মায়ায় ভরা সেই দিনে
পর্ব ৪
সে রাতে বন্ধুদের সাথে আর মুভি দেখা হলো না রাজবীরের। সে তার আদুরে ছোট্ট বউয়ের কল্পনা করতে করতেই ঘুমের দেশে পাড়ি দিলো।
সকালবেলায় তাড়াহুড়োয় নাস্তা সাড়লো ইতরের দলটা। শাওয়ার নিয়ে যে যার মতো রেডি হয়ে নিলো। একটু দুরের রাস্তা তাই সকাল বেলা রওনা হলে যে যায়গায় যাবার কথা সব ঘুরে ফিরে আসা যাবে। টেবিলে ইশিতার সাথে দেখা হয়েছিল তখনই তাকে বলে দিয়েছে বন্ধুরা তৈরী হয়ে নিতে। ইতিমধ্যে ভাব জমে গেছে তাদের মধ্যে। অবশ্য ইশিতার সরল কথা মিষ্টি হাসি সুন্দর চোখের চাহনী সবই ভাব জমবার মতই মেয়েটার নিস্পাপ চেহারায় একটা আকর্ষণীয় ভাব আছে। ওরা সবাই জীপে বসে। ইশিতার জন্য ওয়েট করছে সবাই। মেয়েদের এই এক সমস্যা কোথাও বের হতে নিলে বহুত সময় ব্যায় করে। যদিও সব মেয়ে এক না। অল্প একটু সময়ের পরেই ইশিতার দেখা মিললো। রাজবীর ঘাড় উঁচু করে তাকালো। বাহ্ ভীষণ মিষ্টি লাগছে তো। মেয়েটা তো ভালো ফ্যাশনবল। কালো জিন্স সাথে হাঁটু অবিদ সবুজ একটা টপ। গলার কাছটায় কুচি দেয়া লং হাতার শেষে কব্জির কাছটায় কুচি দেয়া। বড় বড় গোল্ডেন রঙ্গের বোতাম বসানো খুব সুন্দর শালীন একটা ড্রেস। সাথে কালো স্কার্ফ গলায় স্টাইলিশ করে পেঁচানো। মুখে কোন মেকাপ নেই তবে ঠোঁট হালকা গোলাপি লিপস্টিক দেয়া। রাজবীর চোখের পলক সড়ালো ছ্যাচড়ার ন্যায় তাকিয়ে থাকা ঠিক নয়। বন্ধুরা ইতিমধ্যে কনুইয়ের গুতা আর মুখে বিটকেলে হাসি দিয়ে যাচ্ছে।।
ইশিতা পেছনে আফিয়া বেগম রাবেয়া হক এলেন। রাজবীর সহ সবাইকেই সুধালেন ইশিতার খেয়াল রাখতে। তারা ভদ্রলোকের ন্যায় জবাব করলো অবশ্যই অবশ্যই আন্টি আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন। ইশিতা জীপে উঠে বসলো। সবাইকে হায় জানালো। জীপ চলতে শুরু করলো। বন্ধুদের সবাই ব্লু জিন্স আর সাদা টিশার্ট পড়নে। রাজবীর সাদা শার্ট আর ব্লু জিন্ম গায়ে সাদা কেইডস্। ভালো লাগছে দেখতে ওদেরকে। গাড়ি চলতে শুরু করেছে বাতাসের ঝাঁপটায় চুল স্কার্ফ উড়তে শুরু করেছে। ইস কি সুন্দর মায়াময় মুহুর্ত। এতো সুন্দর সুন্দর মুহুর্ত কেন বন্দী করা যায় না। সুধু মাঝে সাঝে অতীত হয়ে তা মনের কোনে উঁকি মারে।
ইশিতা রাজবীরের দিকে তাকালো বললো আমরা কোথায় যাচ্ছি?
ফর্সা মুখের তীক্ষ্ম সরু নাকের সুদর্শন চেহারাটায় বাঁকা হাসির দেখা মিললো। বললো যেখানে যাচ্ছি সেখানে জ্বিনদের বসবাস। বারো আউলিয়া তলা যায়গাটার নাম। টঙ্গীবাড়ী জেলার লৌহজং থানার মধ্যে পড়ে গ্রামের নাম হচ্ছে কলমাকান্দা। সট করে সবাই কলমা বলে।
ঈশিতা আাঁতকে উঠলো। সুন্দর চন্দন রঙের মুখটার ভিতর ফ্যাকাশে রঙ উড়ে আসলো। হড়বর করে বললো গাড়ি থামান গাড়ি থামান। প্লিজ। রাজবীর বিস্ময় নিয়ে তাকালো।বললো গাড়ি থামাবো কেন??
ইশিতা আতঙ্কিত গলায় বললো আমি যাবো না।যাবো না প্লিজ।
রাজবীর এবার বুঝলো সে তার ইতরের মতো হো হো করা হাসিতে ফেটে পড়লো। জিসান জীপ থামিয়ে দিলো রোডের সাইডে। ইশিতা বলদের ন্যায় গাড়িতে থাকা সবার মিটমিটে হাসি দেখতে থাকলো। রাজবীরের হাসির জোড় কমে এসেছে। বললো তুমি কি বোকা?? আমি ফাজলামো করেছি তোমার সাথে।
ইশিতার রাগ হলো বললো এটা আবার কেমন ফাজলামি। আমার কিন্তু জ্বীন ভীতি আছে। স্কুলে পড়াকালিন একটা মেয়েকে জ্বিন আছর করেছিলো মেয়েটা তখন আজব কর্মকান্ড করতো। বড় নারকেল গাছের চূড়ায় উঠে বসে থাকতো। হঠাৎ জ্ঞান হারিয়ে ফেলতো। আরও কত কি।সবাই মনযোগ দিয়ে শুনলো ইশিতার কথা।রাজবীর সিরিয়াস গলায় বললো তো জ্বীন ভীতি সুধু তোমারই আছে আমাদের নেই? যাচ্ছি যেখানে সেটা একটু আজব যায়গায় বলা যায়। কিন্তু জ্বীন ভূতের ভয় নেই। পদ্মা নদীর সাথের গ্রাম কলমাতে বারো আউলিয়া তলা নামক আশ্চর্যকর একটা পর্যটক স্থান। এইখানে অনেক রকমের মোটা মোটা গাছে ভরপুর দেখতে ও সুন্দর তবে যায়গা টায় কতটা গাছ আছে তার গণনা করা যায় না। এবং এটা সত্যিই বহুদিন পূর্বে নাকি একজন স্কুকের হেড মাষ্টার তার স্কুলের ছাত্রদের প্রতিটি গাছের গোড়ায় একজন করে ছাত্র দাড় করিয়ে গুণার চেষ্টা করেছিলেন।তবে তিনি সফল হননি। উল্টো তার ছাত্রদের থেকে নাকি একজন গায়েব হয়ে গেছিলো। লোকমুখে এমনটাই শোনা যায়। আর ঐ ঘটনার পর থেকেই গ্রামবাসিদের কাছে যায়গাটায় নাকি জ্বিনের উৎপাত আছে বলে তারা বিশ্বাস করেন।
ইশিতার চোখ ছানাবড়া জ্বিনের ভয় তার পালিয়েছে সেই কখনই। এখন তার চোখমুখ জুড়ে কেবলই কৌতূহল। সে তার হাত নাড়িয়ে আনন্দ প্রকাশ করলো বললো ভেরি ইন্টারেস্টিং তো।
তাদের জীপ চলতে শুরু করেছে। জিসান ড্রাইভিং সিট থেকে বললো। রাজবীর যায়গাটায় অনেকবার গিয়েছে। ওর থেকে শুনে আমাদের ও খুব আগ্রহ জেগেছে আর এবার যেহেতু সবাই একসাথে এসেছি তাই ঘুরে আসি। তুমিও ভাগ্যক্রমে সাথে চলেছো।
রাজবীর সিটে হেলান দিয়ে ফোন ষ্ক্রল করছে তবে তার কান সজাগ। তার বন্ধুরা আর ইশিতা রিতীমত গল্পের মেলা বসিয়ে দিয়েছে। ইশিতার রুমঝুম কন্ঠে কৌতূহলী ভাব। আর কোথায় কোথায় ঘুরবে তারা সেসব নিয়ে সে ব্যাপক উৎকন্ঠিত। রাজবীর আড় চোখে ইশিতাকে দেখে নিয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো মেয়েটা বড্ড মিষ্টি আছে। অল্প সময়েই কি সুন্দর আপন মানুষের মতো আপন করে নিয়েছে সবাইকে।
_________________________
রাজবীরদের জীপটা কলমা বাজারে এসে থেমেছে। এখান থেকে তারা খাবার সংগ্রহ করে নিবে। গ্রামে যেহেতু তাদের চেনা পরিচিত কোন লোকজন নেই তাই তখন কোথা থেকে এসব বিষয়ে সাহায্য নিবে। রাজবীর ইশিতার দিকে তাকালো বললো তোমার কি লাগবে?
ইশিতা তার সরল হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে আমোদিত কন্ঠে বললো কোল ড্রিংকস একটু বেশি নিয়েন আমিতো এই প্রথম গ্রামে ঘুরবো ফিরবো রোদের তাপ ও ভালোই আছে গলা শুকিয়ে আসবে বারে বারে।
ইস্ কি সরল উক্তি। কি নমনীয় কথা। কি ছিলো এই কথাটায়? রজবীরের এতো মায়া হচ্ছে কেন মেয়েটার প্রতি।
রাজবীর মাথা দুলিয়ে বাজারের ভিতর হাঁটা দিলো। ফ্রোজেন করা চার রকমের কোল ড্রিঙ্কসই নিলো ক্যান সহ। বাকি শুকনো কেক, কয়েক রকমের চিপস্, চকলেট, বিস্কুট, আরো কি হাবিজাবি। বন্ধুদের দলটা গোল গোল করা চোখে দেখছে রাজবীরকে। বললো কি মিয়া বউয়ের জন্য দরদ দেহি উতলায়া উঠতে আছে। রাজবীর হেসে ফেললো চাপা গলায় বললো তোরা দেখছি হাঁটে এসে হাঁড়ি ভাঙ্গবি। ইশিতা এদিকটায় আসছে। সবাই সর্তক হলো। এতগুলো কোল ড্রিংকস দেখে ইশিতার মাথা চক্রর মেরে উঠলো। সে হায় হায় গলায় বললো করেছেন কি? এতগুলো কেন নিয়েছেন?
রাজবীর হাসলো বললো টাকা দেয়া হয়ে গেছে এখন কিছু বলে লাভ নেই।
ইশিতা ভ্রু কুঞ্চিত করলো বললো তাই বলে এতগুলো? এতো বেশি খেলে পড়ে কিন্তু অন্য ঝামেলা দেখা দিবে।
বন্ধুদের দলটা ইতরের সুরে বললো আমাদের জন্য প্রবলেম নেই। তোমার জন্য প্রবলেম হবে। ইশিতা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো রোদ্রউজ্জল দিনে ইশিতার এই হাসিটায় রাজবীর কাৎ হয়ে গেলো। তার মনে হলো এতো সুন্দর মুহুর্ত সে বহুুদিন পর দেখলো। পরক্ষণেই তাদের কথার মানে বুঝতে পেরে বড্ড রকমের হাসি পেলো। মেয়েটা এতো বোকা কেন? অন্য কোন মেয়ে হলে এতক্ষণে লজ্জায় আর ন্যাকামোতে হুলুস্থুল কান্ড বাাঁধাতো। আর মেয়েটা সরল ভাবে হাসিতে মেতেছে। ইস্ এতো মিষ্টি লক্ষী বুঝি হতে আছে। বন্ধুদের তাড়ায় পা বাড়ালো রাজবীর। জীপ চলতে শুরু করেছে উদ্দেশ্য বারো আউলিয়া তলা।
_________________________
বারো আউলিয়া তলায় যখন তারা পৌঁছলো তখন বেলা বারো টা। রোদের দাপট আছে ভালোই। ইশিতা সদ্য কিশোরীর ন্যায় লাফাচ্ছে। তার সেকি আনন্দ। যায়গাটা তার ভীষণ পছন্দ হয়েছে। বিশাল বড় বড় গাছগুলো একেঁবেকে লতার ন্যায় হয়ে আছে। একটা গাছ এতই বাকাঁনো যে মাটির থেকে সামান্য কিছু উপরে তার অবস্থান। আর অল্পের জন্য মাটির সাথে মিশে যায়নি সেটা। ইশিতা তার পায়ের সুজ খুলে ফেললো। বাঁকানো গাছটায় বসে পা ঝুলানো শুরু করলো। বন্ধুদের দলটার মধ্যে চঞ্চল ভাব ফের ভর করলো। সেলফি ভিডিও ফাজলামি সব কিছুতে মেতে উঠলো সবাই। রাজবীর খুব সন্তর্পনে ইশিতার প্রাণখোলা হাসির কয়েকটা ছবি মোবাইলে ক্লিক করে নিলো। শুকনা খাবার আর কোল ড্রিংকস খেয়ে গলা ভেজালো। এইখানে রেস্টুরেন্ট বা হোটেল নেই যা দোকান পাট সেই বাজারেই। ইশিতা তার সাইড ব্যাগ খুলে ফোন বের করলো। রাজবীরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো তার কয়েকটা ছবি তুলে দিতে। ছোট্ট একটা আবদার।তবে রাজবীরের কি যে ভালো লাগলো। মনে হলো সেই কত বছরের চেনা দুজন। কত আপন তারা।
সবুজ কালোর মধ্যে চন্দন রঙা মুখে ঘামের ছিটা ফোটা মুখে। উঁচু করে ঝুটি করা চুল গুলো ঘাড় ছড়িয়ে পিঠময় নেমেছে। কি যে চোখ ধাঁধানো দৃশ্য। কি মিষ্টি সেই সরল হাসি। রাজবীরের মনে হলো এই যায়গা টা আজ সুন্দরে বাধঁ ভেঙ্গেছে। ছবি তুলে ফোন এগিয়ে দিলো ইশিতার দিকে। ইশিতা হাত বাড়িয়ে নিলো। বললো বসুন না। রাজবীর গাছটায় ইশিতার পাশে বসলো। ইশিতা তার রুমঝুম করা কন্ঠে বললো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড যদি এই যায়াগাটায় আসতো। তবে এখান থেকে যেতেই চাইতো না। রাজবীর আলতো হাসলো। বন্ধু রাতুলের ডাকে তাকালো তার দিকে।রাতুল চেঁচিয়ে বললো দোস্ত এদিক আয় ছবি তুলুম। জলদি আয়।রাজবীর উঠে আসলো। রোহান হাঁক ছাড়লো বললো ইশিতা তুমিও আসো। আমাদের ছয় ইতরের একটা ছবি তুলে দাও। ইশিতা ফিক করে হাসলো। কি দুষ্ট রে বাবা। ছবি তোললো সবচেয়ে মোটা গাছটার ঘা ঘেসে দাঁড়িয়ে। ইশিতার মনে হলো এই ছয়টা মানুষের সুধু রূপটাই সুন্দর না। ভিতরে মনের রূপ টাও তাদের ভিষণ সুন্দর। কি অকৃত্রিম হাসি। একজনের জন্য অন্যজনের মন সেকি মায়ায় ভরপুর। ছবি তোলার পর্ব শেষ হলে ইশিতা চারপাশ দেখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। রাজবীর বন্ধুদের দিকে গরম চোখে চাইলো নিচু গলায় বললো হারামিরা আর একটু পর ছবি তুললে কি হতো। যেই একটু বসলাম অমনি তোদের সুড়সুড়ি শুরু হলো? মুন্না দুষ্ট হাসলো বললো কও কি মামা? কথা তো এটা ছিলো না। তুমি আমগরে রাইখা বউয়ের লগে কোয়ালিটি টাইম স্পেন্ড করবা তা কেমনে হয়? যাও বাদ দিলাম একটা দারুণ খবর আছে বুঝলা। মুন্না তার ফোন বের করে দেখালো। রাজবীর আলতো হাসলো। বন্ধুরা সবাই চোখের ইশারা করছে। রাজবীর ভ্রু চুলকালো বললো যা আজ বিকেলে চিকেন গ্রীল পার্টি দিলাম। বন্ধুরা ফাজিল হেসে হইহই করে উঠলো। সুর দিয়ে গেয়ে উঠলো।
বন্ধে মায়া লাগাইছে পিরিতি শিখাইছে কি জাদু করিয়া বন্ধে মায়া লাগাইছে……..
হো হো হাসিতে ইশিতার ঘোর ভাঙ্গলো। সে এগিয়ে এলো বললো সে কি আমাকে রেখে হাসছেন কেন? তার বোকা বোকা কথায় আরেক দফা হাসির রোল পড়লো।রাজবীর ফোন চেক করলো হুয়াটস্ আ্যপে ম্যাসেজ এসেছে। মুন্না পাঠিয়েছে রাজবীর ইশিতার পাশাপাশি বসে থাকার একটা ছবি। সেই গাছে যখন তারা বসে ছিল তখনকার ছবিটা ভারি চমৎকার হয়েছে ছবি তোলাটা। রাজবীর হাসছে ইশিতা তার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে চুল গুছানো মুহুর্তে ক্লিক করা হয়েছে। তাদের বারো আউলিয়া তলা ঘুরে দেখা শেষ।যায়গাটার সৌন্দর্য অনুভব করা শেষ হয়েছে। আশ্চর্য বিমোহিত তারা। প্রভুর কি আজব সৃষ্টি।
ইশিতা হাঁটতে হাঁটতে রাজবীরের পাশ ঘেঁষে আসলো। বললো এবার কোথায় যাবো?
এখন যাবো লৌহজং এলাকার এমপি মিজান সিনহার বাড়ি। এটাও একটা পর্যটক কেন্দ্র বলা যায়। তার বাড়ি সে থাকে না তবে এখানে পার্কের মতো করে রাখা যায়গাটা ভিষণ সুন্দর। তোমার অবশ্যই ভালো লাগবে। তারা জীপে উঠে বসলো। জীপ চলতে শুরু করেছে। নানান গল্প গুজবে হাসি ঠাট্টায় কাটছে সময়।
আপনি এই এলাকায় আর কোথায় কোথায় ঘুরেছেন? ইশিতার প্রশ্নে ফোন থেকে নজর সড়ালো রাজবীর।ইশিতার দিকে তাকিয়ে বললো এই দুটি যায়গায় ঘুরেছি আর পদ্মা নদীতে চর ভেসে ছিলো সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম । খুব মনোরঞ্জন করা একটা যায়গা সেটা। বিশাল বড় যায়গা জুড়ে চর ভেসে আছে নদীর মধ্যখানে আর চারপাশে পদ্মার পানি। বুঝতে পারছো কি নিদারুণ সৌন্দর্যের স্থান সেটি। তবে যাদের নদীতে ঘুরাঘুরি করার শখ আছে তাদের জন্য দারুণ মনোমুগ্ধকর এই যায়গা টা। তারা যায়গাটার সৌন্দর্যের অনুমান করতে পারবে।
তাহলে আমরা যাচ্ছি না কেন? আমার তো নদীতে ঘুরতে খুব ভালো লাগে।
এই বর্ষায় তো চর ডুবে আছে। সুধু নদীতে ঘুরে মজা পাবেনা। তাই আর নদীর দিকটায় গেলাম না
ইশিতা আফসোস করে বললো ওহ্।
রোহান বললো মন খারাপ করো না আমরা নদীতে ঘুরতে যাবো তো তখন সাথে যেও।
ইশিতার ঠোঁটে হাসি ফুটলো। অবাক গলায় বললো সত্যি।
রাজবীর ইশিতার হাসিখুশি মুখটা চোখ ভরে দেখে নিলো। বললো হ্যা সত্যি।তুমি চাইলে আমাদের সাথে যেতে পারো।
ইশিতা খুশিতে উত্তেজিত হয়ে উঠলো বললো অবশ্যই যাবো।
তাদের জীপ মিজান সিনহার বাড়ির সামনে এসে থামলো। একে একে নেমে পড়লো সবাই। টিকেট কেটে ভিতরে ঢুকলো তারা। ইশিতার খুব পছন্দ হয়েছে। পুরো বড়সর একটা পার্কই বটে। দুতলা বিল্ডিং মিজান সিনহার যার পুরোটাই বাগান বিলাসে আর কুঞ্জলতায় ভরপুর। ফুলের বিশাল বাগিচা। সুইমিং। দুটো সিংহের মূর্তি যাদের মুখ থেকে ঝর্ণা প্রবাহিত। ঘুরেফিরে দেখলো তারা। বসে থাকলো কিছুক্ষন সিমেন্টের বেদীতে। পরিবেশটা শান্ত কোন হৈ হল্লা নেই।
আমার ঘুম পাচ্ছে কি সুন্দর পরিবেশ। রাজবীর হাসলো মেয়েটা বহুুত লক্ষী। ঘুমাও তাহলে। দুর কি বলেন। ঘুরতে এসে ঘুমাবো। আরো কিছুক্ষণ কাটালো তারা। এবার বাড়ি ফেরার পালা। গাড়িতে উঠে বসে খাবারের আরেক পর্ব চুকালো তারা। রাজবীর ড্রাইভিং সিটে। পাশে ইশিতা। চুল বাতাসে উড়ে চোখেমুখে পড়ে এতে বিরক্ত সে স্কার্ফটা দিয়ে মাথায় পেচিঁয়ে ঘোমটা দিয়ে রেখেছে এতে করে তার সৌন্দর্যের ছটা বেড়েছে বলেই মনে হচ্ছে রাজবীরের। কি আদুরে কিউট দেখতে লাগছে মেয়েটাকে। বন্ধুরা সবাই হাততালি আর নানান গানে মেতেছে। খালি গলায় যৌথ সংঙ্গীত শুনতে ভালো লাগছে।
ইশিতা রুমঝুম করা কন্ঠে রাজবীরের দিকে চাইলো বললো আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। খুব সুন্দর একটা দিন কাটলো আমার। এভাবে জীপে করে ঘুরে গ্রামের আনাচ কানাচ সুন্দর কিছু যায়গা ঘুরলাম। মনটা ফ্রেশ হয়ে গেছে একেবারে। শহরে বন্ধ ঘরে থেকে শরীরে মনে জং ধরে এসেছিল। আজকে গ্রামের পরিবেশ খুব উপভোগ করেছি।
রাজবীর হাসলো মাথা নাড়িয়ে বিনীত ভঙ্গিতে বললো। ধন্যবাদ এক্সসেপ্ট করা হলো। তোমার ভালো লেগেছে এটাই অনেক।
পিছন থেকে বন্ধুদের দলটা আয় হায় করে উঠলো।
ইশিতা পিছনে তাকিয়ে তাদের ভাবভঙ্গি দেখে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। বললো আপনারা এতো দুষ্ট কেন?
রাজবীর ঠোঁট টিপে হাসছে এতো পাজি এই ছেলে গুলো।
জিসান সুধালো রাজবীর কে বললো কিরে তুই তো ইশিতাকে আমাদের পার্টি তে আমন্ত্রিত করলিনা।
রাজবীর উত্তর করলো সময় কোথায় দিলি তোরা।
কিসের পার্টি? ইশিতার অবাক করা প্রশ্ন?
আজ চিকেন গ্রীল পার্টি আছে আমাদের। ছাদের উপর বুঝলে ইশিতা তুমি কিন্তু আসবে।
ইশিতা সরল হাসলো বললো আচ্ছা।
মাগরিব এর একটু আগে এসে জীপ খাসকান্দি গ্রামের বড় বাজারে থামলো। রেস্টুরেন্ট থেকে গ্রীল অর্ডার করলো। কিছুক্ষন ওয়েট করতে হবে। রাজবীর সাতটা কফি অর্ডার করলো। একটু বাদেই একটা লোক ট্রে করে ওদের কফি দিয়ে গেল। বন্ধুরা সবাই যার টা সে নিলো। রাজবীর নিজের টা নিয়ে ইশিতার টা ও তার দিকে এগিয়ে দিলো। ইশিতা হাত বাড়িয়ে নিলো। চুমুক দিয়ে কফির স্বাদ নিলো চোখ বন্ধ করে ঠোঁট ফুলিয়ে। রাজবীর আড়চোখে চেয়ে দেখলো। আপনাদের বাজার টা বহুত বড়। হ্যা এটাতে তো চার পাঁচ গ্রামের মানুষ বাজার করতে আসে। তাই ভালোই জমজমাট। ইশিতার ভালো লাগলো সে রাজবীরের দিকে তাকালো বললো আপনি খুব সুন্দর গুছিয়ে কথা বলেন। রাজবীর হাসলো আর অপেক্ষা করতে লাগলো বন্ধুদের বাগড়া দেয়ার। বেশি সময় গেল না রোহান গেজ দন্ত হেসে বললো যাও দোস্ত দেখো প্যাক করা বোধহয় হয়ে গেছে। রাজবীর পিছন ফিরে থুতনি চুলকালো চোখ দিয়ে অদ্ভুত ইশারা করলো। তবে লাভ হলো না বন্ধুরা সবাই হো হো করে হাসলো। তারা রাজবীরের হুমকি গায়ে মাখলো না। সবার হাসির শব্দে ইশিতা চমকে গেলো। আতংকিত গলায় বললো কি হলো ওনাদের? সন্ধ্যা বেলা আবার জ্বিন ভূত আছর করলো নাকি?
রাজবীর ভ্রু কুঞ্চিত করলো। ইশিতার আতঙ্ককিত চোখমুখ দেখে হেসে ফেললো সে। এই বোকা মেয়েটাকে নিয়ে কোথায় যাবে সে। গ্রীল নিয়ে বাড়ি ফিরলো তারা। ফ্রেশ হয়ে রাজবীর বন্ধুরা মসজিদে ছুটলো।
আফিয়া বেগম খাবার সব সাজালো। সালাদ, সস, নান রুটি, গ্রীল, কোক। সোমাকে দিয়ে ছাদে পাটি বিছিয়ে খাবার সব ছাদে পাঠালো। অলক ও দৌড়ে কাজে হাত লাগালো। রাবেয়া হক ইশিতা আফিয়া বেগম ওনারা সবাই ছাদে উঠে এলেন ছাদের বড় রঙ্গ বেরঙ্গের লাইটগুলো জালিয়ে দেয়া হলো। পাটির উপর খাবার সাজিয়ে রাখা হয়েছে। কাচেঁর প্লেট গ্লাস হাতে অলক উঠে আসলো ছাদে। গোলাপ বেলী ফুলের বাগানের পাশে সন্ধার ভোজন ভালো জমে উঠলো। রোমেল দেওয়ান আসাদ হক ও নামাজ পড়ে ছাদে যোগ হলেন। রাজবীর বন্ধুদের দলটাও এসে বসলো। প্রাথমিক কথাবার্তা হলো। কেমন ঘুরলো তাও জিজ্ঞাসাবাদ করলো। খাবারের মাঝে দু একবার চখাচোখি হলো। রাজবীর ইশিতার। সবার সাথে হাসি গল্পে আড্ডায় খুব ভালো একটা সন্ধ্যা পার হলো
সবার। ইস্ কি সুন্দর সময় থেমে যাক মুহুর্তটা। চারদিকটা আজ সুধু ফুলের সুভাষে ভরপুর নয় ভালোবাসার ঘ্রাণে ও ভরপুর আজ তা।
চলবে
জান্নাত রেশমি