মুখোশের আড়ালে পর্ব ৮

0
663

#মুখোশের_আড়ালে
#পর্ব_৮
#Saji_Afroz
.
.
দরজায় তালা লাগানো বিধায় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে ফাহাদ ।
পৌষী এসে ফাহাদকে দেখে চমকে গেলো ।
আমতাআমতা করে বললো-
আজও আপনি তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছেন?
.
শান্ত স্বরে ফাহাদ বললো-
যদি না আসতাম, তাহলে তোমার ভিন্ন রূপ সম্পর্কে কিভাবে অবগত হতাম?
-মানে?
.
পৌষীর খুব কাছে এসে ফাহাদ বললো-
উষ্ণের সাথে কি সম্পর্ক তোমার?
-কি সম্পর্ক মানে?
-কথা ঘুরিয়ে লাভ নেই । আজ আমি তোমাকে উষ্ণের সাথে দেখেছি ।
-তো?
-তো মানে! আমি যখন বলেছি বাইরে কোথাও যাবো, তখন বলেছিলে তোমার ক্লান্ত লাগছে ।
তবে এখন তোমার ক্লান্তি গেলো কোথায়?
.
দাঁতে দাঁত চেপে পৌষী বললো-
বাহ! আজ আপনার আমাকে নিয়ে এতো অভিযোগ । কই! এই চারমাসে কোনো অভিযোগ আমি করিনি! তবে আপনি কেনো করছেন? আমি যাই করে থাকি, তাতে আপনার কি?
-পৌষী! আমি কোনো মেয়ের প্রশংসা তোমার সামনে করিনি । বা কোনো মেয়ের সাথে ঘুরতে যাইনি । তোমাকে আমার স্ত্রী হিসেবে পছন্দ ছিলোনা তাই দুরত্ব বজায় রেখেছি ।
-তো রাখুন! দুরত্ব বজায়ই রাখুন । আপনি আমাকে অবেহেলা করতে পারেন । এতে কিছুনা! আমি আমার স্বপ্নের পুরুষের সাথে দেখা করতে গেলাম । এতেই আপনার সমস্যা ।
-মুখে লাগাম দিয়ে কথা বলো । তুমি বিবাহিতা একজন নারী । আমি তোমার স্বামী । ওই উষ্ণ নয়!
-স্বামী হয়েছেন বলে কি কিনে নিয়েছেন আমাকে! আমাকে চাকরানী করে রাখার মতলব তাইনা আপনার? আসলে সামনে আমার বই বের হবে এটাও আপনার সহ্য হচ্ছেনা । আমাকে পায়ের নিচে রাখতে পারলেই খুশি আপনি ।
-এসব করে করে যদি তুমি নষ্টামি করতে চাও তাহলে সহ্য হচ্ছেনা আর হবেওনা।
-আমি নষ্টামি করছি?
-হ্যাঁ করছো ।
.
কথাটি শুনে আর কোনো কথা বললোনা পৌষী । ব্যাগ থেকে চাবি বের করে ফাহাদের দিকে ছুড়ে ফেললো সে ।
হনহন করে বেরিয়ে গেলো বাড়ির বাইরে ।
.
.
.
বিকেলে চা খাবার পরেও সন্ধ্যেবেলা চা খাওয়া
মিয়াজ শেখের অভ্যাস । আজও এর ব্যতিক্রম হলোনা । স্ত্রীর হাত থেকে চায়ের কাপটা নিয়ে মাত্রই চুমুক বসালেন তিনি ।
এরইমাঝে উপস্থিত হলো পৌষী ।
পৌষীকে দেখে আমেনা বেগম বলে উঠলেন-
এই সময়ে তুমি?
.
মিয়াজ শেখও পৌষীকে দেখে চমকালেন কিছুটা । কেননা হাসিখুশিতে ভরপুর থাকা পৌষীর মুখটি মলিন লাগছে দেখতে ।
মিয়াজ শেখ বসতে বললেন তাকে । সে এসে বসতেই তার পাশে বসে আমেনা বেগম আবারো একই প্রশ্ন করলেন ।
পৌষী কিছু বলতে গিয়েও পারলোনা । কান্না জুড়ে দিলো সে । হঠাৎ পৌষীকে কাঁদতে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন মিয়াজ শেখ ও আমেনা বেগম ।
আমেনা বেগম তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন-
কি হয়েছে? আমাকে বলো?
.
পৌষী নাকা নাকা কণ্ঠে বললো-
উনি আমায় ভুল বুঝেছে । সন্দেহ করেছে । উনি খুশি নন ৷ আমি বই বের করি উনি চাননা । তাই আমি বলতে এসেছি, আমি আঙ্কেলের সাথে কাজ করতে পারবোনা ।
.
আমেনা বেগম পৌষীকে শান্ত হতে বললেন ।
মিয়াজ শেখ গম্ভীর গলায় বললেন-
তোমাকে আমি অনেক শক্ত মনের মেয়ে মনে করেছিলাম পৌষী । কিন্তু তোমার আচরণে আমি হতাশ হলাম । তোমার প্রতিভা আছে । কেনো তুমি পিছিয়ে যাবে!
-কিন্তু উনি…
-সে তোমার পাশে না থাকলেও আমরা আছি । আমি তোমাকে যতো রকমের সাহায্য দরকার তা করবো ৷ তুমি হুট করে এমন একটি সিদ্ধান্ত নিওনা । আমার আর কিছু বলার নেই ।
.
মিয়াজ শেখ উঠে ভেতরের দিকে চলে গেলেন ।
আমেনা বেগম বললেন-
স্বামী স্ত্রীর মাঝে অনেককিছুই ঘটে থাকে । নিজেদের মাঝে মিটমাট না করে এখানে আসা ঠিক হয়নি তোমার ।
-আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি ।
-আমি চলে যাবার জন্য বলছিনা । আমি এজন্যই বলছি, ফাহাদ হয়তো চিন্তা করছে তোমার জন্য । নিশ্চয় সে জানেনা তুমি কোথায়?
.
.
রাগের বসে তখন পৌষীকে আটকায়নি ফাহাদ । এখন নিজের উপর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার । সে যতোই অন্যায় করুক, এই সময়ে তাকে একা বের হতে দেয়া একেবারেই উচিত হয়নি । ফোনটাও বন্ধ পাচ্ছে পৌষীর । এখন কোথায় খুঁজবে তাকে!
.
.
রাত প্রায় ১০টা হলো । ফাহাদের চিন্তা যেনো বাড়তে থাকলো পৌষীকে নিয়ে ।
হঠাৎ তার মাথায় এলো উষ্ণের কথা । পৌষী নিশ্চয় তার কাছে গিয়েছে । তবে যদি না যায়?
ফোন হাতে নিয়ে ডায়েল করলো ফাহাদ মিয়াজ শেখের ফোন নাম্বারে । তার কাছ থেকেই উষ্ণের ফোন নাম্বার পাওয়া যাবে ।
.
-হ্যালো আসসালামু-আলাইকুম । আমি ফাহাদ বলছি ।
.
মিয়াজ শেখ বললেন-
চিনেছি ।
-আসলে একটি প্রয়োজনে ফোন করেছি ৷ উষ্ণ মাহমুদের ফোন নাম্বার টা কি দেয়া যাবে?
-উষ্ণের ফোন নাম্বার কেনো জানতে পারি?
.
সত্যিটা গোপণ করে ফাহাদ বললো-
পৌষীর আজ তার সাথে দেখা করার কথা । সে এখনো বাসায় ফিরেনি । ফোনটাও বন্ধ পাচ্ছি ।
তাই…
-পৌষী তো এখনেই ছিলো । তবে সে বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে ঘন্টা খানেক হয়ে গেলো । আমার ছেলের সাথেই বের হয়েছে । মুহিত ওকে নামিয়ে দিবে বলেছিলো ।
-আপনাদের বাসা থেকে আমাদের বাসার দুরুত্ব এতোটাও নয় । এতোক্ষণে চলে আসার কথা । আপনি প্লিজ মুহিত ভাইকে একটা ফোন দিয়ে দেখবেন?
-অবশ্যই । আমি তোমায় জানাচ্ছি ।
.
মিয়াজ শেখ ফোন করতেই রিং টুনের শব্দ শুনতে পেলেন । ড্রয়িংরুমেই পেলেন ফোনটি । তার মানে মুহিত ফোন সাথে নেয়নি ।
এতোক্ষণেও পৌঁছালো না কেনো? গেলো কোথায় দুজনে!
.
চলবে
.
বি:দ্র: ব্যস্ত থাকার কারণে পর্বটা ছোট হলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here