#মেঘের_পালক_চাঁদের_নোলক
#পর্ব_১৩
#অধির_রায়
নিধিকে ইব্রাহীম মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়৷ যা ঢাকার শাহবাগে অবস্থিত। টপ দশটা বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজের মাঝে অন্যতম। যার শিক্ষার মান বর্তমানে বাংলাদেশকে আলোকিত করছে৷ তৈরি হচ্ছে প্রতিবছর হাজার হাজার ডাক্তার। ঝড়ে পড়া বেশির শিক্ষর্থীর জায়গা করে নিয়েছে ইব্রাহীম মেডিক্যাল কলেজ। বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় মধ্য বা নিম্নবর্গের মানুষের স্বপ্ন থাকলেও হয়ে উঠে না৷
নিধি শাওনের সাথে প্রথম দিয়া বাড়ি আসছে৷ মন ভরে প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে ব্যস্ত৷ ঢাকার মধ্যে প্রকৃতির সৌন্দর্যের কথা বলা বিলাসিতা। যা ছিল কালে কালে তা হারিয়ে গেছে৷ গড়ে উঠেছে মানুষের তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে৷ যা মানুষের চোখের সৌন্দর্য দিলেও মনের তৃপ্তি দিতে ব্যর্থ৷ মনের তৃপ্তি একমাত্র দিতে প্রকৃতির মাধুর্য। যা ছুঁয়ে দেয় প্রতিটি স্নায়ু বিন্দুর প্রতিটি শিরা৷
নিধি দু’হাতে মিলে শীতল হাওয়া নিচ্ছে৷ পিছন থেকে শাওন নিধির কানে ফিসফিস করে নেশা ভরা কন্ঠে বলল,
“তোমার এলোমেলো খোলা কেশ আমার মনটা এলোমেলো করে দেয়৷ পিচ্চি তোমায় দেখলে মনে হয় তুমি রুপকথার রাজকন্যা।”
শাওনের হঠাৎ এমন কথায় নিধি ভয় পেয়ে যায়৷ একটু দূরে সরে যেতে নিলেই শাওন নিধিকে পিছন থেকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে। নিধির সমস্ত দেহ শীতল হাওয়ার সাথে কম্পন দিয়ে উঠে৷ খিঁচে আঁখি বন্ধ করে ফেলে৷ নিধির চুলে মুখ লুকিয়ে বলল,
“তুমি আমার কি মায়ার বাঁধনে বেঁধেছো৷ তোমায় ছাড়া শাওন চৌধুরী কিছুই বুঝে না৷ আমি এমন ছিলাম না৷ আমার হিংস্র মনকে শান্ত করে কেন করে তুলেছো দুষ্টু৷”
নিধি আমতা আমতা করে বলল,
“কি করছেন এসব? আমি কিন্তু আপনাকে ভালোবাসিনা৷ প্লিজ আমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখেন৷ আমার ভালো লাগছে না৷”
“আমি নিজেকে অনেক চেষ্টা করে চারটা বছর দূরে রেখেছি৷ আমি পারছিনা তোমায় ছাড়া থাকতে৷ হয় তুমি আমাকে নিজ হাতে হ/ত্যা করো৷ আমি তোমার বিরহে প্রতিটি ক্ষণে মারা যাচ্ছি৷”
নিধির চোখ জল টলমল করছে৷ সে কি শাওন চৌধুরীকে ভালোবাসে৷ তার বলা হ/ত্যা শব্দটা কেন বারবার মাথায় ধ্বনিত্ব হচ্ছে৷ নিধি শাওনের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল৷ শাওনের দিকে টলমল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দূরে সরে দাঁড়াল। অজান্তেই চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল৷ আঁখি বুঝে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে৷ শাওন নিজ হাতে চোখের মুছে দিয়ে বলল,
“তোমার চোখের জল অনেক মূল্যবান৷ এই চোখ থেকে থেকে এক ফোঁটাও জল না ঝড়ে৷”
নিধি উপলব্ধি করতে পারছে শাওন নামের মানুষটা তার জীবনের অনেকটা অংশ জুড়ে।মানুষটার অতীত খারাপ হলেও মনটা খুব ভালো৷ শাওন নিধির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,
“তোমার একটা পা আমার পায়ের উপর রাখ।”
নিধি চোখ বড় করে শাওনের দিকে তাকায়৷ পা শাওনের হাঁটুর উপর রাখতে বলছে৷ নিধি ভুলেও এমন কাজ করবে না৷ নিধি সেখান থেকে সরে আসতে নিলেই ক্ষোভ নিয়ে রাগী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“কথা কানে যাচ্ছে না৷ যা বলি তা করলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হবে৷ তোমার কাছে আমার কথার কোন গুরুত্ব নেই৷”
নিধি আমতা আমতা করে বলল,
“আপনার দিকে কিভাবে পা বাড়িয়ে দিব? আমার তো পাপ হবে৷ আমি পাবর না.. ”
নিধি কিছু বলতে পারল না৷ তার আগেই শাওন নিধির পা নিজের ঊরুতে (মানবদেহের কুঁচকি থেকে হাঁটু অব্দি) রাখল৷ নিধির চোখ ছানাপড়ার মতো৷ শাওন নিধির পায়ে সযত্নে নুপুর পড়িয়ে দিল৷ শাওনের স্পর্শে কেমন জানি ঘোর লাগা কাজ করছে৷ আঁখি বুঝে রেয়েছে৷ শাওন নিধির কপালে আলতো করতে ঠোঁট স্পর্শ করে বলল,
“ভালোবাসি প্রিয়৷ এভাবে সারাজীবন তোমায় ভালোবেসে যাব। আজ তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে৷”
শাওন গাড়িতে উঠে পড়ে৷ নিধি ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে৷ গাড়ির হর্নের শব্দে ঘোর কাটে৷
___________________
নিধির সামনে বসে আছে পরিবারের সকল সদস্য। যেন নিধি বিশাল বড় অপরাধ করেছে৷ তাকে এখনই শাস্তি দিবে৷ আবার এমনও হতে পারে তারা অপরাধী। নিধির কাছে শাস্তি দাবী করছে৷ শাওন নিধিকে হারাতে চাইনা৷ নিধির মনে শাওনের জন্য চার বছর ভালোবাসা বিরল ছিল৷ এখন একটু একটু প্রকাশ পাচ্ছে৷ যদি সামান্য ভালোবাসা টুকুও বিরল হয়ে যায় তাই বিয়ে করতে চাচ্ছে শাওন৷ শায়লা চৌধুরী নিধির হাত ধরে অপরাধী কন্ঠে বলল,
“মা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিও না৷ তোমাকে প্রথম দিন থেকেই ভালোবাসে৷ তার হয়ে আমি কথা দিচ্ছি এ বিয়ে তোমার ভবিষ্যৎ জীবনে কোন সমস্যা সৃষ্টি করবে না৷”
নিধি বুঝতে পারছে না৷ কি উত্তর দিবে? নিজের মা বেঁচে থাকলেও এতটা করতো না৷ যা নিধি এ পরিবার থেকে পেয়েছে৷ যাদের আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকতে চাওয়া৷ তাদের কষ্টের সাগরে দেখতে পারবে না৷”
মুগ্ধ নিধির মাথায় আলতো করে হাত ভুলিয়ে বলল,
“তোমাকে আমি বোনের নজরে দেখি৷ আমি জানি শাওন অনেক খারাপ ছেলে ছিল৷ নিজেকে বাজে কাজে লিপ্ত রাখতো৷ শাওন সবই তোমার কাছে স্বীকার করছে৷ ধরে নাও তুমি শাওনের জায়গায় অন্য কাউকে বিয়ে করলে৷ তুমি কি জানবে তার অতীত কেমন? সে কি জীবনে কোন পাপ কাজ করেনি৷ সে কি এক নারী আ’স’ক্ত? তবে আমি কথা দিতে পারি, শাওন শুধু তোমার প্রতি আ’স’ক্ত।”
নিধি ফ্যালফ্যাল দৃষ্টি মেলে মুগ্ধর দিকে তাকায়। চোখের ভাষা অনেক কিছু বলে দিচ্ছে৷ মস্তিষ্কের নিউরন বলছে মুগ্ধ ভাইয়া ঠিক বলছেন৷ শাওনের জায়গায় অন্য কেউ হলে সে কি সৎ হবে? সে কি কোনদিন নিষিদ্ধ পল্লীতে যায়নি৷ বর্তমানে সবকিছু কুয়াশার মতো হয়ে যাচ্ছে৷ দূরে কোথাও বিলীন হয়ে যাচ্ছে৷ নিধি সবার মুখের দিকে তাকিয়ে সাইন করে দিল৷ ইসলামের দৃষ্টিতে তিন বার কবুল বলে শাওনকে নিজের জীবনে গ্রহণ করল৷ শায়লা চৌধুরী নিধিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলেন৷ এ যেন সুখের কান্না৷ তিনি এত বছর যেন এটাই চেয়ে আসছেন।
মুগ্ধ মাধবীকে নিধির পাশে বসিয়ে সবার উদ্দেশ্য বলল,
“আজ এই খুশীর দিনে আরও একটা খুশীর খরব দিতে চাচ্ছি৷ সবাই মানসিকভাবে প্রস্তুত তো৷”
শাওন নিধির দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল,
“কি এমন খুশীর খরব? যা শুনে আমরা সবাই হার্ট অ্যাটাক করব৷”
শায়লা চৌধুরী নিধিকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“হার্ট অ্যাটাক করলে ডাক্তার সাথেই আছে৷ ড. নিধি আমাদের সকলের চিকিৎসা করবে৷ এখন সু সংবাদ দাও৷”
মুগ্ধ মাধীর দিকে চোখের পাতা তুলে তাকাল৷ মাধবী লজ্জায় মুগ্ধর দিকে তাকাতে পাচ্ছে না৷ তবুও মুগ্ধর মুখটা দেখার জন্য চোখের পাতা উপরে তুলতেই মুগ্ধ চোখ টিপল দিল। সাথে সাথে মাধবী মাথা নিচু করে ফেলে৷ মুগ্ধ মাধবীর দিকে তাকিয়ে উল্লাসের সাথে বলল,
“আমি বাবা হতে চলছি৷ আমাদের বাড়িতে নতুন সদস্য আসছে৷”
মাধবী দুই হাত দিয়ে মুখ ঠেকে ফেলে৷ ইচ্ছা হচ্ছে মাটির নিচে ঢুকে পড়তে৷ শায়লা চৌধুরী নিজের হাতে যেন জান্নাত পেলেন৷ মুগ্ধ খুশিতে নৃত্য করছে৷ একে একে সবাই মাধবীকে ভালোবাসা জানাল৷ মুগ্ধ মাধবীকে সবার সামনে পাঁজা কোলা করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে নিয়ে গেল৷
_______________
নিধির ঘুম আসছে না৷ বিছানার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে গড়াগড়ি খাচ্ছে৷ তার জীবনে আজ বিশাল পরিবর্তন এসেছে৷ বিয়ে হওয়া সত্ত্বেও দু’জন আলাদা আলাদা ঘরে। শায়লা চৌধুরী কড়া গলায় বলে দিয়েছে সেদিন নিধি শাওনকে মন থেকে মেনে নিবে সেদিন তাদের ঘটা করে বিয়ে দিবে৷ আর মন থেকে মেনে নিলেও নিধি মেডিক্যাল পড়া শেষ হলে বিয়ে হবে৷ ততদিন শাওনকে অপেক্ষা করতে হবে৷ শায়লা চৌধুরীর কথা মনে পড়তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল। হুট করেই বারান্দা থেকে শাওন রুমে আসে৷ নিধি ভুত দেখার মতো শাওনকে দেখে৷ চোখ ঢলতে ঢলতে বিছানার উপর বসে পড়ল। কিছু বুঝার আগেই শাওন নিধিকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়ল৷ রীতিমতো নিধির সমস্ত দেহে কম্পন শুরু হলো৷ কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“আ..প..নি এখানে কিভাবে আসলেন? আমি কিন্তু চিৎকার করে মাকে ডাকব।”
“শাওন দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
” আমি তোমার রুমে আছি৷ মা আসলে বলব তুমি আমাকে নিজে থেকে টেনে এখানে নিয়ে আনছো৷”
নিধি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
“কি! আপনি এখনই রুম থেকে বের হোন৷ কিভাবে আসলেন?”
“আমি জানতাম মা আমাদের এক সাথে থাকতে দিবে না৷ সেজন্য আমি আর মুগ্ধ মিলে এ মহান কাজটা করছি৷ আমি বের হবো কেন? আমি আমার বিয়ে করা বউয়ের সাথে থাকতে আসছি৷ কথা না বলে ঘুমাতে দাও৷ বেশি কথা বললে সবকিছু হয়ে যাবে৷”
“নিধি আর কথা বাড়াল না। শাওন নিধিকে দুই বাহুর মাঝে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে৷ বাদ্য হয়ে নিধি শুয়ে আছে৷ মহারাজ জড়িয়ে ধরে সেই কখন ঘুমিয়ে পড়ছে৷ নেই তন্দ্রা নিধির চোখের পাতায়৷ কেমন জানি অস্বস্তি লাগছে৷ শাওনকে ধাক্কা দিলে জেগে যাবে৷ যদি অন্য কিছু হয়ে যায় তাহলে নিধি শেষ৷ বাধ্য হয়ে ছোট বাচ্চার মতো শাওনের বুকে শুয়ে আছে৷ নিধি পাঠকদের উদ্দেশ্যে বলল,
«অধির আজ দুই দুইটা খুশীর খবর দিল। কিন্তু কেউ অধিরকে গিফট দিল না৷ না জানি পাঠকদের জন্য আমাদের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটে৷ পাঠকটা অধিরকে বেশি বেশি গিফট করো৷ গিফট হিসেবে পাশে থাকলেই হবে৷ অল্পেই তুষ্ট বাচ্চাটা৷»
চলবে……
ইব্রাহীম মেডিক্যাল কলেজের কেউ আছেন৷ ভুল ত্রুটিগুলো মার্জনীয় দৃষ্টিতে দেখবেন৷ বড় করে লেখার চেষ্টা করি৷ কিন্তু সময়ের অভাবে বড় বা রিচেক দেওয়া হয়না৷