#মায়াবতী
#পর্ব:৪১
#তানিশা সুলতানা
এতোটা খুশি অথৈ জীবনেও হয় নাই। আজকে সে তার দুটো প্রিয় মানুষকে পাশে পাবে। কতোদিন পরে দেখতে পারবে। ছুঁতে পারবে। সময়টা যেনো আজকে অথৈয়ের। তন্নিকে আনতে যাবে শুনে সে খুশিতে লাফিয়ে ওঠে। বাবা মাকে পইপই করে বলে দিয়েছে তন্নিকে কয়েকদিন রেখে দেওয়ার জন্য এখানে।
আশার মুখে জবাব নেই। তিনি জানে তন্নিকে সহজে আনা যাবে না। তন্নিকে আনতে গেলে তারেক আর ইতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। নিজে ছোট হতে হবে। এই কথা তার ছেলে মেয়েরা জানলে ভীষণ কষ্ট পাবে। মন উঠিয়ে নেবেআশা বেগমের ওপর থেকে।
অর্ণবের থেকে তন্নির বাসার ঠিকানা নেয় আনোয়ার। সে ভীষণ খুশি। এইভাবেই তো সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে হবে।
ইতি বেগম অনেক কিছু রান্না করে ফেলে।তারা যেমনই হোক মেয়ের শশুড় বাড়ির লোক বলে কথা। তন্নি মায়ের হাতে হাতে সাহায্য করে দিচ্ছে।
কাজ করতে করতে ইতি বেগম বলে ফেলে
“তোর বাবা তোকে নিয়ে একটু বেশিই আদিখ্যেতা দেখায়। তার যে একটা ছেলে আছে সেদিকে তার কোনো মনই নেই। এটা কি ঠিক তুই বল?
তন্নির হাসি মুখটা চুপসে যায়। সে মায়ের দিকে তাকায়। মায়ের চিন্তা ভাবনা বরাবরই অন্য রকম।
” মা বাবা আমাদের দুজনকেই ভালোবাসে।
“ভালোবাসে? আমি তো দেখি না।
” তুমি ভাইকে বেশি ভালোবাসো। বাবা আমাকে। তুমি দুজনকে সমান চোখে দেখে দেখো বাবাও সমান চোখে দেখবে
ইতি রেগে যায়। ইদানীং মেয়েটার মুখে খই ফুটেছে। একটা কথাও মাটিতে পরতে দেয় না। সব কথার জবাব যেনো তার প্রস্তুত ছিলো।
“মুখে মুখে তর্ক করতে শিখে গেছিস তুই।
” চুপ করে থাকলে সবাই অসহায় ভাবে মা। শুধু আঘাত করতে এগিয়ে আসে।
ইতি আর কথা বলে না। চুপচাপ কাজ করতে থাকে।
সাড়ে বারোটার পরে আনোয়ার আর আশা চলে আসে তন্নিদের বাড়িতে। তন্নি তাদের শরবত দেয়। ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে।
তারেক কল করে। তন্নি আশার কাছে ফোন দেয়। তন্নি চায় তার শাশুড়ীমা বাবার থেকে ক্ষমা চাক। তার বাবা অপমান ডিজার্ভ করে না।
আনোয়ার চুপচাপ বসে আছে।
আশা ফোঁস করে শ্বাস টেনে বলে ওঠে
“আপনার মেয়ে আজকে না গেলে আমার মেয়ের জীবনটা নষ্ট হবে।আমার ছেলে সবটা উলটপালট করে দিবে। তন্নির যাওয়াটা ভীষণ জরুরি।
তারেক কথা বলে না।
আশা আবারও বলে ওঠে
” আমার মেয়েটা কোনো দোষ করে নি। তার জন্য মেয়েটার জীবন নষ্ট করবেন না।
“আগে ভাবা উচিত ছিলো আপনার।
” ক্ষমা চাইছি আমি। ভুল হয়ে গেছে। আপনি বললে আপনার মেয়ের পা ধরেও ক্ষমা চাইতে পারি। দোষ তো আমার।
আশার চোখে পানি চলে আসে।
“আমার মেয়ের নরম মন। সে আপনার অপমানের কথা মনেও রাখে নি৷
তন্নি যাক। যতই রাত হোক আমার মেয়েকে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করবেন৷
বলেই তারেক কল কেটে দেয়।
ইতি বেগম বিরক্ত। কেনো যেতে দিতে চাইছে? এতো অপমান ভুলে গেলো? যেমন মেয়ে নিলজ্জ তেমনই বাপ নিলজ্জ।
ইতি মুখ বাঁকিয়ে তন্নিকে বলে
” তোর বাবা তো নিলজ্জ। তুই ও এখন নিলজ্জের মতো ওনাদের পেছন পেছন যাবি। ভুলে গেলি কি করে ওনাদের জন্য বাড়ি ছেড়েছি আমরা। এই মহিলা আমাকে আর তোর বাবাকে যা নয় তাই বলে কথা শুনিয়েছে৷
আশা মাথা নিচু করে ফেলে। আনোয়ারও অপমানিত হয়। তন্নি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে
“চুপ থাকার চেয়ে বড় অপমান এই দুনিয়াতে নেই।
একদিন হলেও উনি আমাকে ভালোবেসেছে। আদর করে খাইয়েছে৷ ওনার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে উনি লজ্জিত। আর কি?
রাগ পুষে রাখলে সম্পর্ক নষ্ট হয়। আর রাগ মাটি করতে পারলে সম্পর্ক সুন্দর হয়। আমার বাবা বলে।
ইতি মুখ বাঁকিয়ে চলে যেতে নেয়। আনোয়ার বলে ওঠে
” আপনাকেও আমাদের সাথে যেতে হবে।
ইতি তেঁতে উঠে বলে
“আপনার বাড়িতে আমি কখনো পা ও ফেলবো না। আপনাদের মতো বড়লোক আমি পায়ের তলায় রাখি। আমাকে অপমান করেছিলেন। আমি সহজে ভুলে যাবো? বাপ মেয়ের মতো নির্লজ্জ আমি না।
বলেই ইতি চলে যায়।
আশা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। ছেলেমেয়ে কোথায় এনে দাঁড় করালো তাকে। মায়ের সম্মানের কথা একবারও ভাবলো না? মায়ে অপমান করালো ওরা?
সব দোষ এই তন্নির। তার সুখের সংসারে আগুন লাগিয়েছে এই মেয়েটা।
আনোয়ার তন্নিকে বলে
” মা রেডি হয়ে এসো। অথৈ তোমাকে ছাড়া বিয়েই করবে না। তোমায় খুব ভালোবাসে মেয়েটা। তোমার জন্য সব করতে পারে। নিজের ভাইয়ের সাথেও ঝামেলা করেছে। তার জন্য হলেও তোমার যাওয়া উচিত।
তন্নি কথা বলে না চুপচাপ রুমে চলে যায়। সে যাবে তার অথৈয়ের জন্য। একটু আত্মসম্মানবোধ বিসর্জন দিলে যদি কিছু আপন মানুষদের আবারও আগের রূপে ফিরে পাওয়া যায় তাতে ক্ষতি কি? বলুক না সবাই নির্লজ্জ। ভালোবাসায় একটু নির্লজ্জ হতেই হয়। ভালোবাসার মানুষদের একটুখানি সুখ দেওয়ার জন্য আত্মসম্মান বিসর্জন দেওয়াই যায়।
__
অথৈ শুধু দরজার দিকে তাকাচ্ছে। কখন আসবে তার তন্নি? তন্নির সাথে ম্যাচিং করে শাড়ি পরবে আজকে। অর্ণব তিন জনের জন্যই শাড়ি কিনে এনেছে৷ আবার সাগরের বাবাও শাড়ি গহনা পাঠিয়েছে।
অর্ণব সোফায় বসে ফোন ঘাটছে। সাগররা রওনা দিয়েছে৷ তন্নি কখন আসবে?
গতকাল সাজানো বাসর এখনো একই ভাবে আছে৷ ফুল গুলোও শুকাই নি।
অথৈকে এতো ছটফট করতে দেখে অর্ণব বিরক্ত হয়।
“ওই তেলাপোকা আমার বউ আসলে একদম সাথে সাথে ঘেসবি না। আমাকে প্রাইভেসি দিবি।
অথৈ মুখ বাঁকিয়ে অর্ণবের পাশে গিয়ে বসে।
” তোর বউ আসছে না। আমার জান আসছে। আমি তো ভেবেই ফেলেছি আজকে আমি আর তন্নি থাকবো। সারা রাত দুজন গল্প করবো। ইসস কতোদিন পরে
অর্ণবের হাত থেকে ঠাসস করে ফোনটা পড়ে যায়। সে বড়বড় চোখ কটে তাকিয়ে আছে অথৈয়ের দিকে। যেনো অথৈ কোনো বড়ধরণের ক্রাইম করে ফেলেছে
অথৈ ভেংচি কাটে।
“তোর এই হাবাগোবা রিয়াকশন আমার সামনে দেখাবি না।
তন্নি আমার মানে আমারই।
” তোকে বিয়েই দিচ্ছি প্রাইভেসির আশায়।
তখনই গাড়ির শব্দ হয়। অথৈ শাড়ি উঁচু করে এক দৌড় দেয়। এক দৌড়ে গাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আর ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে সাগর। অথৈ লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলে। সালমা হেসে ফেলে।
“বর দেখতে বউ সবার আগে চলে আসছে?
লজ্জায় অথৈয়ের মাটির সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। অর্ণবও এগিয়ে এসেছিলো। সে অথৈয়ের অবস্থা দেখে হাসতে হাসতে শেষ।
সাগর গম্ভীর গলায় বলে
” এতো দৌড়া দৌড়ি করার কি আছে? পড়ে গিয়ে হাত পা ভাঙার ইচ্ছে না কি?
অর্ণব এগিয়ে এসে অথৈয়ের মাথায় টোকা দেয়।
তারপর বলে
“ওর বর হাত ভেঙে মাথায় ব্যান্ডেজ করে আছে। তাই ওরও ইচ্ছে হইছে পা ভেঙে বরের পাশে বসে থাকার। তাই না টিমটিম?
সালমা হেসে ফেলে। অথৈ চিমটি কাটে অর্ণবের হাতে৷
সাগর গম্ভীর চোখে অথৈয়ের দিকে তাকিয়ে হাঁটতে থাকে।
তখনই আরেকটা গাড়ি চলে আসে। সেখান থেকে বেরিয়ে আসে আনোয়ার তারপর বের হয় তন্নি।
অথৈ তন্নিকে দেখে দৌড় যায়। জাপ্টে জড়িয়ে ধরে তন্নিকে। ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে অথৈ৷
” আমি ভেবেছিলাম তুই আসবি না।
কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে অথৈ।
তন্নি অথৈয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
“তোর জন্য আমাকে আসতেই হতো জান।
আশা বড়বড় পা ফেলে ভেতরে চলে যায়। আনোয়ার বউয়ের পেছনে যায়।
অথৈয়ের কান্না থামতেই অর্ণব গিয়ে পেছনে দাঁড়ায়।
“ইডিয়েটের মতো কান্না না করে ভেতরে যা। সাগর তোর জন্য ওয়েট করছে।
” তন্নি চল
তন্নির হাত ধরে বলে অথৈ।
অর্ণব তন্নির আরেকটা হাত ধরে
“তুই যা
ও আসছে।
অথৈ ছোট ছোট চোখ করো তাকায় অর্ণবের দিকে।
” প্রাইভেসি?
অর্ণব হেসে অথৈয়ের কপালে চুমু দিয়ে দেয়।
“আমার কাজী নজরুল ইসলাম।
তোর বাচ্চার নাম ঠিক করে দিবোনি আমি।
অথৈ হাসতে হাসতে চলে যায়।
তন্নি আলতো করে থাপ্পড় দেয় অর্ণবের পিঠে
” অজাত
অর্ণব হুট করে কোলে তুলে নেয় তন্নিকে। তন্নি বড়বড় চোখ করে খাঁমচে ধরে অর্ণবের শার্টের কলার।
“এই এই তাতানের পাপা নামিয়ে দিন। কেউ দেখে ফেলবে প্লিজ।
অর্ণব তন্নির নাকে নিজের নাক ঘসে
” অনির মাম্মা একটু রোমান্টিক হও। এভাবে জীবন চলছে না।
তন্নি চুল টেনে দেয় অর্ণবের।
“শয়তানের নানা
চলবে
#মায়াবতী
#পর্ব:৪২
#তানিশা সুলতানা
বিয়ে একটা সামাজিক বন্ধন। দুটি মানুষের সারাজীবন এক সাথে থাকার পাকাপোক্ত প্রতিশ্রুতি হচ্ছে বিয়ে। সেই বিয়েটা যদি হয় প্রিয় মানুষটার সাথে তাহলে নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে সুখি ব্যক্তি মনে হয় না? মনে হয় সব পেয়ে গেলাম।
সাগরের পাশে বসে সাগরের দিকে তাকিয়ে ভাবছিলো অথৈ। কিন্তু সাগরের দৃষ্টি খানিকটা দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তন্নির দিকে। মেয়েটাকে সে আগেই হারিয়ে ফেলেছে। আজকে থেকে নিজেকেও হারিয়ে ফেললো। দুজনের রাস্তা দুদিকে চলে গেলো। তবে সারাজীবন একটা আফসোস থেকে যাবে “অসম্ভব ভালোবেসেও ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেললো। মোনাজাতে চেয়েও তাকে পেলো না”
আল্লাহ যা করে ভালোর জন্যই করে। হয়ত এটাতেই ভালো হবে। কিন্তু মনটা তো মানতে চায় না। নিষিদ্ধ ইচ্ছে মনটাতে মাতিয়ে রাখে। দুমড়ে মুচড়ে শেষ করে দেয়।
এই শেষ সময়ে এসে একটাই প্রশ্ন সাগরের মনে জেগো উঠছে “আল্লাহ যার জন্য যাকে বানায় নি তার জন্য মনের এতো মায়া কেনো দিয়েছে” তার জন্যই কেনো মনটা কাঁদে?
কেনো এলোমেলো হলো সবটা? কেনো ভেঙে গেলো স্বপ্ন গুলো?
তন্নি সাগরের দৃষ্টি খেয়াল করে সরে যায়। আর্থির পাশে গিয়ে বসে। যেখানে থেকে সাগরকে দেখা যাচ্ছে না। তন্নির মনে সাগরের জন্য ফিলিংস কখনোই ছিলো না। সাগরকে কখনো ওই চোখে দেখেই নি। এটা চিন্তাও করে নি।
অথৈয়ের খারাপ লাগে। এই প্রথমবার প্রিয় বান্ধবীকে হিংসা হচ্ছে। তন্নিকে কেনো ভালোবাসলো? অথৈকে কেনো বাসলো না?
দীর্ঘ শ্বাস ফেলে অথৈ। ভালো না বাসলো শুধু একটুখানি কাছাকাছি থাকলেই হবে। একটু কেয়ার করলেই হবে। সারাজীবন প্রাণ ভরে দেখতে দিলেই হবে। আর কি চাই?
থাক না কিছু জিনিস না পাওয়া, এক জীবনে সব পেয়ে গেলে আফসোস করবো কি নিয়ে?
বিয়েটা সাদামাটা ভাবেই হয়ে যায়। রেজিস্ট্রি পেপারে সাইন করে কবুল বলে বিয়েটা শেষ হয়। অথৈ শুকরিয়া আদায় করে। ফাইনালি সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে পেয়ে গেলো।
সাগরের বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। মাথাটা বেশিই ঝিমঝিম করছে। তার পাশে অথৈ বসে।
সাগর অথৈয়ের দিকে না তাকিয়েই বলে
“আমি একটু রেস্ট নিতে চাই।
অথৈ বিচলিত হয়ে ওঠে।
” খারাপ লাগছে? কোথাও ব্যাথা করছে? বাবা কে বলবো?
“আই এম ওকে
জাস্ট মাথাটা ঝিমঝিম করছে।
” আচ্ছা চলুন তাহলে
অথৈ সাগরকে নিয়ে নিজের রুমে যায়। এমনিতেই অথৈ বেশ গোছালো। তবুও সাগরের জন্য একটু বেশিই পরিপাটি করেছে সব কিছু। সাগর একবার কথায় কথায় বলেছিলো গোলাপি তার পছন্দ। সেই কথা অনুযায়ী অথৈ পুরো রুম গোলাপি বানিয়ে ফেলেছে। দেয়াল থেকে শুরু করে বিছানার চাদর সব জায়গায় লাগিয়েছে গোলাপির ছোঁয়া।
পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে সাগর মুচকি হাসে। মেয়েটা একটু বেশিই পাগল।
এটা ভালোবাসার জন্য না কি মোহে পড়ে জানা নেই।
তবে এটা মোহ ই হবে। ভালোবাসা কি আর এতো সহজে হয়ে যায়?
সাগর বিছানায় বসে।
অথৈ সাগরের পাশে বসে।
“মাথা টিপে দিবো?
” নো নিড
তুমি যেতে পারো।
অথৈ একটু অপমানিত হলেও যায় না। বুঝতেই পারছে সাগরের মাথাটা একটু বেশিই ব্যাথা করছে। আলতো করে চুলে হাত বুলিয়ে দিলে কমে যেতে পারে বা একটু আরাম লাগতে পারে।
নিলজ্জ অথৈ আবারও বলে ওঠে
“বসে কেনো? শুয়ে পড়ুন না। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। একটু হলেও আরাম পাবেন।
সাগর অথৈয়ের দিকে তাকায়। ঠোঁট প্রসারিত করে একটু হাসার চেষ্টা করে বলে
” লাগবে না অথৈ। তুমিও রেস্ট নাও। তোমাকে দেখেও ক্লান্ত মনে হচ্ছে। খাও নি বোধহয় কিছু?
অথৈ মাথা নিচু করে লাজুক হাসে। লোকটা সত্যিই অসাধারণ। ঠিক বুঝে গেলো খায় নি। অথৈ তো তার আর তন্নির জন্যই অপেক্ষা করছিলো। এক সাথে খাবে বলে। কিন্তু মুখ ফুটে বলবে কি করে?
লজ্জা পাবে যে।
তবুও রিনরিনিয়ে বলে
“আপনার মাথা ব্যাথা কমলে সবাই মিলে এক সাথে খাবো।
সাগরের মুখটা সাধারণের চেয়েও একটু বেশি কালো হয়ে যায়। আবার তন্নি? এক সাথে খেতে হবে? এখন থেকে প্রতি পদে পদে তন্নির মুখোমুখি হতে হবে।
সাগর আর কথা বাড়ায় না। বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। অথৈ মাথার কাছে বসে নরম হাতে আলতো করে চুল টানতে থাকে৷ বেশ আরাম লাগছে সাগরের। তবুও মুখ দিয়ে বলে না।
অথৈ এক দৃষ্টিতে শুকনো মুখটার দিকে তাকিয়ে মাথা টিপতে থাকে।একদিনে মুখটা পুরো শুকিয়ে গেছে। একটু অন্য রকম লাগছে। কিন্তু তবুও ভালো লাগছে। বরং একটু বেশিই ভালো লাগছে।
কারণ এই মানুষটা তার স্বামী। সারাজীবন তার সাথে থাকার টিকেট পেয়ে গেছে।
” তুমি খুশি তো অথৈ?
সাগরের হঠাৎ করে করা প্রশ্নে চমকে ওঠে অথৈ। সে সাগরের মাথা থেকে হাত সরিয়ে সোজা হয়ে বসে। সাগর চোখ খুলে তাকায় অথৈয়ের দিকে।
মেয়েটা সুন্দর। একটু বেশিই সুন্দর।
“আমাকে একটু সময় দিও অথৈ। ভুল বুঝো না। তন্নিকে হিংসা করো না। আমার জন্য এটলিস্ট তোমাদের এই সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট করো না।
আমি সবটা ঠিক করে দিবো। জাস্ট একটু সময়,প্রয়োজন। সবে একটা ধাক্কা সামলে উঠলাম তো।
অথৈ মুচকি হাসে
” তন্নিকে হিংসা করার প্রশ্নই ওঠে না। আমার ভালোবাসার মানুষটিকে আপনি ভালোবাসেন। এতে আমি সত্যিই খুশি। আমি সারাজীবন আপনাকে আর তন্নিকে নিয়ে ভালো থাকবো। হ্যাপি থাকবো। আর কিচ্ছু চাই না।
সাগর মুচকি হাসে। হাত বাড়িয়ে অথৈয়ের নাক টেনে দেয়।
“তোমার মাথা থেকে একটুখানি বুদ্ধি তোমার পাগল ভাইকে দিও। সে তন্নির ব্যাপারে বেশ লয়াল। কিন্তু বেপরোয়া।
” এভাবেই ভালো আমার ভাই। সবাই তো সব্ভ প্রেমিক। আমার ভাই না হয় একটু বেপরোয়া প্রেমিক হলো।
__
তন্নি আশা বেগমের হাতে হাতে সাহায্য করছে। কেউ কারো সাথে কোনো কথা বলছে না। তন্নিরও ওনার সাথে কথা বলার খুব বেশি ইচ্ছে নেই।
এখানে আসতো না। শুধুমাত্র বয়ষ্ক মানুষ এতো কিছু একা একা করতে গিয়ে হাঁপিয়ে উঠবে। তাই এসেছে। আর্থিও এসেছিলো কিন্তু তার বর কল করাতে সে চলে গেছে।
খাবার গোছানো প্রায় শেষ তখন তন্নি চলে যায়। অর্ণবকে দেখে না অনেকখন হলো। কোথায় গেলো লোকটা? এমনিতে তো সারাক্ষণ পেছন পেছন ঘুরতে থাকে দুষ্টুমি করতে থাকে। তাহলে আজকে কোথায় গেলো?
রেগে গেলো না কি লোকটা?
তন্নি অর্ণবকে খুঁজতে খুঁজতে অর্ণবের রুমে চলে আসে।
এতো সুন্দর করে সাজানো দেখে মুচকি হাসে। লোকটা আসলেই একটা পাগল। না হলে কি বউ আসার খবর নেই বাসর সাজিয়ে বসে থাকতে পারে?
খাটের পাশে তন্নির চোখ যেতো চমকে ওঠে। কারণ ওইখানে অর্ণব আর তার একটা কাপল পিক। যেখানে অর্ণব তার দিকে তাকিয়ে আছে আর সে আকাশের দিকে। দুজনকেই সুন্দর লাগছে। পিকটা অর্ণবের বার্থডের দিনকার।
ব্যালকুনি থেকে অর্ণবের কথার আওয়াজ আসছে। তন্নি মুচকি হেসে সেদিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু কিছু কথা কানে আসতেই থেমে যায় তন্নি।
অর্ণব ফোনে বলছে
“অর্ণব চৌধুরী ফেলে দেওয়া জিনিস কুড়িয়ে নেয় না।
তুমি কি ভেবেছিলে? আমাকে অপশন হিসেবে রাখবে আর আমি জানবো না? আর জানলেও তোমাকে নিয়েই পড়ে থাকবো?
ওপাশ থেকে কিছু বলার পরে অর্ণব বলে
“তন্নিকে আমি ভালোবাসি। আমার কাছে পৃথিবীর সব চেয়ে সুন্দরতম মানুষ হচ্ছে আমার অনির মাম্মা। মিস ওয়ার্ল্ড সে আমার। তাকে ছেড়ে দেওয়ার মতো অনেক গুলো কারণ আছে কিন্তু আমি সেসব দেখবো না।
আর তন্নি সম্পর্কে আমি অন্য কারো থেকে কিছু শুনবোও না। সী ইজ মাই ওয়াইফ। তার সম্পর্কে কিছু বলতে হলে দশ বার ভেবে বলতে হবে। নাহলে জি*ভ টে*নে ছিঁ*ড়ে দিবো।
চলবে