোন জবাব দিল না৷ নিধির চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপল দিল৷ এতে নিধির রাগ কয়েকগুণ বেড়ে গেল। মনে মনে শাওনের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে করতে বাড়িতে ফিরে৷
_______________________
ছোট নিধি বাচ্চাদের মতো এলোমেলো হবে ঘুমিয়ে আছে৷ খোলা কেশগুলো সমস্ত মুখে ছড়িয়ে আছে৷ শাওন নিধির পাশে বসে সযত্নে কেশগুলো কানের কাছে গুঁজে দিচ্ছে৷ অপলক দৃষ্টিতে পলকহীন নয়নে দেখতে ব্যস্ত প্রিয় প্রেয়সীকে৷ ভালোবাসার বাঁধনে আটকা পড়ছে৷ প্রথম দেখায় এত ভালো লাগবে বুঝতে পারেনি। মিশে গেছে হৃদয়ের গহীনে৷ আবছা আলোয় মায়াবী লাগছে৷ নিধির কপালে ওষ্ঠ স্পর্শ করে শাওন শায়লা চৌধুরীর রুমে আসে৷ শায়লা চৌধুরী বসে বসে মীর মশাররফ হোসেনের বিখ্যাত উপন্যাস “বিষাদ সিন্ধু” পড়তে ব্যস্ত৷ মায়ের কাছে আসা হয়না শাওনের৷ দিনের বেলা কাজে ব্যস্ত থাকে। রাতের আলো পড়তেই নিষিদ্ধ পল্লী বা অকটেন পার্টিতে স্থান হয়৷ শাওনকে বাড়িতে দেখে অবাক হোন শায়লা চৌধুরী। চকিত গলায় বললেন,
“আজ তোমাকে বাড়িতে দেখতে পারব ভাবতেই পারিনি৷ তুমি বাহিরে যাওনি৷ তোমার পায়ে শিকল পড়িয়েও বাড়িতে রাখা যায়না৷ রাতের শেষ প্রহরে খুঁজে আনতে হয় মুগ্ধকে দিয়ে৷”
শাওন অপরাধী কন্ঠে জবাব দিল,
“মা আমি রাতে আর বাহিরে যাব না৷ যার ঘরে পূর্ণিমার আলো থাকে সে বাহিরে যাবে কেন? আমার ঘরে আমার পূর্ণিমার চাঁদ চলে এসেছে৷”
শায়লা চৌধুরী ব্রো কুঁচকে ছেলের দিকে তাকান৷ ছেলের কথা বুঝতে পারল না৷ শাওন মায়ের কোলে মাথা রেখে বলল,
“মা তোমার ছেলে পিচ্চি মেয়ের প্রেমে পড়ে গেছে৷ তার মাঝে নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে৷ পিচ্চি মেয়েটা কি তোমার ছেলের মনের কথা বুঝতে পারবে? বাসবে কি ভালো আমায়?”
শায়লা চৌধুরী আরও অবাক হয়৷ তিনি নিজের কর্ণকে বিশ্বাস করতে পারছেন না৷ সত্যি শুনছেন তো৷ তার যে ছেলে মেয়েদের দু’চোখে দেখতে পারত না সেই ছেলে মেয়ের প্রেমে পড়েছে৷ তাও আমার বাচ্চা মেয়ের৷ তার কাছে মেয়ে মানুষ শুধু ভোগের বস্তু ছিল৷ শাওয়া চৌধুরী ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“মেয়েটা কে? যার প্রেমে আমার ছেলে হাবুডুবু খাচ্ছে৷ কে আমার ছেলের মনে ভালোবাসার বীজ রোপণ করল?”
“তোমার সাথে পরিচয় করানো হয়নি৷ আজ আমাদের বাড়িতে নিধি নামের একটা মেয়ে আসছে৷ সেই বাচ্চা মেয়েটা তোমার ছেলের মনকে জয় করে নিয়েছে৷ এক পলক দেখায় তোমার ছেলের মনে কাল বৈশালীর ঝড় বয়ে গেছে৷ সবকিছু তছনছ করে দিছে৷ তার প্রতি তোমার ছেলের মোহ নয়৷ বরং ভালোবাসা কাজ করে৷”
শায়লা চৌধুরী ছেলের কথায় সন্তুষ্ট হতে পারলেন না৷ নিধি ছাড়া অন্য কেউ এখনই বিয়ের ব্যবস্থা করতেন৷ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“আমার সাথে পরিচিত হয়েছে৷ তোমার থেকে মিনিমাম পনেরো বছরের ছোট হবে নিধি৷ তোমার ভালোবাসা পূর্ণতা পেতে অনেক বছর লেগে যাবে৷ ততদিনে নিধি তোমার জন্য অপেক্ষা করবে না৷ তোমার বয়স থেমে থাকবে না৷ আমি চাই তুমি নিধিকে ভুলে যাও৷”
শায়লা চৌধুরীর কথায় শাওনের রক্ত গরম হয়ে গেল৷ মাথা তুলে কঠিন কন্ঠে জবাব দিল,
“আমি বিয়ে করলে নিধিকেই করব৷ নিধিকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করব না৷ কেউ আমার কাছ থেকে আলাদা করতে পারবে না৷ তুমিও পারবে না৷ আমার ভালোবাসার জন্য আমি সারাজীবন অপেক্ষা করব৷ নিজেকে তার যোগ্য করে তুলব। তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি৷”
শায়লা চৌধুরী কোমল কন্ঠে বলল,
“শাওন আমি তোমাকে তেমনভাবে বলতে চাইনি৷ আমি জানি নিধি খুব ভালো মেয়ে৷ আমি মানুষ চিনতে ভুল করিনা৷ তোমাদের বয়সের পার্থক্য দেখছো৷ তোমার হাঁটুর বয়সী নিধি৷ নিধিকে বাড়ির বউ হিসেবে মেনে নিতে আমার কোন আপত্তি নেই৷ আমারও তাকে অনেক ভালো লেগেছে৷”
“কোন কথা নয়৷ মা তুমি ভালো করেই জানো আমার চাওয়া কতোটা খারাপ। আমার সামনে বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে আমি কাউকে পরোয়া করিনা। তার থেকে বরং তোমরা নিধিকে মেনে নাও৷ আমি কাল নিধিকে স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে যাব৷ কাউকে আমার নিধিকে ছোট করার সুযোগ দিব না৷ আর হ্যাঁ তার পরিচয় আমার কাছে বড় কিছু নয়৷ কোন আপত্তি থাকলে আমি নিধিকে নিয়ে দূরে কোথাও চলে যাব৷”
শাওন কথা না বাড়িয়ে হনহনিয়ে শায়লা চৌধুরীর রুম থেকে প্রস্থান করে৷ শায়লা চৌধুরী ছেলের সামনে কঠোর হলেও মনে মনে অনেক খুশি৷ তার ছেলেটা ভালোবাসার বাঁধনে আটকা পড়েছে৷ আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন যেন নিধি তার ছেলের ভালোবাসা বুঝতে পারে।
_______________________
নিধি চোখ মেলে শাওনকে দেখতে পেল৷ তার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছে৷ নিধির চোখ আটকে যায় শাওনকে দেখে৷ মুগ্ধ নয়নে শাওনকে দেখে৷ ঠোঁট কোণে সব সময় হাসি লেগে থাকে৷ যা নিধির খুব ভালো লাগে৷ কিন্তু শাওন চৌধুরী রুমে কি করছে? নিধি বুঝতে পেরে তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে উঠে কঠিন গলায় বলল,
“আপনি এখানে কি করছেন? রুমে আসলেন কিভাবে?”
শাওন নিধির দিকে তাকিয়ে বলল,
“ফ্রেশ হয়ে আসো৷ তোমার জন্য খাবার নিয়ে অপেক্ষা করছি৷ তোমার তন্দ্রা কাটলে তাড়াতাড়ি করো৷ তোমাকে স্কুলে ভর্তি করাতে নিয়ে যাব৷”
নিধি যেন নিজের হাতে চাঁদ পেল৷ এক দৌড়ে ফ্রেশ হতে চলে গেল৷ অনেক স্বপ্ন লেখাপড়া করে ডাক্তার হবে৷ গরিব মানুষকে বিনা টাকায় চিকিৎসায় করবে৷ তার স্বপ্ন পূরণ হতে চলছে৷ শাওন নিধির পা’গ/লা/মি দেখে মুচকি হেঁসে মনে মনে বলল,
“তোমার প্রেমে পা”গ”ল আমি৷ তুমি না চাইলেও তোমার কাছে আসবো৷ তুমি না চাইলেও তোমায় ভালো বাসবো৷ যত্নে আগলে রাখব তোমায়৷ আমার সবটুকু ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য৷ খুব ভালোবাসি পিচ্চি৷”
চলবে…..
গতকাল ইয়া বড় করে দিছিলাম৷ কেউ কমেন্ট করেনি৷ বড় বড় কমেন্ট করলে বড় বড় পর্ব দিব৷