#মুক্তির_স্বাদ
লেখনীতে ঃ #সুমাইয়া_আফরিন_ঐশী
#পর্বঃ৭
ফ্লোরে বসে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে আলো। মেয়েটার মুখটা জ্বলে যাচ্ছে। হামাগুড়ি দিয়ে মায়ের পায়ের কাছে এসে ছোট ছোট হাত দিয়ে,জড়িয়ে ধরলল মা’কে। নিজের ভাষায় হয়তো অস্পষ্ট স্বরে কিছু বলছে সে। বিরক্ত হলো শিখা,এদের জন্য ম’র’তে গিয়েও শান্তি নেই। রাগের চো’টে মেয়েটার ছোট্ট শরীরে বসিয়ে দিলো কয়েক গা। মা’র খেয়ে কান্নার গতি বাড়লো বাচ্চাটার,যা দেখে অস্থির হয়ে পড়লো মায়ের কোমল মন। সে দুনিয়া ছাড়লে এই বাচ্চাটার কি হবে, কে দেখবে তার মেয়েটাকে? মেয়ের কথা ভাবতেই মোচড় দিয়ে উঠলো মায়ের কলিজা। ততক্ষণাৎ বিষের বোতলটা হাত থেকে ছুঁড়ে ফেলে, মেয়েকে বুকে জড়িয়ে মা’ও কেঁদে বুক ভাসালো।
ব্যাগ ভর্তি বাজার নিয়ে মাএই বাসায় ফিরলো আসহাব। এই সময়টায় বাড়িটা কেমন যেন নিরব হয়ে আছে, কোথাও কাউকে দেখা যাচ্ছে না। নিরবতার মাঝে থেমে থেমে আলোর মিহি কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। আসহাব ব্যাগ গুলো বসার ঘরে রেখে ডাকলো শিখাকে। কিন্তু, সাড়া দিচ্ছে না শিখা। উনি ব্যাস্ত হয়ে নাতনির কান্না অনুসরণ করে শিখাদের রুমে উঁকি দিলো। দরজা এখন খোলাই আছে। দরজার পাশ ঘেঁষে আলো হাত-পা ছড়িয়ে কাঁদছে, মেয়েটার মুখ ফুলে গিয়েছে এখন। তারই পাশে নিরবে বসে আছে শিখা, মেয়েটার চোখ দিয়ে অনবরত ঝড়ে লোনা জল। মা-মেয়ের বিপর্যস্ত অবস্থা দেখে তড়িৎ গতিতে এগিয়ে আসলো উনি। নাতনিকে কোলে তুলে নিয়ে, ব্যস্ত কণ্ঠে শুধালো,
“তোমাদের এই অবস্থা কেনো মা? আলোর কি হয়েছে, তোমার কি হয়েছে বউমা, আজ ঈদের দিনটায় ও তুমি কাঁদছো কেন মা?”
চোখ তুলে শ্বশুরের দিকে এক পলক তাকালো শিখা। খানিকটা দম নিয়ে ভা’ঙা ভা’ঙা কণ্ঠে বললো,
“আপনি তো আগে থেকেই জানতেন বাবা,আপনার ছেলে কেমন, আপনার স্ত্রী কেমন মানুষ। সব জেনে-শুনেও আপনি কেনো আমাকেই ছেলের বউ করে এই ঘরে আনলেন বাবা? কেনো আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলেন আপনারা, কি ক্ষতি করছিলাম আমি আপনাদের?”
মেয়েটার কথা শুনে সাথে সাথে মাথা নিচু করে নিলো আসহাব, উনার আর বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে। শিখা এখনো উওরের আশায় তাকিয়ে রইলো শ্বশুরের মুখো পানে। যা দেখে অপরাধীর ন্যায় আসহাব বললে উঠলেন,
“আমাকে ক্ষমা করে দেও মা! অজান্তেই বড় ভুল করে ফেলছি আমি, জানি ক্ষমা চাওয়ার ও মুখ নেই আমার। ভাবছি বিয়ের পর ছেলেটা পাল্টে যাবে,কিন্তু ছেলেকে আমি সঠিক মানুষ করতে পারিনি মা। আমি একজন ব্যর্থ বাবা, ব্যর্থ স্বামীও বটে।”
শিখা ঠোঁট এলিয়ে তাচ্ছিল্য করে হাসলো কিঞ্চিৎ। তার চঞ্চল জীবনটাই ন’র’ক বানিয়ে দিয়েছে এরা। ক্ষমা! সব ভুলের কি ক্ষমা হয়!
পরক্ষণে জড়োসড়ো শিখার হাত ধরে নিচে নিয়ে আসলো আসহাব।
যদিও এরা মা-ছেলে দু’জনই তার হাতের নাগালে চলে গিয়েছে অনেক আগেই। তবুও এর একটা বিহিত করতেই হবে আজ। নাহ্! এভাবে আর চলে না! হয়তো এরা মা-ছেলে ভালো হবে নয়তো নিজ দায়িত্ব মেয়েটাকে এই অশান্ত নগর থেকে মুক্ত করে দিবে উনি।
.
.
ঘড়ির কাঁটায় সময় বারোটা ছুঁই ছুঁই! বাড়ির সবাই বসার ঘরে থমথম মুখে বসে আছেন। কারো মুখে কোনো আওয়াজ নেই। তারমধ্যে উচ্চ স্বরে একের পর এক ক্রোধিত কণ্ঠে ছেলেকে কথা শুনাচ্ছে বাবা। খানিকক্ষণ আগেই বাবা সবাইকে এক জায়গায় ডেকেছেন।
সোফায় গম্ভীর মুখ করে বসে আছে আযান। বুড়ো বয়সে মাএই সবার সামনে বাবা তার গালে থাপ্পড় এঁটে দিয়েছে। বোন-জামাইদের সামনে লজ্জায় মাথা কা’টা যাচ্ছে তার। স্বামীর ভয়ে রেহেনা বেগমও চুপচাপ বসে আছেন আজ।কেননা, এভাবে কখনো রাগতে দেখেনি আসহাব লোকটাকে। তবে মনে মনে ফুঁসছে উনি। তান্মধ্যে আসহাব স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে গমগমে গলায় বললেন,
” ছোট্ট বেলায় মা মা’রা গেছে আমার, বাবার হাতেই মানুষ হয়েছি আমরা। বড় সংসারে আমিই বড় ছিলাম। বয়স অল্প ছিলো তবুও আব্বা সংসারের হা’ল ধরাতে তোমাকে ছেলের বউ করে আনে। তখন থেকেই এই সংসার তোমার ইচ্ছেতেই চলতো রেহেনা। বয়স অল্প ছিলো, আমি বাহিরের কাজকর্ম সেরে এসে সংসার নিয়ে ঘাঁটতাম না, ইনকাম যা হতো তোমার হাতেই তুলে দিতাম। এরিমধ্যে আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্ম হলো, আমিও যুবক থেকে পুরুষে পরিণত হলাম। মেয়েরা বড় হতে লাগলো, দায়িত্ব বাড়লো।
এভাবে চলতে চলতে কখন যে সংসারের রাজাত্ব সব তুমি নিয়েছো বুঝতেই পারিনি। এরপর যখন বুঝলাম তখন বড্ড দেরী হয়ে গিয়েছে। আসলে, আমি তোমারে আমার রাজ্যের রানী করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু, তুমি ঠিকই রানী হলে তবে স্বামীকে বানিয়ে নিলে গোলাম। এরপর থেকে তোমার কথায় চলতে হতো আমায়। মাঝেমধ্যে সহ্য করতে না পেরে কিচ্ছুটি বললে সংসারে তুমি সে কি অশান্তি করতে। আমার যে চার মেয়ে ছিলো, এদের বিয়ে দিবার চিন্তা ছিলো মাথায়। এদের জন্য মুখ বুজে হজম করেছি সব। কিন্তু তুমি আমায় দুর্বল ভেবেই, পায়ে পি’ষে এসেছো। আসলে ছোট থেকে আমি শান্তি প্রিয় পুরুষ। সংসারে ঝুট-ঝামেলা কোনো কালেই পছন্দ ছিলো না। এরপর মেয়েদের বিয়ে দিলাম, ছেলের জন্য বউ করে আনলাম। বয়স বাড়ছে তোমার, ভাবছি তুমি কিছু হলেও পাল্টে যাবে। কিন্তু, কিন্তু তুমি এই মেয়েটাও একটু শান্তি দিচ্ছো না রেহেনা। এদের স্বামী-স্ত্রীর পার্সোনাল লাইফেও তুমি ঢুকে পড়ো,মিনিমাম লজ্জাও তোমার নেই।
আজ টাকা-পয়সা পেয়ে তোমার দেমাগে মাটিতে পা পড়ছে না। ভুলে যেওনা, তুমিও কিন্তু ছিলে একজন হতদরিদ্র মাঝির মেয়ে। এসব অতীত ভুলতে নেই বুঝলে? তুমি যেমন এই বাড়ির বউ ঠিক তেমনই শিখাও এই বাড়ির বউ। আজ তুমি বউমার গায়ে হাত তুললে? কাজটা একদম ঠিক করলে না রেহেনা। এখনো সময় আছে নিজেকে শুধরে নেও। নয়তো তোমাদের মা-ছেলেকে আমি নিজ দায়িত্বে জেলের ভাত খাওয়াবো, বলে দিলাম। আমার নিরবতাকে তোমরা দুর্বল ভেবো না, বুঝলে?”
লম্বা কথা শেষ করে শ্বাস ছাড়লো আসহাব। রেহেনা বেগম মেয়েদের জামাইদের সামনে অপমানিত হয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ নিজের রুমে চলে গেলো। আসহাব পুনরায় মেয়েদের কে উদ্দেশ্য করে বললো,
“এই যে মেয়েরা? তোমাদের বিয়ে দিয়েছি এখন স্বামীর সংসারই তোমাদের নিজের সংসার। মাঝে মাঝে বাপের বাড়িতে আসবে, দু’চার দিন হাসি-আনন্দ করে থেকে চলে যাবে। তোমারা কেন অন্যের সংসারে মায়ের সাথে পাল্লা দিয়ে অশান্তি করছো? এ-সব বাদ দিয়ে নিজের সংসারে মনযোগী হও। আর কখনো এমনটা যেন আমি না দেখি, খবরদার!”
মেয়েরা আর কিছু বলার সাহস পেলো না। আসহাব ছেলের কাঁধ চেপে থমথম মুখে আবারও বললেন,
“একজন ভালো সন্তান হওয়ার পাশাপাশি একজন ভালো স্বামীও হতে হয়, বুঝলে আযান। একজন তোমার জন্মদাএী অন্যজন তোমার অর্ধাঙ্গিনী।
এরা দু’জনই তোমার কাছে সমান গুরুত্বপূর্ণ। তুমি একজনের জন্য অন্যজন অবহেলা করলে এর জন্য রবের নিকট তোমাকে জবাবদিহি করতে হবে। তুমি আজ বউ মার গায়ে হাত তুললে? ছি! আযান। এমনটা তোমার থেকে আমি কখনো আশা করিনি। আমাকে দেখছো, তোমার মায়ের গায়ে কখন হাত তুলতে, বা তার সাথে জ’ঘ’ন্য ব্যবহার করতে?”
কিচ্ছুটি জবাব দিলো না আযান। আজ যেন কিচ্ছুটি কানে যাচ্ছে না তার। আসহাব আবারো সবার হয়ে, শিখার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলো। শিখা নির্বাক। পরমুহূর্ত আসহাব আলোকে নিয়ে ডক্টর দেখানোর উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।
শিখা এলোমেলো দৃষ্টিতে চাইলো একবার নিজের মেরুদন্ডহীন স্বামীর দিকে। একই পুরুষ কতটা না কেয়ারিং সন্তান সে। আর স্বামী হিসেবে কতই না জঘন্য পুরুষ!
ঐ যে অতিরিক্ত মা ঘেঁষে!
অতিরিক্ত মা ঘেঁষা সব ছেলেই যে সবসময় ভালো স্বামী হয় এমনটা কিন্তু নয়। এরা ভালো সন্তান হতে পারলেও স্বামী হিসেবে ঠুনকো।
এই সমস্ত ছেলে তার মাকে জীবনে যেভাবে সম্মান ও প্রায়োরিটি দেয়, সেই ছেলেটাই যদি তার সন্তানের মাকে তার অর্ধেক সম্মান ও প্রায়োরিটি দিতো তাহলে আমাদের সমাজের অর্ধেক পারিবারিক কলহ মিটে যেতো।
.
.
মানিয়ে নিতে নিতে কে’টে গিয়েছে আরো কয়েকটি বছর। কিশোরী মেয়ে থেকে নারীতে পরিণত হয়েছে শিখা। এই সংসারে এখনো শুনতে হয় তাকে কত গঞ্জনা। বছর কয়েক একটু স্বঃস্তি মিললেও তাকে আগলে রাখা বাবা রুপি শ্বশুরটা হারয়িছে অবেলায়। ওইতো সেবার চৈত্রে ম’র’লো ডে*ঙ্গু জ্বরে। একটি বছর হয়ে গিয়েছে বাবা নেই।
সময় এগোচ্ছে, বুঝতে শিখেছে, মস্তিষ্ক উন্নত হয়েছে এক ঘরোকন্নার। তার ছোট্ট মেয়েটাও এখন কথা শিখেছে, হাঁটতে শিখেছে।
তারই অবুঝ মায়ের বয়স বাড়ায় বুঝতে শিখেছে, নিজের দায়িত্ব নিজেকে নিতে হবে এবার। শান্তিতে এবার একটু দম নিতে হবে,এই কোলাহল আর কত?
ভাগ্য ক্রমে হসপিটালের রোগীদের দেখাশোনার জন্য একটা জবও মিলে গেলো।
দায়িত্বহীন সেই পুরুষটা আর পাল্টালো না,তবে শিখাকে আর গাল-মন্দ করে না, গায়ে হাত তুলে না বহুকাল। এই সংসারের গুরু এখনো মা’ই রয়ে গেলো। কিছু মানুষ আজন্মকাল একই থাকে,তারা কখনো নিজের স্বভাব পাল্টাতে পারে না।
তবে শিখা জব পেয়েছে শুনে রেহেনা বেগমও এবার খুশী, বাড়তি ইনকামের একটা সুযোগ হলো।
শিখাও নিজের কাজে জয়েন হলো, এটাই তার জীবনের প্রথম আশার আলো। সংসার নামক বন্দি খাঁচা থেকে মুক্ত হয়ে কয়েক ঘন্টা আরামসে নিশ্বাস নেওয়ার সুযোগ মিললো যেন।
তবুও এখানেও তাকে ছাড় দেয়নি রেহেনা বেগম, বাড়ির সব কাজ করে তবেই ছুটি মিলতো মেয়েটা। মাঝে মাঝে নাইট ডিউটি করেও রেস্ট পেতো না সে, বাড়ির বউ রোবট কিনা! এদের তো কাজই, সবাইকে বিনা স্বার্থে রাত-দিন সেবা দেওয়া। তবুও খুশি শিখা। নিজের ইনকামে সবার অগোচরে বাবা-মাকে কিছু পয়সা দেওয়া যেতো, নিজের ইচ্ছে মতো কিছু করা যেতো, ধারে ধারে হাত পাতার ঝুট-ঝামেলা থেকে মুক্তি মিললো।
এভাবেই যাচ্ছিলো দিন কিন্তু হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে পড়লো রেহেনা বেগম। আযান দিশেহারা হয়ে যায়, বড় বড় ডক্টর দেখায় মাকে। কিন্তু, মায়ের উন্নতি নেই।
ধীরে ধীরে সুঠাম গড়নের দেহটা অচল হয়ে আসলো, বাকশক্তি হারলো মা। শরীরে দেখা দিলো নানাবিধ রোগ,একসময় নিস্তেজ হয়ে বিছানাতেই গড়াগড়ি খেতে হলো সেই তেজীওয়ালা মহিলাকে। সে আর কথা বলে না, শরীরের অশান্তিতে দিনরাত ছটফটিয়েই কে’টে যায় দিন।
তার করুণ সময়ে এখন আর মেয়েদের ও দেখা যায় না আশপাশে, ঘরের সেই অকর্মা মেয়েটাকেই প্রয়োজন হচ্ছে তার।
শেষ সময়টায় শ্বাশুড়ির দেখাশোনা করছে শিখা। কিন্তু এখন আর ভালোবেসে নয় যতটুকু করছে দায়িত্ব থেকে।
রেহেনা বেগম নিজেকে দেখে বুঝলো, তার আয়ু ফুরিয়ে আসছে, ততক্ষণে নিভে যাওয়া বিবেক জাগ্রত হলো। নিজের করা অন্যায় গুলো ক্ষণে ক্ষণে মস্তিষ্কে কি’ল’বি’ল করছে। খুব করে ক্ষমা চাইতে ইচ্ছে করে আজ, তবে সেই ক্ষমতা যে হারিয়ে ফেলছে বেলা শেষে।
শিখাকে দেখলেই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে নিরব জল, কিন্তু এই ভাষাহীন নিরব যন্ত্রণা কেউ আর দেখছে না, কেউ বুঝছেও না আর না চেষ্টা করছে। অনুশোচনায় দ’গ্ধ হতে হতে আজ দুপরে হা*র্ট অ্যা’টা’ক করে দুনিয়ায় ছাড়লো রেহেনা বেগম।
__________
মা…. ও মা!
মেঝেতে হাত-পা ছড়িয়ে শ্বাশুড়ির মুখপানে তাকিয়ে গভীর ধ্যানে মগ্ন ছিলো শিখা। মূর্ছা মাখা কিছু স্মৃতি চারণে ঝাপসা হয়ে আসছে তার চোখ। হঠাৎ করেই আলো মা’কে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে ডাকলো। মেয়ের স্পর্শে ধ্যান ভাঙলো মায়ের, মেয়েকে কোলের উপরে বসিয়ে একবার আশপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে নিলো শিখা। লোকজন আড়চোখে দেখছে তাকে, তা দেখে মেয়ের কাছে এগিয়ে আসলো মনিরুল ও তার স্ত্রী। বাবা মেয়ের মাথায় স্নেহেতুময় হাত বুলিয়ে মিহি কণ্ঠে শুধালো,
“আম্মা? এখানে এমনে বইসা আছো কেন?আলো নানুকে নিয়ে তুই ভিতরে যা আম্মা।”
ছোট মেয়ের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে পুনরায় বাবা বললো,
“শখা? তোর আপাকে ধরে ভিতরে নিয়া যা।”
তান্মধ্যেই ভারী কয়েক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে, গা ঝাড়া দিয়ে উঠে বসলো শিখা। কোনো বনিতা ছাড়াই এক হাতে আলোকে জড়িয়ে ধরে সামনের দিকে পা চালালো। এমন সময় আরো একটা পিচ্চি ছেলে তার অন্য হাত ধরে আধোঁ আধোঁ কণ্ঠে শুধালো,
“কালামনি আমিও তোমাল সাথে দাবো (যাবো)।”
শিখা কিঞ্চিৎ মুচকি হেসে কোলো তুলে নিলো বোনের ছেলেকে। এটাই হচ্ছে শখার দুষ্ট একটা ছেলে “শাওন”। বছর চারেক আগে গার্মেন্টস কর্মী রওনকের সাথে বিয়ে হয় শিখার।
বাবা এবার আর ছোট মেয়ের জন্য উঁচু ঘর কিংবা টাকা-পয়সা খুঁজেনি। প্রথম ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে খুঁজেছে একটা সঠিক মানুষ।
রওনকের ঘরে বিলাসিতা না থাকলেও সীমাহীন ভালোবাসা রয়েছে। স্বামীর ওই ছোট্ট কুটিরে দিব্যি সুখে আছে শখা।
চলবে……