মায়ায় ভরা সেই দিনে
অন্তিম পর্ব
বিয়ের পরের দিন বৌ ভাতের অনুষ্ঠান করা হলো। বিশাল আয়োজনে গ্রামের লোকদের খাওয়ানো হলো। ইশিতাদের বাড়ি থেকে আসা মেহমানদের চমৎকার ভাবে অতিথি আপ্যায়ন করা হলো। রাজবীরের ব্যাস্ত দিন কাটলো। বিকেলে রাজবীর ইশিতা আর বন্ধুদের দলটা ইশিতাদের বাড়ি রওনা হলো। এটাই নাকি নিয়ম। দুই দিন থেকে আনন্দে কাটিয়ে ইশিতা বন্ধুদের নিয়ে গ্রামে ফিরলো রাজবীর।
বন্ধুদের সবাই বাড়ি ফিরবে তাদের তবে রাজবীরের অনুরোধে আরো দুটো দিন থেকে যেতে হলো ওদের। বড় দেখে ইঞ্জিন চালিত টলার ভাড়া করা হলো। রাজবীর ইশিতা বন্ধুদের সবাই বড় আপা ছোট আপা বড় দুলাভাই ছোট দুলাভাই আর সাথে তাদের বাচ্চারা নৌ ভ্রমনে বের হলো সবাই। বিরিয়ানি পাস্তা পায়েস শুকনা খাবার কোক চকলেট চিপস্ সব কিছু নিয়ে তারা পিকনিকে বের হলো।
ইশিতার গায়ে কালো জামদানি শাড়ি। চুল খোপা করা। ছোট করে কাটা চুল উড়ছে বাতাসে। রাজবীর লুকিয়ে চুরিয়ে দেখছে তাকে। বড় বোনদের সামনে র্নিলজ্জের মতো তাকিয়ে থাকা যায় নাকি?
হালকা বাতাসে মন ছুঁয়ে দিচ্ছে। নদীর ঢেউয়ে মন খুশিতে দুলছে। ভটভট শব্দে এগিয়ে চলেছে টলার পদ্মার দিকে। নদীতে অহরহ নৌ যান চলাচল অব্যাহত আছে। রোদের তাপ অত গায়ে লাগছে না। কখনও সূর্য উঁকি মারছে আবার কখনও মেঘের ভেলা উড়ে এসে সূর্য কে ঢেকে দিচ্ছে। মেঘ সূর্যের খেলা চলছে ক্রমবর্ধণ। ইশিতা রাজবীর সামান্য দুরত্বে বসা। ইশিতা চারপাশের পরিবেশ দেখে সরল মিষ্টি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে রাজবীরের দিকে তাকালো। রুমঝুম কন্ঠে বললো।আজকের ওয়েদার কি সুন্দর দেখেছেন?
টলারের ভটভট শব্দে ইশিতার কথা স্পষ্ট শুনতে পেলো না রাজবীর তাই তার দিকে ঝুঁকে এলো কিছুটা বললো কিছু বলেছো শুনতে পাইনি তো শব্দ প্রচুর।
ইশিতা চারপাশে ছবির মতো সুন্দর দৃশ্যর দিকে ইশারা করলো। জোড় আওয়াজে বললো বলছিলাম ওয়েদার খুব সুন্দর।
রাজবীর হেসে সায় জানালো। হ্যা খুব সুন্দর।
আপা দুলাভাইয়ের দলটা রাজবীর ইশিতার দিকে চেয়ে মিটমিটে হাসছে। বন্ধু রোহান কনুইয়ের গুতা মারলো রাজবীরকে। রাজবীর বিরক্ত চোখে তাকালো। বললো গুতাগুতি করছ কেন? রোহান আপাদের দিকে তাকালো। তাদের হাসতে দেখে ওর গাল কান গরম হয়ে এলো। উঠে গিয়ে টলারের মাথায় পিঠ ঘুরিয়ে বসলো। আপা দুলাভাইয়ের দলটা হো হো করে হেসে ফেললো। ইশিতাও ফিক করে হাসলো। ছেলে মানুষের আবার এতো লজ্জা কিসের?
পদ্মা পার হয়ে তারা বাহাদুর পুর নামক স্থানে আসলো। বিরাট বড় মাঠ ছিমছাম গুছানো পরিষ্কার। সেখানে পাটিয়ে বিছিয়ে দুপুরের খাবার সাড়লো তারা। কিছুক্ষন ঘুরেফিরে আবারও টলার যাত্রা করলো উদ্দেশ্য মোহন পুর। নদীর অপর পারে। দুই ঘন্টায় তারা মোহন পুর পৌছালো। সুন্দর একটা পার্ক হয়েছে। যায়গায় যায়গায় খাবারের স্টল বসেছে। তারা সবাই ফুচকা, বার্গার খেলো। আইসক্রিম ও খেলো। ঘুরেফিরে সন্ধ্যার আগেই বাড়ি ফিরলো তারা।
রাতের খাবারের জন্য প্রস্তুতি চলছে। আফিয়া বেগমের সাথে ইশিতাও হাতে হাতে কাজ করে দিচ্ছে। সোমা কাটাকুটি করছে। রান্নার পাট শেষ হলে একে একে সব খাবার ডাইনিং টেবিলে সাজালো ইশিতা। অলক সোমা দুতলায় গিয়ে সবাইকে ডেকে এলো। ইশিতা ছাদের ঘরে উঠে আসলো। ঘুরে এসে সুধু শাড়ি পাল্টে নিচে নেমে এসেছিলো সে। এখন শরীর ঘামে চিটচিটে হয়ে আছে। শাওয়ার না নিয়ে আর টিকা যাচ্ছে না। দ্রুত পায়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো সে। শাওয়ার সেড়ে সাদা রাণী গোলাপি মিশেলের ছাপা ফুলের সুতি শাড়ি পড়লো ইশিতা।ভেজা চুল পাট করে আঁচড়ে পিঠময় ছেড়ে দিলো। ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে মুখে ক্রিম মাখলো। হাত পায়ে লোশন মাখাতে মাখাতে দরজার নব ঘুরিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো রাজবীর। এশার নামাজ শেষে ঘরে ফিরলো সে। ইশিতাকে একপলক দেখে নিয়ে প্রশ্ন ছুড়লো গোসল করেছো?
ইশিতা তাকালো বললো হ্যা করেছি। অস্থির লাগছিলো খুব।
ওহ্ আচ্ছা।
হাত ঘড়ি খুলে বেড সাইট টেবিলে রাখলো রাজবীর। ইশিতা আয়নার সামনে থেকে সড়ে আসলো। রাজবীরকে তাগাদা দিয়ে বললো। বসলেন কেন? নিচে আসুন খাবার খাবেন না
হুু আসছি যাও তুমি
ইশিতা নিচে নেমে আসলো। রাজবীর ডিনার সেড়ে উপরে এসে বুক শেলফ্ থেকে একটা বই নিয়ে বসলো। অনেকক্ষণ হয়ে
গেলো তাও ইশিতার কোন খবর নেই উপরে আসার। আরো আধা ঘন্টা পার করে ঘরে ফিরলো ইশিতা। রাজবীর কঠিন দৃষ্টি হানলো ওর দিকে। ইশিতা ভড়কানো গলায় বললো কি হয়েছে? রেগে আছেন কেন?
এতক্ষণে তোমার আসার সময় হলো রুমে?
সে কি তাহলে কাজ না শেষ করেই এসে পড়বো নাকি?
কাজ করার জন্য সোমা আছে তো নাকি
থাকুক সোমা ও ওর কাজ করবে। আমি বাড়ির বউ আমার কাজ আমি করবো ।
বাহ্ ভালো তো। সুধু বাড়ির কাজ করলেই হবে স্বামীর দিকে তো ধ্যান খেয়াল থাকা লাগবে।
রাজবীরের কন্ঠে অভিমানের আওয়াজ।
ইশিতা লুকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসলো। ইস্ কি রাগ তার। একবারো মুখে বলেনা ভালোবাসার কথা।।
কেন আপনার ধ্যান খেয়াল রাখি না নাকি আমি। এইতো রাখছি। আপনি টি শার্ট টাউজার পরে বই পড়ছেন। এটাই তো খেয়াল রাখা স্বামী কি পড়েছে তাইনা।
রাজবীরের ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসির রেশ ফুটে। আমার সাথে শেয়ানা গিরি? বিছানা ছেড়ে উঠে আসলো সে। ঝট করে ইশিতাকে হাতের বাঁধনে বন্দি করে ফেললো। ইশিতার নরম গালের সাথে তার খোঁচা খোঁচা দাড়ির গাল ঘষে দিলো। ইশিতা চিৎকার করে উঠলো। বখাটে লোক কোথাকার ছাড়ুন আমায় ব্যাথা পাইনা?
রাজবীর হো হো করে হাসলো। ইশিতার মুখে বখাটে ডাকটা বেশ লাগে শুনতে তার। রাজবীর ছাড়লো না উল্টো আরো চেপে বুকের সাথে মিশিয়ে ধরলো ইশিতাকে। বললো আর করবে দুষ্টুমি? এটা তোমার সাজা বুঝেছো।
ইশিতা মুখ ভেংচি কাটলো। বললো আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে এভাবে ধরেছেন কেন?
রাজবীর নির্বিকারভাবে দাড়িয়ে থাকলো। যেনো ইশিতার কথা সে শুনতেই পায়নি।
দম বন্ধ হোক মেরেই ফেলবো তোমাকে
ইস্ সখ কতো তার মেরে ফেলবে। তা আমায় মেরে কি আপনার এক্স কে বিয়ে করে আনবেন
রাজবীর মৃদু হাসলো বললো হ্যা সে তো আসতেই চায়। তুমি যখন থাকবে না তখন সে আসলে দোষের কি?
ইশিতা জ্বলন্ত চোখে তাকালো রাজবীরের দিকে। যান তাহলে তার কাছে
ইশিতা ছটফট করতেই থাকলো ছাড়া পাবার জন্য রাজবীর ছাড়লো না। ইশিতা হাল ছেড়ে দিলো। হতাশ গলায় বললো ছাড়বেন না এভাবেই থাকবেন ঘুমাবেন না।
আজ কোন ঘুম হবে না। স্রেফ ভালোবাসাবাসি হবে। ইশিতা চোখ উল্টে চাইলো। বললো কে কাকে ভালোবাসে। রাজবীর গভীর দৃষ্টি তে তাকালো ইশিতার চোখে। বললো তুমি আমাকে আমি তোমাকে।
ইশিতা মুখ বাঁকালো বললো আমি কখন বললাম আপনাকে ভালোবাসি আমি। রাজবীর ইশিতার কাঁধে মাথা এলিয়ে দিলো বললো বলতে হবে কেন? তোমার চোখের ভাষাই তো বুঝি আমি
ইশিতার কন্ঠে অভিমান ঝড়ে পরে তবে আপনার চোখের ভাষা কেন বুঝিনা আমি
রাজবীর ইশিতার কাঁধ ধরে ওকে সামনের দিকে ফিরালো। কপালে চোখে গালে ঠোঁটে সারা মুখে রাজবীরের তৃষ্ণার্ত অধর বুলিয়ে দিলো। বললো তুমি আমার মনের ভাষা বুঝে নিও। ঠোঁটে লম্বা সময় নিয়ে চুম্বন করলো। বললো ভালোবাসি ইশিতা খুব ভালোবাসি তোমাকে। বুঝ আসার পর থেকে ভালোবাসি তোমায়। কয়েক বছর আগের থেকেই ভালোবাসি তোমায়। ঝাপটে ইশিতার মাথা বুকে চেপে রাখলো রাজবীর। ইশিতার বন্ধ চোখের কোল ঘেষে এক ফোটা সুখের জল গড়িয়ে নামলো। সে আজ ভিষণ খুশি। রাজবীরের পিঠে উভয় হাত শক্ত করে চেপে ধরে ফিসফিসালো আমি আপনাকে আমার সবটা দিয়ে ভালোবাসি রাজবীর। আমার সবটা দিয়ে।
প্রভুর বিস্মিত প্রেমের নেয়ামত পেয়ে পূর্ণতা পেলো এক তৃষ্ণার্ত প্রেমিক যুগলের বক্ষ।
রাজবীরের ঘরে আজ স্বর্গীয় সুখের ছটায় ভরপুর।
________________________
সকালবেলায় নাস্তা সেড়ে ব্যাগপ্যাক সব গুছিয়ে নিলো বন্ধুদের দলটা। রাজবীরের চোখেমুখে বিষন্নতার ছটা। রাজবীরের জীপে করে অলক কাচারি পৌঁছে দিবে ওদের কে সেখান থেকে বাসে করে বাড়ি ফিরবে তারা। সবার থেকে বিদায় নিয়ে জীপে উঠে বসলো তারা।রাজবীর সবার দিকে চাইলো একবার সবাই র্নিজীব ভঙ্গিতে বসা। রাজবীর শক্ত মনের ছেলে হয়েও কেঁদে ফেলার অবস্থা। এবার এক সাথে অনেক দিন থাকায় মায়া পড়ে গেছে।
রাজবীর মলিন গলায় শাসায় ওদেরকে। সাবধানে যাবি। রাস্তায় কোন গন্ডগোল করিসনা কিন্তু।
বন্ধুরা সবাই হেসে সায় জানায়। হাত নেড়ে বিদায় জানায়। আল্লাহ্ হাফেজ।
জীপ দেওয়ান বাড়ির গেইট ছেড়ে দুর পথে মিশে ক্রমেই অদৃশ্য হয়ে যায়।
☆☆ ☆☆
রোমেল দেওয়ানের ডাকে বসার ঘরে আসে রাজবীর। জমি জমা নিয়ে এবারের ব্যাবসার হিসেব নিকেশ করায় ব্যাস্ত সময় কাটায় বাপ ছেলে।
ইশিতা হাফ ছেড়ে বাঁচে। নয়তো রাজবীরের বিষন্ন মুখ দেখতে হতো আজ। রাজবীরের মলিন চেহারা ইশিতার বুকের ভেত জ্বালা ধরায়। ঐ সুদর্শন সুশ্রী মুখটায় সুধু সুন্দর হাসিটাই মানায়। যা দেখে ইশিতার চোখ জুড়ায়।
___________________
সময় বহমান। যা না কারো অপেক্ষা করে না কারো ধার ধারে তা নিজের গতিতে স্রোতের ন্যায় চলমান। এক মাসের কিছু অধিক সময় কেটে গেছে। আজ রাজবীররা সবাই ঢাকা কেরাণীগঞ্জ যাচ্ছে ইশিতাদের বাসায়।আসাদ হক রাবেয়া হক হজ্জে যাবেন কাল ফ্লাইট তাদের।
রাজবীর তাড়া লাগালে ব্যাস্ত পায়ে হেঁটে আসে ইশিতা। গাড়ি চলতে শুরু করে ঢাকার উদ্দেশ্যে। সকাল সকাল রওনা দেবার ধরুন তাড়াতাড়িই পৌঁছে তাদের গাড়ি। বাড়ি এসে আসাদ হক রাবেয়া হক সবাইকে ভিতরে নিয়ে অতিথি আপ্যায়নে ব্যাস্ত হোন। ইশিতা হেঁটৈ হেঁটে তার রুম ছাদ ছাদের টবের ফুলগুলো সব ঘুরে দেখলো মনে হচ্ছে যেনো কত প্রহর পর বাবার বাড়ি এসেছে সে।
রাতে খাবারের পরে সবাই একসাথে আড্ডায় কাটালো অনেকটা সময়। রাজবীর বাহানা দিয়ে উঠে এলো। পিছন পিছন ইশিতা উঠে আসলো দেখতে রাজবীরের কিছু প্রয়োজন কিনা? তবে রুমে পা ফেলে পার পেলো না সে রাজবীর শিকারীর ন্যায় ঝাপটে ধর কোলে তুলে নিলো তাকে। ইশিতা চমকে উঠে রাজবীরের শার্টের কলার ধরলো।
অনেক গল্প হয়েছে এবার একটু আদর করি চলো তোমায়। ইশিতা রাজবীরের দুষ্ট অঙ্গিভঙ্গি দেখে হেসে উঠলো।
আসাদ হক রাবেয়া হককে এয়ারপোর্টে বিদায় জানাতে সবাই এলেন সঙ্গে। ইশিতা মা বাবার বুকের সাথে মিশে থাকলো অনেকক্ষন। রাবেয়া মেয়ের কপালে চুমু একে দিলো। বুঝিয়ে নানান বিষয়ে উপদেশ দিলো। ইশিতা অাড়ালে চোখ মুছে নিলো।
সেদিন ঢাকায়ই থাকলো তারা। এরপরের দিন গ্রামে ফিরে এলো রাজবীররা।
এর পরের দিন গুলো খুবই ব্যাস্ততার সাথে কাটালো রাজবীর ইশিতা। ইশিতা আফিয়া বেগমের সাথে সংসার সামলানো। ছাদের বাগান নিচের ফুল ফলের বাগানে পরিচর্যা করে। অলক সোমার সাথে গল্প করে দিন কেটে যায়। রাজবীর রাজনীতির কাজকর্ম নিয়ে ব্যাস্ত। মিটিং সভা। বড় বড় নেতাদের সাথে আলাপ আলোচনা। ঢাকার দোকানের হিসেব নিকেশ সব মিলিয়ে। সেই রাত একটা কি দুটো বাজে ঘরে ফেরা হয় তার।
ইশিতা বিয়েতে দেয়া শাড়ি গুলোর মধ্যে কচু পাতা রঙের একটা হাফ সিল্ক্ এর শাড়ি পড়েছে। চুল খুব সুন্দর করে খোপা করেছে। বাগানের তাজা সুগন্ধি বেলী ফুলের গাজরা বানিয়ে খোপায় গেঁথেছে। মেকআপ দিয়ে মন মতো সাজিয়েছে নিজেকে। আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে দেখে চমকে উঠে ইশিতা। সে কি বেশি সুন্দর হয়ে গেছে নাকি? বিয়ে হবার পর মেয়েরা সুন্দর হয়ে যায় কথাটা কি তবে সত্যি। কি জানি হবে হয়তো। ঠোঁটে গোলাপি রংয়ের লিপস্টিক দিয়ে রাঙ্গালো। আজ রাজবীর কে চমকে দিবে সে সাথে একটা গুড নিউজ জানাবে।
সাড়ে বারোটা ঘড়িতে। মেইন গেইড খোলার আওয়াজ পেয়ে ইশিতা বুঝলো রাজবীর এসেছে। নিচে মা বাবার সাথে কথাবার্তা সেড়ে ছাদের ঘরে উঠে আসলো রাজবীর। ঘরে আলো নিভানো দেখে মোবাইলের ফ্লাস অন করলো। ইশিতার লজ্জা লাগছে তাই সে পিছু ফিরে দাড়িয়ে রয়েছে। শাড়ি পরা অতিশয় রূপসী মেয়েটিকে দেখে রাজবীরে হার্টবিট মিস করলো। মাথা ঝিমঝিম করছে। চোখ বোধহয় জলসে যাচ্ছে রাজবীরের। সে আবিষ্টের ন্যায় চেয়ে থাকলো । কাছে গিয়ে ঝুঁকে ইশিতার সুন্দর মায়াময় চোখে চোখ রাখলো। ফিসফিসিয়ে বললো মিষ্টি হাসির মেয়ে তোমার পানে চেয়ে আমি দিবা রাত্রি ভুলে। কি জাদু ঐ চোখে কি মায়া ঐ হাসিতে পাগল পাগল হয়ে যাই আমি সময় জ্ঞান ভুলে।
মনের সব ভালোবাসা দিয়ে আবেশিত কন্ঠে ডাকলো রাজবীর ইশিতা
লাজুক চোখে রাজবীরের পানে তাকালো ইশিতা।
রাজবীর তার ঠাণ্ডা শীতল হাত ইশিতার গাল ছুঁইয়ে দিলো আদুরে ভাবে। ঝুঁকে ইশিতার কপালে গাঢ় চুম্বন করলো। ইশিতা রাজবীরকে ঝাপটে ধরে তার বুকে পরে থাকলো। বিয়ের এতো দিন পরেও লজ্জা কমেনি ইশিতার। রাজবীরের স্পর্শে কেঁপে উঠে সে। রাজবীর তা মুগ্ধ নয়নে দেখে।
মেরে ফেলবে নাকি আমায়? রাজবীরের দুষ্ট কন্ঠে ইশিতার লজ্জা দিগুণ হয়।বলে কি বলেন এগুলা।
রাজবীর মৃদু হাসে বলে তা এতো চমৎকার একটা সারপ্রাইজ দেবার কারন টা কি শুনি। ইশিতা উসখুস করতে থাকে। রাজবীর ঘরের আলো জ্বালায়। রুমের তীব্র আলোতে ইশিতার রূপের বাহার বাড়লো বৈ কমলো না।
রাজবীর বিছানায় বসে ইশিতাকে দেখতে লাগলো। কি যে শান্তি তার ভিতরে হচ্ছে। এই মেয়েটাকে রাজবীর ভালোবাসে খুব করে ভালোবাসে। কিছুদিন আগেও এই মেয়েটা তার থেকে কতো দুরে ছিলো আর এখন। এখন এই মিষ্টি ঠোঁটের কোনের খাঁজ যুক্ত হাসির মেয়েটাকে রাজবীর বুকে নিয়ে ঘুমায়। ঘুম ভেঙ্গে এই মেয়েটার সরল চেহারাটা সে দেখতে পায়। ক্লান্ত হয়ে ঘরে ফিরে এই সুন্দর রমণীর চেহারা টা দেখেই তার মনটা প্রশান্তিতে ছেয়ে যায়।
ইশিতা গলা ঝেড়ে এগিয়ে আসলো মিনমিনিয়ে বললো একটা জরুরি কথা আছে আপনার সাথে। রাজবীর তাড়া লাগায় বলে জলদি বলে ফেলো তো এবার আমি শুনছি।
ইশিতার উসখুস যায়না। রাজবীর টেনে তার পাশে বসায় ইশিতাকে।
ইশিতা অস্থির দৃষ্টিতে এদিক সেদিক তাকিয়ে আস্তে করে বলে রাজবীর আপনি বাবা হবেন।
সময়টা যেন রাজবীরের জন্য থমকে গেলো। সে বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। পরক্ষণেই খুশিতে চিৎকার করে উঠলো। কি বলছো ইশিতা। আল্লাহ্ আমি এতো খুশি কোথায় রাখবো। ইশিতা আলতো হেসে রাজবীরের কাঁধে মাথা রাখলো। রাজবীর পাগলের মতো ইশিতার সারা মুখে চুমু খেলো। খুশিতে চোখে পানি এসে গেছে তার। ইশিতা ভালো লাগছে দেখতে লোকটার পাগলামো। পকেট থেকে ফোন বের করে বড় আপা ছোট আপার কাছে ও জানিয়ে দিলো। খুশিতে সেকি চিৎকার তার আপা আমি বাবা হবো।
ঐ পাশের কথা ইশিতা শুনতে পেলো না। ফোন রেখে নিচে ছুটলো মায়ের বাবার ঘরে এসে গরগর করে বলে গেলো আম্মা ইশিতা বলেছে আমি বাবা হবো তুমি দিদা। আফিয়া বেগমের চোখমুখ খুশিতে চকচক করে উঠলো। রোমেল দেওয়ান সবে শুয়ে ছিলেন এরকম একটা খবর শুনে তিনি হতবম্ভ হয়ে রইলেন। এর মধ্যেই তার বড় মেয়ে ফোন করে তাদের কে জানালো। আফিয়া বেগমের হাসি মুখ থেকে সড়ছেই না। রাজবীর আবার উপরে উঠে আসলো। ইশিতা এখনও বসে তবে তার চোখজুড়ে ক্লান্তি। রাজবীর তাকে বুকে টেনে ঘুম পারিয়ে দিলো।
সকাল বেলা পুরো বাড়ি জমজমাট হয়ে উঠলো। এলাকা মিষ্টি বিতরণ করলেন রোমেল দেওয়ান। বড় আপা ছোট আপারা এসেছে। বন্ধুদের দলটা রওনা হয়েছে আসছে তারা। আফিয়া বেগম রান্নাঘরে ব্যাস্ত।
ইশিতা ফ্রেশ হয়ে ঘরেই রয়েছে তার নিচে আসা যাওয়া মানা করে দিয়েছে সবাই। ঘর থেকে ভালো লাগছে না তাই ছাদের খোলা হাওয়ায় এসে দাড়ালো সে। রাজবীর কিছুদিন আগে একটা দোলনা এনে ফিট করেছে ছাদে। ইশিতার দোলনা পছন্দ তাই। দোল খেতে খেতে। ফুল দেখছিলো সে। রাজবীর নিচ থেকে উপরে আসলো ঘরে ইশিতাকে না পেয়ে বের হয়ে আসলো। আস্তে করে এসে পিছন থেকে দোল দিলো। ইশিতা হেসে হাত বাড়িয়ে দিলো। রাজবীর হাত ধরে ইশিতার পাশে বসে পড়লো। চলো নাস্তা করবে। আর একটু পরে যাই।
রাজবীরের বুকে মাথা রেখে পরম শান্তি তে চোখ বুজলো ইশিতা। স্বচ্ছ নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো আজকের দিনটা কি মায়াময় তাইনা।
রাজবীর আলতো হেসে বললো হ্যা আজকের দিনা মায়ায় ভরা।
এক ঝোপ বাতাস উড়ে এসে ছুঁয়ে দিলো তাদের দুজনকে। রাজবীরের হাতের বন্ধন আরো দৃঢ় হলো। রঙ্গীন প্রজাপতিরা তাদের মনের ভেতর দাপিয়ে বেড়াতে থাকলো। সুখটা বড্ড রঙ্গিন হয়ে ধরা দিলো রাজবীর ইশিতার প্রেমময় জীবনে। সুখী হতে এরকম একটা মায়ায় ভরা দিন হলেই হয়।
সমাপ্ত