মায়াবতী পর্ব ৫১+৫২

0
1144

#মায়াবতী
#পর্ব:৫১
#তানিশা সুলতানা

তন্নিকে এই সময় এই বাড়িতে দেখে আশা বেগম কিছু বলতে চাইছিলো। কিন্তু তন্নির চোখে মুখ দেখে বলার সাহস হয় না। বরং এগিয়ে গিয়ে তন্নির গালে হাত দিয়ে জিজ্ঞেস করে
“কি হয়েছে তোমার? এমন দেখাচ্ছে কেনো? চোখে মুখের এমন অবস্থা কেনো?

তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে। কিছু বলতে পারে না। আশা বেগম অর্ণব আর অথৈয়ের দিকে তাকায়। ওদেরও মুখ থমথমে।

” কি হয়েছে তোদের? মন খারাপ কেন সবার?

তন্নি বলে ওঠে
“আন্টি আমি কয়েকদিন আপনাদের সাথে থাকতে চাই। থাকতে দিবেন?
” হ্যাঁ থাকো। এতে পারমিশন নিতে হবে কেনো? কিন্তু তোমার বাবা মা বাড়িতে আসছে কাল?

অর্ণব সোফায় বসতে বসতে বলে
“কালকের টা কাল দেখা যাবে। ওর রেস্ট দরকার। অথৈ রুমে নিয়ে যা ওকে।

অথৈ মাথা নারিয়ে তন্নির হাত ধরে। তন্নি অর্ণবের দিকে এক পলক তাকিয়ে চলে যায় অথৈয়ের দিকে। তন্নি যেতেই আশা বেগম অর্ণবের পাশে বসে। কাঁধে হাত রাখে অর্ণবের। অর্ণব মায়ের বুকে মাথা রাখে। দুই হাতে মাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
” মাম্মা আমি মায়াবতী অসুস্থ। ডাক্তার ধারণা করছে তার ক্যান্সার হয়েছে। গতকাল রিপোর্ট বের হবে। আমি কি করবো মাম্মা?

আশা বেগম চমকে ওঠে। বুকটা কেঁপে ওঠে তার। এইটুকু মেয়ের মহামারী অসুখ।
“আব্বা কি বলছিস তুই?
অর্ণব মায়ের হাত ধরে কেঁদে ফেলে
” মাম্মা দোয়া করো আমার মায়াবতীর যেনো কিছু না হয়। আমি বাঁচবো না ওকে ছাড়া। আজকে ওর মুখটা দেখেই আমার পৃথিবী থেমে যাচ্ছে। ওর কিছু হলে বাঁচাতে পারবে না আমাকে। আমাদের বাঁচাও মাম্মা। আমরা মরতে চাই না। কদিন হলো বলো দুনিয়াতে এসেছি?

আশা বেগমের চোখেও পানি চলে আসে। ছেলেকে শান্তনা দেওয়ার ভাষা নেই তার। কিছুই বলতে পারছে না সে। শুধু হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ছেলের মাথায়। এই মেয়েটার কিছু হলে তার ছেলে মেয়ে বাঁচবে না এটা সে আগেই বুঝে গেছে।

“আব্বা কাঁদিস না। তোর মায়াবতীর কিছুই হবে না। আল্লাহ আমাদের সহায় হবে।

__

তন্নি শুয়ে আছে। মাথায় চিনচিনে ব্যাথা করছে। এতোদিন সে ভয় পায় নি। ভেবেছে এমনিতেই শরীর খারাপ। কিন্তু এখন অর্ণব আর অথৈয়ের মুখ দেখে সে ভয় পাচ্ছে। মরে যাওয়ার ভয়টা তাকে জেঁকে ধরেছে। প্রতি সেকেন্ডে মনে হচ্ছে এই বুঝি নিশ্বাসটা বেরিয়ে যাবে। আজকে একটা জিনিস খেয়াল করলো তার হাত পায়ের রগ গুলো নীল হয়ে গেছে।
অথৈ জানালার গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। তন্নির সাথে ভালো করে কথা বলছে না সে।
” অথৈ

অথৈ চমকে তাকায় তন্নির দিকে। চোখ দুটো তার ছলছলে। হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে দৌড়ে তন্নির কাছে আসে
“কিছু বলবি? খারাপ লাগছে?

তন্নি অথৈয়ের হাত ধরে
” কাঁদছিস কেনো? আমি ঠিক আছি তো। বিশ্বাস কর আমার খুব বেশি খারাপ লাগছে না। তুই প্লিজ কাঁদিস না।
ডাক্তার কি বলেছে আমি বাঁচবো না?
উনি মিথ্যে বলেছে। আমি বাঁচবো। আমার কিচ্ছু হবে না।
অথৈ তন্নিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে ফেলে।
কাঁদতে কাঁদতে বলে
“তোর যদি দুইটা কিডনি বাদ হয়ে যায়। আমি আমার কিডনি দিয়ে দিবো তোকে। তোর শরীরে যদি র*ক্ত না থাকে আমি আমার অর্ধেক র*ক্ত দিয়ে দিবো। আমি তোর কিচ্ছু হতে দিবো না। তোকে সুস্থ করে তুলবোই আমি। তোকে ছাড়া আমি বাঁ*চ*বো না তন্নি।

তন্নি অথৈয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দেয়। তারও কান্না পাচ্ছে। তবুও ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকে রেখেছে। সে কাঁদলে অথৈ আরও ভেঙে পড়বে। তাকে শক্ত থাকতে হবে।

পরের দিন তারেক দেশে আসে। অর্ণব তাকে এয়ারপোর্টে রিসিভ করতে যায়। আসার সময় দুজন মিলে রিপোর্ট আনবে তন্নির। অর্ণব সবটা জানিয়েছে তারেককে। তারেক বিশ্বাসই করতে পারছে না। যাকে ভালো রাখার জন্য দেশ ছাড়লো সেই ভালো নেই?
হাসপাতালের রিসিপশনে বসে আছে দুজন। কারো মুখে কোনো কথা নেই।
ডাক্তার রিপোর্ট চেক করছে। চেক করা শেষেই হাতে আসবে।
অর্ণব তাকায় এক পলক তারেকের দিকে। মুখটা তার শুকনো। কপালে চিন্তার ছাপ। অর্ণব ওনার কাঁধে হাত রাখে।
” বাবা কিছুই হবে না। ভরসা রাখুন প্লিজ।

তখনই ডাক্তারের চেম্বার থেকে ডাক আসে। আল্লাহ নাম নিয়ে ভেতরে ঢোকে দুজন। ডাক্তার রিজুয়ান দুই হাতে মাথা চেপে বসে আছে। তার সামনে রাখা কয়েকটা রিপোর্ট। সব গুলোই দেখা শেষ তার।
অর্ণব চেয়ার টেনে বসে পড়ে। তার হাত পা কাঁপছে।
“ডাক্তার
ডাক্তার তাকায় অর্ণবের দিকে। তারেককে চোখের ইশারায় বসতে বলে। তারেকও বসে পড়ে।
ডাক্তার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলতে থাকে
” তন্নির মাথায় দীর্ঘ বার আঘাত পেতে পেতে সেখানে কালো হয়ে রক্ত জমাট বেঁধে গেছে। এবং সেটা পঁচতে শুরু করে দিয়েছে। সেখান থেকে ক্যান্সারের উৎপত্তি। সে এখনো চলতে পারছে এটা বড় ভাগ্যের জোরে।

স্তব্ধ হয়ে যায় অর্ণব। দুই কান দিয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছে তার। মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছে। চোখ খুললেই স্বপ্ন ভেঙে যাবে।
তারেক কাঁপছে। তার এইটুকুনি মেয়ের শরীরে এতোবড় রোগ বাসা বেঁধেছে? কি করবে সে?
সে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে
“আমার শরীর থেকে যা যা লাগে সব নিয়ে আমার মেয়েকে বাঁচিয়ে দিন ডাক্তার। যত টাকা লাগে আমি দিবো।

রিজুয়ান তাচ্ছিল্য হাসে।
” আঘাত তো আর একা একা পায় নি? আর পেলেও ডাক্তার কেনো দেখান নি? এতো কেয়ারলেস বাবা আপনি? মেয়ে এতোদিন যাবত অসুস্থ সেটা খেয়ালই করেন নি? কেমন বাবা আপনি? মেয়ের প্রতি কোনো দায়িত্ব নেই?

তারেক মাথা নিচু করে কাঁদতে থাকে। কি জবাব দেবে সে?
অর্ণব বলে ওঠে
“আমরা ওকে বিদেশে নিয়ে যাবো?
” হাসপাতালে ভর্তি করুন। বিদেশে যেতে হলে বলবো আমরা।

__

ডাক্তারের চেম্বার থেকে বেরিয়ে অর্ণব তারেককে কিছু না বলে চলে যায় উল্টো দিকে। গাড়ি রেখে দৌড়েই চলে যায় সে। তারেক ডাকতে গিয়ে পারে না।
অর্ণব নিধির বাড়ির সামনে এসে থামে। হাসপাতাল থেকে বেশি দূরে না বাড়িটা।
নিধি বাড়ির সামনের রাস্তায় কয়েকজনের সাথে কথা বলছিলো।
অর্ণব নিধির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। নিধি চমকে ওঠে। এলোমেলো অর্ণবকে সে আগে কখনো দেখে নি। দুই চোখ ভর্তি পানি টলমল করছে অর্ণবের।
“তুমি এখানে?

অর্ণব নিধির পা জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। স্তব্ধ হয়ে যায় নিধি সহ আশেপাশের সবাই।

অর্ণব কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে
” আমার তন্নি কখনো কোনো পাপ করে নি। আমি করেছি। হয়ত তোমাকে ঠকিয়েছি আমি। তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও নিধি। আমার পাপের জন্য আমার তন্নি অসুস্থ। আমাকে ক্ষমা করো নিধি। আমার তন্নিকে বাঁচিয়ে দাও। তাকে কোনো অভিশাপ দিও না।

নিধির চোখে পানি চলে আসে। সে অর্ণবকে ধরে দাঁড় করায়। দুই হাতে চোখের পানি মুছে দেয়
“তুমিও কোনো পাপ করে নি অর্ণব। তোমার তন্নির কিচ্ছু হবে না।আমি অভিশাপ দেয় নি।

অর্ণব নিধির হাত কপালে ঠেকিয়ে কাঁদতে থাকে।
” আমার তন্নি ভালো নেই৷ কালকে তাকে হাসপাতালে এডমিন করাতে হবে। দোয়া করো আমার তন্নির জন্য। আমি ওকে ছাড়া বাঁচবো না।

আশেপাশের সবার চোখে পানি চলে আসে। মেয়েটা কতো লাকী। তার জন্য একটা ছেলে এইভাবে কান্না করে দোয়া চাইছে৷ তার তন্নি ভালো না হয়ে যাবে কোথায়?
এতো ভালোবাসা কখনেই তন্নিকে যেতে দিবে না। অর্ণব তার ভালোবাসা দিয়েই ভালো করে তুলবে তার তন্নিকে।

“আমি দোয়া করবো অর্ণব। তাহাজ্জুদ পড়বো তন্নির জন্য। তোমার তন্নি তোমাকে একা করে কোথাও যাবে না। আমি কালকে দেখে আসবো তন্নিকে। তুমি কান্না করিও না। আল্লাহ এতোটা নিষ্ঠুর হবে না। ভরসা রাখো।

তন্নি বাবার কোলে মাথা রেখে গুটিশুটি মেরে বসে আছে। তন্নিকে দেখতে চৌধুরী বাড়িতেই এসেছে তারেক। ইতিও এসে খবর পেয়ে। তারেক তাকে বলেছে তন্নির সমস্যার কথা। সেই থেকে ইতি অস্থির হয়ে আছে। ছোট বেলা থেকে কম আঘাত করে নি তন্নির মাথায়। একবার পর একটা আঘাত করেছে। এবং কড়া ভয় দেখিয়েছে যাতে বাবার কাছে না বলে। সেই আঘাতেই তন্নি আজকে ম*রার পথে। সবটার জন্য দায়ী ইতি বেগম। মা সে কখনোই হয়ে উঠতে পারে নি। চেষ্টাও করে নি। মানুষও হতে পারে নি তিনি।
মানুষ হলে কখনোই এভাবে আঘাত করতে পারতো না?

তন্নি বাবার বুক থেকে মাথা তুলে বাবার দিকে তাকিয়ে বলে
” আমি আর কোনো কিছুতেই শান্তি পাই না বাবা। তোমার বুকের মধ্যেও শান্তি পাচ্ছি না। আমাকে একটু শান্তি এনে দাও না বাবা। আমি যে বড্ড ক্লান্ত।

অথৈ তন্নির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলো। তন্নির কথা শুনে চিৎকার করে কেঁদে ওঠে। সে সহ্য করতে পারছে না। তেড়ে যায় ইতি বেগমের দিকে। আজকে তাকে জবাব দিতে হবে।

চলবে

।#মায়াবতী
#পর্ব:৫২
#তানিশা সুলতানা

অথৈ ইতি বেগমকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই অর্ণব অথৈয়ের হাত ধরে। ইশারায় থামতে বলে। তন্নির সামনে বলা ঠিক হবে না। ইতি বেগম আঁচলে মুখ লুকিয়ে বেরিয়ে যায় এই বাড়ি থেকে। এখানে সে থাকতে পারবে না। কি জবাব দেবে সবার? জবাব দেওয়ার মুখ আছে তার?
তাছাড়া তারেক তার দিকে মুখ তুলে তাকাচ্ছেও না।

বাইরে থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ ভেসে আসে। চিৎকার করে কাঁদছে। সবাই চমকে ওঠে। তন্নি মাথা উঁচু করে শোনার চেষ্টা করে। আশা বেগম জানালা দিয়ল উঁকি দিয়ে দেখে পাশের বাসার একজন মারা গেছে।

পাশের বাসার একটা মহিলা মা*রা গেছে। কিডনিতে পাথর হয়েছিলো তার। চিকিৎসার অভাবে সে মা*রা গেলো। ছোট একটা মেয়ে তার। পাঁচ কি ছয় বছরের হবে৷ ওই বাড়ির কান্না শব্দ অর্ণবদের বাড়িতে আসছে। আশা বেগম আর আর্থি ছুটে চলে যায় দেখতে। তন্নিও দাঁড়িয়ে যায়। তারেক প্রশ্ন করে
“কোথাও যাবে?
” আমি ম*রা দেখতে যাবো।
বলেই হাঁটতে থাকে। অর্ণব আর অথৈ পেছন পেছন যেতে থাকে।
মরা বাড়িতে গিয়ে তন্নি মহিলাটির লাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। কি সুন্দর ঘুমিয়ে আছে। গলা ওবদি চাদর টেনে দেওয়া তার। চেহারা জ্বল জ্বল করছে। পাশেই তার স্বামী বাবা মা কাঁদছে। বাচ্চাটা খাটিয়া ধরে বসে আছে। তন্নির নিজের ছোট বেলার কথা মনে পড়ে যায়। মায়ের কথা মনে পড়তে থাকে।
সেও তো এই বয়সী ছিলো। এভাবেই তার মা চলে গেছিলো তাকে একা করে। এইভাবেই সেই দিন তাদের বাড়িতে ভিড় জমেছে। নানা নানু কাঁদতে-কাঁদতে এসে পড়েছিলো। তারেক তাকে বুকে জড়িয়ে কাঁদছিলো।
মাথার চিনচিন ব্যাথাটা বাড়তে থাকে তন্নির। হাত বাড়িয়ে অর্ণবের হাতটা শক্ত করে ধরে
“এই লোকটা আবার বিয়ে করবে তাই না অর্ণব? ওই বচ্চাটার সৎ মা আসবে। আমারই মতো তাকে খুব মা*রবে। তারপর আমারই মতো একদিন সে অসুস্থ হয়ে যাবে।
অর্ণব তন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
” বাড়ি চলে মায়াবতী। এখানে থাকতে হবে না।
তন্নি অর্ণবের দিকে তাকায়। তারপর অথৈয়ের দিকে তাকায়।
“ওনার তো বড় অসুখ হয় নি। অনেকেই তো আছে কিডনিতে পাথর হলে চিকিৎসা দিলে ঠিক হয়ে যায়। উনি কেনো হলে না?
অথৈ তন্নিকে এক হাতে জড়িয়ে নিয়ে বলে
” জন্ম মৃ*ত্যু আল্লাহ হাতে। কখন কার মৃ*ত্যু চলে আসবে কেউ বলতে পারে না। যার হায়াত নেই সে শুকনো পথে পড়ে গিয়েও মা*রা যাবে।

তন্নি আর কথা বলে না। আবারও মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে মহিলাটিকে। আর মনে মনে ভাবতে থাকে “তারও কি হায়াত শেষ? সেও কি পৃথিবীতে বেশিদিন থাকতে পারবে না? অর্ণবকে নিজের করে পাওয়া হবে না? অনি তাতান ওদের নিয়ে সুখের সংসার করা হবে না? অথৈয়ের মুখটা দেখা হবে না? জীবনটা এখানেই শেষ?”

ভাবতে ভাবতে ভয় ঢুকে যায় তন্নির মনে। শরীর ঘেমে যায়। বুক কাঁপতে থাকে। অস্থির হয়ে ওঠে সে। চোখ দুটো মেলে রাখতে পারছে না। তন্নির অবস্থা দেখে অর্ণব ঘাবড়ে যায়। দুই হাতে জড়িয়ে নেয় তন্নিকে। শরীর ঢলে পড়ছে তন্নির। অর্ণব দ্রুত কোলে তুলে নেয় তন্নিকে। অথৈ কেঁদে ফেলে। আর্থি আর আশা বেগম ওদের দেখতে পেয়ে দৌড়ে আসে। তন্নিকে নিয়ে চলে যায়।

অর্ণব তন্নিকে বাড়িতে না নিয়ে সোজা হাসপাতালে নিয়ে যায়। এখনো সেন্স ফেরেনি তন্নির। আশা বেগম গাড়িতে তন্নির হাত পা ডলে দিচ্ছে। অথৈ মাথা হাতিয়ে দিচ্ছে। আর্থি বাতাস দিচ্ছে। এসিতেও তন্নির শরীরের ঘাম জুড়াচ্ছে না।
আশা কাঁদতে কাঁদতে একটাই কথা বলছে
“ওকে কেনো ওই বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলি?

রিজুয়ান নিজের চেম্বারে বসে তন্নিকে নিয়ে ভাবতেছিলো। তন্নিকে সে চিনে। বহুবছর আগে দেখেছিলো একটা স্কুলে। সেখান থেকেই তার ভালো লেগেছিলো তন্নিকে।
তারপর কাজের সূত্রে তাকে চলে যেতে হয়েছিলো চিটাগং। সেখান থেকে ফিরেছে বছর হলো। তন্নিকে খুঁজেছে সে। কিন্তু পায় নি। এমন একটা সময় তন্নিকে পেলো সে যখন তার বাঁচা মরা দুটোই আল্লাহর হাতে। তারওপর সে বিবাহিত।
রিজুয়ান মুচকি হাসে।
” তোমাকে আমি সুস্থ করবো তন্নি। আমার সবটা দিয়ে হলেও তোমায় আমি ভালো করে তুলবো।

বিরবির করে বলে রিজুয়ান। তখনই একজন ওয়ার্ডবয় এসে বলে
“স্যার তন্নি নামের মেয়েটাকে হাসপাতালে আনা হয়েছে।

কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে রিজুয়ানের। সে দ্রুত বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।

তন্নিকে চেকআপ করছে রিজুয়ান। অর্ণব অথৈ আর্থি আশা সবাই বাইরে বসে আছে৷ অর্ণব কেমন পাথরের মতো বসে আছে। দৃষ্টি তার ফ্লোরের দিকে। আশা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়
অর্ণব ফ্লোরে দৃষ্টি রেখেই শক্ত গলায় বলে
“আমি যদি ভুল কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি তুমি অথৈ আর আর্থিকে নিয়ে বেঁচে থেকো মাম্মা। পাপার খেয়াল রেখো। আমার প্রতি কোনো অভিযোগ রেখো না। আর আমার মায়াবতীর পাশে আমাকে কবর দিও।

আশা ছেলেকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। অথৈ আর্থি ভাইয়ের দুই পা জড়িয়ে কাঁদতে থাকে। অর্ণব ওদের শান্তনা দেয় না। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় না। কাঁদেও না। চুপচাপ মাথা নিচু করে থাকে।

_
তন্নিকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। রিজুয়ান পাশেই বসে আছে। নার্স চলে গেছে। এক্সট্রা একটা কেবিনে রাখা হয়েছে তন্নিকে।
যখন তখন সেন্স ফিরে আসবে তন্নির। রিজুয়ান দেখছে তন্নিকে। সে তার মাকেও কল করেছে। একটু পরে সে আসবে তন্নিকে দেখতে।
মা রিজুয়ানের বেস্টফ্রেন্ড। প্রথম থেকেই তন্নির কথা মাকে বলতো সে। তার মায়ের তন্নিকে দেখার খুব শখ।

তন্নি পিটপিট করে চোখ খুলে। মাথার ওপর সাদা দেয়াল দেখে বুঝতে পারে এটা হাসপাতাল।
তন্নি আশেপাশে তাকায়। রিজুয়ানকে দেখে আলতো হাসার চেষ্টা করে। রিজুয়ানও হাসে।
” এখন কেমন লাগছে?

তন্নি জবাব দেয়। খানিকটা সময় নিয়ে রিজুয়ানকে দেখে। তারপর বলে
“আমাকে বাঁচিয়ে দিন না প্লিজ। আমি মৃত্যুকে ভীষণ ভয় পাই৷ আমি বাঁচতে চাই৷ আমার অর্ণবের সাথে কিছুদিন থাকতে চাই।

রিজুয়ান তন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
” তোমার কিচ্ছু হয় নি। একদম ঠিক আছো তুমি। ওই জাস্ট একটু মাথায় পবলেম হইছে। কিছুদিন পরে এটা ঠিক হয়ে যাবে।
এতো ভেঙে পড়েছে কেনো তুমি? বোকা মেয়ে

তন্নি হাসতে গিয়েও হাসে না।
“তাহলে অর্ণব আর অথৈ কাঁদছে কেনো?

রিজুয়ান দীর্ঘ শ্বাস ফেলে
” ভীষণ ভালোবাসে তো তেমায়। তাই তোমার অসুস্থতা মেনে নিতে পারছে না।

তন্নি আর কিছু বলে না। মনকে বোঝাতে থাকে। রিজুয়ান তন্নির স্যালাইন দেখে বেরিয়ে যায়।

অর্ণবের সামনে দাঁড়িয়ে কড়া গলায় বলে
“তন্নি অসুস্থ। একজন পেশেন্ট মনের জোর পায় তার পরিবারের থেকে। কিন্তু আপনারা? অলওয়েজ তার মনোবল দুর্বল করে দিচ্ছেন। সে ভয় পাচ্ছে। ইমোশন লুকাতে না পারলে তন্নিকে রেখে আপনারা চলে যায়।

অর্ণব দাঁড়িয়ে যায়।
” মায়াবতী ঠিক আছে?

“তাকে ঠিক থাকতে দিচ্ছেন আপনারা? মরা কান্না জুড়ে দিয়েছেন। আপনারা বাসায় গিয়ে কাঁদুন দয়া করে।

বলেই রিজুয়ান চলে যায়। অর্ণব তন্নির কেবিনের দিকে যায়। অথৈ চোখের পানি মুছে নেয়। তন্নির সামনে একদম কাঁদা যাবে না। কিছুতেই না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here