মেঘাচ্ছন্ন আকাশে প্রেমের রংধনু পর্ব ৬

0
390

#মেঘাচ্ছন্ন_আকাশে_প্রেমের_রংধনু 🌸
#পর্ব- ৬
#Jannatul_ferdosi_rimi (লেখিকা)
মিরার নেত্রকোণে শুধু আরফান এবং অর্ষার ঘনিষ্টমুহুর্ত ভেঁসে উঠছে। নিজের হবু বরকে যথেষ্ট ভালোবেসে সে, অপরদিকে অর্ষা তার কাছে জীবনের থেকেও প্রিয় । সে জানে সে যা ভাবছে এমন কিছুই নয়, কিন্তু তবুও মনে একটা খটকা রয়ে যায়। সে শুধু ভাবে কোন একটা যোগসুত্র তো বিরাজমান রয়েছে অর্ষা এবং আরফানের মাঝে কিন্ত তা কী? হলুদের আসরেও সে লক্ষ্য করেছিলো, আরফান এবং অর্ষা অনেক্ষন যাবত নিজেদের মধ্যে কথা বলে যাচ্ছিলো, অথচ এর আগে অর্ষা কখনো আরফানের ছবিটুকু দেখার কোন কৌতহূল প্রকাশ করেনি। ফোন কথাটুকু অব্দি কখনো বলেনি, তাহলে? একদিনের পরিচয়েই এত্তো কথা? কিছুই ভাবতে পারছে না মিরা। মাথা হেলিয়ে দিলো সে। ফোন বালিসের তলা থেকে বের করে, আরফানের নাম্বারে ডায়াল করলো। ব্যাস্ত শুনাচ্ছে অপাশ থেকে।কিসের এতো ব্যস্ততার মানুষটার? মিরা আর ফোন করলো না। রেখে দিলো। রাত প্রায় সারে বারো’টা। অন্ধকার নিস্তব্ধ রাত। নিজের দিকে গাড়ি এগিয়ে আসতে দেখে অর্ষা দ্রুত বাইকের হেন্ডেল ধরে, দ্রুততার সাথে সাইডে চলে গেলো। গাড়িটাও সময়মতো ব্রেক কষে থেমে গেলো। অর্ষা বুকে হাত রেখে সুদীর্ঘশ্বাস ফেললো। সময়মতো ব্রেক না কষলে, নিশ্চিত আজ অঘটন ঘটে যেতো। অর্ষা নিজের বাইককে সাইড করে রেখে, শার্টের হাতা ফ্লোড করতে করতে, মুখে একরাশ রাগ নিয়ে গাড়ির কাছে গিয়ে, চেচিয়ে বলতে লাগলো, ‘ ইউ নোনসেন্স ম্যান! গাড়ি চালাতে পারেন না যখন, তখন গাড়ি নিয়ে বের হোন কেন? ‘

তৎক্ষনাৎ কেউ সঙ্গে সঙ্গে গাড়ির ভিতর থেকে পাল্টা জবাব দিয়ে বলে, ‘ বাইক চালাতে পারেন না যখন, তখন বাইক নিয়ে বের হন কেন? ব্লাডি গার্ল!’

অর্ষার রাগ তো সঙ্গে সঙ্গে একেবারে শীর্ষে পৌঁছে গেলো। হাত থরথর করে কাঁপতে লাগলো রাগে। বিড়বিড়িয়ে বললো, ‘ নিজে দোষ করে, ক্ষমা না চেয়ে উল্টো আমারই নকল করছেন? আপনাকে এখুনি মজা দেখাচ্ছি আমি। ‘

অর্ষা কথাটি বলেই, নিজের বাইকের কাছে গিয়ে নিজের হ/কিস্টিক নিয়ে গাড়ির সামনে এসে, গাড়ির কাচে আ/ঘাত করতে নিলে, কেউ তার হাত ধরে ফেলে। অর্ষা তাকিয়ে দেখে বর্ণ খুবই স্বাভাবিক হয়ে, তার হাত ধরে তাকিয়ে আছে। বর্ণকে দেখে নিজের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে অর্ষা বলে,

‘ আবারো আপনি? আমার কাজে বাঁধা দিতে এসেছেন?’

‘ তো? আপনি আমার ফেভারিট গাড়ির গ্লাস ভে/ঙ্গে ফেলবেন , আর আমি? বর্ণ আহমেদ তা চেয়ে চেয়ে দেখবো? ‘

‘ আপনার গাড়িকে আমার বাইকের সামনেই পরতে হলো? ‘

‘ আপনার বাইককে আমার গাড়ির সামনেই পরতে হলো? আর দোষ আমার না, আপনার। নিজে এত্তো রাতে হাউওয়েতে, যথেষ্ট স্প্রিডে বাইক চালাচ্ছিলেন। নিজের দোষ স্বাকীর করুন, মিস ঝাঁঝওয়ালী। ‘

বর্ণের কথার বিপরীতে, অর্ষা নিজের হাত ছাড়িয়ে, তেজি গলায় বলে, ‘ দোষ আমার নয়, আপনার। আর হ্যা যখন তখন আমাকে টাচ করবেন না। নাহলে আপনাকেও….’

‘ কি করবেন মিস ঝাঁঝওয়ালী? ‘

বর্ণ খানিক্টা এগিয়ে অর্ষার দিকে ঝুঁকে প্রশ্ন করলো। সঙ্গে সঙ্গে হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো অর্ষার। বুকটা ধক করে উঠলো। শ্বাস- প্রশ্বাস তড়িৎ গতিতে উঠতে থাকলো। এই মানুষটা এমন কেন? অর্ষার খুব কাছের মনে হয় মানুষটাকে। অচেনা হয়েও, চেনা। খুব আপন। বর্ণ ভ্রু নাড়িয়ে প্রশ্ন করলো, ‘ নিশ্চুপ থাকলে, আপনার মুখে অদ্ভুদ মায়া এসে হানা দেয়। এতো মায়াবী কেন আপনি? ‘

অর্ষা বর্ণের প্রশ্নে দ্রুত পায়ে সরে গিয়ে নিজের বাইকে গিয়ে উঠে বসে। বর্ণ তা দেখে আলতো হেসে বলে, ‘ আমি আমার প্রশ্নের উত্তর এখনো পায় নি মিস ঝাঁঝওয়ালী। ‘

‘ আপনার মতো অদ্ভুদ লোকের, অদ্ভুদ প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার কোন প্রয়োজন বোধ করছি না। ‘

অর্ষা কথাটি বলতে বলতে নিজের বাইক স্টার্ট দিতে থাকে।

‘ জীবন একটা ধাঁধার মতো। জীবন নামক যুদ্ধে হাজারো প্রশ্নের মোকাবেলা করে এগোত হয়। নাহলে কখনোই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া যায় না। ‘

বর্ণের কথার বিপরীতে কিছু বলতে পারলো না অর্ষা। নিজের বাইক স্টার্ট দিতে লাগলো সে। কিন্তু হুট করেই তার বাইকটা স্টার্ট হচ্ছে না। সে বেশ বিপত্তিতে পরে গেলো। এদিকে তার দলের ছেলেরা তাকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে, যথেষ্ট দেরী হয়ে যাচ্ছে তার। বর্ণ হয়তো বুঝতে পারলো। তাই নিজ থেকেই এগিয়ে গিয়ে বললো, ‘ আপনি চাইলে আমার গাড়িতে উঠতেই পারেন মিস ঝাঁঝওয়ালী। আই ডোন্ট মাইন্ড। ‘

অর্ষা বর্ণের দিকে কড়া নজরে তাকিয়ে বললো, ‘ বাট আই মাইন্ড। আপনার হেল্পের কোন দরকার নেই। আমি হেটেই যেতে পারবো। ‘

অর্ষা নিজের বাইকটাকে তালা মেরে, দ্রুত পায়ে হেটে যেতে থাকে। অনেক রাত হয়েছে। এখনো বেশ পথ বাকি। হেটে গেলে অনেক বেশি দেরী হয়ে যাবে। বর্ণ গাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে, গাড়ি অর্ষার পিছনে নিয়ে আসে। অতঃপর ধীর গতিতে গাড়ি চালাতে চালাতে বলে, ‘ লাস্ট চান্স! আপনার ভালোর জন্যেই বলছি উঠে বসুন। ‘

অর্ষা কি আদোও শুনলো? না! সে নিজের রাগ জেদ নিয়েই হাটতে লাগলো। বর্ণের কাছে বেশ বিরক্তকর লাগলো বিষয়টা। সে গাড়ি থেকে বের হয়ে, একপ্রকার টেনেই অর্ষাকে নিজের গাড়িতে, নিজের পাশের সিটে বসিয়ে দিলো। অর্ষাও বাধা দিলো না। তাকে আপাতত দ্রুত ঘটনাস্হলে পৌঁছতে হবে।

_______________

আরফান নিজেকে আয়নায় দেখে নেয়। গলায় তার অর্ষার হাতের দাগের ছাপ পরে গেছে৷ গলার কিছু জায়গায় প্রায় ছি/লে গিয়েছে, অর্ষার ন/খের আ/চরে। আরফানের বিশ্বাস হচ্ছে না, গত পাঁচ বছরে অর্ষার এতোটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। আরফান সোফায় বসে মাথায় হাত রেখে, আখিজোড়া বন্ধ করে। সঙ্গে সঙ্গে ভেসে উঠে অর্ষার অসহায় মুখস্রী। অতীতের কিছু বিষাদময় স্মৃতি। অর্ষা আরফানের পা ধরে কাঁদতে কাঁদতে বার বার বলছে, ‘ দয়া করে বাঁচাও আরফান। ‘

আরফান শুনলো না বরং পা দিয়ে সরিয়ে দিয়েছিলো অর্ষাকে। অর্ষা মাটিতে পরে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আরফানসহ বাকিরা হেসে উঠে। সেদিন অর্ষার অসহায়ত্বে আনন্দ পেয়েছিলো আরফান, কিন্তু আজ সেসব কথা ভাবলে কেমন করে উঠে আরফানের। আরফানের পুনরায় ফোন আসে। আরফান ফোন রিসিভ করে চিন্তার সহিত। অতঃপর কিছুক্ষন কথা বলে রেখে দেয়। কাল বাদে পরশু বিয়ে, তার মধ্যে এত্তোসব ঝামেলা!

__________________

অপরদিকে অর্ষা এবং বর্ণ এসে পৌঁছে আসে ঘটনাস্হলে। এখনো মা/রামা/রি চলছে। অর্ষা দেখতে পায় তাদের দলের বেশিরভাগ লোকেরাই আ/হত হয়ে পরেছে। অর্ষা সঙ্গে সঙ্গে বেড়িয়ে তাদের কাছে যায়। হাতে তার হকি স্টি/ক। বর্ণ নিজেও গাড়ি থেকে বেড়িয়ে পরে। প্রথমে অর্ষা ঝামেলা বুঝে, নিজেদের লোকদের বুঝানোর চেষ্টা করে, বিপরীত দলের লোকদের সাথে এখন ঝামেলায় যাওয়া মানে, সামনের নির্বাচনে এক বড় বিপদ! আপাতত নিজেদের ইমেজ ধরে রাখতে হবে অর্ষাদের৷ তাই সে তার দলের লোকদের বুঝিয়ে কোনরকম শান্ত করলেও, বিপরীত দল নাছড়বান্দা। তারা কিছুতেই থামছে না। এই সুযোগে অর্ষা রিপোর্টরদার ফোন করে জানায়, তারা যেন ঘটনস্হলে আসে, রিপোর্টটারদের দেখে, বিপরীত দলের লোকেরা থেমে যাবে। বর্ণ দূর থেকেই বুঝতে পারছে বেশ ঝামেলা হয়েছে। বর্ণ কি ভেবে যেনো সামনের দিকে এগিয়ে গেলো, কিন্তু তার ফোন হুট করে বেজে যায়। সে তা রিসিভ করে, ফোনের অপাশ থেকে বর্ণের মা বলে উঠে , ‘ বর্ণ কোথায় তুই? তোর বন্ধুর অনুষ্টান কি এখনো শেষ হয়নি? ‘

বর্ণ চারদিকে হট্টগলে কিছুই শুনতে পারছে না। অপরদিকে ফোনের অপাশ থেকে মানুষের চিৎকার চেচামেচি শুনে বর্ণের মায়ের বুকটা ধক করে উঠলো। বর্ণের মা ভয়ের সহিত তার ছেলেকে প্রশ্ন করেন, ‘ বর্ণ, তুই কোথায়? কিসের চেচামেচি হচ্ছে? ‘

বর্ণ কিছু শুনতে না পেরে বললো, ‘ মা, আমি কিছু শুনতে পারছি না। ‘

বর্ণের মা কিছু বলার পূর্বেই, বর্ণ হুট করে ফোনটা কেটে সামনের দিকে দৌড়ে যায়। বিপরীত দলের একজন মা/রামা/রির এক পর্যায়ে অর্ষাকে আ/ঘাত করতে নিলে, বর্ণ…….

চলবে কি?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here