মায়ায় ভরা সেই দিনে পর্ব ৭

0
964

মায়ায় ভরা সেই দিনে
পর্ব ৭

ইশিতা সুতি লতানো ফুলের ছাপারএকটা শাড়ি পড়েছে। চুলগুলো গুছিয়ে হাত খোপা করা। ঠোঁটের কোনে মিষ্টি সরল হাসি।গুনগুন করে গান গাইছে সে আর ছাদে গোলাপ বেলীর ফুল গাছগুলো তে ঝাঝড়ি হাতে পানি দিচ্ছে। তাদের বাসায়ও এই কাজটা খুব নিষ্ঠার সাথে পালন করে সে। ফুল গাছে পানি দিতে অন‍্যরকম সুখকর একটা অনুভূতি আছে বলে বোধহয় হয় ইশিতার। ফুল গাছে পানি দিয়ে তার পরিচর্চা করে সেই গাছে ফুল ফোটতে দেখা উফফ বর্ণনাতীত আনন্দ। মন ভালো থাকলে শাড়ি পরে ইশিতা। অন‍্যথায় কখনোই পরবে না। আজ তার মন বেশ ফুরফুরে আছে।
রাজবীর ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েছে। বাকিগুলো উপুড় হয়ে চিৎ কাৎ ভঙ্গিতে ঘুম যাচ্ছে। রুমের অবস্থা পুরো বেহাল। রাজবীর খুব গুছালো আর ফিটফাট রকমের ছেলে। অপরিষ্কার আর সে দুই মেরুর বাসিন্দা। তবে এই বন্দুদের পাল্লায় পরে রুম গুছিয়ে রাখলেও লাভ অত হচ্ছে না। রুম থেকে বের হলো সে হাঁটতে বের হবে। বন্ধুদের পেয়ে সব লাটে উঠেছে তার সকালের মর্নি ওয়ার্ক ও ঠিকভাবে হচ্ছে না তার। দরজা খুলেই সুন্দর নির্মল শুদ্ধ সকালবেলায় ফুল বাগিচার মধ্যে বিচরণ করা মানবীকে চোখে পড়লো তার। কিছুটা বিস্মিত হলো সে অলকের স্থানে ইশিতাকে দেখে। দু কদম এগিয়ে আসলো রাজবীর। এই সকালে আমার বাগিচায় হানা দেবার কারণ টা কি ইশিতা হক জানতে পারি?
ইশিতা চমকে পিছু ফিরলো। রাজবীরের রসিকতা অত গায়ে মাখলো না। বললো সব কিছুর কারণ যে জানতে নেই রাজবীর দেওয়ান সাহেব।
আচ্ছা ভালো। তা এতো সকালে ছাদে?
ইশিতা রুমঝুম কন্ঠে বললো আজ আমার মনটা ভিষণ ভালো বুঝলেন
বুঝলাম
ইশিতা চোখ পাকালো বললো দুষ্টুমি হচ্ছে?
রাজবীর হো হো করে হাসলো বললো থাকুন আসছি। রাজবীর সামনে পা বাড়ালো
কোথায় যাচ্ছেন?
একটু দৌড়ে আসি বলে আর দেরি করলো না লম্বা লম্বা পা ফেলে নিচে নেমে গেলো সে। ইশিতা সেদিকে চেয়ে থেকে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। এই সুদর্শন লোকটা তার স্বামী তাকে ভালোবাসে। কি অবিশ্বাস্য কথা। তবে ইশিতার বিশ্বাস হয় কারণ স্বয়ং রাজবীরের মুখ থেকে সে শুনেছে আর সর্বপরি আম্মুর কাছ থেকেও কাল জেনে নিয়েছে। রাবেয়া হক কোন গড়িমসি করেননি। ইশিতার জিজ্ঞাসাবাদের পরে সবটাই তিনি সুন্দর করে বলেছেন মেয়েকে। ইশিতা কাল এটাও জেনেছে তাদের এখানে আসা তার আর রাজবীরের বিয়ের ডেট ফাইনাল করা। সবকিছু শুনে ইশিতা অত আশ্চর্য হয়নি আশ্চর্য হওয়া তার কর্ম না। ইশিতা চমৎকার একটা মেয়ে তার ভিতর আবেগ থেকে বিবেকের লড়াই বেশি। তার বিয়ের বয়স হয়েছে এমনিতেও মা বাবা ভাই তার বিয়ে কোথাও না কোথাও দিবেই। তবে সেটা যদি হয় রাজবীরের মতো এরকম পার্ফেক্ট একজন সুপুরুষ তাতে আর না কেন?তবে যদি ইশিতাকে আরো পূর্বেই অবগত করতো রাজবীরের বিষয়ে তবে সেটা ভালো হতো বলে মনে হয় ওর। রাজবীর আর তার বিষয়টা এতোদিনে নরমাল হয়ে যেতো। রাজবীর খুব সাফার করেছে। ইশিতার মায়া হচ্ছে রাজবীরের প্রেমঘটিত সময়টার জন‍্য। কিন্তু এখন ওর কিছুই করবার নেই। দেখা যাক কি হয় সামনে।
রাজীর সিড়ি ভেঙ্গে নিচে আসতে আসতে ইশিতার কথা ভাবলো। মেয়েটা দুরন্তন চালাক। যতটা বোকা ভাব নিয়ে চলে তার চেয়ে ঢের বুদ্ধি ভিতরে ভিতরে নিয়ে ঘুরে মেয়েটা। সবকিছু শুনেও কি নিস্তরঙ্গ ভঙ্গি তার যেন সে কিছুই জানে না। এমন ডোন্ট কেয়ার ভাব টা রাজবীরের সহ‍্য হচ্ছে না। মেয়েটা যদি মনে করে রাজবীর তাকে ভালোবাসে বলে এখন তার পিছু ঘুরবে তবে তা নিরেট বোকামো। নিচতলায় এসে বের হবার মুহূর্তে রোমেল দেওয়ানের গম্ভীর স্বরের ডাকে থমকে দাঁড়ায় রাজবীর। আজ আর হয়েছে তোর মর্নিং ওয়ার্ক রাজবীর নিজ মনে সুধায় নিজিকে।
হেঁটে আসলো বাবার সামনে বিনীত ভাবে বললো বলুন আব্বা।
বসো লম্বা আলোচনা আছে।
রাজবীরের কাপলে ভাঁজ পড়ে। বাবার সামনে সোফাটায় বসে পরে সে। অলক এসে কফির মগ সেন্টার টেবিলে রেখে গেলো।
রোমেল দেওয়ান ছেলেকে একপলক ভালো করে দেখে নিলেন। বললেন আসাদ আর ওর বউ হজ্বে যাবে। হজ্বে যাওয়ার আগেই তারা তোমার সাথে ইশিতার বিয়ে টা সেড়ে ফেলতে চান। আর তোমার আম্মা আপারা আমি আমরা সবাই চাই।বিয়েটা এখন হোক।
রাজবীর চুপ করে বসে রইলো। কেন যেন তার কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না। রোমেল দেওয়ান ছেলের উত্তরের আশায় তার দিকে চেয়ে থাকলেন।
রাজবীর আশেপাশে নজর বুলিয়ে বাবার দিকে তাকালো। বললো এতো দ্রুত বিয়ে করার চিন্তা করি নাই আব্বা। আপনার কি মনে হয়? আমি এখন বিয়েসাদির জন‍্য প্রস্তুত?রোমেল দেওয়ানের মনে তিন বছর আগে করা অন‍্যায় টা কামড়ে ধরে। তাও গলায় জোড় ঢেলে সে জানায় অবশ‍্যই প্রস্তুত তুমি। রাজবীর থমথমে মুখে বলে তাহলে আর কি আপনারা তো সিদ্ধান্ত নিয়েছেনই। রোমেল দেওয়ান ছেলের মলিন মুখটাকে দেখে বলে। মা বাবা সবসময় সন্তানের ভালো চায়। মন খারাপ করে থেকো না।
রাজবীর বাবার দিকে তাকায় তার চোখে বাবার অনুতাপের চেহারা ধরা পরে। বুকের কোনটায় যেন চিনচিনে ব‍্যাথা হয়। তার হঠাৎ মনে হয় তার বাবা ঐ মুহূর্তে অপারগ ছিলেন। তার বাবা চাইলে ও সম্ভব ছিলো না ইশিতার বাবা ভাই দুজন লোকের বাঁধায় তার বাবা অসহায় ছিলেন। মনের ভিতর যত্নে রাখা রাগটা এখন আর নেই তা হাওয়ায় মিলে গেছে। সে মৃদু হাসলো মা বাবার ভালোবাসার কত শক্তি। এই সময়টাকে নিয়ে রাজবীর কত উল্টাপাল্টা বিষয় চিন্তা করে রেখেছিলো। কিন্তু এখন কিছুই মনে আসছে না। সুধু মনে আসছে তার বাবাকে কষ্ট পেতে অনুতপ্ত হতে দেখা যাবেনা। তার বাবাকে তার চিরাচরিত দিনের ন‍্যায় উজ্জল হাসিখুশি দেখতে হবে। সাদা পাঞ্জাবী সাদা টুপি পরে সে জনগণের সামনে যাবে।তাদের সাথে হাসবে কাদবে তাদের বিপদ দেখবে। পবিত্র মুখটায় সর্বদা নুরাণী আলোয় জ্বলজ্বল করবে।
রাজবীর চুলে হাত বুলালো ইতিমধ্যে আফিয়া বেগম ও এখানে হাজির হয়েছে। রাজবীর মা বাবার ভয়টা টের পেলো। হুুট করে তার হাসি পেয়ে গেল। অথচ এখানে হাসির কিছু হয়েছে কি? রাজবীরের মুখের হাসি দেখে রোমেল দেওয়ান আফিয়া বেগম স্বস্তির শ্বাস ফেলেন।
তাহলে আসাদের সাথে কথা বলে ডেট ফেলছি আমরা।
যেটা ভালো মনে হয় আপনার। তবে ইশিতাকে বিয়ের ব‍্যাপারে আগের থেকে জানিয়ে ওর মত নিয়ে ডেট ফেলবেন।
ছেলের বিচক্ষণতায় মুগ্ধ হলেন রোমেল দেওয়ান। খুশিতে হড়হড় করে বলে গেলেন রাবেয়া ইশিতাকে সব কিছু জানিয়েছে ওর মত আছে বিয়েতে। এই নিয়ে আর চিন্তা করো না তুমি।
জি আপনি যা বলবেন। উঠছি আমি রাজবীর বাহিরে দিকে যেতে থাকলো উদ্দেশ্য ফুলের বাগানের গাছ গুলি ঘুরে দেখা।
ইশিতা সিঁড়ির দোরগোড়ায় ঐ পাশে থেকে সব টাই শুনেছে সে। মেয়েটার মধ্যে একটু আড়ি পাতার স্বভাব আছে মনে হয়।
রোমেল দেওয়ান গদগদে কন্ঠে স্ত্রীর দিকে ফিরলেন বললেন দেখলে আমার ছেলের কি পিতাভক্তি। তুমি তো ভয়ে আধমরা হয়ে যাচ্ছিলে। আফিয়া বেগম জ্বলে উঠলেন কি আমি ভয়ে মরে যাচ্ছি আর তুমি? তুমি তো অজ্ঞান হবারই বাকি ছিলে। তখন ঘরে তো ভয়ে কথাই বের হচ্ছিলো না আর যেই ছেলে বাপের প্রতি সদয় হলো অমনি কি বুলি তার দু মুখো একটা। মুখ ঝামটে রান্নাঘরে পা বাড়ান আফিয়া বেগম। রোমেল দেওয়ানের চুপসানো মুখ দেখে ফিক করে হেসে ফেললো ইশিতা। রাজা বাদশাহ পর্যন্ত স্ত্রীকে ভয় করে এসেছে আর ওনি তো সামান্য মেম্বার।
রাজবীর বাগান দেখছে ঘুরে। অলক পিছে ঘুরঘুর করছে। রাজবীর ফিরলো ওর দিকে কিরে কিছু বলবি? অলক তার দাত বের করা হাসি হাসলো। বললো ভাইজান সত্যি কইরা কন তো শহরের আপার লগে কি আপনার বিয়া? রাজবীর মৃদু হাসলো বললো হ‍্যা। অলক খুশিতে ইয়া বড় এক লাফ মাড়লো। এক ছুট লাগালো তার সমবয়সী ছেলেদের খবরটা জানাতে। রাজবীর সেদিকে চেয়ে হেসে ফেললো ছেলেটা বহুত ভালো।

চলবে
জান্নাত রেশমি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here