#মেঘের_পালক_চাঁদের_নোলক
#পর্ব_০২
#অধির_রায়
মেয়েদের জীবন খুবই অদ্ভুত। নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিতে পারে না৷ পরিবারে থাকা অবস্থায় মেয়েদের সিদ্ধান্ত পরিবারের লোকজন নিবে। বিয়ের পর স্বামী৷ অর্ধেক কষ্ট পরিবার থেকেই পেয়ে আসে৷ বাকী অর্ধেক কষ্ট প্রাণপ্রিয় ভালোবাসার মানুষের কাছে থেকে পায়৷ তবুও হাসিমুখে সব মেনে নিচ্ছে৷ সৃষ্টিকর্তা মেয়ে জাতীকে অসীম ধৈর্য শক্তি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন৷ ধৈর্যের সীমা কখনও লঙ্ঘন করেন না৷ সেজন্য সৃষ্টিকর্তা মেয়ে জাতীকে মা হবার ক্ষমতা দান করেছেন৷ নিধি জীবনের সম্পুর্ন কষ্ট পরিবার থেকেই পেয়েছে৷ কেমন বাবা! এক মেয়ের ভালোর জন্য অন্য মেয়েকে নরকে পাঠান৷ বাবা নিরব মাহমুদের প্রতি ক্ষোভ, ঘৃণা ঝলঝল করছে৷ একই রক্ত থেকে সৃষ্টি করেছেন দুই বোন নিধি, তিতিরকে৷ দু’জনকে বরাবর দুই চোখে দেখে হচ্ছে৷ নিধির চোখের জল বাঁধা মানছে না৷ অনবরত ঘৃণার অশ্রু হয়ে ঝড়ে যাচ্ছে৷ নিধি চোখের জল মুছে শ্যামলীকে বলল,
“আমি যখন এই নিষিদ্ধ পল্লীতে এসেছি তখন এ নিষিদ্ধ পল্লীকে ধ্বংস করব৷ আর কোন অসহায় মেয়ের স্বপ্ন ভাঙতে দিব না৷ কোন অসহায় মেয়ের স্বপ্ন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দিব না৷”
চোখে অগ্নি, ঝাঁঝালো কণ্ঠস্বর এখনই জ্বালিয়ে দিবে সবকিছু। মস্তিষ্কের নিউরন জানান দিচ্ছে সবকিছু তছনছ করতে৷ কাল বৈশাখী ঝঁড়ের মতো সবত্র ছিন্নভিন্ন করতে৷ শ্যামলীর মুখে উজ্জ্বল হাসির রেখা ফুটে উঠল। নিধির কাঁধে হাত রেখে উৎফুল্ল কন্ঠে বলল,
“আমাকে তোর যুদ্ধে পাশে পাবি বোন। আমি নিজের জীবন বাজি রেখে তোকে পালাতে সাহায্য করব৷”
নিধি মুগ্ধ নয়নে শ্যামলীর দিকে তাকাল৷ অজানা অচেনা এ নিষিদ্ধ পল্লীতে কেউ তার সঙ্গ দিল৷ সৎমায়ের কথা মনে পড়তেই রাগে দেহ কেঁপে উঠল। গম্ভীর রাগী গলায় বলল,
“এখন থেকে আমরা কখনও নিজের জীবন উৎসর্গ করব না৷ অন্যের জন্য কতো নিজের জীবন উৎসর্গ করব৷ নিজের জীবনকে ভালোবাসতে শিখেন৷ উৎসর্গ করবে সেই পাপী মানুষগুলো।”
শ্যামলী মুখ ফুটে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন কপাটে হাঁক পড়ল৷ পুরুষালী কন্ঠে ভেসে আসে কর্ণধারে। দুয়ারের অপর পাশ থেকে গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“শাওন চৌধুরী চলে এসেছে৷ বাইজী নতুন মেয়েকে শাওন চৌধুরীর রুমে পাঠাতে বলল।”
নিধির আত্নবিশ্বাসী এবং ভালোবাসা দেখে শ্যমলীর চোখে জল এসে পড়েছে৷ চোখের জল মুছে বলল,
“এইতো কাজ শেষ৷ পাঁচ মিনিটের মধ্যে আমি নিধিকে পাঠিয়ে দিচ্ছি৷”
“দেরী বাইজী পছন্দ করেন না৷ যেতে না চাইলে জোর করে ঘরে দিয়ে আসবি৷ আজই ওই মেয়ের ডানা কাটবে বাইজী৷”
শ্যামলী দীর্ঘ শ্বাস ফেলল৷ বুকের শূন্যতায় চিনচিন ব্যথা অনুভব করল। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
“দেরী হবে না মাসুদ ভাই৷ আমি এখনই নিয়ে যাচ্ছি৷”
মাসুদ নামটা শুনে নিধির কোমল নিষ্পাপ মনটা কেঁপে উঠল। মাসুদ আর হাফিজ নামেই লোক দু’টো তাকে নিয়ে এসেছে৷ ভয়ে ঠোঁট শুকিয়ে গেল নিধির৷ জিহ্ব দিয়ে ওষ্ঠদ্বয় ভিজিয়ে নিল। নামটা যেন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়াল৷ মুহুর্তেই ভয়টা ক্ষোভ, রাগ, ঘৃণায় পরিণত হলো৷ মাটির সাথে মিশিয়ে দিতেও দু’বার চিন্তা করবে না৷ শ্যামলী নিধির দিকে তাকাতেই নিধি বলল,
“আমি সব বুঝতে পেরেছি৷ আমায় নিয়ে চিন্তা করবেন না৷ আমার জীবনে নতুন পথ চলা শুরু হবে আজ থেকে৷”
শ্যামলী নিধির হাত আলতো করে ধরল৷ নিধিকে নিয়ে গেল বাঈজীর রুমে৷ গম্ভীর রাগী গলায় বলল,
“বাইজী এই মেয়ে কিছুতেই সাজতে চাচ্ছে না৷ এমনি ধরে নিয়ে আসলাম৷ শাওন চৌধুরী তাকে এমনি পছন্দ করবে৷ উনি বুঝতে পারবেন নিধিকে এই রুপে দেখে।”
বাইজী নিধিকে মাথা থেকে পা পছন্দ প্রখর করে দেখল৷ নিধি ভয়ে চুপসে গেছে৷ বাঈজীর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল। নিধির চারপাশে একবার ঘুরে বলল,
“কিছুই লাগবে না৷ একে দেখে শাওন চৌধুরীর মাথা এমনিতেই ঘুরে যাবে।”
বাইজী ঠোঁটের কোণে বিশ্ব জয়ের হাসি৷ নিধি কিছু একটা ভেবে ভেজা গলায় বলল,
“আমি এসব কাজ করতে পারব না৷ আমাকে যে কাজ দিবেন আমি সেই কাজই করব। দয়া করে আমাকে দিয়ে জঘন্য কাজ করাবেন না৷”
বাইজী অসহায় কন্ঠে বলল,
“মামুনি তোমাকে এই কাজ করতে হবে৷ কাজটা মন দিয়ে করো৷ ভালো কাজ করতে পারলে নিজের মতো চলতে পারবে৷ তবে চার দেয়ালের ভিতর৷”
নিধি অসহায় দৃষ্টিতে বাঈজীর দিকে তাকাল৷ বাইজী শ্যামলীকে চোখের ইশারায় বলল, ‘নিধিকে রুমে দিয়ে আসতে৷’ শ্যামলী মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিল৷ কোন কিছু নিধির দৃষ্টির আড়াল হলো না৷ শ্যামলী বেশ শক্ত করেই নিধির বাহু ধরল৷ নিধির নিষ্পাপ মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে শাওনের ঘরের দিকে পা বাড়াল৷ শাওনের ঘরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়ল শ্যামলী৷ ফিসফিস করে বলল,
“বাহিরে প্রায় সব জায়গায় সিসি ক্যামেরা আছে৷ এখানে কোথাও কোন সিসি ক্যামেরা নেই৷ যেখানে গাড়ি পার্ক করে সেদিকেও ক্যামেরা নেই৷ তুমি চাইলে কারোর গাড়ির ডিপিতে করে যেতে পারো৷”
গাড়ির ডিপি কথার বুঝতে পারল না৷ প্রশ্নবোধন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে শ্যামলীর দিকে৷ শ্যামলী নিধির দৃষ্টি মুহুর্তেই পড়ে নিল। সাথে সাথে নিধিকে সবকিছু বুঝিয়ে দিল৷ নিধি আল্লাহর নাম নিয়ে শাওন চৌধুরীর রুমে ঢুকল৷ রুমে অ্যালকোহলের বিশ্রী গন্ধ মৌ মৌ করছে৷ নিধির বমি আসার উপক্রম। হাতে অ্যালকোহলের গ্লাস নিয়ে বাজে দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকায়৷ সামনের চুলগুলো চোখ অব্দি। দেখে মনে হচ্ছে বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া ছেলে৷ বয়স ২৮ হবে৷ ছিমছাম গঠনের অধিকারী। নিধি নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে শাওনের দিকে তাকায়৷ নিধির থেকে হাজার গুণ ফর্সা৷ ঠোঁটের কোণে নেশাগ্রস্ত হাসি৷ গ্লাস টেবিলের উপর রেখে হেলেদুলে নিধির দিকে কদম ফেলে এগিয়ে আসে৷ নিধি ভয়ে দেয়ালের সাথে ল্যাপ্টে যায়৷ শাওন একদম নিধির কাছে চলে আসে৷ দূরত্ব নেই বললেই চলে৷ মুখ থেকে বিশ্রী গন্ধ আসছে৷ নিধির গালে আলতো করে স্পর্শ করে বলল,
“তোমার অপরুপ সৌন্দর্যে আমি মুগ্ধ। তুমি শাওন চৌধুরীর মন জয় করে নিয়েছো৷”
নিধির মুখের একদম কাছে কথাগুলো বলল৷ ঘৃণার নিধির গা ঘিনঘিন করছে৷ দেহের সমস্ত শক্তি দিয়ে শাওনকে ধাক্কা দিল৷ শাওন নিজেকে সামলাতে পারল না৷ ভাগ্য ভালো বিছানার উপর পড়ছে৷ নিধির মনে পড়ে যায়৷ তার কাছে ঘুমের মেডিসিন আছে৷ বিগড়ে যাওয়া শাওনকে ঘুমের দেশে পাঠিয়ে নিজের কাজ করবে৷ শাওনের খুব রাগ হয়৷ তেড়ে নিধির দিকে আসতেই নিধি শাওনের বুকে হাত রেখে বলল,
“এখনই এমন অবস্থা। সারারাত আমার সাথে যুদ্ধ করবেন কিভাবে? সামান্য ধাক্কা সহ্য করতে পারেন না৷”
নিধির কথাগুলো কি আধও শাওনের উপর কোন প্রভাব ফেলছে? এক দৃষ্টিতে নিধির দিকে তাকিয়ে আছে। শাওনের দৃষ্টি নিধির দিকে আবদ্ধ। নিধি শাওনের হাত টেনে বিছানায় বসিয়ে দিল৷ শাওন রীতিমতো একটা ঘোরে যাচ্ছে৷ নিজের লোভ সামলাতে পারছে না৷ অ্যালকোহলের গ্লাস হাতে নিয়ে খুব সাবধানে ঘুমের মেডিসিন মিশিয়ে দিল৷ মনের হাজারও ভয় হানা দিচ্ছে৷ নিধি শাওনের কাঁধে হাত রেখে ডিংক্সের গ্লাসটা হাতে দিল৷ মুচকি হেঁসে বলল,
“চোখের তৃপ্তি, মনের তৃপ্তি, শারীরিক চাহিদা সবই তো মিটাতে হবে৷ সেজন্য ডিংক্স অতীব গুরুত্বপূর্ন।”
শাওনের দৃষ্টি নিধির দিকে৷ একদম নিষ্পাপ একজন কিশোরী। ডাগর ডাগর আঁখি মেলে তাকায়৷ ঠোঁটের কোণে ঝর্ণার ঝলমল হাসি৷ কান্না করায় চোখ দু’টো ফুলে ফেঁপে উঠছে। নিধিকে দেখে একটু মায়া হলো৷ পরক্ষণেই মস্তিষ্কের নিউরনের প্রতিটি স্নায়ু অন্য কিছু নাড়া দিল৷ কোমল হৃদয়ের মানুষ কঠিন মানুষে পরিণত হলো৷ একের পর গ্লাস ডিংক্স করতে থাকল৷ উম্মাতের মতো অ্যালকোহল সেবন করতে দেখে নিধির ঠোঁট প্রসারিত হলো৷ পরক্ষণেই গালে থাপ্পড় পড়ল৷ নিধি ছিঁটকে বিছানায় লুটে পড়ে৷ হেঁচকা টান দিয়ে বিছানা থেকে নিধিকে তুলে৷ টান সামলে না পেরে শাওনের বুকে মাথা ঠেকে৷ মাথাটা ভনভন করে ঘুরছে৷ আরও একটা থাপ্পড় পড়ল নিধির গালে৷ নিধির গালে রক্ত টকবক করছে৷ চোখ থেকে অঝোরে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে৷ ঘুমের মেডিসিনের কোন প্রভাব পড়ল না শাওনের উপর? নিধিকে বিছানায় চেপে ধরে নিধির পাতলা গোলাপি রঙের ওষ্ঠে শাওনের ওষ্ঠ মিলিয়ে দিল৷ কথা বলার শক্তিটুকু পাচ্ছে না৷ নিধির জীবনের আলো কি এখানেই নিভে যাবে? মিনিট দুয়েকের মাঝে শাওন নিধির উপর সমস্ত ভর ছেড়ে দিল৷ ওষ্ঠদ্বয় সরিয়ে নিয়েছে৷ নিধি বুঝতে পারল শাওন চৌধুরী ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে৷ কিছুক্ষণের আগের ঘটনা চোখের সামনে বার বার প্রতিচ্ছবি হচ্ছে৷ নিধি শাওনকে দূরে ঠেলে উঠে পড়ল৷
কপাট খুলে বাহিরে উঁকি দিতেই মাসুদকে দেখতে পেল৷ অন্যদিকে ঘুরে থাকায় নিধিকে দেখতে পাইনি৷ নিধি বুঝতে পারছে না কি করবে? মাসুদের চোখ জ’হু’রি’র মতো। ফাঁকি দিয়ে কিভাবে যাবে? হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ কেঁপে উঠে৷ চিৎকার করতে নিলেই নিধির মুখ চেপে ধরে৷ সপাং করে রুমের ভিতরে নিয়ে যায়৷ চোখ মেলে সামনের মানুষকে দেখে নিধির অন্তর আত্মায় পানি আসল৷ হাফ ছেড়ে জড়িয়ে ধরল৷ শ্যামলী আলতো করে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তোর জন্য পোশাক সংগ্রহ করেছি৷ তোকে এখান থেকে বের হতে হলে ছেলেদের পোশাক পড়েই বের হতে হবে৷ শাওনকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে খুব ভালো করছিস৷”
মিটমিটে আলোয় নিধির গাল দেখে চমকে উঠল শ্যামলী৷ অজান্তেই চোখের কোণে অশ্রু চলে আসল৷ ঠোঁটও যেন ফুলে গেছে৷ কিছু বলল না৷ নিধির হাতে ছেলেদের পোশাক দিয়ে বলল,
“জলদি শার্ট প্যান্ট পড়ে নে৷ আমি একটা ব্যবস্থা করছি৷”
নিধি মাথা নাড়িয়ে শার্ট প্যান্ট নিয়ে ওয়াসরুমে গেল৷ শ্যামলী শাওন চৌধুরীর প্যান্টের পকেট থেকে ওয়ালেট সংগ্রহ করল৷ বেশ ভালোই টাকা ছিল৷ ততক্ষণে নিধি পোশাক চেঞ্জ করে চলে আসছে৷ নিধির হাতে টাকাগুলো দিয়ে বলল,
“এখান থেকে দ্রুত পালিয়ে যা৷ এখন সবাই নারীর প্রতি আসক্তে মেতে আছে৷ মাসুদ, হাফিজ এখন নারীদের দখলে৷ আমি সব ব্যবস্থা করে ফেলছি৷ তোকে কেউ চিনতে পারবে না ৷ সাবধানে থাকবি৷”
নিধি শ্যামলীকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল৷ কি বলে ধন্যবাদ দিবে জানা নেই? নিষিদ্ধ পল্লীতে যে ভালো মানুষের বাস আছে তা শ্যামলীকে দেখে বুঝা যায়। শ্যামলীও নিধির মতো চক্রান্তের স্বীকার হয়ে নিষিদ্ধ পল্লীতে এসেছে৷ শ্যামলী চোখের জল মুছিয়ে বলল,
“আর কোন কান্না নয়৷ আল্লাহ যেন তোকে এখান থেকে বের হতে সাহায্য করে৷ জানিনা আল্লাহ এই পতিতার দোয়া কবুল করবে কিনা৷ আমি তোর জন্য আল্লাহ কাছে এখনই মুনাজাত করব৷”
শ্যামলীকে দেখে বুঝা যায় কতোটা কষ্ট স্বীকার করে নিষিদ্ধ পল্লীকে আপন করে নিয়েছে৷ নিধি শ্যামলীকে প্রতিজ্ঞা করে বলল,
“আমার জীবনের শেষ রক্ত বিন্দু থাকতে আমি আপনাকে এখান থেকে নিয়ে যাব৷ আপনাকে নরক থেকে বের করা আমার দায়িত্ব।”
কথা না বাড়িয়ে শ্যামলী নিধিকে মূল দরজায় নিয়ে আসে৷ দরজায় এনে ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় লোক চক্ষুর আড়ালে। নিধির দিকে ছোট একটা ছু’রি ছুঁড়ে দিয়ে বলল,
“তোর পথে কেউ বাঁধা হয়ে দাঁড়ালে তাকে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিবি৷ এখানে কেউ মারা গেলে কেউ কিছুই জানতে পারবে না৷”
নিধিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মুখের উপর দরজা লাগিয়ে দিল৷ নিধি ছু’রি হাতে নিয়ে দেখল চিকচিক করছে৷ কাউকে স্বর্গে পাঠানোর জন্য যথেষ্ট। ভয়ে ভয়ে অন্ধকার পথে হাটা ধরল। কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে নিচে পড়ে গেল৷ লোকটি ভদ্রতার খাতিরে বলল,
“সরি৷ দেখতে পারিনি৷”
নিধির দিকে হাত বাড়িয়ে দিল৷ নিধির ক্যাপ মাটিতে পড়ে যাওয়ায় খুব দ্রুত পড়ে নিল৷ যার জন্য অপর দিকের লোকটা কিছুই বুঝতে পারল না৷ একটু আগেই গাড়ি পার্ক করেছে লোকটি৷ নিধি সাহায্য ছাড়াই উঠে পড়ল৷ লোকটি চকিত নজরে নিধির দিকে তাকিয়ে অন্ধর মহলে পা বাড়াল৷ নিধি একে একে সকল গাড়ির ডিপি দেখতে লাগল৷ দুই তিনটা গাড়ির ডিপি দেখার অন্য একটা গাড়ির ডিপি আনলক দেখে সুযোগ বুঝে উঠে পড়ল৷ হাত তুলে আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া আদায় করল৷
চোখের পাতায় কখন তন্দ্রা হানা দিয়েছে বুঝতে পারেনি নিধি? ক্লান্ত দেহে তন্দ্রা নিমিষেই চলে আসে৷ আঁখি মেলে নিজেকে অন্ধকারে আবিষ্কার করে। জড়ো হয়ে শুয়ে আছে গাড়ির ডিপিতে৷ রাতের ঘটনা চোখের সামনে ভেসে উঠল৷ সাথে সাথে অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল। ডিপি থেকে বের হওয়ার জন্য হাত উঁচু করতেই বুঝতে পারল ডিপি লক করা৷ নিধির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল৷ এখান থেকে কিভাবে মুক্তি পাবে? আধও কি কেউ এখানে আসবে? ভাবতে পারছে না৷ মাথা ধরে আসছে৷ কিছু দিনেই ক্লান্ত হয়ে গেছে ছোট কিশোরীর মন। যেন মৃত্যু নিধির দুয়ারে হানা দিচ্ছে৷ উপায়ন্তর না দেখে ডিপিতে আঘাত করতে লাগল।
চলবে……
নিধি কি আধও নিষিদ্ধ পল্লী থেকে বের হতে পেরেছে? নাকী অন্য কোন বিপদের সম্মুখীন হচ্ছে?