মায়াবতী পর্ব ৪৭+৪৮

0
844

#মায়াবতী
#পর্ব:৪৭
#তানিশা সুলতানা

অথৈ কলেজের মাঠে বসে আছে। কোথাও যাওয়ার নেই আজকে তার। তন্নিকেও বলে নি। ভেবেছিলো সাগরের সাথে আলাদা সময় কাটাবে। সেখানে তন্নিকে রাখবে না। কিন্তু এখন বুঝতে পারছে ভুল করেছে। কারণ সাগর তার কোনো খোঁজই নিচ্ছে না। নিশ্চয় তার সময় নেই। সে আসবে না।
অথৈয়ের চোখে পানি চলে আসে। দুপুর গড়িয়ে গেছে। ঘড়ির কাটায় চারটা ছুঁই ছুঁই। আর কতো অপেক্ষা করবে? সেই একটা থেকে এখানে এভাবে বসে আছে অথৈ। দুপুরের কড়া রোদ তার ওপর দিয়ে বয়ে গেছে।
আজকে কলেজ বন্ধ থাকায় কেউ নেই কলেজে। এইদিকের রাস্তায় মানুষ জনও দেখা যাচ্ছে না।
অথৈ উঠে দাঁড়ায়। মাথাটা ঘুরে যায়। দুই হাতে মাথা চেপে চোখ বন্ধ করে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে। সকালে কিছু খায় নি। এখন বিকেল প্রায়। পেটে কিছু না থাকাতে মাথাটা ঘুরে গেছে।
খানিকটা স্বাভাবিক হওয়ার পরে ব্যাগটা চেপে ধরে হাঁটতে শুরু করে। তখনই ফোন বেজে ওঠে অথৈয়ের।
ভেবেছিলো তন্নি কল দিয়েছে। কিন্তু ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখে সাগর কল দিয়েছে। বরাবরের মতো হাসি ফুটে ওঠে না অথৈয়ের ঠোঁটে। ফোঁস করে শ্বাস টেনে কল রিসিভ করতে যায় তখনই কল কেটে যায়।
মিসকল কেনো দিলো বুঝতে পারছে না অথৈ। ফোনে কি টাকা নেই?
অথৈ কি কল ব্যাক করবে?
অথৈ সাগরের নাম্বারে ডায়াল করতে যাবে তখনই মেসেজ আসে। তাতে লিখা ছিলো “মেইন রোডে আসো”
অথৈ বড়বড় পা ফেলে হাঁটতে থাকে। মেইন রোডে পা ফেলতেই দেখতে পায় সাগর বাইকে বসে আছে। মাথায় তার কালো হেলমেট। অথৈয়ের ঠোঁটের কোণে এবার হাসি ফুটে। সে এগিয়ে যায়।
সাগরের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। সাগর একটা কুলফি আইসক্রিম অথৈয়ের দিকে বাড়িয়ে দেয়
“নাওওও এটা তোমার। খাও
অপেক্ষা করালাম এতোখন

অথৈ মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
” আমি এটা খাবো না।

সাগর মজা করে বলে

“এ বাবা কেনো খাবে না? যে গরম পড়েছে। খেয়ে নাও।
অথৈ তাকায় না পর্যন্ত। সাগর আইসক্রিম তার বন্ধুর হাতে দিয়ে দেয়।
তারপর হেলমেট খুলে চুল ঠিক করে তাকায় অথৈয়ের দিকে। বাইকের সামনে থাকা একটা শপিং ব্যাগ থেকে কিছু ফুল বের করে তা অথৈয়ের সামনে এগিয়ে দিয়ে বলে
” এটা তোমার জন্য।

অথৈ খুশি আত্নহারা হয়ে ফুলটা নিয়ে নেয়।
“আমার জন্য এনেছেন?
” নাহহহ
অন্য একটা মেয়ের জন্য এনেছিলাম কিন্তু দেখা হয়ে গেলো তোমার সাথে। তাই তোমাকে দিলাম।

অথৈ ভেংচি কাটে।
সাগর অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে বলে
“তুমি খুশি তো অথৈ?
” আপনি আমার সাথে দুমিনিট কথা বললেই আমি খুশি হয়ে যাই।
সাগর অথৈয়ের গাল টেনে দেয়।
“বাসায় যাবে? না কি আমার সাথে ঘুরবে?
অথৈ মাথা নিচু করে ফেলে ভারি লজ্জা লাগছে তার। কি বলবে সে? কিভাবে বলবে আপনার সাথে ঘুরতে যেতে চাচ্ছি?
সাগরের বন্ধু দিপু বলে
” ও তোর সাথে ঘুরতে চাচ্ছে। যা ওকে নিয়ে।
এই কথাতে আরও লজ্জা পেয়ে যায় অথৈ। সাগর হেসে ফেলে
“তাই না কি অথৈ?
অথৈ পেছনে ঘুরে ফেলে। সাগর শব্দ করে হেসে ফেলে।
” দিপু তাহলে বন্ধু যা তুই আজকে। কালকে কাজে যাবোনি।

দিপু চলে যায়। সাগর মাথায় হেলমেট পড়ে নেয়।
“ওঠো
অথৈ সাগরের কাঁধে হাত রেখে উঠে বসে। আজকে তার খুশির দিন। আজকে সে ভীষণ খুশি। এতোটা খুশি লিখা ছিলো তার কপালে? এতোটাও সুখ ছিলো?
” একটা কাপল পিক তুলবেন আমার সাথে? কভার দিতাম।

অথৈ রিনরিনিয়ে বলে। ভেবেছিলো সাগর শুনতে পায় নি। কিন্তু সাগর শুনে ফেলে৷
“ঠিক আছে।
অবাকের ওপর অবাক হয়ে যায় অথৈ। মানুষটা এতো ভালো হয়ে গেছে?
এরকম বার্থডে প্রতিদিন হলে মন্দ হতো না।

__
অফিস শেষে অফিসের ব্যাগ কাঁধে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাগর। বাবার জন্য দাঁড়িয়ে আছে সে। অনেক দিন বাবার সাথে আড্ডা দেওয়া হয় না। দুষ্টুমি করা হয় না। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে বাবার কাঁধে মাথা রেখে বাসায় ফেরে সে। কথা বলার এনার্জি থাকে না। আনোয়ার ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে হতাশ হয়৷ মাঝেমধ্যে বলে ” বাবা তোমাকে আর অফিসে আসতে হবে না”
কিন্তু অর্ণব শোনে না। সে কাজ করবেই।

আনোয়ার আজকে হিসেব শেষ করে বেরোবে বলে দেরি হচ্ছে।
অর্ণব অফিসের পাশে বড় গাছটার নিচে বসে। বিকেলের ফুরফুরে হাওয়া বইছে। অর্ণবের ঘামে ভেজা শার্টটা শুকিয়ে দিচ্ছে। শরীর শান্ত হয়ে যাচ্ছে। ভীষণ ভালো লাগছে।
হঠাৎ অর্ণবের সামনে এসে দাঁড়ায় নিধি। অর্ণব নিধির মুখের দিকে তাকায়। জানা আছে অর্ণবের এখনই জিজ্ঞেস করবে “বিয়ে কবে করবে”
নিধি কিছু বলার আগেই অর্ণব বলে ওঠে
“তোমার বয়ফ্রেন্ডের সাথে যে তোমার ভিডিও ভাইরাল হয়েছিলো সেটা আমি এন্ড আমার পাপা দুজনই দেখে ফেলেছি।

নিধি জানতো অর্ণব এটা বলবে৷
নিধি অর্ণবের পাশে বসে বলে
“দোষটা কি তোমার নয় অর্ণব? আমাদের একটা সুন্দর রিলেশন ছিলো। আমরা বিয়ে করবো ভাবছিলাম। তখন তুমি ওই গাইয়া ভুত নেকা বোকা তন্নিকে দেখে আমাকে ভুলে গেলে। নিজের মতামত পাল্টে ফেললে।
আমায় ঠকালে। তুমি চরিত্রহীন অর্ণব।

অর্ণব মুচকি হেসে বলে
“আমি চরিত্রহীন, সাগর প্রেমিক পুরুষ, আমার মায়াবতী নেকা বোকা আর গাইয়া, অথৈ সাহসী, আর তুমি ভালো মানুষ। এটাই তো জীবন নিধিরা নিধি। সবাই যদি একরকম হতো তাহলে মায়াবতী আর নিধিরা নিধির মধ্যে পার্থক্য বুঝবো কি করে?

নিধি দাঁতে দাঁত চেপে তাকায় অর্ণবের দিকে।
” নিধি তুমি আমাকে অপশন হিসেবে রেখেছিলে। আমি যখন তোমায় নিয়ে ভেবে গেছি তখন তুমি আমাকে নিয়ে ভেবেছো?
তোমার জন্য শাড়ি কিনে আমার বোনকে সাথে নিয়ে তোমার সাথে দেখা পর্যন্ত করতে গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু রাতে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গিয়ে সবার গার্লফ্রেন্ডের পিক দিচ্ছিলো তখন দেখলাম সিহাবের গার্লফ্রেন্ড তুমি।
ভীষণ খারাপ লেগেছিলো আমার।
আমার মতো একটা ছেলেকে কেউ অপশন হিসেবে রাখতে পারে এটা জাস্ট ভাবতে পারি নি।

নিধি কথা বলার ভাষা খুঁজে পায় না। সে এক সাথে অনেক গুলো রিলেশন কন্টিনিউ করতো তখন। অর্ণবের বন্ধুর সাথে রিলেশনশীপ এ গিয়েছে এটা সে জানতো না।
সিহাব নিধিকে ছেড়েছে আরও অনেক আগে। এবং সিহাব এখন বিয়েও করে নিয়েছে। সিহাব ছেড়ে দেওয়ার পরে নিধি অর্ণবকে শক্ত করে আকড়ে ধরার চেষ্টা করেছে কিন্তু ততদিনে সব হাতের বাইরে চলে গেছে।

“জীবনে সুখে থাকতে বেশি কিছু লাগে না। একজন ভালোবাসার মানুষ হলেই হয়। কিন্তু তুমি সেই মানুষটা ছিলে না আমার জন্য।
ভালো হয়ে যাও নিধি। বড় হয়েছো। বুঝতে শিখেছো। দুই নৌকায় পা দিয়ে চলা যায় না। একজনকে সময় দাও। একজনকে নিয়ে থাকো। সুখী হবে তুমি।
আল্লাহ তোমাকে অনেক ভালো রাখবে৷
কখনো কোনো দরকার হলে আমায় ডেকো। আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করবো তোমাকে সাহায্য করতে। আফটার অল একটা সময় আমরা বেস্টফ্রেন্ড ছিলাম।

বলেই অর্ণব উঠে যায়। কথাগুলো সে কখনোই বলতে চায় নি নিধিকে। কিন্তু না বলেও উপায় ছিলো না।
নিধি নামের মেয়েটার জন্য অর্ণব নামের ছেলেটার মনের কোথাও একটা একটুখানি খারাপ লাগা কাজ করে।
আল্লাহ মেয়েটার হেদায়েত দান করুক। তাকে ভালো রাখুক। একটু ভালো মানুষ করে দিক। এটাই চায় অর্ণব।

চলবে

#মায়াবতী
#পর্ব:৪৮
#তানিশা সুলতানা

প্রিয় মানুষের থেকে পাওয়া কিছুক্ষণ সময় জীবনের সব থেকে বড় প্রাপ্তি। আজকে অথৈ পেয়েছে সেই সময়। নতুন করে চিনেছে সাগরকে। মানুষটার কেয়ার দেখেছে। হাসি দেখেছে। খুব কাছ থেকে অনুভব করেছে তাকে। এতো এতো চকলেট কিনে দিয়েছে সাগর তাকে। দুজন এক সাথে অনেক অনেক ছবি তুলেছে। ফুসকা খাইয়েছে অথৈকে। আর সর্বশেষ অথৈকে বাড়ির সামনে রেখে গেছে। অথৈ ভীষণ খুশি। এরকম জন্মদিন যেনো বারবার ফিরে আসে।
সে সাগরের সাথে বারবার জন্মদিন পালন করতে চায়। সাগরের সাথে ঘুরতে চায়।
সাগর তার অনেক সাধনার ফসল। অনেক ধৈর্য্যের বিনিময়ে পেয়েছে তাকে। শখের পুরুষ তার। এই শখের পুরুষটাকে জীবন দিয়ে আগলে রাখবে অথৈ।

_

তন্নি ইদানীং তার মধ্যে অদ্ভুত এক লক্ষণ অনুভব করছে। মাথার মাঝখানে তার একটু একটু ব্যাথা করে। খুব বেশি না। সহ্য করার মতো। সারাক্ষণ শুয়ে থাকতে ইচ্ছে হয়। মুখে রুচি চলে গেছে। খেতেই ইচ্ছে করে না। একটু কাজ করলেই হাঁপিয়ে ওঠে। বা একটু হাঁটলেই অস্থির লাগে। আগে তো এমন ছিলো না। একা হাতে কতো কাজ করেছে তন্নি। সারাদিন না খেয়ে থেকেছে তখন তো এরকম হয় নি। তাহলে ইদানীং এমন কেনো হচ্ছে?

সন্ধার আজান দিয়েছে। কিন্তু তন্নির উঠে বসতে ইচ্ছে হচ্ছে না। বাবা আসতে আর খুব বেশি দিন নেই। ইতি বেগম বাড়ি ঘর গোছাচ্ছেন।
তাদের দুঃখের দিন শেষ। তারেক যে অফিসে কাজ করতো সেই অফিসে বাংলাদেশের বড় একটা কোম্পানির বস গিয়েছিলো তন্নির বাবার অফিসে। সেখানে তার কাজ দেখে মুগ্ধ হয়েছে সে। এবং তারেকে বাংলাদেশের এটা জানতে পেরে ভীষণ খুশি হয়েছিলো আর তাকে বাংলাদেশে তার কোম্পানিতে কাজ করার অফার দেয়। ছেলেমেয়ে ছাড়া থাকতে তারেকের ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো। তাই এরকম অফার পেয়ে ভীষণ খুশি হয়ে যায়।

তন্নিকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে ইতি বিরক্ত হয়। ইদানীং কাজ চোর হয়ে যাচ্ছে সে। বাবা বাড়ি আসার কথা শুনেছে আর সাপের পাচ পা দেখে নিয়েছে।
সারাদিন কাজ করতে করতে অস্থির ইতি। ভীষণ রেগেও আছে সে। তারওপর তার ভাই তাকে কল করে বলেছে৷ তারেক বাড়ি ফিরল সমস্ত কিছু তন্নির নামে লিখে দিবে। তামিমকে কিছুই দেবেনা।
তন্নিকে খু*ন করতে ইচ্ছে করছে তার। এই তন্নির জন্য তার ছেলেটা বাবার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত। মায়ের সাথে ম*রে গেলে শান্তিতে থাকতে পারতো ইতি বেগম। কিন্তু মরলো না। ইতি বেগমের সংসারটা নষ্ট করার জন্য এই মেয়ে বেঁচে আছে। এটাই ধারণা দিয়েছে তার ভাই তাকে।

ইতি বেগমের হাতে ঝাড়ু ছিলো। সে ঝাড়ু দিয়ে বারি দেয় তন্নির পিঠে। তন্নি ব্যাথা পেয়ে লাফিয়ে বসে পড়ে। আরও একটা বারি দেয় তন্নির বা পাশের হাতে।
তন্নির চোখে পানি চলে আসে।
তৃতীয় বারি দেওয়ার আগে তন্নি ঝাড়ু ধরে ফেলে। কাঁদতে কাঁদতে জিজ্ঞেস করে
“মা মা*রছো কেনো আমায়?
ইতির রাগ বেড়ে যায়। সে তন্নির চুল মুঠি করে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” তোর বাপ বাড়ি আসছে আর সাপের পাচ পা দেখে নিয়েছিস? কাজ করতে ভুলে গেছিস তাই না? তোকে বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবো আমি?

তন্নি মাথায় ব্যাথা পাচ্ছে। মায়ের হাত থেকে চুল ছাড়ানোর চেষ্টা করতে থাকে।
“মা ছাড়ো প্লিজ। আমি সব কাজ করে দিচ্ছি।

ইতি চুল ছেড়ে দেয়। সাথে সাথে একটা চ*র বসিয়ে দেয় তন্নির গালে। ব্যাথায় গাল দিয়ে ধোঁয়া বেরোতে থাকে৷

” তুই ম*র*লে বাঁচি আমি।

তন্নির দিকে কটমট চোখে তাকিয়ে চলে যায়। তন্নি চোখের পানি মুছে নেয়। আবারও চোখ পানিতে টলমল করে ওঠে। মাথা ঝিমঝিম করছে।
জীবনটা এতো কঠিন কেনো? মানুষের ভালোবাসার এতো দাম?
এই মায়ের জন্য তন্নি জীবনও দিতে পারবে কিন্তু মা? একটু ভালো করে বললেই তন্নি সব কাজ করে দিতো।
তন্নিকে এতোটাই অপছন্দ করে। মরে গেলে বোধহয় একটু শান্তি পেতো।

চোখ মুছে তন্নি রান্নাঘরে যায়। রাতের রান্না হয় নি এখনো।
অর্ণব বাসায় ফিরে অনেক বার কল করে তন্নিকে। কিন্তু কোনো রেসপন্স পায় না। ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায় অর্ণব। মেয়েটা তো কল ধরতে এতো দেরি করে না। তাহলে আজকে কি হলো তার? কোথায় গেলো?

আশা বেগম অর্ণবের জন্য খাবার নিয়ে অর্ণবের রুমে আসে। আজকে তার মন ভালো। ছেলেকে সে খাইয়ে দেবে। কতোদিন খাইয়ে দেওয়া হয় না। ছেলেটার মুখের দিকে তাকানো যায় না। তার লম্বা চওড়া সুদর্শন ছেলেটা ইদানীং মিইয়ে যাচ্ছে। তার গোলগাল ফর্সা মুখখানা খানিকটা কালো হয়ে গেছে।
খুব বেশিই কষ্ট হচ্ছে কি অর্ণবের? তার আদরের বাচ্চার। কাল থেকে স্বামীকে বারণ করে দেবে ছেলেকে অফিসে নিতে। আল্লাহ অনেক দিয়েছে। তার একটা রাজপুত্র বসে বসে খেলে এতো ধনসম্পদ ফুরাবে।
আশা অর্ণবের পাশে গিয়ে বসে৷ অর্ণব মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। আশা বেগম ছেলের মাথায় হাত বুলাতে থাকে।
” আব্বা কাল থেকে তোকে আর অফিসে যেতে হবে না। আল্লাহ আমাদের অনেক দিয়েছে। তুমি তোর জীবনটা রাজার হালে পার করতে পারবি।

অর্ণব মায়ের হাতে চুমু খায়।
“মাম্মা আমার ছেলেমেয়ে? পাপা আমাদের জন্য এতোটা করেছে। আমারও তো উচিত আমার বেবিদের জন্যও কিছু করে রাখা।

আশা ছেলের কথায় মুগ্ধ হয়। কিন্তু মানতে কষ্ট হয়। তার আদরের রাজকুমার কষ্ট করবে?
অর্ণব উঠে বসে।
” খাইয়ে দাও জলদি। তোমার বউমাকে দেখতে যাবো।

আশা কিছু বলে না। চুপচাপ ভাত মেখে তুলে ধরে ছেলের মুখের সামনে।

রাত আটার দিকে অর্ণব তন্নির বাড়ির সামনে পৌঁছায়। অনেক দিন পরে আসলো এই দিকে। মনে হচ্ছে রাস্তাঘাট কেমন পাল্টে গেছে। সত্যিই পাল্টে গেছে। গাছপালা কেটে ফেলা হয়েছে। রাস্তার কাজ চলছে। তাই অচেনা অচেনা লাগছে।

তামিমকে দেখতে পায় দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে। ওদের বাড়ির পাশেই দোকান। অর্ণব তামিমের কাছে যায়।
অর্ণবকে দেখেই তামিম বলে ওঠে
“আমার নাম তামিম।
শালাবাবু না।

অর্ণব হেসে ফেলে। কোলে তুলে নেয় তামিমকে।
” তুমি আমার শালাবাবু

“না না
আমি শালাবাবু হবো না।
আপি বলেছে শালা মানুষ বকা দিয়ে বলে।

” তোমার আপি বলদ। সে এসবের কিছু বোঝে না।

“আমার আপি ঠিক তুমি ভুল। আমাকে শালাবাবু ডাকলে আমি পুলিশকে বলে দিবো। এটাও বলবো তুমি আমায় কিডন্যাপ করতে চেয়েছো।

অর্ণব বড়বড় চোখ করে তাকায় তামিমের দিকে। এই পিচ্চি বলে কি?

এরই মধ্যে দরজার সামনে পৌঁছে যায়। তাই আর কথা বাড়ায় না অর্ণব। তামিমকে কোল থেকে নামিয়ে দেয়।
ইতি বেগম বসে বসে শাক কাটছে৷ অর্ণব এক গাল হেসে বলে
” শাশুড়ী মা ভালো আছেন?

ইতি গম্ভীর চোখে তাকায় অর্ণবের দিকে। তারপর কাঠকাঠ গলায় বলে
“আমি কারো শাশুড়ী না। এই নামে ডাকবা না আমায়।

” ঠিক আছে। তারেক মিয়ার বউ ইতি বেগম আমার বউ কোথায়?

ইতি কটমট চোখে তাকায়। কেমন বেয়াদব এই ছেলে।

“বেয়াদব ছেলে।

” যেমন শাশুড়ী তেমনই তো জামাই হবে তাই না? ১৯৮০ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে মনে হয় চিনি বা মধু উৎপন্ন হতো না। তাই আমার শাশুড়ীর মুখে তার মা মধু দিতে পারে নি।

ইতি কটমট চোখে তাকিয়ে দাঁড়ায়। অর্ণব এক দৌড়ে তন্নির রুমে চলে যায়।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here