মায়াবতী পর্ব ২৩+২৪

0
775

#মায়াবতী
#পর্ব:২৩
#তানিশা সুলতানা

মুখোমুখি বসে আছে নিধি অর্ণব। অর্ণবের পাশে আনোয়ার। মূলত আনোয়ার এনেছে নিধিকে। রাস্তায় না কি দেখা হয়ে গেছিলো দুজনের। আজকে একটা স্পেশাল ডে। তাই তার মনে হলো নিধিকে নিয়ে আসা দরকার।
অর্ণব প্রথমে রেগে গেলেও পড়ে খুশি হয়েছে কারণ নিধির সাথে কথা বলার আছে।

আশা তিন মগ কফি এনে রাখে টি টেবিলে। তারপর স্বামীর পাশে বসে হাসি মুখে তাকায় নিধির দিকে।
আনোয়ার অর্ণবের শক্ত চোখমুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে কফির মগ হাতে নিয়ে তাতে চুমুক দেয়। আজকে কফিতে চিনি পড়েছে বেশি। খেয়ে বেশ আরাম পাচ্ছেন উনি। এমনিতে প্রতিদিন তেঁতো চা কফি গিলতে হয়।
মুখে কফি নিয়ে চোখ বন্ধ করে আয়েশ করে গিলছেন উনি। চোখে মুখে ফুটে উঠেছে তৃপ্তির হাসি৷
অর্ণব বাবার এক্সপেশন দেখে বিরক্ত হয়ে নিজের মগটা হাতে তুলে নেয়। তাতে চুমুক বসাতে যাবে তখনই আনোয়ার গম্ভীর গলায় বলে ওঠে

“দেশে এসেছে পর থেকেই সারাক্ষণ এদিক সেদিন ঘুরে বেড়াচ্ছে। পড়ালেখা শেষ করে এসেছো কি বাংলাদেশের মাঠঘাট দেখার জন্য?

নিধি বিরক্ত হয়। এই ভাষণ শোনার জন্য এসেছে না কি সে? তবুও ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে তোলে। একটু হলেও তাল মেলাতে হবে৷

” পাপা সবে কয়েকদিন হলো এসেছি। চাকরি খুঁজতে হবে তো?

“এমনিতে তো বাবা বলে ডাকো। এখন হবু বউয়ের সামনে পাপা? গিরগিটির থেকেও ভয়ংকর তুমি।

অর্ণব ভ্রু কুচকে বাবার দিকে তাকায়। নিধি হেসে ফেলে।

অর্ণব কফির মগ নামিয়ে আগের জায়গায় রেখে দেয়।
” আমি যাবো? কথা শেষ?

আনোয়ার তারাহুরো করে বলে

“আসল কথাই তো বললাম না এখনো।

অর্ণব সোজা হয়ে বসে। আশা বাঁকা চোখে স্বামীর দিকে তাকায়। চাকরি নিয়ে কিছু বললে সে এবার কড়া কথা শোনাবে এটাই তার মতলব।
কিন্তু তার সেই মতলবে এক বালটি পানি ঢেলে দিয়ে আনোয়ার বলে ওঠে

” এই সপ্তাহের মধ্যে আমার অফিসে জয়েন করবা দেন পরের সপ্তাহে তোমাদের বাগদত্তা সেরে ফেলবো।

নিধির খুশি আর দেখে কে? তার নাচতে ইচ্ছে করছে। তবুও ঠোঁট কামড়ে নিজের খুশি আটকায়।
আশা চিন্তিত হয়ে পড়ে। এতো দ্রুত ছেলের বিয়ে?
মুখ ফসকে বলেই ফেলে।

“একটু বেশিই তারাহুরো হয়ে গেলো না?

“আহহ আশা আর কতো অপেক্ষা করাতে চাও ছেলেকে? বিয়ের বয়স পার হয়ে যাচ্ছে তার।

আশা আনোয়ারের দিকে দাঁত কটমট করে তাকায়। উনি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কফি খাওয়ায় মন দেয়। এমনিতেও গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতে গিয়ে কফি প্রায় ঠান্ডা হয়ে গেছে। বাকিটা ঠান্ডা করতে চাইছে না।

” বিয়ে করে নিয়েছি আলরেডি। এবার বাসর বাকি। সেটার ব্যবস্থা করো।

বলেই উঠে হনহনিয়ে চলে যায় অর্ণব। আশা শুকনো ঢোক গিলো রান্না ঘরে চলে যায়। আনোয়ার বিষম খায়। আর নিধি চিন্তায় পড়ে যায়। তাদের তো বিয়ে হয় নি। তাহলে অর্ণব কার কথা বললো? কাকে বিয়ে করেছে সে?

অথৈ আর্থি আর তন্নি তিনজনে মিলে কেক বানাচ্ছে চকলেট কেক। অর্ণবের ভীষণ প্রিয়। তন্নি কখনো কেক বানায় নি তাই আর্থির থেকে শিখছে।
অথৈ অনেকখন যাবত ছটফট করছে ছাঁদে যাওয়ার জন্য। কারণ সেখানেই সাজানোর হবে কেক কাটার জন্য। কিন্তু আর্থি যেতে দিচ্ছে না। তার কথা কেকের কাজ খানিকটা শেষ করে তারপর তিনজন এক সাথে যাবে।

আশা কয়েকবার রান্না ঘরে ঢুকতে চেয়েও পারে নি। তাকে কেউ এলাও করছে না। তাই সে আশেপাশে ঘুরঘুর করছে।
অর্ণব রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে তাই নিধি সেখান থেকে ফিরে এসেছে। এখন একা একা বোরিং লাগছে তাই আশা বেগমকে খেয়াল করে সেখানে আসে।

“আন্টি আপনি ভেতরে যাচ্ছেন না কেনো?

হাসি মুখে বলে নিধি। আশা পা থেকে মাথা পর্যন্ত নিধিকে দেখে। আগের দিনের ড্রেসআপ মেনে নিয়েছিলো ঠিক আছে বলে। কিন্তু আজকে?
হাতা কাটা টপস পড়েছে।
সেও হেসে বলে।

” ওরা কেক বানাচ্ছে। আমাকে এলাও করছে না।

“কেক কেনো?

” তুমি জানো না?

“আমি কি করে জানবো?

” আমার ছেলের জন্মদিন। তুমি ভূলে গেছো?

“ওহহহ সরি আন্টি। ভূলেই গেছিলাম আমি। আমার নিজের বার্থডে ছাড়া আর কারো বার্থডের কথা মনে থাকে না। এনিওয়ে
আমি যাই বার্থডে বয়কে উইস করে আসি।

নিধি যেতে নেয়। আশা ডাকে।

” আমার মেয়েরা তার ভাইকে সারপ্রাইজ দিতে চায়। এখন উইস করে সারপ্রাইজ নষ্ট করে দিও না।

আশা মনেমনে খুদ্ধ হয়ে। কেমন ভালোবাসে? যে প্রেমিকের বার্থডে টা মনে করে রাখতে পারে না। আদৌও এই মেয়েটা তার ছেলেকে ভালোবাসে তো?

কেক মোটামুটি তৈরি হতে দিয়ে ওরা ছাঁদে চলে যায়। তিনজন মিলে মুহুর্তের মধ্যে সুন্দর করে সব সাজিয়ে ফেলে।
সব কিছু সাজাতে সাজাতে রাত আটটা বেজে যায়।

তারপর সবাই মিলে খেতে বসে। অর্ণব তন্নির পাশে এসে বসেছে। নিধি সামনাসামনি বসেছে।
অথৈ আর আর্থি গল্প করছে আর খাচ্ছে। নিধিও নিজের মতো খেয়ে যাচ্ছে।
তন্নি মাথা নিচু করে মুখে খাবার পুরছে।
অর্ণব মুচকি হেসে তন্নির পায়ের ওপর নিজের পা রাখে৷ তন্নি চমকে চোখ দুটো বড়বড় করে তাকায়,অর্ণবের দিকে৷
অর্ণব তন্নির দিকে খানিকটা এগিয়ে বসে।

“খাইয়ে দাও আমায়।

নিজের বা হাত টা তন্নির বা হাতের ওপর রাখে। তন্নির মুখে খাবার ছিলো না চিঁবিয়েই গিলে ফেলে।
গলার স্বর নিচু করে বলে

” সবাই এখানে কি করে খাওয়াবো?

“তার মানে তুমি আমাকে খাওয়াতে চাও?

তন্নি আবারও চমকে ওঠে। সত্যিই তো। সে কি ওকে খাওয়াতে চায়?

” আমি কি খাবার নিয়ে রুমে চলে যাবো?

অর্ণব আবারও জিজ্ঞেস করে। তন্নি অসহায় চোখে তাকায় অর্ণবের দিকে।

“ওকে খাইয়ে দিতে হবে না। নিজে থেকে তাহলে আমার হাত ধরো।

অর্ণব বলা মাত্রই তন্নি অর্ণবের আগুলের ভাজে নিজের আঙুল ঢুকিয়ে দেয়। অর্ণব মুচকি হেসে সবার দিকে এক পলক তাকিয়ে হুট করে তন্নির কপালে চুমু দেয়।
সেকেন্ডের মধ্যে ঘটে যায় সব কিছু। তন্নি স্তব্ধ হয়ে যায়। অর্ণব স্বাভাবিক ভাবেই খেতে থাকে।
তন্নির খাওয়ার বারোটা বেজে যায়। সে এখনো ঘোর থেকে বের হতে পারছে না। হৃদপিন্ড ধুপবুক করছে। মনে হচ্ছে এখনো অর্ণবের ভেজা ঠোঁট দুটো কপালে লেগে আছে। খোঁচা খোঁচা দাঁড়ির ছোঁয়া হৃদকে অস্থির করে তুলছে।

অর্ণব খাবার মুখে পুরে এক পলক তাকায় তন্নির দিকে৷ তন্নির অবস্থা দেখে বাঁকা হাসে।
তারপর অথৈকে উদ্দেশ্য করে বলে

” অথৈ তোর তন্নিকে বলে দিস। লজ্জা না পেতে। লজ্জা পেলে তাকে অনির মাম্মামের মতো লাগে।

সকলে তাকায় অর্ণবের দিকে। তন্নি চোখ মুখ খিঁচে মাথা নিচু করে ফেলে।

“তোকে দেখতে কে বলছে;? সামনে নিধি আপু আছে তাকে দেখ। কি কিউট সুইট। তার থেকে তো আমারই চোখ ফিরছে না। তোর চোখ ফিরলো কি করে?
ভাই তুই নিধি আপুর সাথে চিট করছিস না তো?
নিধি আপুকে রেখে অনির মাম্মামের প্রেমে পড়ে যাস নি তো?
জাতি কিন্তু মানবে না। তোর পেছনে স্টাম্প মেরে লিখে দেবে ” অর্ণব চৌধুরীর চরিত্রে সমস্যা আছে”
গণধোলাই ও দিতে পারে।

অথৈয়ের কথা শুনে অর্ণব চোখ পাকিয়ে তাকায়। তন্নি খিলখিল করে হেসে ওঠে। নিধি ভ্রু কুচকে ফেলে।
তন্নির হাসি দেখে প্রাণ জুরিয়ে যায় অর্ণবের।

“তোমার হাসি খুব বাজে। কিন্তু আফসোস এই বাজে হাসিটার জন্য বছর খানি অপেক্ষা করতে হয়।

অর্ণবের কথা শুনে তন্নির হাসি বন্ধ হয়ে যায়। আর্থির আপাতত এদিকে মন নেই। সে ফোন দেখছে।

__

অথৈ আর তন্নি দুজন শাড়ি পড়েছে৷ তন্নিকে মূলত জোর করেই শাড়ি পড়িয়েছে অথৈ।
কালো সিল্কের শাড়িতে তন্নিকে বেশ মানিয়েছে
কালো শাড়ি ছোট হাতার ব্লাউজ লম্বা চুল গুলো বিনুনি গেঁথেছে। ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর চোখে কাজল দুই হাত ভর্তি কালো চুড়ি ব্যাস তন্নি রেডি।

এবার তন্নিকে কেক সাজানোর জন্য রুম থেকে বের করে দেয় অথৈ।

অর্ণব কালো শার্ট পড়ে রেডি হয়ে রুম থেকে বের হয়। কি হচ্ছে জানা নেই তার। তবে এইটুকু বুঝতে পারছে তার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে।

প্রথমদিনের মতো সামনে তাকাতেই অর্ণবের হার্ট লাফিয়ে ওঠে। কালো শাড়িতে তার মায়াবতী।
অর্ণব জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নেয়।

” এই মেয়েটা আমাকে পাগল করেই ছাড়বে।

বিরবির করে বলে অর্ণব। তারপর লম্বা শ্বাস টেনে বড়বড় পা ফেলে তন্নির সামনে যায়। তন্নি কিছু বলতে যাবে তার আগেই হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে দরজা আটকে দেয়। এটা দেখতে পায় নিধি।

চলবে

#মায়াবতী
#পর্ব:২৪
#তানিশা সুলতানা

নিধির সন্দেহ ঠিক ছিলো। কিছু একটা চলছে এদের মধ্যে। কোনো একটা কাহিনি আছে। বদ্ধ রুমে দুটো ছেলে মেয়ে এক সাথে। তারওপর সেই ছেলেটা নিধির হবু বর। ধপ করে মাথা গরম হয়ে যায় নিধির। এর একটা হেস্তনেস্ত সে করবেই।
অর্ণবকে সে ছাড়বে না। লড়াই করতে হয় করবে।পাঁচটা বছর সয্য করে যাচ্ছে, আঠার মতো পেছনে লেগেছিলো শুধুমাত্র বিয়ে করার জন্য। এতো অবহেলা অপমান সব কিছুর বদলা এতো সহজে ছাড়বে না।
নিধি অর্ণবের রুমের বাইরে থেকে ছিটকেনি লাগিয়ে চলে যায় আশা বেগমকে ডাকতে।

অর্ণব তন্নিকে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড় করিয়ে এক হাত তন্নির মাথার ওপর দিয়ে দেয়ালে আর আরেক হাত তন্নির কোমরে দিয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তন্নির কাজল কালো চোখের দিকে।
তন্নি মাথা নিচু করে আছে। তার বুক কাঁপছে। কেউ দেখে নিলে কি হবে?
তন্নি শুকনো ঢোক গিলে রিনরিনিয়ে বলে।

“প্লিজ যেতে দিন আমায়। কেউ দেখে ফেলবে।

অর্ণব বাঁকা হাসে। কথা বলার সময় মেয়েটার টকটকে লাল ওষ্ঠদ্বয় কিভাবে নরছে এটাও লক্ষ্য করতে ভূলে নি অর্ণব৷ এ মেয়েটার শিরায় শিরায় মুগ্ধতা মিশে আছে।
অর্ণব নিজের বা হাতটা তন্নির ডান গালে রাখে। শিউরে উঠে চোখ বন্ধ করে নেয় মেয়েটা।
অর্ণব মুখ খানিকটা এগিয়ে নিয়ে বলে

” কেউ আসবে না মায়াবতী। এখানে শুধু আমি আর তুমি।

অর্ণবের নেশালো কন্ঠের আওয়াজ শুনপ বুক কাঁপতে থাকে তন্নির। সে ফট করে বলে ওঠে।

“আমি আপনার বোনের মতো।

অর্ণবের মেজাজ বিগড়ে যায়। এর সাথে রোমান্স কখনো সম্ভব? গাঁধা একটা।
ফোঁস করে শ্বাস টেনে তন্নিকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে অর্ণব। তন্নি চোখ দুটো বড়বড় হয়ে যায়। লোকটার হুটহাট বিহেভিয়ার মেনে নিতে সময় লাগে তন্নির। লোকটা প্রচন্ড পরিমাণ লম্বা।৫ ফিট ১১ ইঞ্চি হাইটের আশি কেজি ওজনের একজন সুঠাম দেহের পুরুষ। আর সেখানে তন্নি সোজা ৫ ফিট হাইটের ৩৮ কেজি ওজনের পিচ্চি একটা মেয়ে।
তাই অর্ণব খুব সহজেই দুইহাতে তন্নিকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিতে পেরেছে। তন্নির মাথাটা পড়েছে একদম অর্ণবের হৃদপিণ্ডের ওপরে। হৃদপিন্ডের ধুকপুকানি খুব ভালো করেই টের পাচ্ছে তন্নি। কেনো জানি মনে হচ্ছে ধুকপুকানির সাথে একটা নামই ভেসে আসছে সেটা” মায়াবতী”

তন্নি বড় করা চোখ দুটো বন্ধ করে নেয়। অর্ণবের শরীর থেকে আসা কড়া পারফিউমের গ্রাণ নিতে থাকে সাথে হার্ট বিটের শব্দ। তন্নির শরীর মৃদু কাঁপছে। বুকের ভেতর কেউ ডাম বাজাচ্ছে। গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে রিনরিন করে বলে।

” ককি করছেন? প্লিজ ছাড়ুন।

অর্ণব এটারই অপেক্ষায় ছিলো। আরও একটু শক্ত করে ধরে বলে

“কাঁপছো কেনো অথৈয়ের তন্নি। আর সো কোল্ড বোনু।
অথৈকে হাগ করলে সে খুশি হয়। আমাকেও জাপ্টে ধরে। বাট তুমি কেনো কাঁপছো? রিজন কি?

তন্নি কি উওর দেবে বুঝতে পারছে না। লোকটার সাথে একদম লেপ্টে গেছে। শ্বাস টানতেও কষ্ট হচ্ছে। লজ্জায় অস্বস্তিতে ঘেমে যাচ্ছে।

তন্নির থেকে উওর না পেয়ে অর্ণব আবারও বলে ওঠে।
” এন্সার মি

তন্নি কাঁপা-কাঁপি গলায় উওর দেয়।

“আমি আপনার বোন না। প্লিজ ছাড়ুন।
অর্ণব হেসে ফেলে। তন্নির মাথায় চুমু খেয়ে বলে

” তুমি আর অথৈ বন্ধু। বন্ধু ভাই বাচ্চার বাবা হতে পারে। বোন নয়।
তুমি আমার অনির মাম্মা। একমাত্র মায়াবতী। যাকে সারাজীবন এভাবেই আগলে রাখবো আমি।

তন্নির কলিজা ঠান্ডা হয়ে যায়। বড্ড আপন লাগছে লোকটাকে। নিজে থেকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এটা তন্নি কখনেই পারবে না।

নিধি আশা বেগমকে ধরে নিয়ে আসে। তিনি প্রচন্ড বিরক্ত। এমনিতেই মেয়েটাকে ভালো লাগছে না তার। তার ছেলের জন্মদিন অথচ মেয়েটার মধ্যে কোনো আনন্দ নেই। এই না কি আবার তার ছেলেকে বিয়ে করবে।

” এখানে কেনো নিয়ে আসলে আমায়?

খানিকটা রেগে বলে আশা।

“এই রুমে আপনার ছেলে আছে।

” সেটা জানি আমি।

“আপনার ছেলের সাথে তন্নিও আছে।

” তো কি? আছে ভালো কথা। আমাকে কেনো আনলে?

“আন্টি আপনি বুঝতে পারছেন না। এই বন্ধ রুমে তন্নি আর অর্ণব এক সাথে আছে।

” তাতে হয়েছে টা কি? আছে থাকুক। তো আমি কি করবো?

নিধি প্রচন্ড বিরক্ত। কি করবে মানে? এখন একে বুঝিয়ে দিতে হবে?
আশা নিধির দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে বাইরে থেকে আটকানো ছিটকেনি খুলে দেয়। তারপর দরজায় দুটো থাপ্পড় দিয়ে ডাকে

“আব্বা আব্বা
তন্নি কোথায়?

তন্নি চমকে ওঠে। প্রচন্ড ভয় পেয়ে যায়। ছোটার জন্য ছটফট করতে থাকে।
অর্ণব বিরক্ত হয়ে একটুখানি আলগা করে দেয় কিন্তু ছাড়ে না।

” মম তন্নি অনির পাপার কাছে আছে। তুমি কি করবে ওকে দিয়ে?

আশা বেগম মুচকি হেসে তাকায় নিধির দিকে। নিধি কিছু বলতে যাবে তার আগেই সে বলে ওঠে

“আমার ছেলে। আমার পুত্র
তাকে নিয়ে নো কমেন্ট।
চলে আমার সাথে। ডিস্টার্ব করবা না আমার সোনাকে।

বলেই নিধির হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যায়।

তন্নির হাত পায়ে কাঁপন বেরে গেছে। অর্ণব ছেড়ে দিলে মেয়েটা পড়ে যাবে এরকম অবস্থা। কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে মেয়েটার। চোখেও পানি টলমল করছে। অর্ণব নিচু হয়ে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাজ করে ফেলে।
সিরিয়াসলি?
এইটুকুতেই এতোটা নার্ভাস?
অর্ণব তন্নিকে ধরে খাটে বসায়। নিজে ফ্লোরে বসে পড়ে।
হাত বাড়িয়ে টেবিলের ওপর থাকা পানির বোতল তন্নির দিকে এগিয়ে দেয়। ঢকঢক করে পুরো বোতল পানি শেষ করে ফেলে তন্নি।
অর্ণব তন্নির গালে টোকা দিয়ে বলে

” এতো ভয়? আল্লাহ

তারপর তন্নির হাতের ওপর হাত রাখে। তন্নি মাথা নিচু করে আছে। এখন অনেকটা শান্ত লাগছে।

“আমি আছি তো। সবটা সামলে নিবো। আমাকে এড়িয়ে তোমাকে কখনোই কেউ কিছু বলবে না।

তন্নির ভালো লাগে। জানেও এটা। কিন্তু তবুও মুখ ফুটে কিছু বলে না। অর্ণব তন্নির কোলে মাথা রাখে। তন্নির হাত দুটো টেনে নিজের মাথায় রাখে।

” চুল টেনে দাও।

তন্নি বাধ্য মেয়ের মতো টানতে থাকে।

“আমার কাছে পারমানেন্টলি আসার আগে আর কখনো শাড়ি পড়বা না। ইটস মাই অর্ডার।
সাগর তোমায় পছন্দ করে। আমার ওপর রেগে বা ফ্রেন্ড বড় ভাই সিনিয়র এসব মনে করেও তার সাথে কখনো মিশবা না।
কজ সে ভাববে তুমি তাকে পাত্তা দিচ্ছো বা এসবে ইন্টারস্টেড।

সাগরের শান্ত গলার কথা মন দিয়ে শোনে তন্নি। ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। অর্ণব তাকিয়ে থাকলে অবশ্য হাসতো না। কিন্তু অর্ণব যেহেতু দেখছে না একটু হাসাই যায়।
সেটা ভেবে হাসি আটকায় না তন্নি। ঠোঁট টিপে হেসেই ফেলে।
কিন্তু অর্ণব সেটা আয়নাতে দেখে ফেলে৷ তার ঠোঁটের কোণেও হাসি ফুটে ওঠে।

” আমার তোমাকে ভীষণ দরকার। আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাচ্ছি।

তন্নির হাতটা টেনে নিজের গালে রেখে বলে অর্ণব। তন্নির হাসি মুখটা চুপসে যায়। লজ্জায় লাল হয়ে ওঠে তার গাল দুটো।
এরই মধ্যে অথৈ উরাধুরা দরজা ধাক্কাতে থাকে৷ ধরফরিয়ে উঠে পড়ে অর্ণব। তন্নিও চমকে ওঠে।
অথৈ এবার লাথি দিচ্ছে দরজায়। সে ভেঙেই ফেলবে।

“ছোট ভাই বোন থাকা মানেই বিপদ। শান্তিতে প্রেমটাও করতে দেবে না।

বলতে বলতে দরজা খুলতে যায় অর্ণব। তন্নি ভেংচি কাটে। শয়তান বেডা।

দরজা খুলতেই অথৈ অর্ণবকে পাশ কাটিয়ে ঢুকে পড়ে।
অর্ণব পেছন পেছন আসতে আসতে বলে
” আরে আরে এভাবে ডাকাতের ঢুকছিস কেনো?

অথৈ সোজা তন্নির কাছে যায়। ভ্রু কুচকে তাকায় তন্নির দিকে। তন্নি অস্বস্তিতে পড়ে যায়।

“সাতদিন এখনো শেষ হয় নাই। তার আগেই তোরা বন্ধ রুমে কি করছিলি?

” অনিকে আনার মিশনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম।

অর্ণবের সোজাসাপ্টা জবাবে লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় তন্নির। অথৈও থতমত খেয়ে যায়। শুকনো কাশি দিয়ে তন্নির হাতটা ধরে।

“শয়তানের নানা আপনাকে ছাঁদে প্রয়োজন

বলেই তন্নিকে নিয়ে চলে যায়।
অর্ণব বিরক্তির নিঃশ্বাস ফেলে।
” প্রেমটাও করতে দিচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে অনি কবে আসবে?

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here