মুখোশের আড়ালে পর্ব ৯

0
658

#মুখোশের_আড়ালে
#পর্ব_৯
#Saji_Afroz
.
.
.
আরো প্রায় ত্রিশ মিনিটের মতো কেটে গেলো । পৌষী ও মুহিতের কোনো খবর পাওয়া গেলোনা ।
ফাহাদ বাড়ির বাইরে এসে আশেপাশে খুঁজে দেখছে ৷
আর নিজের রুমে পায়চারী করছেন মিয়াজ শেখ । দুজনের জন্যই চিন্তা হচ্ছে তার । স্ত্রী আমেনাকে এই বিষয়ে কিছু জানাননি । নতুবা তিনিও দুশ্চিন্তা করতে শুরু করবেন ।
এরইমাঝে ফোনের রিং টোনের শব্দে ঘোর কাটলো মিয়াজ শেখের । অপরিচিত নাম্বার দেখে রিসিভ করে বললেন-
আসসালামুআলাইকুম । কে বলছেন?
.
ওপাশ থেকে বললো-
বাবা আমি মুহিত বলছি ।
-মুহিত! পৌষী এখনো বাসায় ফিরেনি কেনো? আর তুই এতোক্ষণ বাইরে কি করছিস? বাসায় ফোনটাও রেখে গেলি ।
-বাবা আসলে ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে।
-এক্সিডেন্ট! ঠিক আছিস তুই?
-আমি ঠিক আছি । তবে পৌষী হাতে ব্যথা পেয়েছে ৷ পৌষীকে নিয়ে হাসপাতালে আসলাম । দৌড়াদৌড়িতে ছিলাম যার কারণে ফোন করা হয়নি ।
-কোন হাসপাতালে আছিস তোরা? আমি আসবো ।
.
মুহিতের সাথে কথা শেষ করে মিয়াজ শেখ ফোন করলেন ফাহাদকে ।
মিয়াজ শেখের ফোন পেতেই রিসিভ করে ফাহাদ বললো-
পৌষীর কোনো খবর পেয়েছেন?
-হ্যাঁ । আসলে….
.
অজান্তেই ফাহাদের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো-
পৌষী ঠিক আছে? কোনো বিপদ হয়নি তো?
-মুহিত বললো ছোট একটা এক্সিডেন্ট হয় । হাতে ব্যথা পেয়েছে সে ।
.
বিচলিত কণ্ঠে ফাহাদ বললো-
হাসপাতালের নাম বলুন ।
.
.
.
চোখ জোড়া মিটমিট করে খুললো পৌষী । চোখ খুলেই নিজেকে আবিষ্কার করলো হাসপাতালের বেডে । বেডের পাশেই চেয়ারে বসে আছে ফাহাদ । ফাহাদের দৃষ্টি ছিলো মেঝেতে । মনেহচ্ছে গভীর ভাবনায় সে মগ্ন ।
পৌষী ধীরগলায় বললো-
আমি এখানে কেনো?
.
পৌষীর কণ্ঠ শুনে ফাহাদের মুখে হাসি ফুটলো । তার দিকে তাকিয়ে বললো-
ছোট্ট একটা এক্সিডেন্ট হয়েছে তোমার ।
.
নিজের হাতে ব্যান্ডেজ দেখে পৌষী বললো-
আমার হাতে এসব কেনো?
-হাতে সামান্য ব্যাথা পেয়েছো তুমি । তেমন কিছুনা । ঠিক হয়ে যাবে ।
-কিন্তু কিভাবে পেলাম! আমার তো মনে পড়ছেনা কিছুই ।
.
মুচকি হেসে ফাহাদ বললো-
মনে না থাকলে বাদ দাও ।
ডাক্তার কি বলেছে জানো? তোমার শরীর অনেক দূর্বল । তাই কিছুদিন হাসপাতালেই থাকলেই ভালো হয় ।
-শরীর দূর্বল কেনো?
-সেটা তোমারই ভালো জানার কথা!
.
কিছুক্ষণ চুপ থেকে পৌষী বললো-
আমার কেমন যেনো সব এলোমেলো লাগছে । মনেহচ্ছে অনেকদিন ঘুমিয়ে ছিলাম ।
-রেস্ট করো । ভালো লাগবে । ঘুমানোর চেষ্টা করো ।
.
পৌষীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকলো ফাহাদ ।
এই প্রথম ফাহাদের এমন স্পর্শ পেয়েছে পৌষী । অসুস্থের মাঝেও ফাহাদের স্পর্শে তার মনে দোলা দিয়ে যাচ্ছে । বিবাহিত জীবনের এই মুহুর্তটিকেই সেরা মনেহচ্ছে তার কাছে ।
ফোন বেজে উঠলো ফাহাদের ।
মিয়াজ শেখের ফোন পেয়ে একটু দূরে এসে রিসিভ করলো সে-
জ্বী আঙ্কেল বলুন?
-আমি যখন গেলাম পৌষী তো ঘুম ছিলো । দেখাই হলোনা । কি অবস্থা এখন?
-উঠেছে । শরীরে দূর্বলতা আছে ।
-ওহ, সুস্থ হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ ।
-দোয়া করবেন ।
-তাতো অবশ্যই । শুনো আমি কাল মুহিতের সাথে ঢাকা যাচ্ছি একটা কাজে । ফিরে এসে দেখা করবো তোমাদের সাথে । আর এখন পৌষীকে লেখালেখি নিয়ে কম ভাবতে বলো । সুস্থ হলে আস্তেধীরে কাজ করবে ।
-জ্বী ।
.
মিয়াজ শেখের সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করে পৌষীর পাশে ফিরে এলো ফাহাদ ।
পৌষী ঘুমিয়ে পড়েছে । হয়তো শরীর দূর্বল তাই এতো তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো ।
পৌষীর দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ফাহাদ । আজ পৌষীকে এসব বলা ঠিক হয়নি । যদি না বলতো সে রাগের বসে বাড়ির বাইরে যেতোনা আর এই এক্সিডেন্টটাও হতোনা । পৌষীর এই অবস্থার জন্য নিজেকে দোষী মনে করছে ফাহাদ । রাগ হচ্ছে নিজের উপর তার । আসলেইতো! সে এই চারমাসে কি দিতে পেরেছে পৌষীকে? শুধুমাত্র পড়াশোনা কম করেছে বলে অবেহেলা করেছে । স্ত্রীর সাথে এমন আচরণ একেবারেই ঠিক হয়নি । আচ্ছা রাগের বসে পৌষী কি এসব করেছে? ফাহাদ যেনো নিজের ভুল বুঝতে পারে তার জন্যই এসব করার কারণ নয়তো? ফাহাদকে জেলাস করার জন্যই উষ্ণের সাথে এমন ব্যবহার করেছে নিশ্চয় ।
নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে হাসলো ফাহাদ । এ ছাড়া আর কোনো কারণ ফাহাদ দেখছেনা । যদি তাই হয়ে থাকে পৌষী তার ভালোবাসা কামনা করে ।
তার মানে মেয়েটি তাকে অনেক বেশিই ভালোবাসে ।
কিন্তু এসব কবিতা কি করে লিখছে পৌষী? তার এই গুণ সম্পর্কে কেনো আগে বলেনি?
চমকে দেয়ার জন্য কি?
অনেক প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে ফাহাদের মনে ।
উত্তর কবে পাবে জানা নেই । তবে সে পৌষীকে আর কোনো খারাপ কথা বলতে চায়না । স্বামীর দায়িত্ব পালন করতে চায় । পৌষীকে আশ্বাস দিতে চায়, স্বামী হিসেবে খারাপ নয় সে । ভালোবাসায় আগলে রাখতে চায় সে পৌষীকে ।
পৌষীর চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে । ফাহাদ উঠে দাঁড়ালো । সামান্য ঝুকে ঘুম নষ্ট না হয় মতো, খুব সাবধানে ঠিক করে দিলো চুলগুলি । নিজের ঠোঁট জোড়া আলতো করে ছুইয়ে দিলো পৌষীর কপালে ।
চেয়ারটা আরো কাছে টেনে এনে বসলো ফাহাদ । পৌষীর ব্যান্ডেজ করা হাতটি ধরলো সে । ব্যান্ডেজের উপরেই চুমু খেলো । পরক্ষণেই হেসে নিজের মনে বললো-
আজ তোর ঠোঁট জোড়া বড় অবাধ্য হয়ে যাচ্ছে রে ফাহাদ! পৌষী অসুস্থ, এটা ভুলে গেলে চলবেনা । কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ!
.
.
.
কারো গলার স্বরে ঘুম ভাঙলো ফাহাদ ও পৌষীর ।
দরজার পাশে তাকিয়ে দেখলো উষ্ণ মাহমুদ ।
ফাহাদ তাড়াহুড়ো করে দাঁড়িয়ে বললো-
আপনি এতো সকালে!
-মুহিতের কাছে খবরটা শুনে আসলাম । আসলে আমরা একইসাথে একটা কাজে ঢাকায় যাচ্ছিলাম । ভাবলাম যাবার আগে পৌষীকে দেখে যাই । তাই খুব ভোরেই আসতে হলো ।
-সমস্যা নেই, ভেতরে আসুন ।
.
পৌষীকে দেখে মনেহচ্ছে তার ঘুম এখনো কাটেনি ।
উষ্ণ তার পাশে এসে বসে বললো-
কেমন বোধ করছো এখন?
-জ্বী ভালো । আপনি ভালো আছেন?
.
পৌষীর মুখে আপনি ডাক শুনে খানিকটা চমকালো উষ্ণ । পৌষীতো তুমি বলেই সম্বধন করে তাকে । তবে কি ফাহাদ সামনে থাকায় এমন আচরণ?
.
মৃদু হেসে উষ্ণ বললো-
আমি ভালো আছি ।
.
বেশিক্ষণ বসলোনা উষ্ণ । ঢাকার ফ্লাইটের সময় হবার কারণে বেরিয়ে পড়লো সে ।
সে চলে যেতেই পৌষী ফাহাদের উদ্দেশ্যে বললো-
উনি উষ্ণ মাহামুদ না?
.
পৌষীর প্রশ্ন শুনে হেসেই ফেললো ফাহাদ ।
পৌষী বললো-
হাসছেন কেনো? আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা আমাকে উনি দেখতে এসেছেন । কিন্তু কেনো এসেছেন!
.
ফাহাদ কিছু বলার আগেই আগমণ ঘটলো নার্সের । স্যালাইনটা খুলে বললো-
রোগী এখন খাবার খেতে পারবেন । তবে তরল জাতীয় খাবার ।
.
পৌষীকে জিজ্ঞাসা করলো ফাহাদ-
কি আনবো তোমার জন্য?
-আপনাকে দেখতে কেমন যেনো লাগছে । বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন ।
-সমস্যা নেই । তুমি কি খাবে বলো?
-উম্ম… স্যুপ । তবে আপনার হাতের ।
-কিন্তু আমি এখানে স্যুপ কিভাবে তৈরী করবো?
-বাসায় গিয়ে করে আনুন ।
-ঠিক আছে, তুমি যা হুকুম করো ।
.
তাদের কথোপকথন শুনে নার্স হেসে বললেন-
আপনার মিসেস চান আপনি বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসুন । তাই এই আবদার ।
চিন্তা করবেন না ৷ আপনি নিশ্চিতে যেতে পারেন । আমরা খেয়াল রাখবো উনার ।
.
.
বাসায় এসে প্রথমে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেলো ফাহাদ । ফ্রেশ হয়েই সে পৌষীর জন্য স্যুপ বানাবে । কিন্তু কিভাবে বানাবে? সেতো রান্নাবান্নার কাজে একেবারেই কাঁচা । তবে ইউটিউবের সাহায্যে বানানো যেতে পারে । পৌষীর ভালো লাগবে তো খেতে? কাল রাত থেকে বেচারীর পেটে কোনো খাবারই পড়েনি ।
এসব ভেবে তাড়াহুড়ো করে গোসল সেরে নিলো ফাহাদ ।
ওয়াশরুম থেকে বেরিয়েই ইউটিউবে চিকেন স্যুপ বানানোর রেসিপি দেখে নিলো ।
কিন্তু রান্না ঘরে আসতেই তার চোখ কপালে উঠে গেলো । বড় একটি বাটিতে ধোঁয়া উড়ানো গরম গরম স্যুপ দেখতে পেলো সে । পৌষী বাসায় নেই । এই স্যুপ রান্না করলো কে? সে নিজেও রান্নাঘরের দিকে আসেনি । কিভাবে সম্ভব এটি!
.
চলবে
.
বি:দ্র: ছবিটা এডিট করে দিয়েছেন তিশা আপু।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here