#মুখোশের_আড়ালে
#পর্ব_৬
#Saji_Afroz
.
.
পৌষীর দিকে চোখ পড়তেই থেমে গেলো উষ্ণ । লাল শাড়ি পরিহিতা এমন কোনো রূপবতীকে দেখলে, যেকোনো পুরুষেরই থমকে যাবার কথা । উষ্ণের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হলোনা ।
পৌষীও অপলকভাবে তাকিয়ে আছে উষ্ণের দিকে ।
এভাবে ঠিক কতোক্ষণ সময় কেটে গিয়েছে তারা জানেনা! হঠাৎ মিয়াজ শেখ উপস্থিত হয়ে উষ্ণের উদ্দেশ্যে বললেন-
হেই উষ্ণ! তুমি আমার কথায় ঢাকা থেকে চলে আসবে ভাবতে পারিনি আমি ।
.
মিয়াজ শেখের কথা শুনে ঘোর কাটলো উষ্ণ এর । মুচকি হেসে সে বললো-
ঢাকাতে থাকলেও এখানেই আমার বাসা! আর আপনি আমার প্রিয় ব্যক্তিদের মাঝে একজন । সো আপনার জন্মদিনে আসতেই হতো আমাকে । সে আপনি ইনভাইট না করলেও আমি ছুটে আসতাম ।
-এই জন্যই তো আমি মাঝেমধ্যে আমেনাকে বলি, উষ্ণও আমার ছেলে হলে ভালো হতো!
.
পেছন থেকে মিয়াজ শেখের ছেলে মুহিত বলে উঠলো-
আমার ভাই কাকে বানানো হচ্ছে শুনি?
.
মুহিতকে দেখে মিয়াজ শেখ বলে উঠলেন-
নাম ধরতেই হাজির হয়ে গেলো আমার একমাত্র ছেলে!
.
মিয়াজ শেখকে জড়িয়ে ধরে শুভেচ্ছা জানালো মুহিত ।
মিয়াজ শেখ বললেন-
তোর আম্মার কাছে চল । তোকে দেখার জন্য ব্যকুল হয়ে আছে ।
-আচ্ছা ।
.
উষ্ণকে বসতে বলে তারা ভেতরের দিকে এগিয়ে গেলেন ।
উষ্ণ খেয়াল করলো, লাল শাড়ি পরিহিতা মেয়েটি সেই জায়গায় নেই । গেলো কোথায় সে? আর মেয়েটি কে? যাকে দেখে থমকে গিয়েছিলো সে । প্রথম দেখাতেই পরিচিত কেনো মনে হয়েছে মেয়েটিকে? তার কেনো এমন অস্থির লাগছে!
উষ্ণের দুচোখ খুঁজে চলেছে মেয়েটিকে । ঠিক তখনি কোনো মেয়েলী কণ্ঠস্বর তার কানে এলো-
আমাকে খুঁজেছো তাইনা?
.
পেছনে ফিরে পৌষীকে দেখতে পেলো সে । তাকে দেখে উষ্ণের দুচোখ মুগ্ধতায় ছেয়ে গেলো ।
উষ্ণের ঘোর কাটাতে পৌষী হালকা কেশে উঠলো ।
পৌষীর কাশির শব্দ শুনে উষ্ণ বুঝতে পারলো, তার কাশির কারণ । নিজের কর্মের জন্য খানিকটা লজ্জা পেলো সে ।
ঠোঁট জোড়া হালকা প্রসস্থ করে বললো-
কেনো বলছেন কথাটি?
-মনে হলো ।
-বাই দ্যা ওয়ে, আমি উষ্ণ।
-কে না চিনে তোমাকে!
-সবাই চিনবে এমনও কথা নেই ।
-আমি চিনি এবং খুব ভালো করেই চিনি।
-তাই! কতোটা চিনেন?
-যতোটা চিনলে একজন মানুষের সাথে সারাজীবন কাটিয়ে দেয়া যায় ।
.
পৌষীর কথা শুনে চমকে উঠলো উষ্ণ । কি বললো মেয়েটি? এই কথাটির গভীরতা অনেক । এমন একটি কথা তাকে কেনো বললো? তাও প্রথম দেখাতে!
.
পৌষী শব্দ করে হেসে উঠলো । উষ্ণ বললো-
এমন রহস্যময়ী হয়ে আমার কাছে আসাটা কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিলো?
-আমি মোটেও রহস্যময়ী না । আমি পৌষী ।
-পৌষী! ভারী সুন্দর নাম ।
-ধন্যবাদ। যাই হোক, এতোক্ষণ মজা করছিলাম । আমি তোমার বড় ভক্ত । তাই সব কিছুই জানার চেষ্টা করেছি তোমার সম্পর্কে । এমন পাগলী ফ্যান তোমার অনেক আছে । আমার কথা শুনে তুমি যে অবাক হবে ভাবিনি ।
-আসলে আপনি…
-ওহ প্লিজ! আমি তোমাকে তুমি করে বলছি আর তুমি কিনা আপনি!
-আপনি আমার কাছে অপরিচিতা ।
-পরিচয় তো দিলামই । এখনো অপরিচিতা কি করে?
.
পৌষীর কথায় মৃদু হেসে উষ্ণ বললো-
আজকের সময়টা ভালোই যাবে দেখছি । গল্প করার জন্য কাউকে পেলাম । ভালোই হলো ।
.
.
এখানেই বন্ধু রবিনের দেখা পেলো ফাহাদ । তার সাথে আড্ডায় মজে ছিলো সে ।
কথার এক পর্যায়ে রবিন বলে উঠলো-
ভাবী কোথায়?
-আছে হয়তো কোথাও ।
-ফাহাদ! তোকে এতো বুঝালাম সেদিন, তাও তুই ঠিক হলিনা । এভাবে ভাবীকে একা ছেড়ে আমার সাথে আড্ডা দেয়ার কোনো মানে হয়? বেচারী অপরিচিতদের মাঝে একাবোধ করছে নিশ্চয় ।
.
রবিনকে কিছু জানালোনা ফাহাদ । পৌষীর উপর রেগে আছে তাও বুঝতে দিলোনা ।
শান্ত গলায় বললো-
চলো তোর ভাবীর কাছে ।
-আমার ভাবী হলে তোর কিরে?
.
দাঁতে দাঁত চেপে ফাহাদ বললো-
বউ ।
-এভাবে বললি কেনো! মিষ্টি ভাষায় বল ।
-কি ছেলেমানুষী শুরু করলি রবিন!
-বলবি না?
.
মুখে হাসি এনে ফাহাদ বললো-
ওকে ওকে! আমার বউ ।
-এবার ঠিক আছে, চল ।
.
পৌষীকে খুঁজতে খুঁজতে তার দেখা পেলো তারা, কোণার একটি সোফায় । কোনো ছেলের সাথে কথা বলছে । ছেলেটিকে চিনতে অসুবিধে হলোনা তাদের । ছেলেটি আর কেউ নয়, উষ্ণ মাহমুদ । উষ্ণ মাহমুদের সাথে পৌষীকে এভাবে আলাদাভাবে কথা বলতে দেখে ফাহাদের চোখ চড়াক গাছে ।
রবিন বলে উঠলো-
বাহবা! উষ্ণ মাহমুদ ভাবীকে এতো প্রায়োরিটি দিচ্ছে!
.
ফাহাদ পৌষীর পাশে না গিয়ে অন্যদিকে চলে গেলো । তার পেছন পেছন রবিনও এগিয়ে গেলো ।
রবিন বললো-
তুই কি রাগ করলি? আমি তো জাস্ট অবাক হলাম, তাই কথাটি বলেছি ।
-রাগ তোর উপর করিনি ।
-তবে কি ভাবীর উপর? এমন সেলিব্রিটির দেখা পেলেতো কথা বলবেই ।
.
রবিনকে কিছু বলতে গিয়েও বললোনা ফাহাদ । তার মা বলেছিলেন, স্বামী স্ত্রীর মাঝে কোনো সমস্যা হলে নিজেদের মাঝেই কথা বলে সমাধান করা উচিত ।
.
মিয়াজ শেখের ছেলে মুহিত এসে সকলের উদ্দেশ্যে বললো-
সকলে প্লিজ এদিকে আসুন! কেক কাটার পর্ব শুরু করা যাক ।
.
এতোক্ষণ উষ্ণকে কারো চোখে না পড়লেও সকলের মাঝে আসার কারণে চোখে পড়লো সকলের । উষ্ণকে ঘিরে তার সাথেই কথা বলতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো সবাই ।
হালকা হেসে মুহিত বললো-
এখন কেকটা কাটা যাক?
.
কেক কাটার পর্ব শেষ হতেই মুহিত আবারো সকলের উদ্দেশ্যে বললো-
এখানে অনেকেই আমার বাবাকে অনেক কিছুই উপহার দিয়েছেন । কিন্তু এমন কেউ কি আছেন? যিনি কবিতা প্রেমী এই মানুষটাকে একটি কবিতা আবৃতি করে শোনাতে পারবেন, উপহার হিসেবে?
.
সবার নজর উষ্ণের দিকে থাকলেও কথা বলে উঠলো পৌষী ।
সে বললো-
আমি পারবো ।
-তবে শোনান প্লিজ?
.
মিয়াজ শেখের পাশে এসে পৌষী বলতে শুরু করলো————-
একটি বছর পরে এলো
তোমার শুভ জন্মদিন,
হোক তা ফুলের মতো
সুন্দর ও রঙিন ।
সেজে উঠুক ফুলে ফুলে
তোমার জীবনের তরী,
ভালো থেকো সারাজীবন
এ প্রার্থনা করি ।
এই কামনা করেই আমি
জানাই তোমায় শুভেচ্ছা,
তোমার জন্য রইলো আমার অনেক ভালোবাসা ।
.
কবিতা আবৃতি শেষে সকলে হাত তালি দিতে থাকলো । মিয়াজ শেখের উদ্দেশ্যে ফিসফিসিয়ে পৌষী বললো-
কবিতার সৌন্দর্য্যের জন্য তুমি করে বললাম ।
-খুবই ভালো ছিলো ।
.
উষ্ণ এগিয়ে এসে বললো-
কার কবিতা আবৃতি করলে?
-আমার নিজেরি ।
-তুমি কবিতা লেখতে পারো?
.
পৌষী কিছু বলার আগেই মিয়াজ শেখ বললেন-
পারে । ওর সাথে খুব দ্রুত কাজ করতে চলেছি আমি ।
-ওহ!
.
কথাটি শুনে মুহিতও কথা বলতে এলো পৌষীর সাথে ।
এদিকে ফাহাদের উদ্দেশ্যে রবিন বললো-
ওরেব্বাস! ভাবী তো দেখি ফেমাস হয়ে যাবে ।
.
ফাহাদ কিছু বললোনা । রবিন খেয়াল করলো তার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আছে । তার ফ্যাকাসে মুখের দিকে তাকিয়ে হেসে উঠলো রবিন ।
ফাহাদ বললো-
হাসার কি হলো?
-ভাবীরে গুরুত্ব কম দিতি তুই । এবার ভাবীর মূল্য বুঝবি ।
.
পৌষীর কাছে এসে ফাহাদ বললো-
বাড়ি যাওয়া যাক পৌষী?
.
মুহিত বলে উঠলো-
ডিনার না করে কোথাও যাওয়া হচ্ছেনা । কিন্তু আপনাকে চিনলাম না?
-আমি পৌষীর হাসবেন্ড ।
.
কথাটি শুনে চমকে গেলো মুহিত ও উষ্ণ ।
মুহিত বুঝতে পারেনি পৌষী বিবাহিতা ।
এদিকে উষ্ণ বেশ অবাকই হলো । এতোক্ষণ কথা হলো তাদের, কিন্তু পৌষী জানালোনা সে বিবাহিতা!
.
ফাহাদের দিকে তাকিয়ে মিয়াজ শেখ বললেন-
পৌষীকে লেখায় মন দেয়ার সুযোগ দিও । ওর কবিতাগুলো লেখা হয়ে গেলেই চুক্তির কাজ শেষ করে বই এর কাজ ধরা যাবে ।
.
হ্যাঁ সূচক সম্মতি জানিয়ে মাথাটা নাড়ালো ফাহাদ ।
.
.
বাসায় এসেই নিজের রুমের দিকে দ্রুত বেগে এগিয়ে গেলো ফাহাদ । পৌষীর উপরে প্রচন্ড রাগ হচ্ছে তার । উষ্ণ কে নিয়ে বাড়াবাড়ি রকমের আচরণ করা, ফোন চেক করা, একাই মিয়াজ শেখের বাড়ি যাওয়া, বই বের করার সিদ্ধান্ত নেওয়া, আবার আজ উষ্ণের সাথে….
পৌষীর এসব আচরণে কষ্ট পাচ্ছে ফাহাদ । কিন্তু কেনো পাচ্ছে? তার মনে পৌষীর জন্য কোনো অনুভূতিই ছিলোনা । পৌষীকে সে কখনো স্ত্রীর অধিকার দেয়নি । তবে কেনো তাকে গুরুত্ব না দেয়ার কারণে কষ্ট পেলো সে? কেনো আজ উষ্ণের পাশে পৌষীকে দেখে তার এতোটা খারাপ লাগলো?
তবে পৌষী কি তার মনে জায়গা করে নিয়েছে?
.
.
মিয়াজ শেখের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে এসেছে উষ্ণ বেশকিছুক্ষণ হলো । আসার পর থেকে পৌষীই তার ভাবনায় চলে আসছে । এতো আপন কেনো মনে হয়েছে মেয়েটিকে? কেনো পৌষীর চোখের ভাষা পরিচিত মনেহচ্ছে তার কাছে?
মাথাটা ঝাকালো উষ্ণ । একজন বিবাহিতা নারীকে নিয়ে এতোটাও ভাবা উচিত নয়!
.
চলবে
.
বি:দ্র: উল্লেখিত কবিতাটি আফসানা আপুর লেখা। আর ছবিটি এডিট করে দিয়েছেন তিশা আপু।