মেঘাচ্ছন্ন আকাশে প্রেমের রংধনু পর্ব ৯

0
385

#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸
#পর্ব- ৯
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
অর্ষার সামনে কেউ হুট করে এসে বর্ণকে জড়িয়ে ধরে। বর্ণ থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। অরু মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে পরে। বর্ণ মেয়েটাকে নিজের থেকে সরিয়ে বলে, ‘ রোজিয়ানা তুই এখানে? ‘ রোজিয়ানাকে দেখে আরফানও দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। রোজিয়ানা স্বাভাবিক ভাবেই হেসে বলে, ‘ আমার বেস্ট ফ্রেন্ডের বিয়ে অথচ আমি থাকবো না? ইটস নট ফেয়ার বর্ণ। ‘
অর্ষা ভালো করে লক্ষ্য করে দেখে মেয়েটার পড়নে ছোট খাটো পোষাক। পাতলা একটি সাদা ফ্রক হাটু অব্দিও পৌঁছায় নি তা। মুখশ্রী গড়ন দেখেই বুঝা যাচ্ছে মেয়েটি বিদেশি, কিন্তু বাংলা ভাষা যথেষ্ট ভালো বলতে পারছে। মিরা আরফানের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো। রোজিয়ানাকে ভালো করে লক্ষ্য করে বলে, ‘ আপনাকে ঠিক চিনলাম না। ‘
রোজিয়ানা আরফানের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে, ‘ আমি আরফান এবং বর্ণের ক্লাসমেট, এন্ড ভালো ফ্রেন্ড ও বলা চলে। আরফানের সাথে তো আমার ফ্রেন্ডশিপ একটু বেশিই! তাই তার বিয়ে কোনভাবে মিস করতে চাইনি, তাই চলে এলাম। ‘

মিরা মাথা নাড়িয়ে বললো, ‘ খুব ভালো করেছেন, কিছুক্ষনের মধ্যেই তো রং খেলার অনুষ্টান শুরু হয়ে যাবে। আপনি একদম ঠিক টাইমে চলে এসেছেন। আপনার কোন সমস্যা নেই তো? ‘

‘ আরে আমার সমস্যা থাকবে কেন? ফার্ষ্ট টাইম বিডিতে এসেছি, তাছাড়া আরফান বিজি থাকলে কি হয়েছে? বর্ণ তো আছেই আমার খেয়াল রাখার জন্যে! কি বলিস বর্ণ? ‘

বর্ণও পকেটে হাত গুজে, রোজিয়ানার প্রশ্নের জবাবে তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে, আরফান এবং মিরার দিকে তাঁকিয়ে বলে, ‘ ইয়াপ ডোন্ট ওয়ারি। আমি আছি তো রোজিয়ানার খেয়াল রাখার জন্যে। অনুষ্টান শুরু করা যাক কেমন? ‘

মিরা মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক জবাব দেয়।

__________________
অরুর কাজিনেরা রং হাতে নিয়ে মিরা এবং আরফানের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। অরু মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। হতাশ পানে শুধু বর্ণ এবং রোজিয়ানার দিকে আড়চোখে তাঁকাচ্ছে। বিড়বিড়িয়ে বলছে, ‘ একে তো অর্ষা আপু ছিলো, এখন এই বিদেশেনি জুটেছে। দূর ছাই। জীবনে একজনের উপর ক্রাশ খেলাম, তাও তাকে নিয়ে মানুষের টানাটানির শেষ নেই। ‘

বর্ণ খেয়াল করছে অর্ষা কেমন অদ্ভুদ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে। সেই দৃষ্টিতে রয়েছে একরাশ বিরক্তি। অর্ষা পকেটে হাত গুজে বর্ণকে দেখে ভেংচি কেটে দূরে সরে যায়। বর্ণ মুচকি হেসে দেয়। অপরদিকে আরফান ঘেমে একাকার। রোজিয়ানার তো এতোক্ষনে তোলপাড় শুরু করে দেওয়ার কথা, কিন্তু সে কেমন শান্ত ভাবে সকলের সাথে কথা বলছে। একটু আগেও রোজিয়ানার সাথে ঝগড়া হয়েছে, তখনো সে জানতো না রোজিয়ানা বাংলাদেশে এসেছে। এমনকি একটু আগে ঝগড়া করে এখন সে আরফানের বিয়েতে যোগ দিতে চাইছে, আসলে চাইছে টা কী রোজিয়ানা? রং খেলার উৎসব শুরু হয়ে গিয়েছে। আরফান শুধু মিরার সাথেই একপ্রকার লেগে রয়েছে। যদিও মিরার ব্যাপারটা বেশ ভালো লাগছে। অন্যদিনের তুলনায় আজ আরফান তার একটু বেশিই খেয়াল রাখছে। আরফান শুধু বার বার আড়চোখে রোজিয়ানাকে দেখে যাচ্ছে। রোজিয়ানা বর্ণের সাথে কথা বলে যাচ্ছে, আরফানের দিকে একপলকের জন্যেও তাকাচ্ছে না৷ রং খেলে সকলে একপ্রকার ভুতে পরিনিত হয়েছে। অর্ষা সবকিছু থেকে দূরে বাগানের সাইডে বসে ফোন গুতিয়ে যাচ্ছে। পাশে কারো অস্তিত্ব টের পেয়ে, পাশ ফিরে তাঁকায় সে। বর্ণকে দেখে মুখশ্রী ঘুড়িয়ে বলে, ‘ আপনি আবারো এসেছেন? আপনার ফরেনার ফ্রেন্ড এসেছে, তার খেয়াল রাখুন। ‘

‘ আপাতত রোজিয়ানার খেয়াল না হয় আরফান রাখবে। সেসব কথা বাদ দিন। সবাই রং খেলছে। আপনি খেলবেন না মিস ঝাঁঝওয়ালী? ‘

‘ যে জীবন অন্ধকারের কালো রংয়ে ডুবে রয়েছে, সেই জীবনে অন্য কোন রংয়ের প্রবেশ নিষেধ। ‘

অর্ষা কথাটি বলেই উঠে চলে গেলো। বর্ণ স্হীর হয়ে বসে পরলো। আরফান পিছনের দিকে এসে কাউকে ফোন করছিলো, হুট করে আরফানের হাত থেকে কেউ ফোন খানা কেড়ে নেয়। আরফান পিছনে ঘুড়ে দেখে অর্ষা। অর্ষা ফোনের দিকে তাকিয়ে বলে,

‘ কাকে ফোন করছিলে হঠাৎ? ‘

‘ যার কথা তুমি ভাবছো। সে অন্তত নয়। ‘

ভয়ে ভয়ে উত্তর দেয় আরফান। আরফান উত্তর দিয়ে, অর্ষাকে এড়িয়ে চলে যেতে নিলে, অর্ষা হাত দিয়ে, আরফানের হাত পিছন দিয়ে মোচরে দিয়ে বলে, ‘ আমাকে ভয় পাচ্ছো তুমি আরফান? আমাকে? যাকে একসময় নিজের পায়ের তলায় পি/ষে মা/রতে চেয়েছিলে। যার সবটুকু তোমরা সবাই কে/ড়ে নিয়েছিলে। ‘

আরফান অর্ষার থেকে নিজেকে ছাড়ানোর প্রচেষ্টা করতে করতে বিড়বিড়িয়ে বলে উঠে, ‘ তোহ! তুমি এখন কি চাইছো? ‘

‘রি/ভেন্জ! তোমাদের সকলের ধ্বং/শ। ‘

আরফান হু হা করে হেসে উঠে পরক্ষনে। অর্ষার উত্তরে। অর্ষা আরফানকে ছেড়ে, শক্তমুখশ্রীতে দেয়াল ঠেসে দাঁড়িয়ে থাকে।

‘ তুমি নিবে রিভেঞ্জ? কি ভেবেছে দুইদিনের নেতাগিরি করে এই আরফানকে ধ্বং/শ করবে তুমি? আমি ভুল ছিলাম অর্ষা, তুমি আগেও বোকা ছিলে, এখনো বোকাই রয়ে গেছো। ইউ ব্লা/ডি ফুল লেডি। ‘

সঙ্গে সঙ্গে আরফানকে লা/ত্থি মেরে মাটিতে শুইয়ে দেয় অর্ষা। আরফানের বুকে নিজের হিল জু/তো দিয়ে পা/রা রেখে বলে, ‘ বদলিয়েছি কিনা, তা তো সময়ই বলে দিবে। আজই দেখে নাও। একদিন তোমার পায়ের নীচে আর্তনাদ করেছিলাম, আজ তুমি আমার পায়ের নীচে। মনে পরে আরফান? আমি নিজের জীবনের এবং আমার স… ‘

কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে যায় অর্ষা। নেত্রপল্লবে ধরা দেয় নিজের না হওয়া কিছু প্রিয়জনকে হারানোর আর্তনাদ। অর্ষা স্পষ্ট শুনতে পারছে কারো পায়ের আওয়াজ। কেউ এদিকে আসছে। অর্ষা পিছিয়ে যেতেই দেখতে পায় মিরা এসেছে। মিরাকে দেখেই দ্রুত উঠেই, নিজের পাঞ্জাবি ঝেঁড়ে পরিপাটি ভাবে দাঁড়িয়ে পরে আরফান। মিরা পুনরায় অর্ষা
এবং আরফানকে জনশূন্য জায়গায় দেখে বিরক্তির সহিত প্রশ্ন করে, ‘ আবার তোরা এখানে? একসাথে কি করছিস অর্ষা? ‘

অর্ষা এবং আরফান পুনরায় অস্বস্হিতে পরে যায়। অর্ষা একপ্রকার তাড়া নিয়েই বলে, ‘ আসলে রং খেলার উৎসব চলছে, তার মধ্যে আরফান ভাইয়াকে কোথায় খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলো না। তাই খুঁজতে এসে দেখি, ভাইয়া এদিকটায় পা পিছলে পরে গেছে। আচ্ছা তুই যখন চলে এসেছিস। আমি এখন যাই। তোরা গিয়ে ইঞ্জয় কর। ‘

___________

একপ্রকার পালিয়েই মিরা এবং আরফানের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে আনলো সে। এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো মিরার থেকে ধরা পরতে পরতে বেঁচে গিয়েছে সে। অর্ষা মস্তিষ্ক শুধু একটি কথাই ঘুড়ছে, তাকে কোনভাবে বিয়েটা আটকাতে হবে, নাহলে তার মরুর জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাবে। অতঃপর আরফানসহ, বাকি সকলের থেকে সে হিসাব নিবে অতীতের। অর্ষার ভাবনার মাঝেই, কেউ অর্ষাকে টেনে স্টোর রুমে নিয়ে আসে। অর্ষা কোনপ্রকার বাক্য ব্যায় করার পূর্বেই, কেউ অর্ষার মুখ চেপে ধরে।
__________

অপরদিকে রোজিয়ানা চারপাশে ঘুড়ছিলো, তাকে দেখে অরু প্রশ্ন করে, ‘ কাউকে খুঁজছেন আপনি? ‘

‘ হ্যা! আসলে বর্ণকে খুঁজছিলাম, বর্ণ কোথায়? ওকে ছাড়া আমার তো এখানে কেউ পরিচিত নেই। তাই আর কি ওকে খুঁজছি। তুমি বলবে বর্ণ কোথায়? ‘

‘ শাকচুন্নি কোথাকার শুধু বর্ণ আর বর্ণ অসহ্য। ‘

বিড়বিড়িয়ে বলে অরু। ‘ কিছু বললে তুমি আমাকে?’

রোজিয়ানার প্রশ্নে দ্রুত মাড়িয়ে অরু বলে,
‘ না না কিছু বলেনি। আপনি আসুন আমার সাথে। আমার সব কাজিনদের সাথে আলাপ করিয়ে দেই। এত্তো বর্ণ বর্ণ করতে হবে না। ‘

রোজিয়ানা ‘না ‘ বলার পূর্বেই অরু রাগে তার হাত ধরে তার কাজিনদের কাছে নিয়ে যায়।

___________________
অন্যদিকে কেউ হাত বাড়িয়ে অর্ষার চুলের খোপা খুলে দেয়। বেড়িয়ে আসে অর্ষার ঘন কালো লম্বা চুল। অর্ষা তার আখিজোড়া নিষ্চুপে বন্ধ করে নেয়। সে কারো ঘন ঘন নিঃশ্বাস উপলব্ধি করতে পারে। স্পষ্ট বুঝতে পারে তার সামনে আর কেউ নয় বরং বর্ণ। বর্ণ অর্ষা ললাটে জুড়ে লেপ্টে থাকা চুল কানের লতিতে সাবধানতার সাথে লাগিয়ে দিয়ে, গভীর কন্ঠে বলে,

‘ আপনার অন্ধকার কালো জীবনে এক পশলা রংধনু হয়ে, রাঙ্গিয়ে দিতে চাই আপনার জীবনের কালো অধ্যায়কে। গোধূলীর বেলা হয়ে আলোয় পরিপূর্ণ করে তুলতে চাই আপনার জীবনের সবটুকু অংশ। ‘

চলবে কি?
[

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here