#মায়াবতী
#পর্ব:৩১
#তানিশা সুলতানা
“তন্নি এতোখন লাগে খাবার দিতে?
বলতে বলতে হুরমুরিয়ে ঢুকে পড়ে অথৈ। তন্নি এক লাফে উঠে দাঁড়ায়। অর্ণব কপালে হাত ঠেকিয়ে ফোঁস করে শ্বাস টানে।
অথৈ তন্নির পাশে দাঁড়াতেই অর্ণব বলে ওঠে
“আমাকে একটু শান্তি দিবি না তাই না?
অথৈ ভেংচি কাটে।
“দিবো না।
তন্নি চল তো
অথৈ তন্নির হাত ধরে টেনে নিয়ে যায়।
অর্ণব নিজের চুল নিজেই এলোমেলো করে দিয়ে বলে
” বউ নিয়ে বনবাসে যেতে হবে আমার। এভাবে আর চলছে না। অনি রে মাম্মা তুই কিন্তু তোর ফুপির কাছে যাবি না একদম। সে তোর বাবার চরম শত্রু।
_
আশা বেগমের মুখ ছোট হয়ে গেছে। সে কিছু টা আন্দাজ করতে পেরেছে। তার ছেলের সাথে তন্নির বেশ ভাব হয়েছে। কিন্তু উনি এটা এগোতে দিবে না কিছুতেই। তন্নি মেয়ে ভালো কিন্তু তার ছেলের জন্য একদমই পারফেক্ট না। তার হিরের টুকরো ছেলে শেষে কি না একটা ছোট জাতে গরীব ঘরের মেয়েকে বিয়ে করবে?
এটা হতেই পারে না।
মাঝ রাতে আনোয়ার বাড়িতে ফিরে। আশা বেগমকে বসে থাকতে দেখে খানিকটা অবাক হয়। কারণ তিনি আটটার মধ্যেই ঘুমিয়ে যায়। আর আজকে বারোটা বেজে গেলো তবুও ঘুমানোর নাম নেই৷
হলো কি?
অফিসের ব্যাগ রেখে স্ত্রীর পাশে বসে বলে
“এখনো ঘুমাও নি যে।
আশা স্বামীকে দেখে খুশি হয়। তার হাতের ওপর হাত রেখে বলে
” আমাদের ছেলেটা পাল্টে যাচ্ছে খেয়াল করেছো? সে তন্নির পিছনে পড়েছে।
“হ্যাঁ ভালো তো। তন্নি ভালো মেয়ে
” হ্যাঁ মানছি ভালো মেয়ে। কিন্তু আমার ছেলের সাথে যায় না। কোথায় আমার চাঁদ আর কোথায় তন্নি। তারওপর আবার জাতের সমস্যা।
আনোয়ার বিরক্ত হয়।
“আশা আমি যখন তোমায় বিয়ে করেছিলাম তোমাদের বাড়িতে একটা ঘর পর্যন্ত ছিলো না। তন্নিদের থেকেও কঠিন পরিস্থিতি ছিলো তোমাদের।
আশা থতমত খেয়ে হাত সরিয়ে নেয়। অপমানিত হয়েছে সে।
” আমার কথা কেনো উঠছে?
“কারণ তুমি তন্নিকে ছোট করছো। এমনটা ঠিক নয়। তন্নি মেয়েটা ভীষণ ভালো। আমার ছেলে তাকে পছন্দ করে। ওরা ভালো থাকবে। আমাদের এখানে কথা বলার কি দরকার বলো?
আশা আর বলার মতোকথা খুঁজে পায় না। তার স্বামী যে বুঝবে না এটা সে বুঝতে পেরেছে। যা করার তাকেই করতে হবে। কিছুতেই সে তন্নিকে বাড়ির বউ মানবে না।
__
রাতে দুইটা বাজে। হঠাৎ করেই অর্ণবের ঘুম ছুটে গেছে। এপাশ ওপাশ করেও আর ঘুমতে পারে না। শেষমেশ ফোনটা হাতে নেয়।
তন্নির আর তার কোনো কাপল পিক নেই। এই বিষয়টা খেয়ালই ছিলো না। অর্ণব ভেবে ফেলে কালকেই কাপল পিক তুলবে৷ তাছাড়া তন্নিকে স্পেশাল কোনো গিফট দেওয়া হয় নি। যদিও তন্নি নেবে কি না সন্দেহ।
নিউজ ফিল্ড স্টল করতে করতে হঠাৎ করে চোখ পড়ে একটা রিং এর দিকে। ডায়মন্ডের। খুবই সিম্পল কিন্তু সুন্দর। সাথে ডায়মন্ডের ছোট্ট নাক ফুল। দুটোই ভালো লেগে যায় অর্ণবের। আর সময় নষ্ট না করে অর্ডার করে ফেলে৷
কালকেই তন্নিকে দেবে এসব।
অনমনেই হাসে অর্ণব।
” ভালোবাসার অনুভূতি এতো সুন্দর কেনো? হৃদয় কেনো এতো ব্যাকুল থাকে মায়াবতী জন্য? সারাক্ষণ দেখতে ইচ্ছে করে। এইতো ঘন্টা চার আগে দেখেছে তবুও কেনো মনে হচ্ছে এখুনি ছুটে গিয়ে দেখে আসি মায়াবী মুখটা?
এই রকম অনুভূতি কি সারাজীবন থাকবে? না কি সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়ে যাবে?
উওর পায় না অর্ণব। এভাবে চুপচাপ থাকলে এসব চিন্তা মাথা থেকে যাবে না তাই কল করে তন্নির নাম্বারে। তন্নিকেও ঘুমতে দেবে না। একা একা কেনো রাত জাগবে?
দুইবার রিং হয়ে কেটে যায় তন্নি রিসিভ করে না। আসলে সে বালিশের নিচে ফোন রেখে নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছে।
তৃতীয় বার কল বেজে ওঠায় অথৈয়ের ঘুম ভেঙে যায়। সে বিরক্ত হয়ে তন্নির ফোনটা নিয়ে বন্ধ করে রেখে দেয়।
অর্ণব বুঝে এটা অথৈয়ের কাজ।
“ওকে কুড়িয়েই আনছিলো। আমার বোন এরকম কখনোই হতে পারে না।
__
ফজরের আজানের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তন্নি। নামাজ শেষ করে জায়নামাজ গোটাতে যাবে তখনই আশা এসে তন্নির হাত ধরে৷ খানিকটা চমকে আশা বেগমের দিকে তাকায় তন্নি।
মুখে হাসি ফুটিয়ে জিজ্ঞেস করে
” আন্টি তুমি এখানে?
আশা তন্নির হাত থেকে জায়নামাজ নিয়ে নিজেই গুটিয়ে রেখে আসে কাবাডে। তারপর তন্নির গালে হাত দিয়ে বলে
“তোমার সাথে কথা আছে৷ এসো আমার সাথে।
তন্নি আশা বেগমের পেছন পেছন যায়।
রান্না ঘরে গিয়ে থামে আশা। তাকায় তন্নির দিকে। সরল মুখখানা দেখে তার প্রাণ জুরিয়ে যায়।
” তন্নি আমি তোমাকে ভালোবাসি। এটা তুমি বিশ্বাস করো?
তন্নি হেসে বলে
“কেনো করবো না? আমার মায়ের থেকেও বেশি ভালোবাসা দিয়েছো আমায়। সারাজীবন মনে রাখবো।
আশা তন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
“তন্নি তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে। যেখানে আমাদের সমাজে প্রতিটি বাবা আঠারো হওয়ার আগেই মেয়েদের বিয়ের জন্য উঠেপড়ে লাগে সেখানে তোমার বাবা স্বপ্ন দেখে তোমাকে প্রতিষ্ঠিত করবে। তোমার পরিচয়ে সে পরিচিত হবে।
তন্নি আমি লক্ষ করছি অর্ণব আর তোমার মধ্যে একটা সম্পর্ক চলছে। আমি জানতে চাইবো না কতোদিন ধরে চলছে? কতদূর এগিয়েছে। অর্ণব আমার ছেলে তুমি আমার মেয়ের মতোই। তোমাদের কারোর খারাপই আমি চাইবো না।
কিন্তু তন্নি তুমি ভেবে দেখো অর্ণবের বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। সামনে সপ্তাহে তাদের বাগদত্তা সম্পূর্ণ হবে।
তন্নি মাথা নিচু করে ফেলে। চোখ দুটো টলমল করছে তার।
আশা শ্বাস টেনে আবার বলতে থাকে
” আমি মেনে নিলাম অর্ণব নিধিকে বিয়ে করবে না। তুমি কি বিয়ের জন্য প্রস্তুত তন্নি? বাবার স্বপ্নের কথা ভুলে মা ভাইকে ফেলে অর্ণবকে বিয়ে করতে পারবে তুমি?
তাছাড়া অথৈ আর্থি তোমার আংকেল আমরা কিন্তু কেউ ই এই সম্পর্ক মেনে নিবো না।
তুমি আমাদের বিরুদ্ধে গিয়ে সুখী হবে?
তন্নি কান্না আটকে তাকায় আশা বেগমের দিকে।
আশা আবারও বলতে থাকে
“সময় আছে তন্নি পিছিয়ে আসো। অর্ণবকে ভুলে যাও। জীবনে অনেক সুখী হবে তুমি। অনেক ভালো থাকবে। আমি দোয়া করছি।
আবার সবটা আগের মতো করে দাও তন্নি। আমার ছেলের মাথা থেকে তোমার ভুত নামিয়ে দাও।
বলতে বলতে তন্নির হাত ধরে আশা। তন্নি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
” কলেজে যেতে হবে আন্টি
বলেই চলে যায় তন্নি। আশা তাকিয়ে থাকে। তন্নির মতিগতি কিছুই বুঝতে পারছে না। কি চাইছে মেয়েটা?
তন্নি অর্ণবের রুমের দিকে যেতে যেতে বিরবির করে বলে
“আমি আমার মনের কথা শুনবো৷ কোনো পিছুটান রাখবো না।
অর্ণব জগিং এ যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েছে। এবার জুতো পড়েই বেরিয়ে যাবে৷ তখন তন্নি অর্ণবের রুমে ঢুকে৷ অর্ণব তন্নির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে। তন্নি অর্ণবের চোখে চোখ রেখে বলে
” আমাকে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে পারবেন অর্ণব?
চলবে
#মায়াবতী
#পর্ব:৩২
#তানিশা সুলতানা
অর্ণব বেশ অবাক হয়। তন্নিকে বিধস্ত দেখাচ্ছে। কেঁদে ফেলবে এমন অবস্থা। কিন্তু হঠাৎ করে কি হলো মেয়েটার? কেউ কি তাকে কিছু বলেছে?
অর্ণবকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তন্নি পূণরায় বলে ওঠে
“যাবেন না?
অর্ণব দৃষ্টি ফিরিয়ে নেয়। হাত দিয়ে ইশারা করে তন্নিকে পাশে বসতে। কিন্তু তন্নি আসে না। ওখানেই ঠায়য় দাঁড়িয়ে থাকে। এবার তার চোখ টলমল করছে। যখন তখন দুই গালে পানি গড়িয়ে পড়বে। অর্ণব নিজেই এগিয়ে যায়। তন্নির হাত ধরে তাকে খাটের এক কোণায় বসিয়ে দেয়৷ দরজাটা একটু ভিড়িয়ে তন্নির পাশে এসে বসে। কাঁধে হাত রেখে আশ্বস্ত করে বলে
” কি হয়েছে আমাকে বলো? কেউ কিছু বলেছে? কোনো কিছু নিয়ে টেনশন হচ্ছে?
আমি আছি অথৈয়ের তন্নি।
তন্নি ওড়নার কোনা দিয়ে দুই গালে গড়িয়ে পড়া পানিটুকু মুছে ফেলে। তার চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। মন খুলে বলতে ইচ্ছে করছে অর্ণবকে। ভরসা পেতে চাইছে। মন থেকে দোটানা মুছে দিতে বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টেনে নিজেকে শান্ত করে তন্নি। তার বলে
“আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারবেন অর্ণব?
অর্ণব মৃদু হাসে। তন্নির নরম তুলতুলের হাতটা ধরে বলে
” সে তো করছিই।
“আরও অপেক্ষা। বছরের পর বছর।
” এমনটাই বলেছিলো অথৈ। আর আমিও মেনে নিয়েছি।
তন্নি তবুও ভরসা পায় না।
“আমার সাথে যদি আপনার বছরের পর বছর কথা না হয় দেখা না হয় তবুও আপনি আমার জন্যই ফিল করবেন। আমাকে নিয়েই ভাববেন। আমাতেই সন্তুষ্ট থাকবেন অর্ণব। আপনি প্রমিজ করেছিলেন আমায় ভালোবাসার চাদরে মুরিয়ে রাখবেন।
নিজের কথা রাখবেন অর্ণব।
তন্নির চোখে আবারও পানি চলে আসে।
অর্ণব হাত ছেড়ে বুড়ো আঙুল দিয়ে তন্নির চোখের পানি মুছিয়ে দেয়।
” ডোন্ট ক্রাই
“আগে বলুন আমায়।
” আমি কখনো তোমায় ছাড়বো না। তুমি চাইলেও না। তুমি আমার অনির মাম্মা তুমি আমার অনির মাম্মাই থাকবে।
তন্নি অর্ণবের হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রাখে।
“আপনি বড্ড বেপরোয়া অর্ণব। এমনটা চলবে না। একটু গম্ভীর হবে। চঞ্চলতা একটু কমাবেন। আমার সাথে দুষ্টুমি কম করবেন। সারাক্ষণ আমার পেছনে পড়ে থাকবেন না।
আমি চাইছি না কেউ এখনই আমাদের সম্পর্কের কথা জানুক। একদম সিক্রেট থাকবে। বিয়ের কথা তো আরও কাউকে জানাবেন না।
অর্ণব তন্নির কথা গুলো শুনে এবং বলে
” কারণটা বলবা না?
“কারণ নেই কোনো। আমি চাইছি তাই। এই পৃথিবীতে বাবা আর অথৈ ছাড়া আমাকে কেউ ভালোবাসে নি। কেউ একটু সম্মান দেয় নি। শান্তনা পর্যন্ত পাই নি কারো থেকে।
আমার জীবনটা খুব কঠিন। এই টুকু বয়সে অনেক কিছু শিখেছি দেখেছি শুনেছি। আমি সুখে থাকতে চাই। ভালো থাকতে চাই। বাঁচতে চাই। হাসতে চাই আমি।
আমি ছাড়া আপনার অনেকেই আছে কিন্তু আপনি আর অথৈ ছাড়া এই মুহুর্তে আমার কেউ নেই।
আবারও কেঁদে ফেলে তন্নি। অর্ণব তন্নির দুই গালে হাত দিয়ে মুখখানা দেখতে থাকে। চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে মেয়েটার। আরও কিছু বলতে চাইছে সে। অর্ণবও শুনতে চাইছে। মনের মধ্যে কথা চেপে রাখলে দুঃখ বাড়ে।
” অর্ণব আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি আপনাকে। আমার জীবনে আপনি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষ নেই অর্ণব।
আমার কোনো অপশন নেই আপনার মতো। আমি চাই ও না।
আমার শুধু আপনি হলেই চলবে অর্ণব। শুধু আপনি হলেই চলবে।
অর্ণব মৃদু হেসে তন্নির মাথাটা নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে। মেয়েটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করছে। অর্ণব থামায় না। কাঁদতে থাকুক। কাঁদলে মন হালকা হয়।
বেশ অনেকখন পরে অর্ণব তন্নির মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে থাকে
“তুমি ভয় পেয়ো না অথৈয়ের তন্নি। আমি কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না। যাই হয়ে যাক। আমি অপেক্ষা করবো। সারাজীবন ও অপেক্ষা করতে রাজি আমি।
আগে কি হয়েছে ভুলে যাও। বাকি জীবনে আমার হৃদয়ে অনির মাম্মা ছাড়া আর কোনো নাম থাকবে না। আই প্রমিজ।
” আমায় ভালোবাসেন অর্ণব?
অর্ণব এটার জন্য প্রস্তুত ছিলো।
“কি মনে হয় তোমার?
” আমি আপনাকে ভালোবাসি।
“আমিও তোমায় ভালোবাসি৷ মারাক্তক ভালোবাসি।
তন্নির কান্না থেমে গেছে। সে এমনিতেই ঘাপটি মেরে পড়ে ছিলো অর্ণবের বুকে৷ অর্ণবের কথা শুনে মাথা তুলে। অর্ণবের দিকে তাকায়। অর্ণবও তাকিয়ে ছিলো।
তন্নি দাঁড়িয়ে অর্ণবের মুখোমুখি দাঁড়ায়। অর্ণবের ঝাঁকড়া চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। অর্ণব মৃদু হাসে। খানিকক্ষণ সময় নিয়ে ভালো করে অর্ণবের মুখটা পর্যবেক্ষণ করে তন্নি। তারপর লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে অর্ণবের কপালে গাড়ো চুম্বন এঁকে দেয়। তৃপ্তির হাসি ফুটে ওঠে অর্ণবের ঠোঁটের কোণে। তন্নি আর দাঁড়ায় না। বড়বড় পা ফেলে চলে যায় অর্ণবের রুম থেকে।
অথৈয়ের রুমে গিয়ে দেখে অথৈ এখনো ঘুমচ্ছে। তন্নি অথৈয়ের কপালে চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের ফোনটা নিয়ে বেরিয়ে যায়।
এই বাড়ির চৌকাঠ পেরুনোর আগে তন্নি আবারও পেছন ঘুরে তাকায়। ততদিন পর্যন্ত এই বাড়িতে পা রাখবে না যতদিন অর্ণব তাকে পূর্ণ মর্যাদা দিয়ে এখানে আনছে। এটা তন্নির প্রতিজ্ঞা।
__
বাড়ি ফিরতেই দেখে ইতি বেগম রান্না করছে আর তামিমকে পড়াচ্ছে৷ তন্নিকে দেখেই তামিম দৌড়ে এসে জাপ্টে ধরে। তন্নিও মুচকি হেসে ভাইকে আদর করে।
ইতি বেগম এই সময় তন্নিকে আশা করে নি। তাই বেশ অবাক হয়।
তন্নি মায়ের পাশে বসে মায়ের থেকে বটি নিয়ে তরকারি কাটতে থাকে।
ইতি গম্ভীর গলায় প্রশ্ন করে
” এতো তাড়াতাড়ি চলে আসলি যে?
তন্নি তরকারি কাটতে কাটতে মুচকি হেসে জবাব দেয়।
“নুন পান্তা খেয়ে বড় হয়েছি মা। ছেঁড়া কাঁথায় ঘুমানোর অব্ভ্যাস। এতো বড় বাড়ি দামি খাট ভালোভালো খাবার এসবে আমার পোষায় না।
এভাবেই ঠিক আছি।
ইতি মনে মনে খুশি হয়। কিন্তু প্রকাশ করে না।
” এতো মা*রি তোকে। এতো কাজ করাই। ওখানে থেকে গেলেই তো ভালো থাকতিস।
তন্নি ইতির দিকে তাকায়
“তোমার মধ্যে মা মা গন্ধ পাই আমি। যা আমাকে সুখ এনে দেয়। কলিজা ঠান্ডা করে। মনে হয় এটাই পৃথিবীর সব থেকে নিরাপদ জায়গা। আমার মা আমার সাথে। তোমায় ছাড়া আমি থাকতে পারি না।
ইতির চোখ ভিজে ওঠে। সে নিজের দুর্বলতা তন্নিকে বুঝতে দেবে না বলে উঠে চলে যায়।
তন্নি দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।
চলবে